আন্তর্জাতিক
বিশ্বব্যাপী জীবনরক্ষাকারী ওষুধের সরবরাহ বন্ধ করছে যুক্তরাষ্ট্র

গরীব দেশগুলোতে এইচআইভি, ম্যালেরিয়া, টিউবারকিউলোসিস এবং সদ্যোজাত শিশুদের জীবনরক্ষাকারী ওষুধ সরবরাহ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড) এসব সহায়তা প্রদান করত।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) থেকে ইউএসএইডের কন্ট্রাক্টর ও সহযোগীরা এই নির্দেশনা পেতে শুরু করে। তাদের অনতিবিলম্বে কার্যক্রম বন্ধ করতে বলা হয়েছে। গত ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা নিয়েই নির্বাহী আদেশে বিশ্বব্যাপী মার্কিন সহায়তা বন্ধ করেন ট্রাম্প। এই ওষুধ সরবরাহ বন্ধ সেই নির্বাহী আদেশের অংশ। যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশে সহায়তা করত সেগুলো পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। পর্যবেক্ষণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্তত আগামী ৯০ দিন সহায়তাগুলো বন্ধ থাকবে।
এই ধরনের একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে চেমোনিকসের কাছে। তারা ইউএসএইডের হয়ে বিশ্বব্যাপী এইচআইভি, ম্যালেরিয়াসহ প্রাণঘাতি বিভিন্ন রোগের ওষুধ সহায়তা পাঠাত।
ইউএসএইডের গ্লোবাল হেলথের সাবেক প্রধান অতুল গাওয়ান্দে রয়টার্সকে বলেছেন, এটি বিপর্যয়। যুক্তরাষ্ট্রের দান করা ওষুধ বিশ্বব্যাপী এইচআইভি আক্রান্ত ২ কোটি মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এটি আজ বন্ধ হয়ে গেলো।
তিনি বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের কারণে এইচআইভির সংক্রমণ বাড়তে পারে। সঙ্গে অসুস্থরা আরও অসুস্থ হতে পারেন।
সাবেক এই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, এমন নির্দেশনার কারণে স্টকে থাকা সত্ত্বেও জীবনরক্ষাকারী এসব ওষুধ সহায়তা নেওয়া দেশগুলোর কাছে আর পাঠানো যাবে না।

আন্তর্জাতিক
সৌদিতে ৭ মাসে ২৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

মধ্যপ্রাচ্যের রক্ষণশীল দেশ সৌদি আরবে আবারও বেড়েছে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে দেশটিতে ১৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে নজিরবিহীন। এছাড়া দেশটিতে চলতি বছরের সাত মাসে ২৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানিয়েছে, সন্ত্রাসবাদ সংশ্লিষ্ট অভিযোগে নতুন করে আরও দুই ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার ও রোববার মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ১৫ জনের শাস্তি কার্যকর হয়, যাদের বেশিরভাগই বিদেশি নাগরিক।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০২২ সালের মার্চের পর এই প্রথম এত কম সময়ের ব্যবধানে এতজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো। ওই সময় একদিনেই ৮১ জনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল সন্ত্রাসের অভিযোগে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছিল।
এসপিএর তথ্য অনুযায়ী, সদ্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৩ জন হাশিশ পাচার, একজন কোকেন পাচার এবং অন্যরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে দণ্ডিত হন।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির হিসাব বলছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সৌদি আরবে ২৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে শুধু মাদক-সংশ্লিষ্ট অপরাধেই প্রাণ গেছে ১৬১ জনের, যাদের মধ্যে ১৩৬ জনই বিদেশি।
এই প্রবণতাকে ‘নজিরবিহীন গতি’ বলে উল্লেখ করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। যুক্তরাজ্যভিত্তিক এনজিও রিপ্রাইভ-এর প্রধান নির্বাহী জিদ বাসিওনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী যেখানে হাশিশের মালিকানা ও ব্যবহারে শিথিলতা বাড়ছে, সেখানে সৌদির এই কড়া অবস্থান গভীর উদ্বেগের।’
তিনি আরও বলেন, ‘সৌদিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের বড় একটি অংশ বিদেশি নাগরিক—এটা স্পষ্টভাবে বৈষম্যমূলক।’
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২৩ সালে শুরু হওয়া সৌদির ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধ’-এর ফল এখন দেখা যাচ্ছে। কারণ, সেই সময় যাদের আটক করা হয়েছিল, তাদের বিচার প্রক্রিয়া এখন শেষ হয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে।
একসময় মাদক মামলায় মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রেখেছিল সৌদি সরকার। কিন্তু ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে পুনরায় তা চালু করে। পরিসংখ্যান বলছে, ওই বছর ১৯ জন, ২০২৩ সালে ২ জন এবং ২০২৪ সালে অন্তত ১১৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে কেবল মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধে।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, সৌদি সরকার একদিকে উদার সংস্কারের কথা বললেও অন্যদিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে ‘ভিশন-২০৩০’-এর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে।
তবে দেশটির প্রশাসনের দাবি, মৃত্যুদণ্ড জনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় এবং শুধু সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই এই সাজা কার্যকর করা হয়।
আন্তর্জাতিক
ইয়েমেনে নৌকাডুবি, ৬৮ অভিবাসীর মৃত্যু

ইয়েমেনের উপকূলে একটি নৌকাডুবির ঘটনায় কমপক্ষে ৬৮ জন শরণার্থী এবং অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইয়েমেন উপকূলে নৌকাডুবে যাওয়ার ঘটনায় কমপক্ষে ৬৮ জন আফ্রিকান শরণার্থী ও অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে এবং ৭৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
ইয়েমেনে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) প্রধান আবদুসাত্তোর এসোয়েভ রোববার বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানিয়েছেন, ১৫৪ জন ইথিওপীয়কে নিয়ে নৌকাটি ইয়েমেনের আবিয়ান প্রদেশের উপকূলে ডুবে যায়।
তিনি জানিয়েছেন, নৌকাডুবির ঘটনায় ১২ জন বেঁচে গেছেন। খানফার জেলায় ৫৪ জন শরণার্থী ও অভিবাসীর মৃতদেহ ভেসে এসেছে এবং আরও ১৪ জনকে বিভিন্ন স্থানে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং তাদেরকে হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ইয়েমেনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এর আগে জানিয়েছিল যে, দুর্ঘটনায় ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে মৃতের সংখ্যা আরও বেড়েছে।
জাঞ্জিবারের স্বাস্থ্য অফিসের পরিচালক আব্দুল কাদের বাজামিল বলেছেনদ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ শাকরা শহরের কাছে নিহতদের সমাহিত করার ব্যবস্থা করছে এবং কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও অনুসন্ধানের সুযোগ অব্যাহত রয়েছে।
ইয়েমেন এবং আফ্রিকার শৃঙ্গ অঞ্চলের মধ্যেকার সমুদ্রপথ উভয় দিকের ভ্রমণকারী শরণার্থী এবং অভিবাসীদের জন্যই একটি সাধারণ রুট কিন্তু এটি বেশ বিপজ্জনক পথ। ২০১৪ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই অঞ্চলে ইয়েমেনিদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২২ সালের এপ্রিলে হুথি বিদ্রোহীরা এবং সরকারি বাহিনী একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছিল যার ফলে ইয়েমেনে সহিংসতা হ্রাস পেয়েছে এবং চলমান মানবিক সংকট কিছুটা লাঘব হয়েছে।
তবে আফ্রিকার সংঘাত, বিশেষ করে সোমালিয়া এবং ইথিওপিয়া থেকে পালিয়ে আসা কিছু লোক ইয়েমেনে আশ্রয় নিয়েছে অথবা দেশটি ব্যবহার করে উপসাগরীয় দেশগুলোতে ভ্রমণের চেষ্টা করেছে। আইওএম-এর তথ্য অনুসারে, এই পথটি বিশ্বের ‘সবচেয়ে ব্যস্ত এবং সবচেয়ে বিপজ্জনক’ অভিবাসন রুটের মধ্যে একটি।
ইয়েমেনে পৌঁছানোর জন্য পাচারকারীরা প্রায়ই বিপজ্জনক পথে অতিরিক্ত যাত্রীবাহী নৌকায় করে লোহিত সাগর বা এডেন উপসাগর হয়ে লোকজনকে পারাপার করে।
আইওএমের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে ৬০ হাজারের বেশি শরণার্থী এবং অভিবাসী ইয়েমেনে পৌঁছেছেন যা আগের বছরের মোট উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৯৭ হাজার ২০০।
আন্তর্জাতিক
আবারও ‘স্বাস্থ্যকর শহরের’ স্বীকৃতি পেলো মদিনা

আবারও ‘স্বাস্থ্যকর শহর’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে সৌদি আরবের মদিনা নগরী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মদিনা শহরকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্রতম নগরী মদিনা এবার ৮০ পয়েন্ট অর্জন করে এই স্বীকৃতি পেয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ)।
এই স্বীকৃতির মাধ্যমে জেদ্দার পরই মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘স্বাস্থ্যকর নগরী’ হিসেবে নিজের অবস্থান আরও দৃঢ় করলো মদিনা শহর।
একটি আনুষ্ঠানিক আয়োজনে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ফাহাদ আলজালাজেলের কাছ থেকে এই স্বীকৃতি সনদ গ্রহণ করেন মদিনা অঞ্চলের গভর্নর প্রিন্স সালমান বিন সুলতান।
প্রিন্স সালমান বলেন, এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে যে, নাগরিকদের জীবনের মান উন্নয়নে নেতৃত্ব কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শুধু স্থানীয়ভাবে নয়, বরং আন্তর্জাতিকভাবে একটি উন্নয়ন মডেলে পরিণত হচ্ছে মদিনা শহর। যা সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০-এর লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ডব্লিউএইচও-এর এই স্বীকৃতি অর্জনের জন্য একটি শহরকে ৮০টি মানদণ্ড পূরণ করতে হয়,যার মধ্যে রয়েছে— পার্ক ও খোলা জায়গা, হাঁটার উপযোগী এলাকা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও স্কুলের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি।
ডব্লিউএইচও মদিনা ছাড়াও সৌদি আরবের আরও ১৪টি শহরকে ‘স্বাস্থ্যকর শহর’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। শহরগুলো হলো, তায়েফ, তাবুক, আদ-দিরিয়াহ, উনায়জা, জালাজেল, আল-মানদাক, আল-জুমুম, রিয়াদ আল-খুবরা, শারুরাহ।
এখন মদিনা বিশ্বব্যাপী এমন এক উদাহরণ, যেখানে আধুনিক উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যসচেতনতা একত্রে কাজ করছে।
আন্তর্জাতিক
বিমান থেকে গাজায় ত্রাণসামগ্রী ফেলবে ইতালি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান থেকে ত্রাণসামগ্রী ফেলা শুরু করবে ইতালি। চলমান সংঘাতে বিপর্যস্ত গাজার বেসামরিক জনগণের জন্য জরুরি সহায়তা পৌঁছাতে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটি। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার (১ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রোম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গাজার বেসামরিক নাগরিকদের কাছে মৌলিক প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিতে ইতালির সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সমন্বয়ে একটি বিমান ত্রাণ মিশনের অনুমোদন দিয়েছি।’
তিনি আরও জানান, ইতালির বিমান বাহিনী জর্ডানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে। এ লক্ষ্যে বিশেষ কন্টেইনারে ত্রাণসামগ্রী ভরে তা আকাশপথে গাজায় ফেলা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাজানি জানান, আগামী ৯ আগস্ট থেকে বিমান ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হবে।
এদিকে শুক্রবার স্পেন জানিয়েছে, তারা গাজায় ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সঙ্গে সমন্বয় করে এরইমধ্যে ১২ টন খাদ্যসামগ্রী বিমান থেকে ফেলেছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের সঙ্গে যৌথভাবে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য এ ধরনের জরুরি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ইউরোপীয় দেশগুলো।
আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশের শুল্ক কমায় ভারতের পোশাক বাজারের শেয়ারে দরপতন

ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বশেষ শুল্ক সিদ্ধান্তে শুক্রবার ভারতের টেক্সটাইল শেয়ারদরগুলো ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনে, যা ভারতের রপ্তানিকারকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র করে তুলেছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) এই ঘোষণার পর ভারতীয় পুঁজিবাজারে পোশাক-নির্ভর কোম্পানিগুলোর শেয়ারে ব্যাপক বিক্রির চাপ দেখা যায়। গোকালদাস এক্সপোর্টসের শেয়ার ৩.১ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৮২৪.৫০ রুপিতে। পার্ল গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিজের পতন ঘটে ৭.২ শতাংশ, নামতে নামতে তা দাঁড়ায় ১,৩৮০.০৫ রুপিতে। অরবিন্দ লিমিটেড ১.৮ শতাংশ কমে ৩১০.৪০ রুপিতে নামলেও, ওয়েলস্পান লিভিং ১.৯ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১২৩.৮০ রুপিতে। কেপিআর মিলের শেয়ারও ৪.৩ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১,০৯২ রুপিতে।
উল্লেখ্য, ওয়েলস্পান লিভিং, গোকালদাস এক্সপোর্টস, ইন্দো কাউন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ট্রাইডেন্টের মতো কোম্পানিগুলো তাদের মোট আয়ের ৪০ থেকে ৭০ শতাংশই মার্কিন বাজার থেকে অর্জন করে। ফলে নতুন শুল্ক নীতির কারণে তারা বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় চাপের মুখে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭০ শতাংশ রাজস্ব পাওয়া কিটেক্স গার্মেন্টসের শেয়ার ৫ শতাংশ কমে গেছে। এ ছাড়া ট্রাইডেন্ট এবং ইন্ডো কাউন্ট ইন্ডাস্ট্রিজের মতো অন্যান্য টেক্সটাইল কোম্পানির শেয়ারও ১ থেকে ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশের শুল্ক বর্তমানে ভিয়েতনামের ২০ শতাংশ হারের সমান হয়েছে। অথচ ভারতীয় টেক্সটাইল পণ্যের ওপর এখনও ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল রয়েছে এবং অতিরিক্ত জরিমানার বিষয়ে এখনো মার্কিন কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার কোনো দিকনির্দেশনা দেয়নি।
ফলে শুল্কনীতির এই অসমতা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের মুনাফার হার এবং দাম নির্ধারণে ক্ষমতা—দুই ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম খরচ-সাশ্রয়ী উৎপাদনের মাধ্যমে মার্কিন বাজারে আধিপত্য বিস্তার করেছে, সেসব খাতে ভারতের প্রতিযোগিতা আরও কঠিন হবে।
গোকুলদাস এক্সপোর্টস এবং পার্ল গ্লোবাল তাদের ৫০-৭০ শতাংশ আয় মার্কিন বাজার থেকে অর্জন করে। অন্যদিকে, অরবিন্দ লিমিটেড এবং কেপিআর মিল যথাক্রমে ৩০ শতাংশ এবং ২১ শতাংশ আয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল।
চয়েস ওয়েলথ-এর অ্যাসোসিয়েট ভাইস প্রেসিডেন্ট অক্ষত গার্গ বলেন, ‘জেমস, টেক্সটাইল এবং অটো পার্টস খাতে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য এর তাৎক্ষণিক এবং কঠোর প্রভাব পড়বে। এমনিতেই যেসব খাতের মুনাফা কম, তারা এখন প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের তুলনায় ৭-১০ শতাংশ খরচে পিছিয়ে পড়েছে।’
শুক্রবারের এই দরপতন বৃহত্তর এক ধারাবাহিক পতনের অংশ, যার সূচনা হয়েছিল বৃহস্পতিবার। সেদিন পার্ল গ্লোবাল ৭ শতাংশের বেশি এবং গোকুলদাস এক্সপোর্টস ৪.৫ শতাংশের বেশি দরপতন হয়। কেপিআর মিলের শেয়ারও ৩ শতাংশের বেশি এবং ওয়েলস্পান লিভিং প্রাথমিকভাবে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও দিন শেষে প্রায় ৪ শতাংশ কমে যায়।
যেখানে এক সময় বাংলাদেশের তুলনায় ভারত অল্প সময়ের জন্য কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল, সেখানে এখন নতুন করে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক দামের দিক থেকে অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে ভারতীয় টেক্সটাইল শিল্পের জন্য।