টেলিকম ও প্রযুক্তি
মনের মতো ইন্টারনেট সেবা পেতে চাইলে

স্পিডের একক নিয়ে জটিলতা
বেশির ভাগ ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান তাদের সংযোগের গতি ‘এমবিপিএস’ এককে লিখে থাকেন। সমস্যা হচ্ছে, তাঁদের লেখা ‘এমবিপিএস’-এর অর্থ প্রতি সেকেন্ডে কত মেগাবিট তথ্য স্থানান্তর হচ্ছে। অনেক ব্যবহারকারীই ‘এমবিপিএস’কে মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড ভেবে থাকেন। দুটি এককের মধ্যে সম্পর্ক, ৮ মেগাবিট সমান ১ মেগাবাইট। অর্থাৎ মেগাবাইটে গতি বের করতে চাইলে ইন্টারনেট সংযোগের গতিকে ৮ দিয়ে ভাগ দিতে হবে।
সংযোগের ধরন
রাজধানী ও মূল শহরগুলোর বেশির ভাগ ইন্টারনেট সেবাদানকারীই অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে সংযোগ দিয়ে থাকেন। তবে যেসব ইন্টারনেট সেবাদানকারী এখনো ল্যান ক্যাবল দিয়ে সংযোগ দিচ্ছেন, তাঁদের সেবা ব্যবহারের সময় লক্ষ রাখতে হবে মানসম্মত তার ব্যবহার হচ্ছে কি না। ল্যান ক্যাবলের ধরন রয়েছে বেশ কয়েকটি।
এর মধ্যে ন্যূনতম ধরা যেতে পারে CAT-5E। যদি সম্ভব হয়, তাইলে CAT-6 ব্যবহার করা উচিত। ল্যান ক্যাবল সময়ের সঙ্গে দূর্বল হয়ে যেতে পারে, তাই প্রতিবছরই সংযোগের তারটি পরীক্ষা করে প্রয়োজনমাফিক পরিবর্তন করতে হবে। ল্যানের গতি দূরত্বের সঙ্গে কমতে থাকে, মূল সংযোগ বক্স যদি বাসা থেকে অনেক বেশি দূরে হয় সে ক্ষেত্রে স্পিডে তারতম্য থাকবেই।
অপটিক্যাল ফাইবারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে তারটিতে কোনো বড়সড় বাঁক না থাকে, আর কোনো অবস্থাতেই গিট দেওয়া যাবে না। অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগের জন্য বাসায় ONU, ONT, XPON বা GPON নামের একটি ডিভাইস থাকবে, সেটি হতে হবে মানসম্মত। কমদামি ডিভাইসের কারণেও ইন্টারনেট সংযোগে সমস্যা হতে পারে।
সঠিক রাউটার কেনা
ওয়াই-ফাই রাউটার কেনাটা অনভিজ্ঞদের জন্য জটিল প্রক্রিয়া। রাউটার নির্মাতারা চটকদার সব বিজ্ঞাপনী শব্দ ও সংখ্যা ব্যবহার করে ডিভাইসটির প্রকৃত পারফরম্যান্স বুঝতেই দিতে চায় না। রাউটারের পারফরম্যান্স বুঝতে হলে কিছু টার্ম মাথায় রাখতে হবে।
ইন্টারনেটের সঙ্গে রাউটার সংযুক্ত হয় পেছনে থাকা ইথারনেট পোর্টের মাধ্যমে, WAN/LAN নামেও পরিচিত। সর্বোচ্চ কত গতিতে ফাইল আদান-প্রদান বা ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যাবে, তা সরাসরি ওয়্যান পোর্টের গতির ওপর নির্ভরশীল। বাজারে থাকা প্রচুর বাজেট রাউটারে ‘৩০০ মেগাবিট’ বা ‘১১৫০ মেগাবিট’ গতি লেখা থাকলেও খুঁটিয়ে দেখলে প্রথমেই চোখে পড়বে ইথারনেট পোর্টের গতি ১০/১০০ মেগাবিট। অর্থাৎ ওয়াই-ফাইয়ের সর্বোচ্চ গতি হয়তো ১১৫০ বা ১২০০ মেগাবিট হতে পারে, কিন্তু ইন্টারনেটের গতি ১০০ মেগাবিট বা ১১.৫ মেগাবাইটের বেশি হবে না। আজকাল প্রচুর ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান দেশের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক বা BDIX গতি দিচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে ১০০০ মেগাবিট বা ১ গিগাবিট। তাই সম্ভব হলে অবশ্যই গিগাবিট ইথারনেট পোর্টসহ রাউটার কিনতে হবে।
এরপর আসছে ল্যান ক্যাবল। অপটিক্যাল ফাইবারের ONU ডিভাইস থেকে রাউটারের সংযোগ দেওয়ার ক্যাবল যেন অন্তত CAT-5E গিগাবিট গতির হয়, সেটা লক্ষ করতে হবে। যাঁরা রাউটারের সঙ্গে ডেস্কটপ ল্যানের মাধ্যমে সংযুক্ত করে থাকেন তাঁদের সেই ক্যাবলটিও গিগাবিট সমর্থিত কি না সেটা দেখতে হবে। বর্তমানে গিগাবিট সমর্থিত ক্যাবল আর কম গতির ক্যাবলের মূল্য সমান, তাই কম গতির ক্যাবল কেনার কোনো মানে নেই।
বাসার আকৃতি, রাউটার রাখার জায়গা এবং কী পরিমাণ ডিভাইস ব্যবহৃত হবে, সেটাও মাথায় রাখতে হবে। চেষ্টা করতে হবে রাউটারে বাসার মধ্যভাগে রাখতে। আর ২০০০ স্কয়ার ফুট জায়গা কভার করতে পারে এমন রাউটার কিনতে হবে। যদি এক রুমের বাইরে ওয়াই-ফাইয়ের দরকার না হয়, যেমন মেস বা সাবলেট বাসায়, সে ক্ষেত্রে রেঞ্জ অতটা জরুরি নয়। সর্বোচ্চ কতটি ডিভাইস চলবে সেটা হিসাব করে রাউটারের বাজেট করা উচিত। সাধারণত বাজেট রাউটারগুলো ২০টি ডিভাইসের বেশি হলে ভালো স্পিড ধরে রাখতে পারে না। বেশ কিছু প্রযুক্তি যেমন MU-MIMO বা QoS থাকলে স্পিডের স্ট্যাবিলিটি বাড়বে।
গত পাঁচ বছরে বাজারে আসা বেশির ভাগ ডিভাইস ৫ গিগাহার্জ ওয়াই-ফাই সমর্থন করে। ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ। সাধারণ ২.৪ গিগাহার্জ ওয়াই-ফাইয়ের চেয়ে ৫ গিগাহার্জ ওয়াই-ফাইয়ের রেঞ্জ কম, কিন্তু স্পিড অনেক বেশি। অবশেষে অবশ্যই রাউটারের ওয়াই-ফাই কোন প্রজন্মের সেটা দেখতে হবে। যদি সম্ভব হয় অন্তত ওয়াই-ফাই ৬ সমর্থিত রাউটার কেনা উচিত। বাজেট থাকলে ওয়াই-ফাই ৭ সমর্থিত রাউটারও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। যেহেতু ওয়াই-ফাই রাউটার বহু বছর একটানা ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তাই চেষ্টা করা উচিত সামর্থ্যের মধ্যে সেরাটা কেনার।
যত দূর সম্ভব ক্যাবল ব্যবহার করুন
ওয়াই-ফাই প্রযুক্তিটি চমৎকার, কিন্তু আজও ইথারনেট তথা ল্যানের চেয়ে নির্ভরযোগ্য নয়। ডেস্কটপ পিসি সব সময়ই ল্যানের মাধ্যমে সংযুক্ত করা উচিত। একাধিক রুমে ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্যও ল্যান ক্যাবল ব্যবহার করা সবচেয়ে সেরা উপায়। ওয়াই-ফাইয়ের সিগন্যালের মান দূরত্বের সঙ্গে দ্রুত কমতে থাকে, বিশেষ করে রাউটার ও ব্যবহারকারীর ডিভাইসের মধ্যে একাধিক ওয়াল থাকলে তার ওপর নির্ভর করাই উচিত নয়।
মেশ রাউটার
বড় এলাকা বা একাধিক তলায় ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক প্রয়োজন হলে মেশ রাউটার ব্যবহার করা উচিত। দুটি বা তিনটি রাউটারের প্যাকেজ কিনে সহজেই নেটওয়ার্কের রেঞ্জ বাড়ানো সম্ভব। আজকাল বেশির ভাগ রাউটারই মেশ নেটওয়ার্ক সমর্থন করে, তাই মূল রাউটারটি যদি মেশ রাউটার হয় তাহলে নেটওয়ার্কের পরিধি বাড়াতে পরবর্তী সময়ে সাধারণ রাউটার কিনলেও চলবে।
নেটওয়ার্ক সেটআপে করণীয়
ওয়াই-ফাই চ্যানেলভিত্তিক নেটওয়ার্ক। মাত্র ১১-১৩টি চ্যানেলে সেটি কাজ করে। রাউটার সেটআপ করার সময় আশপাশের ওয়াই-ফাইগুলো কোন চ্যানেলে কাজ করছে সেটা স্ক্যান করে, যে চ্যানেলটি কিছুটা ফাঁকা রয়েছে সেটা সেট করা উচিত। ওয়াউফাই চ্যানেল স্ক্যান করার জন্য অ্যানড্রয়েড ও আইওএসে বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে। এ ছাড়াও ইন্টারনেট সেবাদানকারীর নিজস্ব DNS সার্ভারের ঠিকানা বের করে সেটা বসাতে হবে। এ ছাড়া ইন্টারনেটের গতি কমবেশি হতে পারে, বিশেষ করে ইউটিউব ও ফেসবুকের ক্যাশ সার্ভার গতি সেই ডিএনএস ছাড়া পাওয়া যাবে না।
ওয়েব ব্রাউজিংয়ের অভিজ্ঞতা অতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের কারণে ব্যাহত হতে পারে। অবশ্যই সবার অ্যাড ব্লক করার বিবিধ উপায়গুলো ব্যবহার করা উচিত। ওয়াইফাই রাউটার ও ওএনইউ ডিভাইস যাতে অতিরিক্ত গরম না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে ব্যবহার করতে হবে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড। পাসওয়ার্ড যাতে বেহাত না হয় সেটাও খেয়াল করতে হবে।

টেলিকম ও প্রযুক্তি
স্মার্টফোনে আড়িপাতা আছে কিনা বুঝবেন যেভাবে

সাইবার অপরাধীরা আইফোন বা অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলা স্মার্টফোনে আড়ি পাততে সক্ষম অ্যাপ বা স্পাইওয়্যার যুক্ত করে দূর থেকে তার টার্গেটকৃত ব্যক্তির অনলাইন বা দৈনন্দিন কার্যক্রম নজরদারি করে থাকে। শুধু তা-ই নয়, স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে স্মার্টফোনে সংরক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও সংগ্রহ করে তারা। ফলে তথ্য বেহাত হওয়ার পাশাপাশি অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, এমনকি বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও ব্ল্যাকমেলের মুখোমুখি হতে হয়। স্পাইওয়্যারগুলো গোপনে স্মার্টফোনে প্রবেশ করানোর কারণে অনেকে জানতেই পারেন না তাদের অনলাইন বা অফলাইন কার্যক্রমে নজরদারি করা হচ্ছে। তবে বেশ কিছু লক্ষণ দেখে স্মার্টফোনে স্পাইওয়্যারের উপস্থিতি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়।
বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন ট্যাপ করাটা খুব একটা কঠিন নয়। অনেকেই ভাবছেন কীভাবে সহজে এ কাজ করতে পারে? তাদের প্রশ্নের উত্তর হলো- এ কাজের জন্য সেলফোন নেটওয়ার্ক হ্যাক করার প্রয়োজন নেই। আপনার ফোনের ভালনেরাবিলিটি বা দুর্বলতা খুঁজে বের করে সহজেই আপনার ফোনকে ট্যাপিং ডিভাইসে পরিণত করা সম্ভব।
সে যা-ই হোক কেউ যদি আপনার ফোনে আড়ি পেতে কথোপকথন শোনে তাহলে আপনি কীভাবে তা বুঝবেন এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরঘুর করছে। তাদের জন্য কয়েকটি কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা খেয়াল করলে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার ফোন ট্যাপ করা হচ্ছে।
মোবাইল ডেটার অস্বাভাবিক ব্যবহার
স্পাইওয়্যার অ্যাপগুলো ফোনের পটভূমিতে চালু থাকার পাশাপাশি সংগ্রহ করা তথ্য নিয়মিত ইন্টারনেটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাঠাতে থাকে। ফলে ব্যবহারকারীদের অজান্তেই মোবাইল ডেটার পরিমাণ কমে যায়। কোনো অ্যাপ ব্যবহার না করলেও যদি মোবাইল ডেটা কমতে থাকে, তবে বুঝতে হবে ফোনে স্পাইওয়্যার রয়েছে।
বিভিন্ন সুবিধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু বা বন্ধ
ফোন ব্যবহারের সময় বারবার চালু হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সুবিধা চালু বা বন্ধসহ অনলাইন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিভিন্ন ফাইল নামতে থাকলে বুঝতে হবে ফোনে স্পাইওয়্যার রয়েছে।
ব্যাটারির চার্জ দ্রুত কমার পাশাপাশি ফোন গরম হওয়া
স্পাইওয়্যার অ্যাপগুলো সব সময় ফোনের পটভূমিতে চালু থাকে। আর তাই ফোনের ব্যাটারি নিয়মিত খরচ হতে থাকে। এ জন্য অল্প কিছু সময় ফোন ব্যবহার করলেই ব্যাটারির চার্জ দ্রুত কমে যাওয়ার পাশাপাশি ফোনও গরম হয়ে যায়।
গোপনে এসএমএস পাঠানো
এসএমএস না পাঠালেও যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে আপনার ফোন থেকে এসএমএস যায়, তবে বুঝতে হবে ফোনে স্পাইওয়্যার রয়েছে।
অপরিচিত অ্যাপের সন্ধান
ফোনের সেটিংস অপশন থেকে নামানো অ্যাপের তালিকা পর্যালোচনা করেও অনেক সময় স্পাইওয়্যারের উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তালিকায় অপরিচিত অ্যাপের নাম দেখলেই বুঝতে হবে, এটি স্পাইওয়্যার বা ম্যালওয়্যার। বিভিন্ন অ্যাপের যন্ত্রাংশ ব্যবহারের অনুমতি তালিকা দেখেও স্পাইওয়্যারের উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব।
স্পাইওয়্যার মুছে ফেলতে যা করতে হবে
ফোনে স্পাইওয়্যার থাকার সম্ভাবনা থাকলে প্রথমেই ফোনে অ্যান্টি-স্পাইওয়্যার অ্যাপ নামিয়ে স্ক্যান করে সেগুলো মুছে ফেলতে হবে। এর পাশাপাশি আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের হালনাগাদ সংস্করণ ব্যবহারের পাশাপাশি ফোনে থাকা অপরিচিত অ্যাপগুলো মুছে ফেলতে হবে। এরপরও স্পাইওয়্যার মুছে না গেলে ফোন ফ্যাক্টরি রিসেট করতে হবে।
টেলিকম ও প্রযুক্তি
৬৮ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করলো হোয়াটসঅ্যাপ

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ। বিশ্বের প্রায় সব শহরেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন কয়েকশ কোটি মানুষ। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০ বিলিয়নের বেশি মেসেজ আদান-প্রদান হয়হোয়াটসঅ্যাপে। এর মধ্যে শুধু ছবি আদান-প্রদানের সংখ্যা ৭০০ মিলিয়ন এবং ভিডিও আদান-প্রদানের সংখ্যা ১০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়।
হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২.৯৫ বিলিয়নেরও বেশি। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৩৫.৮ মিলিয়ন ব্যবহারকারী আছে ভারতে। এই বিশাল সংখ্যক ব্যবহারকারীর নিরাপত্তার ব্যাপারে তাইতো অনেকবেশি সচেতন। এজন্য একেবারেই ছাড় দেয় না মেটার মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্মটি। এবার ৬৮ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে হোয়াটসঅ্যাপ।
‘স্ক্যাম সেন্টার’ বা প্রতারক চক্রের সঙ্গে যোগ রয়েছে এমন সন্দেহে অ্যাকাউন্টগুলো ‘ব্যান’ করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। ২০২৫ সালের প্রথম অর্ধে এই কাজ হয়েছে বলে জানিয়েছে মূল সংস্থা মেটা। সাইবার অপরাধীরা নানানভাবে তাদের প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বর্বশান্ত করছে ব্যবহারকারীদের।
মেটার পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘অনেকক্ষেত্রেই অপরাধচক্র এই ধরনের প্রতারণা চক্র চালাত। অনেক সময়ে চাপ তৈরি করে ফোর্সড লেবার-এর মাধ্যমে মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই ধরনের অপরাধ চক্র চলত।’
এই চক্রগুলো পরপর জালিয়াতির ফাঁদ পাতত। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ থেকে শুরু করে বিপুল রিটার্ন দেওয়ার মতো লোভ দেখানো হতো। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ব্যক্তিকে লোভ দেখিয়ে প্রতারণা করার চেষ্টা করা হতো।
মেটা জানিয়েছে, টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে প্রথমে যোগাযোগ করা হতো টের্গেট ব্যবহারকারীর সঙ্গে। এরপর সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রাইভেট মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করা হতো। টার্গেট করা ব্যক্তি যাতে লোভে পা দেন, তার জন্য সাফল্যের নাম করে বিভিন্ন উদাহরণও সামনে রাখতো অপরাধ চক্রগুলো।
কোনো প্রতারণার ঘটনায় অপরাধীরা একাধিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে টার্গেটের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। এর ফলে কোনো একটি সংস্থার পক্ষে প্রতারণার পুরো চিত্র সামনে আনার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতো বলে জানিয়েছে মেটা।
মেটা এই প্রতারণা থেকে ব্যবহারকারীদের বাঁচতে করণীয় কী হতে পারে সেই ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছে। পরিচিত নন বা কন্ট্যাক্ট লিস্টে নেই এমন নম্বর গ্রুপে অ্যাড করবেন না। অপরিচিত নম্বর থেকে আসা লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।
যুক্তরাজ্যের ভোক্তা আইন বিশেষজ্ঞ লিসা ওয়েব বলেন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা ভুয়া বিনিয়োগের সুযোগ থেকে শুরু করে ছলনাময়ী পণ্য এবং অস্তিত্বহীন চাকরির অফার পর্যন্ত সবকিছুর জন্য প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনে প্লাবিত হচ্ছে। তাই মেটাকেও আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
টেলিকম ও প্রযুক্তি
আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য দুঃসংবাদ

এবার আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য দুঃসংবাদ দিলো ট্রুকলার অ্যাপ। অপরিচিত নম্বরগুলো শনাক্ত করার জন্য ট্রুকলার অ্যাপ জনপ্রিয়। কোনো অচেনা নম্বর থেকে ফোন এলে ট্রুকলারের মাধ্যমে সহজেই সেই কলারের পরিচয় জেনে নেওয়া যায়।
ব্যবহারকারীদের অ্যাপ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা ভালো করতে নানান ফিচার যুক্ত করে প্ল্যাটফর্মটি। আবার অনেক ফিচার বন্ধও করে দেয়। এবার আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য একটি আপডেট চালু করছে। সেই আপডেটের ফলেই আইওএসে কল রেকর্ডিং ফিচারটি বন্ধ হতে চলেছে। অর্থাৎ আইফোনে ট্রুকলার অ্যাপ ব্যবহার করে আর কল রেকর্ড করা যাবে না।
ট্রুকলার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে যে তারা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে আইওএসে কল রেকর্ডিং ফিচারটি বন্ধ করছে। মাত্র দুই বছর আগে আইওএস প্ল্যাটফর্মে কোম্পানিটি এই ফিচারটি চালু করে।
আইফোনে কল রেকর্ডিং ফিচারটি একেবারে শুরুর দিন থেকেই ট্রুকলারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। অ্যাপলের কল রেকর্ডিং প্রক্রিয়া অ্যান্ড্রয়েডের তুলনায় অনেক বেশি কঠিন এবং সীমিত, কারণ অ্যাপলের গোপনীয়তা নীতিগুলো খুবই কঠোর এবং থার্ড পার্টি অ্যাপগুলোকে সরাসরি কল রেকর্ড করার অনুমতি দেয় না।
এই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার জন্য ট্রুকলার একটি সমাধান ব্যবহার করেছে। এটি কল রেকর্ডিংয়ের জন্য একটি মার্জড ‘রেকর্ডিং লাইন’ ব্যবহার করেছে, যার মধ্যে কলটিকে অন্য একটি লাইনের সঙ্গে মার্জ করার প্রক্রিয়া জড়িত রয়েছে।
ট্রুকলারের আইওএস প্রধান নকুল কাবরা বলেন যে কোম্পানি এখন তার মূল বৈশিষ্ট্যগুলোতে মনোনিবেশ করতে চায়, যেমন লাইভ কলার আইডি এবং স্বয়ংক্রিয় স্প্যাম ব্লকিং। এটিই ট্রুকলারের আসল শক্তি এবং কোম্পানি এখন এই পরিষেবাগুলো উন্নত করার দিকে মনোনিবেশ করছে।
আইফোনে কল রেকর্ডিং ফিচারটি সরিয়ে ফেলার অর্থ এই নয় যে ব্যবহারকারীদের পুরোনো রেকর্ডিং মুছে ফেলা হবে। কোম্পানি ব্যবহারকারীদের তাদের রেকর্ডিং ডাউনলোড করার, ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যান্য অ্যাপের মাধ্যমে শেয়ার করার বা আইক্লাউডে সংরক্ষণ করার বিকল্প দিয়েছে। এই পরিবর্তনটি সহজে বোঝার করার জন্য ট্রুকলার একটি হেল্প পেজও চালু করেছে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে আরেকটি বড় কারণ হলো অ্যাপলের নিজস্ব কল রেকর্ডিং সিস্টেম। আইওএস ১৮.১ আপডেটের মাধ্যমে অ্যাপল তার আইফোনগুলোতে ইনবিল্ট কল রেকর্ডিং এবং ট্রান্সক্রিপশন (টেক্সটে রূপান্তর) যুক্ত করেছে। ফলে ফিচারটি সরাসরি আইওএস সিস্টেমে কাজ করে এবং ব্যবহারকারীর কোনো থার্ড পার্টি অ্যাপের প্রয়োজন হবে না।
টেলিকম ও প্রযুক্তি
এআই উন্নয়নে ২০০ কোটি ডলারের সম্পদ বিক্রি করবে মেটা

বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিস্তারে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে মেটা। ঘোষণা দিয়েছে, তাদের বিশাল এআই অবকাঠামোর ব্যয়ভার ভাগ করে নিতে ২.০৪ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলারের ডেটা সেন্টার সংক্রান্ত সম্পদ বিক্রি করবে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেটা প্ল্যাটফর্মস তাদের চলমান ডেটা সেন্টার প্রকল্পগুলোর কিছু সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে আর্থিক অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত কোয়ার্টারলি ফাইলিং-এ এই পরিকল্পনার বিস্তারিত উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটি।
মেটা জানায়, গত জুনে তারা এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। এর আওতায় ২.০৪ বিলিয়ন ডলারের জমি ও নির্মাণাধীন সম্পদকে “হেল্ড-ফর-সেল” হিসেবে শ্রেণিকরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এগুলো আগামী ১২ মাসের মধ্যে তৃতীয় কোনো পক্ষকে হস্তান্তর করা হবে। যারা ডেটা সেন্টার যৌথভাবে উন্নয়নে অংশ নেবে।
মেটার ফাইলিং অনুযায়ী, ৩০ জুন পর্যন্ত তাদের মোট হেল্ড-ফর-সেল সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩.২৬ বিলিয়ন ডলার। তবে এই সম্পদ বিক্রিতে কোনো ক্ষতি দেখায়নি প্রতিষ্ঠানটি। বরং ‘বুক ভ্যালু’ ও ‘মার্কেট ভ্যালু’র মধ্যে যেটা কম, সেটার ভিত্তিতে তা মূল্যায়ন করা হয়েছে।
এই পদক্ষেপ প্রযুক্তি জগতের একটি নতুন বাস্তবতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। যেখানে আগে গুগল, অ্যামাজনের মতো কোম্পানিগুলো নিজেদের সব অবকাঠামো নিজস্ব অর্থে নির্মাণ করত, সেখানে এখন তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত ডেটা সেন্টার তৈরির বিপুল ব্যয় মাথায় রেখে আর্থিক অংশীদার খুঁজছে।
মেটার চিফ ফিনান্স অফিসার সুসান লি এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা আর্থিক অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে ডেটা সেন্টার উন্নয়নের উপায় খুঁজছি। যদিও আমরা অধিকাংশ ব্যয় নিজেরাই বহন করবো। কিছু প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য বাহ্যিক অর্থায়ন যুক্ত হতে পারে। যা ভবিষ্যতের পরিবর্তিত অবকাঠামো চাহিদা অনুযায়ী সুযোগ দেবে।”
মেটা সিইও মার্ক জুকারবার্গ আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, এআই এবং সুপারইন্টেলিজেন্স-এর জন্য তারা সুপারক্লাস্টার নামে অনেক বড় ডেটা সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, “এই সুপারক্লাস্টারগুলোর একটি পুরো ম্যানহাটনের বড় অংশের সমান।”
এই ঘোষণার পাশাপাশি মেটা তাদের বার্ষিক মূলধন ব্যয়ের পূর্বাভাস ২ বিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে ৬৬ থেকে ৭২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। এর পেছনে রয়েছে বিজ্ঞাপন আয়ে চমকপ্রদ বৃদ্ধি। যা এআই নির্ভর কনটেন্ট ডেলিভারি ও টার্গেটিংয়ের উন্নতির কারণে সম্ভব হয়েছে।
এই বৃদ্ধি, মেটার দীর্ঘমেয়াদী এআই ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ব্যয় কিছুটা হলেও ভারসাম্য করতে সাহায্য করেছে।
জাতীয়
ভোক্তা অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তিতে মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে ভোক্তা অধিদপ্তরের সভা

দেশের ফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে ভোক্তাদের দাখিলকৃত অভিযোগসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২৮ জুলাই) সকাল ১১ টায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান।
অধিদপ্তরের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম জানান, মোবাইল ফোনের গ্রাহকগণ বিভিন্ন সময় মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছেন। কিন্তু অপারেটরগণ নিয়মিত অভিযোগের শুনানীতে উপস্থিত থাকছেন না, কোন কোন অপারেটরের পক্ষে ক্রমাগত সময় চাওয়ায় অভিযোগগুলো নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হচ্ছে।
সভায় অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) আব্দুল জলিল ও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ, গ্রামীনফোন, রবি, বাংলালিংক, টেলিটক প্রতিনিধি, বিটিআরসি প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ মোবাইল টেলিকম অপারেটর এসোসিয়েশনের মহাসচিব উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সভায় মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিরুদ্ধে ভোক্তাদের প্রাপ্ত অভিযোগসমূহ উপস্থাপন করা হয় ও পর্যালোচনা করা হয়।
সভায় বিস্তারিত আলোচনান্তে প্রাপ্ত অভিযোগসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তি ও ভোক্তাসাধারণের স্বার্থে সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়:
মোবাইল ফোন অপারেটরগণ অধিদপ্তরে দাখিলকৃত অভিযোগসমূহ আগামী ৭ (সাত) দিনের মধ্যে যাচাই বাছাই করে নিষ্পত্তিযোগ্য অভিযোগসমূহ স্বীয় উদ্যোগে নিষ্পত্তি করে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দাখিল করবেন। যেসব অভিযোগের বিষয়ে অপারেটররা দ্বিমত করবেন সেসব অভিযোগ যথারীতি শুনানীর মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিষ্পত্তি করবে। শুনানীতে নিয়মিত উপস্থিত থাকার জন্য অপারেটরগণ নির্দিষ্ট কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করবেন। অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা/আমলযোগ্যতা যাচাইয়ে যেসব টেকনিক্যাল বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে, অপারেটরগণ সেসব বিষয়ের একটা চেকলিস্ট তৈরি করে আগামী ৭ (সাত) দিনের মধ্যে অধিদপ্তরে প্রেরণ করবেন।
অব্যবহৃত ডাটা ও কলটাইম পরবর্তী প্যাকেজের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রযোজ্য শর্তাবলী স্পষ্ট করে ব্যবহারকারীকে জানাতে হবে। কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধির সাথে কোন অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার সময়ে অভিযোগকারীর সীম থেকে কলচার্জ বাতিল/গ্রহণযোগ্য করার সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করে মোবাইল ফোন অপারেটরগণ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। পুরনো সীম নতুন করে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সীমের প্যাকেটে পরিষ্কার ভাষায় ইংরেজীতে “Re-Used” এবং বাংলায় “পূর্বে-ব্যবহৃত” লিখতে হবে যাতে সীম ক্রয়ের পূর্বেই ভোক্তাগণ জানতে পারেন।
কাফি