অর্থনীতি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে খেলাপি গণনা শুরু ২০২৮ সালে
দেশের ব্যাংক খাতের বিষফোঁড়া খ্যাত খেলাপি ঋণ। প্রতিনিয়ত এটা বাড়ছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করা হয়েছিল। যা এখন বেরিয়ে আসছে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে।
বর্তমানে ব্যাংকিং খাত প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার খেলাপি নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। যা মোট ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপির কারণে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের (প্রভিশন) পরিমাণ বেড়েছে। যা অনেক ব্যাংকের পক্ষ থেকে পূরণ করে সম্ভব হচ্ছে না।
আর এটি নিয়ে আপত্তি তুলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির প্রস্তাবিত আর্থিক খাতের সংস্কারের মধ্যে খেলাপি এবং প্রভিশনিং নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রয়েছে। প্রস্তাব বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইএমএফের মধ্যে এরই মধ্যে চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে খেলাপি ঋণ এবং প্রভিশনিং আন্তর্জাতিক মানের করতে বিশদ সময়-কাঠামেো ঘোষণা করেছে। যা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড-৯ (আইএফআরআই-৯) এর কাঠামো অনুযায়ী ২০২৮ সাল থেকে শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, আইএফআরআই-৯ এর আওতায় গ্রাহকের এক্সপেকটেডম ক্রেডিট লস, (ইবিএল) পদ্ধতিতে প্রভিশন সংরক্ষণ করা হবে। ইসিএল মূল্যায়নে ক্ষেত্রে ব্যাংকের গ্রাহক বা প্রতিষ্ঠান কিংবা কোম্পানির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ঝুঁকি ও সম্ভাবনা বিবেচনা করা হবে।
তাছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাকের নতুন রোডম্যাপে আর্থিক এবং সামষ্টিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়াবলী গুরুত্ব আরোপের কথা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ঋণ খেলাপির বিদ্যমান শ্রেণীকরণ স্ট্যান্ডার্ড (এসএস), ডাইডফুল (ডিএফ), ব্যাড অ্যান্ড লস (ইএল) হিসাব থাকবেন না। নতুন পদ্ধতিতে ঋণ শ্রেণীকরণের ধরণ হবে ফেজ-১, পেজ-২ এবং ফেজ-৩। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নতুন রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা সিইও এর নেতৃত্বে শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবো এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী প্রতিবেদন দাখিল করবে। ব্যাংকগুলোর বাস্তবায়ন কমিটিতে ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (সিআরএম), ফিন্যান্সিয়াল একাউন্টস (এফএ), তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি), চিফ রিস্ক অফিসার (সিআরও), চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসারসহ (সিএফও) সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সুচারুরূপে প্রতিবেদন তৈরি করে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে (বোর্ড অব ডিরেক্টরস) অবহিত করবে। আর নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রয়োজনের দেশের বাইর থেকে কারিগরি ও দক্ষতা সংক্রান্ত সহায়তা নিতে পারে।

অর্থনীতি
এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ তৈরির অধ্যাদেশ পাস

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ ‘রেভিনিউ পলিসি ডিভিশন’ এবং ‘রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন’ তৈরির অধ্যাদেশ পাস হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) ২০২৫ নীতিগত ও চুড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
অধ্যাদেশটিতে আনা সংশোধনী অনুযায়ী, নতুন দুটি বিভাগের মধ্যে ‘রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন’ বা রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধানের পদে এনবিআরের বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই নিয়োগের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ‘রেভিনিউ পলিসি ডিভিশন’ বা রাজস্ব নীতি বিভাগেও সরকার চাইলে এনবিআর অথবা যোগ্যতা সম্পন্ন অন্য কোনো বিভাগ থেকে নিয়োগ দিতে পারবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড(এনবিআর) ভেঙে যে দুটি বিভাগ করা হচ্ছে, সেখানে রাজস্ব নীতি বিভাগের প্রধান বা সচিব হিসেবে যেকোনো ক্যাডারেরর কর্মকর্তারা নিয়োগ পাবেন। এক্ষেত্রে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও নায্যতার ভিত্তিতে এই নিয়োগ হবে।
ফাওজুল কবির খানের নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব নিয়োগ আগের মতোই রাখা হয়েছে।
আগের অধ্যাদেশে ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের’ প্রধান পদে রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞদের ‘অগ্রাধিকার’ দেওয়ার কথা থাকলেও সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ‘রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে, এরকম কোনো যোগ্য সরকারি কর্মকর্তাকে ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনে নিয়োগ দেবে।’ এর মাধ্যমে মূলত এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই এই বিভাগের প্রধান নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে।
একইভাবে, ‘রাজস্ব নীতি বিভাগের’ প্রধান হিসেবে আগে ‘উপযুক্ত কোনো কর্মকর্তাকে’ নিয়োগের কথা বলা ছিল। নতুন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, সরকার সামষ্টিক অর্থনীতি, বাণিজ্য নীতি, পরিকল্পনা, রাজস্ব নীতি বা ব্যবস্থাপনা কাজে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মকর্তাকে রেভিনিউ পলিসি ডিভিশনে নিয়োগ দিতে পারবে।”
ফলে এক্ষেত্রে সরকার চাইলে এনবিআর বাদেও অন্য কোনো বিভাগের যোগ্য কর্মকর্তাকে এ বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে।
এছাড়া উভয়-বিভাগে কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
গত মে মাসে সরকার এনবিআর বিলুপ্ত করে নতুন অধ্যাদেশ জারির পরে এনবিআরের বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। তাদের আন্দোলনের মুখে পরবর্তীতে অধ্যাদেশটি সংশোধন করা হয়।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ ছিল, অধ্যাদেশটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে দুটি বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি হয় এবং রাজস্ব কর্মকর্তাদের শীর্ষ পদে আসার পথ সংকুচিত হয়ে পড়ে।
এর প্রতিবাদে কর্মকর্তারা গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে আন্দোলন শুরু করেন এবং জুনের শেষ দিকে বন্দর অচল করার মতো কর্মসূচিও পালন করেন। এর প্রেক্ষিতে সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। এখন পর্যন্ত ৩৬ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিষ্কার, পাঁচজনকে বাধ্যতামূলক অবসর এবং প্রায় ৪০০ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।
তবে অধ্যাদেশে সংশোধনী আনার ফলে এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে কিছুটা সন্তোষ ফিরেছে। তারা বলছেন, অন্তত একটি বিভাগের প্রধান হিসেবে এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ায় তাদের আন্দোলন যৌক্তিক ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
অর্থনীতি
ব্যাংকখাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ ৭ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা

২০২৪ সালের শেষ নাগাদ দেশের ব্যাংক খাতের দুর্দশাগ্রস্ত বা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সাল শেষে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ ছিল চার লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট ২০২৪’–এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের শেষে এ ধরনের ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এক বছরে তা ৪৪.২১ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় অর্ধেক। আইএমএফের সংজ্ঞা অনুযায়ী, খেলাপি, পুনঃতফসিল এবং অবলোপনকৃত (রাইট-অফ) ঋণকে সম্মিলিতভাবে ‘দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ২০২৪ সালের শেষে ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা, পুনঃতফসিলকৃত ঋণ ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা এবং রাইট-অফ করা ঋণের পরিমাণ ৬২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও তদবিরের মাধ্যমে দেওয়া ঋণ এখন খেলাপিতে রূপ নিচ্ছে। আগে এসব তথ্য গোপন থাকলেও এখন আইএমএফের চাপের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে এসব তথ্য প্রকাশ করছে।
প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, ২০২৪ সালে দেশের ব্যাংকখাত চরম চাপের মুখে পড়ে, বিশেষ করে মূলধন পর্যাপ্ততার ক্ষেত্রে। সিআরএআর (ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েইটেড অ্যাসেট রেসিও) মাত্র ৩.০৮ শতাংশে নেমে আসে, যেখানে তা কমপক্ষে ১০ শতাংশ থাকার কথা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও বেশকিছু ইসলামি ব্যাংক।
মূলধন অনুপাত ও লিভারেজ অনুপাত যথাক্রমে ০.৩০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গোটা ব্যাংক খাতের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অভাব স্পষ্ট করে।
তবে ব্যাংকখাতের তারল্য পরিস্থিতি এখনো তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। অ্যাডভান্স-ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) ৮১.৫৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার মধ্যে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, দেশের আর্থিক খাত সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও খেলাপি ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ এবং সুশাসনের অভাব এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সময়োপযোগী নীতিমালা, কঠোর তদারকি এবং প্রযুক্তিনির্ভর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই এই খাতকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
অর্থনীতি
কর কমিশনার মুস্তাকসহ ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নথি গায়েব করে ১৪৬ কোটি টাকার কর ফাঁকির অভিযোগে ঢাকা কর অঞ্চল-৫ এর কর কমিশনার আবু সাঈদ মো. মুস্তাকসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সংস্থাটির কমিশন এই মামলার অনুমোদন দেন। শিগগিরই দুদকের সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম মামলাটি দায়ের করবেন জানা গেছে।
অনুমোদিত মামলার আসামিরা হলেন— কর অঞ্চল-৫ এর কর কমিশনার আবু সাঈদ মো. মুস্তাক, অতিরিক্ত কর কমিশনার গোলাম কবীর এবং উপ-কর কমিশনার লিংকন রায়।
অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ করবর্ষে ধামশুর ইকোনমিক জোন লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটির বিপরীতে কর দাবির পরিমাণ ছিল মোট ১৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। কিন্তু কর্মকর্তা বদলিতে নতুন কর্মকর্তা নথিতে কর নির্ধারণী আদেশ পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে কর দাবির পরিমাণ কমিয়ে যথাক্রমে শূন্য টাকা ও ১ হাজার টাকা করে রাজস্ব ফাঁকি দিতে সরাসরি সহায়তা করেন। শুধু তাই নয়, মূল কর নির্ধারণী আদেশের নথিও গায়েব করে দেওয়া হয়, যা দুদকের অভিযানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
গত ৯ জুলাই নথিপত্র গায়েব করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর অঞ্চল-৫ থেকে ১৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার কর ফাঁকির ঘটনায় এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায় দুদক। অভিযানেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
অর্থনীতি
নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন দাখিল না করলে যে শাস্তি-ঝুঁকি

আয়কর রিটার্ন নির্ধারিত সময়ে দাখিল না করলে করদাতাদের নানা শাস্তি ও জটিলতার মুখোমুখি হতে হবে। আয়কর নির্দেশিকা ২০২৫-২৬ অনুযায়ী, দেরি করলে ধারা ২৬৬ অনুসারে জরিমানা, ধারা ১৭৪ অনুসারে কর অব্যাহতির সুযোগ সীমিত হওয়া এবং মাসিক ২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত কর পরিশোধের বিধান রয়েছে।
এ ছাড়া রিটার্ন দাখিলে গড়িমসি করলে বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ ইউটিলিটি সার্ভিসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। একই সঙ্গে বেতন-ভাতা গ্রহণেও জটিলতার মুখে পড়তে পারেন করদাতারা।
কর বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ঝুঁকি এড়াতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রিটার্ন দাখিল করা অপরিহার্য।
অর্থনীতি
কাঠামোগত পরিবর্তন আসছে রাজস্ব প্রশাসনে

সরকারের রাজস্ব প্রশাসনে বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন আসছে। নীতিগত পরিকল্পনা ও প্রশাসনিক বাস্তবায়নের দ্বৈত প্রবাহ তৈরির লক্ষ্যে পৃথকভাবে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব প্রশাসন বিভাগ’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ উদ্দেশ্যে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করা হয়েছে।
অধ্যাদেশের প্রাথমিক খসড়া চূড়ান্ত করতে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্যোগে একাধিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচ দফা সভার পর কিছু ধারা পরিমার্জন করে অধ্যাদেশটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভা উপকমিটি এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মতামত নেওয়া হয়েছে।
অধ্যাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলো হলো-
সংবিধানের ৫৫(৬) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে একটি মন্ত্রণালয়কে একাধিক বিভাগে ভাগ করতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হবে, যা নীতির কার্যকারিতা ও তদারকির দায়িত্বে থাকবে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (অর্থ: শুল্ক ও আবগারি) বিধিমালা, ১৯৮০ অনুসারে নতুন বিধি ও কাঠামো প্রণয়ন করা হবে।
সরকারি সম্পদের ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণে নিরীক্ষা ও প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক করা হবে। প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দিষ্ট প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
নতুন কাঠামোয় এই ক্যাডার থেকে দুই সচিব নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।
আর বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশটি অনুমোদনের জন্য তোলা হতে পারে।
এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত
সচিবালয় সূত্র জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ—রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ—প্রতিষ্ঠা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ১২ মে এ বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
সরকার জানায়, নতুন সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হলো রাজস্ব আহরণ থেকে নীতি প্রণয়ন আলাদা করে দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বার্থ সংঘাত কমানো এবং রাজস্ব আহরণের আওতা সম্প্রসারণ।
গত ৫০ বছরে এনবিআর ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। বৈশ্বিক গড় অনুপাত ১৬.৬ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় এটি ১১.৬ শতাংশ। সরকারের মতে, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে এ অনুপাত অন্তত ১০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
বিদ্যমান সমস্যার চিত্র
বর্তমান কাঠামোয় কর নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন একই প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকায়:
• নীতি ও বাস্তবায়নের মধ্যে স্বার্থ সংঘাত তৈরি হয়।
• কর আদায়কারীরা কাঠামোগত জবাবদিহির বাইরে থাকেন।
• কর ফাঁকিদাতাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপে প্রায়ই গাফিলতি হয়।
• কর আদায়কারীদের কর্মদক্ষতা যাচাইয়ের কোনো বস্তুনিষ্ঠ সূচক নেই।
ব্যবসায়ী মহল অভিযোগ করে আসছে যে, ‘বাংলাদেশে করজালের আওতা এখনো সীমিত। রাজস্ব নীতি নির্ধারণে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ থাকলে তা বৈজ্ঞানিক ও তথ্যভিত্তিক হবে। এটি মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণে বড় ভূমিকা রাখবে। নীতি ও বাস্তবায়ন একসঙ্গে থাকলে প্রায়ই স্বার্থসংঘাত হয়। বিভাগ আলাদা হলে জবাবদিহি ও দক্ষতা দুটোই বাড়বে। তবে এজন্য জনবল উন্নয়ন জরুরি।’
সরকারি সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন নীতি কার্যকর হলে— সরকারি সম্পদের সংরক্ষণ ও ব্যবহারে দক্ষতা বাড়বে, অনিয়ম ও অপচয় অনেকটাই কমে আসবে এবং আর্থিক সাশ্রয় হবে এবং সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে।