আন্তর্জাতিক
বিদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র

বিদেশে প্রায় সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া নতুন সাহায্য অনুমোদন বন্ধ রেখেছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের ফাঁস হওয়া অভ্যন্তরীণ নথিতে এই তথ্য জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও বিদেশি দূতাবাসগুলোতে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার একটি নির্বাহী আদেশ জারি করার পরই এই বিদেশি সহযোগিতা বন্ধের বিষয়টি সামনে আসে।
ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, আগামী ৯০ দিনের জন্য সব মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে যেসব বৈদেশিক সহযোগিতা স্থগিত করা হয়েছে সেগুলো বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা খতিয়েও দেখা হচ্ছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নোটিশে উন্নয়ন সহায়তা থেকে সামরিক সহায়তা পর্যন্ত সবকিছুর ওপর প্রভাব পড়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এই স্থগিতাদেশ জরুরি খাদ্য সহায়তা এবং ইসরায়েল ও মিশরের জন্য সামরিক তহবিলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
নথি অনুযায়ী, কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ‘পর্যালোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নতুন তহবিল অনুমোদিত হবে না বা বিদ্যমান কোনো চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে না’। একইসঙ্গে চলমান প্রকল্পের কাজও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে, যতক্ষণ না পর্যালোচনা শেষ হয়।
কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, পর্যালোচনার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট চুক্তির শর্তানুযায়ী কর্মকর্তারা যেন অনতিবিলম্বে ‘কাজ বন্ধের নির্দেশনা জারি করেন’।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের নথি অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন পররাষ্ট্রনীতি নিশ্চিত করতে সব বিদেশি সাহায্যের বিস্তারিত পর্যালোচনা আগামী ৮৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এই পর্যালোচনা ৮৫ দিনের মধ্যে শেষ হবে এবং তা নিশ্চিত করবে যে সব সাহায্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করছে। তিনি আরও বলেছেন, ‘বিদেশে আমাদের ব্যয় শুধু তখনই হওয়া উচিত, যদি তা আমেরিকাকে নিরাপদ, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই নোটিশ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে বিদেশি সাহায্য কর্মসূচির ওপর অনেক বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ার কথাটি একবার ভাবুন। এটি অনেক বড় একটি বিষয়।’ বলছিলেন জশ পল। যিনি ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত অস্ত্র সরবরাহে কংগ্রেসের সম্পর্ক দেখভাল করতেন।
মধ্যপ্রাচ্যে ইউএসএইড মিশনের সাবেক পরিচালক ডেভ হার্ডেন বলেন, এই পদক্ষেপ ‘অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’, যা বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে মানবিক এবং উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচিগুলোকে স্থগিত করে দিতে পারে।
তিনি জানান, বিদেশি সহায়তা বন্ধের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পানীয় জল, স্যানিটেশন এবং আশ্রয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পে পড়তে পারে। ‘এটি শুধু সাহায্য স্থগিতই নয়, বরং ইতোমধ্যে দেশটির অর্থায়নে চলমান চুক্তিগুলোর কাজ বন্ধেরও নির্দেশ প্রদান করে।’- যোগ করেন তিনি।
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এই অর্থায়ন স্থগিতের প্রভাব ইউক্রেনেও পড়তে পারে। যেখানে আগে থেকে প্রচুর অস্ত্র সহযোগিতা দেয়া হয়েছিল। সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সময়ে ইউক্রেন অস্ত্র সহায়তায় বড় অংকের সহযোগিতা পেয়েছিল।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও স্বাক্ষরিত নথিতে সহায়তা স্থগিতের পক্ষে যুক্তি বলা হয়েছে, ‘বর্তমান বিদেশি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি ‘কার্যকর কিনা, পুনরাবৃত্তিমূলক কি না এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা মূল্যায়ন করা অসম্ভব।’
তবে জরুরি খাদ্য সহায়তার জন্য তিনি ছাড়পত্র জারি দিয়েছেন। অর্থাৎ গাজা ও অন্যান্য যে সব জায়গায় খাদ্য সংকট চলছে সেখানে জরুরি খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপটি এমন একটি সময়ে এসেছে, যখন গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অস্ত্রবিরতির পর মানবিক সাহায্য বৃদ্ধি পেয়েছে ও সুদানের মতো বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের ঘটনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে মন্তব্যের জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগও করা হয়েছিল।
মার্কিন সরকারের নীতিতে নিজের প্রভাব রাখতে প্রেসিডেন্টদের মূল হাতিয়ার এক্সিকিউটিভ অর্ডার বা নির্বাহী আদেশ। ক্ষমতা নেয়ার পর সেই হাতিয়ার ব্যবহারে এক মুহূর্তও দেরি করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুরুতেই একশোর বেশি নির্বাহী আদেশে সই করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
নির্বাহী আদেশ কী ও কেন?
দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে ফেরার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নির্বাহী আদেশের ঝড় তুলবেন বলে যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তার আক্ষরিক বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন দেশটির ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট।
এক কথায় এক্সিকিউটিভ অর্ডার হলো যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে দেয়া একটি লিখিত আদেশ, যার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হয় না।
অর্থাৎ, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত জারি করতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ বলে প্রেসিডেন্ট এই আদেশ জারি করার ক্ষমতা পান।
ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা একজন প্রেসিডেন্টের ওপর অর্পিত হবে।’
নির্বাহী আদেশের বদৌলতে সাধারণ ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরিবর্তন থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন নীতি নাটকীয়ভাবে পুরোপুরি উল্টে যাওয়ার ঘটনা পর্যন্ত ঘটতে পারে।
এই যেমন সোমবার প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প। এর ফলে জলবায়ু সংক্রান্ত আগের মার্কিন নীতির উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলেন তিনি।
এর আগে ২০১৭ সালে বিতর্কিত দুটি তেল পাইপলাইনের নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছিলেন তিনি। যা পূর্বসূরী ওবামা প্রেসিডেন্সির নীতিগত অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। ওবামা আমলে ২০১৫ সালে ক্রিসমাস ইভে (বড়দিনের আগের সন্ধ্যা) সরকারি দপ্তরগুলো আধাবেলায় ছুটি দেয়ার মতো সাধারণ সিদ্ধান্তও নির্বাহী আদেশে পাল্টে দেয়ার নজির আছে ট্রাম্পের।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য প্রার্থনা করতে মন্দিরে ভিড় ভারতীয়দের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাগ্রহণের পর অভিবাসন প্রক্রিয়া কঠোর করতে একাধিক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ কঠোর অভিবাসী নীতির কারণে ভিসা প্রক্রিয়াও জটিল হয়ে গেছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য প্রার্থনা করতে ভারতে মন্দিরে ভিড় করেছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান গত সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানায়, ভিসাপ্রাপ্তি-বিষয়ক প্রার্থনার জন্য ভারতের পশ্চিমাঞ্চল গুজরাটের আহমেদাবাদের চমৎকারী হনুমান মন্দির এখন জনপ্রিয় উপাসনা কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। অনেকেই এ মন্দিরকে এখন ‘ভিসা হনুমান’ মন্দির বলে ডাকেন।
তিনি আরও বলেন, এটি সম্পূর্ণ বিশ্বাসের ব্যাপার। যদি আপনি বিশ্বাস করেন, এটি ঘটবে। তবে মনে সন্দেহ থাকলে আপনার আশা পূরণ হবে না।
পুরোহিত বিজয় ভাট দাবি করেন, তিনি এমন কিছু উদাহরণ দেখেছেন যেখানে একাধিক প্রত্যাখ্যানের পর ভক্তরা পূজা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভিসার অনুমোদন পেয়েছেন।
মন্দিরের পুরোহিত বিজয় ভাট সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ভিসার আবেদনকারীদের তাদের পাসপোর্ট শ্রী হনুমানের সামনে রেখে একটি ভক্তিমূলক কীর্তন গাইতে বলা হয়। হনুমান হলেন হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রিয় দেবতা, যিনি তার বানরের মতো চেহারা জন্য পরিচিত।
অনেক ভক্তই দূরবর্তী বিভিন্ন রাজ্য থেকে এ মন্দিরে এসেছেন এবং তাদের বেশিরভাগই ভিসা অনুমোদন পাওয়ার বিশ্বাস থেকে এসেছেন বলে জানান ভাট।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানোর সময় যাত্রাপথে ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীদের হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে মোদি সরকার।
গেল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক পণ্যবাহী বিমানে ১০৪ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। তাদের নামানো হয় অমৃতসর বিমানবন্দরে। তবে এই অভিবাসন প্রত্যাশীদের হাতকড়া আর পায়ে শিকল পরিয়ে বিমানে ওঠানোর ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় ভারতজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
গাজা উপত্যকা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে ইসরাইল: ট্রাম্প

ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি অঞ্চল গাজা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মোহ যেন কাটছেই না। আবারও তিনি অঞ্চলটি নিয়ে তিনি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, যুদ্ধ শেষে গাজাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করবে ইসরায়েল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, গাজা উপত্যকা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে যাবে। তবে তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তারা এর আগে তাঁর মন্তব্যের বিপরীতে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইসরায়েল গাজা উপত্যকা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিকল্পনার আওতায় ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন করা হবে, তবে কোনো মার্কিন সেনা সেখানে প্রয়োজন হবে না।’
ট্রাম্পের এই পুনর্বাসন পরিকল্পনাকে জাতিগত নির্মূলকরণের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে অনেকেই। জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং আরব নেতারা এর নিন্দা জানিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বাস্তবে রূপ নেবে না।
প্রথমবার এ বিষয়ে মন্তব্য করার পর ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দেন যে, যদি পুনর্বাসন হয়ও, সেটি সাময়িক হবে।
ট্রাম্প তাঁর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা এক পোস্টে লেখেন, তাঁর পরিকল্পনা অনুসারে গাজার বাসিন্দারা ‘এরই মধ্যে আরও নিরাপদ এবং সুন্দর সম্প্রদায়ে পুনর্বাসিত হতেন, যেখানে নতুন ও আধুনিক বাড়িঘর থাকত।’ এরপর যুক্তরাষ্ট্র গাজার পুনর্গঠনে সহায়তা করত।
তবে তাঁর এই পোস্টে পরিষ্কার করা হয়নি যে, গাজার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দাকে কি ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া হবে কি না। আন্তর্জাতিক আইনে, দখলকৃত অঞ্চল থেকে জনগণকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট গত বুধবার বলেন, যদি (গাজার) জনগণকে সরাতেই হয়, তবে তা হবে সাময়িক। একই দিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজার জনগণকে সাময়িকভাবে সরিয়ে ফেলা হতে পারে, যতক্ষণ পর্যন্ত ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করা না হয় এবং পুনর্গঠন না করা হয়।
কিন্তু এই বক্তব্য ট্রাম্পের আগের মন্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গত মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়া হবে।
হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেবে এবং আমরা এটি নিয়ে কাজ করব।’ ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেতানিয়াহু এই ধারণাকে ‘উল্লেখযোগ্য’ বলে অভিহিত করেন এবং এটি নিয়ে কাজ করা যায় বলে জানান।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই ঘোষণা তাঁর ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টাদেরও বিস্মিত করেছে। কারণ, এ বিষয়ে কোনো সুসংগঠিত পরিকল্পনা ছিল না।
গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রাম্প আরও বলেন যে, কোনো মার্কিন সেনা সেখানে (গাজায়) মোতায়েন করা হবে না। এটি হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র লেভিটের বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। লেভিট বলেছিলেন, ‘মার্কিন সেনা সেখানে যাবে না।’
এরপর গতকাল এক প্রার্থনা সভায় ভাষণ দেওয়ার সময় ট্রাম্প গাজার পরিস্থিতি নিয়ে সংক্ষেপে কথা বলেন, তবে গাজা দখলের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেননি। মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তিনি আশা করেন যে, তাঁর ‘সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন হবে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত হওয়া।’
গত ১৫ মাসের সংঘাতে মাত্র ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১০ কিলোমিটার চওড়া গাজা উপত্যকা বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। একসময় কৃষিজমি ও সবুজ ঘরবাড়িতে পরিপূর্ণ গাজা এখন বালি ও ধ্বংসাবশেষের ভাগাড় যেন।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) জানিয়েছে, এই বিপুল ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলতে ২১ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, গাজার পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা কার্যত অকার্যকর হয়ে গেছে। শরণার্থীশিবির ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর আশপাশে আবর্জনার স্তূপ জমছে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত সৌর প্যানেল ও ব্যবহৃত গোলাবারুদের রাসায়নিক পদার্থ মাটি ও পানির দূষণ ঘটাতে পারে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ধ্বংসযজ্ঞের ফলে গাজায় ৫০ মিলিয়নেরও বেশি টন ধ্বংসাবশেষ জমেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক নজিরবিহীন সীমান্ত হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল সামরিক অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।
এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৭ হাজার ৫৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত এবং ১ লাখ ১১ হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছে বলে অঞ্চলটির হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
ভারতে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত

ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে নিয়মিত প্রশিক্ষণ উড্ডয়নের সময় দেশটির বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। মাঝ-আকাশে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। যুদ্ধবিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ার আগেই দুজন পাইলট নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারতীয় বিমান বাহিনীর মিরেজ ২০০০ প্রশিক্ষণ বিমান মধ্যপ্রদেশের শিবপুরী জেলায় নিয়মিত প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালনার সময় বিধ্বস্ত হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার এক সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
অবশ্য দুর্ঘটনার আগে উভয় পাইলটই নিরাপদে বের হয়ে আসতে পেরেছিলেন এবং এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ঘটনার সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মিরেজ ২০০০ একটি বহুমুখী যুদ্ধবিমান এবং এটি ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সংবাদমাধ্যমের দাবি, অতীতে বিভিন্ন অপারেশনে এই যুদ্ধবিমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ভারতীয় বিমান বাহিনী তার বহরকে আধুনিকায়ন করে চললেও বহু দশকের পুরোনো ও বয়স্ক ফাইটার জেট এবং প্রশিক্ষণ বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েই গেছে।
কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার স্থানটি ঘিরে রেখেছে এবং ঘটনার আরও তদন্ত চলছে। দুর্ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানের ধ্বংসাবশেষ একটি মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে এবং সেখানে শত শত লোক জড়ো হয়েছেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
আন্তর্জাতিক আদালতের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) গতবছর বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রশাসনিক নির্দেশে সই করেছেন। নির্দেশে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন তদন্ত করা হয়েছে।
নির্দেশে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। মঙ্গলবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্রাম্প।
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস ইসরায়েলে ঢুকে আক্রমণ করে। তারপর ইসরায়েল গাজায় আক্রমণ চালায়। হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি, ইসরায়েল-সহ বেশ কিছু দেশ। এরপর আইসিসি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
ট্রাম্পের নির্দেশে বলা হয়েছে, আইসিসি যা করেছে, তা বিপজ্জনক নজির হিসাবে থাকবে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আইসিসি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারবেন না।
ট্রাম্পের নির্দেশে বলা হয়েছে, ইসরায়েল হচ্ছে ওয়াশিংটনের খুব ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভিত্তিহিন অভিযোগ করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল কেউই আইসিসির সদস্য নয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
আন্তর্জাতিক
ওমরায় মেনিনজাইটিস টিকার বাধ্যবাধকতা বাতিল করল সৌদি

পবিত্র ওমরাহ পালনে মেনিনজাইটিস টিকা নেয়ার বাধ্যবাধকতা বাতিল করেছে সৌদি আরব। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দেশটির সিভিল এভিয়েশনের জেনারেল অথরিটি এ তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে দেশটি এক নির্দেশনায় বলেছিল, ১০ ফেব্রুয়ারির পর যারা ওমরাহ করতে আসবেন, তাদের অবশ্যই নেইসেরিয়া মেনিনজাইটিস টিকা নিতে হবে।
সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস জানিয়েছে, সিভিল এভিয়েশন এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সব বিমান সংস্থাকে পাঠিয়েছে।
এরআগে সৌদির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক নির্দেশনায় বলেছিল, ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে যারাই ওমরাহ করতে আসবেন তাদের অবশ্যই এই টিকা নেওয়া থাকতে হবে। এতে আরও বলা হয়, সব ধরনের ভিসাধারীর ক্ষেত্রেই এটি কার্যকর হবে। এছাড়া বলা হয়, সৌদিতে আসার অন্তত ১০দিন আগে টিকাটি নিতে হবে এবং তিন বছর আগে যারা টিকা নিয়েছিলেন তাদেরও নতুন করে নিতে হবে। তবে নতুন নির্দেশনার মাধ্যমে আগের সব নির্দেশনাই বাতিল হয়ে গেছে।
এর আগে গত বছরের মার্চে সব হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের জন্য টিকাটি বাধ্যতামূলক করেছিল সৌদি সরকার।
এদিকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে এক মাসেরও কম সময় বাকি আছে। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজানে সবচেয়ে বেশি মানুষ ওমরা করতে যান। মেনিনজাইটিস টিকার বাধ্যবাধকতার কারণে সাধারণ মানুষের সৌদিতে যাওয়া একটু কঠিন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণে এখন সবাই নির্বিঘ্নে সৌদিতে গিয়ে ওমরা করে আসতে পারবেন।