আন্তর্জাতিক
পালানোর পথে আসাদের প্লেন বিধ্বস্তের গুজব

ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। কিন্তু ‘সিরিয়ান এয়ার ৯২১৮ ফ্লাইটটি’ উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় অনেকে বলছেন বিদ্রোহীদের গুলিতে প্লেনটি বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে কোনো আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে এতথ্য নিশ্চিত বা যাচাই করতে পারেনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ার বিদ্রোহীরা যখন রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করছেন, সে সময় দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে একটি ইলিউশিন৭৫ উড়োজাহাজ আকাশে উড়াল দেয়।
‘সিরিয়ান এয়ার ৯২১৮ ফ্লাইটটি’ দামেস্ক থেকে উড়াল দেওয়া সর্বশেষ ফ্লাইট বলে জানিয়েছে ফ্লাইটরাডার ২৪। ফ্লাইটরাডার ২৪–এর তথ্যানুযায়ী, দামেস্ক থেকে ছাড়া ইলিউশিন৭৫ উড়োজাহাজটি প্রথমে সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে উড়ে যায়। কিন্তু সেখান থেকে পরে ইউ–টার্ন নিয়ে উড়ে যেতে শুরু করে এবং কয়েক মিনিট পর সেটি মানচিত্র থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। অদৃশ্য হওয়ার সময় উড়োজাহাজটি হোমসের ওপর ছিল বলে আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে।
ওই উড়োজাহাজে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ছিলেন কি না, রয়টার্স তা নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছিলেন, রোববার স্থানীয় সময় ভোরে উড়োজাহাজে দামেস্ক ছেড়েছেন আসাদ। তখন তারা বলেছিলেন, আসাদের গন্তব্যে কোথায়, তা তারা জানেন না।
দামেস্ক বিমানবন্দর এখন বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে আসাদ সিরিয়া ছেড়ে গেছেন বলে জানানো হয়েছে।
বিদ্রোহীরা বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঠিক আগে বাশার আল-আসাদকে বহনকারী উড়োজাহাজটি উড্ডয়ন করে। সূত্রের বরাতে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্রোহীদের গুলিতে আসাদের প্লেন বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে স্বাধীনভাবে হিন্দুস্তান টাইমস খবরটির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বেশকিছু ভিডিওতে একটি প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। এটি আসাদকে বহনকারী প্লেন বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে এই দাবিগুলো কোনো আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে নিশ্চিত বা যাচাই করতে পারেনি।
এর আগে, বিদ্রোহীরা উত্তর সিরিয়ার বড় অংশ দখল করার পরপরই বাশার আল-আসাদের পরিবার রাশিয়ায় পালিয়ে যায়। ক্রেমলিনের একটি সূত্র ব্লুমবার্গকে এই তথ্য নিশ্চিত করে। তারা জানায় আসাদকে রক্ষা করার কোনো পরিকল্পনা মস্কোর নেই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্লাদিমির পুতিন আসাদের সৈন্যদের পিছু হটার ঘটনায় বিরক্ত।
আমেরিকা অবশ্য প্রকাশ্যে সিরিয়া নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি। তবে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সিরিয়ার পরিস্থিতি খুব খারাপ। ওরা আমাদের বন্ধু নয়। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আমেরিকার কিছু করার নেই। এটা আমাদের যুদ্ধ নয়। ওখানে যা হচ্ছে, হোক। আমরা এর মধ্যে নাক গলাব না।
উল্লেখ্য, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে প্রথম থেকেই বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছে আমেরিকা। আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে একাধিকবার নাগরিকদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। ২০১৩ সালে ঘৌটার হামলায় ৩০০ জনেরও বেশি সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এদের মধ্যে ছিল বহু শিশু। ২০১৭ সালের হামলাতেও মৃত্যু হয় শতাধিক সিরিয়ান নাগরিকের। জাতিসংঘের একাধিক দল সিরিয়ায় গিয়ে নাগরিকদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি।
কাফি

আন্তর্জাতিক
শুল্কের প্রতিবাদে মার্কিন পণ্য বয়কটের ডাক ভারতে

ম্যাকডোনাল্ডস, কোকা-কোলা থেকে শুরু করে অ্যামাজন, অ্যাপলের মতো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বয়কটের মুখে পড়ছে ভারতে। ব্যবসায়ী নেতারা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমর্থকেরা মার্কিন শুল্কের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী এই মনোভাব উসকে দিচ্ছেন।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত মার্কিন ব্র্যান্ডগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। ক্রমবর্ধমান সচ্ছল ক্রেতাদের লক্ষ্য করে এরা দ্রুত ব্যবসা বাড়িয়েছে।
যেমন- মেটার হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর দিক থেকে ভারতের অবস্থান শীর্ষে, ডমিনোজের রেস্তোরাঁ ভারতে অন্য যেকোনো ব্র্যান্ডের চেয়ে বেশি। পেপসি ও কোকা-কোলার মতো পানীয় দোকানের তাকজুড়ে থাকে। আবার, নতুন অ্যাপল স্টোর বা ডিসকাউন্ট দেওয়া স্টারবাকস ক্যাফে খুললেই লাইন ধরে মানুষ।
যদিও বয়কটের ডাকে বিক্রি কমে যাওয়ার কোনো তাৎক্ষণিক লক্ষণ নেই, তবু ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও বাইরে দেশীয় পণ্য কেনা এবং মার্কিন ব্র্যান্ড বর্জনের ডাক জোরদার হচ্ছে। এতে রপ্তানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং দিল্লি-ওয়াশিংটনের সম্পর্কও চাপে পড়েছে।
‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার আহ্বান
রোববার বেঙ্গালুরুতে এক সমাবেশে মোদী ‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভারতীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বিশ্বে পণ্য তৈরি করেছে, কিন্তু এখন ভারতের প্রয়োজনকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়ার সময়।
ভারতের ‘ওয়াও স্কিন সায়েন্স’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা মনীশ চৌধুরী লিংকডইনে এক ভিডিও বার্তায় কৃষক ও স্টার্টআপগুলোকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’কে বৈশ্বিক আসক্তি বানাতে হবে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে শিখতে হবে, যাদের খাবার ও বিউটি প্রোডাক্ট বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়।
তিনি বলেন, আমরা হাজার হাজার মাইল দূরের পণ্যের জন্য লাইন দিয়েছি। আমরা গর্বের সঙ্গে এমন ব্র্যান্ডে খরচ করেছি, যা আমাদের নয়, অথচ আমাদের দেশের প্রস্তুতকারকেরা নিজেদের দেশে মনোযোগ পেতে লড়াই করছে।
ভারতের ড্রাইভইউ-এর সিইও রাহম শাস্ত্রী লিংকডইনে লেখেন, ভারতের নিজস্ব টুইটার/গুগল/ইউটিউব/হোয়াটসঅ্যাপ/ফেসবুক থাকা উচিত—যেমন চীনের আছে।
হোয়াটসঅ্যাপে প্রচারণা
মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টির সহযোগী সংগঠন স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ রোববার দেশজুড়ে ছোট ছোট জনসভা করে মার্কিন ব্র্যান্ড বর্জনের আহ্বান জানায়। সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন বলেন, মানুষ এখন ভারতীয় পণ্যের দিকে তাকাচ্ছে। ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। এটি জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেমের ডাক।
তিনি আরও জানান, তারা হোয়াটসঅ্যাপে একটি তালিকা ছড়িয়ে দিচ্ছেন, যেখানে বিদেশি ব্র্যান্ডের বদলে ভারতীয় সাবান, টুথপেস্ট ও ঠান্ডা পানীয়ের ব্র্যান্ডের নাম দেওয়া আছে।
সামাজিক মাধ্যমে সংগঠনের একটি প্রচারণা গ্রাফিকের শিরোনাম ‘বিদেশি ফুড চেইন বয়কট করুন’, যেখানে ম্যাকডোনাল্ডসসহ একাধিক রেস্তোরাঁ ব্র্যান্ডের লোগো রয়েছে।
‘আমার ম্যাকপাফ-কফিকে টানবেন না’
যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রতিবাদ চললেও সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারতের দ্বিতীয় শোরুম চালু করেছে টেসলা। এর উদ্বোধনীতে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
উত্তর প্রদেশের লখনউ শহরের ৩৭ বছর বয়সী রাজত গুপ্ত সোমবার ম্যাকডোনাল্ডসে কফি খেতে খেতে বলেন, তিনি শুল্কবিরোধী প্রতিবাদ নিয়ে মাথা ঘামান না, বরং ৪৯ রুপির কফি উপভোগ করেন যেটিকে তিনি ভালো দামের বিনিময়ে ভালো মানের মনে করেন।
তিনি বলেন, শুল্ক কূটনীতির ব্যাপার, আমার ম্যাকপাফ আর কফিকে এতে টানা উচিত নয়।
ভারতে বয়কটের ডাক প্রসঙ্গে রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেয়নি ম্যাকডোনাল্ডস, কোকা-কোলা, অ্যামাজন ও অ্যাপল।
আন্তর্জাতিক
তুরস্কে ফের ভয়াবহ ভূমিকম্প

তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বালিকেসির প্রদেশে ৬.১ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলের নিকটবর্তী বালিকেসির প্রদেশে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
রয়টার্স ও টিআরটি গ্লোবালের প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
দেশটির দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (আফাদ) বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১ কিলোমিটার (৬.৮ মাইল) গভীরে। জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস (জিএফজেড) ভূমিকম্পটির মাত্রা ৬.১৯ এবং গভীরতা ১০ কিলোমিটার বলে উল্লেখ করেছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল বালিকেসির প্রদেশের সিনদিরগিতে বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় মেয়র সেরকান সাক জানিয়েছেন, শহরের কেন্দ্রে একটি তিনতলা ভবন ধসে পড়েছে, যেখানে ছয়জন বাসিন্দা ছিলেন। তিনতলা ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে চারজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি দুজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ারলিকায়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে জানিয়েছেন, আফাদের জরুরি দল ইস্তাম্বুল এবং পার্শ্ববর্তী প্রদেশগুলোতে ক্ষয়ক্ষতি নিরীক্ষণের কাজ শুরু করেছে। তবে প্রাথমিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
তুরস্ক বেশ কয়েকটি ভূতাত্ত্বিক ফল্ট লাইনের উপর অবস্থিত হওয়ায় দেশটি ভূমিকম্প প্রবণ। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্কে ৫৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আল জাজিরার ৫ সাংবাদিক নিহত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ও বিধ্বস্ত গাজা শহরের আল শিফা হাসপাতালের কাছে একটি তাঁবু লক্ষ্য করে দখলদার ইসরায়েলিরা বোমা হামলা চালালে ৫ সাংবাদিক নিহত হন। এর মধ্যে আল জাজিরা আরবির প্রতিবেদক আনাস আল শরীফও রয়েছেন।
রোববার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় আল শিফা হাসপাতালের প্রধান ফটকের বাইরে অবস্থিত তাঁবু লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এতে আল জাজিরার পাঁচ সংবাদিকসহ মোট সাতজন নিহত হন।
নিহত সাংবাদিকরা হলেন- আনাস আল শরীফ (২৮), সংবাদদাতা মোহাম্মদ ক্রিকেহ, ক্যামেরা অপারেটর ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নওফাল ও মোমেন আলিওয়া।
নিহত হওয়ার কিছুক্ষণ আগে এক এক্স বার্তায় আল জাজিরার খ্যাতিমান সাংবাদিক আনাস আল শরীফ লেখেন, গাজা নগরীর পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে প্রচণ্ড বোমাবর্ষণ শুরু করেছে ইসরাইল। অবিরাম বোমাবর্ষণ, গত দুই ঘণ্টা ধরে। গাজা সিটিতে ইসরায়েলি আগ্রাসন তীব্রতর হয়েছে।’
ওই পোস্টে একটি ভিডিও শেয়ার করেন আনাস। তার সবশেষ ভিডিওতে ইসরাইলের ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্র বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এতে অন্ধকার আকাশ মুহূর্তের জন্য কমলা আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে।
আনাস আল শরীফকে হত্যার পর এক বিবৃতি প্রকাশ করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। তাতে তার বিরুদ্ধে হামাসের একটি শাখার নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ করে।
ইউরো-মেডিটেরেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটরের বিশ্লেষক মুহাম্মদ শেহাদা বলেন, আনাস আল শরীফের সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার ‘কোনো ধরনের প্রমাণ নেই’। তার ভাষায়, ‘সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে থাকাই ছিল তার প্রতিদিনের রুটিন কাজ।’
গত জুলাই মাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদরাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিও শেয়ার করেন। যেখানে আনাস আল শরীফকে হামাসের সামরিক শাখার সদস্য বলে অভিযোগ করা হয়। তবে ইসরায়েলি বাহিনীর এই দাবি মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলো।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের গাজার উপত্যকায় ইসরায়েলের আগ্রাসন যেন কিছুতেই থামছে না। এ পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৬০ হাজার ৩৩০ জনে। গাজার স্বাস্থ্য
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৬১ হাজার ৩৩০ জনে। এদের পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৯ জন ফিলিস্তিনি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালে যেসব নিহত ও আহতকে আনা সম্ভব হয়েছে, কেবল তাদেরকেই ধরা হয়েছে হিসেবের মধ্যে। ধ্বংসস্তূপের তলায় এবং সড়কে এমন অনেক মৃতদেহ পড়ে আছে, যাদের হাসপাতালে আনা সম্ভব হয়নি। প্রয়োজনীয় উদ্ধার সরঞ্জামের অভাব এবং ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণ এ জন্য দায়ী। ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে আহত ও নিহতের মোট সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
আন্তর্জাতিক
চাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ২০ বছরের কারাদণ্ড

মধ্য-আফ্রিকার দেশ চাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা সুচেস মাসরাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সহিংসতায় উসকানি, বর্ণবাদী ও বিদ্বেষমূলক বার্তা ছড়ানোর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে দেশটির আদালত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দণ্ড ঘোষণা করেছেন।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা সুচেস মাসরাকে বর্ণবাদী ও বিদ্বেষমূলক বার্তা ছড়ানোর দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত। এই অভিযোগে তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারকরা।
চাদের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইদ্রিস দেবির কট্টর বিরোধী হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুচেস মাসরা। যদিও ২০২৪ সালের মে মাসে দেশটির জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগে দেবির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রায় পাঁচ মাস দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
বর্ণবাদ ও বিদ্বেষমূলক বার্তা ছড়ানোর অভিযোগে গত মে মাসে দেশটির প্রসিকিউটর মাসরার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন। এই ঘটনার সঙ্গে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় মানদাকাও শহরে সংঘটিত এক সংঘর্ষের সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। রক্তক্ষয়ী ওই সংঘর্ষে প্রায় এক ডজন মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
২০ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি মাসরাকে ১৮ লাখ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়েছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবী কাজিলেম্বায়ে ফ্রান্সিস বলেছেন, আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের পরিকল্পনা করছেন তারা।
আন্তর্জাতিক
ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাবে ভারতের শেয়ারবাজারে বড় ধস

সপ্তাহের শেষে বড় পতনের মুখে পড়েছে ভারতের শেয়ারবাজার। গতকাল শুক্রবার সেনসেক্স ও নিফটি ৫০—উভয় সূচকেরই বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে আছে আরেকটি সূচক, ব্যাংক নিফটি। গতকাল তিনটি সূচকেই প্রায় ১ শতাংশ পতন হয়েছে।
গতকাল দিন শেষে সেনসেক্স সূচকের মান দাঁড়িয়েছে ৭৯ হাজার ৮৫৭ দশমিক ৭৯ (-৭৬৫.৪৭), নিফটি ৫০ সূচকের মান ২৪ হাজার ৩৬৩ দশমিক ৩০ (-২৩২.৮৫) আর ব্যাংক নিফটির মান হয়েছে ৫৫ হাজার ০০৪ দশমিক ৯০ (-৫১৬.২৫)। খবর ইকোনমিক টাইমস
বিএসই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মোট বাজারমূল্য ₹৪৪৫ লাখ কোটি রুপি থেকে কমে গতকাল ₹৪৪০ লাখ কোটি রুপিতে নেমে এসেছে। সব খাতে ব্যাপক শেয়ার বিক্রির কারণে মাত্র এক অধিবেশনে বাজার মূলধন প্রায় পাঁচ লাখ কোটি রুপি কমে গেছে। সাপ্তাহিক হিসাবে দেখা গেছে, টানা ছয় সপ্তাহ সূচকগুলোর পতন অব্যাহত আছে। ৮ আগস্ট শেষ হওয়া সপ্তাহে সেনসেক্স ও নিফটি ৫০—উভয় সূচকই প্রায় ১ শতাংশ করে পয়েন্ট হারিয়েছে।
গতকাল বড় ধাক্কা খেয়েছে এইচডিএফসি ও ভারতীয় এয়ারটেলের স্টক। ফলে আরও পতন হয়েছে সূচকের। সব খাতের সূচকেরই পতন হয়েছে গতকাল।
নিফটির অধিকাংশ খাতেই গত সপ্তাহে বড় পতন হয়েছে। নিফটি স্মল ক্যাপ ও মিড ক্যাপ যথাক্রমে ১ দশমিক ৪ শতাংশ ও ১ দশমিক ১ শতাংশ পড়েছে। পুরো সপ্তাহের বিবেচনায় ব্যাংক খাত ভালো মুনাফার মুখ দেখেছে। এ ছাড়া ধাতুও কিছুটা লাভের মুখ দেখেছে। কিন্তু আইটি, ফাইন্যান্স, জ্বালানি, অয়েল অ্যান্ড গ্যাস, এফএমসিজি ও ওষুধ খাতের বড় পতন হয়েছে।
গত সপ্তাহে একাধিক বড় কোম্পানির স্টকের দরপতন হয়েছে। আদানি এন্টারপ্রাইজের দরপতন হয়েছে ৭ শতাংশের মতো। বস্ত্র রপ্তানি কোম্পানি কেপিআর মিল, গোকলদাস এক্সপোর্ট, বর্ধমান টেক্সটাইল, ট্রিডেন্টের স্টকের দাম অনেকটাই কমেছে। উল্টো দিকে আশার ছবি দেখিয়েছে হিরো মোটোকর্প। গতকাল বেড়েছে এলআইসির দামও।
দ্য মিন্টের সংবাদে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতির জেরে ভারতের দুর্বল বাজার আগেই বড় ধাক্কা খেয়েছে। কোম্পানিগুলোর আয় কমে যাওয়া, অতিমূল্যায়ন ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি পুঁজি বেরিয়ে যাওয়া—এসব উদ্বেগ এখনো কাটেনি। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক আরোপ ও আক্রমণাত্মক অবস্থান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ৫০ শতাংশ শুল্কের কারণে ভারতের জিডিপি ১ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।
জিওজিত ইনভেস্টমেন্টসের গবেষণা প্রধান বিনোদ নায়ার বলেন, মার্কিন শুল্ক ভারতের রপ্তানিতে কী প্রভাব ফেলবে—এ আশঙ্কায় ভারতীয় শেয়ারবাজার তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা টানা শেয়ার বিক্রি করায় দেশি সূচকের ওপর চাপ আরও বেড়েছে।
নায়ার আরও বলেন, শুল্কসংক্রান্ত চলমান উদ্বেগের প্রভাব বিবেচনায় বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিতে শুরু করেছে। ২০২৫ ও ২০২৬ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমানো হয়েছে। ফলে ভারতের বাণিজ্য ও সামষ্টিক অর্থনীতি ঘিরে যে অনিশ্চয়তা, তা কেবল বাড়ছেই।
এদিকে ভারতের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগও ধাক্কা খেয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ভারতের বাজার থেকে বিপুল অঙ্কের বিদেশি বিনিয়োগ চলে গেছে। মার্চের পর থেকে পরিস্থিতি বেশ কিছুটা ভালো হয়। এপ্রিল, মে ও জুন মাসে ভারতের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। কিন্তু জুলাই থেকে আবার বিদেশি বিনিয়োগ বেরিয়ে যাওয়ার ছবি সামনে এসেছে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের জেরে আগস্ট মাসেও সে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।