মত দ্বিমত
বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা কেন প্রয়োজন?

বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা বহুমুখী সংকটের মুখোমুখি। সৃজনশীলতার অভাব, দক্ষতার ঘাটতি এবং স্থানীয় চাহিদার প্রতি উদাসীনতা শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতিকে স্থবির করে দিয়েছে। এই সংকট শুধু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকেই নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করছে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি দক্ষ, উদ্ভাবনী এবং সমাজের প্রয়োজনমাফিক শিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রচলিত এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে সবার জন্য একই পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষার কাঠামো নির্ধারিত, সেখানে শিক্ষার্থীদের বহুমুখী প্রতিভা বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা ও সুযোগ সীমিত। এককেন্দ্রিক ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন, পটভূমি এবং চাহিদাকে অগ্রাহ্য করে ‘সবার জন্য একই জিনিস’ (ওয়ান সাইজ ফিটস অল) ধারণা চাপিয়ে দেয়। ফলে একদিকে শিক্ষার্থীদের ভিন্নতর প্রতিভা ও যোগ্যতার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, অপরদিকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হয় জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে পরিণত করার সুযোগ থেকে।
বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা এই সংকটের সমাধানে কার্যকর সমাধান হতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় একটি নির্ধারিত শিক্ষাক্রম কাঠামোর ভিত্তিতে স্থানীয় চাহিদা ও বৈচিত্র্য অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা ও আগ্রহের ভিত্তিতে পাঠ্যসূচি এবং উপযোগী শিক্ষণ পদ্ধতি তৈরি করা সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে এখানে ইংল্যান্ড ও ফিনল্যান্ডের বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বের নানা দেশে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা এবং সৃজনশীলতা বিকাশে বিশেষ সহায়ক হয়ে ওঠেছে। এই ব্যবস্থা পড়ালেখায় শিক্ষার্থীদের নিজস্ব অগ্রগতি ও প্রয়োজন অনুযায়ী শেখার সুযোগ দেয়, যা তাদের প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে সৃজনশীল চিন্তাধারার বিকাশ এবং সমস্যার সমাধান করার দক্ষতাকে উন্নত করে।
বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার পূর্বের আলোচনায় আমরা এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিকতা, স্থানীয় সমস্যা ও সুযোগ-সুবিধার সাথে সংযোগ এবং সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশের ওপর জোর দিয়েছি। শিক্ষার মৌলিক লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রতিটি শিক্ষার্থীর শিখনধারা, আগ্রহ এবং প্রাসঙ্গিক বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য রাখা। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিটি বিদ্যালয়, এমনকি প্রতিটি শিক্ষক, তাদের শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যসূচি ও পাঠদান পদ্ধতি নির্ধারণ করতে সক্ষম হন। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব পড়ালেখার অগ্রগতি ও ক্ষমতা অনুযায়ী শেখার সুযোগ পায় এবং প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়। এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ শিখনধারা এবং আগ্রহকে উপেক্ষা করে, যা সৃজনশীলতার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। এর বিপরীতে বিকেন্দ্রিক ব্যবস্থায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত দক্ষতা ও প্রতিভার বিকাশে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস এবং স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধু পরীক্ষার ফলাফলের জন্য নয়, বরং জীবনের বাস্তব প্রয়োগের জন্য জ্ঞানার্জন করতে পারে, যা একটি জাতির সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য একটি বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য খুবই উপযোগী ও অত্যাবশ্যক। কারণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিদ্যমান সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যার প্রকৃতি ও চাহিদার ধরন আলাদা। যেমন চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রা, জীবিকা ও পরিবেশের চাহিদা সিলেটের চা বাগান বা পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার শিক্ষার্থীদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে পাঠ্যসূচি তৈরি করা যেতে পারে, যা সেখানে জীবনযাত্রা, জীবিকা এবং পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক হবে। তেমনি সিলেটের চা বাগানের শ্রমজীবী পরিবারগুলোর জন্য কৃষিভিত্তিক কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে।
একইভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত শিক্ষা বাস্তবিক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে এসব এলাকার স্থানীয় সমস্যা এবং শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষাসূচি সাজানো সম্ভব। এই ধরনের ব্যবস্থা জন-সমাজের প্রাসঙ্গিক শিক্ষাকে নিশ্চিত করবে এবং স্থানীয় দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার একটি বড় সমস্যা হলো, এটি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল চিন্তা এবং গবেষণাধর্মী শিক্ষার বদলে মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভরশীল করে তোলে। বিকেন্দ্রিক ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষা এবং গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, চীনের কিছু গ্রামীণ বিদ্যালয়ে স্থানীয় কৃষি সমস্যার সমাধানে শিক্ষার্থীদের গবেষণামূলক কাজ করানো হয়, যা শুধু তাদের সৃজনশীলতাকেই বাড়ায় না বরং স্থানীয় সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধানও দেয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা শুধু দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে নয়, বরং ভবিষ্যতের উদ্ভাবক হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। এককেন্দ্রিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পরীক্ষাভিত্তিক জ্ঞানার্জনের ওপর যে অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়, তা শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী চিন্তার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। বিকেন্দ্রিক ব্যবস্থায়, বিশেষত প্রকল্পভিত্তিক এবং গবেষণাধর্মী শিক্ষার মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তব সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে পায়। ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ যেখানে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে নিজস্ব পদ্ধতি অনুসন্ধানের স্বাধীনতা দেওয়া হয় এবং তাদের গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়। বাংলাদেশের মতো দেশে এ ধরনের উদ্যোগ শুধু উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটাবে না, বরং প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার সম্প্রসারণেও সহায়ক হবে।
বাংলাদেশের এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের চাহিদা এবং বৈচিত্র্যময় পটভূমিকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সারা দেশের জন্য একই পাঠ্যপুস্তক নির্ধারণ করা হয়, যা বিশেষ করে শহর ও গ্রামের শিক্ষার্থীদের ভিন্নতর চাহিদা এবং বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শহরের শিক্ষার্থীরা যেখানে উন্নত প্রযুক্তি, শিক্ষণ সামগ্রী এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকের সুবিধা পায়, গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এর ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি গভীর বৈষম্য তৈরি হয়, যা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে অন্তরায় এবং আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই বৈষম্য কেবল শারীরিক সুযোগ-সুবিধার সীমাবদ্ধতা নয়; এটি শিক্ষার্থীদের চিন্তা ও দক্ষতার বিকাশকেও বাধাগ্রস্ত করে। গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন স্থানীয় বাস্তবতা এবং জীবিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত ও জীবনমুখী সংগতিপূর্ণ পাঠ্যসূচি। যেমন ভারতের কেরালা রাজ্যে স্থানীয় শিক্ষার বিকাশে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে, যা গ্রামের শিক্ষার্থীদের স্থানীয় সমস্যার সমাধানে সম্পৃক্ত করে তাদের আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।
ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা তার বিকেন্দ্রিক চরিত্র এবং শিক্ষকের স্বাধীনতার জন্য বিশ্বব্যাপী সেরা হিসেবে স্বীকৃত। এই ব্যবস্থায় শিক্ষকরা পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষাদান পদ্ধতি নির্ধরণে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করেন, যা শিক্ষার মানকে বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। শিক্ষার্থীদের তাদের আগ্রহ অনুযায়ী বিষয় বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় এবং তারা গবেষণাধর্মী কার্যক্রমে অংশ নিয়ে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করে। ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থার এই উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, শিক্ষকদের স্বাধীনতা এবং শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত চাহিদার প্রতি মনোযোগ শিক্ষার সামগ্রিক মান উন্নত করতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং প্রযুক্তির সফল সংমিশ্রণের জন্য বিখ্যাত। জাপান তাদের শিক্ষাক্রমে স্থানীয় ঐতিহ্যকে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে। যেমন জাপানের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের স্থানীয় শিল্পকলা, কৃষি এবং পরিবেশ নিয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়, যা তাদের শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে। একই সঙ্গে প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করে তোলে। ফিনল্যান্ড এবং জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আমরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। প্রথমত, শিক্ষকদের স্বাধীনতা এবং স্থানীয় চাহিদার প্রতি মনোযোগ প্রদান শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করে। দ্বিতীয়ত, স্থানীয় ঐতিহ্য এবং প্রযুক্তির সংমিশ্রণ শিক্ষার্থীদের বাস্তবমুখী এবং কার্যকর শিক্ষা প্রদান করতে পারে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই মডেলগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষকদের স্বাধীনতা প্রদান এবং স্থানীয় চাহিদার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষাক্রম তৈরির মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে স্থানীয় বনজ সম্পদের ওপর ভিত্তি করে পরিবেশগত শিক্ষা, বা উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। একইসঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহারে বিনিয়োগ করে শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার উপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভব। ফিনল্যান্ড এবং জাপানের উদাহরণ থেকে দেখা যায় যে, একটি বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা কেবল শিক্ষার মান উন্নত করতেই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি জাতির ভবিষ্যৎ গড়তে কতটা কার্যকর হতে পারে।
সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে। এটি কেবল শিক্ষার মানোন্নয়নেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং প্রযুক্তি, শিল্প এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বিকেন্দ্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, দক্ষতা এবং উদ্যোক্তা মানসিকতা বিকশিত হবে, যা তাদের বৈশ্বিক চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে তুলবে। একই সাথে শিক্ষার ডিজিটালকরণ নিশ্চিত করা হলে শিক্ষার্থীদের শেখার পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। তারা তাদের শেখার নিজস্ব গতি ও আগ্রহ অনুযায়ী জ্ঞান অর্জন করতে পারবে, যা ব্যক্তিগত উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা চেতনার বিকাশ ঘটাবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জাপানের শিক্ষাব্যবস্থায় যেমন স্থানীয় শিল্পের সাথে প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যসূচি এবং প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ডিজাইন করা সম্ভব। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দক্ষ জনশক্তির ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হবে।
একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি নতুন, দক্ষ ও সৃজনশীল প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব। তাই বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হলে এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার পথে দ্রুত এগোতে হবে। ফিনল্যান্ড, জাপান বা সিঙ্গাপুরের মতো উদাহরণগুলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করে আমরা আমাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটের উপযোগী একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি। এই ব্যবস্থা কেবল শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াবে না, বরং তাদের মধ্যে উদ্ভাবনী চিন্তা, মানবিক মূল্যবোধ এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরি করবে। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা শুধু আমাদের অকার্যকর শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের জন্য নয়, এটি আমাদের আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের ভিত্তি হিসেবেও জরুরি। এটি বাংলাদেশী হিসেবে এমন এক প্রজন্ম গড়ে তুলতে সহায়তা করবে যারা হবে আত্মনির্ভরশীল, সৃজনশীল এবং আধুনিক বিশ্বের প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতার চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশীরা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী, প্রযুক্তিতে অগ্রসর এবং মানবসম্পদে সমৃদ্ধ একটি জাতি হিসেবে বিশ্বে স্থান করে নিতে সক্ষম হবে। শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার পথে এগিয়ে গিয়ে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে নিরাপদ এবং উজ্জ্বল করে তুলতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
ড. মাহরুফ চৌধুরী, ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য। mahruf@ymail.com
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মত দ্বিমত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যেসব অর্জন

গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পরে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এই সরকারের ৮মাস অতিবাহিত হয়েছে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে মানুষের বাকস্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার ফিরলেও আইনশৃঙ্খলা আর গণহত্যার বিচারে ধীরগতি নিয়ে অস্বস্তিতে অনেকেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব সমূহ ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ, আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করা, আহতদের সুচিকিৎসা করা ও নিহতদের পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে এবং নির্বাচনের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা। পাশাপাশি সকল খাতে সার্বিক সংস্কার নিশ্চিত করা। এই দাবিগুলোর প্রতি জনগণের প্রত্যাশা ছিল বিশাল এবং তা ছিল যথার্থ। তবে সরকার এই দায়িত্বসমূহ কতটুকু পালন করতে পেরেছে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। আইন শৃঙ্খলা এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের বিচারে সরকারের ধীরগতিতে অসন্তুষ্ট দেশের নাগরিক সমাজ। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের অতিরিক্ত নমনীয়তা এই দায়িত্ব সমূহ যথাযথ পালনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতনের ঐতিহাসিক দিন। এর পরবর্তী কয়েকদিনে বিপ্লবী জনতার চাপে সরকারের পতন ঘটে। ড. ইউনূস সে সময়ে প্যারিসে ছিলেন, যার কারণে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণে কিছুটা বিলম্ব হয়। তবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের আহ্বানে তিনি সম্মত হনএবং দেশের জনগণও তাকে সমর্থন জানায়। ৮ আগস্ট, ২০২৪-এ তিনি শপথ গ্রহণ করেন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে, যা ইতিহাসের একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর,দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল বিপর্যস্ত। শেখ হাসিনার সরকার লুটপাট ও দুর্নীতির কারণে ব্যাংকগুলোর তহবিল প্রায় খালি হয়ে গিয়েছিল,এবং ভারতসহ অন্যান্য দেশের ঋণ পরিশোধের চাপ ছিল। এরপর শুরু হয় ভয়াবহ বন্যা, ভারত ত্রিপুরার ডুমুর বাঁধ খুলে দিলে স্রোতের মতো পানি বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়,এবং একযোগে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তবে,এই দুর্দিনে সরকারের পাশাপাশি বহু সামাজিক সংগঠনও মানুষের পাশে দাঁড়ায়।
এমন অবস্থায়, বিভিন্ন ছদ্মাবরণে পতিত সরকারের সমর্থকরা দাবি আদায়ের নামে মাঠে নামে।আনসারদের কর্মসূচি থেকে শুরু করে শ্রমিকদের আন্দোলন,গার্মেন্টস ভাঙচুর,শিক্ষার্থীদের অটোপাশের দাবি- এসব কিছু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে ঘটে। এসব আন্দোলনের পেছনে দেখা যায় সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ।এর মধ্যে একটি বড় ষড়যন্ত্র শুরু হয় ইসকন নেতা চিন্ময় কৃঞ্চ দাসের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে,যেখানে দেশি-বিদেশি চক্র সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করে। ভারতের টেলিভিশন চ্যানেল মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে এই সাম্প্রদায়িক অশান্তি ছড়াতে থাকে। বাস্তবতা হলো, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিই মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া,ভারতীয় গণমাধ্যমসহ কিছু দেশি-বিদেশি চক্র একযোগে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে থাকে,যা সরকারকে ব্যর্থ করতে তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা ছিল। এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে ৪৯টি ভারতীয় গণমাধ্যম ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব মিডিয়া পণ্য হিসেবে কেবল গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, যা বাস্তবতার কিছুই ছিল না। তবে,এখনো এসব ষড়যন্ত্র থেমে যায়নি। বরং নতুন নতুন আক্রমণ আসতে পারে, যার মোকাবিলা করা কঠিন।
এখন প্রশ্ন হলো, দেশের মানুষ কী চায়! দেশের মানুষ একটি সুন্দর বাংলাদেশ চায়, যেখানে মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার থাকবে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি হবে,এবং ক্ষমতায় আসা কিংবা টিকে থাকার জন্য কোনো দল বা গোষ্ঠীর গোলামি করবে না। জনগণ স্বাধীনভাবে কথা বলবে,এবং গণমাধ্যমও ক্ষমতাকে প্রশ্ন করতে সক্ষম হবে। ফ্যাসিস্ট,খুনি ও লুটেরা সবাই বিচারের মুখোমুখি হবে। নির্বাচন শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে এবং সৎ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিরা মনোনয়ন পাবে।এমন একটি বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হলে, ড. ইউনূস সরকারের দোষত্রুটি নিয়ে অযথা সময় নষ্ট না করে, ঐক্যবদ্ধভাবে গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি একত্রিত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
ড. ইউনূস এই দেশের হাল ধরার পর আজ পর্যন্ত কোনো গুরুতর ভুল করতে দেখা যায় নাই। কাউকে তাচ্ছিল্য করে কোনো নোংরা ভাষাও ব্যবহার করেননি। আজ পর্যন্ত এমন কোনো কথা বলেননি যার জন্য আমরা তাঁর প্রতি কেউ বিরক্ত হবে।
ভারত হয়তো তার সোনার ডিম দেওয়া মুরগী হারালো। তবে ভারত বসে নেই । ভারত ট্রাম্পের কাছে গিয়েছে, কূটনৈতিক ভাবে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, মিডিয়ার মাধ্যমে নানা প্রোপাগাণ্ডা চালিয়েছে। তবুও কি কোনো কূটনীতিক চাপ বাংলাদেশকে দিতে পেরেছে? কারন,ড. ইউনূস এর বৈশ্বিক ইমেজ। অনেকেই বলেছিলো সামিট গ্রুপ,এস আলম গ্রুপের ব্যাংক হিসাব জব্দ করলে অর্থনৈতিক স্থবিরতা আসবে। ড. ইউনূস তাদের সবার ব্যাংক হিসাব ক্লোজ করালেন। উল্টো মানি লণ্ডারিং এর মামলা দিলেন। অর্থনৈতিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতর দিকে। ৩/৪ মাস ধরে ডলার স্থিশীল রয়েছে। লুট হওয়া ব্যাংকগুলোকে বন্ধ না করে ধিরে ধিরে বাচিঁয়ে তুলছেন !
উগ্রবাদী সংগঠন ইসকন যখন মাঠে নেমেছিলো, তখন ইসকনের উগ্র কর্মীদেরকে ভারত থেকে বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়েছিলো,’ইউনূস সরকার হিন্দুদের গায়ে আঘাত দিলে তাকে ব্যবহার করে ভারত বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করবে’। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ইসকন সমর্থকরা চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর গায়ে গরম পানি ঢাললো,আইনজীবী সাইফুলকে শহীদ করলো। সরকার যারা গরম পানি ঢেলেছে তাদের সবাইকে গ্রেপতার করেছে। চিন্ময় এর মতো ’র’-এর এজেন্টকে গ্রেপ্তার করলে ভারত বড় ঝামেলা করবে, অথচ চিন্ময়ের গ্রেপতার হওয়াতে অনেক হিন্দু খুশি হয়েছিলো। ভারতকে কোন শব্দ করতে না দিয়ে উলটো পুরো ইসকনকে ঠান্ডা করে দিয়েছেন।
ড: মুহাম্মদ ইউনূস দ্রব্যমুল্যের লাগাম টেনে ধরেছেন। বাজারের সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগের চেয়ে বেশ কমেছে, এমনকি এই রোজাতেও। সয়াবিন তেল নিয়েও যে সংকট ছিলো তা রোজার প্রথম ৫ দিনে সহনশীল ছিল। সর্বশেষ কখন আমরা পিয়াজ ৩০-৩৫ টাকা, ডিমের ডজন ১২০ আর আলু ২০ টাকা, ৪০০ টাকার কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা কেজি,১০০ টাকার তরকারি এখন ৩০/৪০ টাকা ছিল তা অনেকেই ভুলে গেছি।
এদিকে রোজার শেষে ঈদুল ফিতরের উৎসবও আরও রঙিন হয়ে ধরা দিয়েছে দেশবাসীর কাছে। এদেশে চিরায়ত চিত্র সড়কে নাড়ীর টানে ঘরে ফেরা যানবাহনের যাত্রীদের ভোগান্তি। এবার সেই দুর্দশার চিত্রও উধাও! ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িফেরা মানুষের প্রধান রুট ঢাকা-উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে কোনো যানজট নেই। হাইওয়ে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা কঠোর শ্রম দিয়ে মহাসড়ক যানজট মুক্ত রেখেছে। একই দৃশ্য দেখা গেছে অন্যান্য মহাসড়কেও। প্রশাসনের আন্তরিক তদারকির কারণে মহাসড়কে নেই যানবাহনের বাড়তি চাপ, দুই-একটি ঘটনা ছাড়া স্বস্তির ঈদযাত্রা দেখা গেছে রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাসস্ট্যান্ডগুলোতে। গাবতলী, মহাখালী বাস টার্মিনালের যাত্রীদের অনেকে বলছেন, সড়কে যা ঘটেছে, তা বিশ্বাসই হচ্ছে না তাদের। জীবনে এত নির্বিগ্নে ঈদযাত্রা তারা কখনও করতে পারেনি। ঈদের মধ্যে গত ৪০ বছরেও এমন দৃশ্য দেখেনি দেশের মানুষ।
হাসিনা যাওয়ার সময় আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া থেকেও ঋণ নিয়ে রেখেছিলো। ড.ইউনূস আস্তে আস্তে ঋণ পরিশোধ করা শুরু করেছেন জানুয়ারি থেকে। কাতার থেকে জ্বালানি কেনা হলেও ২৫৪ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রেখেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরের মধ্যেই ২৩ এপ্রিল বকেয়া টাকার সর্বশেষ পেমেন্ট দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। বিভিন্ন সংস্থার সর্বমোট বকেয়া ছিল ৩.২ বিলিয়ন ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার সেটি ৬০০ মিলিয়নে নামিয়ে এনেছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব ৪ দিনের জন্য বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। গুতেরেসের সফর এই সরকারের বিশ্বব্যাপি স্বীকৃতি বাড়াবে৷ তাছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন আগামী বছর মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে সেখানে তাদের সাথে ইফতার করতে চান!
ড.মুহাম্মদ ইউনূসের কণ্ঠে যে মমত্ত দেখা যায় তা কৃত্তিম নয়। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক টানে উচ্চারিত তার প্রতিটি শব্দই যেন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের হৃদয়ের গভীরতম যন্ত্রণার প্রতিধ্বনি হয়ে উঠেছিল। এ ভাষা শুধুই কথা নয়, এ ভাষা ছিল অনুভূতির। একটি হারানো শেকড়ের আহাজারি ও একটি জাতির অস্তিত্ব সংকটের নির্জন কান্না। তার কণ্ঠে কোনো জটিল রাজনীতি নাই,নেই কোনো চাতুরতা বা কূটনৈতিক ভাষা। শুধু এক প্রবীণ মানুষের মমতা আর এক নিঃস্ব জাতির বেদনার প্রতি গভীরতম সংবেদনশীলতা।
ড. ইউনুসের বক্তব্য কখনও অ-কাজের কথা বলেন না। সবচেয়ে বেশী আকর্ষণ করে সেটা হলো তিনি কখনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করেন না, অস্বীকারও করেন না, ছোটও করেন না আবার মহাভারত বি-শা-লও বলেন না। ইতিহাস ইতিহাসের জায়গায় রেখে দেন। কারও কোন সমালোচনা বা ব্যাঙ্গ করে কথা বলেন না। তিনি কাউকে ভয় দেখান না,প্রতিশোধ নিবেন ও না। তিনি নিজেকে নিয়ে অহংকার করেন না। দুনিয়ার কারও চাটুকারিতাও করেন না। তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন না, রাগ করে কথাও বলেন না। তিনি ঠান্ডা মাথার এক দারুণ খেলোয়াড়। তিনি ভবিষ্যতের কথা বলেন।স্বপ্নের কথা বলেন। তরুণদের এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তিনি ধর্ম নিয়ে ক্রিটিসাইজ করেন না। তিনি এক অনন্য অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। এটাকেই বলে আন্তর্জাতিক ব্যাক্তিত্ব।
ডঃ ইউনুসের সফলতা যাই হোক না কেন, সুযোগ পেলেই আমরা ড.ইউনুসকে শূলে চড়াই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করি। যেটা না সেটাও বলি। কিন্তু বিগত ৮মাসে ২০০’র অধিক আন্দোলন আর হঠাৎ করে সকল ক্ষেত্রে তীব্র বৈষম্য অনুভূত হওয়া জাতিকে নিয়ে তিনি যে কাজগুলো করছেন সেগুলোর জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোটাও জরুরী।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্জনসমূহ:
১.বিশ্বের ৭৫ তম দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক গুম বিরোধী সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।
২.আওয়ামী আমলে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির কারণে বাফুফের উপর ফিফা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো৷ বাফুফের উপর সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ফিফা।
৩.সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে ৩২ করা হয়েছে।
৪.ধর্ষণের তদন্ত ১৫ দিন এবং বিচার ৯০ দিনের মধ্যে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
৫.সর্বশেষ ৮ মাসে দেশী বিদেশী ঋণ পরিশোধ করেছে ৬২ হাজার কোটি টাকা।
৬. রেমিট্যান্স প্রবাহ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে । দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে ২৭.৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যা গতবছরের এই সময়ের তুলনায় ৪ বিলিয়ন বেশি।
৭. বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পতন থেকে রক্ষা করেছেন। রিজার্ভ বেড়ে ২ হাজার ১৪০ কোটি ডলার।
৮. ডলারের দামের পতন ঠেকানো সম্ভব হয়েছে।
৯. রমজানে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশংকাকে আশ্চর্যজনকভাবে সফল হয়েছেন। রোজায় জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি।
১০. হাসিনা ও তার পরিবারের একাউন্ট থেকেই উদ্ধার করেছে ৬৩৫ কোটি টাকা।
১১. দেশের খাদ্যপণ্যে ভর্তুকি বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ।
১২. গত ২২ মাসের তুলনায় সর্বনিম্ন মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে এই ফেব্রুয়ারিতে।
১৩. স্কুলের বইগুলোতে হাসিনার উল্টাপাল্টা সিলেবাস আর পারিবারিক তোষামোদির গল্প বাদ দিয়ে সাজানো গোছানো সিলেবাস দেওয়া হচ্ছে।
১৪. এখন থেকে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকেরা পাবেন দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদা।
১৫. লুট হওয়া ব্যাংকগুলোর নিশ্চিত ধ্বংস হতে রক্ষা করেছেন।
১৬. আদানির কাছে বিদ্যুৎ খাত ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন। পুরো রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ভালো আছে।
১৭. রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৫% এর বেশি। ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে তার সময়ে।
১৮. বিগত বছরগুলোতে বর্ডার কিলিং গড়ে বছরে ৫০০ এর অধিক ছিল। গতবছর ছিল ৫৭৭জন। (তথাকথিত বন্ধুর দ্বারা হত্যা।) ইউনুস সরকারের সময় তা ৭ মাসে ১০ জন।
১৯. দেশটাকে রাজ্য থেকে আবার রাষ্ট্রের মর্যাদায় আসীন করেছেন তিনি। তাই জুলাই বিপ্লবকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলা হয়।
২০. বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে ভারতের সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলার মতো সৎ সাহস একমাত্র প্রফেসর ইউনুসের আছে।
২১. সকল সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব একমাত্র তার পক্ষেই আদায় করা সম্ভব হয়েছে।
২২. বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে একমাত্র তার আমলেই সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ও ডিজিটাল প্লাটফর্মে তুমুল সমালোচনা ও তার বিরুদ্ধে কুৎসিত ভাষায় অপপ্রচার করা যাচ্ছে। কাউকে তিনি গ্রেফতার করেন নি। যা ফ্যাসিসট জমানায় কল্পনাও করা যেত না।
২৩. প্রবাসীদের ভিআইপি মর্যাদা দিয়েছেন তিনি। ঘোষণা করেছেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে।
২৪. তার যোগ্য নেতৃত্বে আরব আমিরাতে বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি কারাগার থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছে।
২৫. জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে তিনি মাত্র ৭ সদস্যের প্রতিনিধি নিয়ে যোগদান করেন। ফ্যাসিস আমলে প্রতি বহরে থাকতো প্রায় ৩০০ জন। যার বিপুল খরচ জাতি বহন করতো।
২৬. বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র বক্তা তিনি যার প্রতি ঘন্টা বক্তব্যের মূল্য প্রায় কোটি টাকা।
২৭. রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে ফ্যাসিস্ট সরকার। যা মেরামত ও সংস্কার করছেন তিনি।
২৮. প্রতিটি হত্যাকান্ডের বিচার কাজ শুরু করেছেন তিনি।
২৯. রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজে দেশে পাঠানোর জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে আগামী ঈদ তারা নিজ ভিটা বাড়িতে করতে পারে।
৩০. বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক ড. ইউনুস। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাধিক সমাদৃত বাঙালি তিনি।
অনেক কিছু বলা সহজ। গালি দেওয়া সহজ ৷ নির্বাচন দ্রুত চাওয়াও সহজ ৷ হাসিনার রেখে যাওয়া রুগ্ন অর্থনীতিকে যে কারো জন্য এসে ঠিক করতে ঘাম ছুটে যেতো। পারতো কিনা সেটা নিয়েও ঢের সন্দেহ আছে। উপরন্তু, অর্থনীতি, দ্রব্যমূল্য, মুদ্রাস্ফীতি ঠিক রাখতে না পারলে ক্ষমতায় আসলেও যে টিকতে মুশকিল হবে, এটা রাজনৈতিক দলগুলো ভালো করেই জানে।
র্দুনীতিগ্রস্থ একটা দেশ আর ব্যক্তি স্বার্থকেন্দ্রিক একটা জাতিকে ঠিক করতে ড. ইউনুস হয়তো হিমশিম খাচ্ছে অনেক কিছু করতে। প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যদি সম্মত না হতেন তাহলে দ্বিতীয় অন্য কোন ব্যক্তিকে সেই জায়গায় তখন চিন্তা করতে পারিনি।
বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হলো ২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বেলজিয়াম, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্লোভেনিয়া এবং সুইডেনের ভিসা আবেদন এখন থেকে করা যাবে ঢাকার সুইডেন দূতাবাস থেকে। এছাড়াও, পর্তুগাল, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও ক্রোয়েশিয়া তাদের নিজস্ব ভিসা অফিস চালু করেছে ঢাকায়, যা ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের দক্ষ কূটনৈতিক তৎপরতার ফলে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দীর্ঘদিনের দাদাগিরির রাজনীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে সরকার বাংলাদেশিদের জন্য সহজ, স্বচ্ছ এবং দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া নিশ্চিত করেছে। ফলে: ভিসা আবেদনকারী বাংলাদেশিদের জন্য সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। ভিসা প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও সহজ হবে। বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। দক্ষ জনশক্তি, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের জন্য ইউরোপে যাওয়ার পথ আরও উন্মুক্ত হবে।
ড. ইউনুস সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ বিশ্ব মঞ্চে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘবের এই পদক্ষেপ তার নেতৃত্বের আরেকটি সফলতা। ইউরোপের নতুন দুয়ার উন্মুক্ত হলো- এটি বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল অগ্রগতি!
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে সেদেশের সরকার ও চীনা কম্পানিগুলোর কাছ থেকে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে দেশটির প্রায় ৩০টি কম্পানি বাংলাদেশের বিশেষ চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে। এ ছাড়া মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে চীন। চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা হিসেবে আরো ১৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। অনুদান ও অন্যান্য ঋণ সহায়তা হিসেবে আসবে বাকি অর্থ। বাংলাদেশের বিদ্যমান শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুবিধা আরো দুই বছর বহাল রাখার ঘোষণা দিয়েছে চীন। এর আগে চীনা বাজারে ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য এই সুবিধা ছিল। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে চীনা উপ প্রধানমন্ত্রী ডিং জুয়েশিয়াংয়ের এক বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে চীনা উপ প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন।
চীন বাংলাদেশ থেকে আম নিতে আগ্রহী। বাংলাদেশও চীনে আম পাঠাতে চায়। বাংলাদেশ চীনে আম রপ্তানির জন্য ৬ বছর আগে দেশটির কাছে আবেদন করেছিল। তবে নানা জটিলতায় সেটা আর কার্যকর হয়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের মধ্যে দিয়ে সেদেশে আম রপ্তানির দুয়ার খুলেছে। আগামী মে-জুন মাস থেকে চীনে আম রপ্তানি শুরু হবে। এর মধ্যে দিয়ে বিদেশে বাংলাদেশি আমের চাহিদা বাড়বে।
তিস্তা নদী প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক আগেই থেকে চীনের সহায়তা চেয়ে আসছে বাংলাদেশ। এবার প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে এই প্রকল্পে সহায়তার আশ্বাস মিলেছে। তবে শুধু তিস্তা প্রকল্প নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি অধ্যাপক ইউনূস। তিনি নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্য চীন থেকে ৫০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান চেয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক চীন সফরে সেদেশের পানিসম্পদমন্ত্রী লি গোইয়িংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেসময় নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। বৈঠকে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা ও ঢাকার চারপাশের দূষিত পানি পরিষ্কারের বিষয়ে সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে একটি চুক্তি ও ৮টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সহযোগিতা–সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের চিরায়ত সাহিত্যের অনুবাদ ও প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনিময় ও সহযোগিতা, সংবাদ বিনিময়, গণমাধ্যম, ক্রীড়া ও স্বাস্থ্য খাতে সই হয়েছে ৮টি সমঝোতা স্মারক।
ড. ইউনূস এর প্রশংসা আগে একজন সহ্য করতে পারতেন না,তিনি রোগ ছড়িয়ে পালিয়েছেন । তিনি যথযত সম্মান প্রাপ্য অথচ ড. ইউনূস দেশে র্দীঘদিন ধরে অবহেলিত ছিলেন। তাঁকে আরেকটু দেশটা গোছানোর সময় দিন। তিনি থাকার জন্য আসেন নাই। নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের মতো এত বড় একটি ঘটনার পর সারাদেশে যেখানে বিশাল বিশৃঙ্খলা থাকার কথা, সেখানে সরকার দারুণভাবে সব পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে। দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ড. ইউনূস একটার পর একটা সফলতা অর্জন করে চলেছেন। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে চীন ও ভারত কূটনীতিতেও তিনি দারুণ চমক দেখিয়ে এখন সারাদেশের মানুষের প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেছেন। সাধারণ মানুষের চাওয়া ড. ইউনূস আরও অন্তত: চার বছর ক্ষমতায় থাকলে দেশের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টা যাবে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। দু-চারটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দেশের পরিস্থিতি শুধু সামাল দেওয়াই নয়, দারুণভাবে দেশ পরিচালনা করে চলেছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার।
লেখক: অধ্যাপক সরওয়ার জাহান
উদ্দোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা
সাউদার্ণ ইউনিভার্সিটি
অর্থসংবাদ/কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
রাষ্ট্রের মালিক জনগণ—গণভবন ও সংসদ খুলে দাও

এই রাষ্ট্রে কে মালিক? সংবিধান বলে—জনগণ। বাস্তবে কি আমরা সেই মালিক? যখন একটি জাতির লক্ষ লক্ষ মানুষ খোলা আকাশের নিচে ঘুমায়, হাসপাতালের বারান্দায় মরতে মরতে পড়ে থাকে, তখন সেই রাষ্ট্রের কেন্দ্রস্থলে গণভবন, সংসদ ভবনের মতো বিলাসবহুল স্থাপনা মাসের পর মাস খালি পড়ে থাকে। যেসব ভবনের প্রতিটি ইট, কাঠ, লোহা—সবই আমাদের রক্তঘামে গড়া, সেখানে আজ বসবাস করে এমন কিছু মানুষ, যারা এই জাতির জন্য অভিশাপ ছাড়া আর কিছু নয়। দুর্নীতি, চাটুকারিতা আর পারিবারিক রাজনীতির সিঁড়ি বেয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা কেবল রাষ্ট্রযন্ত্র দখল করেনি, দখল করেছে জাতির আত্মাও।
এই রাষ্ট্রের মূলধন আসে রিকশাচালক, গার্মেন্টস শ্রমিক, কৃষক, দোকানদার, শিক্ষক, সাধারণ নাগরিকের পরিশ্রম আর ট্যাক্স থেকে। মোবাইল রিচার্জে ট্যাক্স, চাল-ডাল কেনায় ট্যাক্স, এমনকি মৃত্যুর সনদ নিতেও ট্যাক্স। এই টাকায় চলে বিলাসবহুল সংসদ ভবন, শত একরজুড়ে নিরাপত্তাবেষ্টিত গণভবন। অথচ আজ এই ভবনগুলোতে থাকেন এমন সব মানুষ, যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন না—ক্ষমতায় থাকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, আমলা, দলীয় ক্যাডার ও দুর্নীতির জাল বুনে। এরা জনগণের মুখোমুখি আসে না, আদালতের মুখোমুখি দাঁড়ায় না, কোনো জবাবদিহি মানে না। কেবল রাষ্ট্রটাকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি ভাবে।
প্রশ্ন হলো—কেন এই ভবনগুলো ফাঁকা পড়ে থাকবে? যখন হাজারো মানুষ বস্তিতে, ড্রেনে, ফুটপাথে, রেলস্টেশনে রাত্রিযাপন করে? যেখানে একটা শীতের চাদর নেই, বাচ্চার জন্য একটা ওষুধ নেই, সেখানে এই নেতারা এসি রুমে শুয়ে কতোটা স্বাচ্ছন্দ্যে জাতির টাকা গিলে খাচ্ছে! কেন এসব ভবন সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত হবে না? মালিক তো জনগণ! তবে কেন মালিক আজ ঘরের বাইরে, আর চোরেরা ভেতরে?
২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার জোয়ারে শেখ হাসিনার পতন হয়। গণভবন, সংসদ ভবনের মতো ‘অস্পর্শ্য’ স্থাপনাগুলোতে ঢুকে পড়ে হাজারো মানুষ। কারণ তারা বুঝে গেছে—এই রাষ্ট্রে আর কোনো ভরসা নেই। তারা কারো দয়ায় নয়, নিজেদের অধিকারে ঢুকেছে। প্রমাণ করে দিয়েছে—এই ভবন কারো পারিবারিক সম্পত্তি নয়। এগুলো করদাতা গরিব মানুষের মালিকানাধীন, যারা তিলে তিলে রাষ্ট্র গড়েছে, কিন্তু আজ রাষ্ট্র তাদের গিলে ফেলছে।
আমরা আর চুপ থাকবো না। আমরা আর চুপ থাকলে এই দুর্নীতির, বিচারহীনতার, চোর-রাজনীতির শেকড় আরও গভীরে প্রবেশ করবে। এই ‘নেতা’ নামধারী দুর্নীতিবাজরা দেশকে বিদেশে বিক্রি করে দেয়, নিজেদের ছেলেমেয়েদের লন্ডনে পাঠায়, অথচ দেশের কৃষক ধানের দাম পায় না, শ্রমিক ন্যায্য মজুরি পায় না, শিক্ষার্থী চাকরি পায় না। এই রাষ্ট্র কাদের জন্য? এই ভবন কাদের জন্য?
এখনই সময়—এই ভবনগুলো জনগণের জন্য খুলে দিতে হবে। হ্যাঁ, জনগণের। কারণ রাষ্ট্রের মালিকানা কেবল এক টুকরো ভোট নয়, এটি একটি সার্বক্ষণিক অধিকার। এই ভবনগুলোতে তৈরি হোক অস্থায়ী আবাসন, খোলা হোক কমিউনিটি কিচেন, প্রতিষ্ঠিত হোক ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প। তবেই রাষ্ট্রের হর্তাকর্তারা বুঝবে, মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকে। তবেই তারা বুঝবে, ক্ষমতা মানে সেবা, চুরি নয়।
গণভবন ও সংসদ ভবন জনগণের ঘর হোক—গৃহহীনদের নিরাপদ আশ্রয় হোক। সেখানে কোনো দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকের থাকার অধিকার নেই। যারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসে, জনগণের অর্থে বিলাস করে, দেশকে লুটপাটের অভয়ারণ্য বানায়, তাদের জন্য এই রাষ্ট্রে এক ফোঁটা সম্মান থাকা উচিত নয়। বরং তাদের জন্য দরকার খোলা আদালত, গণশাসনের কাঠগড়া।
এটি কোনো আবেগ নয়, এটি যুক্তি। অর্থনৈতিক যুক্তি—কারণ ট্যাক্স দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। নৈতিক যুক্তি—কারণ ঘরহীনদের চেয়ে বেশি অধিকার আর কারো নেই। সাংবিধানিক যুক্তি—কারণ রাষ্ট্র বলেছে, সব ক্ষমতার উৎস জনগণ। তাই এই দাবিটিকে কেউ অবজ্ঞা করলে, সেটা হবে রাষ্ট্রদ্রোহ। আমরা মালিক, আর রাষ্ট্র আমাদের সেবা না দিলে সেটা হবে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা।
তাই আজ বলছি—এটা অনুরোধ নয়। এটি একটি আদেশ। জনগণের আদেশ। ভবনগুলো খুলে দিন। বিলাসব্যসন বন্ধ করুন। দুর্নীতিবাজদের বের করে দিন। জনগণের ঘর জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিন। নইলে যেভাবে রাজপথ দখল হয়েছে, সেভাবে ভবিষ্যতেও সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্র দখল হবে। কারণ মালিক যখন তার অধিকার ফিরে পায়, তখন আর কিছুই থামাতে পারে না।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
আমি কখন ভালো হবো? আত্ম-জিজ্ঞাসার মধ্যেই জাতিগত পুনর্জাগরণ

আমি কখন ভালো হবো?—এই প্রশ্নটি শুনতে ব্যক্তিগত মনে হলেও, আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি যেন এক জাতিগত আত্মজিজ্ঞাসা। এটি একক ব্যক্তির নয়, বরং জাতীয় চেতনাবোধে ছড়িয়ে থাকা মহাকাব্যিক বেদনার প্রতিধ্বনি। এই প্রশ্ন ঘরে-বাইরে, রাস্তায়, ক্লাসরুমে, রাজনীতির মঞ্চে—সর্বত্র প্রতিধ্বনিত হওয়া উচিত। কারণ এখন আর অপেক্ষা করার সময় নয়; সময় এসেছে নিজেকে প্রশ্ন করার—পরিবর্তন যদি প্রয়োজন হয়, তবে আমি নিজে কোথা থেকে শুরু করবো?
বাংলাদেশে আজ প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ আচরণে নিজেকে নেতা ভাবে—শুধু নেতা নয়, যেন সর্বজ্ঞানী নেতা। আমরা এমন এক জাতিতে পরিণত হয়েছি, যেখানে সবাই অন্যকে বদলাতে চায়, কিন্তু নিজেকে নয়। সমাজ বদলাক, রাষ্ট্র বদলাক, রাজনৈতিক পরিবেশ পাল্টাক—এটাই প্রত্যাশা; কিন্তু সেই পরিবর্তনের সূচনা নিজের মধ্যে কেউ করতে চায় না। প্রশ্ন উঠবেই: নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা যদি থাকে, কিন্তু দায়িত্ববোধ না থাকে—তবে সেই নেতৃত্ব জাতিকে কোথায় নিয়ে যাবে?
আজ রাজনীতি একধরনের শব্দদূষণে পরিণত হয়েছে। দিনরাত মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, আর বক্তৃতা-বিবৃতিতে শুনি—‘নির্বাচন চাই’, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন চাই’, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।’ কিন্তু এই নির্বাচনগুলো আসলে কি আমাদের জন্য কোনো গুণগত পরিবর্তন আনছে? নাকি এগুলো ক্ষমতার পালাবদলের একটি চক্রব্যূহ মাত্র? রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং দুর্নীতির ঘূর্ণিতে দেশের জনগণের আস্থা এবং ন্যায্যতার ভিত ভেঙে পড়েছে। একদিকে, নির্বাচন আর রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাত জাতিকে বিভক্ত করছে; অন্যদিকে, কর্মসংস্থানের সংকট, মূল্যস্ফীতি, কৃষির দুরবস্থা সাধারণ মানুষের জীবনকে করছে দুঃসহ।
কিছুদিন আগে আমি কথা বলেছিলাম এক পলাতক রাজনীতিবিদের সঙ্গে—আজ তিনি নিঃস্ব। নেই দল, নেই ঘর, নেই ক্ষমতা। তিনি বলেছিলেন, “ভুল করেছি। মানুষকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছি, সত্যকে বিক্রি করেছি। আজ সব হারিয়ে বুঝি—আমরা আসলে কী করেছি!”
এই উপলব্ধি নিঃসন্দেহে মূল্যবান, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়:
আপনার উপলব্ধি যখন আসে সর্বহারা হওয়ার পরে, তখন তা কার উপকারে আসে?
সময়মতো বোঝা না গেলে, বোঝার কোনো মূল্য থাকে না। না বোঝাই অনেক সময় ভালো, কারণ দেরিতে বোঝার খরচ হয় ভয়াবহ।
একটি জাতির অর্থনৈতিক ভিত্তি যদি দুর্বল হয়, তবে সেই জাতির নাগরিকরা প্রতিনিয়ত দুলতে থাকে অনিশ্চয়তার দোলনায়। আর বাংলাদেশের পুঁজিবাজার—যা হতে পারতো অর্থনৈতিক স্বপ্নের বাতিঘর—তা আজ এক ভয়ংকর কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়েছে। টাকা ঢোকে, কিন্তু আর ফিরে আসে না।
শোনা যায়, এক দরবেশবাবা নাকি শেখ হাসিনার আমলে পুরো শেয়ারবাজার ধ্বংস করে দিয়েছিলেন! যদি তা-ই হয় তবে তিনি তো এখন জেলে, তাহলে আজ যারা বাজারের বুকে আবার মৃত্যুর ছুরি চালাচ্ছে, তারা কারা? প্রশ্নটা ফাঁকা নয়—এই বাজার বারবার কেন ভেঙে পড়ে? কেন বারবার বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়? কেন প্রতিবার স্বপ্ন দেখিয়ে সেই স্বপ্নকে পিষে ফেলা হয়?
পুঁজিবাজার কোনো খেলার জায়গা নয়। এটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনীতির রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থা। অথচ বাস্তবতায় দেখা যায়—অপরিকল্পিত দরপতন, মুনাফাখোর সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, হাজারো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসা। তারা স্বপ্ন দেখেছিল, বিশ্বাস করেছিল, বিনিয়োগ করেছিল—কিন্তু পেয়েছে প্রতারণা, ধোঁকা, আর লুট।
সরকারের কাছে অনুরোধ—এবার দয়া করে সত্যিকারের সংস্কারে নামুন। প্রয়োজন হলে বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনুন। আমি নিজ উদ্যোগেও বিশ্বমানের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আপনাদের সংযোগ করাতে রাজি। কিন্তু আর কালক্ষেপণ নয়।
একটা কথা মনে রাখুন—এই বাজারকে যদি এখনই সঠিক পথে না আনা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি তুলেই দেউলিয়া হয়ে যাবে। শুধু স্লোগানে অর্থনীতি টেকে না। টিকিয়ে রাখতে দরকার গভীর পরিকল্পনা, স্বচ্ছতা, আর সর্বোচ্চ পর্যায়ের জবাবদিহিতা। পুঁজিবাজার ধ্বংস মানে শুধু টাকার ক্ষতি নয়—এটি মানুষের আস্থা, স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎকে হত্যা করে। আর এই হত্যাকাণ্ড যদি বারবার ঘটে, তবে তা শুধু অর্থনৈতিক ব্যর্থতা নয়, এটি এক প্রকার রাষ্ট্রীয় অপরাধ।
উপরের দুইটি উদ্বেগ—অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও রাজনৈতিক নৈরাজ্য—একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দুর্নীতি আর রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রকৃত নীতি বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে, ফলে সামাজিক উন্নয়ন থমকে গেছে, সাধারণ মানুষের জীবনে সংকট বাড়ছে। আর এই চক্র চলতে থাকলে, ভবিষ্যৎ এক অন্ধকার গলিতে পৌঁছে যাবে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এই চ্যালেঞ্জগুলো একে অন্যকে পুষ্ট করছে—মিলে তৈরি করছে এক অপ্রতিরোধ্য, বেপরোয়া সংকট। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে দরকার একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি—যেখানে রাজনৈতিক সংস্কার আর অর্থনৈতিক পুনর্গঠন হাত ধরাধরি করে এগিয়ে যাবে।
প্রিয় পাঠক, এখন আমাদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে হবে—সংস্কার আসবে কার থেকে? নিজের থেকে, না শুধু অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে?
আমরা প্রায় বলি, “ওরা দুর্নীতিবাজ”, “ওদের জন্যই দেশ খারাপ”—কিন্তু আমি নিজে কী করছি? আমি কি নিয়ম মানি? আমি কি ঘুষ দিই? আমি কি অন্যায় দেখলে চুপ থাকি, নাকি প্রতিবাদ করি?
এই প্রশ্নগুলো অস্বস্তিকর। কারণ এগুলো আমাদের আয়নার সামনে দাঁড় করায়। কিন্তু এই অস্বস্তি ছাড়া কোনো সত্যিকারের পরিবর্তন সম্ভব নয়। রাষ্ট্র বদলায় না—রাজনৈতিক মানুষগুলো বদলালে তবেই রাষ্ট্র বদলায়।
আজ যেসব শক্তি রাজনীতির আড়ালে কাজ করছে, তাদের অনেকেই দেশের মাটিতে নেই। কারো স্বপ্ন দিল্লি, কারো ওয়াশিংটন, আবার কেউ গোপন চুক্তির মুনাফা নিয়ে ব্যস্ত। তারা বিদেশে বসে আন্দোলনের ডাক দেয়, ত্যাগের কথা বলে। কিন্তু কখনো কি তারা বলে, “আমরা আগে নিজেদের আদর্শিকভাবে পরিষ্কার করবো, তারপর জনগণের সামনে যাবো?”—না, বলে না। কারণ সেটি কঠিন। আত্মশুদ্ধি কঠিন।
তাই আজ দরকার একটি নীরব কিন্তু শক্তিশালী বিপ্লব—যেটি শুরু হবে “আমি কখন ভালো হবো?” এই আত্মজিজ্ঞাসা দিয়ে। এই বিপ্লব হবে আমাদের পরিবারের ভেতর, পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে, প্রতিদিনের ছোট ছোট সিদ্ধান্তে। কারণ আজ যদি আমরা না বদলাই, কাল আবার একটা অকার্যকর নির্বাচন, নতুন মুখে পুরনো ধোঁকা নিয়েই আমাদের সামনে হাজির হবে।
আমরা সবাই পরিবর্তন চাই। কিন্তু ভুলে যাই—পরিবর্তনের গভীরতম শেকড় নিজেকেই খনন করতে হয়।
আমার সময় এখন। আমার প্রতিবাদ এখন। আমার আত্মশুদ্ধি এখন।
নিজেকে প্রশ্ন করুন—আমি কখন ভালো হবো?
তবে হয়তো আপনি নিজেই হয়ে উঠবেন সেই “সুন্দর কে”, যাকে সবাই খোঁজে, কিন্তু কেউ নিজের ভেতরে খোঁজে না।
বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় আজ এক বিষণ্ণ সত্য স্পষ্ট: জাতিটি এক “নেতাগণমণ্ডলী”তে পরিণত হয়েছে। যিনি নেতা নন, তিনিও মনে করেন তিনি বিশাল নেতা। অথচ প্রকৃত নেতৃত্ব মানে বিনয়, দায়িত্ব, আত্মসংযম ও নৈতিকতা। আজ এই চারটি গুণই প্রায় অনুপস্থিত।
এই অতিনেতৃত্বপ্রবণতা আমাদের সমাজে তৈরি করেছে এক সাংস্কৃতিক দূষণ—যেটি শব্দ, চিন্তা এবং চেতনার স্তরে সক্রিয়। রাজনৈতিক নেতারা সারাবছর ধরে ‘নির্বাচন’ শব্দটি এতবার বলেন, যে তা একধরনের শব্দদূষণে পরিণত হয়েছে।
প্রশ্ন হলো: এই ‘নির্বাচন’ আসলে কী?
এটা কি জনগণের সমস্যার সমাধান? নাকি ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কিছু অন্ধকার ঘরের চুক্তি পূরণের উপলক্ষ?
জনগণ কে?
জনগণ কি কেবল সেই মুখহীন সংখ্যা? নাকি আপনি-আমি সেই জনগণের অংশ?
আমরা যখন বলি “জনগণ কিছু করছে না,” তখন কি নিজের দায় এড়িয়ে যাই?
গণতন্ত্রে ‘জনগণ’ মানে আপনি, আমি, আমরা সবাই।
তাই প্রশ্ন নয়—“এটা হওয়া উচিত” বা “ওটা হওয়া উচিত”—
প্রশ্ন হলো: করবে কে?
আপনি যদি ভাবেন, “কেউ একজন নিশ্চয়ই করবে,” তাহলে আপনি নিজেই জটিলতার অংশ। নিজেকে বদলানোই হলো প্রকৃত কাজের শুরু।
‘সুন্দর মানুষ’ কাকে বলে?
চেহারায় নয়—মননে, নীতিতে, দৃষ্টিভঙ্গিতে। যে নিজের ভেতরে আলো জ্বালাতে পারেন, তিনিই অন্যের পথ আলোকিত করেন। সেই মানুষ আপনার পাশেই আছেন—হয়তো আপনি নিজেই। শুধু তাঁকে জাগাতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণে আজ কোনো লজ্জা বা বিবেচনা নেই। বছরের পর বছর দুর্নীতি, দখল, দমন আর দাসত্ব চালিয়ে শেষে বলা হয়: “নির্বাচন চাই, গণতন্ত্র চাই!” অথচ গণতন্ত্র মানে তো ভয়হীনতা, ভোটার-নিরাপত্তা, চিন্তার স্বাধীনতা। এসব কিছুই যেখানে নেই, সেখানে নির্বাচন মানে নতুন এক প্রহসন।
মূল কথা হলো:
যদি এই রাজনৈতিক দূষণ দূর না করা যায়, তবে কোনো নির্বাচনই স্বচ্ছ বা অর্থবহ হবে না।
কারণ, নির্বাচন একটি ‘ফল’—তাকে ফলতে হলে চাই একটি সুস্থ ‘পরিবেশ’।
যদি চারপাশের বাতাসই বিষাক্ত হয়, তবে সেই গাছে ফলও বিষাক্ত হবে।
শুধু শব্দ নয়, চাই চরিত্রের শুদ্ধি।
রাজনীতিবিদদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত:
আমি কতটা স্বচ্ছ?
আমি কি মানুষের কাছে জবাবদিহি করি?
আমি কি সত্য বলি, না সুবিধামতো চুপ থাকি?
আপনি যদি নিজেই দুর্নীতির চাষ করেন, সংবাদপত্র বন্ধ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পেটোয়া বাহিনী চালান—তাহলে আপনি যখন নির্বাচনের মুখোমুখি হবেন, তখন জনগণ কেন আপনাকে বিশ্বাস করবে? আপনাদের প্রতিটি বাক্য এখন শব্দদূষণের মতোই বিরক্তিকর—কারণ তাতে নেই আস্থা। যারা আজ নিজেকে ‘নেতা’ ভাবেন, তাঁদের আয়নায় একবার তাকানো দরকার।
নিজেকে বদলানো ছাড়া যদি আপনি সারাক্ষণ অন্যকে দোষ দেন—তবে আপনি নেতা নন, নেতৃত্বকে অপমান করছেন। যদি আপনাদের বিবেক এখনো জীবিত থাকে, তাহলে শেখ হাসিনা, তাঁর মন্ত্রিসভা, বিএনপির সিনিয়র নেতারা—সবার প্রতি এই বার্তা: ভারতে আশ্রয় নেওয়ার আগে একবার নিজের বিবেকের কাছে জবাবদিহি করুন। কারণ আজ জনগণ আর অন্ধ নয়।
তারা জানে, কারা শব্দে দেশ চালাতে চায়—আর কারা সত্য সংস্কার আনতে চায়। এই রাষ্ট্রকে বাঁচাতে হলে আগে দূষণ দূর করতে হবে— শুধু শব্দ নয়, নৈতিক দূষণ।
চিন্তা করুন, প্রশ্ন করুন, নিজেকে শুদ্ধ করুন। একজন জানতে চেয়েছিল—“কে সেই সুন্দর কে?”
উত্তর একটাই: নিজের ভেতরে যদি সত্য ও দায়িত্ববোধ জাগে, আপনি নিজেই সেই সুন্দর।
রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
rahman.mridha@gmail.com
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
পহেলা মে ও রেমিট্যান্স যোদ্ধার চোখে বাংলাদেশ: একটি নৈতিক আত্মমুক্তির দাবি

যে মানুষটি একদিন দেশের মাটি ছেড়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন, তাঁর চোখে ছিল একটি স্বপ্ন—পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো, দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা। আজ সেই স্বপ্ন বহন করে দেড় কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক ছড়িয়ে আছেন বিশ্বের নানা প্রান্তে। তাঁদের রক্তঘামে আসে বছরে প্রায় ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার—বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রধান উৎস।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যুরো অফ ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (BMET)-এর তথ্য বলছে, এই অর্থে গড়ে উঠেছে গ্রামের অবকাঠামো, শিক্ষিত হয়েছে সন্তান, বদলে গেছে পরিবারের ভাগ্য। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে—দেশে ফিরে আসার পরে কি এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা তাঁদের প্রাপ্য সম্মান ও নিরাপত্তা পান?
অস্বীকৃত কিন্তু অবিচ্ছেদ্য অবদান
প্রবাসীরা দিনের পর দিন মরুভূমির উত্তাপে, ঠান্ডায় জমে, হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যে অর্থ পাঠান, তা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তাঁদের জীবনের বিসর্জনে তৈরি হয় গ্রামে নতুন ঘর, সন্তানরা পায় উচ্চশিক্ষা, শহরে গড়ে ওঠে ব্যবসা। কিন্তু এই শ্রমিকরা যে অবদানের পাহাড় গড়ে তুলেছেন, সেটি প্রায়শই রাজনৈতিক কৃতিত্বের মোড়কে হারিয়ে যায়। রাষ্ট্রের উন্নয়ন পরিকল্পনায় তাঁদের জন্য কোনো স্পষ্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা চোখে পড়ে না।
রাষ্ট্রীয় অবহেলা ও অব্যবস্থাপনা: একটি নৈতিক ব্যর্থতা
বেশিরভাগ প্রবাসী শ্রমিক ২০-৩০ বছর কাজ করে দেশে ফেরেন। কিন্তু দেশে ফিরে পান না কোনো স্থায়ী সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো—না পেনশন, না সামাজিক বীমা, না মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা। বরং ফিরে পান অচেনা বাস্তবতা, অবহেলা ও একাকীত্ব। বিশ্বের বহু দেশে যেমন ফিলিপিন্সে ‘Overseas Workers Welfare Administration (OWWA)’-এর মতো প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা রয়েছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো সেখানে নীরব দর্শক। আমাদের দেশেও একটি কার্যকরী সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা কি অসম্ভব?
ভবিষ্যতের দিকে অন্ধ রাষ্ট্রযন্ত্র
বাংলাদেশে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য নেই কোনো দীর্ঘমেয়াদী রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা। তাঁরা দেশে ফিরে পড়েন প্রান্তিকতার ফাঁদে। ফলে, এই আত্মত্যাগী মানুষগুলো সমাজে হয়ে ওঠেন ‘অপ্রয়োজনীয়’ এক শ্রেণি, যাদের সম্মান নেই, পরিচর্যা নেই, গর্ব নেই। এই রাষ্ট্রীয় অন্ধত্ব একদিন আমাদের সমগ্র অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
নীতিগত পরিবর্তন: সময়ের দাবি
রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো এই যোদ্ধাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা। এজন্য নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা বিবেচনায় নেয়া উচিত:
১. জাতীয় রেমিট্যান্স পেনশন স্কিম: প্রবাসীদের জন্য একটি বাধ্যতামূলক পেনশন স্কিম চালু করতে হবে।
২. পুনঃবাসন ও রি-স্কিলিং প্রোগ্রাম: দেশে ফেরা প্রবাসীদের জন্য কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. উদ্যোক্তা তহবিল ও বিনিয়োগ সহায়তা: রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য সহজশর্তে ঋণ ও তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে।
৪. মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যসেবা ইউনিট: অভিবাসন-পরবর্তী সংকট মোকাবেলায় বিশেষায়িত সেবা গড়ে তুলতে হবে।
৫. জাতীয় স্বীকৃতি ও সংবর্ধনা প্রথা: তাঁদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করার জন্য একটি বার্ষিক জাতীয় সম্মাননা চালু করা যেতে পারে।
নৈতিক অধঃপতন থেকে আত্মমুক্তির সময় এখন
আজকের বাংলাদেশে, যেখানে আমরা প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আত্মসম্মান এবং মর্যাদার জন্য লড়াই করছি, সেখানে দেশের অভ্যন্তরে রাজনীতি, দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি, এবং ভণ্ডামি আমাদের সর্বশ্রেণীর জনগণের ভবিষ্যৎকে সংকটে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী আজ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কারণ আমরা জানি—দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থের অদূরদর্শী প্রতিরোধ আমাদের শক্তিশালী অর্থনীতির পথকে অস্বাভাবিকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবস্থা এখন এমন, যে কেউ আমাদের দেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয়, বরং বরাবরই আমাদের দুর্নীতির কারণে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে।
আমরা জানি, উন্নত রাষ্ট্রসমূহ থেকে যে ধরনের বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা আসার কথা, তা নির্ভরশীল দেশীয় নীতির ওপর। আর সেই নীতি যখন দুর্নীতিগ্রস্ত, অসৎ ও অদূরদর্শী, তখন আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে আমাদের দেশের মূল্যায়ন আশানুরূপ থাকে না। আমাদের দরকার একটি নৈতিক, যোগ্য, এবং দক্ষ নেতৃত্ব, যারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী, জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। আমরা এমন রাজনৈতিক নেতৃত্ব চাই, যারা দুর্নীতির পথ পরিহার করবে এবং জনগণের প্রতি প্রতিশ্রুতি পালন করবে।
এখানে স্পষ্টভাবে বলতে চাই—রাজনীতির নামে দুর্নীতি আর বাংলার মাটিতে চলবে না। মালিকদের অধিকার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের অধিকার পর্যন্ত সুষ্ঠু এবং ন্যায়সংগত পরিবেশ তৈরি করা উচিত, যেখানে কোনো ধরনের অপব্যবহার ও অশান্তি সহ্য করা হবে না। রাজনৈতিক তৎপরতা যদি জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করতে থাকে, তবে সেগুলো অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। বাংলাদেশের মাটিতে এমন পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তি হতে আমরা আর কোনোভাবেই অনুমতি দেব না।
রাষ্ট্রযন্ত্র যদি আজও অবহেলার কূপে বন্দী থাকে, তবে ইতিহাস একদিন এই ব্যর্থ রাষ্ট্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেই।
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য ন্যায়, রাষ্ট্রের জন্য আত্মশুদ্ধির ঘন্টাধ্বনি
পহেলা মে—এটি কেবল শ্রমিক দিবস নয়, এটি রাষ্ট্রের আত্মা জাগানোর দিন। আজকের এই দিনে আমরা যদি সেই পরিশ্রমী হাতগুলোর দিকে না তাকাই, যারা প্রিয়জন ছেড়ে মরুপ্রান্তরে ঘাম ঝরিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাচ্ছে, তাহলে আমাদের বিবেক মৃত।
অন্তত পহেলা মে—শ্রমিকদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়ার যেমন দিন, তেমনি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা পূর্ণ করার দিন। তাঁদের অবদানকে জাতির উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রে না রাখলে উন্নয়ন শুধু ঢাকের বাদ্য হবে—গভীরতা থাকবে না। রাষ্ট্রের উচিত, নিজের দায়িত্ববোধ থেকে এই প্রবাসী জনগণের পাশে দাঁড়ানো।
আমরা চাই না করুণা, চাই ন্যায্যতা।
আমরা চাই না সংবর্ধনার ফুল, চাই সামাজিক নিরাপত্তার শিকড়।
রাষ্ট্র যদি আজও এই শ্রেণীকে অবহেলা করে, তবে একদিন ইতিহাস তাকে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেই।
এই লেখা একটি আবেগ নয়—এটি সময়ের গলায় চেপে বসা এক নৈতিক হুঁশিয়ারি।
আজ না হলে কাল, কাল না হলে ইতিহাস—এই রাষ্ট্রকে উত্তর দিতেই হবে।
তাই, পহেলা মে শুধুই শ্লোগান বা ফুল দেয়ার দিন নয়—
এটি হোক আত্মসমালোচনার, আত্মউন্নয়নের ও দায়িত্বশীলতার প্রতীক।
রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অবসরকালীন জীবন যেন হয় নিরাপদ, সম্মানজনক ও মানবিক—
এটাই হওয়া উচিত আমাদের রাষ্ট্রনীতির পরবর্তী ধাপ।
যে রাষ্ট্র তার ঘামের শ্রদ্ধা দিতে জানে না,
সে উন্নয়নের মুখোশ পরে নিজের মাটিকেই অস্বীকার করে।
আমরা একটি রাষ্ট্র চাই—ক্ষমতার নয়, মর্যাদার নামেই যার পরিচয় হবে।
রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
rahman.mridha@gmail.com
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
মত দ্বিমত
বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়: সময়ের দাবি ও জাতির ভবিষ্যতের প্রয়োজন

শিক্ষা শুধু তথ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া নয়, বরং মানুষ গড়ার সবচেয়ে শক্তিশালী উপায়। একটি জাতি তার ভবিষ্যৎ যেমন নির্ধারণ করে তার অর্থনীতি ও রাজনীতির মাধ্যমে, ঠিক তেমনি — এমনকি তারও আগে — শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে। কিন্তু এই ব্যবস্থার সফলতা নির্ভর করে যাঁদের হাতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়, সেই শিক্ষকদের ওপর। আর সুশিক্ষার কারিগর হতে হলে শিক্ষককে শুধু পাঠদানে দক্ষ হলেই চলে না, তাঁর দরকার গভীর মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, নৈতিকতা ও নেতৃত্বের জ্ঞান। এই দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় – একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান, যেখানে শিক্ষক গঠনের সব স্তর কাঠামোবদ্ধ ও গবেষণাভিত্তিক হবে।
কেন বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় দরকার?
আজকের বিশ্ব চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মুখোমুখি। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে সমাজ ও শিক্ষার ধরন। শিক্ষার্থীরা এখন কেবল পাঠ্যবই নয়, বরং ইউটিউব, গুগল, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রতিনিয়ত তথ্য নিচ্ছে। এই বাস্তবতায় একজন শিক্ষককে হতে হয় শুধু বই পড়ানো ব্যক্তি নয়, বরং একজন নেতা, কোচ, গাইড এবং জীবনদর্শনের নির্মাতা। এই রূপান্তরের জন্য প্রয়োজন এমন একটি প্রশিক্ষণ প্ল্যাটফর্ম, যা শিক্ষককে পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করবে।
একটি কাঠামোবদ্ধ শিক্ষা প্রক্রিয়ার চার স্তর: একটি রূপক ধারণা
আমরা যদি শিক্ষাকে একটি গাছ রোপণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে বুঝতে পারি:
১. বীজ বপন (প্রাথমিক শিক্ষা)
২. চারা রোপণ (মাধ্যমিক শিক্ষা)
৩. গাছ লাগানো (কলেজ পর্যায়)
৪. ফল ফলানো (বিশ্ববিদ্যালয় স্তর)
এই পুরো প্রক্রিয়া সফলভাবে পরিচালনার জন্য দরকার একজন “প্রক্রিয়ার পরিচালক” বা “শিক্ষা নীতিনির্ধারক”, যিনি জানবেন কী ধরনের শিক্ষক কোথায় প্রয়োজন, কীভাবে নিয়োগ ও মূল্যায়ন করতে হবে, এবং কীভাবে মাইন্ডসেট গঠন করতে হবে।
স্তরভিত্তিক বিশ্লেষণ: শিক্ষক গঠনের ঘাটতি ও করণীয়
১. প্রাথমিক স্তর: মূল চরিত্র গঠনের সময়
এই স্তরে শিশুরা অনুকরণ ও অনুসরণের মাধ্যমে শেখে। এখানকার শিক্ষকের প্রধান কাজ শিশুর আচরণ পর্যবেক্ষণ, উৎসাহ দেওয়া এবং তাদের ক্রিয়েটিভিটি গড়ে তোলা। এজন্য শিক্ষককে জানতে হবে মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, আধুনিক প্রযুক্তি, এমনকি পরিবেশ ও নৈতিকতা।
বাস্তবতা:
• অধিকাংশ শিক্ষক এই স্তরের উপযোগী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন।
• শিক্ষক নিয়োগে গুণগত যাচাই অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত।
• মনিটরিং ও ফিডব্যাক ব্যবস্থায় দুর্বলতা রয়েছে।
প্রস্তাব:
• বাধ্যতামূলক মানসিক স্বাস্থ্য ও শিশু বিকাশ বিষয়ক প্রশিক্ষণ
• গেম-ভিত্তিক ও লার্নিং-বাই-ডুইং মডেল ব্যবহার
• নির্ধারিত মূল্যায়ন চক্রে শিক্ষক প্রশিক্ষণ আপডেট
২. মাধ্যমিক স্তর: পরিচয় ও পথ নির্ধারণের সময়
কৈশোরে একজন শিক্ষার্থীর মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন হয় নাটকীয়ভাবে। এই সময়ে শিক্ষককে হতে হয় গাইড, অভিভাবক ও বন্ধু। শুধু পাঠ্যবিষয়ের শিক্ষকতা নয়, বরং জীবনের নীতিনির্ধারক হয়ে উঠেন শিক্ষক।
বাস্তবতা:
• অধিকাংশ শিক্ষক এই মানসিক স্তরের প্রয়োজনীয়তা বোঝেন না।
• শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল আসক্তি, অবসাদ ও মনোযোগহীনতা বেড়েছে।
• প্রশিক্ষণের অভাবে শিক্ষকগণ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারছেন না।
প্রস্তাব:
• ডিজিটাল লিটারেসি ও কাউন্সেলিং প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক
• ভার্চুয়াল ম্যানেজমেন্ট এবং ক্লাসরুম সাইকোলজি অন্তর্ভুক্তি
• শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে সিস্টেম তৈরি
৩. কলেজ স্তর: জীবনের গতি নির্ধারণের সময়
এই সময় একজন শিক্ষার্থী নিজের ভবিষ্যৎ পেশা, আদর্শ ও জীবনদর্শন নির্ধারণ করে। ভালো গাইডেন্সের অভাবে শিক্ষার্থী হারিয়ে যেতে পারে।
বাস্তবতা:
• শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীর বোঝাপড়া অনেক সময় দূরত্বপূর্ণ।
• পারিবারিক, রাজনৈতিক বা সামাজিক চাপ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে।
• রেগুলার ফিডব্যাক এবং সহানুভূতিশীল যোগাযোগের ঘাটতি রয়েছে।
প্রস্তাব:
• রিলেশনশিপ ব্যাসেড লার্নিং মডেল চালু করা।
• শিক্ষক-শিক্ষার্থী বোঝাপড়ার জন্য মাসিক কাউন্সেলিং সেশন।
• দায়িত্ব-কেন্দ্রিক শিক্ষা কৌশল বাস্তবায়ন।
৪. বিশ্ববিদ্যালয় স্তর: জীবনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি
এটাই হলো শিক্ষার প্যাকেজিং পর্ব। এখান থেকে শিক্ষার্থী পেশাগত জগতে প্রবেশ করে। তারা শুধু একজন কর্মচারী নয়, বরং একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে উঠবে কিনা, তা নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার উপর।
বাস্তবতা:
• অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষকের ভূমিকা সীমাবদ্ধ সিলেবাসে।
• শিক্ষার্থীরা ‘পারফর্মেন্স’ শেখে না, শেখে শুধু ‘পরীক্ষা পাশ’।
• সিভিক দায়িত্ববোধ, ক্রিটিক্যাল থিংকিং বা আত্মউন্নয়ন শেখানো হয় না।
প্রস্তাব:
• শিক্ষকের জন্য লাইফ স্কিল ও লিডারশিপ প্রশিক্ষণ
• ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া পার্টনারশিপ
• শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিশেষ কোর্স
বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য
১. জাতীয় পর্যায়ের মানদণ্ডে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কাঠামো
২. প্রত্যেক স্তরের জন্য আলাদা ট্র্যাক ও স্পেশালাইজেশন
৩. শিক্ষাদান ছাড়াও রিসার্চ, ডেভেলপমেন্ট ও মনিটরিং সেল
৪. ই-লার্নিং এবং ভার্চুয়াল ক্লাসরুম পরিচালনায় দক্ষতা
৫. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিক্ষক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম
৬. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা
দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার দাবি
শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো প্রকার দুর্নীতি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষক নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, পদোন্নতি কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার প্রতিটি স্তরে যদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে কোনো শিক্ষাব্যবস্থাই সফল হতে পারে না। দুর্নীতিগ্রস্ত একজন শিক্ষক মানেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নৈতিক অধঃপতনের দায়। কাজেই এই প্রস্তাবিত বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়কে হতে হবে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ এবং নৈতিকতা-ভিত্তিক একটি মডেল প্রতিষ্ঠান—যেখানে মূল্যায়ন হবে দক্ষতার ভিত্তিতে, নিয়োগ হবে যোগ্যতার ভিত্তিতে, এবং পরিচালনা হবে সততার ভিত্তিতে। এটাই হতে হবে শিক্ষার প্রথম শর্ত।
অব্যবহৃত জনসম্পদের ব্যর্থতা
আজ যখন গোটা বিশ্ব দক্ষ জনশক্তির খোঁজে হন্যে হয়ে ফিরছে, তখন বাংলাদেশ, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ যুব জনগোষ্ঠীর দেশ, তার বিশাল ম্যানপাওয়ারকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে — শুধু সুপরিকল্পিত শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন অবকাঠামোর অভাবে। এই ব্যর্থতা শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি একটি কৌশলগত ও জাতীয় ব্যর্থতা। সুশিক্ষিত, প্রশিক্ষিত ও নেতৃত্ব-সক্ষম নাগরিক তৈরি না করতে পারলে, এই জনশক্তি একসময় বোঝায় পরিণত হতে পারে। কাজেই এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো—একটি শক্তিশালী, দক্ষতানির্ভর ও দৃষ্টিভঙ্গিমূলক শিক্ষা কাঠামো গড়ে তোলা, যার কেন্দ্রে থাকবে বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ।
শিক্ষকের অভিজ্ঞতা: প্রশিক্ষণ ছাড়া পাঠদানের বাস্তব সংকট
মফস্বলের এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন মাজেদা বেগম। বিষয় ইংরেজি, কিন্তু কোনো ধরনের প্রফেশনাল শিক্ষক প্রশিক্ষণ বা ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে তাঁর কোনো শিক্ষাই নেই। তিনি নিজেই বলেন, “আমার বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান থাকলেও কীভাবে পড়াতে হবে, ছাত্রদের মনোযোগ ধরে রাখতে হবে, কীভাবে ক্লাসে জটিল বিষয় সহজভাবে উপস্থাপন করতে হবে—এসব শেখার কোনো সুযোগ পাইনি।” ফলাফল দাঁড়িয়েছে, ক্লাসে গণ্ডগোল বাড়ছে, ছাত্ররা বিষয় বুঝছে না, আগ্রহ হারাচ্ছে। এটা কেবল মাজেদা বেগমের গল্প নয়, দেশের হাজারো শিক্ষকের গল্প। শিক্ষার শিকড় যখন দুর্বল থাকে, তখন ফল আসলেও তা হয় অপুষ্ট। বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ না থাকলে আমরা এমন অপুষ্ট ফলেই সন্তুষ্ট থাকতে বাধ্য হব।
ঠিক এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে, বাংলাদেশের একটি গ্রামের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পাঠদান করছেন সুইডেনপ্রবাসী অধ্যাপক ড. মান্নান মৃধা (KTH, বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং)। তাঁর নিজ জেলা মাগুরার নহাটা গ্রামে তিনি নিয়মিত ফিরে আসেন, ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন—“কী শিক্ষা, কেন শিক্ষা, কীভাবে শিক্ষা”—এই তিনটি প্রশ্নের জীবনঘনিষ্ঠ উত্তর খোঁজার জন্য। কীভাবে শিক্ষায় ‘মজা’ ঢুকিয়ে শেখাকে আনন্দময় করা যায়—তা তিনি নিজ হাতে দেখিয়ে দেন। মান্নান মৃধার এই কাজ নিছক প্রবাসী উদ্যোগ নয়; বরং এটি সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের বিশেষায়িত শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তব প্রয়োগ, যেখানে শিক্ষকতা শুধু পেশা নয়, সমাজ গঠনের দায়িত্ব।
ফিনল্যান্ডে শিক্ষক হতে হলে মাস্টার্স ডিগ্রির পাশাপাশি কাঠামোবদ্ধ প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। শেখাতে জানার পাশাপাশি জানতে হয় ছাত্রদের মনস্তত্ত্ব, শেখানোর কৌশল, এবং শিক্ষাকে জীবনঘনিষ্ঠ করে তোলার উপায়। ফিনল্যান্ড ও সুইডেনে শিক্ষকরা কেবল শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেন না, তাঁরা গবেষক ও নীতিনির্ধারকদের অংশীদার। সমাজে তাঁদের সম্মান রাষ্ট্রদূতের সমান। পরীক্ষার সংখ্যা সেখানে কম, কিন্তু শেখা গভীর। এই শিক্ষাব্যবস্থার মূল দর্শন হলো—“শিক্ষক গড়াই শিক্ষার প্রথম কাজ।” একজন শিক্ষককে হতে হয় নেতৃত্বদানে সক্ষম, মূল্যবোধসম্পন্ন এবং চিন্তার দিশারি। এই নীতিগত বিনির্মাণেই দেশগুলো এমন একটি মানবিক ও দক্ষ নাগরিক তৈরির প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে পেরেছে—যেখানে পরীক্ষায় নয়, মানুষ তৈরিতে জোর দেওয়া হয়। বাংলাদেশ যদি শিক্ষার মানে মৌলিক পরিবর্তন আনতে চায়, তাহলে এই মডেল শুধু অনুকরণ নয়, বরং উদ্দীপনা হয়ে উঠতে পারে।
জাতি গঠনের কারিগর যদি হয় শিক্ষক, তবে শিক্ষকের গড়ন হবে জাতিগঠনের প্রথম কাজ। আজ প্রয়োজন সেই প্রতিষ্ঠান, যা শিক্ষককে গড়ে তুলবে নতুন যুগের উপযোগী করে — চিন্তা, দক্ষতা এবং মূল্যবোধের সমন্বয়ে। এ জন্য বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় শুধু প্রয়োজন নয়, বরং এখন এটি জাতীয় অগ্রাধিকারের বিষয় হওয়া উচিত। কারণ, সুশিক্ষা ছাড়া মনুষ্যত্ব গড়ে ওঠে না — আর সুশিক্ষার কারিগর তৈরি না হলে উন্নয়নের ভিত্তিই দুর্বল থেকে যাবে।
রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com