আন্তর্জাতিক
বিবিসির চোখে সিরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার ‘আয়নাঘর’

সিরিয়ার মানুষদের কাছে ভীতিকর এই জায়গাটিতে অনেককে আটক ও নির্যাতন করা হতো। মাটির নিচে সাবেক সরকারের এই গোপন আস্তানায় প্রবেশ করেন বিবিসি অ্যারাবিক সার্ভিসের সংবাদদাতা ফেরাস কিলানি। এটি এমনই এক জগত, যেখানে বাইরের মানুষ খুব কমই ঢুকতে পেরেছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সদর দপ্তরের বেইসমেন্টে এই ভয়ানক জায়গা দেখা যায়।
যেটি দেশটির গোপন গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের অংশ, যা কয়েক দশক ধরে নৃশংস নেতৃত্বকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে। পুরু ইস্পাতের দরজা দেওয়া সারিবদ্ধ ছোট ছোট কক্ষ দেখা যায়, যেখানে বন্দিদের রাখা হতো। একটি কক্ষের ভেতর তাকিয়ে দেখা যায়, ঘরটি মাত্র দুই মিটার লম্বা ও এক মিটার চওড়া। ময়লা দেয়ালে গাঢ় দাগ লেগে রয়েছে।
দেয়ালের উঁচুতে থাকা ছোট ছোট ঝাঁঝরি দিয়ে যে সামান্য সূর্যের আলো পৌঁছয়, সেটাই এসব কক্ষের একমাত্র আলোর উৎস। এই বদ্ধ কক্ষে বন্দিদের মাসের পর মাস আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করা হতো। এগুলোর অবস্থান দামেস্কের কেন্দ্রের কাফর সউসা এলাকার একটি ব্যস্ত রাস্তার ঠিক নিচে, যেখানে নিরাপত্তা সদর দপ্তর অবস্থিত।
প্রতিদিন হাজার হাজার সিরীয় এই পথ দিয়ে যাওয়া আসা ক্যার, তাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম চালিয়ে যেত।
অথচ, তাদের কোনো ধারণাই ছিল না যে মাত্র কয়েক মিটার দূরে তাদের মতো কিছু নাগরিককে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে।
একটি করিডরে দেখা যায়, ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের ছিন্নভিন্ন ছবিগুলো মাটিতে পড়ে আছে। এর সঙ্গে রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার ফাইলের স্তূপ, যেসব নথি লাখো মানুষের কর্মকাণ্ড নজরদারির জন্য ব্যবহৃত হতো।
এই স্থানে বন্দিদের সাময়িকভাবে আটকে রাখার পর, তাদের দীর্ঘমেয়াদে আটক রাখতে বন্দিশিবিরে পাঠানো হতো।
রাজধানীর উপকণ্ঠে অবস্থিত সাইদনায়া কারাগার, এমনই এক কুখ্যাত বন্দীশিবির। এই স্থাপনাটি সিরিয়ার সাবেক সরকারের পরিচালিত বিশাল নেটওয়ার্কের একটি অংশ।
স্বাধীন পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস (এসএনএইচআর) ২০১১ সালে আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরুর পর থেকে গত জুলাই পর্যন্ত ১৫ হাজার ১০২টি মৃত্যুর তথ্য রেকর্ড করেছে, যা দেশটির কারাগারে নির্যাতনের কারণে হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরের অগাস্ট পর্যন্ত এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষকে আটক বা জোর করে বন্দি করে রাখা হয়।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, সাবেক সিরীয় সরকার ভিন্নমত দমন করার জন্য বহু বছর ধরে নির্যাতন ও গুম করত। সংস্থাটির মতে, দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাউকে জবাবদিহি করত না।
স্টেট সিকিউরিটি সদর দপ্তর থেকে কয়েক শ মিটার দূরে জেনারেল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেট নামে আরেকটি গোয়েন্দা সংস্থার অফিস রয়েছে, যা দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার নেটওয়ার্কের আরেকটি অংশ। আসাদ সরকারবিরোধীরা অভিযোগ করেছে, এটি এমন একটি সংস্থা, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি বিষয় নজরদারি করত।
অফিসের ভেতরে একটি কম্পিউটার সার্ভার রুম পাওয়া যায়। মেঝে ও দেয়াল একদম ঝকঝকে সাদা এবং সারি ধরে কালো ডাটা স্টোরেজ ইউনিটগুলো শান্তভাবে গুঞ্জন করছে।
দামেস্কের বেশির ভাগ স্থানে বিদ্যুৎ নেই। তবে এই স্থাপনাটি হয়ত এত গুরুত্বপূর্ণ যে এর নিজস্ব বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। ডিজিটাল সিস্টেম থাকা সত্ত্বেও সেখানে প্রচুর কাগজের নথিও রয়েছে, যা সবই অক্ষত আছে বলে মনে হচ্ছে। একটি কক্ষের দেয়ালজুড়ে লোহার পুরনো আলমারিতে নথিগুলি ঠেসে রাখা হয়েছে। আরেকটি দেয়ালে সারি ধরে নোটবইগুলো মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত থরে থরে সাজানো আছে।
ধারণা করা হচ্ছে, যখন শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তখন এখানে যারা কাজ করতেন, তারা পালানোর আগে কিছুই ধ্বংস করার সুযোগ পাননি। নথিগুলো অনেক পুরনো, বছরের পর বছর ধরে সংরক্ষণ করা, কিন্তু কিছুই ধ্বংস করা হয়নি। এমনকি সেখানে গুলির খালি খোসা ভরা বাক্সও পাওয়া যায়। আরেকটি ঘরে দেখা গিয়েছে নানা ধরণের অস্ত্রশস্ত্র, যার মধ্যে মর্টার আর স্থলমাইনও আছে।
বিবিসি সংবাদদাতার সঙ্গে এইচটিএস নামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর একজন যোদ্ধা ছিলেন, যারা এখন দামেস্ক নিয়ন্ত্রণ করছে। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, এখানে এত অস্ত্র কেন? তিনি বলেন, ‘আসাদ সরকারের সময়, রাশিয়ার সহযোগিতায় সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিরিয়ার মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও নিপীড়নের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।’
জেনারেল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেটে জমা থাকা পাহাড় সমান নথি ও কম্পিউটার রেকর্ড, ভবিষ্যতে সিরিয়ার নাগরিকদের আটক ও নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এইচটিএস নেতা আহমেদ আল-শারা, যিনি আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি নামেও পরিচিত, তিনি এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছেন, বিগত শাসনামলে যারা আটক ব্যক্তিদের নির্যাতন বা হত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের সবাইকে খুঁজে বের করে বিচার করা হবে; ক্ষমা করার প্রশ্নই আসে না। তিনি টেলিগ্রামে এক বার্তায় বলেছেন, ‘আমরা সিরিয়ার ভেতরে তাদের খুঁজে বের করব এবং যারা পালিয়ে গেছে তাদেরকে আমাদের হাতে তুলে দিতে অন্যান্য দেশের কাছে অনুরোধ জানাব, যাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়।’
কিন্তু সিরিয়ার গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ার প্রভাব দেশের সীমানার বাইরে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। আবার এমন অনেক নথি পাওয়া গিয়েছে যেগুলো জর্দান, লেবানন ও ইরাকের সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি এই নথিগুলো প্রকাশ্যে আসে এবং ওই দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে আসাদ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার সংযোগ সামনে আসে, তাহলে পুরো অঞ্চলেই বড় ধাক্কা লাগতে পারে। আসাদ সরকারের সাবেক গোয়েন্দা সংস্থার যত তথ্য সামনে আসবে, এর প্রভাব তত বড় হতে পারে।

আন্তর্জাতিক
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ফেরিডুবি, নিখোঁজ ৪৩

ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন দ্বীপ বালির কাছে যাত্রীবাহী একটি ফেরি ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ফেরিটিতে থাকা ৬৫ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
স্থানীয় সময় বুধবার (২ জুলাই) রাতের দিকে পূর্ব জাভার কেটাপাং বন্দর থেকে ছাড়ার ৩০ মিনিট পরই ‘কেএমপি তুনু প্রত্যমা জয়া’ নামের ফেরিটি ডুবে যায়। এটি বালির গিলিমানুক বন্দরের দিকে যাচ্ছিল।
ফেরিটিতে ৫৩ জন যাত্রী, ১২ জন কর্মী এবং ২২টি যানবাহন ছিল। এদের মধ্যে ১৪টি ট্রাক ছিল বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় উদ্ধার সংস্থা।
দুর্ঘটনার পর ২০ জনকে জীবিত এবং ২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজদের সন্ধানে রাতভর উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। তবে উত্তাল সমুদ্রের কারণে উদ্ধার তৎপরতায় বিঘ্ন ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার অভিযান চালানোর সময় সমুদ্রে প্রায় দুই মিটার উচ্চতার ঢেউ ছিল। ৯টি নৌযান দিয়ে অনুসন্ধান চলছে, যার মধ্যে রয়েছে দুইটি টাগ বোট ও দুইটি রাবার বোট।
প্রসঙ্গত, ১৭ হাজারের বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ইন্দোনেশিয়ায় নৌপথই অন্যতম প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। তবে নিরাপত্তার ঘাটতিতে প্রায়ই সেখানে নৌ দুর্ঘটনা ঘটে।
আন্তর্জাতিক
১০ টাকা ফেসভ্যালুর শেয়ার প্রথম দিনেই ৮৩৫ টাকায় লেনদেন

ভারতের শেয়ারবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্তিতে নতুন শেয়ারে বাজিমাত দেখা গেছে। শেয়ারবাজারে পা রাখার প্রথম দিনেই বিনিয়োগকারীদের পকেট ভরাল এইচডিএফসি ব্যাংকের শাখা কোম্পানি এইচডিবি ফাইন্যান্স।
বুধবার (০২ জুলাই) বম্বে এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয় এইচডিবি ফাইন্যান্সের। এদিন প্রতিটি শেয়ারের দাম ওঠে ৮৩৫ টাকা। শেয়ারটির অভিহিত মূল্য ১০ টাকা।
ভারতের ব্রোকারেজ ফার্মগুলির দাবি, এক বছরের ফরোয়ার্ড প্রাইস-টু-বুকের নিরিখে এইচডিবি ফাইন্যান্সের শেয়ারে তালিকাভুক্তির মূল্য বেড়েছে ৩.৪ গুণ। এই সূচক আর্থিক কোম্পানির সমকক্ষ বাজাজ় ফিন্যান্স এবং চোলা ইনভেস্টমেন্টের চেয়ে কিছুটা কম। কিন্তু নিফটি-৫০র অন্তর্গত অন্যান্য আর্থিক কোম্পানির চেয়ে বেশি।
তালিকাভুক্তির পরে অধিকাংশ আর্থিক বিশ্লেষক এইচডিএফসি ব্যাংকের শাখা কোম্পানিটির শেয়ারকে বাই রেটিং দিয়েছেন। তাঁদের অনুমান, অচিরেই স্টকটির দাম ৯০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অর্থাৎ এতে ২২ শতাংশের বৃদ্ধি দেখতে পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাঁদের অনুমান, আগামী তিন বছরের মধ্যে ২০ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পাবে এইচডিবির অ্যাসেট আন্ডার ম্যানেজ়মেন্ট (এইউএম)। ফলে শেয়ারটির সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি আইপিওর মূল্যসীমা (প্রাইস ব্যান্ড) ঘোষণা করে এইচডিবি ফিন্যান্স। এতে ১০ টাকা ফেসভ্যালুর স্টকে বিনিয়োগকারীদের দিতে হয়েছে ৭৩০ টাকা। আইপিওর মাধ্যমে এই কোম্পানিটি ৬৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা তুলেছে।
কাফি
আন্তর্জাতিক
গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্তে রাজি ইসরায়েল: ট্রাম্প

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ৬০ দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয় শর্তে রাজি হয়েছে দখলদার ইসরায়েল। বুধবার (২ জুলাই) ভোরে এ তথ্য জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চলাকালীন সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করে স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে ট্রাম্প লিখেছেন, “৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত করতে ইসরায়েল প্রয়োজনীয় শর্তে রাজি হয়েছে। এ সময়ে যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধে আমরা সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করব।”
তিনি লিখেছেন, “কাতারি ও মিসরীয়রা শান্তি আনয়নে অনেক কষ্ট করেছে। তারা এটির চূড়ান্ত প্রস্তাব দেবে৷ আমি আশা করি, মধ্যপ্রাচ্যের ভালোর জন্য, হামাস এ চুক্তি গ্রহণ করবে। কারণ এটি ভালো নয়, আরও খারাপ হবে।”
গত কয়েক মাস ধরেই দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের ৬০ দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে। যেটির প্রস্তাব দিয়েছিলেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকোফ৷ ট্রাম্প সম্ভবত ওই প্রস্তাবটিকেই ইঙ্গিত করেছেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।
তবে এ প্রস্তাবের আলোচনা থমকে ছিল দীর্ঘদিন। কারণ দখলদার ইসরায়েল এই অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পর গাজায় আবারও হামলা চালানোর অধিকার রাখতে চায়। অপরদিকে হামাস জানিয়েছে, যতক্ষণ তাদের স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা না দেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ তারা অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে না।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ট্রাম্প স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্ভবত দুইপক্ষকেই সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করছেন।
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য যেসব বিষয়ে এখনো মতপার্থক্য রয়েছে, সেগুলো দূর করার চেষ্টা করছে আরব মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো।
এদিকে এর আগে পরশুদিন ট্রাম্প জানান, তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি চান। এরপর হোয়াইট হাউসও জানায়, ট্রাম্প গাজায় আর হত্যাযজ্ঞ দেখতে চান না৷ এ কারণে যুদ্ধ বন্ধকে প্রাধান্য দিচ্ছেন তারা।
আগামী সোমবার দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের বৈঠক হবে। এর আগেই যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইসরায়েলকে চাপ দিচ্ছে মার্কিনিরা।
কাফি
আন্তর্জাতিক
গাজায় যুদ্ধ বন্ধে চাপের মুখে হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগামী সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন বলে সোমবার রাতে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা টাইমস অব ইসরাইলকে নিশ্চিত করেছেন। গাজা যুদ্ধের অবসান ও সেখানে প্রায় দুই বছর ধরে আটক থাকা জিম্মিদের মুক্ত করতে ওয়াশিংটন যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, এই সফর তারই অংশ।
আগামী ৭ জুলাইয়ের এই সফর হবে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণের পর নেতানিয়াহুর তৃতীয় ওয়াশিংটন সফর। এটি এমন এক সময়ে হতে যাচ্ছে, যখন ইসরাইল ও ইরান ১২ দিনের বিমান যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
তবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সফরের সময়সূচি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি।
নেতানিয়াহু-ট্রাম্প বৈঠকে গাজা ও ইরান ইস্যুতে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন আরেক মার্কিন কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, গাজা যুদ্ধের অবসান ও বাকি জিম্মিদের মুক্ত করতে ট্রাম্প দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়া বৈঠকে সিরিয়ার বিষয়ও আলোচনায় আসবে।
ইসরাইলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার বর্তমানে ওয়াশিংটনে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সেখানে গাজায় ২০ মাস ধরে চলা যুদ্ধের অবসানে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে পড়েছেন তিনি। নেতানিয়াহু সোমবার রাতে গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা নিয়ে মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। তবে কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
ট্রাম্প সম্প্রতি এক সপ্তাহের মধ্যে গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি সম্পাদনের আশা প্রকাশ করেছেন। তবে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আলোচনা চললেও দুই পক্ষের অবস্থান এখনও দূরত্বেই রয়ে গেছে। হামাস চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতির দাবি জানালেও ইসরাইল সীমিত যুদ্ধবিরতির পক্ষে রয়েছে, যাতে প্রয়োজনে আবারও অভিযান চালানো যায়।
তবে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব ও নেতানিয়াহু সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে তারা আগের চেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছেন।
নেতানিয়াহুর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির আলোচনায় কাতারকে চাপ দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিতে ডারমারকে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কাতার মূল চাবিকাঠি। খুব শিগগিরই অগ্রগতি হবে বলে আমরা আশা করছি। তবে এটি হামাসের উপর নির্ভর করছে।’
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, গাজা সংঘাতের অবসান ট্রাম্পের অগ্রাধিকার। তিনি বলেছেন, ‘ইসরাইল ও গাজা থেকে আসা ছবি দেখা সত্যিই মর্মান্তিক। প্রেসিডেন্ট এর অবসান চান। তিনি জীবন রক্ষা করতে চান।’
ইসরাইলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত গাজায় অভিযান চলবে। নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘প্রথমে আমাদের জিম্মিদের মুক্ত করতে হবে। এরপর গাজা সমস্যার সমাধান এবং হামাসকে পরাজিত করতে হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা উভয় লক্ষ্যেই পৌঁছাবো।’
তবে তার জোটের কট্টর অংশীদাররা যুদ্ধ অব্যাহত রাখার জন্য চাপ দিচ্ছেন। অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ সোমবার বলেছেন, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির চেয়ে বড় কোনো বিপদ ইসরাইলের জন্য নেই। তিনি বলেছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাই, খুনিদের সঙ্গে আর কোনো আলোচনা নয়। গাজায় শত্রুকে ধ্বংস করতে এবং ইসরাইলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি হুমকি দূর করতে তীব্র ও দ্রুত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’
হামাস ৫০ জন জিম্মি আটকে রেখেছে, যাদের মধ্যে ৪৯ জনকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর অপহরণ করা হয়েছিল। এদের মধ্যে অন্তত ২৮ জন মৃত, ২০ জন জীবিত এবং দুজনের অবস্থা গুরুতর বলে ধারণা করছে ইসরাইল। হামাস ২০১৪ সালে গাজায় নিহত এক ইসরাইলি সেনার মরদেহও ধরে রেখেছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৫৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং বহু লোক নিখোঁজ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক
ভারতে রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত ৩৪

ভারতে একটি রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৩৫ জন।
দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় তেলঙ্গানা রাজ্যের সাঙ্গারেড্ডি জেলার পাসামিলারাম শিল্প এলাকায় একটি চুল্লিতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ এসব হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (১ জুলাই) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
স্থানীয় জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিগাচি কেমিক্যালস কারখানায় ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় হতাহত চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে; বাকি ২৩ জনকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিকমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, “তেলেঙ্গানার সাঙ্গারেড্ডিতে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় আমি শোকাহত। যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”
প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ রুপি এবং আহতদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, সোমবার সকালে ওই রাসায়নিক কারখানা থেকে হঠাৎই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। স্থানীয়রা দৌড়ে গিয়ে দেখেন, কারখানার ছাদ উড়ে গিয়ে ১০০ মিটার দূরে পড়েছে। ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে কালো ধোঁয়া।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল, বিস্ফোরণের ঘটনায় ১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। কিন্তু ক্রমশ মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। দমকল বাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। তখনই উদ্ধার হতে থাকে একের পর এক মরদেহ।
তেলঙ্গানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী দামোদর রাজানরসিং জানান, বিস্ফোরণের কারণে কারখানাটির ছাদ উড়ে যায়। সেখানে সেই সময় কাজ করা অনেক শ্রমিকের মরদেহ প্রায় ১০০ মিটার দূরে গিয়ে পড়ে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিস্ফোরণের সময় কারখানাটিতে ৯০ জন কাজ করছিলেন।
প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণেই ওষুধের সামগ্রী তৈরির ওই কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষ না-হলে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে।
ইতোমধ্যেই ‘পূর্ণাঙ্গ এবং স্বচ্ছ’ তদন্ত চেয়ে তেলঙ্গানার কংগ্রেস সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়েছে বিরোধী ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)। এই ঘটনায় তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত ছাড়াও শোকপ্রকাশ করেছেন তেলঙ্গানার রাজ্যপাল জিষ্ণু দেববর্মাও।
কাফি