অর্থনীতি
এলডিসি থেকে উত্তরণ ২০২৬ সালের নভেম্বরেই: বাণিজ্য উপদেষ্টা

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে ২০২৬ সালের নভেম্বরেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে চলেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে এটি এবং এ পরিবর্তন বিপুল পরিমাণ সুযোগ তৈরি করবে। তবে এ জন্য আমাদের ব্যবসায়িক সংগঠন ও মানবসম্পদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিরোধ নিষ্পত্তি–সংক্রান্ত জাতীয় কর্মশালাবিষয়ক তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যসচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের পরিচালক জর্জ ক্যাস্ট্রো ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাওসার চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যম শ্রেণির কর্মচারী ও ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।
এর আগে গত শনিবার ঢাকা চেম্বার আয়োজিত এক বাণিজ্য সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের একাংশ ২০২৬ সালে এলডিসি তালিকা থেকে বের হওয়া পিছিয়ে দেওয়া যায় কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন।
ওই দিন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি জাভেদ আখতার বলেছিলেন, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হওয়ার দরকার আছে কি না, সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো নেওয়া যাবে কি না, এখনই তা ভেবে দেখা দরকার। অন্য ব্যবসায়ীরাও এ বিষয়ে একই ভাষায় কথা বলছিলেন।
এলডিসি থেকে উত্তরণ নিয়ে ওই দিন শেখ বশিরউদ্দীনের জবাব ছিল, এটা করতে হবে। ২০২৬ না ২০৩০, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে, কিন্তু এটা করতেই হবে। যথাযথ নীতি তৈরি করতে পারলে এটা সম্ভব।
এর আগে গত ১২ আগস্ট ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ এক বক্তব্যে বলেছিলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ ১০ বছর পিছিয়ে দেওয়া দরকার। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্থায়নের সুযোগ ও জিএসপি প্লাসের প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ এবং সেই বিনিয়োগের জোগান দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই দেশের ব্যাংক খাত। এ কারণেই এলডিসি থেকে উত্তরণের দরকার নেই বলে তিনি মত দেন।
এলডিসি থেকে বের হলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। গরিব বা এলডিসির তকমা থাকবে না। পুরোপুরি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে বাংলাদেশ, যাতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ হবে। ডব্লিউটিওর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এলডিসি থেকে বের হলে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর নিয়মিত হারে শুল্ক বসবে। বাড়তি শুল্কের কারণে রপ্তানি কমতে পারে বছরে ৫৩৭ কোটি মার্কিন ডলারের (প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা)।
আজ সকালে কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থায় নিরাপত্তা ও পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা যতই এগিয়ে যাব, ততই অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (ইপিএ), সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (সিইপিও) করার জন্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পাশাপাশি বহুপক্ষীয় আলোচনা করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), দক্ষিণ এশীয় উপ–আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (সাসেক) ও আসিয়ানের মতো আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কও গভীরতর করতে হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
রিটার্ন না দিলে ব্যাংক হিসাব তলব করবে এনবিআর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, ট্যাক্স বাড়াতে না পারলে দেশের উন্নয়নে অংশীদার হওয়া যাবে না। তাই যারা রিটার্ন দিচ্ছে না, তাদের নোটিশ দেয়া হচ্ছে এবং পরবর্তী সময়ে তাদের ব্যাংক হিসেব তলব করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে ব্যবসা ও শিল্পবান্ধব করতে আয়কর বিষয়ক ১৯টি, ভ্যাট বিষয়ক ৪০ ও শুল্ক বিষয়ক ৫৫টি প্রস্তাবনা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।
গেল অর্থবছরে জমা হওয়া ৪৫ লাখ রিটার্নের মধ্যে ৩০ লাখ শূন্য রিটার্নধারী মন্তব্য করে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, মাত্র ১৫ লাখ করদাতা থেকে রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। বাংলাদেশের ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও খুবই কম। এত কম সংখ্যক লোকের থেকে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই কর হার বাড়ানোর বিকল্প নেই।
যৌক্তিকভাবে বাড়ানো হবে করহার এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের যেন এনবিআর অফিসে ঘুরতে না হয়, সেজন্য সবকিছু অটোমেশন করা হচ্ছে। এখন সিঙ্গেল উইন্ডোর মাধ্যমে এক লাখ ৬০ হাজার সার্টিফিকেট অনলাইনে দেওয়া হয়েছে। ভ্যাট ও বন্ড সুবিধা নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমরা বন্ড সুবিধা অটোমেশনের আওতায় আনতে কাজ করছি। এছাড়া আয়করের মত ভ্যাটও যেন ঘরে বসে দেওয়া যায়, সে ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
বাজেটকে জনবান্ধব করতে ব্যবসায়ীসহ সবার মতামত নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মো. আবদুর রহমান খান বলেন, আগামী বাজেটে ঘাটতি থাকবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি যেন না হয়, সেই দিকেও লক্ষ্য রাখা হবে। মার্কিন শুল্ক আরোপের ফলে দেশের পোশাকখাত যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে।
কর ফাঁকির বিষয়টি প্রধান প্রায়োরিটি মন্তব্য করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা যে দাবি তুলেছেন তা যৌক্তিক। বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। বাজেট প্রণয়নে এ সুপারিশ দেওয়া হবে। তবে আমরা এখন রাজস্ব আহরণের বিষয়ে জোর দিচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান, উইমেন চেম্বারের সভাপতি আবিদা মোস্তফা, চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি সরওয়ার জামাল নিজাম, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এরশাদ উল্লাহ, সাবেক সহ-সভাপতি বেলাল আহমেদ ও বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরীসহ অনেকে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী কানাডার কোয়েস্ট ওয়াটার গ্লোবাল

কানাডাভিত্তিক কোয়েস্ট ওয়াটার গ্লোবাল ইনক বাংলাদেশের পরিষ্কার পানিসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, চুক্তির অংশ হিসেবে কোয়েস্ট ওয়াটার গ্লোবাল ইনক বাংলাদেশে অ্যাকুয়াট্যাপ (আ্যাকুয়াটেপ) নামে একটি বিকেন্দ্রীভূত পানি সরবরাহ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সমীক্ষা পরিচালনা করবে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্প্রসারণে কাজ করবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দেড় বছর পর সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি

দেশের ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১৮ হাজার ২৫০ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রায় দেড় বছর পর রপ্তানির এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৯ শর্ত মেনে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব চাল রপ্তানি করতে হবে।
গত ৮ এপ্রিল আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রক দপ্তরের কার্যালয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রককে এ–সংক্রান্ত চিঠি দিয়ে রপ্তানির অনুমতির বিষয়টি জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি শাখা-২–এর জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এস এইচ এম মাগফুরুল হাসান আব্বাসী বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে ৯ শর্তে ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১৮ হাজার ২৫০ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে এসব সুগন্ধি চাল রপ্তানি করা হবে বলে জানান সচিব মাগফুরুল হাসান আব্বাসী। তিনি বলেন, প্রতি কেজি চাল সর্বনিম্ন ১ দশমিক ৬০ মার্কিন ডলার হিসেবে ১৯৫ টাকা রপ্তানি দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এসব রপ্তানি এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টন পর্যন্ত চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো সাব-কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে চাল রপ্তানি করতে পারবে না।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাংলাদেশে ব্যবসার সম্ভাবনা খুঁজে দেখছে পাকিস্তানের শিল্পগোষ্ঠী

পাকিস্তানের এনগ্রো হোল্ডিংসের সিইও আব্দুল সামাদ দাউদ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় তাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সাক্ষাতে এনগ্রোর সিইও বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ ও জ্বালানি খাতের বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং কোম্পানির কার্যক্রম প্রসারের ইচ্ছা জানান।
এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা।
সামাদ দাউদ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের সম্ভাবনা নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। পাশাপাশি ভোলার গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে শিল্পখাতের বিকাশে অংশগ্রহণের সুযোগও আমরা দেখছি।’
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এই আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে টেকসই এবং ভবিষ্যতমুখী অংশীদারিত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে মনোযোগ দিতে চাই, যা আমাদের মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।’
বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দিতে আসা দাউদ চারদিনব্যাপী এই সম্মেলনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বিডা সামিটে এক মানবিক ছোঁয়া ছিল— এটি আন্তরিক, স্বাগতপূর্ণ এবং লক্ষ্যনির্ভর মনে হয়েছে। এক ছাদের নিচে এত শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিকে দেখে আমি অভিভূত।
অধ্যাপক ইউনূস এনগ্রোর নেতৃত্বকে বাংলাদেশে আবার আসার আমন্ত্রণ এবং বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার সুযোগ দেখার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি আপনাকে আবার আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। বাংলাদেশ অনেক কিছু দিতে পারে— শুধু বিনিয়োগকারীদেরই নয়, পুরো বিশ্বকে।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
আসন্ন বাজেটে কর বাড়ানো হবে: এনবিআর চেয়ারম্যান

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় বাজেটে কর যৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি করা হবে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে রাজস্ব আদায় বাড়ানো এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) প্রাক-বাজেট আলোচনায় বক্তৃতা করতে গিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের অন্যতম নিম্নতম, যা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। কর কমালে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতি দেখা দেবে, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বহন করতে পারবে না।
তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য রাজস্ব অপরিহার্য। আমাদের উপর ব্যাপক চাপ রয়েছে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর, না পারলে অগ্রগতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হব।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিসিসিআই প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার পাশা। আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবিদা মুস্তাফা, বাংলাদেশ ফার্নিচার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের মকসুদুর রহমান, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সালেহ আহমেদ সোলাইমান, সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলীসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতারা।
এনবিআর চেয়ারম্যান উদাহরণ দিয়ে বলেন, একটি দেশ একটি পরিবারের মতো—যারা বেশি আয় করে, তারা বেশি অবদান রাখে, আর যারা আয় করে না, তারা পকেট মানি পায়। তেমনি আমরা কর সংগ্রহ করি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা নিশ্চিত করি।
তিনি জানান, দেশে নিবন্ধিত ১ কোটি ৪৫ লাখ করদাতার মধ্যে প্রকৃত কর প্রদান করেন মাত্র ৪৫ লাখ, যার মধ্যে ৩০ লাখ করদাতা শূন্য রিটার্নধারী। তবে তিনি বলেন, কর ব্যবস্থায় ডিজিটাল অগ্রগতি হচ্ছে—গত বছর অনলাইনে ৪ লাখ রিটার্ন জমা পড়লেও এবার তা ১৫ লাখে পৌঁছেছে।
ভ্যাট কমানোর প্রস্তাবের জবাবে আবদুর রহমান খান বলেন, আমরা একক হারে ভ্যাট কমাতে প্রস্তুত, তবে সব পণ্যে একই হার হতে হবে। ব্যবসায়ীদেরও প্রকৃত ভ্যাট প্রদানের ব্যাপারে সৎ হতে হবে। তিনি আরও জানান, এনবিআর প্রতি মাসের পরিবর্তে ত্রৈমাসিক ভ্যাট নিরীক্ষা চালু করার চিন্তা করছে, এবং ভ্যাট ব্যবস্থাকে আরও স্বয়ংক্রিয় করতে কাজ করছে।
বন্ড সুবিধার অপব্যবহার নিয়েও কঠোর মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য করমুক্ত কাঁচামাল আমদানির সুবিধা নেওয়া হলেও তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। স্বর্ণের ক্ষেত্রে তো আমদানি রেকর্ডই নেই, অথচ বাজারে টনকে টন স্বর্ণ পাওয়া যায়।
রিকন্ডিশন গাড়ির বাজারে আন্ডার-ইনভয়েসিংয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ১৫ লাখ টাকায় আমদানিকৃত গাড়ি ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে—এটা দেখেই বোঝা যায় আন্ডার-ইনভয়েসিং হয়েছে। এজন্যই ৫০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে বাধ্য হচ্ছি।
জাহাজভাঙা শিল্পে আমদানি শুল্ক নিয়েও সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, দেখতে অযৌক্তিক মনে হলেও, এসব শুল্ক না থাকলে জাহাজগুলোতে মূল ওজনের চেয়ে বেশি তেল আসবে—এটা সুবিধার অপব্যবহারের উদাহরণ।
ব্যবসায়ী নেতাদের বিভিন্ন দাবির প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বেশিরভাগ প্রস্তাব যুক্তিযুক্তভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং বাজেটে প্রতিফলন ঘটবে বলে আশা করি।
এসময় খলিলুর রহমান মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক কমানোর দাবি জানান। বলেন, গত বছর ক্রেনের মতো যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৭ শতাংশ করা হয়েছে, যা আবার কমানো জরুরি।
সিসিসিআই প্রশাসক আনোয়ার পাশা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বাজেটের জন্য প্রায় ১৬টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এর মধ্যে ছিল কর ও ভ্যাট ব্যবস্থাকে সহজীকরণ, বন্ড ব্যবহারে নজরদারি, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের উৎসে কর মাফ, আগাম আয়কর (এআইটি) দ্রুত ফেরত, ও ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করার প্রস্তাব ইত্যাদি।