অর্থনীতি
অর্থপাচার করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ফতুর করা হয়েছে: নিউইয়র্ক টাইমস

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের হিসাবে শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে কেবল বাংলাদেশের আর্থিক খাত থেকেই ১৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। তবে অন্যান্য অর্থনীতিবিদের হিসাবে শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তা ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি হতে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাচার হওয়া টাকার প্রকৃত পরিমাণ কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। বিভিন্ন ধরনের আর্থিক হিসাব-নিকাশ করে আহসান মনসুর বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে তার সহযোগীরা বাংলাদেশের ব্যাংক খাত থেকে যে পরিমাণ অর্থ লুট করেছে, তা কার্যত পৃথিবীর আর্থিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
মার্কিন এই সংবাদমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণে আজ বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছে গত অক্টোবরে। আর চলতি সপ্তাহে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ক শ্বেতপত্র কমিটি বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে সার্বিকভাবে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে।
আহসান মনসুর নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরেছিল, লুটপাট করার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হচ্ছে ব্যাংক। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো শত শত কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বিভিন্ন কোম্পানির নামে ঋণ দিয়েছে, যে কোম্পানিগুলোর অনেকগুলোর আদতে কোনো অস্তিত্বই নেই। এই টাকাও কখনো সম্ভবত ব্যাংকে ফিরে আসবে না; এই অর্থের একটি বড় অংশ দেশ থেকে অবৈধভাবে বাইরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার আগে ২৭ বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) কাজ করছেন আহসান মনসুর। তিনি বলেন, ব্যাংকের পুরো পরিচালনা পর্ষদ হাইজ্যাক করা হয়েছিল। তার ভাষ্য, বিশ্বের অন্য কোনো দেশে সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ এভাবে গুণ্ডা-মাস্তানদের সহযোগিতায় পুরো ব্যাংক খাতে এমন পদ্ধতিগতভাবে ডাকাতি করেছে, এমন ঘটনা তিনি আর কোথাও দেখেননি।
সংবাদে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে এখনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পালা চলছে, গণসহিংসতাও দেখা যাচ্ছে। অর্থনীতি প্রসঙ্গে আহসান মনসুর বলেন, আগামী বছর অর্থনীতির আকাশে আরো কালো মেঘের ঘনঘটা থাকবে। এরপর অর্থনীতির আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করবে।
শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে গেছেন। তার ভাগ্যে কী আছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, তাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। এর মধ্যে শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম এহসান। সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে এখনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি। আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ‘উইচ হান্ট’ করা হচ্ছে, তিনি এরর বাইরে নন।
নিউইয়র্ক টাইমস শেখ হাসিনা ও সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। ঢাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় খালি পড়ে আছে। এরপর তারা শেখ হাসিনার মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হয়নি।
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল মান্নানের পদত্যাগের ঘটনা সবিস্তারে তুলে ধরেছে নিউইয়র্ক টাইমস। সংবাদে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি আর দশটা সাধারণ দিনের মতো আব্দুল মান্নান কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন। পথিমধ্যে তিনি একটি ফোন কল পান। কলটি করেছিলেন সামরিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান। তাকে বলা হয়, গাড়ি ঘুরিয়ে তিনি যেন সংস্থাটির সদর দপ্তরে চলে আসেন।
গত অক্টোবর মাসে আব্দুল মান্নান নিউইয়র্ক টাইমসকে সেই ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। কার্যালয়ে যাওয়ার পর সামরিক গোয়েন্দারা আব্দুল মান্নানের ফোন, ঘড়ি ও ওয়ালেট রেখে দেন। এরপর গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান আব্দুল মান্নানের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের বিবরণ দেন; বাংলাদেশের ব্যাংক খাতকে তিনি যে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের কাছে নিয়ে গেছেন, সে জন্য তার প্রশংসা করেন।
আব্দুল মান্নান ভাবছিলেন, তার সময়টা বোধ হয় বৃথা যাচ্ছে। কিন্তু এরপরই তাকে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগের চিঠিতে সই করতে বলা হয়। গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান তাকে বলেন, এই আদেশ দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে এসেছে, অর্থাৎ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি প্রথমে পদত্যাগ পত্রে সই করতে রাজি হননি।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাকে মৌখিকভাবে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। এরপর তাকে গোয়েন্দা প্রধানের কার্যালয় থেকে আরেকটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
আব্দুল মান্নান বলেন, আমি যে ধরনের মানুষ, তাতে ওই সময়ে আমাকে যে অপমানজনক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলা হয়েছিল, তার বিবরণ দেওয়া সম্ভব নয়। এরপর তিনি সময়ের হিসাব ভুলে যান এবং একপর্যায়ে জানতে পারেন, দুপুরের আগে আগে তিনি পদত্যাগ পত্রে সই করেছেন। এরপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তী আট বছর তিনি কার্যত নির্বাসনে ছিলেন; এখন তিনি আবার একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়েছেন।
আব্দুল মান্নান ও আহসান মনসুর একই সুরে বলেন, ওই ঘটনার পর এস আলম গোষ্ঠী ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ কব্জা করে। এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সাইফুল আলম ট্রেডার হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বিশেষ করে শেখ হাসিনার আমলে জ্বালানি, আবাসন খাতসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দাবি, এস আলম গোষ্ঠী অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে আঁতাত করে শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত খালি করে দেওয়ার চক্রান্ত করেছিল।
হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএফআইইউর নির্বাহী পরিচালক এ কে এম এহসান। ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক এস আলম গোষ্ঠীর হাতে যাওয়ার পর নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানিকে ঋণ দেওয়া হয়েছে, যে ঋণের বড় অংশ আর ফেরত আসেনি। ফলে সেগুলো খেলাপি হয়ে গেছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে অনেক ব্যাংক এখন লাইফ সাপোর্টে আছে। এমনকি যেসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভালো, তারাও সেভাবে ঋণ দিতে পারছে না, এমনকি আমানতকারীদের টাকা সব সময় ফেরত দিতে পারছে না। আমানতকারীদের তারা মাঝেমধ্যে টাকা তোলার সুযোগ দিচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে যে টাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেই টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শেখ হাসিনার দলের অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থ-পাচারের মামলা হয়েছে, যে অর্থ মূলত আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে।
এর মাধ্যমে যে কেবল কিছু মানুষের পকেট ভারী হয়েছে তা নয়, এতে বাংলাদেশের মুদ্রার দরপতনও হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে বাংলাদেশ থেকে এই অর্থ-পাচারের গতি বাড়তে থাকে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশের মুদ্রার বড় ধরনের দরপতন হয়। আমদানি মূল্য অনেকটা বেড়ে যায়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের লোডশেডিংয়ের মুখে পড়ে বাংলাদেশ।
অনেক ব্যাংকে নগদ অর্থের সংকট আছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা পুরো বেতন তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন। এমনকি যেদিন বেতন দেওয়া হয়, সেদিন তারা পুরো টাকা তুলতে পারেননি, এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে।
ওষুধ কোম্পানি টেকনো ড্রাগ কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে। এই কোম্পানির সহমহাব্যবস্থাপক মাজেদুল করিম নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, নিম্ন আয়ের কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কর্মীরা তাঁর কাছে অভিযোগ করেছেন, ব্যাংক টাকা দিতে পারছে না, সে কারণে কোম্পানি বাধ্য হয়ে নগখ টাকায় মজুরি পরিশোধ করছে। তিনি আরো বলেন, তার নিজের ডেবিট কার্ড দিয়েও টাকা তোলা যাচ্ছে না।
আহসান মনসুর বলেন, এ বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির বছর নয়। তবে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসছে এবং প্রবাসী আয়প্রবাহ বাড়ছে। আমাদের এ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
তিনি আশাবাদী, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বাংলাদেশের মুদ্রা স্থিতিশীল করতে অরো তিনশ’ কোটি ডলার সহায়তা দেবে। ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর।

অর্থনীতি
প্রথম চালানে ভারতে গেলো সাড়ে ৩৭ টন ইলিশ

এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রথম চালানে সাড়ে ৩৭ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৮টি ট্রাকে এসব ইলিশ ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ করে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামীম হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, ভারতের কলকাতার পাঁচটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রথম চালানের ইলিশ আমদানি করেছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ন্যাশনাল ট্রেডিং, এফএনএস ফিশ, জয় শান্তসী, মা ইন্টারন্যাশনাল ও আর জে ইন্টারন্যাশনাল।
অপর দিকে বাংলাদেশ থেকে ৬টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রথম চালানে ৩৭ টন ৪৬০ কেজি ইলিশ রপ্তানি করেছে। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- সততা ফিশ, স্বর্ণালি এন্টারপ্রাইজ, তানিশা এন্টারপ্রাইজ, বিশ্বাস ট্রেডার্স ও লাকী ট্রেডিং।
জানা গেছে, ইলিশ রপ্তানি নিষিদ্ধ হলেও আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার ভারতে মোট ১২০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে এ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ টন, ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ টন করে ৭৫০ টন, ৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৪০ টন করে ৩৬০ টন এবং দুটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ টন করে ৪০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পূজার আগেই পদ্মার ইলিশের পৌঁছে যাচ্ছে ভারতে।
জানা যায়,গত বছর ২৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। রপ্তানি হয় এক হাজার ৩০৬ দশমিক ৮১৩ মেট্রিক টন ইলিশ। যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া রপ্তানি আদেশের ৪৪ ভাগ। অনেক প্রতিষ্ঠান মাছ না পেয়ে ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি। এবারও মাছ সংকট ও অতিরিক্ত মূল্যের কারণে সব মাছ রপ্তানি করা সম্ভব হবে না বলে জানান মাছ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী নূরুল আমিন বিশ্বাস।
কাফি
অর্থনীতি
খেলাপি ঋণ ১০ বছরের জন্য পুনঃতপশিলের সুযোগ

বিশেষ বিবেচনায় আরও খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিল, পুনর্গঠন করতে পারবে ব্যাংকগুলো। মাত্র দুই শতাংশ ডাউন-পেমেন্টের বিপরীতে ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ নিয়মিত করা যাবে। দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ড এবং সংশ্লিষ্ট খাতের সর্বনিম্ন সুদহারের চেয়েও এক শতাংশ কম সুদ নির্ধারণ করা যাবে। ব্যাংকগুলোই এসব সুবিধিা দিতে পারবে। কোনো কারণে প্রয়োজন হলে ৩০০ কোটি টাকার বেশি ঋণে নীতি সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাছাই কমিটিতে আবেদন করা যাবে।
আজ মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সব ব্যাংকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিগত সরকারের সময়ে বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পুনঃতপশিল, পুনর্গঠনসহ নানা সুবিধা দিয়ে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হতো। সরকার পতনের পর তা হুহু করে বাড়ছে। এরই মধ্যে খেলাপি ঋণ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এরকম অবস্থায় গত জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি কমিটি গঠন করে বিশেষ বিবেচনায় খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিলের সুযোগ দিচ্ছিল। এখন তা ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেওয়া হলো।
আজকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৩০ জুন বিরূপ মানে শ্রেণীকৃত ঋণে পরিমাণ বিবেচনায় ব্যাংকার–গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে পুনঃতপশিল করা যাবে। এ জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। আবেদনের ৬ মাসের মধ্যে ব্যাংক থেকে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। নীতি সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট চেক বা অন্য কোনো ইনস্ট্রুমেন্টের মাধ্যমে দিলে তা নগদায়নের পর হতে ৬ মাস গণনা করতে হবে। ডাউন পেমেন্টের অর্থ ব্যাংকের অনুকূলে নগদায়নের আগে নীতি সহায়তার আবেদন কার্যকর করা যাবে না। ইতোপূর্বে তিন বা তার বেশি পুনঃতপশিল করা ঋণে অতিরিক্ত ১ শতাংশ ডাউন-পেমেন্ট আদায় করতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নীতি সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি নিতে হবে না। তবে এ বিষয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ হতে অনুমোদন নিতে হবে। একাধিক ব্যাংক হতে ঋণের বিপরীতে নীতি সহায়তার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক বা সকলের সম্মতিতে নীতি সহায়তার উদ্যোগ ও সভার আয়োজন করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে। ৩০০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণ স্থিতির ঋণগ্রহীতাকে নীতি সহায়তার বিষয়ে ব্যাংক থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না হলে আন্তঃব্যাংক সভার কার্যবিবরণী বা পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ‘ব্যবসা ও আর্থিক ব্যবস্থাদি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গঠিত নীতি সহায়তা সংক্রান্ত বাছাই কমিটি’ বরাবর আবেদন পাঠাতে হবে।
বিশেষ সুবিধা দেওয়া ঋণের বিপরীতে ব্যাংকার–গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সাধারণ প্রভিশন রাখতে হবে। বিশেষ সুবিধা পাওয়া ঋণ এসএমএ মানে শ্রেণীকরণ করে সাধারণ প্রভিশন রাখতে হবে। প্রকৃত আদায় ছাড়া ব্যাংকের আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। তবে সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য স্থানান্তর করা যাবে। এ ধরনের সুবিধা দেওয়া ঋণে নতুন সুবিধা দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে অতীত লেনদেনসহ সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করতে হবে। আর ২০২২ সালে শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানির জন্য বাকিতে খোলা এলসির ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার অপ্রত্যাশিত বিনিময় হারজনিত ক্ষতির মোট পরিমাণ গতবছর জারি করা সার্কুলারের নির্দেশনা অনুযায়ী হিসাবায়ন করতে হবে। কোনো গ্রাহক চাইলে পুনর্গঠন বা এককালীন এক্সিট সুবিধা নিতে পারবে।
জাল-জালিয়াতি বা অন্য কোন ধরনের প্রতারণা বা অনিয়মের মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণের ক্ষেত্রে এ সার্কুলারে বর্ণিত সুবিধা দেওয়া যাবে না। ব্যাংক থেকে চূড়ান্তভাবে ঘোষিত ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা এ সার্কুলারে বর্ণিত সুবিধাদি পাবে না। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতার ক্ষতির পরিমাণ এবং প্রতিষ্ঠানের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে বিবেচনায় নিয়ে পুনঃতপসিল, পুনর্গঠন বা এক্সিটের মেয়াদকাল নির্ধারণ করতে হবে। মেয়াদকাল নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থাপিত স্মারকে এবং সভার কার্যবিবরণীতে সুস্পষ্ট কারণ সুনির্দিষ্টভাবে লিখতে হবে। সুবিধা দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহক সোলেনামার মাধ্যমে চলমান মামলার স্থগিতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পরবর্তীতে কোনো গ্রাহকের দেওয়া সুবিধার কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে তার অনুকূলে প্রদত্ত সকল সুবিধা বাতিল বলে হবে এবং ব্যাংক ঋণ আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে।
অর্থনীতি
এনবিআরের ৫৫৫ কর্মকর্তাকে বদলি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৫৫৫ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন করেছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাদের বদলি ও পদায়ন করা হয়।
এর মধ্যে এনবিআরের কাস্টমস ও ভ্যাট প্রশাসন শাখা-৩ এর দ্বিতীয় সচিব তানভীর আহম্মেদের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে ৪৫৯ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন করা হয়েছে। দ্বিতীয় সচিবের সই করা অপর এক প্রজ্ঞাপনে আরও ৯৬ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়নের কথা বলা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হয়েছে। এসব আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এর আগে, সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ১৮২ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে বদলি ও পদায়ন করে এনবিআর। গেল কয়েক মাস ধরেই এনবিআরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলি করা হচ্ছে।
এনবিআর বিলুপ্তির আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন দফতরে বেশ কয়েক মাস ধরেই ব্যাপক রদবদল চলছে।
অর্থনীতি
বেড়েছে স্বর্ণের দাম, ভরি প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার

ফের দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। প্রতি ভরিতে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৭৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬২২ টাকা। এটা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ দাম। আজ প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৭ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে বাজুস। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬২২ টাকা, ২১ ক্যারেট প্রতি ভরি এক লাখ ৮১ হাজার ২ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম এক লাখ ৫৫ হাজার ১৪৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম এক লাখ ২৮ হাজার ৭০১ টাকা ।
এবার সোনার দামের সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে রুপার দামও। দেশে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৭৬ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৩ হাজার ৩১৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ৮৪৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এতদিন দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৮১১ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৬৮৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ হাজার ২৯৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রুপা ১ হাজার ৭২৬ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে।
অর্থনীতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকের পদত্যাগ

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক মুখপাত্র মেজবাউল হক পদত্যাগ করেছেন।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান মেজবাউল হকের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য,পদত্যাগপত্রে তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়েছেন।