অর্থনীতি
খেলাপি ঋণ ৩০ শতাংশ ছাড়াতে পারে: কেন্দ্রীয় ব্যাংক

দেশে খেলাপি ঋণের মোট ঋণের ৩০ শতাংশ অতিক্রম করে যেতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাতের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু জরুরি ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
খেলাপি ঋণের বাড়বাড়ন্ত মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে বলে মুদ্রানীতির ঘোষণায় জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মূলত নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা জোরদার, ব্যাংকিং খাতের সুশাসন নিশ্চিত ও যথাযথভাবে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার ওপর জোর দিয়েছে। তারা মনে করছে, এর মধ্য দিয়ে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যেমন এক্সপেকটেড ক্রেডিট লস মেথডলজি; ২০২৭ সালের মধ্যে এটি চালু করা হবে। আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে এই পদ্ধতি চালু করা হবে। সে জন্য কী কী করতে হবে, সে বিষয়েও বিস্তারিত বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, সে জন্য ব্যাংকের ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ঋণ ব্যবস্থাপনা রীতি–সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী—এসব অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই মডেলের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে ঋণের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো সম্ভব হবে।
সেই সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকের আইন বিভাগগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে যেসব ঋণ অর্থঋণ আদালত ও উচ্চ আদালতে ঝুলে আছে, সেগুলোর জট ছাড়াতে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত করা ও এই খাতের সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এসব ঝুলে থাকা বিষয়ের জট ছাড়াতে আইন বিভাগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের ব্যাংকগুলোয় গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের প্রায় ১৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। তখন দেশের ব্যাংকগুলো থেকে বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ ছিল খেলাপি।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অবশ্য মনে করেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হিসাব অবলোপন করা ও আদালতের আদেশে স্থগিত থাকা ঋণ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাত সংস্কারে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩০ শতাংশে উঠে যেতে পারে বলে মুদ্রানীতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
৩৫৬ কোটি টাকার পাম অয়েল কিনবে সরকার

দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য দুই কোটি ২০ লাখ লিটার পরিশোধিত পাম অয়েল কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) পদ্ধতিতে এই তেল কেনা হবে। প্রতি লিটারের দাম ধরা হচ্ছে ১৬২ টাকা ১৯ পয়সা। এতে দুই কোটি ২০ লাখ লিটার পাম অয়েল কিনতে মোট ব্যয় হবে ৩৫৬ কোটি ৮১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি অনুমোদন দিলে শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে এই ভোজ্যতেল কেনা হবে। কমিটির পরবর্তী বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাম অয়েল কেনার প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা টিসিবির ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় ভোজ্যতেল কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৮ কোটি লিটার। এরমধ্যে ১৫ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার লিটার কেনার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। মোট চাহিদার অংশ হিসেবে আরও দুই কোটি ২০ লাখ লিটার পরিশোধিত পাম অয়েল কেনার উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির অধীন স্থানীয় ক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহ, কার্যসম্পাদন বা ভৌত সেবার জন্য বিজ্ঞাপন পত্রিকায় প্রকাশের তারিখ থেকে দরপত্র প্রণয়ন ও দাখিলের জন্য ন্যূনতম ২৮ দিন সময় ধার্য থাকলেও পিপিআর-২০০৮ এর বিধি ৬১ (৫) অনুযায়ী অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির গত ৪ জুন তারিখের সভায় টিসিবির জন্য স্থানীয় দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে দরপত্র প্রণয়ন ও দাখিলের সময়সীমা ২৮ দিনের পরিবর্তে ১৪ দিন করার সিদ্ধান্ত হয়।
স্থানীয়ভাবে দুই কোটি ২০ লাখ লিটার পরিশোধিত পাম অয়েল কেনার জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ অনুসরণ করে গত ১৩ জানুয়ারি উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রের বিপরীতে আংশিক অর্থাৎ সর্বনিম্ন ৫৫ লাখ লিটারের প্রস্তাব দাখিলের সুযোগ রাখা হয়। দরপত্র দাখিলের সর্বশেষ সময় ২৬ জানুয়ারি এবং দরপত্র উন্মুক্তকরণের সময় ২৭ জানুয়ারি বেলা ১২টা পর্যন্ত ধার্য ছিল।
কিন্তু কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে দরপত্র দাখিলের সর্বশেষ সময় ২ ফেব্রুয়ারি এবং দরপত্র উন্মুক্তকরণের সময় ৩ ফেব্রুয়ারি পুনঃনির্ধারণ করে। পরবর্তীসময়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বৈধতার মেয়াদ ১৪ মে তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি ৩ ফেব্রুয়ারি প্রাপ্ত দরপত্র উন্মুক্ত করে একটি দরপত্র পায়। দরদাতা প্রতিষ্ঠান শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড তাদের প্রস্তাবে ২ লিটারের পেট বোতলে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার পাম অয়েল প্রতি লিটারের দাম ১৬২.১৯ টাকা দরে সরবরাহের প্রস্তাব করে। যার দাপ্তরিক প্রাক্কলিত দর ছিল ১৭৪ টাকা ৬৩ পয়সা । অর্থাৎ প্রস্তুতি দাম প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ১২ টাকা ৪৪ পয়সা কম।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা ৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। মূল্যায়ন কমিটি প্রাপ্ত একটি দরপত্র, তুলনামূলক বিবরণী এবং সংযুক্ত দাখিল করা কাগজ পর্যালোচনা করেন। পর্যালোচনা শেষে, দাখিল করা দরপত্রটি রেসপনসিভ হিসেবে বিবেচিত হয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি প্রাপ্ত প্রস্তাবিত দরের বিষয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনা শেষে, পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৯৯ (জ) অনুযায়ী রেসপনসিভ দরদাতা শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের দরপত্রে প্রস্তাবিত ১ কোটি ১০ লিটার পাম অলিন এর সঙ্গে প্রতি লিটার ১৬২ টাকা ১৯ পয়সা দরে অবশিষ্ট ১ কোটি ১০ লাখ লিটারসহ সম্পূর্ণ পরিমাণ অর্থাৎ ২ কোটি ২০ লাখ লিটার পাম অয়েল সরবরাহ করার জন্য সম্মতি চাওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি অবশিষ্ট পরিমাণ পাম অয়েল সরবরাহে সম্মতি প্রকাশ করে এবং লিখিতভাবে জানায়।
দরপত্রে প্রস্তাবিত ১ কোটি ১০ লাখ লিটারের সঙ্গে অবশিষ্ট ১ কোটি ১০ লাখ লিটারসহ সর্বমোট ২ কোটি ২০ লাখ লিটার বোতলজাত পরিশোধিত পাম অয়েল ২ লিটার পেট বোতলে প্রতি লিটার অগ্রিম আয়কর, প্রযোজ্য মূসক ও টিসিবির গুদামে পরিবহন খরচসহ ১৬২ টাকা ১৯ পয়সা দরে মোট ৩৫৬ কোটি ৮১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় কেনার সুপারিশ করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি।
সূত্র জানায়, এই পাম অয়েল মে মাসে গ্রহণ করা হবে এবং টিসিবির বিক্রয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে এই সময়ে মজুত বিবেচনায় ভোজ্যতেলের প্রয়োজনীয়তা থাকায় দরপত্র মূল্যায়ণ কমিটির সব সদস্য ক্রয়ের বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড, ভরি ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা

দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আবার বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণেয় চার হাজার ৭১৩ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকা। দেশের বাজারে সোনার এত দাম আগে কখনো হয়নি।
স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
এর আগে গত ২০ এপ্রিল সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ২ হাজার ৬২৪ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৩৩ টাকা। এতোদিন দেশের বাজারে এটিই সোনার সর্বোচ্চ দাম ছিল। এই রেকর্ড দাম নির্ধারণ করার দুদিন পর এখন আবার দাম বাড়ানো হলো। এতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় উঠেছে সোনা।
সোমবার (২১ এপ্রিল) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তীসময়ে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় চার হাজার ৭১৩ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় চার হাজার ৪৯১ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৯৬ টাকা।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের সোনায় ভরিপ্রতি ৩ হাজার ৮৬০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৪১ হাজার ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনায় ৩ হাজার ২৮৯ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৮০ টাকা।
এর আগে গত ২০ এপ্রিল সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৬২৪ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮৩৩ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৫০৮ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ১৩৫ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩০৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৮৩২ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৯১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আজ সোমবার পর্যন্ত এ দামেই সোনা কেনাবেচা হয়েছে।
সোনার দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রূপার দাম। ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রূপা ২ হাজার ৫৭৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের ২ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ২ হাজার ১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রূপার দাম এখন ১ হাজার ৫৮৬ টাকা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
২০২৩ সালে কর ফাঁকি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা: সিপিডি

কর ফাঁকির কারণে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ২ লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ হারিয়েছে করপোরেট কর ফাঁকির কারণে। ২০২৩ সালে আনুমানিক করপোরেট কর ফাঁকির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সাল থেকে কর ফাঁকির পরিমাণ বেড়েছে, ২০১২ সালে ৯৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা এবং ২০১৫ সালে তা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকায় পৌঁছায়। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্স অ্যাসোসিয়েট তামিম আহমেদ।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক অবস্থার মতো বাংলাদেশেও করপোরেট কর কমতির দিকে। পোশাক, আইসিটিসহ অনেক খাত কর সুবিধা পেয়ে থাকে। ২ লাখ ৮৮ হাজার কোম্পানি রেজিস্ট্রার্ড, কিন্তু ট্যাক্স রিটার্ন সাবমিশন করেছে মাত্র ৯ শতাংশ কোম্পানি বা ২৪ হাজার ৩৮১ কোম্পানি। এটা একটা বড় বৈষম্য। যারা কর দিচ্ছে তাদের ওপর করের বোঝা বাড়ছে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আগামী দিনে সরকার যদি উচ্চমাত্রায় রাজস্ব না পান তাহলে ভর্তুকি, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, দক্ষ জনবল তৈরি করা সরকারের পক্ষে সহজ হবে না। প্রত্যক্ষ কর, অপ্রত্যক্ষ কর ও কর বহির্ভূত আয় এই তিন উৎস থেকে মূল রাজস্ব আদায় করি। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আসে করপোরেট খাত থেকে। প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্ব এখান থেকে আসে। আর ভ্যাট থেকে আসে ৪০ শতাংশ রাজস্ব। এই দুই উৎস থেকে প্রায় ৬০ ভাগ রাজস্ব প্রতিবছর আসছে। এ জন্য করপোরেট কর ও ভ্যাটের সংস্কার নিয়ে আমরা আলোচনা করতে চাই।
তিনি বলেন, প্রতিবছর বাজটে আসলে প্রেশারগ্রুপ সরকারের উপর চাপ দিতে থাকেন তার কর হার কমানোর জন্য। এর ফলে কর নিয়ে সরকারের যে লক্ষ্য তা প্রায়শই বিচ্যুত হয়, এটা খোলস আকারে থেকে যায়। যার পরিণতি ভালো হয়না। কর জিডিপির বাড়ানোর লক্ষ্যে আগামী দিনে একটি কাঠামো প্রণোয়ন করা প্রয়োজন।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমাদের গবেষণায় দেখতে পেয়েছি, ২০২৩ সালে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি কর ফাঁকি হয়েছে। এনবিআর কি পরিমাণ প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করছে। শুধু যে কর ফাঁকি তা নয়, করজালের বাইরেও অনেক খাত ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যাদেরকে করজালের মধ্যে আনা যায়নি। এই বিপুল পরিমাণ ফাঁকি রোধ করতে পারলেও বড় পরিমাণ অর্থ বা রাজস্ব আদায় সম্ভব।
তিনি বলেন, ডিজিটালইজেশন কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। ব্যবসায়ী ও এনবিআরের স্বার্থে এটা করা জরুরি। অথচ এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের এক ধরনের অনীহা রয়েছে। বাংলাদেশে যে কোনো লেনদেন একক ডিজিটাল সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। যাতে করে যে কোনো লেনদেন ট্রেস ও ট্র্যাক করা যায়। সেটার আলোকে দাখিলকৃত রিটার্নকে ভেরিভাই করা যায়।
ক্রিশ্চিয়ান এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন বলেন, বেশিরভাগে নিম্ন আয়ের দেশ প্রত্যক্ষ করের ওপর নির্ভরশীল। এটা পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যখন এলডিসি গ্রাজুয়েশন করছি প্রত্যক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।
সিপিডি বাংলাদেশের ক্রমাগত কর ফাঁকি সমস্যার পেছনে বেশ কয়েকটি মূল কারণ চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ করের হার, দুর্বল প্রয়োগ, জটিল আইনি কাঠামো এবং কর ব্যবস্থার মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতি।
সিপিডি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, কর ন্যায়বিচারের দৃষ্টিকোণ থেকে, উচ্চ মাত্রার কর ফাঁকি সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে এবং যারা আইন অনুসরণ করে তাদের ওপর বোঝা বাড়িয়ে দেয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
নয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকা

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৯ মাস (জুলাই-মার্চ) শেষে রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। যেখানে অর্থবছরের আট মাস (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার বেশি পিছিয়ে ছিল রাজস্ব জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
গত জানুয়ারিতে শতাধিক পণ্যের ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধি কিংবা আয়কর রিটার্ন জমায় জোর প্রচারণার পরও রাজস্ব আদায়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রভাব ফেলতে পারেনি।
মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ওই সময়ে এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ২২ হাজার ১৫২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে পাওয়া তথ্যানুসারে, মার্চ পর্যন্ত গত নয় মাসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৭৯.৬২ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এনবিআর। রাজস্ব আহরণে আয়কর, শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
সূত্র জানায়, ৯ মাসে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা কম। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ২.০৯ শতাংশ।
একই সময়ে শুল্ক আদায় হয়েছে ৭৪ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা কম। এ খাতে প্রবৃদ্ধি ০.৩৮ শতাংশ।
অন্যদিকে আয়কর আদায় হয়েছে ৮৬ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৯ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা কম। আর প্রবৃদ্ধি ৫.৬৭ শতাংশ।
এনবিআর সূত্র বলছে, কেবল মার্চে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩৪ হাজার ৬৬৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ঘাটতি ৭ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। লক্ষ্যের তুলনায় ঘাটতি থাকলেও এ সময় রাজস্ব আহরণে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি ৯.৬৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবে অর্থবছরের মাঝপথে এসে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি করা হয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
আমদানি মূল্য পরিশোধের নিয়মে পরিবর্তন আনলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

আমদানি মূল্য পরিশোধের নিয়মে বড় পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে যৌক্তিক ত্রুটি থাকলে ত্রুটিপূর্ণ আমদানি বিলের বিপরীতেও মূল্য পরিশোধ করা যাবে। এ নিয়ম চালুর ফলে বিদেশি সরবরাহকারীরা বিলম্বে অর্থ পাওয়ার ঝুঁকি থেকে মুক্ত হবেন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
রবিবার (২০ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে।
এতে বলা হয়, আমদানিকারকদের সম্মতিতে যৌক্তিক ত্রুটিসম্পন্ন আমদানি বিল ব্যাংকগুলো গ্রহণ করতে পারবে এবং তার বিপরীতে অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। তবে, পণ্যে যেন কোনো পরিবর্তন না আসে তা নিশ্চিত করতে হবে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়, আমদানিকারকদের কাছ থেকে পাওয়া আমদানি বিলের বিপরীতে ডেলিভারি অর্ডার দেওয়ার সময়ও ব্যাংকগুলোকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে ডকুমেন্টে কোনো ত্রুটি থাকছে কি না তা যাচাই করতে হবে।
এর আগে কাস্টমস থেকে পণ্য খালাসের পর বিল অব এন্ট্রি জমা দিলেই কেবল ত্রুটিপূর্ণ আমদানি বিল বা আমদানিকারকের কাছে সরাসরি আসা বিলের বিপরীতে মূল্য পরিশোধ করা যেত।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে ত্রুটিপূর্ণ বিলের কারণে পণ্য খালাসে দেরি হতো এবং বিদেশি সরবরাহকারীদের অর্থ পেতে অপেক্ষা করতে হতো। এখন নিয়ম সহজ হওয়ায় তারা সময়মতো মূল্য পাবেন। এতে তাদের ঝুঁকি কমবে।
তাদের মতে, নতুন নিয়ম আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে আমদানি ব্যয় কমবে। কারণ এতে কনফারমেশন চার্জ ও আমদানি ঋণের সুদের হার কমে আসবে।