অর্থনীতি
বেক্সিমকোর ৪২ হাজার কর্মীর পাওনা ২২ হাজার কোটি টাকা

দেশের আর্থিক খাতে ব্যাপক অনিয়মে জড়িত বেক্সিমকো গ্রুপের লে-অফ থাকা গার্মেন্টস ও এর সাথে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান সচল করতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। তাদের দাবি, কারখানা খুলে না দিলে ৪২ হাজার মানুষ চাকরি হারাবে। বেক্সিমকোর কাছে এসব শ্রকিদের ২২ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বেক্সিমকো ফ্যাশন লিমিটেডের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান সৈয়াদ মো. এনাম উল্লাহ, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান আব্দুল কাইয়ুম বক্তব্য রাখেন।
এসময় লে-অফ প্রত্যাহার করে বেক্সিমকোর গার্মেন্টস ডিভিশনের সব কারখানা খুলে দেওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি বাণিজ্য শুরু ও বিদেশিদের কার্যাদেশ প্রাপ্তির সুবিধার্থে ব্যাংকিং কার্যক্রম ও ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান তারা। সেই সঙ্গে কারখানা ও ব্যবসা চলমান রেখে সব বকেয়া বেতন এবং কোম্পানির দায়-দেনা পরিশোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সৈয়াদ মো. এনাম উল্লাহ বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের গার্মেন্টস ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ৪২ হাজার চাকরিজীবীকে লে-অফের আওতায় জনতা ব্যাংকের ঋণ সুবিধায় জানুয়ারি-২০২৫ পর্যন্ত বেতনাদি প্রদান করা হচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই বিশাল জনবলকে আর কোনো প্রকার আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে না। যার প্রেক্ষিতে ফেব্রুয়রি-২০২৫ মাস থেকে ১৬টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে এবং এগুলোতে কর্মরত প্রায় ৪২ হাজার মানুষ চাকরি হারাবে। সেই সঙ্গে এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িওয়ালা, দোকানদার, অটোরিকশা চালক, স্কুল-মাদারাসা-কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে যাবে, যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবন ও বেঁচে থাকার সব মৌলিক চাহিদা জড়িত।
তিনি বলেন, বেক্সিমকোর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্রুপ বন্ধ হয়ে গেলে ৪২ হাজার কর্মজীবী মানুষ চাকরি হারাবে। তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ২ লাখ পরিবারের সদস্য এবং এই শিল্প ও কর্মজীবীদের কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কর্মসংস্থানের আরও প্রায় ৮ লাখ মানুষের রিজিক বন্ধ হয়ে যাবে। এই ৪২ হাজার কর্মজীবী মানুষের মধ্যে প্রায় ২ হাজার প্রতিবন্ধী, শতাধিক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং ৫ হাজারের মতো ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি রয়েছেন যাদের আমরা পরম মমতায় আর যত্নে সমাজ ও পরিবারের বোঝা হওয়া থেকে রক্ষা করছি। সরকারের সিদ্ধান্তের যদি কোনো পরিবর্তন না হয় তাহলে এরা সবাই মানবেতর জীবনের দিকে এগিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে প্রায় ৪২ হাজার নতুন বেকার এবং ব্যবসা-বাড়িভাড়া বঞ্চিত লাখো মানুষ নৈরাজ্য আর অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে নতুন সংকট তৈরি করবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে লে-অফ প্রত্যাহার করে ১৬টি বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলা হয়, বেক্সিমকো শুধু বাংলাদেশে নয় এশিয়া মহাদেশের একটি বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রুপ এবং শুধু বেক্সিমকো গার্মেন্টস ডিভিশনই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে প্রধান ভূমিকা পালন করতো। আজ সেই গার্মেন্টস ও সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলো বন্ধ করে রাখায়, ব্যাংকিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখায় সরকার ও জনগণ সেই বিশাল বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা আমাদের জাতীয় আয় ও রিজার্ভ ঘাটতির অন্যতম কারণ।
এনাম উল্লাহ বলেন, বর্তমান সময়ের উপযোগী মেশিনারিজ, প্রযুক্তি আর ৪২ হাজার দক্ষ জনবল নিয়ে তিল তিল করে গড়ে ওঠা আজকের বেক্সিমকোর গার্মেন্টস শিল্প মরিচা ধরার অপেক্ষায়। আমাদের মাসিক প্রায় ৪০-৫০ লাখ পিস গার্মেন্টস পণ্য তৈরির সক্ষমতা, এশিয়ার বৃহত্তম ওয়াশিং প্ল্যান্ট এবং অত্যাধুনিক মেশিনে সজ্জিত প্রিন্টিং, এমব্রয়ডারি ও এক্সেসরিজ তৈরির কাখানা, টেক্সটাইল মিল ও দক্ষ জনবল বায়ারদের প্রধান আকর্ষণ।
তিনি আরও বলেন, কম্পোজিট গ্রুপ হওয়ায় শুধু তুলা ও কেমিক্যাল ক্রয় ছাড়া গার্মেন্টস তৈরির অন্য কিছুই বাইরে থেকে ক্রয় বা আমদানি করতে হয় না। এসব সুবিধা বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বর্তমান থাকায় বায়াররা আমাদের কার্যাদেশ দিতে সবসময় তৎপর থাকে। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকালীন বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও বেক্সিমকো গার্মেন্টস ডিভিশন রপ্তানিতে শীর্ষে ছিল। এ রকম একটি লাভজনক, সুবিধাজনক এবং শ্রমঘন প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দিয়ে ১০ লাখ মানুষের মুখের আহার কেড়ে নিয়ে, জাতীয় প্রবৃদ্ধির ব্যাহত করে বর্তমান জননন্দিত সরকার কি সুবিধা লাভ করছেন আমরা জানি না। তাই সবিনয়ে অনুরোধ, অবিলম্বে আমাদের কারখানাগুলোকে খুলে দিয়ে ৪২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও ১০ লাখ মানুষের খেয়েপরে বেঁচে থাকার ব্যবস্থাটুকু নিশ্চিত করা হোক।
ব্যাংকিং ও ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সুবিধা প্রদান করার দাবি জানিয়ে বেক্সিমকোর এই কর্মী বলেন, ব্যাংকিং ও এলসি সুবিধা ছাড়া দেশি-বিদেশি কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য করা যায় না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, ৬ মাস যাবৎ বেক্সিমকোর গার্মেন্টস ডিভিশনের সব ব্যাংকিং ও এলসি সুবিধা বন্ধ রাখা হয়েছে। একদিকে কারখানা বন্ধ, উৎপাদন নেই অন্যদিকে দায়-দেনার পরিমাণ প্রচার করে তা পরিশোধের জন্য সব প্রকার চাপ অব্যাহত। সেই প্রেক্ষিতে বলতে হয়, আয় থেকে দায় শোধ, ব্যাংকিং ও ঋণ ব্যবস্থাপনার মূলমন্ত্র যদি হয়ে থাকে তাহলে বেক্সিমকো গ্রুপের সব দায়-দেনা নিয়মিতভাবে পরিশোধের জন্য এর বন্ধ রাখা প্রতিটি কারখানা খুলে দিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরুর কোনো বিকল্প নেই।
‘আপনাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বন্ধ থাকা ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি ওপেন করে দেওয়া। কিন্তু সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে দায় পরিশোধের চাপ সৃষ্টি শুধু অমানবিকই নয়, অন্যায্যও বটে। এই দায় বহন করার সক্ষমতা কোনো সরকারের বা ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। কারখানা বন্ধ রাখার প্রক্রিয়া যতই প্রলম্বিত হবে বেক্সিমকোর দায়ও তাতে বাড়তে থাকবে। তাই অবিলম্বে বায়ারদের কার্যাদেশ পাওয়ার সুবিধার্থে বেক্সিমকোর ব্যাংকিং সুবিধা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা নিয়ে উৎপাদন শুরু করার মাধ্যমে সব দায়-দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছি।’
বকেয়া বেতন ও অন্যান্য পাওনাদি পরিশোধ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের কাছে শ্রমিকদের অর্জিত ছুটির ২ বছরের টাকা জমে গেছে এবং অফিসারদের ৪ মাসের বেতনের টাকা বকেয়া রয়ে গেছে। বর্তমান আর্থিক দুরবস্থার ভেতর এই বকেয়াগুলো পাওয়া গেলেও সন্তানদের স্কুল-কলেজে ভর্তির খরচ মিটিয়ে ফেলা যেতো। টাকার অভাবে সন্তানদের নতুন বছরে, নতুন ক্লাসে ভর্তি করানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বেক্সিমকোর যে পরিমাণ ঋণ রয়েছে তা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে আদায় করা সম্ভব না। এই ঋণ আদায় করতে হলে প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা বেশকিছু প্রস্তাবও দিয়েছি। এর মধ্যে একটি প্রস্তাব ছিল ২৩ একর জমি বন্ধক রেখে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া। এই ঋণ চাওয়া হয় ৪ মাসের জন্য। এই ঋণ দেওয়া হলে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করে বকেয়া ঋণও পরিশোধ করতে পারবো। সেক্ষেত্রে বছরে ৪০০ কোটি টাকার মতো বকেয়া ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব, এ ধরনের একটি প্ল্যানও আমরা দিয়েছি।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে এনাম উল্লহ বলেন, আমরা মালিক বলতে এখন আমাদের এমডি ওসমান কায়সার চৌধুরীকে বুঝি। এমডি আছেন, রিসিভার আছেন। তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এমডি বেক্সিমকোর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সব ধরনের প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে।
এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
রমজানে ২৫ স্থানে সুলভমূল্যে মাংস-ডিম-দুধ বিক্রি করবে সরকার

পবিত্র রমজান উপলক্ষে সুলভ মূল্যে চারটি পণ্য বিক্রি করবে মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। চার পণ্যের মধ্যে ২৫০ টাকা কেজি ড্রেসিং ব্রয়লার মুরগির মাংস, প্রতি ডজন ডিম ১১৪ টাকা, ৬৫০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস এবং ৮০ টাকা দরে প্রতি লিটার দুধ কেনা যাবে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
তিনি বলেন, ১ রমজান থেকে ২৮ রমজান পর্যন্ত ঢাকা শহরে এ ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের ২৫টি স্থানে সুলভ মূল্যে প্রাণিজাত পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জুলাই বিপ্লবের সময় যে সব স্থানে সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ বেশি ছিল সেসব স্থানে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বস্তি এলাকায় বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।
যেখানে মিলবে পণ্য:
১। সচিবালয়ের পাশে (আব্দুল গণি রোড), ২। খামারবাড়ী (ফার্মগেট), ৩। ঘাটফুট রোড (মিরপুর),৪। আজিমপুর মাতৃসদন (আজিমপুর), ৫। নয়াবাজার (পুরান ঢাকা), ৬। বনশ্রী, ৭। হাজারীবাগ (সেকশন), ৮। আরামবাগ (মতিঝিল), ৯। মোহাম্মদপুর (বাবর রোড), ১০। কালশী (মিরপুর), ১১। যাত্রাবাড়ী (মানিক নগর গলির মুখে), ১২। শাহাজাদপুর (বাড্ডা), ১৩। কড়াইল বস্তি, বনানী, ১৪। কামরাঙ্গীর চর, ১৫। খিলগাঁও (রেল ক্রসিং দক্ষিণে), ১৬। নাখাল পাড়া (লুকাস মোড়), ১৭। সেগুন বাগিচা (কাঁচা বাজার), ১৮। বসিলা (মোহাম্মদপুর), ১৯। উত্তরা (হাউজ বিল্ডিং), ২০। রামপুরা (বাজার), ২১। মিরপুর ১০, ২২। কল্যাণপুর (ঝিলপাড়), ২৩। তেজগাঁও, ২৪। পুরান ঢাকা (বঙ্গবাজার), ২৫। কাকরাইল
আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় এ বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
পবিত্র রমজান উপলক্ষে সুলভ মূল্যে চারটি পণ্য বিক্রি করবে মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। চার পণ্যের মধ্যে ২৫০ টাকা কেজি ড্রেসিং
এ সময় জানানো হয়, প্রতিদিন সবগুলো বিক্রয়কেন্দ্র মিলে ৬০ হাজার পিস ডিম, ৬ হাজার লিটার দুধ, ২ হাজার কেজি মুরগি ও ২০০০-২৫০০ কেজি মাংস বিক্রি হবে।
ঢাকা ছাড়াও সারা দেশব্যাপী এ ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কার্যকম থাকবে। জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ নিজ নিজ উদ্যোগে এ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
করের আওতায় আসছেন গ্রামাঞ্চলের চিকিৎসক-ব্যবসায়ীরা

জেলা, উপজেলা এবং গ্রাম অঞ্চলে যেসব ব্যবসায়ীরা, চিকিৎসক, আইনজীবীর মতো সরকারি-বেসরকারি কর্মজীবী রয়েছেন, যারা কর দেওয়ার মতো আয় করছেন, সবার কাছে কর আদায়ের জন্য তালিকা করে দেওয়ার পাশাপাশি তদারকি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদের।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত দ্বিতীয় অধিবেশন শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গ্রামে অনেকে অনেক আয় করছে বলে ডিসিরা জানিয়েছেন। তারা কিন্তু কর দিচ্ছেন না। আমরা এখন কর সংগ্রহ বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়াতে চাই। এ বিষয়ে এনবিআর এখন উদ্যোগ নেবে। তাদের একটি তালিকা ডিসিরা দেবেন।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যে প্রচুর বিক্রি করেন, চিকিৎসক আইনজীবীরা যে ফি নেন, তাদের রশিদ বা ডিজিটাল পেমেন্ট মেথডে এনে তাদেরকেও করের আওতায় আনার উদ্যােগ নেওয়া হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশের চিকিৎসক-আইনজীবীরা সরাসরি ক্যাশ ট্রানজেকশন করেন। এ কারণে তাদেরকে করের আওতায় আনা যায় না। চিকিৎসকরা যে ফি নেন তার রিসিট তো কোনো মানুষ নেয় না। এই ফি যদি ডিজিটাল মাধ্যমে দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু তার একটা রেকর্ড থাকে। বিদেশে কিন্তু এগুলো সব রেকর্ডেড৷
এখন তাদের (চিকিৎসক) যে এটেনডেন্ট থাকে ফ্রি কালেকশন করে। তাদের রশিদ দিয়ে ফি নেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। আইনজীবী বা অন্যান্য পেশার জন্যও এমন ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ডিসিরাই আজ উত্থাপন করেছেন গ্রামাঞ্চলে ব্যবসায়ীরা অনেক আয় করেন। তখন এনবিআর এ বিষয়টি নিয়ে ড্রাইভ দিতে বলেছে৷ আমাদের ট্যাক্সের আওতা না বাড়ালে তো হবে না৷ এমনিতেই তো দাবি থাকে ভ্যাট কমান-ট্যাক্স কমান৷ সুতরাং ভ্যাট-ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে রেখে ট্যাক্স গ্রহণের পরিধিটা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এই ট্যাক্স নেটটা বাড়িয়ে রাজস্ব আরও বিস্তৃত করতে পারি৷ মোটকথা জোর করে করের পরিমাণ না বাড়িয়ে ট্যাক্সের নেট বাড়ানো হবে৷ আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে ৫০ থেকে ৬০ লাখ কিন্তু কর দেয় মাত্র পাঁচ লাখ৷
এছাড়া এ সম্মেলনে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মসংস্থান বাড়াতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের গ্রামে এম্পলয়মেন্টটা বাড়াতে হবে৷ সেখানে বাড়ানো সহজ৷ চায়নাতে গ্রাম্য শিল্পের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ৷ চায়নার প্রত্যন্ত একটি গ্রামে তৈরি হওয়া পণ্য আমেরিকার ওয়ালমার্টেও পাবেন৷ অথচ বাংলাদেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের এই জিনিসগুলো যোগাযোগের অভাবে উঠে আসে না। যোগাযোগ না থাকলে ব্যালেন্স ডেভলপমেন্টটা করা সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, এছাড়া ডিসিরা যে দুর্গম এলাকা রয়েছেন, সেগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা বাড়ানো এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ব্যবস্থার কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, এসএমই খাতে ছোট উদ্যোক্তা লোন পায় না। সেগুলো আমরা ব্যবস্থা নেবো।
উপদেষ্টা আরও বলেন, সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত আমরা বাস্তবায়ন করি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে। মাঠ পর্যায়ের অফিসাররা যদি দক্ষ এবং সেবক হন তাহলে জনগণ যে সেবাটা পান সেটা কার্যকর হয়। আমরা সরকারের সঙ্গে ডিসিদের যোগাযোগ বাড়ানোর কথা বলেছি।
উপদেষ্টা বলেন, গ্রামাঞ্চলে কৃষি কিন্তু এখন একটি বড় সোর্স। সেটা ঠিক না থাকলে আমরা এত মানুষকে খাওয়াতে পারতাম না। সেদিকে নজর দেওয়ার কথা আমরা বলেছি ডিসিদের।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তি আরও পিছিয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা

চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড় আরও পিছিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আগামী জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব এক সঙ্গে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের সভায় উপস্থাপনে করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয় অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা বলেছি যে, আমাদের কিছু কাজ আছে। আমরা অত তাড়া করছি না। আমি একটা জিনিস বলি, আপনারা তো ভাবছেন ভিক্ষা করে নিয়ে আসি, আসলে অনেক শর্ত মেনে এবং আমাদের নিজস্ব তাগিদে। কিছু শর্ত আছে বললেই আমরা পালন করবো, তা নয়। এখন আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি ভালো। চলতি হিসাব, আর্থিক হিসাব ও প্রবাসী আয় ভালো। আমরা মরিয়া হয়ে উঠছি না।
আগামী মার্চে কি আইএমএফ পর্ষদে প্রস্তাব উঠছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মার্চে না আমরা বলছি একটু অপেক্ষা করবো, আগামী জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম দুই কিস্তির প্রস্তাব এক সঙ্গে উঠবে।
চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব প্রথম দফায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থার নির্বাহী পর্ষদের সভায় উপস্থাপনের কথা থাকলেও প্রথম। দফায় তা পিছিয়ে ১২ মার্চ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে তা আরও পিছিয়ে জুনে নিয়ে যাওয়া হলো। বোর্ড অনুমোদন করলে তার কয়েক দিন পর দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড় হতে পারে।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে প্রতিটি কিস্তি পেতে কিছু শর্ত পরিপালন করতে হচ্ছে। চতুর্থ কিস্তির জন্য গত জুনভিত্তিক দেওয়া বিভিন্ন শর্তের মধ্যে কর সংগ্রহ ছাড়া সব শর্ত পূরণ হয়েছে। চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি দেখতে গত ৩ ডিসেম্বর ঢাকা সফরে আসে আইএমএফের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের বৈঠকে বারবারই কর আহরণ বাড়ানোর বিষয়টি অনেক গুরুত্ব পায় বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, শুধু চতুর্থ কিস্তির জন্য নয়, আগের কিস্তিগুলোতেও কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি।
সূত্র জানায়, আইএমএফ প্রতিনিধি দল কর অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর জন্য চাপ দেয়। একই সঙ্গে কর-জিডিপি অনুপাত বছরে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির সঙ্গে নতুন করে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বাড়ানোর শর্তজুড়ে দেওয়া হয়। সরকার এ শর্ত নিয়ে দরকষাকষি করে। বাড়তি রাজস্ব আহরণের কৌশল হিসেবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নানা মহল থেকে সমালোচনা শুরু হয়। এতে করে প্রায় ১০টি পণ্য ও সেবায় শুল্ক- করা কিছুটা কমানো হয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ৩৫৯২ কোটি টাকা দেবে চীন

সময়ের পরিক্রমায় ব্যস্ততা বেড়েছে মোংলা বন্দরের। আমদানিকারকরা আস্থা রাখায় দিন দিন বাড়ছে কন্টেইনারবাহী জাহাজের আগমন। এতে বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বাড়াতে তিন হাজার ৫৯২ কোটি টাকা ঋণ দেবে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী চীন। এতে বন্দর ব্যবহারকারীদের আধুনিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে। মোংলা বন্দর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
কন্টেইনার এবং মালামালের সুষ্ঠু ও নিরাপদ উত্তোলন-অবতরণ নিশ্চিত করতে ‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় চার হাজার ৬৮ কোটি ২২ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৪৭৫ কোটি ৩২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। বাকি তিন হাজার ৫৯২ কোটি ৮৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা চীন সরকারের জিটুজি ঋণ থেকে আসবে। জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৮ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ও যুগ্মসচিব ড. এ. কে. এম. আনিসুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে। আরও জেটি ও ডাটা সেন্টার হবে। আইসিটি খাত শক্তিশালী হবে। বন্দর পরিচালনায় প্রয়োজনীয় আইসিটি সুবিধাদি যুক্ত হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে। প্রকল্পে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে চীন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অন্যান্য দেশের কাগো হ্যান্ডেলিংয়ের মাধ্যমে বন্দরটির আঞ্চলিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, বর্তমানে মোংলা বন্দরে ৪৭টি জাহাজ একসঙ্গে নোঙ্গর করতে পারে। কিন্তু কোনো কন্টেইনার জেটি নেই। মোংলা বন্দরে বর্তমানে বার্ষিক এক কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন কার্গো এবং এক লাখ টিইইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে। প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে বিবেচনাধীন ছিল এবং চীনের উচ্চ পর্যায়ের তাগিদেই এটি অনুমোদিত হয়েছে। সরকার ঋণনির্ভর প্রকল্প কমাতে চায়, তবে মোংলা বন্দরকে আরও কার্যকর করতে এটি অপরিহার্য। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা থাকায় মোংলা বন্দর নেপাল, ভুটান এবং পশ্চিমবঙ্গের বাণিজ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বেড়েছে

দেশের ভেতরে এবং বাইরে সমানতালে বেড়েছে বাংলাদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশের অভ্যন্তরে গত ডিসেম্বরে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ এবং বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি খরচ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাজনৈতিক নেতাদের বড় অংশই হয়তো এসব দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। আর এ কারণেই তারা সবচেয়ে বেশি খরচ করছেন ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে। যদিও আগস্টে সরকার পতনের পর কয়েক মাসে এই হার কমে গিয়েছিল।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন অফার দিয়ে থাকে। এ কারণে প্রতি বছরের ডিসেম্বরেই কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বাড়ে। আবার বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ডিসেম্বরে বন্ধ থাকে। এতে অনেকেই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বিদেশে ঘুরতে যান।
বর্তমানে ডলারের প্রবাহ স্বাভাবিক হওয়ায় লেনদেনের সীমা বেড়েছে। এসব কারণে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বেড়েছে। একজন গ্রাহক চাইলে এখন ১২ হাজার ডলার পর্যন্ত এন্ডোর্স করতে পারছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, ডিসেম্বরে দেশের অভ্যন্তরে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছেন ৩ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। নভেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। সেই হিসেবে নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে দেশের ভেতরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেড়েছে ৪২২ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডধারীরা বিদেশে খরচ করেছেন ৪৯১ কোটি টাকা। যা নভেম্বরে ছিল ৪৩১ কোটি টাকা। সেই হিসেবে নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে বাংলাদেশিদের বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেড়েছে ৬০ কোটি টাকা বা ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
ডিসেম্বরে বিদেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে ডিসেম্বরে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে খরচ করা হয়েছে ৭৪ কোটি টাকা। নভেম্বর মাসে দেশটিতে খরচের পরিমাণ ছিল ৬৮ কোটি টাকা। সেই হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ।
ক্রেডিট কার্ডে মোট খরচের ১৫ দশমিক ১২ শতাংশই হয়েছে আমেরিকায়। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিরা খরচ করেছেন ৬৪ কোটি টাকা। এটি মোট খরচের ১৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশিরা খরচ করেছেন ৪১ কোটি টাকা। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। দেশটিতে বাংলাদেশিরা খরচ করেছেন ৪০ কোটি টাকা। যা নভেম্বরে ছিল ৪৭ কোটি টাকা।
একই সময়ে ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই ভারতে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমতে থাকে।
বাংলাদেশিরা সাধারণত দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেন ভারতে। গত জুলাই মাসে তার ব্যতিক্রম দেখা গেছে। ছাত্র জনতার আন্দোলনের কারণে জুলাইয়ে দেশটি ভিসা কার্যক্রম সীমিত করে। এতে জুলাইয়ে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা বা ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশিরা ভারত যেতে পারেননি। এসব কারণেই দেশটিতে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের খরচ কমেছে।
বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ হয় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। ডিসেম্বরে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে খরচের পরিমাণ ছিল ১৫৩ কোটি টাকা। বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার ছিল রিটেইল আউটলেট সার্ভিসে। ডিসেম্বরে এই খাতে বাংলাদেশিরা খরচ করেছেন ৮২ কোটি টাকা।
গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশেও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার অনেক বেশি বেড়েছে। এসময় তারা বাংলাদেশে ব্যয় করেছেন ২৪০ কোটি টাকা। নভেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ২০২ কোটি টাকা। সেই হিসেবে এক মাসে তাদের খরচ বেড়েছে ৩৮ কোটি টাকা বা ১৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। দেশটির নাগরিকরা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছেন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। যার পরিমাণ প্রায় ৯৩ কোটি টাকা।