অর্থনীতি
বায়োমেট্রিক সিম না থাকলেও অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ

আঙুলের ছাপ না থাকার কারণে বায়োমেট্রিক সিমবিহীন করদাতাদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বিশেষ সুযোগ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেক্ষেত্রে এনবিআরের কর তথ্যসেবা কেন্দ্রে সশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত আবেদন করতে হবে।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) এনবিআরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনলাইন রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়া সহজীকরণের অংশ হিসেবে যে সকল করদাতা জাতীয় পরিচয় পত্র থাকার পরও আঙ্গুলের ছাপ না থাকার কারণে বায়োমেট্রিক মোবাইল সিম নিতে পারেননি এবং সে কারণে ই-রিটার্ন সিস্টেমসে রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না, তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এনবিআর।
এতে করদাতাগণ দ্বিতীয় সচিব (কর তথ্য ব্যবস্থাপনা ও মূল্যায়ন), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ৭১৭নং কক্ষে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত আবেদন দাখিলপূর্বক সাপ্তাহিক অফিস চলাকালীন ই-রিটার্ন সিস্টেমসে এ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারবেন।
ইতোমধ্যে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলকারী প্রায় ১০ লক্ষ করদাতাসহ সকল সম্মানিত করদাতাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছে।
এরইমধ্যে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সব করদাতাকে সহজে ও নির্বিঘ্নে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করার আহ্বান জানিয়েছে এনবিআর।
কাফি

অর্থনীতি
১৭ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৭৭ কোটি ডলার

চলতি মাসের (সেপ্টেম্বর) প্রথম ১৭ দিনে প্রবাসীরা ১৭৭ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৭ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭৭ কোটি ডলার। অথচ, গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১৪৩ কোটি ডলার। বছর ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ২৩ দশমিক ৭০ শতাংশ।
এছাড়া গত ১৭ সেপ্টেম্বর একদিনে প্রবাসীরা দেশে ৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ৬৬৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বছর ব্যবধানে যা বেড়েছে ১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ।
এর আগে, গত আগস্টে প্রবাসীরা ২৪২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। আর গত জুলাইয়ে দেশে এসেছিল ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।
উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ অর্থবছরজুড়ে প্রবাসীরা ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৩২ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে কোনো নির্দিষ্ট অর্থবছরে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ের রেকর্ড।
অর্থনীতি
রোহিঙ্গাদের জন্য ৫ লাখ ইউরো দেবে নেদারল্যান্ডস

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য পাঁচ লাখ ইউরো সহায়তা দেবে নেদারল্যান্ডস।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকার নেদারল্যান্ডস দূতাবাস এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রচেষ্টায় নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ প্রেক্ষাপটে আমরা আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে আমাদের বিশ্বস্ত অংশীদার ইউএনএইচসিআরকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা এবং মানবিক সহায়তার জন্য পাঁচ লাখ ইউরো সহায়তা দেবে।
অর্থনীতি
রিজার্ভ বেড়ে ফের ৩১ বিলিয়ন ডলার

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী এ অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলারে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গ্রস রিজার্ভ এখন ৩১ বিলিয়ন ডলার, যা এর আগে ছিল ৩০ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার। বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২৬ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলার, যা আগে ছিল ২৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট রিজার্ভের একটি আলাদা হিসাব রয়েছে, যা প্রকাশ করা হয় না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এটি এখন ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
সাধারণ নিয়মে একটি দেশের কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকা জরুরি। সে হিসাবে বাংলাদেশ এখন সীমান্তরেখায় রয়েছে। প্রবাসী আয়, রপ্তানি, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও ঋণের ডলার রিজার্ভ তৈরি করে; আর আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধ, বিদেশি কর্মীদের বেতন, শিক্ষার্থী ও পর্যটক খরচ ইত্যাদির কারণে রিজার্ভ থেকে ডলার বেরিয়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারকে স্থিতিশীল করেছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হয়নি, বরং ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনেছে।
সর্বশেষ গত ৪ সেপ্টেম্বর পাঁচটি ব্যাংক থেকে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার এবং গত ২ সেপ্টেম্বর আটটি ব্যাংক থেকে ৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার কেনা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি)। আগস্টে এসেছে ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার (প্রায় ২৯ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা)।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। ওই অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স ছিল ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
গত ১০ বছরে রিজার্ভের ওঠানামা উল্লেখযোগ্য। ২০১৩ সালের জুনে রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তা প্রথমবারের মতো ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে এবং ওই বছরের অক্টোবরে ছুঁয়েছিল ৪০ বিলিয়ন। ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। তবে পরবর্তীসময়ে ডলার সংকটের কারণে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ কমতে থাকে।
অর্থনীতি
আট দফা বাড়ার পর কমলো সোনার দাম

দেশের বাজারে আট দফায় দাম বাড়ার পরে সোনার দাম কিছুটা কমানো হয়েছে। রেকর্ড দামের ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনায় ১ হাজার ৪৭০ টাকা কমিয়ে এক লাখ ৮৮ হাজার ১৫২ টাকা নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে এ দাম কমানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে এ দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঘোষণা দিয়ে আজ থেকে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। তার আগে ১০, ৯, ৮, ৪ ও ২ সেপ্টেম্বর এবং ৩১ ও ২৭ আগস্ট সোনার দাম বাড়ানো হয়।
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আজ দাম কমানোর কারণ হিসেবে বাজুস বলছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার দাম কমেছে, তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সোনার দাম কমানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৪৭০ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৮৮ হাজার ১৫২ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় দুই হাজার ৪০০ টাকা কমিয়ে এক লাখ ৭৯ হাজার ৬০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ২০২ টাকা কমিয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৫৩ হাজার ৯৪১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ২৭ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৭৪ টাকা।
এরআগে মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়ে আজ থেকে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ৩ হাজার ৬৭৫ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬২২ টাকা নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৮২ হাজার ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ২ হাজার ৯৯৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ২ হাজার ৫৫৫ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ২৮ হাজার ৭০১ টাকা। আজ বুধবার এই দামে সোনা বিক্রি হয়েছে। এটিই দেশের বাজারে সোনার সর্বোচ্চ দাম।
সোনার দাম কমানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৭৬ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপা ৩ হাজার ৩১৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপা ২ হাজার ৮৪৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপা ২ হাজার ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থনীতি
বীমা দাবি পরিশোধ নিয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত, বাতিলের দাবিতে আইডিআরএ’কে বিটিএমএ’র চিঠি

গত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ‘পপুলার রেসিং’ বা গণঅভ্যুত্থান হওয়ায় স্ট্যান্ডার্ড ফায়ার পলিসি (এসএফপি) বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অল রিস্কস (আইএআর) পলিসির আওতায় আরঅ্যান্ডএসডি কভারেজ থাকা সত্ত্বেও কোনো বীমা দাবি পরিশোধযোগ্য হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আয়োজিত সভায় সংশ্লিষ্ট অংশীজন বিশেষ করে দেশের উল্লেখযোগ্য কোন বাণিজ্য সংগঠন তথাপি বস্ত্র শিল্প সংশ্লিষ্ট কোন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমনকি দাবি নিষ্পত্তির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত বীমাগ্রহীতাদের কোনো প্রতিনিধিকেই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে এই সিদ্ধান্তটি একতরফা এবং দেশের শিল্প ও অর্থনীতির স্বার্থবিরোধী জানিয়ে বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। গত ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর এবিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বীমা দাবির বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের পুঙ্খানুপুঙ্খ পুনর্বিবেচনা ও বাতিলের দাবি জানিয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। চিঠিতে গৃহীত একতরফা, ত্রুটিপূর্ণ এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তটি বাতিল করে বীমা আইন,২০১০ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তির একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সূত্র মতে, সরকার পতন আন্দোলনের চুড়ান্ত ও পরবর্তী পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল ও বাণিজ্যিক অঞ্চলে কিছু দুষ্কৃতিকারী ও উশৃঙ্খল শ্রমিক মিলে বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ চালায় যাতে দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো একটি বড় ধরণের ক্ষতির শিকার হয়। অথচ ঐ সমস্ত শিল্পকারখানা বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহ আন্দোলনকারী জনতার আক্রোশের শিকার বা আন্দোলনের লক্ষ্যবস্তু ছিল না বা হতে পারে না। কিছু দুষ্কৃতিকারী অস্থির রাজনৈতিক অবস্থার সুযোগে ঐ সমস্ত শিল্পকারখানা বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহে লুটতরাজের হীন উদ্দ্যেশ্যে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালায়।
সূত্র জানায়, শিল্পকারখানা বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বেশীরভাগই বিভিন্ন প্রকারের বীমা আবরণসহ বীমাকৃত থাকে, কিন্তু গত ৩ মার্চ সকাল ১০ ঘটিকায় দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বীমাকারী প্রতিষ্ঠান, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে দেশের সকল বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের মুখ্য নির্বাহী/প্রতিনিধি ও জরীপকারী প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র জরীপকারী/প্রতিনিধিদের নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পকারখানা বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের উত্থাপিত বীমা দাবী বিষয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের উত্থাপিত বীমা দাবী বিষয়ে বিভিন্ন বীমাকারী বা জরীপকারী প্রতিনিধিগণ বিভিন্নভাবে ক্ষতির বিবরণ এবং ব্যাখ্যা প্রদান করেন। শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এধরণের হামলা ও ক্ষতি সংঘটনের কারণে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্য বিষয়ে বক্তাগণ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিস্থাপন ও ক্ষতিপূরণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের একটি সুনির্দিষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন। কিন্তু সভায় সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের পক্ষ হতে বিদেশী পুনঃবীমাকারীদের বিষয় উল্লেখ করে ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের উত্থাপিত বীমা দাবীকে পপুলার রেসিং, সিভিল কমটিও এন্ড টেররিসম জনিত ক্ষতি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে বক্তব্য প্রদান করা হয় এবং ক্ষতি অগ্নিবীমা এবং আইএআর পলিসিতে আবরিত নয় বলে অভিমত প্রদান করা হয়।
জানা গেছে, এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মালিকগণ চরম এক হতাশায় ভুগছেন, কারণ এত বিশাল অংকের ক্ষতি বীমা দাবী বা অন্য কোনভাবে নিষ্পত্তি করা না হলে তাহাদের পক্ষে শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহ পুনরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা বা চালু করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাছাড়াও এসব প্রতিষ্ঠানসমূহের বিপরীতে যে ব্যাংক ঋণ রয়েছে তাও যথাযথভাবে নিষ্পত্তি বা পুনঃতপশীলিকরণ করা অসম্ভব হয়ে দাড়াবে এবং ঋণ খেলাপীর পরিমান ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, গত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে দেশে একটি গণ-আন্দোলন সংঘটিত হয় ফলে ৫ই আগস্ট তৎকালীন সরকারের পতন হয় । আন্দোলনে দেশের সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করে বিশেষভাবে রাজধানী শহর ও জেলা শহরের কেন্দ্রস্থলে জনতা অবস্থান গ্রহণ করে। এ প্রেক্ষিতে জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এ দেশব্যাপী সংঘটিত অনাকাঙিক্ষত ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে জানতে পেরেছি এবিষয়ে গত ৩ মার্চ জেনারেল ম্যানেজার, পুনঃবীমা, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। উক্ত ঘটনাসমূহ ‘পপুলার রেসিং’ বা গণঅভ্যুত্থান হওয়ায় স্ট্যান্ডার্ড ফায়ার পলিসি (এসএফপি) বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অল রিস্কস (আইএআর) পলিসির আওতায় আরঅ্যান্ডএসডি কভারেজ থাকা সত্তেও কোনো বীমা দাবি পরিশোধযোগ্য হবে না ।
চিঠিতে এই সিদ্ধান্তটি একতরফা এবং দেশের শিল্প ও অর্থনীতির স্বার্থবিরোধী জানিয়ে যুক্তিসমূহের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তটি বাতিলের জন্য আবেদন জানানো হয়। তাদের যুক্তিগুলো- অংশীজনদের অংশগ্রহণ ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ ন্যায়নীতির লঙ্ঘন: বীমা চুক্তির দুটি প্রধান পক্ষ হলো বীমাকারী এবং বীমাগ্রহীতা। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হাজার হাজার কোটি টাকার দাবি নিষ্পত্তির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত বীমাগ্রহীতাদের কোনো প্রতিনিধিকেই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এটি স্বাভাবিক ন্যায়নীতি এবং আইনের মৌলিক নীতি ‘Audi Alteram Partem’ (অপর পক্ষের বক্তব্য শোনা)-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন । এটি একটি গুরুতর পদ্ধতিগত ক্রটি, যা পুরো সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা পূর্বক দুর্বল করে দিয়েছে ।
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১ স্পষ্টভাবে বলছে, আইন ব্যতীত বা আইনানুগ প্রক্রিয়া ছাড়া কোনো ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি করা যাবে না। অর্থাৎ, একটি বৈধ অধিকার (যেমন, বীমা দাবির অর্থপ্রাপ্তি) কোনো পক্ষকে না শুনেই বাতিল করে দেওয়া হলে তা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১ এর পরিপন্থী। কারণ, বীমা দাবির অর্থপ্রাপ্তি চুক্তিভিত্তিক একটি বৈধ অধিকার। একে একতরফাভাবে, কোনো শুনানি ছাড়া অস্বীকার করা হলে তা আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া—এর পরিপন্থী, যা অনুচ্ছেদ ৩১–এর সুরক্ষা লঙ্ঘন করে ।
এই বিষয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় এই নীতি ঘোষণা করেছে: আব্দুল লতিফ মির্জা বনাম বাংলাদেশ সরকার [৩১ ডিএলআর (এডি) ৩৩] মামলায় আদালত বলেন: প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের নীতিগুলো সহজাতভাবে সর্বজনীন এবং দেশের আইনের একটি অংশ। মাহিনুদ্দিন বনাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় [৪৫ ডিএলআর ২৯২] মামলায় বলা হয়েছে: কোনও ব্যক্তিকে শুনানি ছাড়াই দোষী সাব্যস্ত করা হবে না, এই নীতিমালা ‘অডি অল্টেরাম পার্টেম’ বিচারিক এবং প্রশাসনিক সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, বিশেষ করে যেখানে গৃহীত কার্যক্রম বিরোধে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর ব্যক্তি বা সম্পত্তি বা অন্যান্য অধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে।
সকল ঘটনাকে ঢালাওভাবে ‘গণঅভ্যুত্থান’ চিহ্নিতকরণ: ঘটনার সরলীকরণ এবং আন্তর্জাতিক নজিরের অবমাননা সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, ১৬ জুলাই থেকে পরবর্তী সকল ঘটনাকে সামগ্রিকভাবে ‘পপুলার রেসিং’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই সময়ের মধ্যে সংঘটিত প্রতিটি সহিংস ঘটনা এক প্রকৃতির ছিল না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিদ্যমান অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে ব্যক্তিগত শত্রুতা, ডাকাতি, লুটতরাজ বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনাগুলো দাঙ্গা, নাগরিক বিশৃঙ্খলা বা বিদ্বেষমূলক ক্ষতির সংজ্ঞার আওতায় পড়ে, যা আরঅ্যান্ডএসডি কভারেজের মূল ভিত্তি। তাই প্রতিটি দাবি বীমা আইন ২০১০ অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করা আবশ্যক ।
চিঠিতে বলা হয়, বিচারিক নজির থেকে স্পষ্ট যে—সব ঘটনাকে ঢালাওভাবে ‘পপুলার রেসিং’ আখ্যা দিয়ে দাবি বাতিল করা সঠিক ও আইনসিদ্ধ নয়। আন্তর্জাতিক উদাহরণ এবং পুনর্বীমাকারীদের সাথে আলোচনার প্রয়োজনীয়তাঃ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সৃষ্ট ক্ষতির ক্ষেত্রে বীমা দাবি নিষ্পত্তির বহু উদাহরণ রয়েছে। থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক দাঙ্গা (২০১০) বা লন্ডনের দাঙ্গা (২০১১) এর ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিগুলো ক্ষতিপূরণ প্রদান করেছে । ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, স্থানীয় বীমা কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক পুনর্বীমাকারীদের সাথে সফল আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খুঁজে বের করেছিল। আমরা মনে করি, বিদেশি পুনর্বীমাকারীদের উপর সমস্ত দায় চাপিয়ে না দিয়ে, তাদের সাথে দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও আন্তর্জাতিক নজির তুলে ধরে কার্যকর আলোচনার সুযোগ এখনো রয়েছে এবং সেই উদ্যোগ আপনাদেরই নিতে হবে ।
আন্তর্জাতিকভাবে, এরূপ অস্থিরতা কারনে সৃষ্ট ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার ও বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার জন্য বিশেষ তহবিল বা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যুক্তরাজ্য: দাঙ্গা ক্ষতিপূরণ আইন ২০১৬ অনুযায়ী, দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে এবং বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র: মিনেসোটা রাজ্য ২০২০ সালের দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্গঠনের জন্য প্রায় $৪৫ মিলিয়ন তহবিল অনুমোদন করেছে। এই ধরনের আন্তর্জাতিক উদাহরণ অনুসরণ পূর্বক, বাংলাদেশেও একটি জাতীয় ক্ষতিপূরণ তহবিল বা সমন্বিত ফান্ড গঠন করা যেতে পারে, যা ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তাত্ক্ষণিক আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করবে ।
তাদের মতে, বীমার মূল উদ্দেশ্যই হলো বিপদের দিনে আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করে অর্থনীতিকে সচল রাখা । যদি দেশের এক ক্রান্তিকালে আইন ও পলিসির কঠোর, সংকীর্ণ এবং ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সকল দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়, তবে তা কেবল ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেউলিয়া করবে না, বরং সমগ্র বীমা শিল্পের উপর মানুষের আস্থা নষ্ট করবে। এর ফলে বীমা গ্রহণে অনীহা তৈরি হবে যা এই শিল্পের জন্য আত্মঘাতী। তাই বিষয়গুলো বিবেচনাপূর্বক গৃহীত একতরফা, ত্রুটিপূর্ণ এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তটি বাতিল করে বীমা আইন, ২০১০ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তির একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এসএম