অন্যান্য
সুইজারল্যান্ডের পথে প্রধান উপদেষ্টা

ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সম্মেলনে যোগ দিতে চার দিনের সফরে সুইজারল্যান্ডের পথে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার (২০ জানুয়ারি) দিনগত রাত ১ টায় একটি ফ্লাইটে তিনি রওয়ানা হন।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা সুইজারল্যান্ডের জুরিখে পৌঁছাবেন।
চার দিনের সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা চারটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার স্টাব, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা।
এছাড়া এবারই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ বিষয়ে পৃথক ডায়লগের আয়োজন থাকবে। বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী নেতাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এ সফর সহায়ক হবে বলে মনে করছে সরকার।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অন্যান্য
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

সারাদেশে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল থেকে সবখানে উৎসবমুখর পরিবেশ। সকাল ৯টায় শুরু হয় বর্ষবরণ ও আনন্দ শোভাযাত্রা। বর্ষবরণ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ক্রীড়া উপদেষ্টা শুভ নববর্ষ লিখে একটি পোস্ট করেছেন। তিনি অবশ্য নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার দিয়েছে ফিফার জানানো শুভেচ্ছা বার্তাটি। বর্ষবরণে বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা জানানো ফিফাকে ধন্যবাদ দেন আসিফ।
ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে বাংলাদশের ফুটবল ভক্তদের আনন্দের মাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে ফিফা। নববর্ষের মূল আকর্ষণ শোভাযাত্রা। ব্যানার, ফেস্টুনে বাঙালি সাজে আনন্দ সাজ। ফিফাও সেভাবেই বরণ করেছে বাংলা ১৪৩২ সালকে।
ফিফার ছবিতে দেখা যায়, শুভ নববর্ষ ১৪৩২, এসো হে বৈশাখ, এসো এসো লেখা ব্যানার। মিছিলের পেছনে ফেস্টুন। আর ব্যানারের সামনে দাঁড়ানো দেশের ফুটবলের তারকারা। হামজা চৌধুরী, জামাল ভূঁইয়া, তারিক কাজীদের সঙ্গে আছেন আরও দুই ফুটবলার। সঙ্গে লাল-সবুজের পতাকা। ক্যাপশনে লিখেছে, ‘আইলো আইলো আইলো রে, রঙ্গে ভরা বৈশাখ আবার আইলো রে।’
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
তাজিকিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্প

মধ্য এশিয়ার দেশ তাজিকিস্তানে ৬ দশমিক ৪ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ইউরোপীয় ভূমধ্যসাগরীয় সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) জানিয়েছে, রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে দেশটিতে এই ভূমিকম্প হয়েছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল মাত্র ১৬ কিলোমিটার।
এছাড়া রবিবার সকালে মিয়ানমারের মেইকটিলা শহরের কাছে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এই ভূমিকম্পে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগে শনিবার (১২ এপ্রিল) মিয়ানমারের রাজধানী ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিতে মাঝারি মানের একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখাওয়াতেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
ভৌগলিকভাবে ভারতীয় ও ইউরাশীয় টেকটোনিক প্লেটের একটি সংযোগস্থলে পাকিস্তানের অবস্থান। তাই এ দুই টেকটোনিক প্লেটের কোনোটি অবস্থান পরিবর্তন করলেই ভূমিকম্প হয় দেশটিতে।
এর আগে ২০১৫ সালে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৪০০ মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
পাঁচ বাংলাদেশিসহ ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করল যুক্তরাষ্ট্র

ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে মিছিল করার অপরাধে পাঁচ বাংলাদেশিসহ চার শতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীর ‘স্টুডেন্ট ভিসা’ বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব শিক্ষার্থী গত ২ বছর ফিলিস্তিনে ইসরাইলিদের বর্বর হামলা ও হত্যাযজ্ঞবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট (পররাষ্ট্র মন্ত্রী) মার্ক রুবিও এ তথ্য প্রকাশ করেছেন।
মার্ক রুবি বলেন, ভিসা বাতিলকৃত বিদেশি শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলন করতে গিয়ে সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিল। প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের চিহ্নিত করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। এমন কি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হবার পরও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভ করার অপরাধে চাকরি পাবার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। গত ৭ দিনে চার শতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল হওয়াদের মধ্যে মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশি পাঁচ জন শিক্ষার্থী। তাদের ২ জনের বাড়ি সিলেট জেলায়, ২ জন ঢাকা ও ১ জন বগুড়া জেলার। এ তথ্য ছড়িয়ে পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর ফিলিস্তিনে ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত মিছিলে শতশত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে লেখাপড়া করছেন।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বখ্যাত হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন ছাত্র ও ২ জন সদ্য গ্রাজুয়েটের ভিসা বাতিল করেছে। তাদের গ্রেপ্তার করে ডিপোর্টেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ৪ জনের ভিসা শনিবার (৫ এপ্রিল) বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেবার আগে সরকার বিষয়টি আমাদের নজরেই আনেনি। একইভাবে ইউনিভার্সিটি অব অ্যাক্রন এর ২ জন ছাত্রের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। গেল সপ্তাহে ডিপার্টমেন্ট হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মিনেসোটার স্টেট ইউনিভার্সিটির ৫ জন শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে। তাদের আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সেল্ফ ডিপোর্ট হবার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ জন শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে। অনেককে গ্রেপ্তার করে ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলো গণহারে বিদেশি ছাত্রদের ভিসা বাতিল করে তাদের ভবিষ্যৎ জীবন অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছেন, ফিলিস্তিনের পক্ষে মিছিল করার অপরাধে এ ধরনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পরিপন্থি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
ফের শুরু হলো রাজরাজেশ্বর প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট

চাঁদপুর জেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের চোকদার কান্দি মাঠ সংলগ্ন এলাকায় জমকালো আয়োজনে শুরু হলো রাজরাজেশ্বর প্রিমিয়ার লিগ (আরপিএল) ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ২০২৫– সিজন ২।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডা. ইসা রুহুল্লাহ। এছাড়াও ১৪নং রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম চোকদার, ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সুফিয়ান পাটওয়ারী, ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের মাল, ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার সরদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আঃ হাকিম আলী পাটওয়ারী, শ্রমিক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আলী হোসেন ঢালী, ক্রীড়াপ্রেমী ব্যক্তিত্ব ও ফার্মেসি ব্যবসায়ী ডা. লিটন মোল্লা, ৭নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মো. আলী সরকার, ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য হানিফ এবং ক্রীড়াপ্রেমী ব্যক্তিত্ব সজীব উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল সবুজ বাংলা স্পোর্টিং ক্লাব ও ভাই ভাই সুপার কিংস। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ১২ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে সবুজ বাংলা স্পোর্টিং ক্লাব সংগ্রহ করে ১২৪ রান। ফলে ভাই ভাই সুপার কিংসকে জয়ের জন্য ১২৫ রানের টার্গেট দেওয়া হয়।
এদিকে, জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভাই ভাই সুপার কিংস ৪ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে জয়লাভ করে। দলের অধিনায়ক শাহিন অসাধারণ পারফরম্যান্স করে ম্যাচসেরা (ম্যান অব দ্য ম্যাচ) নির্বাচিত হন।
উল্লেখ্য, রাজরাজেশ্বর প্রিমিয়ার লিগের এই আসর প্রতি বছর আয়োজন করা হয়, যেখানে স্থানীয় তরুণ ক্রিকেটারদের প্রতিভা তুলে ধরার সুযোগ সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় সিজনের প্রথম দিন থেকেই দর্শকদের ব্যাপক সাড়া লক্ষ্য করা গেছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
আগে দেশের গণতন্ত্র সংস্কার করুন

গণতন্ত্রের মূল দর্শন হচ্ছে জনগণের ক্ষমতায়ন, বাকস্বাধীনতা, আইনের শাসন, স্বচ্ছ নির্বাচন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। কিন্তু বাংলাদেশে এই মৌলিক নীতিগুলোর কোনো বাস্তব প্রয়োগ নেই। গণতন্ত্রের নামে এখানে দলীয় স্বৈরতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র এবং দুর্নীতিবাজ শাসনের এক অপ্রতিরোধ্য দৃষ্টান্ত গড়ে উঠেছে। ফলে, জনগণের ভোটাধিকার কার্যত একটি নাটকে পরিণত হয়েছে, যেখানে নির্বাচনের ফল টাকার বিনিময়ে, ক্ষমতার দম্ভে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্ধারিত হয়।
এটি কেবল বাংলাদেশে নয়, বরং অধিকাংশ দরিদ্র দেশে গণতন্ত্রের নামে যে শাসনব্যবস্থা চলছে, তা মূলত ক্ষমতালিপ্সু গোষ্ঠীর শোষণের হাতিয়ার। প্রশ্ন ওঠে—গণতন্ত্র কি আদৌ দরিদ্র দেশের জন্য কার্যকর? আর যদি কার্যকর করতে হয়, তাহলে কোন কোন দিক সংস্কার করতে হবে?
গণতন্ত্রের প্রকৃত রূপ বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে দেখা যায়, যেখানে জনগণের অধিকার সুরক্ষিত, ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়, এবং রাজনৈতিক নেতারা জনসেবার জন্য কাজ করেন। অথচ বাংলাদেশসহ অনেক দরিদ্র দেশে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গেছে। এখানে বাকস্বাধীনতা মানে দলীয় আনুগত্য। বিরোধী মত প্রকাশ করা মানে রাষ্ট্রদ্রোহী বা ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত হওয়া। সত্য বলা মানে মামলা, গুম, বা নির্যাতনের শিকার হওয়া। সংবাদমাধ্যম দলের নিয়ন্ত্রণে, ফলে জনগণ কখনোই প্রকৃত সত্য জানতে পারে না।
দলীয় গডফাদারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তদাতা। যে দল ক্ষমতায় থাকবে, তাদের নির্দেশই চূড়ান্ত। প্রশাসন, পুলিশ, বিচারব্যবস্থা—সব দলীয় স্বার্থে ব্যবহৃত হয়। বিচারব্যবস্থা দলীয় হস্তক্ষেপে দুর্বল হয়ে পড়েছে, ফলে অপরাধীদের বিচার হয় না। একনায়কতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্রের ছায়ায় গণতন্ত্রের নামে ব্যক্তি বা পরিবারের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন কেবলমাত্র ক্ষমতা ধরে রাখার নাটক, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো সুযোগ নেই। জনগণের ভোটাধিকার একটি রীতিগত আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। দুর্নীতিই রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। করের টাকায় চলে লুটপাট ও ক্ষমতাসীনদের সম্পদ বৃদ্ধি। প্রশাসন থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী—সবাই দুর্নীতিতে জড়িত। ক্ষমতাসীনদের স্বার্থ রক্ষা করাই রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গণতন্ত্রের শর্ত হলো শিক্ষিত জনগণ, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা। কিন্তু দরিদ্র দেশে এই শর্তগুলো অনুপস্থিত থাকার কারণে গণতন্ত্র কার্যত ক্ষমতাশালীদের জন্য একটি সুবিধাজনক শাসনব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে।
গণতন্ত্রের ব্যর্থতা দরিদ্র দেশে এর বাস্তব চিত্র স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। ভোটাধিকার বিক্রি হয়। দরিদ্র জনগণ অর্থ বা সামান্য সুবিধার বিনিময়ে ভোট দেয়। রাজনৈতিক দলগুলো চাল, টাকা, কিংবা প্রতিশ্রুতির ফাঁদে ভোট কিনে নেয়। ভোটকেন্দ্র দখল, ভুয়া ভোট এবং কারচুপি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেতাদের জবাবদিহিতা নেই। নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে না। জনগণের দারিদ্র্য ও অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বারবার ক্ষমতায় ফিরে আসে। নমিনেশন বাণিজ্য ও টাকার খেলা, নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়ন কেনাবেচা হয়। ক্ষমতাবান ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিরাই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। রাজনীতি মানে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি। রাজনৈতিক নেতারা সন্ত্রাসী বাহিনী পুষে রাখে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাঁদাবাজি, হামলা, ও হত্যা করা হয়।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে কেবল ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন মৌলিক কাঠামোগত সংস্কার। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করতে হবে। ইলেকট্রনিক ভোটিং ও ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ চালু করতে হবে। সুশিক্ষিত জনগণ ছাড়া কার্যকর গণতন্ত্র সম্ভব নয়, শিক্ষার মাধ্যমে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থাকে দলীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য কঠোর আইন ও বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে।
দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় তহবিলে ফিরিয়ে আনতে হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান গণতন্ত্র আসলে ক্ষমতাবানদের শাসন টিকিয়ে রাখার একটি পদ্ধতি। এটি জনগণের কল্যাণ নয়, বরং রাজনৈতিক মাফিয়াদের স্বার্থ রক্ষা করে। গণতন্ত্র যদি সত্যিকার অর্থে কার্যকর করতে হয়, তাহলে প্রথমেই নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে, শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থাকে স্বাধীন করতে হবে, এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে। অন্যথায়, আমরা যতই গণতন্ত্রের বুলি আওড়াই না কেন, বাস্তবতা হবে একই—একটি ফাঁপা কাঠামো, যেখানে জনগণ শোষিত হবে, আর শাসকগোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। সুতরাং, গণতন্ত্রের নামে যদি দুর্নীতির রাজত্বই কায়েম থাকে, তবে সেটি গণতন্ত্র নয়, বরং জনগণের দাসত্বেরই আরেকটি রূপ।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র বর্তমানে একচ্ছত্র ক্ষমতার খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। এখানে গণতন্ত্র মানে জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা ন্যায়বিচার নয়, বরং রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার একটি কৌশল। ভোটাধিকার থাকলেও তা কার্যত অর্থ, ভয়ভীতি এবং প্রতারণার জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক নেতারা জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা অনুভব করেন না, বরং নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিচারব্যবস্থাকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে। এর ফলে, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে বাংলাদেশে পরিবারতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র এবং দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছে।
রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের দৌরাত্ম্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, একই পরিবারের সদস্যরা বছরের পর বছর ধরে দলীয় পদ, সরকারি সুযোগ-সুবিধা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। ভোটের মাধ্যমে জনগণ নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারে না, কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নেই। দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত; নতুন নেতৃত্ব গড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব। যারা দেশপ্রেম এবং জনসেবার মানসিকতা নিয়ে রাজনীতিতে আসতে চায়, তারা দলীয় বলয়ের বাইরে ছিটকে পড়ে। অন্যদিকে, যারা দুর্নীতি, চাঁদাবাজি এবং ক্ষমতার দম্ভ দেখাতে সক্ষম, তারাই দলে জায়গা পায় এবং দ্রুত শীর্ষে উঠে আসে।
রাজনৈতিক দুর্নীতির আরেকটি ভয়াবহ দিক হলো নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিকৃত হয়ে যাওয়া। দরিদ্র জনগণের ভোটাধিকার থাকলেও তা কার্যত মূল্যহীন হয়ে পড়েছে, কারণ ভোট কেনাবেচা এখন ওপেন সিক্রেট। রাজনৈতিক দলগুলো চাল, টাকা, বা প্রতিশ্রুতির লোভ দেখিয়ে ভোট সংগ্রহ করে, আর জনগণ নিরুপায় হয়ে সেই ফাঁদে পা দেয়। ভোটকেন্দ্র দখল, ভুয়া ভোট প্রদান এবং নির্বাচনী কারচুপি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, গণতন্ত্রের নামে চলে ক্ষমতার বৈধতা অর্জনের প্রহসন, যেখানে জনগণের মতামতের কোনো বাস্তব মূল্য নেই।
এর চেয়েও ভয়ংকর বিষয় হলো, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। বিরোধী মত দমন করতে বিচারব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়, যাতে ক্ষমতাসীনরা নির্বিঘ্নে লুটপাট চালাতে পারে। আদালত থেকে শুরু করে পুলিশ—সবাই কার্যত দলীয় নির্দেশের বাইরে যেতে পারে না। ফলে দুর্নীতিবাজ নেতারা কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করতে পারে, এবং জনগণ কিছুই করতে পারে না।
দুর্নীতি, দুঃশাসন এবং লুটপাটের এই চক্র যদি ভাঙা না যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গণতন্ত্র কেবল একটি ইতিহাসের পাতায় পড়ে থাকার মতো ধারণা হয়ে যাবে। জনগণ বারবার প্রতারিত হতে হতে একসময় গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে, এবং তখনই স্বৈরতন্ত্র আরও গভীর শেকড় গেড়ে বসবে। তাই, এই দুষ্টচক্র ভাঙতে হলে শুধু নির্বাচন বা আইনের সংস্কার যথেষ্ট নয়; দরকার রাজনৈতিক কাঠামোর আমূল পরিবর্তন এবং জনগণের মধ্যে সঠিক শিক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্টি করা। অন্যথায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র শুধু একটি প্রতারণামূলক শাসনব্যবস্থা হয়ে থাকবে, যা ক্ষমতাসীনদের সুবিধা নিশ্চিত করতেই ব্যবহৃত হবে।
গণতন্ত্রের নামে প্রতারণা, লুটপাট এবং সন্ত্রাসের এই চক্র যদি বন্ধ করতে হয়, তবে প্রথমেই রাষ্ট্রকে রাজনীতি শব্দের প্রকৃত অর্থ নির্ধারণ করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে “রাজনীতি” বলতে বোঝায় দুর্নীতির আখড়া, গুন্ডামি, লুটপাট, চাঁদাবাজি এবং ক্ষমতার জন্য হিংস্র প্রতিযোগিতা। যারা এই অপরাধচক্রের নেতৃত্ব দেয়, তাদের “রাজনীতিবিদ” বলা আদৌ যৌক্তিক নয়। কারণ, প্রকৃত রাজনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জনসেবা, ন্যায়বিচার এবং নৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা—যা বর্তমান রাজনৈতিক গোষ্ঠী সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। তাই, আমি রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানাই, রাজনীতিবিদ বা রাজনীতি শব্দের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং জনগণের প্রকৃত সেবকদের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে।
আমরা “Politics” এবং “Politician” শব্দ ব্যবহার করি না, বরং “রাজনীতি” এবং “রাজনীতিবিদ” শব্দ ব্যবহার করি। কেন? কারণ “Politics” শব্দটি কৌশলগত ক্ষমতার খেলা বোঝায়, যেখানে প্রধান লক্ষ্য হলো ক্ষমতা অর্জন ও টিকিয়ে রাখা। এর মধ্যে জনসেবার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, বরং এটি ক্ষমতার এক দুঃসাহসিক খেলা মাত্র। কিন্তু “রাজনীতি” শব্দটির শাব্দিক অর্থ রাজ্যের নীতি, অর্থাৎ যে নীতির ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। এখানে জনকল্যাণ, ন্যায়বিচার ও সুশাসনই প্রধান। তেমনি, “Politician” হলো একজন পেশাদার ক্ষমতাকেন্দ্রিক ব্যক্তি, যার মূল কাজ হলো রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করা। কিন্তু “রাজনীতিবিদ” মানে এমন ব্যক্তি, যিনি রাজ্যের নীতি রচনা ও বাস্তবায়নে নিয়োজিত থাকেন, যার কাজ শুধু ক্ষমতা অর্জন নয়, বরং জনসেবাকে মূল লক্ষ্য হিসেবে নেওয়া।
ড. ইউনূস দেখিয়েছেন কীভাবে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে হয় এবং কীভাবে একজন দক্ষ নেতা তার দেশের জন্য কাজ করতে পারেন। ছিল কি এমনটি গত ৫৪ বছরে? তাহলে কীভাবে নিজেদেরকে রাজনীতিবিদ বলে দাবি করবেন?
এক্ষেত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো ব্যক্তিত্বই প্রকৃত রাজনীতিবিদের উদাহরণ হতে পারেন। তিনি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেননি, জনগণের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষকে স্বাবলম্বী করেছেন, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন এবং সর্বোপরি, নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। তিনি রাজনীতির প্রচলিত গণ্ডির বাইরেও প্রমাণ করেছেন যে, সত্যিকারের নেতৃত্ব মানে ক্ষমতা নয়, বরং মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ।
যেদিন বাংলাদেশে ড. ইউনূসের মতো মানুষদের রাষ্ট্র পরিচালনায় দেখতে পাবো, সেদিনই আমরা নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে পারবো। সেদিন জনগণের সেবকরা “রাজনীতিবিদ” উপাধি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। আর তার আগ পর্যন্ত, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্র দুর্নীতিবাজদের কব্জায় বন্দি থাকবে, যেখানে রাজনীতি মানে হবে প্রতারণা, লুটপাট, ক্ষমতার লড়াই আর জনগণকে ব্যবহারের এক অনন্ত খেলা।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন