পুঁজিবাজার
এশিয়ার সর্বনিম্ন অবস্থানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে ‘উদীয়মান টাইগার’ বলা হয়। কিন্তু বর্তমানে এই টাইগারের অবস্থা এখন অত্যন্ত সংকটাপন্ন। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব, দুর্নীতি, বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা এবং সঠিক নীতির অভাবের কারণে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারেনি। যেখানে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়া শ্রীলংকা কিংবা অর্থনৈতিক সংকটে পর্যুদস্ত পাকিস্তানের পুঁজিবাজারও টপকে গেছে ‘উদীয়মান টাইগার’ খ্যাত এই পুঁজিবাজারকে। বর্তমানে এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে প্রায় সব সূচকেই সর্বনিম্নে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের অবস্থান। এর জন্য বর্তমান রাশেদ কমিশনের হুটহাট সিদ্ধান্ত পরিবর্তন ও কমিশনের চেয়ারম্যানের অযোগ্যতার কারণে বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি বিনিয়োগকারীদের অনাস্থাকে দায়ি করছে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
গত দুই বছর শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের পুঁজিবাজার বেশ ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। এশিয়ার উদীয়মান পুঁজিবাজারগুলোয় সবচেয়ে বেশি রিটার্ন এসেছে এ দুই দেশের পুঁজিবাজারে। এ সময় ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের পুঁজিবাজারে রিটার্ন কিছুটা নেতিবাচক থাকলেও অন্য দেশগুলোর পুঁজিবাজার ইতিবাচক ধারায় ছিল। শুধু সূচকের রিটার্ন নয়, বাজার মূলধন, লেনদেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণসহ আরো অনেক সূচকেই এগিয়ে ছিল এসব দেশের পুঁজিবাজার। তবে এক্ষেত্রে পুরোই বিপরীত চিত্র বাংলাদেশে।
পুঁজিবাজারের বয়স বিবেচনায় রাষ্ট্রের চেয়েও পুরনো দেশের শেয়াবাজার। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের পুঁজিবাজার পুঁজি সংগ্রহে উদ্যোক্তাদের মূল ভরসা হয়ে উঠতে পারেনি। দীর্ঘ ছয় দশকের পথচলায় সে ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেনি ডিএসই। পুরোপুরি কার্যকর ও গতিশীল পুঁজিবাজার হিসেবে নিজেকে বিকশিত ও প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বিশ্বের অনেক দেশেই অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে সেখানকার পুঁজিবাজার। এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিগুলোয়ও জিডিপির বিপরীতে পুঁজিবাজারের মূলধনের অবস্থান বেশ শক্তিশালী। কিন্তু এক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে বাংলাদেশ।
এশিয়ার উদীয়মান পুঁজিবাজারগুলোর সঙ্গে তুলনায় করে দেখা যায়, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের ২০২৪ সালে প্রায় সব সূচকেই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ছিল। এক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বিবেচনায় ফিলিপাইন ও শ্রীলংকা বাদে বাকি সব দেশই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। এ দুই দেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা যথাক্রমে ২৮৫ ও ২৯০। আর বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩৬০। এছাড়া ভারতে ৫ হাজার ৫৬৪, পাকিস্তানে ৫২৩, থাইল্যান্ডে ৮৮৫, ভিয়েতনামে ৪৩৫ এবং ইন্দোনেশিয়ার পুঁজিবাজারে ৯৪৩টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে।
বাজার মূলধনের দিক থেকে বাংলাদেশ গত বছর শুধু শ্রীলংকার চেয়ে এগিয়ে ছিল। তুলনামূলক ছোট অর্থনীতির দ্বীপদেশটির বাজার মূলধন গত বছর শেষে ছিল ১ হাজার ৬৪৫ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। আর বাংলাদেশের বাজার মূলধন ছিল ২ হাজার ৯৯৬ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। এছাড়া বছর শেষে বাজার মূলধন ভারতে ছিল ৫ লাখ ২৮ হাজার ৭৪৮ কোটি, পাকিস্তানে ৪ হাজার ৬৩৫ কোটি, থাইল্যান্ডে ৫৫ হাজার ৯২২ কোটি, ভিয়েতনামে ২১ হাজার ১৮৪ কোটি, ইন্দোনেশিয়ায় ৭৫ হাজার ৫৮০ কোটি ও ফিলিপাইনে ছিল ৩৪ হাজার ২৮৬ কোটি ডলারের সমপরিমাণ।
একটি দেশের পুঁজিবাজারের গভীরতা পরিমাপ হয় জিডিপির অনুপাতে বাজার মূলধন হিসাবের মাধ্যমে। এদিক থেকেও বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। গত বছর শেষে দেশে জিডিপির অনুপাতে বাজার মূলধনের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। একই সময়ে জিডিপির অনুপাতে বাজার মূলধন ভারতে ছিল ১৩৬ শতাংশ, পাকিস্তানে ১২ দশমিক ৪, শ্রীলংকায় ২২ দশমিক ১, থাইল্যান্ডে ১০৫ দশমিক ৭, ভিয়েতনামে ৪৫ দশমিক ২, ইন্দোনেশিয়ায় ৫৪ ও ফিলিপাইনে ছিল ৭৩ শতাংশ।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) প্রেসিডেন্ট ও বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী বলেন, আমাদের এখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়াতে হবে। নব্বইয়ের দশকে পুঁজিবাজারে যেসব কোম্পানি এসেছে, তারা কিন্তু এখান থেকে মূলধন উত্তোলনের পাশাপাশি করপোরেট করের ক্ষেত্রে ভালো ছাড় পেয়েছে, যার কারণে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হয়েছে। এখন কিন্তু তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর ব্যবধান খুব বেশি নয়। আইনি কাঠামোয় এমন বিধান থাকতে হবে যাতে করে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে বাধ্য হয় আবার তাদের জন্য আকর্ষণীয় প্রণোদনারও ব্যবস্থা থাকে। পুঁজিবাজারে কোম্পানির তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে ভালো কোম্পানি বাছাই করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ব্লুচিপ কোম্পানিগুলোকে নিয়ে আসা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে এমন বিধান রয়েছে, যেখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক একই গ্রুপের অন্য একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হতে পারবেন না। আইনি ধারাবাহিকতা থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন গ্রামীণফোনের তালিকাভুক্তির সময় করপোরেট কর কত হবে সেটি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। যদিও সেটি পরে আর ঠিক থাকেনি। তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাচাই করা প্রয়োজন। শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিটি আরো যুগোপযোগী করতে হবে, যাতে করে কোম্পানিগুলো যৌক্তিক মূল্য পায়। সর্বক্ষেত্রেই ম্যানুয়াল পদ্ধতি থাকায় দুর্নীতির সুযোগ থেকে যাচ্ছে। তাই অটোমেশনের মাধ্যমে দুর্নীতি রোধ করতে হবে। অতীতে যে কারসাজি হয়েছে, তার কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখান থেকে অনেক বিদেশী বিনিয়োগকারী চলে গেছে। এর কারণ হচ্ছে তারা এখানে বিনিয়োগ করার জন্য পর্যাপ্ত কোম্পানি পায়নি। লভ্যাংশের পরিমাণের ভিত্তিতে কোম্পানির ক্যাটাগরি নির্ধারণ পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা প্রয়োজন। তাছাড়া তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও রোধ করতে হবে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে লেনদেনের পরিমাণও বেশ কম। বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ায় এরই মধ্যে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন তলানিতে নেমেছে। গড় লেনদেনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার গত বছর এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে ছিল। এ সময় দেশের পুঁজিবাজারের গড় লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ। যেখানে ভারতের পুঁজিবাজারে গড় লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৩৩১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে গড়ে ৫ কোটি ৮০ লাখ, শ্রীলংকায় ৩ কোটি ৪০ লাখ, থাইল্যান্ডে ১১৫ কোটি ৮০ লাখ, ভিয়েতনামে ৫৭ কোটি ৫০ লাখ, ইন্দোনেশিয়ায় ৮৮ কোটি ও ফিলিপাইনের পুঁজিবাজারে গড়ে ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ লেনদেন হয়েছে।
বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের দিক দিয়েও বাংলাদেশের অবস্থান নিচের সারিতে। গত বছরে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেনে বিদেশীদের অংশগ্রহণ ছিল ১ শতাংশ। একই সময়ে ভারতে এ হার ছিল ১২ শতাংশ। এছাড়া পুঁজিবাজারের লেনদেনে বিদেশীদের অংশগ্রহণের হার পাকিস্তানে ৪ শতাংশ, শ্রীলংকায় ১০, থাইল্যান্ডে ৫১, ভিয়েতনামে ১৮, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৩ ও ফিলিপাইনে ২৫ শতাংশ ছিল।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, অতীতে ১০০টির মতো মন্দ কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনা হয়েছে, যার কারণে বাজারের গুণগতমান নষ্ট হয়ে গেছে। পাশাপাশি ভালো কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির জন্য আকৃষ্ট করা যায়নি। যে কারণে ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তাছাড়া কভিড এবং এর পরবর্তী সময়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পুঁজিবাজারে প্রভাব পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সুশাসনের ঘাটতি ও অপশাসন। পুঁজিবাজারকে এককভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সার্বিকভাবে অর্থনীতি এগিয়ে গেলে পুঁজিবাজারও বিকশিত হবে।
আগের দুই বছরের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালেও দেশের বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে পুঁজিবাজার। এ সময় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ১৬ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এশিয়ার দুই দেশ থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার পুঁজিবাজারে এ সময় ২ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন ছিল। অন্যদিকে পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে ৮৫ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। দেশটির বেঞ্চমার্ক সূচক কেএসই-১০০ রেকর্ড ১ লাখ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। শ্রীলংকার পুঁজিবাজারে গত বছর ৫০ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন ছিল। এছাড়া এ সময় ভারতে ৯ শতাংশ, ভিয়েতনামে ১২ শতাংশ ও ফিলিপাইনে ১ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন ছিল।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের আকারের তুলনায় আনুপাতিক হিসাবে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি। এর ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানের অবস্থাই রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। দেশে বর্তমানে ৪৫৬টি স্টক ব্রোকারেজ, ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ৬৭টি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি রয়েছে। এক্ষেত্রে শুধু ভারত বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। দেশটিতে ৪ হাজার ৯০২টি ব্রোকারেজ, ২২৫টি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ৪২টি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি রয়েছে। বাকি দেশগুলোয় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে কম।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ হচ্ছে বাজার সৃষ্টি করা। অথচ আমাদের এখানে বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় পরিদর্শনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়। পুঁজিবাজারের আকারের তুলনায় বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি হলে তখন সেটি অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। এর মানে হচ্ছে আমাদের পুঁজিবাজার দক্ষ নয়। আর বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী না হলে পুঁজিবাজার এগোবে না। তারাই বাজারকে এগিয়ে নিয়ে যায়। দেশের পুঁজিবাজারের যাত্রা বেশ দীর্ঘ হলেও নীতি ব্যর্থতার কারণে এটি সামনে এগোতে পারেনি। এখানে নতুন পণ্য আনার জন্য কাজ হয়নি। শুধু আইপিও নয়, এখানে বন্ডের বাজারও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ডেরিভেটিভস এখানে কখনো আসেনি। মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেও নতুন পণ্য নেই। বাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য না থাকলে বিনিয়োগকারী আসবে না, এটিই স্বাভাবিক। তাছাড়া যেসব কোম্পানি এখানে তালিকাভুক্ত রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বিনিয়োগযোগ্য পণ্যের সংখ্যা অত্যন্ত কম। পণ্যের গুণগত মান খুবই দুর্বল। দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নের বিষয়ে পূর্ববর্তী সরকারগুলো বরাবরই উন্নাসিকতা দেখিয়েছে, যা বর্তমানেও দেখা যাচ্ছে। দেশের পুঁজিবাজার যদি শক্তিশালী থাকত, তাহলে আজকে ব্যাংক খাতের যে করুণ অবস্থা, সেটি হতো না। কারণ দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন পুঁজিবাজার থেকে এলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অনেক কম থাকত। এক্ষেত্রে কোনো নীতিসহায়তা নেই। নীতিসহায়তার মাধ্যমেই পুঁজিবাজার বিকশিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বর্তমান সরকারের অবদান শূন্য।
ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, গত দেড় দশকে পুঁজিবাজারে সুশাসন তলানিতে ঠেকেছে। এত পরিমাণে অনিয়ম হয়েছে যে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে ডিএসইর পক্ষ থেকে পরিকল্পনা ও রূপরেখা তুলে ধরা হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে দেশের পুঁজিবাজারে ধস নামে। এ সময় ধসের কারণে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব বিনিয়োগকারীদের আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। পুঁজিবাজার ধসের ঘটনায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সালমান এফ রহমানকে মূল হোতা হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে। এ-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও তার নাম এসেছে। যদিও তার বিরুদ্ধে কখনোই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তৎকালীন সরকার। বরং এ সময় প্রভাব খাটিয়ে পুঁজিবাজার থেকে নানা সুবিধা নিয়েছেন তিনি। ২০১০ সালের ধস-পরবর্তী সময়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সংস্কার ও পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ বছর সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্সের অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন। তার উত্তরসূরি হিসেবে ২০২০ সালে দায়িত্বে আসেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
গত ১৫ বছরে দেশের পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে কোম্পানির তালিকাভুক্তি ও প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে অর্থ লুটে নেয়ারও অনেক নজির রয়েছে। অনিয়মের কারণে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে নেমেছে। বিশেষ করে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড খাতের শীর্ষ দুই প্রতিষ্ঠান রেইস ম্যানেজমেন্ট পিসিএল ও এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ইউনিট হোল্ডারদের অর্থ তছরুপের অভিযোগ থাকলেও বিএসইসির পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে এসব অনিয়মে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনেও গত ১৫ বছরে অনিয়ম, প্রতারণা ও কারসাজির মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১ লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের পুঁজিবাজারে ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রত্যাশায় কিছুদিন উজ্জীবিত হতে দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের। যদিও কিছুদিন পরই তাদের সে প্রত্যাশায় ছেদ ঘটেছে। মূলত পুঁজিবাজার নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে ঘাটতির কারণেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুঁজিবাজার
সপ্তাহজুড়ে ফাইন ফুডসের সর্বোচ্চ দরপতন
বিদায়ী সপ্তাহে (১২ জানুয়ারি-১৬ জানুয়ারি) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক দরপতনের শীর্ষ তালিকায় স্থান নিয়েছে ফাইন ফুডস লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির দর কমেছে ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
আগের সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে কোম্পানিটির দর ছিল ২৫৪ টাকা ৫০ পয়সা। বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০৭ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর কমেছে ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা।
সাপ্তাহিক দরপতনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ১৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে কোম্পানিটির দর ছিল ৩৩ টাকা ৮০ পয়সা। গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা ৬০ পয়সায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর কমেছে ৬ টাকা ২০ পয়সা।
১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ দর কমে সাপ্তাহিক দর পতনের তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফারইস্ট ফাইন্যান্স। আগের সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে কোম্পানিটির দর ছিল ৩ টাকা ৫০ পয়সা। গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ১০ পয়সায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর কমেছে ৪০ পয়সা।
সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, এসবিএসি ব্যাংকের ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ, ইসলামিক ফাইন্যান্সের ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ, প্রগতী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, সিএপিএম আইবিবিএলের ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংকের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ দর কমেছে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুঁজিবাজার
ব্যাংক খাত পেলেও সংস্কার সহায়তা পায়নি পুঁজিবাজার: মমিনুল ইসলাম
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনেক ধরনের সহায়তা প্যাকেজ আসছে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারের জন্য কোনো সহায়তা প্যাকেজ আসেনি বলে বন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’ এ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম এ কথা বলেন।
সিএমজেএফ সভাপতি এস এম গোলাম সামদানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, আগামী জুন মাসের মধ্যে দেশের পুঁজিবাজার গতি ফিরে পাবে। দীর্ঘদিনের অনিয়ম-দুনীতির বিষয়ে টাক্সফোর্স কাজ করছে। ইতিমধ্যে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। জুনের মধ্যে সব সংস্কারগুলো শেষ হবে না। তবে কিছু কিছু সংস্কার হয়ে যাবে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সহায়তা করবে। বিনিয়োগিকারী বিশ্বাস করতে শুরু করবে যে, সংস্কার হচ্ছে। পুঁজিবাজারে দীর্ঘস্থায়ী বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হবে। এখানে অন্যায় করে ছাড় পাওয়া যাবে না, সেই আস্থা ফিরবে। ফলে জুন নাগাদ সংষ্কারের কিছু বিষয় বাজারে ইতিবাচক বার্তা দিতে পারে। আমরা আশা করছি জুন নাগাদ শেয়ারবাজারে ভালো অবস্থা দেখতে পারবো।
তিনি বলেন, আমাদের শেয়ারবাজার অনেক সংকুচিত। গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজার অনেক পিছিয়েছে। তবে একইসময়ে বিশ্বের অন্যসব দেশের শেয়ারবাজার এগিয়েছে। এই অবস্থায় বর্তমান সময়ে দেশের সব স্টেকহোল্ডাররা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে এগিয়ে নিতে ইতিবাচকভাবে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, আমার এরইমধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কাজের ফলাফল পেতে একটু সময় লাগবে। অনেকটা একটি ভবনের ভিত্তি নির্মাণ যেমন বাহিরে থেকে দেখা যায় না, সেরকম। তবে ভবনের উপরে নির্মাণ কাজটা সবাই দেখতে পায়। কিন্তু আসল কাজটা করা হয় ওই ভিত্তি নির্মাণের সময়।
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, সবকিছুই বিফলে যাবে, যদি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে না পারি। এজন্য স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ৪টি কাজকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ৪টি কাজের মধ্যে দ্রুত সময়ে কিছু ভালো কোম্পানি নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। এছাড়া নেগেটিভ ইক্যুইটির সমস্যা সমাধান, ট্যাক্স সুবিধা দেওয়া ও ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করা। এই ট্রেডিংয়ের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে শেয়ারবাজারের যে ভূমিকা থাকার কথা ছিল, তা হয়নি। প্রত্যাশার লেভেল থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর অনেক সমস্যায় ছিল। এরমধ্যে অন্যতম নিয়ন্ত্রক সংস্থার অযাচিত হস্তক্ষেপ। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের মানব সম্পদের অদক্ষতা ও প্রযুক্তিগত সমস্যা রয়েছে। আর ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ডিএসইতে কোনো চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নেই। আমরা চাটার্ড অ্যাকউন্ট্যান্ট নেওয়ার চেষ্টা করছি।
মমিনুল ইসলাম বলেন, বহুজাতিক সংস্থাগুলো, যেমন: আইএমএফ, এডিবির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি, যাতে তাদের কাছ থেকে আমরা সাপোর্ট পেতে পারি। এতে আমাদের সংস্কার কাজগুলো একটু ত্বরান্বিত হবে। আমাদের দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য অনেক ধরনের সহায়তা প্যাকেজ আসছে। এখন পর্যন্ত ক্যাপিটাল মার্কেটের জন্য কোনো সহায়তা প্যাকেজ আসেনি। আমরা সরকারের কাছে সহায়তার দাবি জোড়ালোভাবে তুলে ধরতে চাই। আমাদের সহযোগী যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা আছে, তারা যেন পুঁজিবাজারের দিকে একটু নজর দেন, যাতে আমাদের রিফর্মের কাজগুলো একটু সহজ হয় এবং আমরা যাতে আরো সক্ষম হতে পারি।
সফটওয়্যার সমস্যায় ডিইএসইতে লেনদেন বিঘ্ন ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে একটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সক্ষমতার জায়গা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা। কারণ ট্রেড (লেনদেন) এখন সবই ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হচ্ছে। সেটেলমেন্টও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে হচ্ছে। আমরা যে প্লাটফর্ম তুলছি, সেটা আমরা এই মুহুর্তে দেখছি আন্তর্জাতিক মানের প্লাটফর্ম। তারপরও ছোট ছোট যে বিচ্চুতি হচ্ছে, সেখানে আমি বলবো প্রসেসগত কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যে ধরনের স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল থাকা দরকার, সেগুলো স্ট্যাবিলিশ করলে এই ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে আমাদের মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ততটা ভালো নেই। ব্যাংকিং সেক্টরের একটা অস্থিরতা, সেখানে আমরা আশা করছি কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। এখনো আমরা প্রত্যাশিত অবস্থায় যেতে পারিনি। আমরা দেখছি মূলধনী মেশিনারিজ আমদানি কমে গেছে। রিয়েল ইকোনমিক বিনিয়োগ যদি ঠিক না থাকে, তাহলে পুঁজিবাজার তো পুরো মার্কেটের প্রতিচ্ছবি। তো সেটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আমরা আশাবাদি জুন নাগাদ শেয়ারবাজারে ইতিবাচক ধারা দেখতে পারবো।
সাংবাদিকদের আর এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, সংস্কার করতে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু সংস্কার করতে গিয়ে রোগী যাতে মারা না যায় সেটা দেখতে হবে। একটা জায়গায় সমন্বয় করা হয়েছে, ৫০ লাখ টাকার বেশি ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সের ওপরে। আমাদের আরও কিছু দাবি-দাওয়া আছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, এনবিআর থেকে বলা হয়েছে এগুলো পজেটিভভাবে দেখবে। দ্বিতীয় ভালো কিছু কোম্পানি আনতে পারলে বাজারে উৎসা-উদ্দিপনা তৈরি হবে। অনেক বিনিয়োগকারী নিষ্কৃয় হয়ে আছে, তারা সক্রিয় হবেন। একটা ইতিবাচক ধারা তৈরি হবে।
তিনি বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জগুলোও অনেক সমস্যায় ছিল। এরমধ্যে অন্যতম নিয়ন্ত্রক সংস্থার অযাচিত হস্তক্ষেপ। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের মানব সম্পদের অদক্ষতা ও প্রযুক্তিগত সমস্যা রয়েছে। আর ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, কোন রকম চাপ বা কোন অনাকাক্সিক্ষত নির্দেশনার মত ঘটনা হয়নি। আমরা চাপ বিহীনভাবে কাজ করছি। আমাদের সব সিদ্ধান্ত গনতান্ত্রিকভাবে হচ্ছে। আমাদের বোর্ডের যে নিয়ম রয়েছে সেই অনুযায়ী কাজ করছি। নিয়মের বাইরে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নাই।
তিনি বলেন, আমরা ডিএসইর সমস্যাগুলো বের করার চেষ্টা করেছি। ইতোমধ্যে সমস্যার তালিকা অনেক লম্বা হচ্ছে, এগুলো সমাধানে কাজ করছি। যেসব ব্রোকারেজ হাউজ বিনিয়োগকারীদের অর্থ সরিয়ে নিয়েছে ইনভেস্টর প্রোটেকশন ফান্ড থেকে তাদের সাপোর্ট দেয়া যেতে পারে। এছাড়া ব্রোকারেজ হাউজের সম্পদ বিক্রি করে এবং লাইসেন্স বিক্রি করে ওইসব হাউজের বিনিয়োগকারীদের তহবিল যোগান দেয়া হবে।
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বাজারের উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। বিশেষ করে আইএমএফের সাথে। এছাড়াও দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সহযোগিতা কামনা করবো। আশা করছি এই সহযোগিতা আমরা পাবো।
তিনি আরও বলেন, আগে প্রাইমারি রেগুলেটরকে সব ক্ষেত্রেই বিএসইসির অনুমোদন নিয়ে কাজ করতে হতো। যার ফলে কোম্পানিগুলোকে মনিটরিং করা ডিএসইর জন্য অনেকটা কষ্টকর হয়ে উঠেছিলো। এই অবস্থান থেকে আমরা অনেকটা বের হয়ে আসছি। দুর্বল কোম্পানিগুলোতে এখন ডিএসইর মনিটরিং বাড়বে। এখানে সমস্যা হচ্ছে, এই বাজারের বেশিরভাগ কোম্পানিই দুর্বল। এতগুলো দুর্বল কোম্পানিকে একসঙ্গে মনিটরিং করা ডিএসইর জন্য কষ্টকর। ‘আমাদের বাজারে এমন কিছু কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছ, যেগুলো তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা ছিলো না। এগুলোকে ডিলিস্টিং করতে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুঁজিবাজার
আমাদের শেয়ারবাজার অনেক সংকুচিত: ডিএসই চেয়ারম্যান
আমাদের শেয়ারবাজার অনেক সংকুচিত। গত ১৫ বছরে শেয়ারবাজার অনেক পিছিয়েছে। তবে একইসময়ে বিশ্বের অন্যসব দেশের শেয়ারবাজার এগিয়েছে। এই অবস্থায় বর্তমান সময়ে দেশের সব স্টেকহোল্ডাররা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে এগিয়ে নিতে ইতিবাচকভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’ এ তিনি এ কথা বলেন।
মোমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের শেয়ারবাজারকে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিয়ে যেতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম। তবে আমাদের শেয়ারবাজারের সমস্যা অনেক গভীরে। তাই সমাধানে একটি সময় লাগবে।
তিনি বলেন, আমরা এরইমধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কাজের ফলাফল পেতে একটু সময় লাগবে। অনেকটা একটি ভবনের ভিত্তি নির্মাণ যেমন বাহিরে থেকে দেখা যায় না, সেরকম। তবে ভবনের উপরে নির্মাণ কাজটা সবাই দেখতে পায়। কিন্তু আসল কাজটা করা হয় ওই ভিত্তি নির্মাণের সময়।
ডিএসইর এই চেয়ারম্যান বলেন, সবকিছুই বিফলে যাবে, যদি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে না পারি। এজন্য স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ৪টি কাজকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ৪টি কাজের মধ্যে দ্রুত সময়ে কিছু ভালো কোম্পানি নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। এছাড়া নেগেটিভ ইক্যুইটির সমস্যা সমাধান, ট্যাক্স সুবিধা দেওয়া ও ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধ করা। এই ট্রেডিংয়ের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স।
মোমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে শেয়ারবাজারের যে ভূমিকা থাকার কথা ছিল, তা হয়নি। প্রত্যাশার লেভেল থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।
তিনি বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জগুলোও অনেক সমস্যায় ছিল। এরমধ্যে অন্যতম নিয়ন্ত্রক সংস্থার অযাচিত হস্তক্ষেপ। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের মানব সম্পদের অদক্ষতা ও প্রযুক্তিগত সমস্যা রয়েছে। আর ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইনেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুঁজিবাজার
সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটের শীর্ষ মুন্নু ফেব্রিক্স
বিদায়ী সপ্তাহে (১২ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে সপ্তাহ শেষে ব্লকে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে মুন্নু ফেব্রিক্স লিমিটেড।
ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে কোম্পানিটির ১৮ কোটি ৩৮ লাখ ২০ হাজার টাকার। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ১৬ টাকা ৪০ পয়সা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসিআই লিমিটেডের ১৮ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ১৫০ টাকা ১০ পয়সা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ রিলায়েন্স ওয়ানের ৮ কোটি ৬৫ লাখ ৭০ হাজার ইউনিট লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে ফান্ডটির সর্বশেষ দর ছিল ২৪ টাকা ৩০ পয়সা।
সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া অন্য ৭টি কোম্পানির মধ্যে-মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৮ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ৭ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ৭ কোটি ৫৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ফাইন ফুডসের ৬ কোটি ৪৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা, রেনেটার ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, আইসিবি সোনালী ওয়ানের ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা এবং বিকন ফার্মার ২ কোটি ৮৪ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পুঁজিবাজার
ডিএসইতে পিই রেশিও কমেছে ১.৪৭ শতাংশ
বিদায়ী সপ্তাহে (১২ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) কমেছে ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল ৯.৫১ পয়েন্টে। আর সপ্তাহ শেষে তা ৯.৩৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও ১.৪৭ শতাংশ বা ০.১৪ পয়েন্ট কমেছে।