অর্থনীতি
দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন জানিয়েছেন দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তিনি বলেন, কেবল সরকারের আশায় না থেকে আমাদের সবার একত্রে কাজ করতে হবে। আমরাও প্রতিটি পরিস্থিতি থেকে শিখছি। কারণ সরকার চলমান নৈরাজ্য চায় না। আমাদের শ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি। গুটিকয়েক যারা এই নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, তারা এটিকে একটি সফট টার্গেট হিসেবে নিয়েছে। কিন্তু আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আপনাদের সহযোগিতায় যা আরও দ্রুত এবং সুন্দর হবে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘প্রাইভেট সেক্টর আউটলুক: প্রত্যাশা ও অগ্রাধিকার’ শীর্ষক বাণিজ্য সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেন, প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা। সরকার এই বিষয়ে অনেক বেশি সেনসিটিভ। এজন্য আমাদের সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
শিল্পমালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অনেক জায়গায় শিল্পমালিকরা সমস্যাগুলো থেকে পৃথক হয়ে যাচ্ছেন। আমি আপনাদের অনুরোধ করবো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আপনারাও যুক্ত হন। আপনারা যখন সরে আসেন তখন আগুনে ঘি ঢালার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্তমানে অনেক ব্যবসায়ী সংগঠন। এগুলোকে রেশনালাইজ করতে হবে। আমাদের এতগুলো মন্ত্রণালয়েরও দরকার নেই। এগুলোকে কমিয়ে আনা অথবা একত্রিত করা যেতে পারে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকেও কমিয়ে আনতে হবে অথবা মার্জ করতে হবে।
এলডিসি গ্রাজুয়েশন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই এলডিসি গ্রাজুয়েশন করতে হবে। সেটা ২০২৬ না হয়ে ২০৩০ হতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু আমাদের গ্রাজুয়েট হতেই হবে। আমরা কি তৈরি? হয়তো না। কিন্তু আমরা কি হতে পারি? আমি মনে করি হ্যাঁ। যদি আমরা যথাযথ নীতি তৈরি করতে পারি তাহলে সম্ভব।‘আজ হোক কাল হোক আমাদের বাণিজ্য উদার করতে হবে। আমরা যদি সাব-সেক্টরগুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করি এবং পরিণামদর্শীভাবে নীতি নেওয়া শুরু করি তাহলে এটা সম্ভব। বিশ্ব বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে দেখতে চায়। আমাদের নিজেদের যোগ্যতা তৈরি করতে হবে। কারও পরিচয়ে নয়, নিজেদের জোরে কাজ করতে হবে।’
কর কাঠামো নিয়ে তিনি বলেন, যথাযথ কর কাঠামো নিতে হবে। কারণ সরকারের খরচ করার জন্য টাকা দরকার।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি এবং আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ব্যাংকিং খাতকে চ্যানেলাইজড করতে হবে। যারা ব্যাংক লুট করেছে তাদের ভর্তুকি আমরা দেবো কেন? গত ১৫ বছরে যারা অডিট করেছে তাদের কারও সাজা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজনকেও এখনো জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি।
ব্যবসার উন্নয়নে পলিসি ঠিক করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখন এমন পলিসি হচ্ছে যার ফলে শিল্প উন্নতি করতে পারছে না। দেশের গ্যাসের দাম ৮-১০ টাকা, যা আমদানি করলে হয় ১৬ টাকা, কিন্তু সরকার রাখছে ৩০ টাকা। এভাবে চলতে থাকলে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা মাঠে মারা যাবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আইনশৃঙ্খলা ঠিক করতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। নতুন এক সমস্যার নাম মামলা বাণিজ্য। এটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন আমাদের পলিসি সাপোর্ট প্রয়োজন। তাহলেই ব্যবসা এগিয়ে যাবে।
এলডিসি গ্রাজুয়েশন লক্ষ্যমাত্রা স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশন অবিলম্বে স্থগিত করা হোক। আমরা বেঁচে থাকার সংগ্রামে আছি। তাই এটি স্থগিত করা প্রয়োজন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বছরে আমদানি হয় ৬ হাজার কোটি টাকার এলএনজি
দেশে এখন বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার এলএনজি আমদানি করা হয় বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে ইকনোমিক রিপোটার্স ফোরামে (ইআরএফ) আয়োজিত নবায়নযোগ্যে দ্রুত রূপান্তর: দেশীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, এলএনজি আমদানি আর কত বাড়াবো? আমাদের একটা বাধ্যবাধকতা হয়েছে যে আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যেতে হবে। এটাতে যাওয়া ছাড়া আমাদের সামনে বিকল্প কিছু নেই। আমরা বলে থাকি ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আনবো, কিন্তু প্রকৃতভাবে এটা যদি বাস্তবায়ন করা যায় দেখা যাবে আমাদের অর্জন ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের এনার্জি সমস্যা হচ্ছে প্রাইমারি এনার্জি সমস্যা। বিদ্যুৎ না থাকলে গ্রাহক বিদ্যুৎ চাইতে পারবে, কারণ এটা দৃশ্যমান। কিন্তু একটা শিল্প কারখানা যখন গ্যাস পায় না তখনতো এটা দেখা যায় না, তখন তার প্রডাকশন যে পতন হবে সেটা দেখা যায় না। আমাদের এখন দৈনিক দরকার হচ্ছে ৪ হাজার এমএমসিএফডি গ্যাস। এখন আমাদের দেশীয় উৎপাদন এবং আমদানি মিলিয়ে আছে ৩ হাজারের কাছাকাছি। এক হাজার এমএমসিএফডি ঘাটতি আছে। এটা ক্রমাগত বাড়ছে, কারণ আমাদের উৎপাদন কমছে। আমরা চেষ্টা করছি নতুন কূপ খনন করে আরও কিছু গ্যাস পাওয়া যায় কি না।
তিনি বলেন, সরকারি ক্রয় উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এখন উপদেষ্টা বা সচিবকে চিনতে হবে না। দক্ষতা, আর্থিক সামর্থ ও অভিজ্ঞতা থাকলে অফিসে বসেই ব্যবসা করা যাবে। কাউকে চেনা জানার দরকার নেই। অর্থনৈতিক শৃঙ্খল মুক্ত করে জনগণের অধিকার জনগণকে ফেরত দিয়ে দিতে চাই।
আলোচনা সভায় ইকনোমিক রিপোটার্স ফোরামের সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধা, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম, সিপিডির রিচার্স ডিরেক্টর খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সেন্টার ফর এনভারমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিচার্সের (সিইপিআর) চেয়ারপারসন গৌরঙ্গ নন্দীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে: অর্থ উপদেষ্টা
ক্ষয় হয়ে যেতে শুরু করা দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করেছে। একইসঙ্গে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। এ ক্ষেত্রে বিদেশি সহযোগী সংস্থাগুলো খুবই ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক বাণিজ্য সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বিগত সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়েও কথা বলেন।
তিনি বলেন, আগের সরকারের রেখে যাওয়া অনিয়ম-দুর্নীতি ২-৪ মাসে স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে কেউ আর টাকা পাচার করতে পারবে না।
এসময় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন, ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ রহমান, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি জাভেদ আখতার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
আ. লীগ শাসনামলে বছরে পাচার হয়েছে ১৪ বিলিয়ন ডলার
শেখ হাসিনার সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে পুঁজি পাচার বাবদ বছরে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির খসড়া প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কমিটিসূত্রে জানা গেছে, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, সরকারি নথি ও বৈশ্বিক প্রতিবেদন ব্যবহার করে অর্থ পাচারের চিত্র তুলে ধরেছে। তবে তবে সময় স্বল্পতার কারণে অর্থ পাচারের প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি। প্রতিবেদনটি রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং পরদিন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির ১২ সদস্যের একজন বলেন, ‘কীভাবে অর্থ পাচার হয় এবং কীভাবে বন্ধ করা যায় তা আমরা প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছি।’
কমিটির আরেক সদস্য জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ ও কানাডার আদালতের বিষয়ে তারা তাদের পর্যবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করেছেন। নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের বিষয়টিও তাদের পর্যবেক্ষণ আছে।
কমিটির আরেক সদস্য জানান, মোট সরকারি ঋণ বিশেষ করে বিদেশি অর্থায়নে চলমান ২১৫টি প্রকল্পের আগামী চার বছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বিষয়টি প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের জন্য ১২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির সদস্যরা হলেন- অর্থনীতিবিদ একে এনামুল হক, কাজী ইকবাল, মোস্তাফিজুর রহমান, সেলিম রায়হান, শারমিন নীলোর্মি, মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, ফেরদৌস আরা বেগম, জাহিদ হোসেন, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ তামিম এবং জনশক্তি রপ্তানি বিশেষজ্ঞ তাসনিম আরেফা সিদ্দিকী।
শ্বেতপত্র কী, কেন করা হয়?
শ্বেতপত্রের ধারণাটি এসেছে যুক্তরাজ্যের সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে। সরকারের দ্বারা প্রকাশিত কোনো নীতিগত নথি যেখানে সংসদীয় প্রস্তাবনা থাকে, সেগুলোই শ্বেতপত্র, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে এভাবেই শ্বেতপত্রের বর্ণনা দেওয়া আছে।
এর ফলে, অধিকতর আলাপ-আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়। অর্থনীতি ও বিনিয়োগবিষয়ক জ্ঞানকোষ ইনভেস্টোপিডিয়া থেকে জানা যাচ্ছে, উনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে পার্লামেন্ট রিপোর্টের প্রচ্ছদ থাকতো নীল রঙের। যদি রিপোর্টের বিষয়বস্তু সরকারের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ হতো নীল প্রচ্ছদ বাদ দিয়ে সাদা প্রচ্ছদেই সেগুলো প্রকাশ করা হতো। সেই রিপোর্টগুলোকে বলা হতো হোয়াইট পেপারস্।
তবে আগে ‘বাংলাদেশে এ প্রথার প্রচলন সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী’ দেখা গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে জাতীয় জ্ঞান কোষ বাংলাপিডিয়ায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘এ প্রথা কোনো প্রস্তাবিত নীতি বা জনস্বার্থ সম্পর্কিত সমস্যার সাথে যুক্ত নয়। বরং কোনো রাজনৈতিক দলের সরকার পরিচালনার পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক শাসক দলের কুকীর্তির দলিল হিসাবে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
আলুর সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও ৫ বছরের সর্বোচ্চ দাম
বাজারে সরবরাহ বেড়েছে নতুন আলুর। একই সঙ্গে পুরনো আলুর সরবরাহও পর্যাপ্ত। তবুও পাঁচ বছরে আলুর রেকর্ড দাম পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম পুরনো আলুর দাম কেজিতে ৭৫ টাকা ছাড়াল। এক বছর আগে ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর বাজারে আলুর কেজিপ্রতি মূল্য ছিল ৪৫ টাকার মধ্যে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের একই সময় দেশে আলুর দাম ছিল প্রতি কেজি ৫০ টাকা। বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কিছুটা কমলেও এখনো চড়া দামেই দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
কোম্পানিগুলো তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় বাজারের দোকানগুলোতে এখনো বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে।
বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূলত মজুদদারদের কারসাজির কারণেই এবার আলুর দামের এমন অবস্থা। কোনো কারণ ছাড়াই তারা আলুর দাম বাড়াচ্ছে। কৃষক পর্যায় থেকে নামমাত্র মূল্যে আলু কিনে মজুদ করে অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার, বাড্ডা ও রামপুরা কাঁচাবাজার ঘুরে ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর খুচরা বাজারে দাম বেড়ে প্রতি কেজি পুরনো আলু ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট পেঁয়াজসহ পেঁয়াজপাতা প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকায় এবং সোনালি মুরগি কেজি ২৭০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাড্ডার খুচরা আলু বিক্রেতা আব্দুস সামাদ বলেন, ‘বাজারে এখন আলুর সরবরাহ সংকট রয়েছে। এতে হিমাগার পর্যায়ে কয়েক দফা দাম বাড়ানো হয়েছে। মূলত এসব কারণেই আলুর দাম বেড়েছে। বাজারে অল্প পরিসরে নতুন আলু আসছে, আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে দাম নেমে যাবে।’
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের বাজার দরের তথ্য বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে আলুর দাম পাঁচ টাকা বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে পাঁচ টাকা পর্যন্ত কমে মানভেদে ১১৫ থেকে ১৩০ টাকা এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, কোল্ড স্টোরেজে রাখা আলুর দাম প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। আমদানি করলেও কোনোভাবেই ৪০ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। কিন্তু ব্যবসায়ী ও কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা আঁতাত করে এবার দাম বেশি বাড়িয়ে দিয়েছেন। কারণ এবার আলুর সরবরাহ সংকট ছিল। তবে আগামী মাসে পুরোদমে বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ শুরু হলে দাম কমে আসবে।
হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, আমাদের হিসাবে দেশে আলুর সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন। এর পরও আমাদের স্টোরেজ ২০ শতাংশ পর্যন্ত খালি ছিল। তাই এবার বাজারে আলুর সংকট আছে। সেটার সুযোগে মজুদদাররা দাম বাড়িয়েছেন। আমরা শুধু স্টোরেজ মালিক হিসেবে ভাড়া আদায় করে থাকি। এখানে আলু মজুদ করেন ব্যবসায়ীরা, আমরা না। কেজিতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা ভাড়া পাই আমরা।
যদিও কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে আলুর সর্বোচ্চ বার্ষিক চাহিদা ৮০ লাখ টন। আর বিবিএসের হিসাব মতে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে আলুর উৎপাদন ছিল এক কোটি ছয় লাখ টনের কিছু বেশি, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় দুই লাখ টন বেশি। ফলে চাহিদা মিটিয়ে আলু উদ্বৃত্ত থাকার কথা ২৬ লাখ টনের বেশি। কিন্তু উল্টো আলু আমদানি করেও বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
কমেছে ডিম-মুরগির দাম, এখনও চড়া পেঁয়াজ-আলু
স্বস্তি ফেরেনি আলু ও পেঁয়াজের বাজারে। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল সহ এসব পণ্য। দাম কিছুটা কমেছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির। অপরদিকে বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়লেও দামে তেমন প্রভাব পড়েনি। মাছের বাজারেও খুব বেশি পরিবর্তন নেই।
আজ শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে নতুন আমন ধানের চাল আসায় দাম কেজিপ্রতি কমেছে ৩ থেকে ৪ টাকা। প্রতি কেজি মোটা চাল (গুটি স্বর্ণা ও চায়না ইরি) ৫০ থেকে ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এ ধরনের চালের কেজি ছিল ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা।
বাজারে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় বিআর-২৮ ও পায়জাম জাতীয় চাল। এ ধরনের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৯ থেকে ৬২ টাকায়। এ মানের চালের দর গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। সে হিসাবে কেজিতে কমেছে সর্বোচ্চ ৩ টাকা। এছাড়া ৩ টাকার মতো কমে মিনিকেট বা চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭২ টাকায়।
তবে বাজারে বোতলজাত ভোজ্যতেলের সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি দেখা গেছে। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বেশিরভাগ দোকানে দেখা যায়নি। পাঁচ লিটারের বোতল থাকলেও বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দরে, অর্থাৎ ৮১৮ টাকায়। সপ্তাহ দুয়েক আগে যা কেনা যেতো ৭৯০ থেকে ৮১০ টাকায়।
তবে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। যে কারণে গত সপ্তাহে বেশি থাকলেও এখন পাম অয়েলের দাম লিটারে ১০ টাকার মতো কমেছে। প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকার আশপাশের দরে। খোলা সয়াবিনের লিটার কিনতে খরচ হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৬৭ টাকা।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানির বোতলজাত সয়াবিন তেল মিলছে না। যেসব কোম্পানির তেল পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোও চাহিদার তুলনায় কম। বিশেষত এক ও দুই লিটারের বোতলের সরবরাহ খুবই কম।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ ও আলুর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো দেশি ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ১১৫ থেকে ১২০, দেশি হাইব্রিডের কেজি ১১০ থেকে ১১৫ এবং ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ৯৮ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রতি কেজি নতুন আলু মানভেদে ৯০ থেকে ১১০ এবং পুরোনো আলুর কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে বিক্রি হওয়া নতুন আলু ভারত থেকে আমদানি করা। স্থানীয় আলু ক্ষেত থেকে ওঠার আগ পর্যন্ত দাম কমার সুযোগ কম।
বাজারে বেড়েছে শীতকালীন সবজির সরবরাহ। তবে সে তুলনায় দামে প্রভাব পড়েনি। প্রতি কেজি গোল বেগুন ৭০ থেকে ১০০, লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ৭০, মানভেদে শিম ৫০ থেকে ৮০, পটোল ৫০ থেকে ৬০, ঢ্যাঁড়স ৬০ থেকে ৭০, উচ্ছে (ছোট জাত) ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস ফুলকপি আকারভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, লাউয়ের পিস ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। মানভেদে কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৪০ টাকায়।
তবে কিছুটা কমেছে ডিম-মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের ডিমের ডজন বড় বাজারে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হলেও মহল্লার দোকানিরা রাখছেন ১৫০ টাকা।
কাফি