জাতীয়
চীনা ঋণ পরিশোধের সময় ৩০ বছরে নিতে চায় সরকার

চীনা প্রকল্পের সুদের হার কমানোর পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের সীমা ৩০ বছরে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। আগামী ২০ জানুয়ারি চীন সফরে যবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। ২১ জানুয়ারি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে দ্বিক্ষীয় বৈঠকে বসবেন তিনি।
সফরকে সামনে রেখে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অনেক প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ আছে। বিনিয়োগগুলো মূলত ঋণ আকারে। তার মধ্যে কিছু প্রকল্প চলমান। আলাপ আলোচনার সময় প্রথমে ব্যবসায়িক বিষয়গুলো আসবে। অফিসিয়ালি চীন আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। আন-অফিসিয়ালি ভারতকেও বড় অংশীদার বলা হয়।
উপদেষ্টা বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের প্রধানত আমদানির সম্পর্ক এবং এগুলো আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। কারণ আমাদের অনেক রপ্তানি সেই আমদানি পণ্যগুলোর ওপর নির্ভরশীল। কাজেই চীনের সঙ্গে আমাদের যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আরও অর্থনৈতিক আলোচনা আছে- যেমন আমরা ঋণের শর্তাবলী নিয়ে কথা বলব। এর মধ্যে সুদহার কমানো বা ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো।
তিনি আরও বলেন, চীনের কাছে এটাও চাইবো যেন যখন আমরা এলডিসি থেকে গ্রাজুয়েট করব তখন ইউরোপের মতো তারাও যেন আমাদের জন্য তিন বছর শুল্কমুক্ত সুবিধা বহাল রাখে। এখনো চীন আমাদের অধিকাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু গ্রাজুয়েশনের পরে এটা পরিবর্তন হতে পারে, তাই এটি আমাদের আলোচনার মাধ্যমে আগেই ঠিক করে নিতে হবে।
বাংলাদেশে চীনে ঋণের পরিমাণ জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রতিটি ঋণের সুদের হার এক না। আমরা মোটাদাগে সুদের হার কমানোর কথা বলব। ঋণ পরিশোধ সীমা চেষ্টা করব ৩০ বছরে নিয়ে যেতে; যেন আমাদের অর্থনীতির ওপর চাপ কম আসে এবং পরিশোধ করতে সহজ হয়। পরিশোধের সময় বাড়ানোর কথা বলব।
সফরে নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের করা সমঝোতা স্মারকের নবায়নের তথ্য জানান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, তিস্তা প্রকল্পের চেয়ে বড় কথা হলো আমাদের নদী নিয়ে যে এমওইউ আছে ওটা শেষ হয়ে গেছে। আমাদের সেটা নবায়ন করার সিদ্ধান্ত আছে। স্পেসিফিক প্রকল্পের বিষয়ে আরও অনেক বিস্তারিত আলোচনা লাগবে। তবে বাংলাদেশ অবশ্যই তার নিজের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেবে এটা আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের সহায়তা চাওয়ার কথা জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করব। আমরা চাইব চীন আমাদের সহায়তা করুক। চীনের ওখানে যথেষ্ট প্রভাব আছে। রোহিঙ্গা সমস্যা এক দিনে সমাধানের বিষয় না। এখন যে পরিস্থিতি মিয়ানমারে সেখানে স্থিতিশীলতা না ফিরলে কিন্তু প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না, এটা মেনে নিতে হবে। তাদের জোর করে পাঠাতে পারবেন? একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, আমরা সেই পরিবেশ সৃষ্টিতে চীনের সহায়তা চাইব। আমরা চাইব রাখাইনে একটা স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হোক।
চীনের বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগে (জিডিআই) বিগত সরকারের সময় থেকে বাংলাদেমকে যুক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বেইজিং। উপদেষ্টার সফরে জিডিআই সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক কিংবা সরকারের অবস্থান কি?
তা জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, কিছু জিনিস আছে যেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলমান। এটা বহাল থাকবে এবং আমরা ইতিবাচকভাবে দেখব। এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখনই সমঝোতা স্মারকে যাব কিনা আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।
বিগত সরকারের সময়ে চীনের সঙ্গে ৫ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি ছিল এবং বাজেট সহায়তা নিয়েও আলোচনা ছিল। বর্তমান সরকারের এ বিষয়ে প্রদক্ষেপ নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা কোনো কিছু বাদ রাখব নাম, সবকিছু নিয়ে আলাপ-আলোচনা করব। সেই আলোচনা আছে এবং থাকবে। যেহেতু আমাদের সমস্যা আছে আমরা বাজেট সহায়তা নিয়ে কথা বলব। দেখি তারা কতটুকু সহায়তা দিতে পারে।
চীন সফরের লক্ষ্য জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ইস্যুগুলো আপনারা জানেন কোনটা এক মাসের বা এক বছরের ইস্যু না। ইস্যুগুলো অনেক দিনের, অনেক পেছন থেকে হয়ে আসছে। বিগত সরকারের সময়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আমরা কি সেগুলো সব বাদ দিয়ে দেব? কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা দেখব যে, সেটা আমাদের দেশের স্বার্থ ঠিক মতো রক্ষা করা হচ্ছে কি না।
তিনি আরও বলেন, কিছু সাংস্কৃতিক আলোচনা আছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এ উপলক্ষে দুই দেশেই কিছু উৎসব আছে। সেগুলো নিয়েও আমরা কথাবার্তা বলব।
কাফি

জাতীয়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশ সরকার

মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেইসাথে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যাওয়া এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোরও প্রশংসা করেছে ওয়াশিংটন।
স্থানীয় সময় রোববার (২৪ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া এক প্রেস বিবৃতিতে একথা বলেন দপ্তরের প্রিন্সিপাল ডেপুটি স্পোকসপারসন টমাস “টমি” পিগট।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়েছে, যার মধ্যে সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুতির শিকার রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীও রয়েছে। পাশাপাশি, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে (যুক্তরাষ্ট্র) ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোরও প্রশংসা করেছে, যারা মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়। এর আগে থেকেই বাংলাদেশে ছিল চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
এছাড়া প্রতি বছর নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে ক্যাম্পগুলোতে। সম্প্রতি নতুন করে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গাসহ বর্তমানে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন বাংলাদেশে।
জাতীয়
সোমবার রোহিঙ্গা সংলাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা

কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে শুরু হওয়া তিন দিনের আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডার সংলাপ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশসমূহ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চপর্যায়ের রোহিঙ্গা সম্মেলনে ইনপুট হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল সোমবার সংলাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বিত প্রচেষ্টা জোরদারের আহ্বান জানাবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম।
তিনি বলেন, এই সংলাপ মূলত সেপ্টেম্বরের বৈঠকের প্রস্তুতিমূলক ধাপ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে। এর বিশেষ তাৎপর্য হলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সরাসরি অংশগ্রহণ। তারা এখানে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, হতাশা এবং ভবিষ্যৎ প্রত্যাশার কথা জানাবেন। এই মতামত ও আলোচনা নিউইয়র্ক সম্মেলনের আলোচনায় প্রতিফলিত হবে।
রোববার (২৪ আগস্ট) কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সংলাপের ফাঁকে এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্র সচিব এ কথা বলেন।
তিনি জানান, সংলাপের কাঠামো চারটি থিম্যাটিক অধিবেশনের ওপর নির্ভর করে সাজানো হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- মানবিক সহায়তা ও চলমান তহবিল সংকট মোকাবিলা, রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রত্যাবাসনের জন্য আস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, এবং টেকসই ও সময়োপযোগী সমাধানের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সংলাপ শেষে একটি ‘চেয়ার’স সামারি’ তৈরি করা হবে। এই নথিতে আলোচনার মূল সারমর্ম ও সুপারিশসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটি নিউইয়র্ক সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আউটপুট ডকুমেন্ট হিসেবে কাজ করবে।
মানবিক সহায়তার জরুরি প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সহায়তা না পেলে যে মানবিক দুর্যোগ সৃষ্টি হবে, তা আমরা এই সংলাপে জোরালোভাবে তুলে ধরছি। বর্তমানে যারা সহায়তা করছেন, তাদের পাশাপাশি নতুন উৎস থেকেও আর্থিক সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সিয়াম বলেন, বাংলাদেশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তবে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কেবল বাংলাদেশের প্রচেষ্টার ওপর নির্ভরশীল নয়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ও আস্থার ওপরও তা নির্ভর করে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান এখন শুধু একটি আঞ্চলিক নয়, বরং বৈশ্বিক দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
কক্সবাজারের হোটেল বে ওয়াচে আয়োজিত ‘স্টেকহোল্ডারস’ ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক এ সংলাপে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, জাতিসংঘ ও বৈশ্বিক সংস্থার প্রতিনিধি এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের পর বাংলাদেশে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। এর পর থেকে সংকট নিরসনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে।
কাফি
জাতীয়
মুখে সংস্কার কার্যত আধিপত্য, দখল ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি অব্যাহত: টিআইবি

মুখে সংস্কার অথচ কার্যত আধিপত্য, দখল ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি অব্যাহত থাকায় গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার গণআকাঙ্ক্ষাকে রীতিমতো পদদলিত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রবিবার (২৪ আগস্ট) গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করে সংস্থাটি।
এতে বলা হয়েছে, দেশের কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের একাংশের ক্ষমতার অপব্যবহারে ‘এবার আমাদের পালা’ স্বরূপ আচরণ উদ্বেগজনকভাবে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রতিফলন ঘটছে কর্তৃত্ববাদ পতনের অব্যবহিত পর থেকে শুরু করে দেশব্যপী বহুমাত্রিক দলবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট, মামলা বাণিজ্য, গ্রেফতার বাণিজ্য, জামিন বাণিজ্য, ট্যাগ বাণিজ্য ও দলীয় আধিপত্যকেন্দ্রিক সহিংসতায়; যা নতুন বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের অভীষ্টের জন্য অশনি সংকেত। মুখে সংস্কার অথচ কার্যত আধিপত্য, দখল ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি অব্যাহত থাকায় গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার গণআকাঙ্ক্ষাকে রীতিমতো পদদলিত করা হচ্ছে। কর্তৃত্ববাদ পতনের মাধ্যমে রাজনীতিতে যে মৌলিক পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তার বিপরীতে ক্ষমতার অপব্যবহারে এবার আমাদের পালা এই মানসিকতায় কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের একাংশ দুর্বৃত্তায়নমুক্ত সুস্থ রাজনৈতিক বিকাশের সম্ভাবনার পথে আত্মঘাতী প্রতিরোধক সৃষ্টি করছে।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্তৃত্ববাদ পতনের পরিপ্রেক্ষিতে গত এক বছরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যারা সবচেয়ে প্রভাবশালী বলে বিবেচিত তাদের নেতাকর্মীদের একাংশের কার্যক্রম পতিত কর্তৃত্ববাদী আমলের সরকারি দলের বহুমুখী ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বার্থসিদ্ধিমূলক অসুস্থ চর্চার প্রতিচ্ছবি হিসেবেই বিকশিত হচ্ছে। ক্ষমতা-প্রত্যাশী ও প্রভাবশালী দলগুলোর নেতাকর্মীদের একাংশের সরাসরি এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে পারস্পারিক যোগসাজশমূলক সম্পৃক্ততায় দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আবারও স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে।
পরিতাপের বিষয়, অনেক ক্ষেত্রে এই যোগসাজশে নির্বিকারভাবেই যুক্ত থাকছে পতিত রাজনৈতিক শক্তিও। প্রথাগত দলবাজি, দখলবাজি ও পদবাণিজ্য প্রকটতর হয়ে কোনও কোনও সহিংস দলীয় কোন্দল স্থানীয় পর্যায়ে সহিংসতার পাশাপাশি হরতাল ঘোষণার মতো বিরল দৃষ্টান্তও সৃষ্টি করতে দেখা গেছে। দাবি আদায় অনেক ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগের পাশাপাশি কোনও কোনও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও বিচ্ছিন্নভাবে অতি ক্ষমতায়িত শক্তির সম্পৃক্ততায় তথাকথিত মবতন্ত্রের মুখোশে সংখ্যালঘু, জেন্ডারভিত্তিক, আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার হরণ, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াসের বিরুদ্ধে বীভৎস আঘাত, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের ওপর নির্মম আক্রমণের অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে হয়েছে দেশবাসীকে।
অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের একাংশের দায়িত্বহীনতা, স্বার্থসিদ্ধির জন্য উঠেপড়ে লাগাকে, অভ্যন্তরীণ জবাবদিহি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উদ্বেগজনক ঘাটতি উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট দলগুলোর উচ্চ পর্যায় থেকে কোনও কোনও ক্ষেত্রে সাবধান করা থেকে শুরু করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাংগঠনিক পদক্ষেপও গৃহীত হচ্ছে। তবে এসবের কার্যকর প্রতিকারে যেমন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসন বরাবরের মতো ব্যর্থতার পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে সহায়ক ও সুরক্ষাকারীর ভূমিকা পালন করছে, তেমনই রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে কোনও সুনির্দিষ্ট প্রতিরোধ ও সংশোধনমূলক কৌশল গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। বরং জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই দখলদারি, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক প্রভাববিস্তারে লিপ্ত হয়েছেন কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গেই এবং প্রতিনিয়ত তার মাত্রা বাড়ছে।
তিনি বলেন, এবার আমাদের পালা- এই সংস্কৃতির চর্চায় লিপ্ত হয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সরকার, বিশেষ করে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার নজিরের পাশাপাশি অংশীদারত্বের দৃষ্টান্ত পুনরুজ্জীবিত করেছেন। পরিবহন টার্মিনাল, খনিজ সম্পদ, সেতু, বাজার ও জলমহাল দখল ও চাঁদাবাজির চক্রের পুনরুত্থানও রাজনৈতিক অঙ্গনে অতীতের কর্তৃত্ববাদী শাসনের দুঃশাসনের ধারাবাহিকতাকে জিইয়ে রাখছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে উদ্ধৃত নতুন রাজনৈতিক দলও সুশাসন, স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তাদেরও নেতাকর্মীর একাংশ চাঁদাবাজিসহ নানাবিধ অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে বিদ্যমান স্বার্থান্বেষী ও দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক চর্চাকেই রোল মডেল হিসেবে বরণ করে আত্মত্মঘাতী পথ বেছে নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সর্বোপরি কর্তৃত্ববাদ পতন পরবর্তীকালে বহুল প্রত্যাশিত নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত পুরোনো অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির হাতে ক্রমাগত দৃশ্যত জিম্মিদশায় পতিত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলো দেশবাসীকে কি এই বার্তাই দিচ্ছে যে, যদিও তারা সংঘবদ্ধ হয়ে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন করে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন সম্ভব করেছে, কর্তৃত্ববাদী চর্চার অবসানে তাদের আগ্রহ নেই, বরং এই চর্চা লালন করাই তাদের অভীষ্ট?
ড. জামান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর আত্মজিজ্ঞাসার এখনই সময়। আত্মঘাতী রাজনৈতিক চর্চা পরিহার করে তাদের দায়িত্ব কর্তৃত্ববাদ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনা থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনৈতিক দলকে গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা, জবাবদিহি, সততা ও নৈতিকতার কার্যক্রমের বিকাশের মাধ্যমে জনমুখী রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেদের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহি, নৈতিক চর্চা ও গণতান্ত্রিক পরিচালন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে না পারে, তবে ঐতিহাসিক জুলাই আন্দোলনে শহীদ, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের তথা আপামর জনগণের হতাশা বাড়বে। নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে এখনই দরকার রাজনৈতিক দলের গঠনমূলক আত্মজিজ্ঞাসাভিত্তিক মৌলিক পরিবর্তনের পথ অনুসন্ধান এবং পাশাপাশি পারস্পরিক সংলাপ ও সহযোগিতার মাধ্যমে দুর্বৃত্তায়নের সংস্কৃতি থেকে সরে আসার পথ বের করা। না হলে নতুন বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে পতিত কর্তৃত্ববাদের পার্থক্য খুঁজে পাওয়া অসম্ভব হবে।
জাতীয়
ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৩০

এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে আরো ৪৩০ জন।
রোববার (২৪ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১১৫ জনের। যাদের মধ্যে ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৮ হাজার ৬৩২ জন। আর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে ২৭ হাজার ২৩৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়পত্র পেয়েছে ৪৫৫ রোগী।
জাতীয়
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ৬ সেপ্টেম্বর

পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেশের আকাশে আজ দেখা যায়নি। তাই পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হবে ৬ সেপ্টেম্বর (শনিবার)। রোববার (২৪ আগস্ট) জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ কথা জানানো হয়।
আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় (বাদ মাগরিব) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন।
আরবি ১২ রবিউল আউয়াল প্রতি বছর হিজরি বর্ষ অনুযায়ী পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করা হয়। রোববার (২৪ আগস্ট) চাঁদ দেখা না যাওয়ায় সফর মাস ৩০ দিনে শেষ হচ্ছে। তাই ১২ রবিউল আউয়াল ৬ সেপ্টেম্বর (শনিবার) পালিত হবে। ঈদে মিলাদুন্নবীর দিন বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে।
আরবি ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’র অর্থ- মহানবী (সা.) জন্মদিনের আনন্দোৎসব। মুসলমানরা ১২ রবিউল আউয়াল মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.) এর জন্ম ও মৃত্যু (ওফাত) দিবস হিসেবে পালন করে। কারণ এ দিনেই তিনি ইন্তেকালও করেন।
উল্লেখ্য, ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের হিজরি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ মক্কার কুরাইশ বংশে মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬৩ বছর বয়সে ১২ রবিউল আউয়ালই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পৃথিবীর মুসলমানরা পালন করে। বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) দিন সাধারণ ছুটি পালিত হয়।