ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার
ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় অসঙ্গতি, পুনরায় নেওয়ার দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্রাজুয়েট ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সেটে অমিল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কিছু প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি এবং একই সেটের প্রশ্নে ক্রমধারার মিল না থাকা ছাড়াও কয়েকটি ক্যাটাগরিতে আরও প্রায় শতাধিক ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে। এসব ভুলের মধ্যে আছে বানানগত ভুল, অনুবাদে ভুল, বাক্যগঠনে ভুল এবং ব্যাকরণে ভুল। এছাড়া, বাক্যে গুরুচণ্ডালী দোষও সংগঠিত হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার এক প্রশ্নে এমন ভুল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। তারা পুনরায় এই পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ভুলেভরা প্রশ্নপত্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তুলছে। এই প্রশ্নপত্র তৈরিতে যারা যুক্ত ছিলেন তাঁরা পেশাদারিত্ব এবং দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেননি। প্রশ্ন প্রণয়ণের পর এটি ভালোভাবে ক্রসচেক করে দেখা উচিত ছিলো। এই ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।
গত শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেই পরীক্ষায় নিম্মোক্ত ত্রুটিসমূহ পরিলক্ষিত হয়েছে।
নির্দেশনাগত ভুল: প্রশ্নপত্রে উল্লেখিত সকল বিষয়ের প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের উত্তর করতে হয় না। প্রশ্নপত্রের শুরুতে যেই ভুলটি লক্ষ্য করা গেছে সেটি হলো নির্দেশনাগত ভুল অর্থাৎ পরীক্ষার্থীকে কয়টি বিষয়ে উত্তর করতে হবে সেই নির্দেশনা দেওয়া ছিলো না। ফলে একজন পরীক্ষার্থীর যদি পূর্ব নির্দেশনা না থাকে তাহলে পরীক্ষাতে তিনি নিশ্চিতভাবে বিভ্রান্ত হবেন।
কাঠামোগত ভুল: পরীক্ষা শেষে বিভিন্ন সেটের প্রশ্নপত্র এক করে দেখা যায়, এক সেটের সকল প্রশ্ন একই হওয়ার কথা থাকলেও ‘এ’সেটে দুই ধরনের প্রশ্ন এসেছে। এক ধরনে চারটি প্রশ্ন পুনারাবৃত্তি হয়েছে অন্য এক ধরনে কোনো প্রশ্ন পুনরাবৃত্তি হয়নি। ফলে যে ধরনে চারটি প্রশ্ন পুনরাবৃত্তি হয়েছে সেই ধরনে স্বভাবতই এমন চারটি প্রশ্ন অনুপস্থিত ছিলো যেটি অন্য ধরনে উপস্থিত ছিলো। আবার, একই সেটের সকল প্রশ্নের ক্রমধারা ঠিক থাকার কথা থাকলেও সেটিও ঠিক ছিলো না।
তেমনিভাবে‘বি’ সেটেও দুই ধরনের প্রশ্ন হয়েছে এবং এই সেটের সকল প্রশ্নের ক্রমধারাও এক ছিলো না। তবে দুই সেটেই এই ভুলগুলো হয়েছে শুধুমাত্র ইংরেজি ও অ্যাকাউন্টিং অংশে। সি এবং ডি সেটে এই ধরনের কোন ভুল হয়নি।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, ‘এ’ ও ‘বি’ এর প্রতিটি সেটে ১২টি প্রশ্নের ক্রমধারা ঠিক নেই। যেটি একজন পরীক্ষার্থীর রেজাল্টে বড় ধরণের ধ্বস নামিয়ে আনতে যথেষ্ট। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ওএমআর অংশটি স্ক্যান করে কম্পিউটারের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। কম্পিউটারকে একটি সেটের জন্য একটি উত্তরপত্র দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ভুল-শুদ্ধ নির্ণয় করে কম্পিটার নম্বর দেয়। ফলে একই সেটের প্রশ্নে এমসিকিউ’র ক্রমধারা ঠিক না থাকলে এবং ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্ন থাকলে যেসব শিক্ষার্থীর হাতে ভুল প্রশ্ন গিয়েছে, তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
অনুবাদগত ও ইংরেজি ব্যকরণগত ভুল-প্রশ্নপত্রের বাংলা ও ইংরেজি অংশ ছাড়া বাকিসব বিষয় অর্থাৎ অ্যাকাউন্টিং, বিজনেস অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড মার্কেটিং, ফিন্যান্স ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স অংশের করা প্রশ্ন বাংলা ও ইংরেজি ভাষা দুই ভাষাতেই করা হয়েছে।
প্রশ্নপত্র পড়ে দেখা যায়, কিছু প্রশ্নের ইংরেজি অনুবাদ ঠিকভাবে করা হয়নি। আবার এই অনুবাদ করতে গিয়ে কিছু ক্ষেত্রে ব্যকরণগত ভুলও করা হয়েছে।
বিজনেস অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট
‘নিচের কোন ধরণের নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্যদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়? (Which type of leadership style give full freedom to take decision to others?)’
এখানে দুইটি ভুল করা হয়েছে। প্রথমত ‘সিদ্ধান্তগ্রহণ’ একশব্দে হবে। আর give এর সাথে s যুক্ত হয়ে gives হবে।
‘কোনটি স্থায়ী পরিকল্পনা? (Which one of the following is standing plan)’
এই প্রশ্নের সঠিক অনুবাদ হবে- Which is the standing plan?
প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড মার্কেটিং অংশ
‘পণ্যের জীবনচক্রের কোন স্তরে এসে বিক্রয় প্রবৃদ্দি কমতে থাকে? (At what stage is the product lifecycle do the sales growth start to slowdown?)’
এখানে is এর স্থলে of, do এর স্থলে does এবং slowdown এর স্থলে slow down হবে।
অ্যাকাউন্টিং এর লিখিত অংশ-
‘কোন অনুপাতটি একটি কোম্পানির স্বল্পমেয়াদি দায় পরিশোধের ক্ষমতা পরিমাপ করে? (Which ratio measures a company’s ability to pay short-term liabilities)’
এখানে ‘স্বল্পমেয়াদী’ বানান ভুল লেখা হয়েছে। আর ইংরেজিতে ব্যাকরণগত ভুল হয়েছে। সঠিক ইংরেজি হবে,Which ratio Does measure a company’s ability to pay short-term liabilities?
বিজনেস অর্গানাইজেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এর লিখিত অংশ:
‘কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে দ্বৈতকর বলতে কি বুঝায়? (What is the double taxation in the context of coporation?)’
এখানে ‘কী’ এর স্থলে ‘কি’ লিখা হয়েছে। এছাড়া বাংলা অনুবাদ ভুলভাবে করা হয়েছে। সঠিক অনুবাদ হবে- ‘What is meant by double taxation in corporation?’
প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড মার্কেটিং লিখিত অংশ
‘পণ্য ও সেবার মধ্যে পার্থক্য কর। (What is the basic difference between product and service?)’ এটির সঠিক অনুবাদ হবে- Diffrentiate between product and service.
পুরো প্রশ্নপত্রে এই ধরনের আরও অনেক ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে।
বানানগত ভুল: প্রশ্নপত্রের বিভিন্ন অংশে ‘কি’, ‘কর’, ‘নীচের’, ‘একত্রিকরন’, ‘অধিগ্রহন’, ‘গড়ব্যায়’, ‘কাচামাল’, ‘স্বারকলিপি’, ‘স্বত্ত্বগত শব্দগুলো ভুল বানানে লেখা হয়েছে যেগুলোর শুদ্ধরূপ হবে যথাক্রমে- ‘কী’, ‘করো’, ‘নিচের’, ‘একত্রীকরণ’ ‘অধিগ্রহণ’, ‘গড়ব্যয় ‘,‘কাঁচামাল’,‘স্মারকলিপি’,‘স্বত্বগত’। এছাড়া, লিখিত অংশে প্রশ্ন করা হয়েছে ‘মূলধনী লাভ বলিতে কি বুঝায়?’ এখানে গুরুচণ্ডালি দোষ হয়েছে। আর একাধিক জায়গায় ‘কী’ এর স্থলে লেখা হয়েছে ‘কি’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, এই ধরণের ভুলেভরা প্রশ্নপত্র অপেশাদারিত্বের ইঙ্গিত দেয়। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করেছে। এটির দায় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন কখনো এড়াতে পারেন না। তার উচিত হলো সকল দায়-দায়িত্ব স্বীকার করে পদত্যাগ করে ক্ষমা চাওয়া।
শিক্ষার্থী, দেশ, মেধার বিকাশ এবং ন্যায্যতার স্বার্থে এই পরীক্ষা দ্বিতীয়বার নেওয়া উচিত বলে মনে করেন এই শিক্ষক।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়বারের পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ দায়িত্বে সকল খরচ বহন করা উচিত।
পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়কারী যা বলছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে কাঠামোগত ত্রুটি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী ও অনুষদের ডিন ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম। গতকাল তিনি গণমাধ্যমে বলেন, ‘এ’ সেটের দ্বিতীয় পৃষ্ঠার কিছু প্রশ্ন ‘বি’ সেটে এবং ‘বি’ সেটের দ্বিতীয় পৃষ্ঠার কিছু প্রশ্ন ‘এ’ সেটে ছাপা হওয়ায় নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রশ্ন পুনরাবৃত্তি হয়েছে ও ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত হয়েছে।
মাহমুদ ওসমান বলেছেন, ভুল প্রশ্নপত্র চিহ্নিত করার কাজ চলছে এবং এটি দ্রুত সমাধান করা হবে। শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হবে না, বরং তাদের স্বার্থ নিশ্চিত করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কাঠামোগত এই ভুলের সমাধানের বিষয়ে রবিবার অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক করেছেন ডিন মাহমুদ ওসমান।
দ্বিতীয়বার পরীক্ষা নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে মাহমুদ ওসমান জানান, না, দ্বিতীয়বার পরীক্ষা নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। যেটি পরীক্ষা নেওয়া ছাড়াই সমাধানযোগ্য সেখানে আমরা নতুন করে পরীক্ষা নিতে যাবো কেন?
তবে কী পদ্ধতি অনুসরণ করে এই কাঠামোগত ভুলের সমাধান করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত আমরা সেটি রিভিল (প্রকাশ) করছি না। সময় হলে আমরা আপনাদের জানাবো।
বানান, অনুবাদ এবং ব্যাকরণগত ভুলের বিষয়ে ডিন ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম বলেছেন, ঠিক, এসবে আমাদের কিছু ভুল হয়েছে। সামনে আমরা এসব বিষয়ে আরও সতর্ক থাকবো।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার
ঢাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রবন্ধ জালিয়াতি করে চাকরি স্থায়ীকরণের অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ও ভুল তথ্য দিয়ে পদোন্নতি নিয়ে চাকরি স্থায়ীকরণের অভিযোগ উঠেছে। তিনি দেরিতে প্রবন্ধ প্রকাশ করেও সঠিক সময়ে প্রকাশ দেখিয়েছে।তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে পদান্নতি নিয়ে চাকরি স্থায়ী করতে সক্ষম হন। তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন একই বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বরাবর এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। অভিযোগপত্রে সঙ্গে তিনি বিভিন্ন প্রমাণাদিও যুক্ত করেছেন।
‘জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ও ভুল তথ্য দিয়ে ড. আব্দুল্লাহ আল মামুনের চাকরি স্থায়ীকরণ প্রসঙ্গে’ শীর্ষক ওই অভিযোগপত্রে জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, সম্প্রতি একটি ইমেইল এর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে এর (প্রবন্ধ জালিয়াতি) সত্যতা জানতে পেরেছি। ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য সময়মতো লেখা প্রকাশ করতে না পেরে সংশ্লিষ্ট জার্নালের এডিটরের সঙ্গে যোগসাজশে অনৈতিক পন্থায় ভূয়া তারিখ দেখিয়ে ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লেখা প্রকাশিত হয়েছে’ এমন ভুল তথ্য দিয়ে চাকরিতে স্থায়ী হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন। ড. মামুন জালিয়াতির মাধ্যমে তার প্রকাশনার ভূয়া তারিখ দেখিয়ে চাকরিতে স্থায়ী হন এবং তার সিনিয়রিটি ধরে রাখেন।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে স্থায়ীকরণের নিয়ম হলো- প্রার্থীর পদোন্নতির ঠিক এক বছরের মধ্যে ডিজিটাল অবজেক্ট আইডেন্টিফাইয়ার (ডিওআই) সম্বলিত জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশিত হতে হবে। উল্লেখ্য যে, জার্নালের ইস্যু, ভলিউম, মাস এখানে মুখ্য নয়। জার্নাল প্রকাশিত হতে হবে ওই নির্দিষ্ট প্রবেশন সময়ের মধ্যে। ড. মামুন ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পদোন্নতি পান এবং ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখের মধ্যে প্রকাশিত প্রবন্ধ জমা দেওয়ার কথা ছিল।
জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের তিনজন শিক্ষক একইদিনে সহযোগী অধ্যাপক হন এবং একই তারিখে সকলের প্রবেশন দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির নিয়ম অনুযায়ী চাকরি কনফার্মেশনের নির্দিষ্ট সময়ে যদি জ্যেষ্ঠ কেউ প্রবন্ধ প্রকাশনা করতে না পারেন এবং অন্যরা করে ফেলেন, তবে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বাকিদের থেকে জুনিয়র হয়ে যাবেন। ড. মামুনের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটেছে। ফলে তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তার সিনিয়রিটি অবৈধভাবে ধরে রেখেছেন।
অভিযোগপত্রে তিনি দাবি করেন, ২০২৩ সালের ২৯ মে স্থায়ীকরণ কমিটির সভা হয় এবং ড. মামুনের প্রবন্ধ বিলম্বে প্রকাশিত হওয়ায় তাকে বাকি দুইজন থেকে জুনিয়র করা হয়। এটা জেনে ড. মামুন জালিয়াতির আশ্রয় নেন এবং জার্নাল অব গভার্নেন্স, সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর এডিটরের যোগসাজশে একটি প্রবন্ধ প্রথমে অনলাইনে প্রকাশ করেন এবং সেখানে প্রকাশের তারিখ দেখান ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি। ওই ভুয়া তথ্য দিয়ে নতুন করে প্রবন্ধ জমা দিয়ে তিনি চাকরিতে স্থায়ী হন এবং বাকি দুইজন শিক্ষকের থেকে আবারো সিনিয়র হন।
তিনি বলেন, কিন্তু ড. মামুন জানেন না যে, ডিওআই এর জার্নালে ভুল তারিখ বসিয়ে বাঁচা যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ীকরণের সময় ডিওআই সম্বলিত প্রবন্ধ চাওয়া হয়, যেন কেউ প্রবন্ধ প্রকাশের তারিখ নিয়ে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন বা জালিয়াতি করতে না পারে। এখন প্রশ্ন হলো, ড. মামুনের এই প্রবন্ধ যদি ১ জানুয়ারি, ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত হয়ে থাকে, তবে ২৯ মে, ২০২৩ তারিখে স্থায়ীকরণের আগে তিনি এই প্রবন্ধ জমা দিলেও কেন স্থায়ীকরণ হয় নি? কারণ তখন ঐ DOI দিয়ে অনলাইনে প্রকাশিতই হয় নি, যা Meta Data দেখলেই প্রমাণ পাওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, তিনি এই প্রবন্ধে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ২০২৩ সালের ১ জুন। তাই এর আগে অনলাইনে প্রকাশিত হওয়ার সুযোগ নাই। ড. মামুন ২৯ মে স্থায়ীকরণ সভায় যখন দেখলেন, প্রকাশিত প্রবন্ধ জমা দিতে পারেননি এবং জুনিয়র হয়ে গেলেন, তখন তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নিলেন। ওই প্রবন্ধের Meta Data চেক করে দেখা যায় যে, তিনি ডিওআই এর জন্য আবেদন করেছেন ২০২৩ সালের ১ জুন এবং সেদিনই তার প্রবন্ধ অনলাইনে আসে। অর্থাৎ এই লেখা অনলাইনে তার স্থায়ীকরণ শর্তানুযায়ী ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারির প্রায় সোয়া ৩ মাস পর প্রকাশিত হয়।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ওই জার্নালের হার্ড কপিতেও এই একই ডিওআই নাম্বার দেওয়া আছে। এর অর্থ হলো- ১ জুন ডিওআই নাম্বার পাওয়ার পরই হার্ড কপি প্রিন্ট করা হয়েছে। এর আগে ডিওআই সম্বলিত জার্নাল প্রিন্ট করা অসম্ভব, কারণ হার্ড কপির পেজ নাম্বার (৩১-৫৪) ও অনলাইন কপির পেজ নাম্বারে (১-১৯) গরমিল আছে। এর মানে হলো- উক্ত জার্নালের অনলাইন ভার্সন বা হার্ড কপি দুটোই জুন মাসের ১ তারিখ বা তারপর প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং বাকি দুইজন শিক্ষক যদি নির্দিষ্ট সময়ে লেখা প্রকাশ করে থাকেন, তবে ড. মামুন তাদের চেয়ে জুনিয়র হতে বাধ্য- এটাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা।
জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, এর একটিই ব্যাখ্যা দাঁড়ায়, ড. মামুন ব্যক্তিগতভাবে তার লেখার ডিওআই নিয়ে পরে তিনি জার্নালে জমা দিয়েছেন এবং অন্য প্রবন্ধের ডিওআই করে দিয়েছেন। একই জার্নাল এবং এর প্রোডাকশন বিভাগ ডিওআই রেজিস্ট্রেশনের কাজ করলে তার প্রবন্ধের সিরিয়াল ও পৃষ্ঠা নাম্বার ঠিক থাকত।
তিনি বলেন, এ ধরনের ভুয়া তথ্য প্রদান করে চাকরি স্থায়ীকরণ অত্যন্ত অনৈতিক কর্মকাণ্ড, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি রাখে। এই ধরনের অনৈতিক কাজ একাডেমিক ক্ষেত্রে চরম নৈতিক স্খলন। ড. মামুন নিজে এ ধরনের হীন কাজ করার পাশাপাশি আরো কিছু শিক্ষকদের ভুয়া তারিখ দিয়ে ডিওআই করিয়ে দিয়েছেন বলেও চাউর রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমি বিশ্বাস করি, কমিটি গঠন করে যথাযথ তদন্ত করলে ড. মামুনের দুর্নীতি ও জালিয়াতির বিষয় সামনে আসবে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত বাকি দুইজন শিক্ষকের জ্যেষ্ঠতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। অভিযোগের বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করা হলেও তিনি কোন প্রত্ত্যুত্তর দেননি।
জানতে চাইলে বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. দিলরুবা শারমিন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। উনি যে উপাচার্য স্যারের কাছে আবেদন করেছেন, সে বিষয়েও আমি কিছু জানি না।
চাকরি স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে ডিন অফিসের ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. তৈয়েবুর রহমান বলেন, প্রমোশনসহ সবকিছু তো ডিপার্টমেন্ট থেকেই শুরু হয়। ডিপার্টমেন্টেও একটা কমিটি আছে। ওখানেই প্রথম ডিসিশন হয় যে, কারো ক্রাইটেরিয়া পূরণ হয়েছে কিনা।
তিনি বলেন, ডিন অফিসের রোল খুবই সীমিত। যখন প্রমোশন হয়, তখন একটা বোর্ড তো বসেই। ওখানে ডিন কমিটির একজন মেম্বার। সেই হিসাবে ওনার রোল তো ওই লেভেলের থাকেই। তবে কমিটির সবার মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।
সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে ডিন বলেন, আমি আপনার মাধ্যমে এটা প্রথম জানলাম। জাহাঙ্গীর আলম স্যার যদি কোনো অভিযোগ উপাচার্য স্যারের কাছে করেন, তাহলে সেটা তো আগে ডিন অফিসে যাওয়ার কথা। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ হলে ওটা আমার লেভেলে কোনো না কোনোভাবে আসবে। আমার দেখার সুযোগ হবে, তখন আমি নিশ্চয়ই দেখব।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান এবং মুখপাত্র ও উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা উভয়ের সঙ্গেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার
চাঁদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত

ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০% জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত বাতিল করা সহ ছয় দফা দাবি নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে চাঁদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একই সাথে কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছেন তারা।
এই পদোন্নতি কারিগরি শিক্ষার মানকে নষ্ট করবে এবং শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা জরুরি বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। দাবির বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তারা।
শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে “নন-টেকনিক্যাল ক্রাফট হটাও, কারিগরি শিক্ষা বাঁচাও” স্লোগানে আজ বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, এই আন্দোলনে দেশের অন্যান্য পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও তারা সংহতি প্রকাশ করছে এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
তারা বলেন, নন-টেকনিক্যাল ক্রাফট নিয়োগ বাতিল করতে হবে। কারিগরি শিক্ষার মান রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। অযোগ্য ও অনুপযুক্ত নিয়োগের মাধ্যমে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করা চলবে না। এই বিতর্কিত পদোন্নতির ফলে যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে, যা কারিগরি শিক্ষাকে দুর্বল করবে। দেশ গড়ার হাতিয়ার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার! ক্ষমতার হাত ভেঙে দাও, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও!” আমাদের দাবি মানতে হবে, কারিগরি শিক্ষাকে রক্ষা করতে হবে!
যতক্ষণ না তাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে, ততক্ষণ তারা সমস্ত পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জন করবে। যদি দাবি পূরণ না হয়, তবে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
চাঁদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ১ম থেকে ৭ম সেমিস্টার পর্যন্ত সকল বিভাগের উভয় শিফটের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে।
যত দ্রুত সম্ভব এই অবৈধ নিয়োগ বাতিল করে কারিগরি শিক্ষার গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রাখা হোক বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার
নতুন পোশাকে ঈদের আনন্দ, পথশিশুদের মাঝে ইবি সিআরসির উপহার

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কাম ফর রোড চাইল্ড’ (সিআরসি) -এর উদ্যোগে পথশিশুদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় ২৯ জন শিশুদের মাঝে ঈদ উপহার প্রদান করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) দুপুর ২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনের (টিএসসিসি) করিডরে “থেকে একসাথে যুক্ত, করবো পৃথিবী পথশিশু মুক্ত” স্লোগানকে সামনে নিয়ে ঈদ উপহার বিতরণের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সিআরসি’র সভাপতি এমদাদুল হকের নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান, স্কুল পরিচালক সাইফুল ইসলাম আলিফ, প্রচার সম্পাদক সাইফুন্নাহার লাকী, দাতা শাহীন আলম সহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উপহার পেয়ে শিশুরা বলেন, সিআরসিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা আমাদেরকে পড়াশোনা করায়, কাপড় উপহার দেয়, ইফতার করিয়েছে আজ আমাদের ইদের উপহার দিয়েছে। উপহার পেয়ে খুব ভালো লাগছে।
কর্মসূচিতে প্রচার সম্পাদক সাইফুন্নাহার লাকী বলেন, এমন ছোট ছোট ভালোবাসা বিলিয়ে দিয়ে ওদের মুখের হাসি মুঠো ভরে জমা করি। আমরা যখন শিশুদের সাথে সময় কাটাই জীবনের একটা সেরা সময় উপভোগ করি। ওদের সরল সাবলীল নির্ভেজাল হাসি বেঁচে থাকার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়। আর ওদের হাসির মাধ্যম হয়ে উঠতে চেষ্টা করি।
উপহার বিতরণী অনুষ্ঠানে দাতা সদস্য শাহীন আলম বলেন, “বাচ্চারা ভাগ্যবান নাকি আমরা ভাগ্যবান এটা একটা জটিল বিষয়। কারণ আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমরা এমন নিবিড় নার্সিং কখনো পাইনি। আমাদের সংগঠনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে অবিভাবকদের আন্তরিকতা এবং স্বদিচ্ছার কারণে। এসকল শিশু যখন বড় হবে তখন আমাদের সংগঠনের মতো তারাও এরকম সুন্দর মন মানসিক চর্চা করবে এবং একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে। কারণ শিশুকাল থেকেই তাদেরকে ভবিষ্যৎ সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মানের কারিগর হিসেবে নার্সিং করা হচ্ছে। এটা আসলে ঈদ বস্ত্র বিতরণ না এটা আসলে আমাদের ভালোবাসা বিতরণ।” সংগঠন এবং সিআরসি পরিচালিত স্কুলের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অভিভাবকদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সংগঠনের সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, আমাদের সংগঠনের সদস্যদের থেকে ১২০০০ টাকা সংগ্রহ করেছি। আজকে আমরা ২৯ জনকে ইদ বস্ত্র বিতরণ করেছি। এটা সাধারণত আমরা আমাদের সিআরসি স্কুলের বাচ্চাদের দিয়ে থাকি যাদের ফাইন্যানসিয়াল অবস্থা অনেক খারাপ। এটাকে আরো দীর্ঘায়িত করে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরের পথশিশুর মাঝে বিতরণ করতে চাই।
উল্লেখ্য, কাম ফর রোড চাইল্ড (সিআরসি)- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ২০১৬ সাল থেকে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে চলেছে। বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি সিআরসি- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বড় কাজ হলো সিআরসি’র স্কুল পরিচালনা করা। যেখানে ২৫ জন শিক্ষক যারা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রতিনিয়ত সপ্তাহে ৫ দিন ক্লাস নিয়ে যাচ্ছে।
অর্থসংবাদ/সাকিব/কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার
১০ এপ্রিল থেকে ৩৩ দিন বন্ধ থাকবে কোচিং সেন্টার

আগামী ১০ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। এ উপলক্ষে পরীক্ষার্থীদের জন্য নতুন একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে প্রশ্নফাঁস ও গুজবরোধে পরীক্ষা শুরুর দিন (১০ এপ্রিল) থেকে ১৩ মে মোট ৩৩ দিন সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি জোরদার করা হবে। এ ছাড়া পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এ নির্দেশনা প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়, পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য ১০ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে ও প্রশ্ন পরিবহনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসন কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত গুজব কিংবা এ কাজে তৎপর চক্রগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো নজরদারি জোরদার করবে।
পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে সব ফটোকপি মেশিন পরীক্ষা চলাকালীন বন্ধ থাকবে বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া বলা হয়, প্রত্যেক বিষয়ের পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব উত্তরপত্র কাছের ডাক বিভাগে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বোর্ডগুলো পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোকে নির্দেশনা দেবে।
এ বিষয়ে শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কামাল হায়দার গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেটা আমরা ওয়েবসাইটে আপলোড করেছি। প্রতিবছর এটা দেওয়া হয়ে থাকে।
প্রসঙ্গত, ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা ১০ এপ্রিল শুরু হয়ে চলবে ১৩ মে পর্যন্ত। আর ব্যবহারিক পরীক্ষা ১৫ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার
গণঅভ্যুত্থানে হামলা: কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ঢাবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী সবাইকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি কোনো শিক্ষক হামলায় পরোক্ষভাবে ইন্ধন দিয়েছিলেন কি-না তা তদন্তে নতুন দুইটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, হামলাকারীদের বহিষ্কারের সুপারিশ করা হবে আর কারও ছাত্রত্ব শেষ হলে বাতিল হবে সনদ।
এছাড়া বহিরাগত কেউ হামলায় জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও থানার মাধ্যমেই শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো অপরাধী যেন পার পেয়ে না যায়। আর কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থী যেন শাস্তি না পান তা নিশ্চিতের মাধ্যমে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নারীসহ শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনা তদন্তে করা হয় সত্যানুসন্ধান কমিটি। সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদনে ১২৮ জনের নাম এসেছে। এতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও বিশ্বিবদ্যালয় শাখা সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের হামলায় নির্দেশ ও সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে।
হামলাকারীর সংখ্যা আরও বেশি, কমিটির রিপোর্ট কেন তার পুরোপুরি তথ্য আসেনি-এমন প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের। উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, প্রাথমিক এ রিপোর্টের ভিত্তিতে নতুন তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। যাতে চিহ্নিত করা যাবে সব অপরাধীকে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, হামলায় কোনো শিক্ষকের পরোক্ষ ইন্ধন ছিল কি না তা খতিয়ে দেখতেও হয়েছে আরেকটি কমিটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, হামলায় জড়িতদের বহিষ্কারের সুপারিশ থেকে অপরাধের ধরন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে। তবে অপরাধী কারও ছাত্রত্ব শেষ হলে বাতিল হতে পারে তার সনদ। অন্য প্রতিষ্ঠানের যারা হামলায় অংশ নিয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই তার শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও জুলাই আন্দোলনে হামলাকারী শিক্ষার্থী ও ইন্ধনদাতা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, স্বচ্ছ তদন্ত প্রক্রিয়ায় অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নিরপরাধ কারও প্রতি অবিচার না করারও পরামর্শ তার।
এছাড়া আবাসন সংকটসহ নানা সমস্যাকে পুঁজি করে ছাত্র সংগঠনগুলো যাতে কাউকে সহিংসতায় ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য শিক্ষার্থীদের এসব সুবিধা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ এ বিশ্লেষকদের।