জাতীয়
সড়কে প্রাণহানি বেড়েছে ১২ শতাংশ

২০২৪ সালে দেশে ৬ হাজার ৯২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২৯৪ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১২ হাজার ১৯ জন। ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছর দুর্ঘটনা বেড়েছে ০.২৩ শতাংশ। আর প্রাণহানি বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। আহত বেড়েছে ৫.৩৬ শতাংশ। এছাড়াও ২০২৪ সালে এসব দুর্ঘটনায় মোট ক্ষতির আর্থিক মূল্য ২১ হাজার ৮৮৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) তাদের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরে বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংস্থাটি নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম এবং সংস্থার নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
রোড সেফটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে নারী ৮৯৩ জন ও শিশু ১ হাজার ১৫২ জন। ২ হাজার ৭৬১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৬০৯ জন। এটি মোট নিহতের প্রায় ৩৬ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার মোট দুর্ঘটনার প্রায় ৪০ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৫৩৫ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২১ শতাংশেরও বেশি। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯৮৪ জন।
২০২৪ সালে ১১৮টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৫২ জন নিহত ও ১৬১ জন আহত হয়েছেন এবং ৩৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৩৪৭টি রেল দুর্ঘটনায় ৩২৪ জন নিহত এবং ২৭৭ জন আহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলো সবচেয়ে বেশি হয়েছে আঞ্চলিক সড়কে। এর সংখ্যা ২ হাজার ৭৩৬টি। এটি মোট দুর্ঘটনার ৩৯ শতাংশের বেশি। আর ২ হাজার ৩৫৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ৯৭২টি গ্রামীণ সড়কে, ৭৮৪টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৭৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
দুর্ঘটনার মধ্যে সবেচয়ে বেশি হয়েছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, সংখ্যা ২ হাজার ৯০৮টি। এছাড়া ১ হাজার ৫২৭টি মুখোমুখি সংঘর্ষ এবং ১ হাজার ৫৬২টি পথচারীকে চাপা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ৭৮২টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৪৮টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
রোড সেফটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো পণ্যবাহী যানবাহন। এর পরেই আছে মোটরসাইকেল, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান ইত্যাদি), যাত্রীবাহী বাস, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্রা-টমটম) ইত্যাদি। ২০২৪ সালে দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহনের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৭৯৬টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল পণ্যবাহী যানবাহন, সংখ্যা ৩ হাজার ১৪৫টি। মোটরসাইকেলের সংখ্যা ২ হাজার ৯৭৮টি। সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে সকালে, ১ হাজার ৮৭৪টি। আর রাতে হয়েছে ১ হাজার ৫৪৮টি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে ২০২৪ সালে ৩৯৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪৬ জন নিহত এবং ৪৮২ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৬ শতাংশ। বাকিদের মধ্যে নারী ১৩ এবং শিশু প্রায় ১০ শতাংশ। এসব দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পথচারী ৫১ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া আছে মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী ৩৯ শতাংশ এবং বাস, রিকশা, সিএনজি ইত্যাদি যানবাহনের চালক ও আরোহী ৯ শতাংশের বেশি। রাজধানীতে ঘটা দুর্ঘটনার মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি হয় রাতে।
এ প্রতিবেদনের বিষয়ে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, কর্তৃপক্ষের নানা প্রকার অনিয়ম ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় অগণিত মানুষ হতাহত হচ্ছেন। কিন্তু এসব দুর্ঘটনার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে না। প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহির অভাবে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি হচ্ছে না। সংজ্ঞা অনুযায়ী, বাংলাদেশের অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনাই কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড।
রোড সেফটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের সড়ক ও সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কাজে বিআরটিএ, ডিটিসিএ, বাংলাদেশ পুলিশ, বিআরটিসি, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ইত্যাদি নানা প্রতিষ্ঠান জড়িত। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব প্রকট। প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনা এবং কাঠামোগত দুর্বলতা রয়েছে। জবাবদিহি নেই বললেই চলে। এসব কারণেই সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না, দুর্ঘটনাও কমছে না।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয়
বইমেলায় বিশৃঙ্খলায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ

বইমেলার স্টলে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একইসঙ্গে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দোষীদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, প্রধান উপদেষ্টা একুশে বইমেলায় একটি বইয়ের দোকানে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
এই হামলা বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকার এবং দেশের আইনের প্রতি অবজ্ঞার পরিচয় দেয়। এই ধরনের সহিংসতা এই মহান বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উন্মুক্ত মনের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, যা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার সমর্থনে জীবন উৎসর্গকারী ভাষা শহীদদের স্মরণ করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুলিশ ও বাংলা একাডেমিকে এই ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশকে মেলায় নিরাপত্তা জোরদার করার এবং এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরকার সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দেশে যে কোনো ধরনের গণ সহিংসতার ঘটনা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে।
এর আগে সন্ধ্যায় বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বই রাখায় একুশে বইমেলায় ‘সব্যসাচী প্রকাশনা’র স্টলে একদল বিক্ষুব্ধ লোকের রোষানলে পড়েন প্রকাশক শতাব্দী ভব। ‘তৌহিদী জনতা’র নামে একদল লোক স্টলটিতে গিয়ে প্রকাশককে ঘিরে ধরে স্লোগান দেয়। এতে উত্তেজনা দেখা দিলে সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয় স্টলটি এবং প্রকাশক শতাব্দী ভবকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
মব বন্ধ না করলে ‘ডেভিল’ হিসেবে ট্রিট করা হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ

কথিত আন্দোলন আর মবের মহড়া এখন থেকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।
কথিত আন্দোলন বা মবের নামে রাষ্ট্রকে অকার্যকর ও ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা করা হলে একবিন্দু ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
তিনি লিখেছেন, ‘মব করা বন্ধ করেন, আর যদি মব করেন, তাইলে আপনাদেরও ডেভিল হিসেবে ট্রিট করা হবে।’
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ফেসবুক পোস্টে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে মাহফুজ আলম লেখেন, ‘অভ্যুত্থানের পক্ষে হলে মব করা বন্ধ করেন, আর যদি মব করেন, তাইলে আপনাদেরও ডেভিল হিসেবে ট্রিট করা হবে। আজকের ঘটনার পর আর কোনও অনুরোধ করা হবে না। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া আপনাদের কাজ না।’
পোস্টে আরও লেখেন, ‘কথিত আন্দোলন আর মবের মহড়া আমরা এখন থেকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করবো। রাষ্ট্রকে অকার্যকর ও ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা করা হলে একবিন্দু ছাড় দেওয়া হবে না।’
তৌহিদী জনতাকে উদ্দেশ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তৌহিদি জনতা! আপনারা দেড় দশক পরে শান্তিতে ধর্ম ও সংস্কৃতি পালনের সুযোগ পেয়েছেন। আপনাদের আহমকি কিংবা উগ্রতা সেই শান্তি বিনষ্টের কারণ হতে যাচ্ছে।’
সতর্ক করে মাহফুজ আলম বলেন, ‘জুলুম করা থেকে বিরত থাকেন, নইলে আপনাদের ওপর জুলুম অবধারিত হবে। লা তাযলিমুনা ওলা তুযলামুনা- জুলুম করবেন না, জুলুমের শিকার ও হবেন না। এটাই আপনাদের কাছে শেষ অনুরোধ!’
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
সমাজবিরোধীরা কোনো ব্যক্তিকে হুমকি দিলে কঠোর ব্যবস্থা

কোনো ব্যক্তিকে কোনো ধরনের হুমকি দেওয়া আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। যারা হুমকি দেবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের (পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স) এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সমাজবিরোধীরা দেশের নানান শ্রেণি-পেশার মানুষকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছে বলে পুলিশের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কোনো ব্যক্তিকে কোনো ধরনের হুমকি দেওয়া আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ।
কোনো ব্যক্তি এ ধরনের হুমকির শিকার হলে তৎক্ষণাৎ জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ অথবা নিকটস্থ থানায় জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি আরও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ দেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বদ্ধপরিকর।
সমাজবিরোধী শক্তি কোনো শান্তিপ্রিয় নাগরিককে হুমকি দিলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের এই কর্মকর্তা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
সাবেক এমপি মজিদ খান গ্রেপ্তার

হবিগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল মল্লিক।
তিনি বলেন, হবিগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খানের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে। হবিগঞ্জের একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
আব্দুল মজিদ খান ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ বিএনপির

দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অনুরোধ ও তাগিদ দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় তারা এই তাগিদ দেন।
বৈঠক শেষে এদিন রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাদের (বিএনপি নেতাদের) জানিয়েছেন আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কবে হবে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে বিএনপির তিনজন শীর্ষ নেতা এসেছিলেন। তারা হলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
সাক্ষাৎকালে নেতারা দেশব্যাপী কিছু উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন।
‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যারা অন্যায় অত্যাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের সবাইকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে বিচার কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার তাগিদ দেন তারা। বিএনপি নেতারা বলেন, হাসিনা সরকার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এক লাখ ২৫ হাজার মামলা করে। এসব হয়রানিমূলক ও গায়েবি মামলা উল্লেখ করে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলেন তারা।’
শফিকুল আলম আরও বলেন, এছাড়া অপারেশন ডেভিল হান্টে যেন মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন বিএনপি নেতারা। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি নেতাদের আশ্বস্ত করে বলেন, কোনোভাবেই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতে দেওয়া হবে না। যারা যারা অন্যায় অত্যাচারের সঙ্গে জড়িত ও যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে- তাদেরকেই অপারেশন ডেভিল হান্টের (আইনের) আওতায় আনা হচ্ছে। এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে মনিটর করা হচ্ছে। কোনো ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হোক এটা আমরা চাই না।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি নেতাদের সাক্ষাৎকালে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বিএনপি নেতাদের জানান গায়েবি মামলাগুলো নিষ্পত্তির ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হবে। মামলাগুলো নিষ্পত্তির ব্যাপারে বিলম্বের কারণ হিসেবে আসিফ নজরুল বলেন, যারা সরকারি পিপি ছিলেন তাদের অনেকেই পালিয়ে ছিলেন। ফলে মামলাগুলো ভালোভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হয়নি।
গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি, তবে জাতীয় নির্বাচন দ্রুততম সময়ে চাইছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ডিসেম্বর ও আগামী বছরের জুন মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে বলা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে জাতীয় ঐক্য কমিশন (প্রধান উপদেষ্টাকে প্রধান ও ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানরা সদস্য) ও উপদেষ্টারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করে নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করবেন বলে তিনি জানান।
দেশব্যাপী সহিংসতার ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীরা সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর। তিনি সম্প্রতি সহিংসতার বিষয়ে বিবৃতি দেওয়ার পর কোথাও আর কোনো কিছু ঘটেনি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
বইমেলায় একটি স্টলে ভাঙচুর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, বিষয়টি আমরা কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে বাংলা একাডেমির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিস্তারিত ঘটনা জানানোর জন্য বলা হয়েছে।