আন্তর্জাতিক
শেখ হাসিনা দালাই লামা নন, ভারতের উচিত তাকে সমর্থন বন্ধ করা: দ্য প্রিন্ট

গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ১৮০তম দিনেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। তার এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে— অনেকেই ভাবতে শুরু করেন তার দল আওয়ামী লীগ হয়তো প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করছে। শুরুতে যা ছিল শেখ হাসিনার একটি সাধারণ ফেসবুক পোস্ট, বাংলাদেশের হাজার হাজার তরুণরা তা কার্যত লুফে নেয়। সেইসঙ্গে ঢাকার কেন্দ্রে প্রতিবাদীদের একটি বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা যতক্ষণে তার বক্তৃতা শুরু করেন, ধানমন্ডি ৩২-এর ঐতিহাসিক ভবনটির সামনে আনা হয় কয়েকটি বুলডোজার, ততক্ষণে আগুনে জ্বলছিল ভবনটি। ঐতিহাসিক এই বাড়িতেই শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মুকুটহীন রাজা হিসেবে তার শেষ দিনগুলো কাটিয়েছিলেন। হলুদ বুলডোজারের বড় ধাতব ব্লেডগুলো ভবনের একের পর এক অংশ গুঁড়িয়ে দিতে শুরু করে। এই ভবন থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
ঘটনাটি অনেককে, এমনকি বাংলাদেশের এস্টাবলিস্টমেন্ট সদস্যদেরও বিস্মিত করেছে। প্রায় ৪০ জন সেনা সদস্য রাস্তার মুখে গিয়ে ওই বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তারা বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভের মুখে সেখান থেকে সরে যান।
পরদিন সূর্যোদয়ের সময় বাংলাদেশ যখন জেগে ওঠে তখন তার ল্যান্ডস্কেপে পরিবর্তন ঘটে গেছে— বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যা করতে পারেনি, তা ওই রাতের ৯ ঘণ্টায় ঘটেছিল। ৩২ নম্বর রোডের ভবনটিতে ইট ও ছাই- ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
কিন্তু ভুল বুঝবেন না। এরা বিক্ষুব্ধ জনতা বা ধর্মান্ধরা নয় যারা ইতিহাসকে নতুন করে লেখার চেষ্টা করছে বা বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালের আগের দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে যখন দেশটি পাকিস্তানের অংশ ছিল। বাড়িটি ভাঙার সাথে সাথে যারা হাততালি, উল্লাস ও সেলফি তুলছিলেন তাদের মধ্যে দেশের ইংরেজি-শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এবং শহুরে মানুষও দাঁড়িয়েছিলেন।
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে হাসিনা ও তার দোসরদের হাতে তাদের ভোটাধিকার হরণ হতে দেখেছে তারা। বিক্ষোভেকারীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন যারা হাসিনার শাসনামলে একের পর এক কারচুপির নির্বাচনের কারণে তাদের জীবনে কখনো ভোটই দিতে পারেননি।
অবশ্য ভোটে কারচুপি করলেও মানুষের সমর্থন পেতে হাসিনা তার বাবার উত্তরাধিকার এবং দেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করেছেন। এই কাজটা তিনি এতটাই করেছেন যে- সাধারণ বাংলাদেশিরা মুজিবকে হাসিনা থেকে আলাদা ভাবতে পারেননি। উভয়ই দুঃখজনকভাবে একে অন্যের সাথে মিলে গিয়েছেন। হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে এখন ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এই আবহে ভারত এখন পররাষ্ট্রনীতির জালে আটকে পড়েছে। ঢাকায় এখন আবেগ তুঙ্গে।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ এহতেশাম হক বলেছেন, লাখ লাখ ভুক্তভোগী মানুষ তাদের নিপীড়কের প্রতীককে সম্মান করবে বলে আপনি আশা করেন? যা কিনা ইট-বালি দিয়ে তৈরি একটি বাসা মাত্র- আপনি কি আমাদের কাছ থেকে চুরি করে নেওয়া সম্পদ ফিরিয়ে দিতে পারবেন? আমাদের দেশবাসীর কাছ থেকে নৃশংসভাবে কেড়ে নেওয়া চোখ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফিরিয়ে আনতে পারবেন? আজকে ভেঙে ফেলা প্রতিটি ইট ন্যায়বিচারের প্রতীক, যা নিপীড়ক শাসকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করছে। মুজিবকে গুম, অপশাসন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতীকে পরিণত করেছেন শেখ হাসিনা। ৩২ নম্বর রোডের বাড়িটি, যাকে একসময় বাংলাদেশিদের গর্বের স্মারক হিসেবে দেখতেন, তা এখন হাসিনা নামের সমার্থক হয়ে উঠেছে।
ভারতের আওয়ামী লীগের সমস্যা
শেখ মুজিবুর রহমান যখন পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির সেন্ট্রাল জেল মিয়ানওয়ালিতে বন্দি ছিলেন তখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। মুজিবকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর তাজউদ্দীন আহমেদসহ মোট চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়। তাজউদ্দীনের বিধবা স্ত্রী ও সোহেল তাজের মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন করেন এবং ১৯৭৭ সালে দলটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ৩২ নম্বর রোডের বাড়িটি ধ্বংস হয়ে যাবার একদিন পরও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সোহেল তাজ কোনও সমালোচনা করেননি। কারও নাম না করে তিনি তার দলের দুঃখজনক অবস্থার জন্য ১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা শেখ হাসিনার ওপরই দোষারোপ করেছেন। তিনি বলেন, কেউ একজন এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দলের সুনামই আজ প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
যতবারই মিডিয়ায় শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশিত হয় ততবারই তার প্রতি ভারতের নিরবচ্ছিন্ন এবং অটল সমর্থনের প্রশ্নটিও সামনে এসে যায়। কয়েকদিন আগে, শেখ হাসিনা তার দলের সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন- যারা তার বিরোধিতা করেন তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দিতে। একটি অডিও ক্লিপে তাকে বলতে শোনা যায়, “তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিন।”
এটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে, শেখ হাসিনা কোনও দালাই লামা নন যে, তিনি বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতকে নৈতিক সংকটে ফেলবেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন এবং আওয়ামী লীগ হচ্ছে বাংলাদেশে ভারতের একমাত্র মিত্র। কিন্তু শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে পুনর্বাসন করা এককথায় অসম্ভব, বিশেষ করে যখন সারাদেশে তার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি এখনও জনসাধারণের মনে টাটকা, সতেজ। ৩২ নম্বর রোডে মুজিবের বাড়ি ভাঙা তারই একটি বহিঃপ্রকাশ।
অবশ্য শেখ হাসিনা সেই দুর্ভাগ্যজনক বক্তৃতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তার বিরোধীরা বিশৃঙ্খল অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল- হাসিনার বিরুদ্ধে বিপ্লবের দিকে পরিচালিত আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিতে শুরু করেছিল। কিন্তু, হাস্যকরভাবে, শেখ হাসিনা সফলভাবে তার বিরোধীদের আবার একত্রিত হওয়ার রসদ যুগিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি সক্ষম হয়েছেন। যে মুহূর্তে শেখ হাসিনার ছায়া দিগন্তে আবির্ভূত হয়েছিল, নিজেদের মধ্যে সব মতবিরোধ তারা দ্রুত ভুলে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) বেশ অস্বস্তিকর অবস্থানে ফেলেছে। ভারতকে খুশি করতে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে দলটি। ভারতবিরোধী বক্তব্য না দেওয়ার ও ছড়ানোর ব্যাপারেও সতর্ক রয়েছে বিএনপি। কিন্তু দিনশেষে দলটির নেতাদের নির্বাচনের সম্মুখীন হতে হবে- আর তাই বিএনপি কতদিন তার কণ্ঠ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে।
এই মুহূর্তে ভারতকে দেশের তরুণ প্রজন্মের চোখ দিয়ে বাংলাদেশকে দেখতে হবে, যারা বছরের পর বছর ধরে শেখ হাসিনার হাতে নিজেদের মৌলিক মানবিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হতে দেখেছে। হাসিনার হাতে কেবল দুটি অস্ত্র ছিল- তার বাবার উত্তরাধিকার এবং ভারতের সমর্থন। মুজিবের ঐতিহাসিক বাসা ধ্বংসকে এই আলোকে দেখা উচিত এবং বিপুলসংখ্যক জনগণের মধ্যে ভারতের বিরুদ্ধে বিরাজমান ব্যাপক ক্ষোভকে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝা উচিত। নয়া দিল্লিকে অবশ্যই তার গর্ব খর্ব করতে হবে এবং বুঝতে হবে যে, এটি এমন একটি দেশের স্বৈরশাসককে নির্লজ্জভাবে সমর্থন করেছে- যার সাথে রয়েছে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম স্থল সীমান্ত। শুধু প্রয়োজন সাবেক ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর মতো বাস্তব বুদ্ধি। এমনকি অতীতে যখন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল তখনও তিনি বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিজের উদ্যোগে তার হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের লেনদেনের জগত
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন বাস্তববাদী মানুষ। তিনি লেনদেনে বিশ্বাসী। যেখানে সর্বোচ্চ দরদাতা যা চায় সেটাই পায়। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত বাংলাদেশ বৈশ্বিক দুই পরাশক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত মহাসাগরে কৌশলগতভাবে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশের অবস্থানকে প্রাণকেন্দ্রে হিসেবে দেখে চীন। যদি কখনও দক্ষিণ চীন সাগরে নৌ-অবরোধের মুখে পড়তে হয় সে ক্ষেত্রে সমুদ্রপথে যাওয়ার জন্য বার্মা বা বাংলাদেশ অথবা উভয়েরই প্রয়োজন হবে চীনের। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলেও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। বর্ষা বিপ্লব বাংলাদেশকে উভয় পরাশক্তির সাথে সঠিক দর কষাকষির সুযোগ করে দিয়েছে। যেখানে ভারতের সাউথ ব্লক বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার কল্পনায় অটল বলে মনে হচ্ছে।
এদিকে চীন ঢাকায় নতুন শাসন ব্যবস্থার প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখাচ্ছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতকে অবশ্যই বাংলাদেশে নতুন বন্ধু তৈরি করতে হবে। সাধারণ বাংলাদেশিদের পাকিস্তানের ছায়ামূর্তি হিসেবে চিত্রিত করা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য ভালো হতে পারে এবং পশ্চিমবঙ্গে কিছু ভোট জিততে সাহায্য করতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদী এই কৌশল ক্ষতিকারক হিসেবে প্রতিভাত হবে।
বাংলাদেশের বিষয়ে চীন বরাবরের মতোই বাস্তবতা দেখিয়েছে। তবে ভারতের বাংলাদেশ নীতি ৭৭ বছর বয়সী ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, শেখ হাসিনা দেশের মাটিতে একাধিক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছেন। ভারতের এই অবাস্তববাদী নীতির প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও উদ্বেগজনক। কারণ চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ওপর নির্ভরশীল ওয়াশিংটন।
সূত্র: দ্য প্রিন্ট

আন্তর্জাতিক
বিশ্ববাজারে বাড়ল ভোজ্যতেলের দাম

বিশ্ববাজারে কয়েক ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। এ তালিকায় রয়েছে সয়াবিন বীজ, পাম তেল ও সূর্যমুখী তেলের দাম। বাড়তে পারে সানফ্লাওয়ার ও পাম তেলের দামও। তবে আরেক ধরনের তেলের দাম কমেছে।
ট্রেড ইকোনোমিকসের তথ্যমতে, শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে প্রতি বুশেল সয়াবিনের বীজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২২ ডলার ৭৫ সেন্টে। মাস ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশ। অপরদিকে পাম তেলের দামও মাস ব্যবধানে প্রায় ৭ শতাংশ বেড়ে বর্তমানে প্রতি টন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭২ ডলার ১৬ সেন্টে। আর প্রতি টন সূর্যমুখীর তেল বিক্রি হচ্ছে ৮২ ডলারে। সপ্তাহ ব্যবধানে ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ আর মাস ব্যবধানে ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়েছে ।
অপরদিকে ক্যানোলার দাম কমেছে। পূর্বাভাস বলছে, ক্যানোলার দাম নিম্নমুখী থাকতে পারে। সর্বশেষ তথ্যমতে, মাস ব্যবধানে ২ দশমিক ৩১ শতাংশ দাম কমে প্রতি টন এই তেল বিক্রি হচ্ছে ৪৭৭ ডলার ৫৯ সেন্টে।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে এক সপ্তাহের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর পেছনে দুটি বড় কারণ- আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার কমার সম্ভাবনা এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক ঘিরে উত্তেজনা।
ব্রেন্ট ক্রুড বেড়ে ১ দশমিক ২১ ডলার বা ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৬৬ দশমিক ৮৪ ডলারে এবং মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) বেড়ে ১ দশমিক ৩১ ডলার বা ২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ৬৩ দশমিক ৯৬ ডলারে লেনদেন শেষ করেছে।
আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণায় ভারতে চালের দাম বাড়ল

বাংলাদেশের ৫ লাখ টন শুল্কমুক্ত চাল আমদানির ঘোষণার পর ভারতে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটিতে মাত্র দু’দিনে চালের দাম ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে চাল রপ্তানির তোড়জোড়ে দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও সরবরাহে সাময়িক ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।
দেশটির পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ ও দক্ষিণ ভারতের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাংলাদেশ সাময়িকভাবে চালের ওপর ২০ শতাংশ আমদানি শুল্ক তুলে নেবে বলে তাদের কাছে আগে থেকেই তথ্য ছিল। যে কারণে পেট্রাপোল সীমান্তের গুদামে পণ্য প্রস্তুত রেখেছিলেন তারা।
বুধবার বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে চাল আমদানির ২০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। এরপরই ভারতীয় ব্যবসায়ী বাংলাদেশে চাল রপ্তানিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণার পর ভারতের বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে স্বর্ণা চালের দাম প্রতি কেজি ৩৪ রুপি থেকে বেড়ে ৩৯ রুপিতে পৌঁছেছে। এছাড়া মিনিকেট ৪৯ রুপি থেকে বেড়ে ৫৫ রুপি, রত্না চাল ৩৬-৩৭ রুপি থেকে বেড়ে ৪১-৪২ রুপি এবং সোনা মসুরি ৫২ রুপি থেকে বেড়ে ৫৬ রুপি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
দেশটির চাল রপ্তানি ও বিপণন প্রতিষ্ঠান রাইসভিলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুরজ আগরওয়াল জানান, বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বুধবার দুপুরে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর সেদিন রাত থেকেই ভারত থেকে চালের ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, খরচ ও পরিবহন—উভয় দিক বিবেচনায় পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে চাল রপ্তানি করাটা সুবিধাজনক। যে কারণে উত্তরপ্রদেশ ও দক্ষিণ ভারতের কারখানা মালিকরাও এই স্থলপথেই বাংলাদেশে চাল রপ্তানি করছেন।
স্বর্ণা চালের চাহিদা সারা ভারতে রয়েছে। অন্যদিকে, পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে মিনিকেট চালের জনপ্রিয়তা আছে। এছাড়া উত্তর ভারতে বেশি খাওয়া হয় রত্না চাল। আর সোনা মসুরি দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দাদের অন্যতম প্রধান পছন্দ।
দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখা ও মূল্যস্ফীতি থেকে ভোক্তাদের স্বস্তি দেওয়ার লক্ষ্যে চাল আমদানির শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে চালের দাম ১৬ শতাংশ বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ওই অর্থবছরে ১৩ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে।
আন্ধ্রপ্রদেশের চালকল মাকিল সি কে রাও বলেন, ‘‘আমার ট্রাকগুলো বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।’’
চাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হালদার ভেঞ্চার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেশব কুমার হালদার বলেন, বিশ্ববাজারে চালের বাড়তি সরবরাহ রয়েছে এবং ভারতে সরকারি ও বেসরকারি মজুত ভালো অবস্থায় আছে। এতে বৈশ্বিক চালের দাম কমেছে। বাংলাদেশের এই রপ্তানি অর্ডার ভারতীয় বাজারে চাহিদা সৃষ্টি করে আবার চাঙ্গা ও বৈশ্বিক দামের পতন আংশিকভাবে সামলাতে সাহায্য করবে।
আন্তর্জাতিক
সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন জেলেনস্কি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সোমবার বৈঠকে বসবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শনিবার (১৬ আগস্ট) জেলেনস্কি নিজে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে তাদের দুজনের আলোচনা হবে।
গতকাল শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠক করেন ট্রাম্প। এরপর তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার দীর্ঘ ও গুরুত্বপূর্ণ আলাপ হয়েছে। এরপরই ওয়াশিংটনে তাদের তাদের বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলেনস্কি বলেছেন, “শান্তি অর্জনে সর্বোচ্চটা দিতে ইউক্রেন তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রুশ নেতার সঙ্গে বৈঠক ও তাদের মূল আলোচনার বিষয়গুলো নিয়ে আমাকে অবহিত করেছেন। এই পরিস্থিতি তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি প্রভাব রেখেছে। সোমবার, হত্যা ও যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা করতে আমি ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করব। এই আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ।”
পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প প্রস্তাব দেন পুতিন ও জেলেনস্কি চাইলে বৈঠক করতে পারেন। আর তাকে যদি এতে রাখা হয় তাহলে তিনি থাকবেন। জেলেনস্কি ট্রাম্পের এ প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সমস্যা সমাধানে রাশিয়া, ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব পর্যায়ের বৈঠক হওয়া উচিত।
ট্রাম্প দাবি করেন, জেলেনস্কি ও পুতিন দুজনই তাকে তাদের বৈঠকে চান। তবে রাশিয়া পরবর্তীতে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের সময় ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
আন্তর্জাতিক
ফোন দিয়ে নরওয়ের অর্থমন্ত্রীর কাছে নোবেল পুরস্কার চাইলেন ট্রাম্প

বেশ কিছুদিন ধরেই নোবেল নিয়ে আলোচনায় রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মাঝেই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। নরওয়েতে ফোন করে সরাসরি নোবেল পুরস্কার চেয়েছেন ট্রাম্প!
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) নরওয়ের দৈনিক ‘দাগেনস নর্যিংস্লিভ’ পত্রিকার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
দাগেনস নর্যিংস্লিভ বলছে, বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য গত মাসে নরওয়ের অর্থমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন ডয়ন ট্রাম্প। এসময় তার কাছে সরাসরি নোবেল পুরস্কারই দাবি করে বসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থমন্ত্রী জেন্স স্টলটেনবার্গ যখন অসলোর রাস্তায় হাঁটছিলেন, তখন হঠাৎ করে তাকে ফোন করেন ডয়ন ট্রাম্প। ফোনে তিনি নোবেল পুরস্কার দাবি করেন এবং শুল্ক নিয়েও আলোচনা করতে চান।
এদিকে রয়টার্সকে দেওয়া এক মন্তব্যে ট্রাম্পের ফোনকলের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন স্টলটেনবার্গ। তিনি বলেছেন, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস স্টোয়েরের সাথে ট্রাম্পের ফোনালাপের আগে শুল্ক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করার জন্য এই ফোনালাপ হয়েছিল।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারসহ হোয়াইট হাউসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এই ফোন কলে যুক্ত ছিলেন বলেও জানিয়েছেন স্টলটেনবার্গ। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানাতে রাজি হননি তিনি।
তবে নরওয়ের পত্রিকাটি জানিয়েছে, ন্যাটোর সাবেক মহাসচিব স্টলটেনবার্গের সঙ্গে আলাপে ট্রাম্প এবারই প্রথম নোবেল পুরস্কারের প্রসঙ্গ তোলেননি। আগেও এ কাজ করেছেন তিনি।
এর আগে, ইসরায়েল, পাকিস্তান, কম্বোডিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ শান্তি চুক্তি বা যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করার জন্য ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ‘আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন’ দেওয়ার বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেও বলেছেন, হোয়াইট হাউসের চারজন পূর্বসূরির পাওয়া এই সম্মাননা তিনিও পাওয়ার যোগ্য।
প্রসঙ্গত, নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রতি বছর শত শত প্রার্থীকে মনোনীত করা হলেও বিজয়ীদের নির্বাচন করে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। এই কমিটির পাঁচ সদস্যকে নরওয়ের পার্লামেন্ট নিয়োগ দেয়।
আন্তর্জাতিক
ভারতে তীর্থযাত্রীদের ভাসিয়ে নিয়ে গেল কাদার স্রোত, নিহত ৬০

বৃহস্পতিবার ভারতের স্বাধীনতা দিবসে হঠাৎ ভারী বর্ষণের ফলে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বন্যা ও ভূমিধস দেখা দিয়েছে। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, ওই ঘটনার পরদিন সেখানে অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শতাধিক মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে এটি হিমালয়ের এই ধরনের দ্বিতীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো ও ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বৃষ্টির ফলে ভারী কাদা ও বন্যার পানি বৃহস্পতিবার চাসোতি গ্রামকে ঢেকে দেয়। ওইখানে তীর্থযাত্রীরা জনপ্রিয় তীর্থস্থল মাচাইল মাতার দিকে যাওয়ার আগে দুপুরের খাবারের জন্য জমায়েত হয়েছিল। সেই সময় কাদা ও পানিতে অনেক তীর্থযাত্রী ভেসে যায়।
আহত তীর্থযাত্রী রাকেশ শর্মা বলেন, আমরা একটি বিশাল শব্দ শুনলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে স্রোতের মতো পানি ও কাদা এসে আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে গেল। মানুষ চিৎকার করছিল। কিছু মানুষ চেনাব নদীতে পড়ে গেল। অন্যরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে।
শুক্রবার উদ্ধারকর্মীরা কাদা ও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে শাবল, দড়ি ব্যবহার করে এবং স্থায়ী নয় এমন সেতু পার করে মানুষকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ব্যাগ, জামাকাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র কাদায় আচ্ছাদিত অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়েছিল। পাশাপাশি ভাঙা বিদ্যুৎ খুঁটিও দেখা যাচ্ছিল।
একজন উদ্ধারকর্মী সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, আমাদের বলা হয়েছে, আরও ১০০-১৫০ জন মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকতে পারে।
মাচাইল যাত্রা হলো হিমালয়ের উচ্চভূমির মাচাইল মাতার মন্দিরের প্রতি একটি জনপ্রিয় তীর্থযাত্রা। এই মাতা দেবী দুর্গার এক রূপ। তীর্থযাত্রীরা চাসোতি থেকে মন্দির পর্যন্ত হেঁটে যান। কারণ সেখানে গাড়ির রাস্তা শেষ হয়।
এক সপ্তাহ আগে হিমালয়ের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে একটি সম্পূর্ণ গ্রাম বন্যা ও ভূমিধসে ভেসে যায়।
ভারতের ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসে প্রায় দুই ঘণ্টার বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, প্রকৃতি আমাদের পরীক্ষা করছে। সাম্প্রতিক কয়েক দিনে আমাদের ভূমিধস, মেঘভাঙা বর্ষণ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, মেঘভাঙা বর্ষণ হলো এক ঘণ্টার মধ্যে ১০০ মিলিমিটারের বেশি হঠাৎ ও প্রবল বর্ষণ। এই বর্ষণ বিশেষ করে বর্ষাকালে পাহাড়ি এলাকায় হঠাৎ বন্যা, ভূমিধস এবং ধ্বংস ঘটাতে পারে।