মত দ্বিমত
শোল মাছ আর লাউয়ের ঝোল

সেদিন বাংলা গ্রোসারি সুপারমার্কেটে গিয়েছিলাম অনেকদিন পর। গ্রোসারি বাজার, আমেরিকান সুপারমার্কেটে বাজার, আর অন্যান্য কেনাকাটা আমার সহধর্মিণীই অনেক বছর যাবৎ করে আসছে। আমি কচিৎ কিঞ্চিৎ তার সাথে যাই সময় পেলে।
গেলেই আমার পছন্দের দু‘একটা আইটেম কিনে নিয়ে আসি। নিজে নিজে রান্না করে খাবো বলে। কখনো কখনো সেটা রান্না করা হয়। বাকি গুলো সময়ের অভাবে পড়ে থাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ফ্রিজে। তারপর সেটা সহধর্মিণী রান্না করে রাখে।
এবার ভাবলাম বেশি কিছু কিনব না আমার জন্যে। একটা মাত্র আইটেম কিনব। প্রথমেই চোখে পড়লো শোল মাছের একটা প্যাকেট। তাজা শোল মাছ না। ফ্রোজেন শোল মাছ, পিচ পিচ করে কেটে, পরিষ্কার করে প্যাকেটজাত করা। এক প্যাকেটে পাঁচ পিচ। প্যাকেটে আছে ৫০০ গ্রাম। দাম ৭ আমেরিকান ডলার! ঘুরে গিয়ে শাক-সবজি যেখানে রাখে সেখানে গিয়ে দেখলাম লাউ আছে কিনা। মিলে গেল। দেখলাম বেশ সুন্দর সতেজ লাউ আছে। লাউ দিয়ে শোল মাছের ঝোল অনেকদিন খাইনি। যেমন চিন্তা, তেমন কাজ। ভাবলাম, আজ আমার যত কাজই থাকুক না কেন, শোল মাছের ঝোল রান্না করে খাওয়া খুবই জরুরী।
শোল মাছের ঝোল লাউ দিয়ে দু‘ভাবে রান্না করা যায়। প্রথমটা হল, লাউ কুচি কুচি করে কেটে নিতে হবে। তারপর সেটাকে অনেকটা ঘণ্ট রান্না করার মত করে ভাজা শোল মাছের সাথে রান্না করতে হবে। ঘন্টই হবে, তবে একটু অল্প ঝোল ঝোল হবে।
আর দ্বিতীয় রকম হলো, ঢাকার বিক্রমপুরের স্টাইলে। এই স্টাইলে রান্না করতে গেলে লাউ কাটতে হবে বড় বড় করে। আলু-কফির তরকারীতে আলু যেমন বড় করে কেটে দেয়া হয় সেরকম। আমি রেধেছি ঢাকার বিক্রমপুর স্টাইলে।
নিজের প্রশংসা না করে পারছিনা! দারুণ হয়েছে রান্না। বেশ হয়েছে খেতে। একদম যেরকম মনে মনে ভেবে ছিলাম, সেই রকম। খেয়ে পুরোটাই সাবার করে দিয়েছি এক দিনে! কিন্তু একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম যে শোল মাছের প্যাকেটে যে লেবেল আছে তাতে বাংলায় ‘শোল’ লেখা। কিন্তু মাছটা এসেছে ভিয়েতনাম থেকে। ভোক্তার চাহিদা এবং ভোক্তার সুরক্ষা দুটোই খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভোক্তা যখন তার চাহিদাকে বড় করে দেখবে তখন যে সরবরাহকারীর কোনো ত্রুটি থাকলে সরবরাহকারী আস্তে আস্তে মরে যাবে। ত্রুটিপূর্ণ সরবরাহকারী ছিটকে পড়ে যাবে, নতুন সরবরাহকারীদের আবির্ভাব হবে।
আপনারা হয়তো জানেন কিনা জানিনা, আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমেরিকাতে বছর দশেক আগে থেকেই বাংলাদেশের আইশবিহীন যত মাছ আছে সেগুলো আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র আইশওয়ালা মাছগুলোই আমদানি করা যাবে বাংলাদেশ থেকে। কারণ আমেরিকার খাদ্য ও ঔষধ গবেষণা এবং নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এফডিএ যখন টেস্ট করে দেখতে পায় যে বাংলাদেশের মাছে ফরমালিন এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ দিয়ে প্রিজার্ভ বা সংরক্ষণ করা হয়, যা কিনা শরীরের জন্য বিভিন্নভাবে ক্ষতিকারক। এ সব রাসায়নিক পদার্থ খেলে ক্যান্সার হয়, ডায়াবেটিস বাড়ায় এবং মানুষের মস্তিষ্কে বিভিন্ন রকম সমস্যা হয়। সেজন্যেই তারা বাংলাদেশ থেকে ওই ধরনের মাছগুলো আমদানী করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দিয়েছে।
এখন সেই সুযোগটা নিয়েছে যারা দুর্নীতি পরায়ণ না, যারা নিয়ম মেনে চলে, যারা ভোক্তার অধিকারকে সম্মান দেয় এবং ভোক্তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যাপারগুলোকে গুরুত্ব দেয়। তাই ভিয়েতনাম সেই জায়গাটা বা সেই শূন্যতা দখল করে নিয়েছে। যদি আমেরিকায় এক লক্ষ লোক মাসে ১ প্যাকেট করে শোল মাছ কেনে তাহলে সেই এক লক্ষ লোকের মাসে ৭ লক্ষ ডলারের শোল মাছ বিক্রি হবে। তার অর্থ হল, বছরে ৮৪ লক্ষ ডলারের শোল মাছ বিক্রি হবে। যেটা কিনা বাংলাদেশী টাকায় ১০০ কোটি টাকার সমতুল্য। প্রতিবছরে এই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ শুধু শোল মাছ থেকে। কারণ বলতে তাদের দুর্নীতি, অমানবিকতা এবং অসৎপরায়ণতাই প্রথমে মনে আসছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শুধু শোল মাছ নয়, আরো অনেক রকম মাছ রপ্তানী করতে না পেরে।
মোদ্দা কথা হচ্ছে, আমার মত শোল মাছ যারা পছন্দ করে, তাদের খাওয়া কিন্তু বন্ধ নেই এবং এটার সরবরাহ কিন্তু এসে যাচ্ছে কোনো না কোনোভাবে। যারা সৎ পথে চলে, তাদের জন্য অসৎ মানুষেরা অনেক দরজা খুলে দেয়। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হল, ভোক্তা অধিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা ভোক্তা অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবে না, যারা ভোক্তাকে সম্মান দেবে না, তারা আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বাজার থেকে, এটাই এক ধরনের কঠোর বাজার অর্থনীতি।
অমিয় দাশ, ফ্লোরিডা, আমেরিকা

মত দ্বিমত
গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস একান্তভাবেই গণমানুষের স্বপ্ন, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ কিংবা ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলন- দেশের প্রতিটি আন্দোলন ছিল ইতিহাসের একেকটি মোড় ঘোরানো ক্ষণ, যেখানে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের সন্ধানে।
এই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান আবারও প্রমাণ করেছে, রাষ্ট্র যখন নাগরিকদের ন্যায্যতা, সম্মান ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তখন জনতার অভ্যুত্থানই হয়ে ওঠে পরিবর্তনের প্রধান নিয়ামক। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রতিটি বিপ্লবের পরবর্তী সময়ই সবচেয়ে সংকটময়, কারণ তখনই শুরু হয় পুরনো কাঠামো ভাঙার ও নতুন কাঠামো নির্মাণের জটিল প্রক্রিয়া।
বর্তমানের বাংলাদেশ সেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। স্বৈরশাসনের পতনের পরও দেশে এখনো সুসংহত ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামোর ছাপ সুস্পষ্ট নয়। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কালপর্বে একদিকে যেমন পুরনো শাসনযন্ত্রের ভাঙন, অন্যদিকে তেমনি নতুন রাষ্ট্রচিন্তার অস্পষ্টতা- উভয়ের দ্বন্দ্বই জাতিকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে জাতি হিসেবে আমাদের প্রয়োজন গভীরতর আত্মবিশ্লেষণ, সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ও ব্যাপক জনশিক্ষাভিত্তিক সাংস্কৃতিক নবজাগরণ।
এই বাস্তবতায় ‘গণঅভ্যুত্থান’ কেবলমাত্র একটি দমনমূলক শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়; এটি এক নতুন সমাজব্যবস্থা নির্মাণের গভীর আকাঙ্ক্ষারও প্রতীক। এই আকাঙ্ক্ষা একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণমুখী ও মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্নকে ধারণ করে, যেখানে নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পায় নৈতিকতা, যুক্তি ও মানবিক বোধের ভিত্তিতে। এখানে ইনসাফ বা ন্যায়ের ধারণাটি আবেগনির্ভর কোনো কল্পনা নয়, বরং এটি একটি রূপান্তরধর্মী দার্শনিক ও রাজনৈতিক চেতনা, যার শিকড় বিস্তৃত মানবসভ্যতার গভীরে। প্লেটোর ‘ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র’ দর্শন থেকে শুরু করে ইবনে খালদুনের ‘আসাবিয়্যাহ’-নির্ভর সমাজ বিন্যাস, রুশোর ‘সামাজিক চুক্তি’ তত্ত্ব, মার্ক্সের শ্রেণিবিন্যাসহীন রাষ্ট্রভাবনা, গান্ধীর অহিংস মানবিকতা এবং নেলসন মেন্ডেলার ক্ষমাশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্ব- সবই এক বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার দিকনির্দেশনা দেয়, যেখানে শাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে ন্যায়, কল্যাণ ও মানবিক মর্যাদা। সুতরাং গণঅভ্যুত্থান যখন রাষ্ট্র পরিবর্তনের হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তখন তা কেবল প্রতিক্রিয়া নয়; বরং একটি সুসংগঠিত, সুনির্দিষ্ট ন্যায়ভিত্তিক ভবিষ্যতের ডাক।
ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের মৌলিক ভিত্তি হলো একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য বিচারব্যবস্থা যেখানে আইনের শাসন কেবল সাংবিধানিক ধারায় নয়, বরং নৈতিক ন্যায়ের বাস্তব রূপায়ণে প্রতিফলিত হয়। জন লক যেমন সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ‘যেখানে আইন স্তব্ধ হয়, সেখানেই অত্যাচার জন্ম নেয়’। বাংলাদেশের বর্তমান বিচারব্যবস্থা এই সতর্কবাণীকে যেন শাসন-সংস্কৃতির এক বাস্তব অভিশাপে পরিণত করেছে। দলীয় প্রভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি এখানে ন্যায় শব্দটিকেই প্রায় নিঃস্বার্থ প্রতীকে পরিণত করেছে। ইবনে খালদুন তাঁর ‘মুকাদ্দিমা’-তে গভীরভাবে উল্লেখ করেছিলেন, ‘অন্যায়ই সভ্যতার পতনের মূল কারণ’। এই কথাটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, প্রতিহিংসামূলক মামলা, নিরীহ নাগরিকের হয়রানি ইত্যাদি যদি রাষ্ট্রীয় স্তরে প্রশ্রয় পায়, তবে তা কেবল বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থার অবসান ঘটায় না; গণতন্ত্রের পথকে করে তোলে কন্টকাকীর্ণ। এর পরিণতিতে সমাজে সৃষ্টি হয় এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতা, যা কেবল আইন নয়, নাগরিক আচার- আচরণের ভিতকেও ভেঙে দেয়। ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রে বিচার হবে কেবল শাস্তির অনুশাসনে নয়, বরং তা হবে ন্যায়বোধ, মানবিকতা ও প্রক্রিয়াগত স্বচ্ছতার সম্মিলন যেখানে ন্যায় শুধু আদেশ নয়, বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থারও প্রতিফলন।
ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণে বিচার ব্যবস্থার পাশাপাশি একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অপরিহার্য। আধুনিক বিশ্বের উদাহরণে দেখা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন কিংবা রুয়ান্ডার গ্যাকাকা আদালত এই দুই বিশেষ উদ্যোগই ইতিহাসের ভয়াবহ সহিংসতা ও নিপীড়নের পর ন্যায় ও পুনর্মিলনের পথ উন্মোচনে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সদিচ্ছার শক্ত সাক্ষ্য। এগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে ন্যায় কেবল একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভিতরকার প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি নৈতিক ও জনগণসম্পৃক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতি। কিন্তু আজকের বাংলাদেশে যখন নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ, ভোটারহীন নির্বাচন কিংবা দলীয় প্রশাসনের ছত্রছায়ায় সংঘটিত একতরফা ভোট সম্পন্ন হয়, তখন গণতন্ত্র এক অভিনয়মাত্র হয়ে পড়ে। এ অবস্থাকে যেন অগ্রিম অনুমান করেছিলেন জ্যাঁ জাক রুশো, যিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্যা সোসাল কন্ট্রাক্ট’ লেখেন, ‘ইংল্যান্ডের জনগণ একমাত্র সংসদ নির্বাচনের সময় স্বাধীন। বাকি সময় তারা দাস’। অনুরূপ চিত্র বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় যেন প্রতিবিম্বিত হচ্ছে যেখানে জনগণের মতামত নির্বাচনকেন্দ্রিক আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে, কার্যকর অংশগ্রহণ নির্বাসিত।
আসন্ন নির্বাচনের আগেই নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের কার্যকলাপ নিয়ে জনমনে যে প্রশ্ন উঠছে, তা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। একটি ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রে নির্বাচন কমিশন কেবল একটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি জনগণের আস্থা ও গণতান্ত্রিক চর্চার মূল স্তম্ভ। এর কার্যক্রম হতে হবে সর্বজনগ্রাহ্য, সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বচ্ছ এবং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর, যাতে কোনো প্রকার দলীয় প্রভাব, প্রশাসনিক চাপ কিংবা অনিয়মের সুযোগ না থাকে। নির্বাচনের প্রকৃত অর্থ দাঁড়ায় জনগণের মতামতের প্রতিফলন, আর সে প্রক্রিয়ায় জনগণের অবাধ অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে গণতন্ত্র রূপ নেয় একটি ফাঁপা খোলসে। বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণে যেসব মডেল অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে, তাদের মধ্যে চিলির গণভোট প্রক্রিয়া বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। একনায়কতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে যেভাবে সেখানে একটি নতুন গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল, তা আমাদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এই উদাহরণ প্রমাণ করে, নির্বাচন তখনই অর্থবহ হয় যখন তা হয় সর্বস্তরের মানুষের আস্থাভাজন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ন্যায়ের চর্চার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়াও যেন কেবলমাত্র আইনত নয়, কার্যতও জনগণের মালিকানায় পরিচালিত হয়; আর এমন চেতনায় রাষ্ট্রযন্ত্রকে পুনর্গঠন করাই হবে একটি ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণে অর্থনৈতিক ইনসাফ বা ন্যায্যতা একটি অপরিহার্য ভিত্তি। এটি কেবল আয়বৈষম্য হ্রাস করার উদ্দেশ্য নয়, বরং সামগ্রিকভাবে সম্পদের উৎপাদন, মালিকানা ও বণ্টনে একটি ন্যায়সংগত ও অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রশ্ন। এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের নিয়ে যায় একটি গভীরতর নৈতিক ও দার্শনিক আলোচনায়। ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ‘ইনসাফ’-এর ধারণা খুব স্পষ্ট, সম্পদের ‘মালিকানা স্রষ্টার, রক্ষণাবেক্ষণের দায়দায়িত্ব মানবের; ভোগে নির্ধারিত সীমা অনুসরণ, বণ্টনে ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণ’। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অপরিহার্য হলেও তা সমাজকল্যাণ ও ন্যায়বিচারের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। কার্ল মার্ক্স একটি সুস্পষ্ট বিকল্প সমাজব্যবস্থার কথা বলেছেন, যেখানে ‘প্রত্যেকের কাছ থেকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী, প্রত্যেকের কাছে তার প্রয়োজন অনুযায়ী’ সম্পদ বণ্টিত হবে। এটি নিছক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নয়, বরং ন্যায্যতার একটি আদর্শিক ভিত্তি যেখানে ব্যক্তিরা সমাজের প্রতি তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী অবদান রাখবে এবং বিনিময়ে সমাজ তাদের প্রয়োজন মেটাবে। এর মাধ্যমে অর্থনীতির লক্ষ্য হবে শুধু মুনাফা নয়, বরং মানবিক মর্যাদা, সমতা এবং সামাজিক সাম্য নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইনসাফভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা আরও প্রকট হয়ে ওঠে, যখন দেখা যায় একদিকে অল্প কিছু মানুষের হাতে গচ্ছিত সম্পদের পাহাড়, অন্যদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ। এই বৈষম্য কেবল একটি অর্থনৈতিক ব্যর্থতা নয়, বরং রাষ্ট্রের ন্যায়ের নীতির সঙ্গে একটি ঘোরতর বিশ্বাসঘাতকতা। ইনসাফভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামো কেবল করনীতির পুনর্বিন্যাস নয়; এটি একটি সমন্বিত জনকল্যাণকেন্দ্রিক রাষ্ট্রদর্শনের দাবিদার, যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও কর্মসংস্থানকে নাগরিকের অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়; জনগণের প্রতি অনুগ্রহ হিসেবে নয়। এই কাঠামো গঠনের জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা। এর জন্য জরুরি করব্যবস্থার প্রগতিশীল সংস্কার, ঋণ ও ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর রাজনৈতিক প্রভাবের অবসান, দুর্নীতির নির্মূল, এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা। কৃষক ও শ্রমিক এই দুই প্রধান উৎপাদনশক্তিকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের মধ্য দিয়েই প্রকৃত ইনসাফ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
লাতিন আমেরিকার বলিভিয়া ‘বুয়েন ভিভির’ বা ‘ভালোভাবে বেঁচে থাকা’ নামক দর্শনের মাধ্যমে এক বিকল্প উন্নয়ন চিন্তার পথ দেখিয়েছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে প্রকৃতি, সম্প্রদায় ও আত্মমর্যাদার সহাবস্থান। এই দর্শন বলিষ্ঠভাবে প্রচলিত ভোগবাদী ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক উন্নয়ন ধারণার বিপরীতে গিয়ে, সামষ্টিক কল্যাণ, পারস্পরিক নির্ভরতা এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে। এখানে মানুষকে প্রকৃতির শত্রু নয়, বরং সহযাত্রী ও রক্ষক হিসেবে কল্পনা করা হয়। এর মাধ্যমে একটি ন্যায্য সমাজ গঠনের প্রাকৃতিক-সামাজিক রূপরেখা হিসেবে বিবেচিত। বলিভিয়ার সংবিধানেও প্রকৃতিকে অধিকারসম্পন্ন সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা রাষ্ট্র ও নাগরিকদের উপর তার সংরক্ষণের নৈতিক ও আইনগত দায় আরোপ করে।
এই চিন্তাধারার সঙ্গে ইসলামী অর্থনীতির মৌলিক দর্শনের গভীর সাদৃশ্য রয়েছে। ইসলামে বলা হয়, দুনিয়ায় সম্পদের ‘মালিকানা স্রষ্টার, রক্ষণাবেক্ষনের দায়দায়িত্ব মানবের’ অর্থাৎ মানুষ ভোগদখলের চূড়ান্ত অধিকারী নয়, বরং সে এক দায়িত্বশীল তত্ত্বাবধায়ক (স্টুযার্ড)। তার প্রতি অর্পিত হয়েছে সম্পদের সুষম ব্যবহার, অপচয় রোধ এবং সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার দায়। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যক্তি নয়, বরং সমষ্টি, প্রকৃতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণকে উন্নয়নের মূল পরিমাপক হিসেবে গণ্য করে। তাই বলিভিয়ার ‘বুয়েন ভিভির’ এবং ইসলামী অর্থনীতির এই দায়বদ্ধতাভিত্তিক দর্শন উভয়ই আমাদের উন্নয়ন ভাবনায় একটি ন্যায্যতাভিত্তিক, ইনসাফপূর্ণ বিকল্প কাঠামো গঠনের সম্ভাবনা তৈরি করে।
সুশিক্ষা ও সুস্বাস্থ্য কেবল ব্যক্তির উন্নয়নের উপাদান নয়, বরং রাষ্ট্রের ন্যায়ের ভিত্তিকে মজবুত করার প্রধান স্তম্ভ। অমর্ত্য সেন তাঁর ‘ক্যাপাবিলিটি অ্যাপ্রোচ’-এ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, উন্নয়ন বলতে বোঝায় মানুষের বাস্তব সুযোগ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিকে যার ভিত্তি হলো মানসম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় আজ উচ্চমানের শিক্ষা কেবল শহরের কিছু সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণির হাতে সীমাবদ্ধ, আর অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল সাধারণ মানুষের জন্য হয়ে উঠেছে অনিশ্চয়তা, দুর্নীতি ও অবহেলার প্রতীক। একটি ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য হবে বাজারনির্ভর সুবিধা নয়, বরং রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ও প্রদত্ত অধিকার। এই রাষ্ট্র সবার জন্য সমান মানের শিক্ষা নিশ্চিত করবে, যেখানে পাঠ্যক্রম হবে নৈতিকতা, মানবিকতা ও সমাজকল্যাণ-ভিত্তিক। ‘শিক্ষা মানে শুধু ডিগ্রি নয়, মানুষ গড়ার যথার্থ প্রক্রিয়া’ এই দর্শনকে ভিত্তি করে রাষ্ট্রীয় আদর্শ ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’কে প্রধান্য দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্গঠন হচ্ছে সময়ের দাবি। একইভাবে স্বাস্থ্যসেবাকে হতে হবে সহজপ্রাপ্য, সুলভ, সর্বজনীন ও সম্মানজনক। ইউনেস্কোর মানব উন্নয়ন সূচকে অনেক পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতেও দেখা গেছে যেখানে রাষ্ট্র মানসম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছে, সেখানে জনগণের আস্থা ও অংশগ্রহণ বেড়েছে, গণতন্ত্র হয়েছে কার্যকর। ইনসাফ কেবল আইনের বইয়ে লেখা একটি ধারণা নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় বাস্তব, উপলব্ধিযোগ্য ন্যায়ের উপলব্ধি। তাই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার মানেই শুধু উন্নয়ন নয়, বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রগামী পদক্ষেপ।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইনসাফ মানে কেবল সকলের জন্য আইনগত সমতা নয়, বরং সমাজের প্রতিটি গোষ্ঠী ও ব্যক্তির মর্যাদা, পরিচয় ও বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি। ন্যায় তখনই পূর্ণতা পায়, যখন তা শ্রেণি, ধর্ম, লিঙ্গ, ভাষা, পেশা কিংবা জাতিগোষ্ঠীর বিভাজনকে অতিক্রম করে সমানভাবে সকলকে মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে। চার্লস টেইলর তাঁর ‘দ্যা পলিটিক্স অব রিকোগনিশন’ প্রবন্ধে যে বক্তব্য রেখেছেন, তা আজকের রাষ্ট্রচিন্তার জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বিশেষ বিশেষ জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব ও পরিচয়কে স্বীকৃতি না দেওয়া কেবল তাদের আত্মমর্যাদার উপর আঘাত নয়, বরং এটি একধরনের সাংস্কৃতিক নিপীড়ন। বাংলাদেশের বাস্তবতায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, হিজড়া জনগোষ্ঠী (তৃতীয় লিঙ্গ), বেদে সম্প্রদায়, চা-শ্রমিকদের মত ভিন্ন জীবনধারার মানুষদের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য, ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং জীবনচর্যার ভিন্নতাকে সম্মান না দিলে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের কথা কেবল স্লোগানে সীমিত থাকবে। যেমন ব্রাজিল, কানাডা কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বহু-বৈচিত্র্যময় সমাজগুলো ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক স্বীকৃতি ও অন্তর্ভুক্তির নীতি গ্রহণ করেছে, তেমনি আমাদের রাষ্ট্রেও দরকার একটি বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল গঠন করা যেখানে নানান পরিচয় বিরোধ নয়, বরং সম্প্রীতির ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে এবং রাষ্ট্রীয় আদর্শ ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’-এর প্রতিফলন ঘটাবে। ন্যায়বিচার তখনই সুসংহত হয়, যখন রাষ্ট্র কেবল আইন প্রয়োগে নয়, বরং প্রতিটি মানুষের স্বাতন্ত্র্যকে মর্যাদা দিয়ে তাকে সম্মানিত নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া ইনসাফ কেবল একতরফা শাসন বা সংখ্যাগরিষ্ঠতার আধিপত্য হিসেবে রয়ে যাবে।
পরিবেশগত ন্যায্যতা কেবল একটি পরিবেশবাদী ধারণা নয়, এটি একটি নৈতিক ও আন্ত:প্রাজন্মিক দায়িত্ব। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত যেমন বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় ও নদীনির্ভর দেশে সবচাইতে গভীরভাবে অনুভূত হয়, তেমনি এর প্রতিকারে রাষ্ট্রীয় উদাসীনতা ন্যায়ের পরিপন্থী। ‘পরিবেশগত ন্যায়বিচার’-এর দর্শন অনুযায়ী, শুধু বর্তমান প্রজন্ম নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকারও বিবেচনায় নেওয়া কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের কর্তব্য। জন রলস তাঁর ‘ন্যায়বিচারের তত্ত্ব’ (থিওরী অব জাস্টিস)-এ যে ‘আন্ত:প্রাজন্মিক ন্যায়বিচার’ (ইন্টারজেনারেশানাল জাস্টিস)-এর কথা বলেছেন, তা আমাদের রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রে থাকা উচিত যেখানে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য সজীব,সতেজ ও বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়া একটি নৈতিক ও রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতা। বাংলাদেশে নদী দখল, বন উজাড়, পাহাড় কাটা, শহুরে দূষণ ও জলাভূমি ধ্বংসের পেছনে যেভাবে স্বার্থান্ধ উন্নয়ন ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় লুটপাট কাজ করে, তা একপ্রকার পরিবেশগত বৈষম্য ও নিপীড়ন। শহর ও গ্রামের নাগরিকদের মধ্যকার পরিবেশগত অধিকারবিভাজন, কিংবা উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী দরিদ্র মানুষের বাস্তুচ্যুতি এসবই প্রমাণ করে যে, ইনসাফ কেবল অর্থনীতিতে নয়, পরিবেশনীতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের বণ্টনেও প্রয়োজনীয়। আদিবাসী সমাজের ‘প্রকৃতির সাথে যথাযোগ্য সহাবস্থান’ ধারণা এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যে লোভ সংযমের তাগিদ আমাদের শেখায় যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভোগ নয়, বরং পরিমিতিবোধ ও ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রতি সহানুভূতির মধ্য দিয়েই পরিবেশগত ন্যায়ের পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। ইনসাফভিত্তিক কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনে তাই পরিবেশবাদ একটি বিলাসিতা নয়, বরং তা একটি মৌলিক ন্যায্যতা ও অস্তিত্বের প্রশ্ন। গণঅভ্যুত্থান কখনোই কেবল প্রতিরোধ বা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়; এটি একটি নবজাগরণের আহ্বান, যেখানে জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা ফিরে পাওয়ার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করে।
একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন কেবল সংবেদনশীলতা বা আবেগের বিষয় নয়, এটি একটি দার্শনিক, নৈতিক ও সাংগঠনিক প্রকল্প, যার ভিত্তি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচার, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও রাজনীতিতে ন্যায়ের সুষম প্রতিফলন। এই ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রের লক্ষ্য হবে ব্যক্তি নয়, জনগণ; ক্ষমতা নয়, দায়িত্ব; দখল নয়, সেবা। তাই বাংলাদেশের জন্য গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হলো এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণ, কাঠামোগত সংস্কার ও সর্বজনীন জনশিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা। ন্যায়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গড়ার এই প্রয়াসে যদি সমাজের প্রতিটি মানুষ তথা সাধারণ নাগরিক, নীতিনির্ধারক, পেশাজীবী, শিক্ষক, যুবক প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেয়, তবে একদিন এই স্বপ্নই হয়ে উঠবে একটি নতুন বাংলাদেশের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। আমরা বাস্তবের সেই সোনালী দিনের অপেক্ষায় রইলাম।
ড. মাহরুফ চৌধুরী, ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য। mahruf@ymail.com
মত দ্বিমত
শিক্ষা-দুর্নীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতি: আমি চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু!

একটি দুর্ঘটনা ঘটতে দেখেছিলাম—আমি তা ঠেকাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। সে দুর্ঘটনাটি ছিল না কোনো সড়ক দুর্ঘটনা, কিংবা হঠাৎ কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এটি ছিল বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের জমে থাকা এক ভয়ঙ্কর ক্যানসারের বিস্ফোরণ, যেখানে স্বচ্ছতা ছিল অনুপস্থিত, আর ন্যায়ের কাছে চেয়ে থাকা চোখগুলো ছিল অবহেলিত।
এক সময় যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান নিজেই আমাকে বলেছিলেন, “ভাই, দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। আপনি চেষ্টা করতে পারেন, তবে সফল হবেন না।” আমি তাঁকে বলেছিলাম, “আপনি পাশে থাকুন, আমি চেষ্টা করি। দেখা যাক কী ঘটে।”
তিনি কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু সে কথা রাখতে পারেননি। এবং আজ আমি বুঝি, তিনি তখনই বলে দিয়েছিলেন আসল সত্যটি—এই ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি।
দুর্নীতির রসুনবাঁধা রাজনীতি
আমরা প্রায়ই শুনি, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। অথচ সেই মেরুদণ্ডেই আজ ঘা—পুঁজে ভরা ঘা। এই দুর্নীতির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি অদৃশ্য, কিন্তু অতীব শক্তিশালী গোষ্ঠী। জানেন কারা তারা? রাজনীতিবিদেরা। এরা এই ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে রসুনের মতো গেঁথে আছে—পৃথক শরীরে, কিন্তু একসঙ্গে গাঁথা। তাই একজন চলে গেলে আরেকজন আসে। এক দুর্নীতিবাজ নেতার জায়গা নেয় আরেক চাটুকার। কাঠামো অপরিবর্তিত থাকে।
একটি অনিয়ম ঠেকাতে গিয়ে, গোটা ব্যবস্থার মুখোমুখি
নহাটা গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে এক নিছক নিয়োগ প্রক্রিয়া। কিন্তু সেই অনিয়ম থামাতে গিয়ে আমি যা দেখলাম, তা ছিল বিস্ময়কর, আতঙ্কজনক এবং অবিশ্বাস্য। আমি যোগাযোগ করেছিলাম মাগুরা জেলার ডিসি, বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে। বিশেষ করে কথা বলেছিলাম এলাকার তিনজন রাজনীতিকের সঙ্গে—নিতাই রায় চৌধুরী, কাজি কামাল এবং রবিউল ইসলাম নয়ন। তিনজনেই ভদ্র, মিষ্টভাষী, আশ্বাসদাতা। তারা আমাকে বলেছিল: “আপনি চিন্তা করবেন না, আমরা দেখছি।” কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। তবুও আমি বলবো—তারা খারাপ মানুষ না, কিন্তু এ দেশ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন এমন নেতা, যারা কথা রাখে, ভয় পায় না, এবং চ্যালেঞ্জ নেয়।
পুরনো কথা কেন নতুন করে তুলছি?
হয়তো কেউ বলবেন, “এটা তো পুরনো ঘটনা। এখন আবার কেন?” হয়তো কেউ বলবেন, “দেশের বারোটা তো আগেই বাজে গেছে, এখন এক স্কুলের সভাপতির নিয়োগ নিয়ে এত প্যাঁচাল কেন?” আমি বলি, হ্যাঁ, হয়তো একটা বিন্দু। কিন্তু সিন্ধু তো বিন্দু থেকেই জন্মায়।
বাংলাদেশে দুর্নীতির সংস্কৃতি গর্তের মতো—একবার পা পড়লে আর উঠতে পারা যায় না। শিক্ষা খাত যদি রক্ষিত না থাকে, তাহলে ভোট, গণতন্ত্র, বিচার—সবই প্রশ্নবিদ্ধ। আজ ৫ আগস্ট, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার আদায়ের দিন। কিন্তু এই দিনে দাঁড়িয়ে আমি দেখছি—গত এক বছরে দুর্নীতি, লুটপাট, ধর্ষণ, খুন, গুম—সবকিছু যেন অতীতকেও হার মানিয়েছে।
নির্বাচন সামনে: পেস্ট নাকি কলেরা?
আমরা এক ভয়ঙ্কর নির্বাচন-প্রহসনের দিকে এগোচ্ছি। কারা দায়িত্ব নেবে? কে দেবে সুস্থ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি? যেদেশের শিক্ষাব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, সেখানে কীভাবে আশা করবো রাজনীতিবিদদের হাত থেকে মুক্ত একটি নির্বাচন? একদিকে পেস্ট, অন্যদিকে কলেরা—তবে পছন্দ করতে তো হবেই। এখন সেই তিনজন রাজনীতিবিদের কথা ভাবুন—যাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম, এবং যারা কথা রেখেনি। তারেক রহমানের মতো একজন নেতৃত্বকে এখন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—কাকে রেখে কাকে সমর্থন করবেন?
এই একটি আসনের কথাই বলছি। দেশের ৬৪টি জেলা এবং দুটি করে আসন মিলিয়ে ১২৮টি স্থান। তার উপর মহিলা আসনও আছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজ সহজ নয়। আমি উদাহরণ হিসাবে একটি দলের কথা উল্লেখ করলাম- ভাবুন অন্য দলের কথাও!
আমার উপদেশ—জাগো বাংলাদেশ, জাগো! এই ডাক আজ আবেগ নয়, দায়িত্ব। এই সময় আর কাঁদার নয়, দাঁড়ানোর। অন্যায়ের সঙ্গে আপস নয়, মুখোমুখি সাহসের সংঘর্ষ চাই এখন।
বাংলাদেশ আজ এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে একদিকে অন্ধকার, অন্যদিকে প্রতিশ্রুতি। মাঝখানে একটিই দরজা—সিদ্ধান্ত। আমরা যারা নিজেদের সৃজনশীল ও শিক্ষিত বা প্রতিবাদ করার মতো বিবেকবান মনে করি, তারা যদি চুপ থাকি—তাহলে ভবিষ্যৎ পাবে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর দাসত্ব।
আপনার আশেপাশেই হয়তো অন্যায় ঘটছে—তুমিও প্রতিবাদ করতে পারো। শুধু লেখক, সাংবাদিক বা রাজনৈতিক কর্মী না—একজন শিক্ষক, একজন শিক্ষার্থী, একজন চাকরিজীবী এমনকি একজন অভিভাবকও হতে পারেন পরিবর্তনের অগ্রনায়ক।
আপনি কী করতে পারেন, আজ থেকেই:
১. ভোট দিন। নিজে ভোট দিন, অন্যকেও উদ্বুদ্ধ করুন।
২. অনিয়ম দেখলে রিপোর্ট করুন। থেমে যাবেন না।
৩. সোশ্যাল মিডিয়ায় বা বন্ধুদের মাঝে সাহসের ভাষা বলুন।
৪. ভয় পাবেন না। যে ভয় পায় না, সেই-ই নেতা হয়।
৫. আপনিই আলোর মশাল। নতুন প্রজন্মের চোখে আপনি হয় আশা, নয় অন্ধকার।
শেষ কথা: প্রতিবাদের চেয়ে পবিত্র আর কিছু নেই
আমি একটি সুইডিশ প্রবাদ দিয়ে শেষ করতে চাই—
“Beslut måste tas även detta är olagligt”
বাংলায় অর্থ: “সিদ্ধান্ত নিতেই হবে—even যদি তা কঠিন, ভয়ানক বা আইনের সীমার কাছাকাছি হয়।”
এটা কোনো বেপরোয়া আহ্বান নয়, এটি নৈতিক সাহসের আহ্বান।
যেখানে আইন দুর্নীতিগ্রস্ত, সেখানে বিবেকই শেষ সত্য।
তোমরা যারা আগামী প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিতে চাও, শুনে রাখো—সত্যের পাশে দাঁড়াতে সাহস লাগে, এবং সাহসই একমাত্র মুদ্রা যা রাজনীতিকে পবিত্র করতে পারে। নেতা সেই, যে শোনে না কারা কী বলবে—শুধু জানে কী ঠিক আর কী ভুল।
জলের ফোঁটা থেকেই জোয়ার
হ্যাঁ, আজকের ঘটনাটি হয়তো অনেকের কাছে সামান্য, এক ফোঁটার মতো। কিন্তু ইতিহাস বলে—জোয়ার এক ফোঁটা জল থেকেই শুরু হয়।
আমার চেষ্টা হয়তো ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু আমি মাথা নিচু করিনি। নীতিকে বিসর্জন দিইনি। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন গড়ে তুলবে তারা, যারা ভয়কে পরোয়া করে না, যারা প্রশ্ন করতে জানে, এবং যারা “না” বলতে ভয় পায় না। এই লেখাটি কেবল একটি স্মৃতিকথা নয়—এটি প্রতিরোধের আগুনে জ্বলে ওঠা এক জ্বলন্ত দলিল।
রহমান মৃধা
গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com
মত দ্বিমত
পদ্ধতির বাস্তবতা, প্রয়োগযোগ্যতা ও প্রতিনিধিত্ব কি গণতন্ত্রের সঠিক পথ?

প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) বা অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হলো এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের শতকরা অনুযায়ী সংসদে আসন পায়। অর্থাৎ, কোনো দল যদি ৩০% ভোট পায়, তবে তার প্রাপ্ত আসনও হবে প্রায় ৩০%। এতে ভোটাররা নিশ্চিত হতে পারেন—তাদের ভোট হারাবে না, কোনো প্রার্থীর প্রতি তাদের সাপোর্ট ‘ফিকে’ বা ‘বিপথগামী’ হবে না।
এর বিপরীতে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত First-Past-The-Post (FPTP) পদ্ধতিতে কেবল সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রার্থী জয়ী হন, বাকিদের ভোট ‘অদৃশ্য’ হয়ে যায়। এ কারণে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বহীনতা তৈরি হয়, বঞ্চিত গোষ্ঠীর আস্থা কমে যায় এবং শাসনব্যবস্থার দায়বদ্ধতা দুর্বল হয়ে পড়ে।
PR পদ্ধতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—
১. ন্যায়বিচার ও সমঅধিকার
বড় দল, ছোট দল, সংখ্যালঘু, নারী, তরুণ—সবাই পায় সমান সুযোগ। এতে সংসদ হয়ে ওঠে দেশের প্রকৃত প্রতিচ্ছবি।
২. সংলাপ ও সহনশীলতা
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কঠিন হওয়ায় দলগুলোকে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করে জোটবদ্ধ হতে হয়, যা গড়ে তোলে গণতন্ত্রের অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি।
৩. মনোনয়নে স্বচ্ছতা
প্রার্থী মনোনয়ন দলীয় ভোট এবং জনগণের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে হয়; অর্থ, প্রভাব বা আত্মীয়তন্ত্রের কোনো স্থান নেই।
৪. ভোটার আস্থা ও অংশগ্রহণ
ভোটার জানেন, তাদের ভোট বৃথা যাবে না, ফলে ভোটার উপস্থিতি ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়।
৫. নেতৃত্বে বৈচিত্র্য
নারী, তরুণ, সংখ্যালঘু ও সাধারণ পেশাজীবীরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়, যা জাতীয় রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে PR পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশ একটি বহুদলীয় ও বৈচিত্র্যময় দেশ। তবুও, বর্তমান FPTP পদ্ধতি এই বৈচিত্র্যকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ।
– বিরোধী কণ্ঠকে গলা চাপা দেয়া হয়।
– ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয় পরিবার ও গোষ্ঠীর হাতে।
– ভোটারের আস্থা ক্রমেই ক্ষয়প্রাপ্ত।
– সংসদ ‘সিন্ডিকেট’ বা গোষ্ঠীনির্ভর শাসনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে, জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি নয়।
PR পদ্ধতি অবশ্যই একটি পরিবর্তনের প্রথম ধাপ হতে পারে। তবে এই পদ্ধতিকে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা হবে না হলে বাস্তব ফল পাওয়া কঠিন।
সুইডেনের অভিজ্ঞতা: এক সফল উদাহরণ
আমি দীর্ঘ চার দশক ধরে সুইডেনে শিক্ষক, নাগরিক ও বিশ্লেষক হিসেবে বসবাস করছি। সেখানে PR পদ্ধতির কার্যকারিতা আমার কাছে স্পষ্ট।
– একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রায়ই হয় না, ফলে সংলাপ ও ঐক্য বাধ্যতামূলক।
– একজন সাধারণ শিক্ষক, অভিবাসী, বাসচালকসহ নানা পেশার মানুষ সংসদে সুযোগ পায়।
– ভোটার উপস্থিতি ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের ওপরে, কারণ ভোট ‘হারায় না’।
– রাজনৈতিক পরিবেশ ভদ্র, যুক্তিবাদী ও ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে মুক্ত।
এটি প্রমাণ করে PR শুধু একটি ভোট গণনার পদ্ধতি নয়, এটি একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি।
তাহলে কি PR চালু করলেই সব সমস্যা দূর হবে?
না। PR হলো একটি দরজা, যা দিয়ে প্রবেশ করলে সুবিচার, অংশগ্রহণ, ন্যায্যতা এবং নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির পথ খুলে যায়। তবে এই দরজার ওপারে যেতে হলে দরকার—
– রাজনৈতিক সদিচ্ছা
– জবাবদিহিমূলক প্রশাসন
– স্বাধীন মিডিয়া
– সচেতন নাগরিক সমাজ
– এবং জাতিগত আত্মসমালোচনার সাহস
এটি কেবল যান্ত্রিক সংস্কার নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব।
অন্তরের গভীরে এক প্রশ্ন
১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ধ্বংস হয়েছিল। তারা ঘোষণা দিয়েছিল, “We shall not repeat the evil.”
আমরা কি দাঁড়িয়ে বলতে পারি— “আমরা আর নিজের সন্তানদের হাতেই জাতিকে ধ্বংস হতে দেব না”?
আমরা কি গড়তে পারি এমন একটি বাংলাদেশ— যেখানে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মা নিশ্চিন্তে বলতে পারে— “আমাদের রক্ত বৃথা যায়নি”?
যেখানে জুলাই মাস ফিরে আসবে স্বাধীনতার রোদের মতো— ভয়, গুম, দমন আর রক্ত নয়, বরং গণমানুষের গর্ব, মুক্তচিন্তা ও ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠবে।
যেখানে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর রক্তের নয়, বরং মুক্তির জয়গান।
উপসংহার
প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) কেবল একটি ভোট গণনার পদ্ধতি নয়— এটি একটি পরিবর্তনের ঘোষণা, একটি নতুন মানসিকতার অব্যাহত যাত্রা, একটি সাহসিকতার প্রতীক, এবং এক মানবিক চেতনার পুনর্জন্ম।
যদি আমরা সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র চাই— যেখানে ক্ষমতা হবে দায়িত্বের প্রতীক, নেতৃত্ব হবে অক্লান্ত জনসেবার অঙ্গীকার, তাহলে সেই কাঠামোই হবে আমাদের ঐক্যের মূর্তি, আমাদের স্বপ্নের দিশারি।
আজ, এই ক্ষণে— আপনি কি প্রস্তুত নিজের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্য? আপনি কি দৃঢ় সংকল্পে বলতে প্রস্তুত— “আমরা বেছে নেব সক্রিয়, দায়বদ্ধ, নিখুঁত গণতন্ত্রের পথ”?
রহমান মৃধা, গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com
মত দ্বিমত
অযোগ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: আস্থার ভঙ্গ, লুটের শাসন

অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমানোর প্রত্যয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোটি কোটি মানুষ জীবনের নানা চ্যালেঞ্জে জর্জরিত, তাদের কষ্টের মাঝে সরকার দুর্নীতি ও সুযোগ-সুবিধার কারসাজিতে লিপ্ত ছিল।
মানুষের কষ্টের অবমূল্যায়ন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছিল জনগণের ভোগান্তি কমাবে, কিন্তু দেশের অগণিত মানুষ আজও বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও নিরাপত্তার মতো মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত। করোনাকালীন এবং পরবর্তী সময়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের জীবনের মান উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ ছিল সীমিত। বরং ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন।
দুর্নীতির বেড়ে ওঠা
সরকারের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নিজেদের আর্থিক ও সামাজিক স্বার্থ হাসিলের জন্য দুর্নীতি বাড়িয়েছেন। সরকারি তহবিলের অপব্যবহার, প্রকল্পে অনিয়ম, নিয়োগ ও কর্মসংস্থানে অস্বচ্ছতা—এসব দেশের দুর্নীতি হার বাড়িয়েছে। দুর্নীতিবাজরা একে অপরের পৃষ্ঠপোষকতা ও মিত্রতা নিয়ে ক্ষমতার খেলা চালিয়েছেন, যার কারণে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার ও সেবার অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
কথা বিক্রি, কাজের অভাব
বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি দমন এবং সেবা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা রাজনৈতিক বক্তৃতা ও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। কার্যত কোনো পরিবর্তন বা সংস্কার আনা হয়নি, বরং কথার পেছনে কথা বিক্রি হয়েছে। জনসমর্থন বৃদ্ধির জন্য নানা প্রকল্প ঘোষণা হলেও বাস্তবায়নে ন্যূনতম মনোযোগ দেওয়া হয়নি। সাধারণ মানুষের আশা ও বিশ্বাস ধূলিসাৎ হয়েছে।
সুযোগ-সুবিধার প্রলেপে ক্ষমতার বিকৃতি
অপরদিকে, নেতাকর্মীদের জন্য সুযোগ-সুবিধার বন্যা বইতে শুরু করেছে। ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিরা নিজেদের দলের অনুগত লোকজন নিয়োগ, প্রকল্প বরাদ্দ ও আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে সুবিধাভোগী করেছেন। ফলে ক্ষমতার দখল একদলীয় হয়ে ওঠে। এই সুযোগ-সুবিধার ফলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়েছে, আর জনগণের ন্যায্য দাবিগুলো উপেক্ষিত হয়েছে।
লুটপাটের মহোৎসব: সাপ ছেড়ে খেলা দেখছে সরকার
গত দশ মাস ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিএনপির লুটপাট এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে একটুও পদক্ষেপ নেয়নি। তারা সাপ ছেড়ে শুধু খেলা দেখেছে—দেখেও অন্ধের মতো মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। দেশের সম্পদ লুটে নেওয়া ও জনগণের চরম দুর্ভোগকে তারা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ হাসিলের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছে। ক্ষমতার মোহে তারা দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে, আর সাধারণ মানুষ হয়ে উঠেছে তাদের নির্লজ্জ লুটপাটের নীরব দর্শক।
ড. ইউনূস: জনগণের জন্য নয়, নিজের সুনাম ও লাভের ব্যবসায়ী
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখ্য ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূসের কাজের মূল উদ্দেশ্য ছিল জনগণের আস্থা অর্জন নয়, বরং নিজের নাম-ডাক আর আন্তর্জাতিক সুনাম গড়ে তোলা। দেশের দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানো বা তাদের বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে তিনি একটুও সময় দেননি। বিদেশি সম্মেলন, পুরস্কার আর গ্লোবাল মিডিয়ার সামনে নিজের ইমেজ তুলে ধরাই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। জনমতের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, সরকারি সুযোগ-সুবিধার পেছনে লুকিয়ে নিজের স্বার্থ পূরণ করেছেন। দেশের দরিদ্র জনগণ তাকে বিশ্বাস করেনি, কারণ তিনি তাদের জন্য নয়, নিজের সুবিধা ও খ্যাতির জন্য কাজ করেছেন।
গ্রামীণ ব্যাংকও গরিব-দুঃখী মানুষের মুক্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। অসহায় গ্রামের মানুষ আজো গরিব থেকেই গেছে, আর গ্রামীণ ব্যাংক ও তার নেতারা বড় ধরনের ‘মানি মেকার’ হয়েছে—যারা সাধারণ মানুষের কষ্টকে ব্যবসায়িক সুযোগে পরিণত করেছে। ড. ইউনূস নিজেই সেই ব্যবসায়ীর প্রতীক, যিনি আন্তর্জাতিক সম্মান আর খ্যাতির পেছনে ব্যস্ত থেকে দেশের দরিদ্র মানুষের জীবন বদলের জন্য কিছুই করেননি। এক কথায়, ড. ইউনূস “ওনস এ মানি মেকার, অলওয়েজ এ মানি মেকার।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন পর্যন্ত যা দিয়েছে, তা ছিল কেবল আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি, কিন্তু বাস্তবে তা সফল হয়নি। দেশের সাধারণ মানুষ আজো জীবনের নানা সমস্যায় আটকে আছে। দুর্নীতি ও সুযোগ-সুবিধার কারসাজি থেকে মুক্তি না পেয়ে দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি শিথিল হয়েছে। তাই এখন সময় এসেছে সত্যিকার অর্থে জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সৎ ও দক্ষ নেতৃত্বের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের।
রহমান মৃধা. গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com
মত দ্বিমত
স্বাধীনতার ৫৪ বছর: হিরোশিমা উঠে দাঁড়াল, আমরা কেন ধ্বংস হলাম?

‘একটি জাতিকে চিনতে চাইলে দেখুন তারা নিজেদের ইতিহাস কেমনভাবে বহন করে—গৌরবের মতো, না গ্লানির মতো।’
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে মার্কিন পরমাণু বোমায় হিরোশিমা এবং নাগাসাকির মাটিতে মৃত্যু নেমে এসেছিল এক নিষ্ঠুর দৈত্যের মতো। চারদিকে ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ, তীব্র বিকিরণ, অনাগত সন্তানের জন্মে বিকলাঙ্গতা—জাপানের অস্তিত্ব তখন কেবল প্রশ্নের মুখে নয়, মৃত্যুপ্রবণ এক জাতির নাম। অথচ মাত্র ৩০ বছরের ব্যবধানে সেই হিরোশিমাই হয়ে উঠল শান্তির শহর, উদ্ভাবনের কেন্দ্র, এবং মানব সভ্যতার নৈতিক প্রতীক। কারণ তারা ‘দুর্ভাগ্য’ নয়—‘দায়িত্ব’ বেছে নিয়েছিল।
কিন্তু বাংলাদেশ?
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে আমরা ৩০ লক্ষ প্রাণ, লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রম, কোটি মানুষের ঘরবাড়ি হারানোর বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তা যেন এখন এক রক্তাক্ত স্মারক মাত্র। ৫৪ বছর পরও আমাদের মানুষদের—বিশেষ করে গরিব, নির্যাতিত, ভিন্নমতাবলম্বীদের—নিজ দেশের সেনা, পুলিশ, ও রাজনৈতিক দলের গুন্ডাদের হাতে জীবন দিতে হয়। তারা হিরোশিমা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে, আর আমরা যেন বারবার নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করছি। হ্যাঁ আমরা আমাদের বিবেকের কাছে ধ্বংস হয়েছি।
আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির দর্পণে বাংলাদেশের মুখ। আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে পরিচিত হচ্ছে কীভাবে?
-২০২৪ সালের নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম: “Bangladesh: A Democracy in Name Only”, “Authoritarianism in Disguise”।
-জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন: বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, রাজনৈতিক নিপীড়ন।
-ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল: বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ।
-বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ মানি লন্ডারিং দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম।
তবে সবচেয়ে ভয়ংকর হলো এই প্রশ্ন: এতসব অপরাধ কে করছে?
উত্তর: দেশের ভেতরেরই কিছু ক্ষমতাধর মানুষ।
কারা দায়ী?
এই দায় কোনো নির্দিষ্ট সরকার বা সময়ের একক নয়। কিন্তু রাজনৈতিক দলেরা—বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—দেশকে উন্নয়নের ধারার বাইরে, দলীয় স্বার্থ ও ক্ষমতার জিঘাংসায় যেভাবে ব্যবহার করেছে, তা একধরনের ‘জাতীয় আত্মঘাতিতা’।
-আওয়ামী লীগ: স্বাধীনতার দল হয়েও একনায়কতন্ত্রের পথে হাঁটছে, উন্নয়নের নাম করে গুটিকয়েক পরিবারকে কোটিপতি বানিয়েছে, বাকি দেশকে করেছে করুণ নির্ভরশীল।
-বিএনপি: বারবার গণতন্ত্রের কথা বললেও তাদের সময়েও আমরা দেখেছি দুর্নীতির মহোৎসব, লুটপাটের সংস্কৃতি এবং প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা।
এই রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈতিক কর্মকাণ্ড—লুটপাট, দমন-পীড়ন, গণতন্ত্র হত্যা, অর্থ পাচার, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ—আজ বাংলাদেশের অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
কেন জাপান পারল, আমরা পারছি না?
জাপান পারল কারণ তারা জাতীয়ভাবে স্বীকার করেছিল, “আমাদের কিছু বদলাতে হবে।” তারা শিক্ষা, প্রযুক্তি, শিল্প, এবং মানবিকতা—এই চারটি স্তম্ভে দাঁড় করিয়েছিল নতুন সমাজ।
আমরা এখনো আত্মস্বীকৃতই হতে পারি না। প্রতিটি রাজনৈতিক দল নিজেদের দোষ ঢাকতে ব্যস্ত, ইতিহাস বিকৃত করে চলে, শহীদের রক্তকে ব্যবহার করে রাজনীতির পোস্টারে।
করণীয় ও বর্জনীয়: এখনই সময়
জাতীয় কমিশন গঠন: ১৯৭১-২০২৫ পর্যন্ত সব রাজনৈতিক সরকারের আর্থিক, মানবাধিকার ও রাষ্ট্রীয় অপরাধ তদন্তে একটি স্বাধীন জাতীয় কমিশন দরকার।
সেনা ও প্রশাসনের জবাবদিহিতা: গুম, খুন, নির্যাতনের মতো অপরাধে জড়িত সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
রাজনৈতিক সংস্কার: দলীয় রাজনীতিতে আর্থিক স্বচ্ছতা, নির্বাচনের সময় সেনা বাহিনীর নিরপেক্ষ ব্যবহার, এবং মিডিয়া স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষা ও নাগরিক জাগরণ: শিক্ষা ব্যবস্থায় গড়ে তুলতে হবে নৈতিকতা, ইতিহাসচর্চা, এবং সচেতন নাগরিকত্বের চেতনা।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনর্গঠন: চীনের মুখপাত্র নয়, বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর হতে হবে—অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মঞ্চে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।
যা বর্জনীয়:
-দলের নাম করে রাষ্ট্রের সম্পদ লুট
-‘উন্নয়ন’ শব্দ দিয়ে দুর্নীতি ঢাকা
-ভিন্নমতের ওপর দমন
-শহীদের নাম নিয়ে অপকর্ম
শেষ কথা: ইতিহাস তোমাকে ক্ষমা করবে না
হিরোশিমার মানুষরা দাঁড়িয়ে বলেছিল: “We shall not repeat the evil.”
আমরা কি পারব বলতে: “আমরা আর নিজের সন্তানদের হাতেই জাতিকে ধ্বংস হতে দেব না”?
আমরা কি এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে পারি, যেখানে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মা অন্তত এটুকু নিশ্চিন্তে বলতে পারে—“আমাদের রক্ত বৃথা যায়নি”?
যেখানে জুলাই মাস আসবে স্বাধীন আকাশের রোদের মত উজ্জ্বল হয়ে—ভয়, গুম, দমন আর খুন নয়, বরং গণমানুষের গর্ব, মুক্তচিন্তা আর ভালোবাসার প্রতীক হয়ে। যেখানে আর কোনো দিন শুনতে হবে না শহীদের রক্তে রাঙা জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর—বরং প্রতিটি মাস হবে একজন মুক্ত মানুষের আত্মমর্যাদার জয়গান।
রহমান মৃধা, গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com