ধর্ম ও জীবন
আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা

আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো তাবলিগ জামাত আয়োজিত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপ। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টা ৮ মিনিটে মোনাজাত শুরু হয়। শেষ হয় ১২টা ২৭ মিনিটে।
মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের। তিনি প্রথম ধাপের আখেরি মোনাজাতও পরিচালনা করেছিলেন।
এই মোনাজাতের মাধ্যমেই শেষ হলো শুরায়ি নেজাম তাবলিগ জামাতের টানা ৬ দিনের বিশ্ব ইজতেমা। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা শুরু হয়। এর আগে ৩১ জানুয়ারি শুরু হয় প্রথম ধাপের ইজতেমা। আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে ২ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়।
বুধবার বাদ ফজর মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান করেন ভারতের বেঙ্গালোরের মাওলানা মো. ফারুক। তার বয়ান বাংলায় তর্জমা করেন মুফতি আমানুল হক। সকাল সাড়ে নয়টায় বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। বয়ানের পর গুরুত্বপূর্ণ নসিহতমূলক বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা।
এদিকে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মাওলানা সা’দ অনুসারী মুসল্লিদের তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে। চলবে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এদিন আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শর্ত মেনে এবার ইজতেমা করছেন সাদ অনুসারীরা। শর্ত অনুসারে টঙ্গীর ময়দানে মাওলানা সাদ অনুসারীদের এ বছরই শেষ ইজতেমা।

ধর্ম ও জীবন
আশুরার দিন যে আমল করতেন নবীজি (সা.)

আগের নবীগণের উম্মতের তুলনায় এ উম্মতের হায়াত খুব কম। তবে মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য বিশেষ কিছু সময় ও মৌসুম দিয়েছেন যে সময়ে সামান্য আমল করে সহজেই তার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। এটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত। আশুরা বলা হয়, মহররমের ১০ তারিখকে।
পবিত্র রমজানের পর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মাস বলা হয়েছে মহররমকে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, তিনি বলেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। (মুসলিম: ২৬৪৫)
আশুরার রোজার ফজিলত
বিভিন্ন হাদিসে আশুরার রোজার ফজিলত রয়েছে। হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহর কাছে আমি আশা পোষণ করি যে, তিনি আশুরার রোজার মাধ্যমে আগের এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। (তিরমিজি: ৭৫২)
আশুরার রোজা রাখার বিধান
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ওয়াজিব ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর এ দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, জাহেলি সমাজের লোকেরা রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার দিন রোজা রাখত। এ দিন কাবায় গিলাফ জড়ানো হতো। এরপর যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো তখন নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যিনি এ দিন রোজা রাখতে চায় সে রাখুক। যিনি না চায় না রাখুক। (বুখারি: ১৫৯২)
তওবা করা
তওবা গুরুত্বপূর্ণ আমল। সবার কর্তব্য এটির কদর করা। আশুরার দিন তওবা কবুলের মোক্ষম সময়। এদিনে তওবা কবুল হওয়া, নিরাপত্তা এবং অদৃশ্য সাহায্য লাভ করার কথাও রয়েছে। এ জন্য এ সময়ে এমন সব আমলের প্রতি মনোনিবেশ করা উচিত, যাতে মহান আল্লাহর রহমত বান্দার দিকে আরও বেশি ধাবিত হয়।
নবীজির এক সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল! রমজানের পর আপনি কোন মাসে রোজা রাখতে বলেন? নবীজি বলেন, তুমি যদি রমজানের পর রোজা রাখতে চাও তাহলে মহররমে রোজা রাখো। কেননা মহররম হচ্ছে আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন এক দিন আছে, যেদিন মহান আল্লাহ অতীতে অনেকের তওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও অনেকের তওবা কবুল করবেন। (তিরমিজি: ৭৪১)
আশুরার রোজা কবে?
বাংলাদেশে সোমবার (৮ জুলাই) থেকে মহররম মাস গণনা শুরু হয়। সে হিসেবে বুধবার (১৭ জুলাই) পালিত হবে পবিত্র আশুরা। এ হিসেবে মহররমের ১০ তারিখ বুধবার (১৭ জুলাই) একটি, আর এর আগে মহররমের ৯ তারিখ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) অথবা পরের দিন মহররমের ১১ তারিখ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) আরও একটি।
আশুরার রোজা কয়টি রাখতে হবে?
আশুরার রোজা দুটি রাখতে হবে। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখো, তবে এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরও একটি রোজা রেখো। (মুসনাদে আহমদ: ২১৫৪)
ধর্ম ও জীবন
আশুরায় রোজা রাখার ফজিলত

মহররম মাসের ১০ তারিখ ‘আশুরা’ উপলক্ষে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রোজা রেখেছেন এবং সাহাবিদেরও রোজা রাখতে বলেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হিজরতের পর মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, এটি একটি উত্তম দিন যেদিন আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের মুক্তি দিয়েছেন। তাই মুসা (আ.) এ দিন রোজা রাখতেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘আমি তোমাদের চেয়েও মুসার (আ.) অধিক নিকটবর্তী।’ এরপর তিনি এ দিন রোজা রাখেন, অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দেন। (সহিহ মুসলিম: ২৫৪৮)
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সব সময় আশুরার রোজা রাখতেন। কখনও তিনি আশুরার রোজা বাদ দেননি। উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রা.) বলেন, নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হলো, আশুরার রোজা, জিলহজের প্রথম দশকের রোজা, প্রতি মাসে তিন দিন রোজা, ও ফজরের পূর্বের দুই রাকাত নামাজ। (সুনানে নাসাঈ: ২৪১৬)
আশুরার দিন রোজা রাখলে আল্লাহ তাআলা এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেন। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ
আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এ রোজার কারণে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম: ২৬১৭)
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজান মাসের রোজা ও আশুরার দিনের রোজার মতো অন্য কোনো রোজাকে এত বেশি গুরুত্ব দিতে দেখিনি। (সহিহ বুখারি: ২০০৬)
আশুরার রোজা রাখবেন যে দুই দিন
ইহুদিরা আশুরা উপলক্ষে এক দিন রোজা রাখতো। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুসলমানদের নির্দেশ দেন আশুরার দিনটির আগে বা পরে আরও এক দিন মিলিয়ে দুই দিন রোজা রাখতে যেন মুসলমানদের আমল ইহুদিদের আমলের সাথে পুরোপুরি মিলে না যায়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
صُومُوا عَاشُورَاءَ وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ، صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا وَبَعْدَهُ يَوْمًا
তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ এবং তাতে ইহুদিদের বিরোধিতা কর, আশুরার আগে একদিন বা পরে একদিন রোজা রাখো। (মুসনাদে আহমদ: ২১৫৫)
আমাদের দেশে এ বছর (২০২৫ ইংরেজি মোতাবেক ১৪৪৭ হিজরি) মহররম শুরু হয়েছে গত ২৭ জুন, ১০ মহররম বা পবিত্র আশুরার দিনটি হলো ৬ জুলাই, রোববার। যারা আশুরা উপলক্ষে দুটি রোজা রাখবেন, তাদের ৫ ও ৬ জুলাই শনি ও রোববার অথবা ৬ ও ৭ জুলাই রবি ও সোমবার রোজা রাখতে হবে।
ধর্ম ও জীবন
তওবা কবুল হওয়ার পাঁচ শর্ত

তওবা মানে ফিরে আসা; সঠিক পথে ফিরে আসা, আল্লাহর পথে ফিরে আসা, জান্নাতের পথে ফিরে আসা। মানুষ যখন গুনাহ করে, আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়, তখন সে জাহান্নামের পথে এগিয়ে যায়। গুনাহের জন্য অনুশোচিত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করে আল্লাহর পথে ফিরলে বান্দার জন্য রয়েছে ক্ষমা ও জান্নাতের প্রতিশ্রুতি। আল্লাহ বলেন,
وَ سَارِعُوْۤا اِلٰي مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَ جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ.
আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সমান, যা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। (সুরা আলে ইমরান: ১৩৩)
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তার বিপথগামী বান্দাদের আহ্বান জানাচ্ছেন তার রহমত ও মাগফেরাতের দিকে ছুটে আসতে বা তওবা করতে। যে তওবা করবে সে আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভ করবে যা আল্লাহ নেক ও পরহেজগার বান্দাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
কোরআনের আরেকটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইস্তেগফার বা তওবা করলে রিজিক বৃদ্ধি, উত্তম প্রাকৃতিক পরিবেশ, সম্পদ ও সন্তান দিয়ে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দুনিয়ার সুখ সমৃদ্ধি দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহর নবি নুহের (আ.) ভাষায় আল্লাহ বলেছেন,
فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ اِنَّهٗ كَانَ غَفَّارًا،يُّرْسِلِ السَّمَآءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا، َّ يُمْدِدْكُمْ بِاَمْوَالٍ وَّ بَنِيْنَ وَ يَجْعَلْ لَّكُمْ جَنّٰتٍ وَّ يَجْعَلْ لَّكُمْ اَنْهٰرًا.
আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা। (সুরা নুহ: ১০-১২)
অর্থাৎ ইস্তিগফার ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে পরকালের নেয়ামত তো রয়েছেই, দুনিয়ার জীবনেও আল্লাহ বরকত দান করবেন। দুনিয়ার সুখ-সমৃদ্ধি, ধন-সম্পদ ও উত্তম সন্তান-সন্ততি দান করবেন।
তওবা শুধু মুখে ক্ষমা চাওয়ার নাম নয়। মুখে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি কাজকর্মে ও সর্বান্তকরণে তওবা করতে হয়। কোরআন-হাদিসের আলোকে আলেমগণ বলেন, তওবাকারী তখনই প্রকৃত তওবাকারী গণ্য হয় এবং আল্লাহর কাছে তার তওবা কবুল হয়, যখন সে পাঁচটি শর্ত পূরণ করে। শর্তগুলো হলো,
১. ইখলাস—অর্থাৎ সে যেন শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ক্ষমা লাভ করার উদ্দেশ্যে তওবা করে। অন্য কাউকে দেখানো, খুশি করা বা দুনিয়াবি কোনো লাভের জন্য তওবা করলে আল্লাহর দরবারে ওই তওবা কবুল হয় না।
২. পাপ কাজ পরিত্যাগ করা। পাপ কাজে জড়িত থেকে তওবা করলে ওই তওবা কবুল হয় না।
৩. গুনাহের জন্য অন্তরে সত্যিকারভাবে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া। কেউ যদি গুনাহের জন্য অনুতপ্ত না হয়, শুধু মুখে তওবা করে, তার তওবা কবুল হয় না।
৪. ভবিষ্যতে ওই গোনাহের দিকে আর ফিরে না যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা। অন্তরে যদি ওই গুনাহ আবার করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে তওবা কবুল হয় না।
৫. তওবা করতে হবে মৃত্যু যন্ত্রণা শুরু হওয়া বা মৃত্যুর লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই। মুমূর্ষু ব্যক্তির তওবা কবুল হয় না।
ইমাম নববি (রহ.) বলেন, তওবা কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো—তওবা করতে হবে গলার কাছে আত্মা পৌঁছানোর আগেই। সহিহ হাদিসে এসেছে, আর যখন আত্মা কণ্ঠনালিতে পৌঁছে যায়, অর্থাৎ মৃত্যুর নিকটবর্তী মুহূর্ত আসে, তখন আর তওবা কবুল হয় না। (শরহে মুসলিম লিন-নববি)
এই শর্তগুলো এমন গুনাহসমূহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যে গুনাহ শুধু বান্দা ও আল্লাহর মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে—যেমন নামাজ বা রোজা ছেড়ে দেওয়া ইত্যাদি।
যেসব গুনাহ মানুষের হক বা অধিকার সংশ্লিষ্ট, অর্থাৎ কারো ওপর জুলুম করা, কারো হক নষ্ট করা, কারো সম্পদ চুরি, ছিনতাই বা যে কোনোভাবে আত্মসাৎ করা ইত্যাদি গুনাহের তওবা কবুল হওয়ার জন্য শুধু উপরোক্ত পাঁচটি শর্ত পূরণ করা যথেষ্ট নয়, বরং এর পাশাপাশি যে ব্যক্তি জুলুম বা ক্ষতির শিকার হয়েছে, তাকেও সন্তুষ্ট করতে হবে। কারো সম্পদ আত্মসাৎ করে থাকলে তা ফিরিয়ে দিতে হবে—ওপরের পাঁচটি শর্ত পূরণের পাশাপাশি।
মানুষের ওপর জুলুমের পাপ শুধু আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেও মাফ হয়ে যায় না। এ রকম পাপ আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিনও ক্ষমা করবেন না। বরং এসব পাপের বদলায় নিজের সওয়াব তাদের দিতে হবে বা তাদের পাপের বোঝা নিজের কাঁধে নিতে হবে।
রাসুল (সা.) বলেন, কারো উপর তার ভাইয়ের কোনো দাবি থাকলে সে যেন তা থেকে মুক্ত হয়। কারণ কেয়ামতের দিন পাওনা পরিশোধের জন্য টাকা-পয়সা থাকবে না। তখন অন্যায়ের সমপরিমাণ সওয়াব পাওনাদারের জন্য নিয়ে নেওয়া হবে। সওয়াব না থাকলে পাওনাদারের গুনাহগুলো তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি)
ধর্ম ও জীবন
পবিত্র আশুরা ৬ জুলাই

দেশের আকাশে ১৪৪৭ হিজরি সনের মহররম মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আগামীকাল শুক্রবার থেকে মহররম মাস গণনা করা হবে। এ হিসাবে পবিত্র আশুরা পালিত হবে আগামী ৬ জুলাই রোববার।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের সভাকক্ষে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মহররম মাসের চাঁদ দেখা সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায় যে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র মহররম মাসের চাঁদ দেখা গেছে।
সভায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) আব্দুস ছালাম খান, ওয়াকফ প্রশাসক মো. নূর-ই-আলম, তথ্য অধিদপ্তরের উপ- প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী সরকার, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন, ঢাকা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পারভেজ চৌধুরী, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কাফি
ধর্ম ও জীবন
সৌদি আরবে কক্সবাজারের ওয়াহিদুর রহমানের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন

কক্সবাজারের কৃতী সন্তান আ.ফ.ম.ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী সৌদি আরবের মক্কা উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২৫ সালে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন।
তিনি কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলাধীন গর্জনীয়া পূর্ব বোমাংখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম মাওলানা মোহাম্মদ ইসমাইল ছিলেন, গর্জনীয়া ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হেড মাওলানা। তার দাদা মাওলানা ওবায়দুল হক চট্টগ্রামের বিখ্যাত দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন।
অ.ফ.ম ওয়াহীদুর রহমান বর্তমানে পবিত্র হারামাইন শরীফাইন সৌদি আরবের অনুবাদ প্রকল্পে বাংলা বিভাগে অনুবাদক, ভাষ্যকার ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কর্মরত।
তিনি সৌদি আরবের মক্কা উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২৫ সালে পিএইচডি অর্জন করেন। তার গবেষণা অভিসন্দর্ভের শিরোনাম ছিল- ‘ইমাম আল-বায়হাকী আস-সুনান আল-কুবরায় যা বর্ণনা করেছেন তার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ডাকার আইনশাস্ত্র’।
তিনি ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের প্রখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকার তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা থেকে হাদিস বিভাগে কামিল ও ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা-ই- আলিয়া, ঢাকা থেকে কামিল তাফসির বিভাগে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।
এর আগে কক্সবাজারের টেকনাফের রঙ্গিখালী দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের উম্মুল মাদারিস খ্যাত চুনতী হাকিমিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে যথাক্রমে আলিম ও ফাজিল পরীক্ষায় সম্মানের সাথে উত্তীর্ণ হন।
তিনি ১৯৯৯-২০০৪ ইংরেজি সাল পর্যন্ত ঢাকা মোহাম্মদপুরে অবস্থিত গাউছিয়া ইসলামীয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আ.ফ.ম.ওয়াহীদুর রহমান মাক্কী সৌদি সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ পৃথিবীর ২০টি ভাষায় খুতবাতুল আরাফার তথা হজের খুতবাহ সম্প্রচার প্রকল্পে বাংলা ভাষ্যকার হিসেবে ২০২০, ২০২১ ও ২০২৩ সালে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া ও তিনি মক্কায় ইসলামিক সেন্টার এর একজন দায়ী হিসেবে বাংলা ভাষাভাষীদের মাঝে দাওয়াতী কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।
কাফি