অর্থনীতি
সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত সঞ্চয় কর্মসূচিগুলোর মুনাফার হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্কিমের ধরন অনুযায়ী নতুন মুনাফার হার ১২.২৫ শতাংশ থেকে ১২.৫৫ শতাংশ পর্যন্ত। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এই মুনাফার হার কার্যকর হবে।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরডি) একটি সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। ওই সুপারিশে নির্ধারণ করা মুনাফার হারই কার্যকর করা হবে। ১ জানুয়ারি বা তার পরে যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করবেন তাদের জন্য নতুন মুনাফার হার কার্যকর হবে। আর যারা আগে সঞ্চয়পত্র কিনে রেখেছেন, তারা আগের নির্ধারিত হারে মুনাফা পাবেন।
এ বিষয়ে এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়,জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের অধীন পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাবের সুদের হার পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ৫ বছর ও ২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদের হারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উল্লিখিত ৫টি সঞ্চয় স্কিমের সুদের হার বছরে দুইবার পুনঃনির্ধারণ করা হবে। বিনিয়োগকারী ইস্যুকালীন বিদ্যমান মুনাফার হার, বিনিয়োগকালের পূর্ণ মেয়াদের জন্য প্রাপ্য হবেন অর্থাৎ যে মেয়াদের জন্য তা ইস্যু করা হয়েছিল সে মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত একই হারে মুনাফা প্রাপ্য হবেন।
অপেক্ষাকৃত সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণিকে সমতা প্রদানের লক্ষ্যে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের বিনিয়োগকারীদের পূর্বের তিনটি ধাপের পরিবর্তে নতুন দুটি ধাপে (৭.৫০ লাখ টাকা ও এর নিম্নে এবং ৭.৫০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে) ভাগ করা হয়েছে। এছাড়া পূর্বের ন্যায় বিনিয়োগের মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়নের ক্ষেত্রে বছরভিত্তিক হারে মুনাফা প্রাপ্য হবে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড লেনদেন
গত জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কয়েক দিন ইন্টারনেট বন্ধ এবং ধীরগতির বড় প্রভাব পড়েছিল মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। কিন্তু সেই ধাক্কা কাটিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে গত (২০২৪) নভেম্বর মাসে। এক মাসে এক লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকার মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন এটাই প্রথম। হিসাব অনুযায়ী বার্ষিক বিবেচনায় এই লেনদেন ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলানায় ৩১ শতাংশ বেশি। আর ২০২৪-এর জুলাই মাসের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি।
২০২৪ সালের মার্চে সর্বোচ্চ লেনদেন ছিল এক লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড হলো সদ্যবিদায়ী বছরের নভেম্বরে। নভেম্বর মাসে এক লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। দৈনিক পাঁচ হাজার ২২৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এ মাসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, আলোচিত নভেম্বর মাসে ক্যাশ ইন হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। উত্তোলন (ক্যাশ আউট) হয়েছে ৫০ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এ ছাড়া নভেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা হয়েছে দুই হাজার ৮৪১ কোটি টাকা, বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৬৩২ কোটি, মার্চেন্ট পেমেন্ট বা পণ্য কেনাকাটায় ৭ হাজার ৭৭৫ কোটি ও রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৭৭ কোটি টাকার।
দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে তাৎক্ষণিক আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল আর্থিক সেবা। অর্থ পাঠানোর পাশাপাশি অনেক নতুন সেবাও মিলছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। এর মধ্যে রয়েছে- বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা বিতরণ, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোসহ (রেমিট্যান্স) বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে। দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ মাধ্যমটি।
বর্তমানে বিকাশ, রকেট, নগদসহ ১৩টি এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধিত অ্যাকাউন্ট ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ১২ হাজার ৫১৫ জন। এক মাস আগেও নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৫৭ লাখ। অর্থাৎ এক মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নতুন করে ১৬ লাখ গ্রাহক যুক্ত হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনের সময় অর্থাৎ জুলাই মাসে এ গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৩১ লাখ ২৭ হাজার।
এর আগে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিংসেবা চালুর মধ্যে দিয়ে দেশে এমএফএস যাত্রা শুরু হয়। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংসেবা বিকাশ চালু হয়। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংসেবার বেশির ভাগই বিকাশের দখলে। এরপর রয়েছে ‘নগদ’-এর অবস্থান। বর্তমানে বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ নানা নামে ১৩টি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা দিচ্ছে। গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহকর্মীর বেতনও এখন দেওয়া হচ্ছে এসব সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে। পোশাক খাতসহ শ্রমজীবীরা এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে পরিবার-পরিজনদের কাছে টাকা পাঠাচ্ছেন। ফলে দিন দিন নগদ টাকার লেনদেন কমে আসছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বেক্সিমকোর ৪০ শতাংশ কর্মীর অস্তিত্ব নেই: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বেক্সিমকোর ৪০ হাজার শ্রমিকের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক তদন্তে তার প্রায় ৪০ শতাংশের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তিনি বলেন, বলা হচ্ছে বেক্সিমকোতে ৪০ হাজার শ্রমিক রয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে আমরা এর প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের অস্তিত্ব পাইনি। অনেক তথ্য তৈরি করা হচ্ছে উত্তেজনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সেই সঙ্গে বেক্সিমকোর একটি হাউজিং প্রকল্পে আইএফআইসি ব্যাংকের মাধ্যমে ‘আমার বন্ড’ ছেড়ে তোলা চার হাজার কোটি টাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, মাত্র তিন মাস আগে তোলা সেই চার হাজার কোটি টাকা কোথায় গেলো? এটা একটা অবাক করা বিষয়- টাকা কোথায়?
সংবাদ সম্মেলনে বেক্সিমকোর কর্মীদের ব্যাংকঋণ চাওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, একটা প্রতিষ্ঠানের যদি সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকা চলতি সম্পদ থাকে, তার ৬০ কোটি বেতন দেওয়া তো একটা সেকেন্ডের ব্যাপার।
তিনি বলেন, যে দাবি জানানো হচ্ছিল যে ব্যাংক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না, এলসি খুলে দেওয়া হচ্ছে না- যে প্রতিষ্ঠানের সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকা চলতি সম্পদ তার তো এলসি খোলাও লাগে না, আর ব্যাংকের সুবিধারও প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়।
তিনি আরও বলেন, আমি প্রথমে জেনেছিলাম যে তাদের ২৩ হাজার কোটি টাকার দায় রয়েছে। পরে জানলাম তাদের প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার দায় রয়েছে। ২৩ হাজার কোটি টাকার দায় ধরে নিয়েই চেষ্টা করেছিলাম যে প্রতিষ্ঠানটা কোনো রকমে যাতে চালু হয়। সরকার খুবই দায়িত্বশীল ছিল এটি চালুর জন্য। কারণ এটা একটা জাতীয় সম্পদ এখানে বহু সংখ্যক শ্রমিক নিয়োজিত।
‘দেশের রপ্তানি আয়ের একটা প্রাসঙ্গিক বিষয় রয়েছে। তাই সরকার যথেষ্ট উদার ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে এ বিষয়ে প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু সরকার তাদের (বেক্সিমকো) পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র সহযোগিতা পায়নি। তখন সরকার বাধ্য হয়ে এখানে প্রশাসক নিয়োগ করেছে। প্রশাসককে কোনো ধরনের সাহায্য করা হয়নি। বলা হয়েছে, আইনজীবীর নিষেধ আছে কোনো ধরনের তথ্য শেয়ার না করার জন্য’ বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, নিদারুণ সহযোগিতার কারণে যে উচ্চ পর্যায়ের কাউন্সিল কাজ করেছে, তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি বড়ই জটিল বিষয় হিসেবে উপনীত হয়েছিল। এরপর সরকার তার দায়িত্বের জায়গা থেকে প্রতি মাসে ৬০ কোটি টাকা করে বেতন দিয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নেই। এ বিষয়টি অত্যন্ত জটিল ছিল।
তিনি বলেন, মায়ানগরে বেক্সিমকোর একটি হাউজিং প্রকল্প আইএফআইসি ব্যাংকের মাধ্যমে আমার বন্ডে চার হাজার কোটি টাকা তুলেছে। মাত্র তিন মাস আগে। সেই চার হাজার কোটি টাকা কোথায় গেলো? এটা একটা অবাক করা বিষয়- টাকা কোথায়?
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইন্ডাস্ট্রির যারা অংশীজন আছেন তাদের সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা চেয়েছি- তারা (বেক্সিমকোর শ্রমিক) যাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণ হয়ে যায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু তারা আইনগতভাবে নিজেদের আলাদা করতে চেয়েছেন, তারা আর ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীবাহিনী নয়, এমন আইনি কাঠামোর ভিত্তিতে তারা নিতে চেয়েছিলেন। ওই কাঠামো দেওয়ার জন্য উপদেষ্টা পরিষদ এবং বিশাল সরকারি টিম একসঙ্গে নিয়োজিত হয়ে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছিল। এর মধ্যে এমন দুর্যোগপূর্ণ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ফৌজদারি বিধি লঙ্ঘন করে বিভিন্ন ধরনের সম্পদ এবং যে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে, এর মাধ্যমে দেশের শ্রম সমাজকে অসম্মানিত করা হচ্ছে। গার্মেন্ট শিল্পকে সর্বোপরি দেশকে অসম্মান করা হচ্ছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকোর ৭৫০০ কোটি টাকারও বেশি রিটেইনড আর্নিং রয়েছে জানিয়ে বিষয়টির ফরেনসিক অডিট করবেন কি না, একজন সাংবাদিক এমন প্রশ্ন করলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, কিছুই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঘরে চুরি হয়েছে ঘরই তো নেই। ঘরের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ফের ২০ বিলিয়নের নিচে নামল রিজার্ভ
আওয়ামী লীগ আমলের রেখে যাওয়া ডলার সংকট চলমান রয়েছে। এর মধ্যে আগের আমদানি করা পণ্যের অনেক বিল এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, ২২ জানুয়ারি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ২৫ দশমিক ২২১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ গণনার মান অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে অর্থাৎ ১৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার।
চলতি বছরের শুরুতে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ ছিল ২১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বিয়োগ করলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ পাওয়া যায়। তবে এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, তা হলো ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ। এ তথ্য আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে আইএমএফের এসডিআর খাতে থাকা ডলার, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা এবং আকুর বিল বাদ দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাব করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি আছে। প্রতি মাসে ৫ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামে। সে সময় বৈদেশিক ঋণ ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কেনার মাধ্যমে রিজার্ভ বাড়ানো হয়। আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন গভর্নর এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে। আবার বিভিন্ন সোর্স থেকে ডলার যোগানের চেষ্টা করছে। তবে আগের দায় পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভ কিছুটা কমেছে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বেক্সিমকোর ৪২ হাজার কর্মীর পাওনা ২২ হাজার কোটি টাকা
দেশের আর্থিক খাতে ব্যাপক অনিয়মে জড়িত বেক্সিমকো গ্রুপের লে-অফ থাকা গার্মেন্টস ও এর সাথে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান সচল করতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা। তাদের দাবি, কারখানা খুলে না দিলে ৪২ হাজার মানুষ চাকরি হারাবে। বেক্সিমকোর কাছে এসব শ্রকিদের ২২ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বেক্সিমকো ফ্যাশন লিমিটেডের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান সৈয়াদ মো. এনাম উল্লাহ, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান আব্দুল কাইয়ুম বক্তব্য রাখেন।
এসময় লে-অফ প্রত্যাহার করে বেক্সিমকোর গার্মেন্টস ডিভিশনের সব কারখানা খুলে দেওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি বাণিজ্য শুরু ও বিদেশিদের কার্যাদেশ প্রাপ্তির সুবিধার্থে ব্যাংকিং কার্যক্রম ও ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার অনুমতি দেওয়ার দাবি জানান তারা। সেই সঙ্গে কারখানা ও ব্যবসা চলমান রেখে সব বকেয়া বেতন এবং কোম্পানির দায়-দেনা পরিশোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সৈয়াদ মো. এনাম উল্লাহ বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের গার্মেন্টস ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ৪২ হাজার চাকরিজীবীকে লে-অফের আওতায় জনতা ব্যাংকের ঋণ সুবিধায় জানুয়ারি-২০২৫ পর্যন্ত বেতনাদি প্রদান করা হচ্ছে। সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই বিশাল জনবলকে আর কোনো প্রকার আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে না। যার প্রেক্ষিতে ফেব্রুয়রি-২০২৫ মাস থেকে ১৬টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে এবং এগুলোতে কর্মরত প্রায় ৪২ হাজার মানুষ চাকরি হারাবে। সেই সঙ্গে এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িওয়ালা, দোকানদার, অটোরিকশা চালক, স্কুল-মাদারাসা-কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে যাবে, যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবন ও বেঁচে থাকার সব মৌলিক চাহিদা জড়িত।
তিনি বলেন, বেক্সিমকোর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্রুপ বন্ধ হয়ে গেলে ৪২ হাজার কর্মজীবী মানুষ চাকরি হারাবে। তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ২ লাখ পরিবারের সদস্য এবং এই শিল্প ও কর্মজীবীদের কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কর্মসংস্থানের আরও প্রায় ৮ লাখ মানুষের রিজিক বন্ধ হয়ে যাবে। এই ৪২ হাজার কর্মজীবী মানুষের মধ্যে প্রায় ২ হাজার প্রতিবন্ধী, শতাধিক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ এবং ৫ হাজারের মতো ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি রয়েছেন যাদের আমরা পরম মমতায় আর যত্নে সমাজ ও পরিবারের বোঝা হওয়া থেকে রক্ষা করছি। সরকারের সিদ্ধান্তের যদি কোনো পরিবর্তন না হয় তাহলে এরা সবাই মানবেতর জীবনের দিকে এগিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে প্রায় ৪২ হাজার নতুন বেকার এবং ব্যবসা-বাড়িভাড়া বঞ্চিত লাখো মানুষ নৈরাজ্য আর অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে নতুন সংকট তৈরি করবে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে লে-অফ প্রত্যাহার করে ১৬টি বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলা হয়, বেক্সিমকো শুধু বাংলাদেশে নয় এশিয়া মহাদেশের একটি বড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রুপ এবং শুধু বেক্সিমকো গার্মেন্টস ডিভিশনই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে প্রধান ভূমিকা পালন করতো। আজ সেই গার্মেন্টস ও সংশ্লিষ্ট কারখানাগুলো বন্ধ করে রাখায়, ব্যাংকিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখায় সরকার ও জনগণ সেই বিশাল বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা আমাদের জাতীয় আয় ও রিজার্ভ ঘাটতির অন্যতম কারণ।
এনাম উল্লাহ বলেন, বর্তমান সময়ের উপযোগী মেশিনারিজ, প্রযুক্তি আর ৪২ হাজার দক্ষ জনবল নিয়ে তিল তিল করে গড়ে ওঠা আজকের বেক্সিমকোর গার্মেন্টস শিল্প মরিচা ধরার অপেক্ষায়। আমাদের মাসিক প্রায় ৪০-৫০ লাখ পিস গার্মেন্টস পণ্য তৈরির সক্ষমতা, এশিয়ার বৃহত্তম ওয়াশিং প্ল্যান্ট এবং অত্যাধুনিক মেশিনে সজ্জিত প্রিন্টিং, এমব্রয়ডারি ও এক্সেসরিজ তৈরির কাখানা, টেক্সটাইল মিল ও দক্ষ জনবল বায়ারদের প্রধান আকর্ষণ।
তিনি আরও বলেন, কম্পোজিট গ্রুপ হওয়ায় শুধু তুলা ও কেমিক্যাল ক্রয় ছাড়া গার্মেন্টস তৈরির অন্য কিছুই বাইরে থেকে ক্রয় বা আমদানি করতে হয় না। এসব সুবিধা বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বর্তমান থাকায় বায়াররা আমাদের কার্যাদেশ দিতে সবসময় তৎপর থাকে। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকালীন বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও বেক্সিমকো গার্মেন্টস ডিভিশন রপ্তানিতে শীর্ষে ছিল। এ রকম একটি লাভজনক, সুবিধাজনক এবং শ্রমঘন প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দিয়ে ১০ লাখ মানুষের মুখের আহার কেড়ে নিয়ে, জাতীয় প্রবৃদ্ধির ব্যাহত করে বর্তমান জননন্দিত সরকার কি সুবিধা লাভ করছেন আমরা জানি না। তাই সবিনয়ে অনুরোধ, অবিলম্বে আমাদের কারখানাগুলোকে খুলে দিয়ে ৪২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও ১০ লাখ মানুষের খেয়েপরে বেঁচে থাকার ব্যবস্থাটুকু নিশ্চিত করা হোক।
ব্যাংকিং ও ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সুবিধা প্রদান করার দাবি জানিয়ে বেক্সিমকোর এই কর্মী বলেন, ব্যাংকিং ও এলসি সুবিধা ছাড়া দেশি-বিদেশি কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য করা যায় না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, ৬ মাস যাবৎ বেক্সিমকোর গার্মেন্টস ডিভিশনের সব ব্যাংকিং ও এলসি সুবিধা বন্ধ রাখা হয়েছে। একদিকে কারখানা বন্ধ, উৎপাদন নেই অন্যদিকে দায়-দেনার পরিমাণ প্রচার করে তা পরিশোধের জন্য সব প্রকার চাপ অব্যাহত। সেই প্রেক্ষিতে বলতে হয়, আয় থেকে দায় শোধ, ব্যাংকিং ও ঋণ ব্যবস্থাপনার মূলমন্ত্র যদি হয়ে থাকে তাহলে বেক্সিমকো গ্রুপের সব দায়-দেনা নিয়মিতভাবে পরিশোধের জন্য এর বন্ধ রাখা প্রতিটি কারখানা খুলে দিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরুর কোনো বিকল্প নেই।
‘আপনাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বন্ধ থাকা ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি ওপেন করে দেওয়া। কিন্তু সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে দায় পরিশোধের চাপ সৃষ্টি শুধু অমানবিকই নয়, অন্যায্যও বটে। এই দায় বহন করার সক্ষমতা কোনো সরকারের বা ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। কারখানা বন্ধ রাখার প্রক্রিয়া যতই প্রলম্বিত হবে বেক্সিমকোর দায়ও তাতে বাড়তে থাকবে। তাই অবিলম্বে বায়ারদের কার্যাদেশ পাওয়ার সুবিধার্থে বেক্সিমকোর ব্যাংকিং সুবিধা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা নিয়ে উৎপাদন শুরু করার মাধ্যমে সব দায়-দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছি।’
বকেয়া বেতন ও অন্যান্য পাওনাদি পরিশোধ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের কাছে শ্রমিকদের অর্জিত ছুটির ২ বছরের টাকা জমে গেছে এবং অফিসারদের ৪ মাসের বেতনের টাকা বকেয়া রয়ে গেছে। বর্তমান আর্থিক দুরবস্থার ভেতর এই বকেয়াগুলো পাওয়া গেলেও সন্তানদের স্কুল-কলেজে ভর্তির খরচ মিটিয়ে ফেলা যেতো। টাকার অভাবে সন্তানদের নতুন বছরে, নতুন ক্লাসে ভর্তি করানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বেক্সিমকোর যে পরিমাণ ঋণ রয়েছে তা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে আদায় করা সম্ভব না। এই ঋণ আদায় করতে হলে প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা বেশকিছু প্রস্তাবও দিয়েছি। এর মধ্যে একটি প্রস্তাব ছিল ২৩ একর জমি বন্ধক রেখে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া। এই ঋণ চাওয়া হয় ৪ মাসের জন্য। এই ঋণ দেওয়া হলে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করে বকেয়া ঋণও পরিশোধ করতে পারবো। সেক্ষেত্রে বছরে ৪০০ কোটি টাকার মতো বকেয়া ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব, এ ধরনের একটি প্ল্যানও আমরা দিয়েছি।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে এনাম উল্লহ বলেন, আমরা মালিক বলতে এখন আমাদের এমডি ওসমান কায়সার চৌধুরীকে বুঝি। এমডি আছেন, রিসিভার আছেন। তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এমডি বেক্সিমকোর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সব ধরনের প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে।
এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
৬ মাসে রাজস্ব ঘাটতি রেকর্ড ৫৭ হাজার কোটি টাকা
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ছয়মাস শেষে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রেকর্ড ৫৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ঘাটতি রয়েছে। শুধু ঘাটতি নয়, একই সময়ে গত অর্থবছরের চেয়েও রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
গত অর্থবছর একই সময় রাজস্ব আদায় হয় প্রায় এক লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা, যেখানে চলতি অর্থবছর ছয়মাসে আদায় হয়েছে প্রায় এক লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআর কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, অস্বাভাবিক লক্ষ্যমাত্রার কারণে ঘাটতি বাড়ছে। এছাড়া জুলাই ও আগস্ট মাসে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকটি কারণে আদায় কমে গেছে।
এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যানের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর এনবিআরকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথমার্ধের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ১৪ হাজার ১৪৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। যার বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৪১৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ ছয়মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৭ হাজার ৭২৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।
অন্যদিকে, গত অর্থবছর একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে এক লাখ ৫৭ হাজার ৯৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় এক হাজার ৫৬৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস-এই তিন খাতের মধ্যে ভ্যাটের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক। আয়কর খাতে ছয়মাসে চলতি অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৭৬ হাজার ৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫২ হাজার ১৬২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। যেখানে গত অর্থবছর একই সময় আদায় হয়েছে ৫০ হাজার ৮৪৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই খাতে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
অপরদিকে কাস্টমস খাতে প্রথমার্ধে ৬১ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৯ হাজার ৮০ কোটি টাকা। যেখানে গত অর্থবছর একই সময় আদায় হয়েছে ৪৮ হাজার ৭৮৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ।
আর ভ্যাট খাতে ৭৬ হাজার ৩১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫৫ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। তবে গত অর্থবছর একই সময় আদায় হয়েছে ৫৮ হাজার ৩৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ভ্যাট খাতে প্রথমার্ধে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, বড় প্রকল্পগুলোতে অর্থ ছাড় কমে যাওয়াসহ বেশ কয়েকটি কারণে আদায় কমে গেছে। চলতি অর্থবছর আইভাস থেকে রাজস্ব আদায়ের হিসাব নেওয়া হচ্ছে। ফলে মাঠ পর্যায়ের কোন অফিস বাড়তি কোনো রাজস্ব দেখানোর সুযোগ নেই। গত অক্টোবর থেকে রাজস্ব আদায়ে কিছুটা গতি বেড়েছে এবং সর্বশেষ ডিসেম্বরে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আদায় বেড়েছে প্রায় ছয় শতাংশ। তারপরও চলতি অর্থবছরে রাজস্বে বড় ঘাটতি।
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের বাজেটে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়। যা জিডিপির ৯.৭ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। আর অন্যান্য উৎস হতে ৬১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে আয়কর, মুনাফা ও মূলধনের ওপর কর থেকে আসবে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, ভ্যাট থেকে ১ লাখ ৮২ হাজার ৭৮৩ কোটি, সম্পূরক শুল্ক ৬৪ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা, ৪৯ হাজার ৪৬৪ কোটি, রপ্তানি শুল্ক ৭০ কোটি, ৫ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা ও অন্যান্য কর থেকে আসবে ১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা।