আন্তর্জাতিক
গাজা উপত্যকা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে ইসরাইল: ট্রাম্প

ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি অঞ্চল গাজা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মোহ যেন কাটছেই না। আবারও তিনি অঞ্চলটি নিয়ে তিনি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, যুদ্ধ শেষে গাজাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করবে ইসরায়েল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, গাজা উপত্যকা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে যাবে। তবে তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তারা এর আগে তাঁর মন্তব্যের বিপরীতে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইসরায়েল গাজা উপত্যকা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিকল্পনার আওতায় ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন করা হবে, তবে কোনো মার্কিন সেনা সেখানে প্রয়োজন হবে না।’
ট্রাম্পের এই পুনর্বাসন পরিকল্পনাকে জাতিগত নির্মূলকরণের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে অনেকেই। জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং আরব নেতারা এর নিন্দা জানিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বাস্তবে রূপ নেবে না।
প্রথমবার এ বিষয়ে মন্তব্য করার পর ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দেন যে, যদি পুনর্বাসন হয়ও, সেটি সাময়িক হবে।
ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা এক পোস্টে লেখেন, তাঁর পরিকল্পনা অনুসারে গাজার বাসিন্দারা ‘এরই মধ্যে আরও নিরাপদ এবং সুন্দর সম্প্রদায়ে পুনর্বাসিত হতেন, যেখানে নতুন ও আধুনিক বাড়িঘর থাকত।’ এরপর যুক্তরাষ্ট্র গাজার পুনর্গঠনে সহায়তা করত।
তবে তাঁর এই পোস্টে পরিষ্কার করা হয়নি যে, গাজার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দাকে কি ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া হবে কি না। আন্তর্জাতিক আইনে, দখলকৃত অঞ্চল থেকে জনগণকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট গত বুধবার বলেন, যদি (গাজার) জনগণকে সরাতেই হয়, তবে তা হবে সাময়িক। একই দিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজার জনগণকে সাময়িকভাবে সরিয়ে ফেলা হতে পারে, যতক্ষণ পর্যন্ত ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করা না হয় এবং পুনর্গঠন না করা হয়।
কিন্তু এই বক্তব্য ট্রাম্পের আগের মন্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গত মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়া হবে।
হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেবে এবং আমরা এটি নিয়ে কাজ করব।’ ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেতানিয়াহু এই ধারণাকে ‘উল্লেখযোগ্য’ বলে অভিহিত করেন এবং এটি নিয়ে কাজ করা যায় বলে জানান।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই ঘোষণা তাঁর ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টাদেরও বিস্মিত করেছে। কারণ, এ বিষয়ে কোনো সুসংগঠিত পরিকল্পনা ছিল না।
গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রাম্প আরও বলেন যে, কোনো মার্কিন সেনা সেখানে (গাজায়) মোতায়েন করা হবে না। এটি হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র লেভিটের বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। লেভিট বলেছিলেন, ‘মার্কিন সেনা সেখানে যাবে না।’
এরপর গতকাল এক প্রার্থনা সভায় ভাষণ দেওয়ার সময় ট্রাম্প গাজার পরিস্থিতি নিয়ে সংক্ষেপে কথা বলেন, তবে গাজা দখলের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেননি। মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তিনি আশা করেন যে, তাঁর ‘সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন হবে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত হওয়া।’
গত ১৫ মাসের সংঘাতে মাত্র ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১০ কিলোমিটার চওড়া গাজা উপত্যকা বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। একসময় কৃষিজমি ও সবুজ ঘরবাড়িতে পরিপূর্ণ গাজা এখন বালি ও ধ্বংসাবশেষের ভাগাড় যেন।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) জানিয়েছে, এই বিপুল ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলতে ২১ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, গাজার পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা কার্যত অকার্যকর হয়ে গেছে। শরণার্থীশিবির ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর আশপাশে আবর্জনার স্তূপ জমছে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত সৌর প্যানেল ও ব্যবহৃত গোলাবারুদের রাসায়নিক পদার্থ মাটি ও পানির দূষণ ঘটাতে পারে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ধ্বংসযজ্ঞের ফলে গাজায় ৫০ মিলিয়নেরও বেশি টন ধ্বংসাবশেষ জমেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক নজিরবিহীন সীমান্ত হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল সামরিক অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।
এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৭ হাজার ৫৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত এবং ১ লাখ ১১ হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছে বলে অঞ্চলটির হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক
ইসরায়েলের নিরাপত্তা প্রধানকে বরখাস্ত

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এই হামলা আঁচ করতে ব্যর্থতার জন্য ইসরায়েলের নিরাপত্তাপ্রধানকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারের বরখাস্তের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা বৈঠক করে।
নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতিক্রমে বারকে বরখাস্তের পক্ষে মত দেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বারের দায়িত্বের শেষ দিন হবে আগামী ১০ এপ্রিল।
২০২১ সালের অক্টোবরে শিন বেতের প্রধান হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদে বারকে নিযুক্ত করা হয়েছিল।
নেতানিয়াহু গত রোববার এক ভিডিও বিবৃতিতে বারকে বরখাস্ত করার বিষয়ে তাঁর ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছিলেন। তখন তিনি বারের সঙ্গে তাঁর চলমান অবিশ্বাসের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অবিশ্বাস আরও বেড়েছে।
নেতানিয়াহুর পদক্ষেপটি ইসরায়েলিদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। জেরুজালেমে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নতুন করে হামলার বিরুদ্ধে জেরুজালেমে চলা বিক্ষোভে যোগ দেন হাজারো ক্ষুব্ধ ইসরায়েলি।
গত মঙ্গলবার থেকে গাজায় তীব্র হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। তারা বলছে, হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে তারা হামলা চালাচ্ছে।
এই হামলার মধ্য দিয়ে গাজায় দুই মাস ধরে চলা ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটে।গাজায় ইসরায়েলের নতুন এই হামলায় অন্তত ৫৯১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংস্থাটির কার্যক্রমসহ সদস্যপদের তথ্য রাষ্ট্রীয়ভাবে গোপন রাখা হয়।
বার তাঁকে পদচ্যুত করার সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বর্ণনা করেছেন।
অন্যদিকে ইসরায়েলের অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারভ-মিয়ারা বলেছেন, পদক্ষেপটির বৈধতা মূল্যায়ন না করা পর্যন্ত বারকে বরখাস্ত করা যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর একজন কট্টর সমালোচক এই অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি নিজেও বরখাস্ত প্রক্রিয়ার মুখোমুখি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগে ১৫ মাসের ইসরায়েলি হামলায় ৪৮ হাজার ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় তিন দিনে প্রায় ৬০০ প্রাণহানি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। এ নিয়ে পবিত্র রমজানে ইসরায়েলের এই বর্বর হামলায় গত তিনদিনে প্রাণ হারালো প্রায় ৬০০ ফিলিস্তিনি। এমনকি, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাতে স্থল অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ভোর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৮৫ জন নিহত ও আরও ১৩৩ জন আহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ হাজার ৬১৭ জনে দাঁড়িয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১ লাখ ১২ হাজার ৯৫০ জন আহত হয়েছেন। ভুক্তভোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে বলে আশঙ্কা করছে মন্ত্রণালয়।
আল জাজিরা বলছে, মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) গাজায় যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় ৫৯০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েলি বিমান হামলা ও স্থল হামলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিহত ও আহতের সংখ্যাও বাড়ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার রাফাতে তাদের স্থল আক্রমণ চলছে এবং সৈন্যরা বেইত লাহিয়া শহর ও উত্তর দিকে কেন্দ্রীয় এলাকায় অগ্রসর হচ্ছে। ইসরায়েল বলেছে, গাজা উপত্যকায় পুনরায় শুরু করা স্থল অভিযান আরও সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে বুধবার (১৯ মার্চ) ওই অঞ্চলের উত্তর-দক্ষিণের প্রধান পথ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি সৈন্যরা।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ইসরায়েলের বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত তেল আবিবে রকেট হামলা চালিয়েছে গাজায় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস। স্থল ও আকাশপথে ইসরায়েলের নতুন হামলায় বেসামরিক প্রাণহানি বৃদ্ধির প্রতিশোধে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
ইইউতে আশ্রয় আবেদন কমেছে ১৩ শতাংশ

২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে আশ্রয় চেয়ে করা আবেদনের সংখ্যা তার আগের বছরের তুলনায় অন্তত ১৩ শতাংশ কমেছে। ২০১৩ সাল থেকে ইইউতে আশ্রয়প্রার্থীদের প্রধান জাতীয়তা হলো সিরিয়া।
সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে গত বছরও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে আশ্রয় আবেদনের শীর্ষে ছিল মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটির নাগরিকরা। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
ইউরোপের ২৭টি সদস্য দেশের এই ব্লকের পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ২০২৪ সালে ইইউতে আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ কমে ৯ লাখ ১২ হাজারে দাঁড়িয়েছে।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুসারে, গত বছর সিরিয়ার নাগরিকদের ১ লাখ ৪৮ হাজার জন প্রথমবারের মতো আবেদন জমা দিয়েছিলেন, যা মোট আবেদনের ১৬ শতাংশ। তারপরে রয়েছে ভেনেজুয়েলা ৭২ হাজার ৮০০ (যা মোট আবেদনের ৮ শতাংশ) এবং আফগানিস্তান ৭২ হাজার ২০০ (যা মোট আবেদনের ৮ শতাংশ) নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
আনাদোলু বলছে, ২০১৩ সাল থেকে ইইউতে আশ্রয়প্রার্থীদের প্রধান জাতীয়তা হলো সিরিয়া। গত বছরের ডিসেম্বরে মধ্যপ্রাচৌর যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিতে দশকের পর দশক ধরে চলা আসাদ শাসনের পতন ঘটে, যার ফলে দেশটির ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধেরও অবসান ঘটে। প্রায় দেড় দশক আগে শুরু হওয়া সেই সংকটের কারণে সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সিরীয় অভিবাসীদের বন্যা বয়ে গিয়েছিল।
এদিকে গত বছর ২ লাখ ২৯ হাজার ৭০০ জন প্রথমবারের মতো আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার পরও ইইউতে সর্বোচ্চ সংখ্যক আবেদন গ্রহণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে জার্মানি। মূলত দেশটিতে হওয়া আবেদন ইইউতে প্রথমবারের মতো আবেদনকারীদের এক-চতুর্থাংশ।
জার্মানির পরে রয়েছে স্পেন (১ লাখ ৬৪ হাজার, ১৮ শতাংশ), ইতালি (১ লাখ ৫১ হাজার ১০০, ১৭ শতাংশ), ফ্রান্স (১ লাখ ৩০ হাজার ৯০০, ১৪ শতাংশ) এবং গ্রিস (৬৯ হাজার, ৮ শতাংশ) রয়েছে; গত বছর ইইউতে প্রথমবারের মতো আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধিতদের ৮২ শতাংশই ছিল এসব দেশের।
আনাদোলু বলছে, প্রতিটি ইইউ দেশের জনসংখ্যার তুলনায় ২০২৪ সালে গ্রীক সাইপ্রিয়ট প্রশাসনে নিবন্ধিত প্রথমবারের মতো আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ছিল সর্বাধিক (প্রতি ১০০০ জনে ৭.২ জন প্রথমবারের মতো আবেদনকারী), তারপরে গ্রিস (৬.৬), আয়ারল্যান্ড এবং স্পেন (প্রতি হাজারে ৩.৪) এবং লুক্সেমবার্গ (৩.২)।
ইইউ জনসংখ্যার তুলনায়, ২০২৪ সালে প্রতি ১০০০ জনে দুজন প্রথমবারের মতো আশ্রয়প্রার্থী ছিলেন।
ইউরোস্ট্যাট আরও জানিয়েছে, ২০২৪ সালে ৩৬ হাজার ৩০০ জন সঙ্গীহীন নাবালকও আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন, যার মধ্যে ৩২ শতাংশ সিরিয়ার (১১ হাজার ৬০০)। এছাড়া আফগানিস্তান (৫ হাজার ৭০০, ১৬ শতাংশ), মিসর (৩ হাজার, ৮ শতাংশ), সোমালিয়া (২ হাজার ৪০০, ৭ শতাংশ) এবং গিনি (১ হাজার ৩০০, ৪ শতাংশ) থেকে আবেদন করেছিলেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
এবার ইসরায়েলে রকেট হামলা চালাল হামাস

যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে পবিত্র রমজানে গাজায় ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দখলদারদের এমন নৃশংসতায় এখন পর্যন্ত ২০০ শিশুসহ ৫০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ভয়াবহ এই হামলার জবাবে এবার ইসরায়ালে হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানায়, হামলার ঘটনায় তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে বিমান চলাচলও ব্যাহত হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, গাজা উপত্যকা থেকে রকেট নিক্ষেপের পর সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে। দক্ষিণ গাজা থেকে আসা তিনটি রকেটের মধ্যে একটি ভূপাতিত করেছে এবং অন্য দুটি খোলা জায়গায় পড়েছে। কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডস এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিশোধে তেল আবিবে এই রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে।
এর আগে, তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর লক্ষ্য করে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইয়েমেনের হুতিরা। যদিও ক্ষেপণাস্ত্রটি ধ্বংস করার দাবি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরামর্শে যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে গত ১৮ মার্চ ভোরে গাজায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। সেহরির সময় দখলদারদের এই হামলার ভয়াবহতা ফুটে উঠে ভোর পেরিয়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও নিউজফিডে রক্তাক্ত-মৃত-আহত নারী ও শিশুদের লাশের ছবি ও ভিডিওতে ছেয়ে যেতে থাকে।
নৃশংস এমন তাণ্ডব চালানোর পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে পূর্ণশক্তিতে যুদ্ধ আবার শুরু করেছে ইসরায়েল। এটা কেবল শুরু।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আমরা আমাদের শত্রুদের প্রতি কোনো দয়া দেখাব না। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের সব জিম্মির বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত ইসরায়েল থামবে না।
এদিকে, আরব ও মুসলিম দেশগুলোর জনগণ এবং বিশ্বের মুক্ত মানুষকে গাজায় ইসরায়েলের বিধ্বংসী হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন লাখেরও বেশি মানুষ।
এ ছাড়া দখলদারদের হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি আগ্রাসনে লাখ লাখ বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবনতি, শীর্ষে ফিনল্যান্ড

‘বৈশ্বিক সুখী প্রতিবেদন ২০২৫’- তালিকার ১৪৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৪ তম। গত বছর ১৪৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২৯তম। এতে দেখা যাচ্ছে, গেল বছরের তুলনায় এ তালিকায় বাংলাদেশের পাঁচ ধাপ অবনতি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) ‘বৈশ্বিক সুখী প্রতিবেদন’ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতি বছরের ২০ মার্চই এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের নিচে মাত্র ১৩টি দেশ রয়েছে। যেগুলো বাংলাদেশের মানুষের চেয়ে কম সুখী।
অপরদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের পেছনে শুধু রয়েছে আফগানিস্তান। এই অঞ্চলে সবচেয়ে সুখী দেশ হলো নেপাল। এরপর যথাক্রমে রয়েছে— পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলঙ্কা।
গ্যালাপ, অক্সফোর্ডের ওয়েলবিয়িং রিসার্চ সেন্টার, জাতিসংঘের সাসটেনেবেল ডেভেলপমেন্ট সলিউসন্স নেটওয়ার্ক এবং একটি সম্পাদকীয় বোর্ড ১৪০টিরও বেশি দেশ ও দেশগুলোর মানুষের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে এই ‘সুখী দেশের তালিকা’ তৈরি করে।
অন্যান্যবারের মতো এবারও বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ফিনল্যান্ড। এরপর সেরা দশে যথাক্রমে রয়েছে— ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, কোস্টারিকা, নরওয়ে, ইসরায়েল, লুক্সেমবার্গ এবং মেক্সিকো। এরমধ্যে কোস্টারিকা এবারই প্রথম সেরা ১০টি দেশের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।