অর্থনীতি
তিন হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড ছাড়বে সরকার
গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে সেতু নির্মাণের অর্থের জন্য সুকুক বন্ড ছাড়বে সরকার। আগামী মার্চে এই বন্ড ইস্যু করে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায় সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের যোগাযোগ ও প্রকাশনা বিভাগ (ডিসিপি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প (২য় পর্যায়) (সিআইবিআরআর-২)’ শীর্ষক প্রকল্পের বিপরীতে ৫ম বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগ সুকুক ইস্যুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এর আগে ইস্যুকৃত অন্যান্য সুকুকের মতো আলোচ্য সুকুকটিও সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বিপরীতে ইস্যু করা হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রকল্প এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষি ও অকৃষি পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজিকরণ ও ব্যয় হ্রাস এবং স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত হচ্ছে। দেশি-বিদেশি ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীদের সুকুকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বীমা কম্পানির অনুকূলে শতাংশ, কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোর ইসলামিক ব্রাঞ্চ ও উইন্ডোজের অনুকূলে ১০ শতাংশ এবং ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারী, প্রভিডেন্ট ফান্ড, ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স প্রভৃতি বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে ২০ শতাংশ সুকুক বরাদ্দের হার পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
সকল কনভেনশনাল ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা কম্পানি শর্তসাপেক্ষে নিলামে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
তবে ৩টি শ্রেণিতে প্রয়োজনীয় সাবস্ক্রিপশন না পাওয়া গেলে তাদের মধ্যে অবশিষ্ট সুকুক আনুপাতিক হারে বরাদ্দ দেয়া হবে। নিবাসী ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীরা তাদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সুকুকে বিনিয়োগ করতে পারবে।
অনিবাসী ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে কার্যরত যে কোনো ব্যাংকে তার বা তাদের নামে পরিচালিত অনিবাসী বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব অথবা অনিবাসী টাকা হিসাবের মাধ্যমে সুকুকে বিনিয়োগ করতে পারবে। এছাড়া মুনাফা, বিক্রয়লব্ধ অর্থ ও মেয়াদপূর্তিতে প্রাপ্ত আসল বৈদেশিক মুদ্রায় (সকল প্রকার প্রযোজ্য ফি এবং/অথবা কর কর্তনপূর্বক) প্রত্যাবাসনযোগ্য। ২০২৫ সালের মার্চে এ আলোচ্য প্রকল্পটির বিপরীতে ৩ হাজার কোটি টাকার সুকুক ইস্যুর পরিকল্পনা রয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সবজিতে স্বস্তি ফিরলেও চড়া চাল-মুরগির বাজার
শীতকালীন শাক-সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ বজায় থাকায় এখন অনেকটাই স্থিতিশীল সবজির বাজার। সঙ্গে ডিম-মাছ-মাংসের বাজারেও দাম বাড়েনি নতুন করে। এরপরও সাপ্তাহিক বাজার উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারছে না ক্রেতা সাধারণের কাছে; চড়া দামে কিনতে হচ্ছে চাল আর মুরগি। আসন্ন রমজানে দাম আরও বৃদ্ধির আশঙ্কায় কপালে ভাঁজ পড়ছে অনেকের।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
বিক্রেতারা বলছেন, কয়েক মাস ধরেই চালের বাজার চড়া। আমনের ভরা মৌসুমের পাশাপাশি শুল্ক কমানো ও আমদানিসহ কয়েকটি উদ্যোগ নিলেও কোনো কাজে আসছে না। মানভেদে বিভিন্ন ধরনের চালের কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়েছে।
মধ্যবিত্তের চালখ্যাত সরু বা মিনিকেট চাল মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকায়। গরিবের মোটা বা গুটি স্বর্ণা জাতের চালও কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকায়।
এ ছাড়া নাজিরশাইল জাতের চালের খুচরামূল্য মানভেদে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। মাঝারি বা ব্রি-২৮ ও পায়জাম জাতের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৬ টাকায়। মোটাদাগে বাজারে ৬০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো চালই।
এদিকে চালের মতো কয়েক সপ্তাহ ধরে মুরগির বাজার ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে সোনালি জাতের মুরগির দামও। এ জাতের মুরগির কিনতে হলে এখন কেজিপ্রতি খরচ পড়ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা; যা আগে ৩০০-৩২০ টাকা ছিল।
তবে স্বস্তির খবর, বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বড় বাজারে ফার্মের প্রতি ডজন ডিম পাওয়া যাচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। পাড়া মহল্লার দোকানে তা মিলছে ১৪০-১৪৫ টাকা।
অন্যদিকে বাজারে গত কয়েক মাস ধরে অস্বস্তি ছড়ানো আলুর দাম এখন ২০-২৫ টাকার মধ্যে চলে এসেছে। পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে ৪০-৫০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া প্রতিকেজি বেগুন ৪০ থেকে ৫০, শিম ৩০ থেকে ৫০, কাঁচা পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, শসা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, করল্লা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ১৫ থেকে ২০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে। প্রতি পিস ফুল ও বাঁধাকপি মানভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।
মুদি বাজারেও দামের তেমন হেরফের দেখা যাচ্ছে না। প্রতিকেজি আমদানি করা মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১১০ ও দেশি চিকন মসুর ডাল ১৩০ থেকে ১৩৫ থেকে টাকা, মুগডাল ১৬৫ থেকে ১৭০ ও ছোলার কেজি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে খেলাপি গণনা শুরু ২০২৮ সালে
দেশের ব্যাংক খাতের বিষফোঁড়া খ্যাত খেলাপি ঋণ। প্রতিনিয়ত এটা বাড়ছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করা হয়েছিল। যা এখন বেরিয়ে আসছে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে।
বর্তমানে ব্যাংকিং খাত প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার খেলাপি নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। যা মোট ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপির কারণে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের (প্রভিশন) পরিমাণ বেড়েছে। যা অনেক ব্যাংকের পক্ষ থেকে পূরণ করে সম্ভব হচ্ছে না।
আর এটি নিয়ে আপত্তি তুলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির প্রস্তাবিত আর্থিক খাতের সংস্কারের মধ্যে খেলাপি এবং প্রভিশনিং নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রয়েছে। প্রস্তাব বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইএমএফের মধ্যে এরই মধ্যে চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে খেলাপি ঋণ এবং প্রভিশনিং আন্তর্জাতিক মানের করতে বিশদ সময়-কাঠামেো ঘোষণা করেছে। যা ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড-৯ (আইএফআরআই-৯) এর কাঠামো অনুযায়ী ২০২৮ সাল থেকে শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, আইএফআরআই-৯ এর আওতায় গ্রাহকের এক্সপেকটেডম ক্রেডিট লস, (ইবিএল) পদ্ধতিতে প্রভিশন সংরক্ষণ করা হবে। ইসিএল মূল্যায়নে ক্ষেত্রে ব্যাংকের গ্রাহক বা প্রতিষ্ঠান কিংবা কোম্পানির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ঝুঁকি ও সম্ভাবনা বিবেচনা করা হবে।
তাছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাকের নতুন রোডম্যাপে আর্থিক এবং সামষ্টিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়াবলী গুরুত্ব আরোপের কথা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ঋণ খেলাপির বিদ্যমান শ্রেণীকরণ স্ট্যান্ডার্ড (এসএস), ডাইডফুল (ডিএফ), ব্যাড অ্যান্ড লস (ইএল) হিসাব থাকবেন না। নতুন পদ্ধতিতে ঋণ শ্রেণীকরণের ধরণ হবে ফেজ-১, পেজ-২ এবং ফেজ-৩। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নতুন রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা সিইও এর নেতৃত্বে শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে। ওই কমিটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবো এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী প্রতিবেদন দাখিল করবে। ব্যাংকগুলোর বাস্তবায়ন কমিটিতে ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (সিআরএম), ফিন্যান্সিয়াল একাউন্টস (এফএ), তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি), চিফ রিস্ক অফিসার (সিআরও), চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসারসহ (সিএফও) সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সুচারুরূপে প্রতিবেদন তৈরি করে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে (বোর্ড অব ডিরেক্টরস) অবহিত করবে। আর নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রয়োজনের দেশের বাইর থেকে কারিগরি ও দক্ষতা সংক্রান্ত সহায়তা নিতে পারে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড লেনদেন
গত জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কয়েক দিন ইন্টারনেট বন্ধ এবং ধীরগতির বড় প্রভাব পড়েছিল মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। কিন্তু সেই ধাক্কা কাটিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে গত (২০২৪) নভেম্বর মাসে। এক মাসে এক লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকার মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন এটাই প্রথম। হিসাব অনুযায়ী বার্ষিক বিবেচনায় এই লেনদেন ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলানায় ৩১ শতাংশ বেশি। আর ২০২৪-এর জুলাই মাসের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি।
২০২৪ সালের মার্চে সর্বোচ্চ লেনদেন ছিল এক লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড হলো সদ্যবিদায়ী বছরের নভেম্বরে। নভেম্বর মাসে এক লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। দৈনিক পাঁচ হাজার ২২৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এ মাসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, আলোচিত নভেম্বর মাসে ক্যাশ ইন হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। উত্তোলন (ক্যাশ আউট) হয়েছে ৫০ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এ ছাড়া নভেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা হয়েছে দুই হাজার ৮৪১ কোটি টাকা, বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৬৩২ কোটি, মার্চেন্ট পেমেন্ট বা পণ্য কেনাকাটায় ৭ হাজার ৭৭৫ কোটি ও রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৭৭ কোটি টাকার।
দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে তাৎক্ষণিক আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল আর্থিক সেবা। অর্থ পাঠানোর পাশাপাশি অনেক নতুন সেবাও মিলছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। এর মধ্যে রয়েছে- বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা বিতরণ, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোসহ (রেমিট্যান্স) বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে। দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ মাধ্যমটি।
বর্তমানে বিকাশ, রকেট, নগদসহ ১৩টি এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধিত অ্যাকাউন্ট ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ১২ হাজার ৫১৫ জন। এক মাস আগেও নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৫৭ লাখ। অর্থাৎ এক মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নতুন করে ১৬ লাখ গ্রাহক যুক্ত হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের সময় অর্থাৎ জুলাই মাসে এ গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৩১ লাখ ২৭ হাজার।
এর আগে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিংসেবা চালুর মধ্যে দিয়ে দেশে এমএফএস যাত্রা শুরু হয়। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংসেবা বিকাশ চালু হয়। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংসেবার বেশির ভাগই বিকাশের দখলে। এরপর রয়েছে ‘নগদ’-এর অবস্থান। বর্তমানে বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ নানা নামে ১৩টি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা দিচ্ছে। গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহকর্মীর বেতনও এখন দেওয়া হচ্ছে এসব সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। পোশাক খাতসহ শ্রমজীবীরা এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে পরিবার-পরিজনদের কাছে টাকা পাঠাচ্ছেন। ফলে দিন দিন নগদ টাকার লেনদেন কমে আসছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বেক্সিমকোর ৪০ শতাংশ কর্মীর অস্তিত্ব নেই: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বেক্সিমকোর ৪০ হাজার শ্রমিকের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক তদন্তে তার প্রায় ৪০ শতাংশের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি বলেন, বলা হচ্ছে বেক্সিমকোতে ৪০ হাজার শ্রমিক রয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে আমরা এর প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের অস্তিত্ব পাইনি। অনেক তথ্য তৈরি করা হচ্ছে উত্তেজনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সেই সঙ্গে বেক্সিমকোর একটি হাউজিং প্রকল্পে আইএফআইসি ব্যাংকের মাধ্যমে ‘আমার বন্ড’ ছেড়ে তোলা চার হাজার কোটি টাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, মাত্র তিন মাস আগে তোলা সেই চার হাজার কোটি টাকা কোথায় গেলো? এটা একটা অবাক করা বিষয়- টাকা কোথায়?
সংবাদ সম্মেলনে বেক্সিমকোর কর্মীদের ব্যাংকঋণ চাওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, একটা প্রতিষ্ঠানের যদি সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকা চলতি সম্পদ থাকে, তার ৬০ কোটি বেতন দেওয়া তো একটা সেকেন্ডের ব্যাপার।
তিনি বলেন, যে দাবি জানানো হচ্ছিল যে ব্যাংক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না, এলসি খুলে দেওয়া হচ্ছে না- যে প্রতিষ্ঠানের সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকা চলতি সম্পদ তার তো এলসি খোলাও লাগে না, আর ব্যাংকের সুবিধারও প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়।
তিনি আরও বলেন, আমি প্রথমে জেনেছিলাম যে তাদের ২৩ হাজার কোটি টাকার দায় রয়েছে। পরে জানলাম তাদের প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার দায় রয়েছে। ২৩ হাজার কোটি টাকার দায় ধরে নিয়েই চেষ্টা করেছিলাম যে প্রতিষ্ঠানটা কোনো রকমে যাতে চালু হয়। সরকার খুবই দায়িত্বশীল ছিল এটি চালুর জন্য। কারণ এটা একটা জাতীয় সম্পদ এখানে বহু সংখ্যক শ্রমিক নিয়োজিত।
‘দেশের রপ্তানি আয়ের একটা প্রাসঙ্গিক বিষয় রয়েছে। তাই সরকার যথেষ্ট উদার ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে এ বিষয়ে প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু সরকার তাদের (বেক্সিমকো) পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র সহযোগিতা পায়নি। তখন সরকার বাধ্য হয়ে এখানে প্রশাসক নিয়োগ করেছে। প্রশাসককে কোনো ধরনের সাহায্য করা হয়নি। বলা হয়েছে, আইনজীবীর নিষেধ আছে কোনো ধরনের তথ্য শেয়ার না করার জন্য’ বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, নিদারুণ সহযোগিতার কারণে যে উচ্চ পর্যায়ের কাউন্সিল কাজ করেছে, তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি বড়ই জটিল বিষয় হিসেবে উপনীত হয়েছিল। এরপর সরকার তার দায়িত্বের জায়গা থেকে প্রতি মাসে ৬০ কোটি টাকা করে বেতন দিয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নেই। এ বিষয়টি অত্যন্ত জটিল ছিল।
তিনি বলেন, মায়ানগরে বেক্সিমকোর একটি হাউজিং প্রকল্প আইএফআইসি ব্যাংকের মাধ্যমে আমার বন্ডে চার হাজার কোটি টাকা তুলেছে। মাত্র তিন মাস আগে। সেই চার হাজার কোটি টাকা কোথায় গেলো? এটা একটা অবাক করা বিষয়- টাকা কোথায়?
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইন্ডাস্ট্রির যারা অংশীজন আছেন তাদের সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা চেয়েছি- তারা (বেক্সিমকোর শ্রমিক) যাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণ হয়ে যায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু তারা আইনগতভাবে নিজেদের আলাদা করতে চেয়েছেন, তারা আর ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীবাহিনী নয়, এমন আইনি কাঠামোর ভিত্তিতে তারা নিতে চেয়েছিলেন। ওই কাঠামো দেওয়ার জন্য উপদেষ্টা পরিষদ এবং বিশাল সরকারি টিম একসঙ্গে নিয়োজিত হয়ে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছিল। এর মধ্যে এমন দুর্যোগপূর্ণ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ফৌজদারি বিধি লঙ্ঘন করে বিভিন্ন ধরনের সম্পদ এবং যে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে, এর মাধ্যমে দেশের শ্রম সমাজকে অসম্মানিত করা হচ্ছে। গার্মেন্ট শিল্পকে সর্বোপরি দেশকে অসম্মান করা হচ্ছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকোর ৭৫০০ কোটি টাকারও বেশি রিটেইনড আর্নিং রয়েছে জানিয়ে বিষয়টির ফরেনসিক অডিট করবেন কি না, একজন সাংবাদিক এমন প্রশ্ন করলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, কিছুই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঘরে চুরি হয়েছে ঘরই তো নেই। ঘরের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ফের ২০ বিলিয়নের নিচে নামল রিজার্ভ
আওয়ামী লীগ আমলের রেখে যাওয়া ডলার সংকট চলমান রয়েছে। এর মধ্যে আগের আমদানি করা পণ্যের অনেক বিল এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, ২২ জানুয়ারি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ২৫ দশমিক ২২১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ গণনার মান অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে অর্থাৎ ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার।
চলতি বছরের শুরুতে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ ছিল ২১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বিয়োগ করলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ পাওয়া যায়। তবে এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, তা হলো ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ। এ তথ্য আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে আইএমএফের এসডিআর খাতে থাকা ডলার, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা এবং আকুর বিল বাদ দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাব করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি আছে। প্রতি মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামে। সে সময় বৈদেশিক ঋণ ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কেনার মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়ানো হয়। আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন গভর্নর এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে। আবার বিভিন্ন সোর্স থেকে ডলার যোগানের চেষ্টা করছে। তবে আগের দায় পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভ কিছুটা কমেছে।
কাফি