অর্থনীতি
মূল্যস্ফীতি না কমলেও বেড়েছে অনেক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা

সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলে দফায় দফায় ঋণের সুদহার বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নীতি সুদহার ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদহারও সর্বোচ্চ ৯ থেকে বেড়ে এখন প্রায় ১৬ শতাংশে পৌছেছে। সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির পরামর্শ মানতে গিয়ে দেশে বেড়ে গিয়েছে ‘কস্ট অব ডুইং বিজনেস’ বা ব্যবসা পরিচালনার ব্যয়। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না এসে উল্টো আরো বেড়েছে।
আইএমএফের পরামর্শ দেশের সাধারণ মানুষের কোনো কল্যাণে না এলেও এর সুফল বেশ ভালোভাবেই ঘরে তুলে নিয়েছে দেশের কিছু ব্যাংক। তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে আর্থিকভাবে সবল থাকা প্রায় সব ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কোনো কোনো ব্যাংকের মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে শতভাগেরও বেশি।
বিদায়ী বছরের লাভ-ক্ষতির হিসাব গতকালের মধ্যেই চূড়ান্ত করেছে দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির এ মুনাফা ছিল ১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে সদ্য বিদায়ী বছর ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭২ দশমিক ২৯ শতাংশ।
গত বছর রেকর্ড ২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে পূবালী ব্যাংক পিএলসি। ২০২৩ সালে যা ছিল ১ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। এ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংক দুটির মতো দেশের অন্যান্য সবল ব্যাংকেরও পরিচালন মুনাফায় বড় প্রবৃদ্ধির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী জানান, গত বছর দেশের ব্যাংক খাতে তারল্যের তীব্র সংকট থাকলেও পূবালীতে সেটি ছিল না। উল্টো আমাদের ব্যাংকে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার আমানত বেড়েছে। এ আমানত থেকে আমরা ৭ হাজার কোটি টাকা বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করেছি। ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে। পূবালী ব্যাংকের আমদানি-রফতানি ব্যবসার প্রবৃদ্ধিও হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় বড় প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এসবের ভূমিকা আছে।
দেশের ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার বৃদ্ধির সুফল ভোগ করছে কিনা জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংক এমডি বলেন, সেটি অন্য কোনো ব্যাংকের ক্ষেত্রে সত্য হতে পারে। কারণ সুদহার বাড়ানোর পরও পূবালী ব্যাংকের ৭০ শতাংশ ঋণের সুদ ১২ শতাংশের নিচে রয়েছে। ১৪ শতাংশের বেশি সুদ আছে, এমন ঋণ ১০ শতাংশও হবে না। গত ছয় মাস আমরা কোনো গ্রাহকের ঋণের সুদ বাড়াইনি।
আগের বছরের তুলনায় ২০২৪ সালে ৬৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে সিটি ব্যাংক। ২০২৩ সালে প্রথম প্রজন্মের এ বেসরকারি ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। কিন্তু গত বছর এ মুনাফা বেড়ে ২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকায় ঠেকেছে। ব্যাংকটির ইতিহাসে এটিই পরিচালন মুনাফার সর্বোচ্চ রেকর্ড।
পরিচালন মুনাফায় ৬১ দশমিক ৭১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকও। গত বছর ব্যাংকটি ২ হাজার ২৮৫ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা পেয়েছে। যেখানে ২০২৩ সালে ডাচ্-বাংলার পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ব্যাংক এশিয়া ১ হাজার ৭০০ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংক ১ হাজার ৬৭৫ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ১ হাজার ৫০০ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) ১ হাজার ১১০ কোটি, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৫০ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৯৭৫ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ৮৫০ কোটি, ওয়ান ব্যাংক ৮৩০ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৬৪৪ কোটি ও চতুর্থ প্রজন্মের মেঘনা ব্যাংক ২০৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে।
ব্যাংকগুলোর মধ্যে কেবল প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। বাকি সবক’টি ব্যাংকেরই মুনাফা বাড়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে পরিচালন মুনাফার এসব তথ্য পরে কিছুটা বাড়তে বা কমতে পারে। কেননা কিছু ব্যাংক গতকালও ২০২৪ সালের হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করতে পারেনি। এসব ব্যাংক থেকে পাওয়া সম্ভাব্য মুনাফার তথ্য এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।
আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে সেটিকেই বলা হয় পরিচালন মুনাফা। তবে এটি কোনো ব্যাংকেরই প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ এবং সরকারকে কর পরিশোধ করতে হয়। প্রভিশন ও কর-পরবর্তী এ মুনাফাকেই বলা হয় ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা।
কিছু ব্যাংকের মুনাফায় অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেছে, হাতে নগদ তারল্য বেশি থাকা ব্যাংকগুলোই মুনাফার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ভালো করেছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের প্রধান খাত ছিল সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ড। ৫-৬ শতাংশ সুদে সংগৃহীত আমানত ১২-১৩ শতাংশ সুদের বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে। পর্ষদ ভেঙে দেয়া ব্যাংকগুলো থেকে বের হয়ে যাওয়া আমানত স্বল্প সুদে টেনে নিয়েছে সবল ব্যাংকগুলো। বিল-বন্ডের পাশাপাশি স্বল্প সুদে সংগৃহীত এ আমানত থেকে ১৫-১৬ শতাংশে সুদে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এ উচ্চ স্প্রেডের (ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান) প্রভাবেই সবল ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফায় অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেকর্ড পরিচালন মুনাফা পাওয়া সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিনও একই ধরনের পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ভাইস চেয়ারম্যান পদে থাকা এ ব্যাংকার জানান, ‘ভালো ব্যাংকগুলোর ভালো মুনাফা করারই কথা। কারণ তাদের সবার আমানত ব্যয় তুলনামূলক কম। আবার ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা উঠে যাওয়ার পর তাদের নিট সুদ আয় বেড়েছে। আপনি বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, ভালো ব্যাংকগুলোর মোট সুদ আয়ের ৬০-৭০ শতাংশ আসছে ঋণ খাত থেকে। আর ২০ শতাংশের মতো সরকারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ থেকে এবং বাকিটা অন্য ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট ইত্যাদি রেখে। সেই সঙ্গে এ গোত্রের সব ব্যাংকের মোট আয়ের প্রায় ২৫ শতাংশ আসছে ফি, এলসি কমিশন ও মুদ্রা বিনিময় আয় থেকে।’
মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘দেশের ভালো ব্যাংকগুলো এখন তাদের আয়ের এক-চতুর্থাংশই সুদের বাইরে থেকে আয় করা শুরু করেছে। অর্থাৎ জনগণকে নানা সেবা দিয়ে তার বিনিময়ে সামান্য ফি-কমিশন চার্জ করে তারা আয় বাড়াতে পারছে। সুদনির্ভর ব্যালান্স শিট থেকে সেবা বাবদ অর্জিত ফি নির্ভর ব্যালান্স শিটে যেতে পারাটা সত্যিকারের আধুনিক ব্যাংকিং। আবার এটিও সত্যি যে এ বছর অনেক ব্যাংক পারফরম্যান্স খারাপ করার কারণে তুলনামূলক সুনামসম্পন্ন ব্যাংকগুলো আরো বেশি ভালো করেছে।’
প্রায় তিন বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এর মধ্যে গত দুই অর্থবছরজুড়েই দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি। বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই মাসে মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমে আসে বলে দাবি করে বিবিএস। এরপর সেপ্টেম্বরে আরো কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ দেখানো হয়। তবে অক্টোবর ও নভেম্বরে এ হার আবারো ঊর্ধ্বমুখী হয়। অক্টোবরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার দেখানো হয় ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর নভেম্বরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ঠেকে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে। সরকারের দেয়া এ তথ্য আমলে নিলে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এখন সর্বোচ্চ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে দুই অর্থবছর ধরে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি প্রণয়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারে অর্থের প্রবাহ কমাতে নীতি সুদহার (রেপো রেট) ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদহারও সর্বোচ্চ ৯ থেকে বেড়ে এখন ১৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ চাহিদা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানার যে লক্ষ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারণ করেছিল, সেটি কাজে আসেনি। সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রেসক্রিপশন মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ)। বহুজাতিক সংস্থাটি থেকে ঋণ প্রাপ্তির শর্তের মধ্যেই সুদহার বাড়ানোর বিষয়টি জুড়ে দেয়া হয়েছিল।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সুদহার বৃদ্ধির প্রভাবে শিল্প, সেবাসহ সব খাতের পরিচালন ব্যয় বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে ডলারের বিনিময় হার। এ কারণে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না। সুদহার কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আসতে বেশ কয়েকবার তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদনও জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের কথা শোনেনি। এ সুযোগে ব্যাংকগুলো দফায় দফায় সুদহার বাড়িয়ে নিজেদের মুনাফার পাল্লা ভারী করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে ব্যাংক ঋণের পাশাপাশি সরকারি ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহারও গত দুই বছর ধরে বেশ চড়া। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহারও ১১ থেকে ১২ শতাংশ। এ কারণে ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতকে ঋণ না দিয়ে সরকারকে ঋণ দিতে বেশি উৎসাহ দেখাচ্ছে। বেসরকারি খাত ঋণবঞ্চিত হওয়ার চিত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেও ফুটে উঠেছে।
সংস্থাটির তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪-এর অক্টোবর পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে, যা গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
সবল ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিল-বন্ডের ভূমিকা অনেক বেশি বলে মনে করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হাতে পর্যাপ্ত তারল্য থাকা ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা পেয়েছে। বিল-বন্ডে এখন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকেরও প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা আছে। কিছু ব্যাংকের বিল-বন্ডে বিনিয়োগ আমাদের চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি। এ কারণে ওই ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।’
সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না এলেও ব্যাংকগুলো একচেটিয়া এর সুবিধা ঘরে তুলল কিনা জানতে চাইলে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা দেখছি সুদহার বাড়ানোর পরও মূল্যস্ফীতি কমেনি। তার মানে এ নয় যে সাধারণ মানুষ কোনো সুফলই পাবে না। ব্যাংকের লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ হয়। লভ্যাংশের একটি অংশ মূলধন বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে। সে হিসাবে সাধারণ মানুষ পুরোপুরি বঞ্চিত হয়েছে, এটি বলা যায় না।’
অনিয়ম-দুর্নীতি ও সুশাসনের তীব্র ঘাটতির কারণে গত দেড় দশক ধরেই দেশের ব্যাংক খাত ধারাবাহিকভাবে দুর্বল হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ সময় গিয়েছে ২০২০ সাল থেকে। দেশের ব্যাংক খাত থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা লোপাট করেছেন শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তৈরি হওয়া অলিগার্করা। বাছবিচারহীন লুটপাটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ দেশের প্রায় দুই ডজন ব্যাংকের ভিত নাজুক পরিস্থিতিতে পড়ে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের ব্যাংক খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের বেসরকারি খাতের ১২টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়। পরিবর্তন আসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায়। নেতিবাচক ভাবমূর্তি, আস্থাহীনতা ও পর্ষদ ভেঙে দেয়ার প্রভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তুলে নিতে গ্রাহকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তবে বেশির ভাগ ব্যাংকই গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা ফেরত দিতে পারেনি। এ পরিস্থিতিতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতে টাকা ধার দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পর্ষদ ভঙে দেয়া একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘২০২৪ ছিল দেশের ব্যাংক খাতের জন্য ইতিহাসের সবচেয়ে নাজুক বছর। কারণ বছরটিতে গত দেড় দশকের লুটপাটের তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। আন্তরিকতার ঘাটতি না থাকলেও আমরা গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা ফেরত দিতে পারিনি। দেশের ব্যাংক খাতের ইতিহাসে এত খারাপ পরিস্থিতি অতীতে কখনই দেখিনি। আমাদের ব্যাংক থেকে টাকা তুলে গ্রাহকরা স্বল্প সুদে হলেও অন্য ব্যাংকে জমা করেছে। এ কারণে ওই ব্যাংকগুলোর মুনাফা বেড়েছে। আর আমাদের বিপর্যয় আরো গভীর হয়েছে। খেলাপি ঋণের হিসাবায়ন চূড়ান্ত না করতে পারায় গত বছরের মুনাফা পরিস্থিতিও বের করা সম্ভব হয়নি।’ সূত্র: বণিক বার্তা।
অর্থসংবাদ/

অর্থনীতি
১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম কমলো ৩৯ টাকা

ভোক্তাপর্যায়ে এলপি গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জুলাই মাসের জন্য ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ৪০৩ থেকে ৩৯ টাকা কমিয়ে এক হাজার ৩৬৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কমেছে অটোগ্যাসের দামও। প্রতি লিটার অটোগ্যাসের দাম এক টাকা ৮৪ পয়সা কমিয়ে ৬২ টাকা ৪৬ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। জুন মাসে প্রতি লিটার অটোগ্যাসের দাম ৬৪ টাকা ৩০ পয়সা ছিল।
বুধবার (২ জুলাই) নতুন এ মূল্যের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। নতুন এ দাম আজ সন্ধ্যা থেকে কার্যকর হবে।
বিইআরসি চেয়ারম্যানের ঘোষণা অনুযায়ী, সাড়ে ৫ কেজির বোতলজাত এলপিজির দাম ৬২৫ টাকা, সাড়ে ১২ কেজির দাম এক হাজার ৪২১, ১৫ কেজির দাম এক হাজার ৭০৫, ১৬ কেজির দাম এক হাজার ৮১৮, ১৮ কেজির দাম দুই হাজার ৪৬, ২০ কেজির দাম দুই হাজার ২৭৩, ২২ কেজির দাম আড়াই হাজার, ৩০ কেজির দাম তিন হাজার ৪০৯, ৩৩ কেজির দাম তিন হাজার ৭৫০, ৩৫ কেজির দাম তিন হাজার ৯৭৭ এবং ৪৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৫ হাজার ১১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কাফি
অর্থনীতি
এসএমই ফাউন্ডেশন–ইআরএফ অ্যাওয়ার্ড পেলেন গিয়াস উদ্দিন

এসএমই পণ্য বাজারজাতকরণের চ্যালেঞ্জ ও তা দূর করার উপায় নিয়ে প্রতিবেদন করে ‘এসএমই ফাউন্ডেশন–ইআরএফ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পেয়েছেন বাণিজ্য প্রতিদিনের গিয়াস উদ্দিন।
বুধবার (০২ জুলাই) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গিয়াস উদ্দিনের হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননার চেক তুলে দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মুসফিকুর রহমান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ বছর ‘এসএমই ফাউন্ডেশন-ইআরএফ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’-এ সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যম থেকে মোট ২১ জন সাংবাদিককে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এর মধ্যে ইআরএফ সদস্য ছাড়াও সদস্য বহির্ভূত সাংবাদিকেরাও পুরস্কার পেয়েছেন।
কাফি
অর্থনীতি
ব্যাংক ও এসএমই খাতে সংস্কার আসছে ডিসেম্বরের মধ্যেই: অর্থ উপদেষ্টা

আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ফেরানো এবং ব্যাংক ও এসএমই খাতকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে চলমান সংস্কার কাজ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোর কাঠামোগত দুর্বলতা কাটিয়ে তোলার পাশাপাশি গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে সংস্কার কার্যক্রমে গতি আনা হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) রাজধানীর পুরান পল্টনে ‘এসএমই ফাউন্ডেশন-ইআরএফ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলো নিয়ে কাজ চলছে। গ্রাহকদের ডিপোজিটের টাকা ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে।
এসএমই খাতে অর্থায়নের জটিলতা তুলে ধরে তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের ঋণ পেতে এখনও অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। অথচ তাদের ঋণ পরিশোধের হার অনেক ভালো। ব্যাংকগুলো এখানে সহযোগিতা করতে আগ্রহী নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, এসএমই খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে হাতুড়ি-বাটালের দিন উঠে গেছে। উদ্যোক্তাদেরও এই বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও নীতিনির্ধারকদের এই খাতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এসএমই প্রকল্পে নারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, নারীরা শুধু দক্ষই নয়, তারা অনেক সময় বেটার ম্যানেজও করে। তাই নারীদের আরও বেশি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন শুধু বক্তৃতায় নয়, বাস্তব কাজের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে।
এসএমই উদ্যোক্তাদের সঠিক তথ্য সংরক্ষণে একটি সমন্বিত ও ডিজিটাল ডেটাবেজ গঠনের ওপর জোর দেন ড. সালেহউদ্দিন। তিনি বলেন, হার্ডকপিতে থাকলে হবে না। সবকিছুই ডিজিটালাইজড করতে হবে। সব ক্ষেত্রেই এখন প্রায়োরিটি ডিজিটাল সিস্টেম হওয়া উচিত।
বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোর অসমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে উপদেষ্টা বলেন, এখন ব্যাংকের স্ট্রাকচারে ঝামেলা চলছে। তারপরও ৬০-৬২ হাজার কোটি টাকা আমরা এনার্জি খাতে দিয়ে দিচ্ছি। সেখানে এসএমই যেন কোনো বিষয়ই না। এটা পরিবর্তন করতে হবে।
সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবহার এবং কর ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা রাখতে হবে। নেগেটিভ রিপোর্ট আমাদের বেকায়দায় ফেলে দেয়। এনবিআরের ক্ষেত্রেও অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। অর্থের অপচয় রোধ করতেই হবে।
রেমিটেন্স প্রবাহকে ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ করতে হবে।
এ বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল থেকে মোট ২১ জন রিপোর্টারকে পুরস্কার দিচ্ছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)। নারীর ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের গুরুত্ব নিয়ে প্রতিবেদন করে ‘এসএমই ফাউন্ডেশন–ইআরএফ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পেয়েছেন ঢাকা পোস্টের উপপ্রধান প্রতিবেদক শফিকুল ইসলাম।
কাফি
অর্থনীতি
আদানির বকেয়া পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ

ভারতের আদানি পাওয়ার থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বকেয়া টাকার ৪৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করেছে বাংলাদেশ। ফলে বহন খরচ এবং বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সম্পর্কিত সমস্যাসহ সব বকেয়া পরিশোধ হয়ে গেল।
পিটিআই এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত জুনে ভারতের এ কোম্পানিকে ৪৩৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ, যা এককালীন সর্বোচ্চ পরিশোধ।
নয়াদিল্লির সূত্রের বরাত দিয়ে পিটিআই লিখেছে, এর মধ্য দিয়ে আগের বকেয়া, বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যয় এবং বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয়ের মীমাংসা হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশের আর কোনো বকেয়া নেই, বরং দুই মাসের বিলের সমপরিমাণ এলসি (ঋণপত্র) এবং সব বকেয়ার জন্য সার্বভৌম গ্যারান্টিও বাংলাদেশ দিয়ে রেখেছে।
পাওনা সংক্রান্ত ঝামেলা না থাকায় আদানি পাওয়ারকে তাদের ঝাড়খণ্ড কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকেই নির্ধারিত হারে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।
ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, গত তিন-চার মাস ধরে ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার করে পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ।
আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর চুক্তি করে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগ। ২৫ বছর মেয়াদি ওই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিতে ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে আদানি পাওয়ার।
কাফি
অর্থনীতি
এলপি গ্যাসের দাম কমবে নাকি বাড়বে, জানা যাবে আজ

জুলাই মাসে এলপিজির দাম বাড়বে নাকি কমবে, তা জানা যাবে আজ বুধবার (২ জুলাই)। আজ এক মাসের জন্য এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবার (১ জুলাই) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, জুলাই মাসের জন্য ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি এলপিজির মূল্য সমন্বয় সম্পর্কে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নির্দেশনা বুধবার বিকাল ৩টায় ঘোষণা করা হবে। এ নির্দেশনা জারি করা হবে সৌদি আরামকো ঘোষিত জুলাই (২০২৫) মাসের সৌদি সিপি অনুযায়ী।
এর আগে, গত ২ জুন সবশেষ সমন্বয় করা হয় এলপি গ্যাসের দাম। সে সময় ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ২৮ টাকা কমিয়ে এক হাজার ৪০৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
বুধবার এলপিজির পাশাপাশি ঘোষণা করা হবে অটোগ্যাসের দামও। সবশেষ (২ জুন) সমন্বয় করা হয় অটোগ্যাসের দাম। সে সময় ভোক্তা পর্যায়ে ১ টাকা ২৭ পয়সা কমিয়ে অটোগ্যাসের মূসকসহ দাম প্রতি লিটার ৬৪ টাকা ৩০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে এলপিজি ও অটোগ্যাসের দাম সাতবার বেড়েছে এবং চারবার কমেছে, আর এক দফায় ছিল স্থির। বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে দাম বাড়ানো হয়। অন্যদিকে, এপ্রিল, মে, জুন ও নভেম্বর মাসে দাম কমানো হয়। ডিসেম্বরে কোনো পরিবর্তন আসেনি।