অর্থনীতি
সবজির বাজারে স্বস্তি, মাছ-মুরগির দাম চড়া

শীত বাড়ার সাথে সাথে নতুন টাটকা সবজিতে ভরে গেছে বাজার। কমেছে দামও। বাজারে এই মুহূর্তে শীতকালীন সব সবজির দামই ভোক্তা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল আছে ডিমের দামও। তবে, অস্বস্তি বিরাজ করছে চাল, মুরগি ও মাছের বাজারে।
আজ শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাজধানীর মিরপুর, কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন পরিস্থিতি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন সবজির সরবরাহ অনেক বেড়েছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি ও টমেটোর দাম কেজিতে কমেছে ১০ টাকা করে। বাকি সবজিগুলোও বিক্রি হচ্ছে বেশ সহনীয় দামে।
প্রতি কেজি গোল ও লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা দরে। প্রতি কেজি মুলা ১৫-২০টাকা, পেঁপে ও শালগম ২০-৩০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ও বাধাকপি ১০-২০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৩০-৫০ টাকা ও কলার হালি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৬০-৮০ টাকা, শিম ৩০-৫০ টাকা, শসা ও ক্ষিরা ৩০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সে তুলনায় করলা, পটল, ঝিঙা ও ধুন্দলের দাম কিছুটা বেশি; প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়। এছাড়া চিচিঙা ৫০-৬০ টাকা, গাজর ৪০-৬০ টাকা ও টমেটো ৪০- ৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। সেইসঙ্গে লালশাক, পালং শাক, কলমি শাক ও কুমড়া শাকসহ বিভিন্ন শাকের আঁটি মিলছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়।
স্বস্তি ফিরেছে আলুর দামেও। গত সপ্তাহে যে আলু ৫৫-৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। ঝাঁঝ কমেছে পেঁয়াজের বাজারেও। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ এখন ৫০-৫৫ টাকা এবং ইন্ডিয়ান নতুন পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে, রসুন এবং আদা এখনো কিনতে হচ্ছে চড়া দাম দিয়েই। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) দেশি রসুন কেজি প্রতি ২৫০ টাকা ও ইন্ডিয়ান রসুন কেজি প্রতি ২২০ টাকা এবং চীনা আদা কেজি প্রতি ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে গত সপ্তাহের মতো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০-৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস প্রতি কেজি ১১০০-১১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে, চরম অস্বস্তি বিরাজ করছে মুরগির বাজারে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এখন। আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৩৪০ টাকা দরে।
এ ছাড়া মাছের বাজারেও নেই কোনও সুসংবাদ। আকারভেদে প্রতিকেজি পাবদা মাছ ৩৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ টাকা, ছোট রুই ২৫০-৩০০ টাকা, ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের রুই ৪০০-৪৫০ টাকা, টেংরা ৬৫০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ টাকা ও পাঙাশ আকারভেদে ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে।
ভরা মৌসুমে ভেলকি দেখাচ্ছে চালের বাজারও। প্রতি কেজি নাজিরশাইল ৮০-৯০ টাকা, মান ভেদে মিনিকেট ৮৫-৯০ টাকা, বিআর- ২৮ চাল ৬০- ৬৫ টাকায়, মোটা চাল (গুটি স্বর্ণা) ৫৫- ৫৮ টাকা, পুরোনো আটাশ ৬৫ টাকা, পাইজাম ৬০ টাকা, কাটারিভোগ ৮৫ টাকা, বাসমতি ৯৪- ৯৮ টাকা, পোলাওর চাল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ও আমন ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চালের দামের এই ঊর্ধ্বগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভোক্তারা। তাদের প্রশ্ন, ৭০ টাকার নিচে ভালো কোনো চাল নেই। ভরা মৌসুমে চালের এতো দাম হলে, সামনের রোজায় কী হবে? অভিযোগ করে অনেকে বলেন, বাজার মনিটরিং না থাকার কারণেই যাচ্ছেতাইভাবে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
কাফি

অর্থনীতি
কাঠামোগত পরিবর্তন আসছে রাজস্ব প্রশাসনে

সরকারের রাজস্ব প্রশাসনে বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন আসছে। নীতিগত পরিকল্পনা ও প্রশাসনিক বাস্তবায়নের দ্বৈত প্রবাহ তৈরির লক্ষ্যে পৃথকভাবে ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব প্রশাসন বিভাগ’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ উদ্দেশ্যে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করা হয়েছে।
অধ্যাদেশের প্রাথমিক খসড়া চূড়ান্ত করতে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্যোগে একাধিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচ দফা সভার পর কিছু ধারা পরিমার্জন করে অধ্যাদেশটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভা উপকমিটি এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মতামত নেওয়া হয়েছে।
অধ্যাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলো হলো-
সংবিধানের ৫৫(৬) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনে একটি মন্ত্রণালয়কে একাধিক বিভাগে ভাগ করতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হবে, যা নীতির কার্যকারিতা ও তদারকির দায়িত্বে থাকবে।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (অর্থ: শুল্ক ও আবগারি) বিধিমালা, ১৯৮০ অনুসারে নতুন বিধি ও কাঠামো প্রণয়ন করা হবে।
সরকারি সম্পদের ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণে নিরীক্ষা ও প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক করা হবে। প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দিষ্ট প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
নতুন কাঠামোয় এই ক্যাডার থেকে দুই সচিব নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।
আর বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশটি অনুমোদনের জন্য তোলা হতে পারে।
এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত
সচিবালয় সূত্র জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ—রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ—প্রতিষ্ঠা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ১২ মে এ বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
সরকার জানায়, নতুন সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হলো রাজস্ব আহরণ থেকে নীতি প্রণয়ন আলাদা করে দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বার্থ সংঘাত কমানো এবং রাজস্ব আহরণের আওতা সম্প্রসারণ।
গত ৫০ বছরে এনবিআর ধারাবাহিকভাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৭.৪ শতাংশ, যা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম। বৈশ্বিক গড় অনুপাত ১৬.৬ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় এটি ১১.৬ শতাংশ। সরকারের মতে, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে এ অনুপাত অন্তত ১০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
বিদ্যমান সমস্যার চিত্র
বর্তমান কাঠামোয় কর নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন একই প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকায়:
• নীতি ও বাস্তবায়নের মধ্যে স্বার্থ সংঘাত তৈরি হয়।
• কর আদায়কারীরা কাঠামোগত জবাবদিহির বাইরে থাকেন।
• কর ফাঁকিদাতাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপে প্রায়ই গাফিলতি হয়।
• কর আদায়কারীদের কর্মদক্ষতা যাচাইয়ের কোনো বস্তুনিষ্ঠ সূচক নেই।
ব্যবসায়ী মহল অভিযোগ করে আসছে যে, ‘বাংলাদেশে করজালের আওতা এখনো সীমিত। রাজস্ব নীতি নির্ধারণে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ থাকলে তা বৈজ্ঞানিক ও তথ্যভিত্তিক হবে। এটি মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণে বড় ভূমিকা রাখবে। নীতি ও বাস্তবায়ন একসঙ্গে থাকলে প্রায়ই স্বার্থসংঘাত হয়। বিভাগ আলাদা হলে জবাবদিহি ও দক্ষতা দুটোই বাড়বে। তবে এজন্য জনবল উন্নয়ন জরুরি।’
সরকারি সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন নীতি কার্যকর হলে— সরকারি সম্পদের সংরক্ষণ ও ব্যবহারে দক্ষতা বাড়বে, অনিয়ম ও অপচয় অনেকটাই কমে আসবে এবং আর্থিক সাশ্রয় হবে এবং সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে।
অর্থনীতি
জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৫ শতাংশ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণ চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৪.৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বুধবার (২০ আগস্ট) এনবিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, এনবিআর চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত অর্থবছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুলাই মাসে বিগত বছরের জুলাই মাসের তুলনায় ৫ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩ শতাংশ।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫ শতাংশ।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫ হাজার ১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫ শতাংশ।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮ হাজার ১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২ শতাংশ।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন বলে জানিয়েছে এনবিআর।
কাফি
অর্থনীতি
বাধ্যতামূলক ছুটির মধ্যে অফিস করছেন বিএফআইইউ প্রধান

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলামের একাধিক আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন,তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএফআইইউ প্রধান ছুটিতে থাকবেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অথচ অথচ আজ বুধবার স্বশরীরে অফিস করছেন বিএফআইইউ শাহীনুল। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে উত্তোজনা তৈরি হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের একটি অংশ অবিলম্বে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গভর্নর বরাবর স্মারক লিপি দেয়।
এর আগে গত সোমবার শাহীনুলের একাধিক আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শাহীনুল ইসলাম এটিকে ভুয়া দাবি করলেও প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ভিডিও সঠিক বলে জানতে পেরেছে।
এছাড়া, বিতর্কিত পরিবহন ব্যবসায়ী এনা পরিবহনের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহকে ফ্রিজ করার পর সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দিয়েছেন এএফএম শাহীনুল ইসলাম। এক্ষেত্রে অনৈতিক কিছু হয়েছে কিনা সে বিষয়েও তদন্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
অর্থনীতি
৭-৮ বছরে বাংলাদেশ হবে ক্যাশলেস ইকোনমির বড় কেন্দ্র: গভর্নর

দেশে ক্যাশলেস ইকোনমির ভিত্তি শক্তিশালী হচ্ছে। আগামী ৭-৮ বছরে বাংলাদেশ ক্যাশলেস ইকোনমির একটি বড় কেন্দ্র হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
বুধবার (২০ আগস্ট) সকালে রাজধানীতে উন্নয়ন কৌশলবিষয়ক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, নগদ লেনদেন দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে, এর মাধ্যমে কর ফাঁকি দেয়াও সহজ। এখন থেকে এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাহলে সামষ্টিক অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। একইসঙ্গে আর্থিক খাতে লেনদেনে নতুনত্ব আনা প্রয়োজন, যাতে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ‘ন্যানো লোন’ ধারণা জনপ্রিয় হচ্ছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার মানুষ এ ধরণের ঋণ সেবা পাচ্ছে। ৭ হাজার কোটি টাকা এভাবে ঋণ দেওয়া হয়েছে।
অর্থনীতি
পুনঃতফসিল ঋণের ৩৮ শতাংশ ফের খেলাপি

খেলাপি ঋণ কম দেখাতে দেশের ব্যাংকগুলো ঝুঁকছে পুনঃতফসিলের দিকে। এখন চাইলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেরাই ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারে। সমাপ্ত ২০২৪ সালেই ব্যাংক খাতে ৮৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিশেষ সুবিধা নিয়ে খেলাপিরা নবায়ন করেছেন। ওই বছর পর্যন্ত নবায়ন করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে পুনরায় এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়েছে। অর্থাৎ নবায়ন করা ঋণের মধ্যে পুনরায় খেলাপি হয়েছে ৩৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ঋণ। নবায়ন করা ঋণ পুনরায় খেলাপি হওয়ার ক্ষেত্রে এটিই সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ঋণ পুনঃতফসিল হচ্ছে, কোনো একটি ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সময়সীমাকে এগিয়ে নিয়ে আসা বা পিছিয়ে দেওয়া, অর্থাৎ বাড়িয়ে দেওয়া। তবে, বাংলাদেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেই পুনঃতফসিল বা নবায়ন করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত বছর ব্যাংক খাতে মোট ৮৬ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে। এ ঋণসহ নবায়ন করা মোট ঋণের স্থিতি গত বছর শেষে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গত বছর পর্যন্ত পুনরায় খেলাপি হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ। যে কারণে বিশেষ ছাড়ে নবায়ন করেই খেলাপি ঋণ কমানো যাচ্ছে না। বাকি ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার নবায়ন করা ঋণ এখনও নিয়মিত হিসাবে রয়ে গেছে। অর্থাৎ নবায়ন করা ঋণের মধ্যে পুনরায় খেলাপি হয়েছে ৩৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ঋণ। নিয়মিত হিসাবে রয়েছে ৬১ দশমিক ৫৮ শতাংশ ঋণ।
নবায়ন করা ঋণের মধ্যে গত বছরই সবচেয়ে বেশি খেলাপি হয়েছে। ২০২৩ সালে এ ঋণের স্থিতি ছিল ৫৪ হাজার ৬০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে অর্ধেকের বেশি নবায়ন করা ঋণ গত বছরে খেলাপি হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ব্যাংক খাতে লুটপাটের চিত্র প্রকাশ হচ্ছে। ওই সময়ে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের ঋণ বিশেষ ছাড়ে নবায়ন করা হয়েছিল। সেগুলোর কিস্তি পরিশোধ না করলেও ব্যাংক তা খেলাপি করেনি। নিয়মিত হিসাবেই রেখে দিয়েছিল। সরকার পতনের পর তা খেলাপি করা হয়েছে। যে কারণে নবায়ন করা ঋণ গত বছর বেশি খেলাপি হয়েছে।
তথ্য বলছে, ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের প্রবণতা বেড়েছে। যে কারণে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। মূলধন ঘাটতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। এতে ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। খেলাপি ঋণের অর্ধেকেরও বেশি রয়েছে শীর্ষ ৫টি ব্যাংকে।