আন্তর্জাতিক
খালার আমলে মানুষ গুম করা হয়েছিল, এরপরও টিউলিপকে কেন মন্ত্রী করলেন স্টারমার

মীর আহমেদ বিন কাসেমকে যখন রাতে সশস্ত্র ব্যক্তিরা বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যান, তখন সেখানে তাঁর ৪ বছর বয়সী কন্যাও ছিল। কিন্তু সে এত ছোট ছিল যে, বুঝতেই পারেনি কী ঘটতে চলেছে।
‘তাঁরা আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল, আমি ছিলাম খালি পায়ে’, বলছিলেন আহমেদ বিন কাসেম। তিনি আরও বলেন, ‘ছোট মেয়েটা আমার জুতা হাতে নিয়ে পিছু পিছু দৌড়ে আসছিল। বলছিল, “নাও, বাবা।” মনে হয়, সে ভাবছিল, আমি বাইরে যাচ্ছি।’
মীর আহমেদকে আট বছর বিনা বিচারে আটকে রাখা হয়েছিল। তাঁর হাত ও চোখ থাকত বাঁধা। তিনি আজও জানেন না, কোথায় ছিলেন, কেনই–বা তাঁকে ধরে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল।
যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষিত এই ব্যারিস্টার (৪০) বাংলাদেশে ‘গুম’ হওয়া মানুষের একজন। শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম হওয়া এই ব্যক্তি ছিলেন তাঁর সমালোচক। গত আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগপর্যন্ত ২০ বছরের বেশি সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
১৯৭১–এর মুক্তিযুদ্ধের পর হাসিনার আমলেই সবচেয়ে বেশি সহিংসতা দেখেছে বাংলাদেশ। সহিংসতায় নিহত হয়েছেন শত শত মানুষ। তাঁর ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার শেষ দিনটিতেও অন্তত ৯০ জন নিহত হন।
বিতর্ককে সঙ্গী করা হাসিনা যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির আইনপ্রণেতা (এমপি) টিউলিপ সিদ্দিকের খালাও। নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ ওঠার পর গত সপ্তাহে টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের দুর্নীতি প্রতিরোধবিষয়ক মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি (টিউলিপ)।
অভিযোগগুলোর একটি হলো বাংলাদেশের অবকাঠামোগত ব্যয় থেকে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন (৩৯০ কোটি) পাউন্ড পর্যন্ত আত্মসাৎ করেছে টিউলিপের পরিবার। এ ছাড়া লন্ডনে তিনি তাঁর খালার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সম্পত্তি ব্যবহার করেছেন।
কিয়ার স্টারমার সরকারের তদন্তে মন্ত্রিত্বের আচরণগত নীতিমালা টিউলিপ ভাঙেননি বলে দেখা গেছে। তবে যেকোনোভাবেই হোক পদত্যাগ করেছেন তিনি।
যদিও বিষয়টির এখানেই শেষ হয়ে যাওয়া আবশ্যকীয় নয়।
কিয়ার স্টারমারের জন্য প্রশ্ন
এ ঘটনা কিয়ার স্টারমারের বিবেচনাবোধ ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের ভোট আকর্ষণে লেবার পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যন্ত্রণাদায়ক নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্নগুলোর একটি, কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া খালার সঙ্গে টিউলিপের যে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, সে বিষয়ে অনেক আগে থেকে জানার পরও লেবার পার্টি এখনকার ঘটনা আঁচ করতে পারল না কেন। কেননা, হাসিনার আমলে সেই ২০১৬ সালেই বিন কাসেমের ঘটনা প্রথম প্রকাশ্যে এসেছিল।
অনেক বছর আগেই এ নিয়ে (টিউলিপের ব্যাপারে) লেবার পার্টির কারও না কারও উদ্বেগ প্রকাশ করা উচিত ছিল। টিউলিপকে নিয়ে প্রথম অনাবিষ্কৃত উদ্বেগের ক্ষেত্র ছিল, বাংলাদেশে জোর করে গুমের ঘটনায় তাঁর সাড়া দেওয়ার ব্যর্থতার বিষয়টি। এরপরের ক্ষেত্রটি ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি।
—ডেভিড বার্গম্যান, অনুসন্ধানী সাংবাদিক
বিন কাসেম ও অন্য বাংলাদেশিদের ‘গুম’ হওয়ার ঘটনা মানবাধিকার বিষয়ে ওই সময় থেকে টিউলিপের সোচ্চার হওয়া নিয়ে একটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবনারও জন্ম দিয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, নিজ নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা নাজানিন জাঘারি–র্যাটক্লিফকে ইরান থেকে মুক্ত করার জন্য দীর্ঘ প্রচার চালিয়েছেন টিউলিপ। বিপরীতে বাংলাদেশে তাঁর খালার শাসনামলে লোকজনের দুঃখ–দুর্দশা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে জনসমক্ষে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে টিউলিপের নির্লিপ্ততা ছিল উল্লেখ করার মতো।
অতীতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর খালার বৈঠকে টিউলিপকে পাশে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হয়ে বিবিসি টেলিভিশনেও হাজির হয়েছেন তিনি। ১৯৮১ সাল থেকে দলটির নেতৃত্বে দিয়ে আসছেন হাসিনা।
যুক্তরাজ্যে লেবার দল থেকে ২০১৫ সালে এমপি নির্বাচিত হতে সহায়তা করায় আওয়ামী লীগের সদস্যদের ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন টিউলিপ। দলটির সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তিনি ২০০৮ ও ২০০৯ সালে তাঁর ওয়েবসাইটে দুই পৃষ্ঠাজুড়ে বর্ণনা দেন। পরে তা মুছে ফেলা হয়।
যদিও একসময় পার্লামেন্টে টিউলিপ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব খাটানোর কোনো সক্ষমতা বা আকাঙ্ক্ষা’ তাঁর নেই।
সব মিলিয়ে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে টিউলিপের সংশ্লিষ্টতা গোপন ছিল না। তবে সম্ভবত লেবার পার্টি এ সংশ্লিষ্টতাকে খারাপ হিসেবে দেখেনি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে দলটির দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষণ খুব কমই দেখা গেছে।
তৎকালীন লেবার পার্টির এমপি জিম ফিজপ্যাট্রিক ২০১২ সালে কমন্স সভায় বলেছিলেন, তারা ‘সহযোগী সংগঠন’। একই রকম ধারণা পোষণ করতেন তাঁর অনেক সহকর্মীও।
২০১৫ সালে স্টারমারও টিউলিপের পাশের আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন। একাধিকবার হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি।
হাসিনার সঙ্গে স্টারমারের এমন এক সাক্ষাৎ ঘটেছিল ২০২২ সালে। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ওই সময় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিতে লন্ডনে ছিলেন। ওই বৈঠককে ‘হৃদয়বিদারক ও মর্মন্তুদ’ বলে আখ্যায়িত করেন বিন কাসেম।
তবে স্টারমারের একজন সহযোগী যুক্তি দিয়ে বলেন, হাসিনার সঙ্গে স্টারমারের ওই সাক্ষাৎ করা ছিল ‘খুবই যৌক্তিক’। বৈঠকটি হাসিনার নীতির প্রতি তাঁর সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ ছিল না।
বাংলাদেশকে বছরের পর বছর লেবার পার্টির পাশে রাখার দৃশ্যত এমন চেষ্টা ছিল যুক্তরাজ্য, বিশেষ করে রাজধানী লন্ডনের অংশবিশেষের রাজনৈতিক বাস্তবতারই হয়তো প্রতিফলন।
লেবার পার্টির একজন বিশিষ্ট নেতা বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন, ‘বাংলাদেশি ভোট না বুঝে পূর্ব লন্ডনে আপনি সফল হতে পারবেন না।’ অবশ্য তিনি বলেন, ‘আপনার কথা ও কাজের মধ্যে সতর্কভাবে ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত। আপনি যদি একটি দলের (বাংলাদেশি) ব্যাপারে অতিরিক্ত খোলামেলাভাব দেখান, তবে আপনার সমালোচনা হবেই।’
দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের (এফটি) এক বিশ্লেষণে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যুক্তরাজ্যের অন্তত ১৭টি আসনে ভোটার হওয়ার উপযুক্ত বয়সী বাংলাদেশিদের মধ্যে লেবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা বেশি।
স্টারমারের হলবর্ন ও সেন্ট প্যানক্রাস আসনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা অন্তত ৬ হাজার।
সম্ভাব্য অনাবিষ্কৃত উদ্বেগের ক্ষেত্র
গত জুলাইয়ে নির্বাচনে জেতার অল্প পরই স্টারমার যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে টিউলিপকে নিয়োগ দেন। ওই সময় আওয়ামী লীগের প্রতি লেবার পার্টির সহানুভূতি ও লন্ডনের রাজনৈতিক বাস্তবতাই কি দুর্নীতি নিয়ে সম্ভাব্য ঝড়ের ব্যাপারে স্টারমারের বিচারবোধ ম্লান করে দিয়েছিল? উঠেছে এমন প্রশ্ন।
একটি লেবার সূত্র বলেছে, ‘নিজের বন্ধুবান্ধব ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের প্রতি স্টারমারের অন্ধভক্তি রয়েছে। এটা নতুন কিছু নয়।’
অনুসন্ধানী সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে টিউলিপের এক দশকের সংশ্লিষ্টতার ওপর আলোচনা করেছেন। এ ক্ষেত্রেও তিনি ‘পটভূমিই সবকিছু’ বলে ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ‘লেবার পার্টির ক্ষমতায় আসা ও টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রী হওয়া এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে এটি (টিউলিপকে নিয়ে হইচই, তাঁর সম্ভাব্য পদত্যাগ ও সরকারের ঝামেলায় পড়া) কোনো বড় গল্প ছিল না।’
বার্গম্যানের যুক্তি, অনেক বছর আগেই এ নিয়ে (টিউলিপের ব্যাপারে) লেবার পার্টির কারও না কারও উদ্বেগ প্রকাশ করা উচিত ছিল। টিউলিপকে নিয়ে প্রথম অনাবিষ্কৃত উদ্বেগের ক্ষেত্র ছিল, বাংলাদেশে জোর করে গুমের ঘটনায় তাঁর সাড়া দেওয়ার ব্যর্থতার বিষয়টি। এরপরের ক্ষেত্রটি ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি।’
এ বিষয়ে লেবার পার্টির এমপিদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ব্রিটিশ গণমাধ্যমের পাশাপাশি লেবার পার্টির মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে জানার ঘাটতি আছে। যুক্তরাজ্যে প্রায় ৬ লাখ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ রয়েছেন। তাঁদের কথায়, এটি বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ। অথচ ৫ আগস্টের পর এখানকার গণমাধ্যমের কাছ থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা কোনো খবর শুনিনি।
হাসিনার বিরুদ্ধে আরও কিছুদিন দুর্নীতির তদন্ত চলতে পারে। ফলে টিউলিপ লেবার পার্টির এমপি থাকতে পারবেন কি না, সামনের মাসগুলোয় সেটিও স্টারমারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের জন্য সম্ভাব্য আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারে।
হাসিনা সরকারের পতনের পর আহমেদ বিন কাসেমকে হঠাৎই তাঁর কক্ষ থেকে জাগিয়ে তোলা হয়। পরে একটি গাড়িতে উঠিয়ে খাদে ফেলে দেওয়া হয়। অবশেষে তিনি বাড়িতে তাঁর দুই মেয়ের কাছে ফিরতে পেরেছেন।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালে বিন কাসেম যখন সন্তানদের দেখেছিলেন, তখন বয়সে তারা ছিল শিশু। এখন তারা কিশোরী। অশ্রুসিক্ত এই বাবা বলেন, ‘আসলেই আমি ওদের চিনতে পারিনি, আর তারাও আমাকে চিনতে পারেনি।’
মীর আহমেদ বিন কাসেম বলেন, ‘কখনো কখনো এটা মেনে নেওয়া কঠিন, আমার মেয়েরা কীভাবে বেড়ে উঠল, সেটি আমি কখনো দেখিনি। আমি জীবনের সেরা সময়টা হারিয়েছি। আমি তাদের শৈশবকে হারিয়েছি।’

আন্তর্জাতিক
টেক্সাসে হঠাৎ বন্যায় ১৩ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ বহু শিশু

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের কের কাউন্টিতে ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় এখনো বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন। শনিবার (৫ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিখোঁজদের মধ্যে প্রায় ২০ জন শিশু রয়েছে, যারা একটি সামার ক্যাম্পে অংশ নিয়েছিল।
টেক্সাসের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর ড্যান প্যাট্রিক বলেন, “এর অর্থ এই নয় যে নিখোঁজ শিশুরা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তারা হয়তো শুধু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।”
স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, হঠাৎ করে গুয়াদালুপে নদীর পানি ২৬ ফুট (প্রায় ৮ মিটার) বেড়ে যায়, যা মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যেই ঘটে। এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয় এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
কাফি
আন্তর্জাতিক
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে ইউক্রেন বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি: ট্রাম্প

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাম্প্রতিক টেলিফোন আলাপ হতাশাজনক ছিল বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পুতিন ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ বন্ধে আন্তরিক নন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) পুতিনের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপের পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কথোপকথনে আমি অত্যন্ত হতাশ হয়েছি, কারণ আমি মনে করি না তিনি যুদ্ধ থামাতে চাইছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। আমি কোনো অগ্রগতি করতে পারিনি তার সঙ্গে।
শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলাপের পরিকল্পনার কথাও জানান ট্রাম্প।
আলোচনার কিছুক্ষণের মধ্যেই কিয়েভের এক আবাসিক ভবনে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় আগুন লাগে এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণ ও ভারী গুলি বিনিময়ের খবর পাওয়া যায়।
এর পাশাপাশি পূর্ব ইউক্রেনে রুশ গোলাবর্ষণে পাঁচজন নিহত হন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, আমরা সম্পূর্ণভাবে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করিনি। কিন্তু বাইডেন এত বেশি অস্ত্র পাঠিয়েছে যে এতে আমাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে গেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাইডেন প্রশাসন ‘দেশের অস্ত্রাগার খালি করে ফেলেছে’ ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে গিয়ে।
যুক্তরাষ্ট্র কিছু গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করেছে। ফলে ইউক্রেন রুশ গ্রীষ্মকালীন হামলার মুখে পড়েছে এবং বেসামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা বেড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে ইউক্রেন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বর্তমান অবস্থান নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, ইউক্রেনের জন্য একটি প্যাট্রিয়ট মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহে সহায়তা করতে চান।
এদিকে ইউক্রেন কিয়েভে নিযুক্ত মার্কিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে ডেকে জানিয়েছে অস্ত্র সহায়তা অত্যন্ত জরুরি এবং এর কোনো ধরনের বিরতি তাদের আত্মরক্ষার সক্ষমতাকে দুর্বল করবে।
আন্তর্জাতিক
প্রথম দেশ হিসেবে তালেবানকে স্বীকৃতি দিলো রাশিয়া

প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়া আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এই সিদ্ধান্তকে ‘সাহসী’ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বৃহস্পতিবার কাবুলে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি ঝিরনভের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে মুত্তাকি রাশিয়ার এই স্বীকৃতিকে ‘ইতিবাচক সম্পর্ক ও পারস্পরিক সম্মানের নতুন অধ্যায়’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এটিকে অন্য দেশগুলোর জন্য ‘উদাহরণ’ বলে দাবি করেন।
তালেবানরা ২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বিনিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে আসছে, যদিও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বাড়ছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তানের সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, শক্তি, কৃষি, পরিবহন ও অবকাঠামো খাতে সহযোগিতা আরও দৃঢ় হবে। এ ছাড়া, রাশিয়া আফগানিস্তানকে সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী লড়াইয়ে সাহায্য অব্যাহত রাখবে।
তালেবানের ক্ষমতায় আসার পরও রাশিয়া আফগানিস্তানে তাদের দূতাবাস খোলা রেখেছিল। ২০২২ সালে রাশিয়া প্রথম দেশ হিসেবে তালেবানের সঙ্গে তেল, গ্যাস ও গম সরবরাহ চুক্তি করে।
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে রাশিয়া তালেবানকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের সঙ্গে পূর্ণ অংশীদারত্বের পথ তৈরি করে। গত বছর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তালিবানকে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে মিত্র হিসেবে উল্লেখ করেন।
তালিবানের শাসনকালে নারীদের ওপর কড়াকড়ি বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘের মতে, তালিবানের কঠোর বিধিনিষেধ ‘লিঙ্গ বৈষম্য’ এবং ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’।
২০২১ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আফগানিস্তানের বিপক্ষে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বর্তমানে চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান ও পাকিস্তান কাবুলে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিলেও রাশিয়া একমাত্র দেশ যা তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক
আবুধাবিতে ৮০ কোটি টাকা লটারি জিতলেন বাংলাদেশি যুবক

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত বিগ টিকিট র্যাফেল ড্রতে ২৫ মিলিয়ন দিরহাম জিতেছেন এক প্রবাসী বাংলাদেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৮০ কোটি টাকা। জনপ্রিয় এই র্যাফেল ড্রয়ের ভাগ্যবান বিজয়ী নাম মোহাম্মদ নাসের মোহাম্মদ বেলাল। খবর গালফ নিউজের।
র্যাফেল ড্রর পর শো’র উপস্থাপক রিচার্ড ও বুশরা ওই প্রবাসীকে কল করেন। তবে তারা বিজয়ীর সঙ্গে কথা বলতে পারেননি।
আয়োজকরা জানান, গত ২৪ জুন ০৬১০০৮০ নম্বরের টিকিট কিনে এ পুরস্কার জিতেছেন বেলাল।
র্যাফেল ড্রয়ের আয়োজক বিগ টিকিট কর্তৃপক্ষ বেলালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে।
এর আগে, গত মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাগরিক মোবারক গারিব রাশিক সালেম আল ধাহেরি ২৭৫ সিরিজের ড্রতে ২০ মিলিয়ন দিরহামের গ্র্যান্ড প্রাইজ জিতেছিলেন। অন্যদিকে, সাপ্তাহিক ই-ড্রতে ১ লাখ ৫০ হাজার দিরহাম বিজয়ীদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ চৌধুরী নামের এক প্রবাসী বাংলাদেশি।
আন্তর্জাতিক
শুল্ক চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বৈঠক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে দুই দেশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন দেশটির শীর্ষ বাণিজ্য কর্মকর্তা।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে মার্কিন কোম্পানি বোয়িং থেকে বিমান কেনা এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, তুলা ও তেল আমদানি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ঢাকা।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বুধবার এএফপিকে বলেন, আমরা পারস্পরিক বাণিজ্য চুক্তির একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছি। সরকার উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আশাবাদী, বলেও মনে করছেন তিনি।
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিযুক্ত প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা বলেন, বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন সময় সকালে সাড়ে ১১টায় এবং বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে নয়টায় শুল্ক কমানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ও ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর)-এর মধ্যে বৈঠক ছিল। বেশ কিছুদিন ধরে নিয়মিত এধরনের বৈঠক হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ২০ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশই টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প থেকে আসে, এবং এই খাতটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে, বিশেষ করে গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে সরকারের পতনের পর।
ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা কটন বা তুলাজাত পণ্যের ওপর আগে থেকেই থাকা ১৬ শতাংশের দ্বিগুণেরও বেশি। তবে তিনি শুল্ক কার্যকর করার সময় ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রেখেছেন, যেমনটি তিনি অন্যান্য বৈশ্বিক বাণিজ্য অংশীদারদের ক্ষেত্রেও করেছেন, যদিও একটি প্রাথমিক ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৮.৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যেখানে সেখান থেকে আমদানি হয়েছে ২.২১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণে গম, ১৪টি বোয়িং বিমান, তুলা এবং আরও তেল ও গ্যাস কেনার পরিকল্পনা করেছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব।
তিনি প্রস্তাবিত চুক্তিগুলোর সুনির্দিষ্ট সময় বা পরিমাণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাননি। তবে বলেছেন, একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সরকার এখন পর্যন্ত প্রায় ২৮টি বৈঠক ও দলিল আদান-প্রদান করেছে।