আইন-আদালত
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চার মাসে সেনাবাহিনীর ১২৩ সদস্য হতাহত

আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গত ৪ মাসে সেনাবাহিনীর মোট ১২৩ জন সদস্য হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন অফিসার শাহাদত বরণ করেছেন এবং ৯ জন অফিসারসহ মোট ১২২ জন সেনাসদস্য বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বনানীর সেনা অফিসার্স মেসে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান।
তিনি বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব পদবির অফিসারদের সরকার কর্তৃক যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করা হয়, তা গত ১৫ নভেম্বর পুনরায় ৬০ দিনের জন্য বর্ধিত করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার সুষ্ঠু এবং নিয়মতান্ত্রিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর সব পর্যায়ের সদস্যরা সচেষ্ট রয়েছে। গত ২০ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনীর মোট ১২৩ জন সদস্য হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন অফিসার শাহাদত বরণ করেছেন এবং ৯ জন অফিসারসহ মোট ১২২ জন সেনাসদস্য বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয়েছেন।
দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সার্বিকভাবে যেসব দায়িত্ব পালন করছে সেগুলো হলো- অনাকাঙ্ক্ষিত অরাজকতা প্রতিরোধ করা; দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা; বিদেশি কূটনীতিক ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কলকারখানাগুলোকে সচল রাখা; রাষ্ট্রের কেপিআই এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাগুলোকে রক্ষা করা; মূল সড়কগুলোকে বাধামুক্ত রাখা; অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা; অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার, মাদক কারবারি ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা; বিভিন্ন চিহ্নিত অপরাধী ও নাশকতামূলক কাজের ইন্ধনদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তার করা; পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা; কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করা; এবং সার্বিকভাবে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার যাতে তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে, সেজন্য স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখা।
১৩ নভেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান তুলে ধরে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোট ২৪টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৩৬৫ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৪০টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং ১৮টি সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে এবং কারখানাগুলোকে চালু রাখার জন্য মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এছাড়াও শিল্পাঞ্চল ছাড়াও ৬৩টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, যার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ১৬টি, সরকারি সংস্থা/অফিস সংক্রান্ত ১টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৬টি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ৪০টি।
যৌথ অভিযানের কথা উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যৌথ অভিযানে ২২৮ জন মাদক কারবারি অথবা মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ১ হাজার ৩২৮ জন ব্যক্তিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান আরও বলেন, সারা দেশে সদ্যসমাপ্ত বৌদ্ধদের দেশব্যাপী কঠিন চীবরদান উৎসব যেন নিরাপদে পালিত হতে পারে, সেজন্য সেনাবাহিনী অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট বৌদ্ধ সংগঠন ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী মোট ৪৪৪টি বৌদ্ধ বিহারে কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই কঠিন চীবরদান উৎসব পালিত হয়েছে।
নভেম্বরের ১৫-১৬ এবং ২০ তারিখে সনাতন ধর্মাবলম্বী মাতুয়া গোষ্ঠীর রাসমেলা ও নবান্ন উৎসব উদযাপনের জন্য গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী জেলায় নিরাপত্তা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে, এবং উভয় অনুষ্ঠান অত্যন্ত আনন্দ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়েছে। এছাড়াও ১০-১২ নভেম্বর প্রায় ৫০ হাজার দর্শনার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বরিশালের জগদ্ধাত্রী পূজাতেও নিরাপত্তা প্রদান করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী এখন ৩ হাজার ৪৩০ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে; যার মধ্যে ৩৫ জন এখনো সিএমএইচে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সিএমএইচে এ পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৫৩টি ছিল গুরুত্বপূর্ণ মাত্রার। এছাড়া ৪ জন গুরুতর আহত রোগীকে উন্নত সুচিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সেনাবাহিনী।
কাফি

আইন-আদালত
আদালত অবমাননার মামলায় শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো. শাকিল আলমকে (৪০) দুই মাসের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার (২ জুন) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করেন।
ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গত ১৯ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হওয়া আদালত অবমাননার মামলায় পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে, তাদের বিরুদ্ধে ‘২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়েছি’ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়।
পরে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানিতে একজন অ্যামিকাস কিউরি (আদালত বন্ধু) নিয়োগ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও শেখ হাসিনা ও অপর অভিযুক্ত হাজির না হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিচারের স্বচ্ছতার স্বার্থে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানের অভিমত ট্র্যাইব্যুনাল শুনবেন বলে জানান প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় দায়ের করা মামলা নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে গত ৩০ এপ্রিল আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর। সেদিন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গ্রহণ করে ১৫ মের মধ্যে অভিযুক্তদের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওইদিন কোনো জবাব দাখিল না করায় তাদের গত ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’-এমন বক্তব্যের শেখ হাসিনা একটি অডিও ভাইরাল হয়। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই কথোপকথনের ফরেনসিক পরীক্ষা করে সত্যতা পায়। এরপরই আদালত অবমাননার আবেদন দাখিল করা হয় ট্রাইব্যুনালে।
আইন অনুযায়ী, এ ধরনের মামলায় কোনো পক্ষের জন্য সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগের বিধান না থাকলেও, ন্যায়বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনার পক্ষে একজন আইনজীবী নিয়োগ দেন আদালত।
মামলার প্রসিকিউশন জানায়, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত হননি কিংবা কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে ব্যাখ্যা দেননি। এ অবস্থায়, ট্রাইব্যুনাল এখন আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের শাস্তি দিতে পারে।
ট্রাইব্যুনালের বিধান অনুযায়ী, আদালত অবমাননার অভিযোগ প্রমাণিত হলে এক বছরের কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডই হতে পারে।
কাফি
আইন-আদালত
স্ত্রীসহ সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামানের সম্পদ জব্দ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও লালমনিরহাট-২ আসনের সাবেক এমপি নুরুজ্জামান আহমেদের নামে থাকা জমি জব্দ ও ৬ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার ৫০৪ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি ও ৩১ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগমের নামে থাকা ১১৬ শতাংশ জমি জব্দ ও ২৫ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
সোমবার (৩০ জুন) ঢাকা মহানগর স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের পক্ষে উপ-সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন জব্দ ও অবরুদ্ধের আবেদন করেন।
নুরুজ্জামানের জব্দ জমির মধ্যে পূর্বাঞ্চলের নতুন শহরে ১০ কাঠা জমির একটি প্লট ও লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ৭ শতাংশ জমি রয়েছে। এসব জমির মূল্য ধরা হয়েছে, ৩৩ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ টাকা। হোসনে আরার ২৫ ব্যাংক হিসাবে আছে ৮১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৩৭ টাকা।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ দায়িত্বে পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধমূলক অসদাচরণের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে রেখেছেন। তিনি অবৈধভাবে টাকার উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামি নুরুজ্জামান আহমেদের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধকরণের জন্য আদেশ গ্রহণ একান্ত আবশ্যক।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, তার স্ত্রী মোছা. হোসনে আরা বেগমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
আইন-আদালত
আবু সাঈদ হত্যা মামলা: ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

জুলাই অভ্যুত্থানে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাইদ হত্যা মামলার অভিযোগ আমলে নিয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ দেয়।
এর আগে, এ মামলায় ৩০ জনকে আসামি করে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনালে আবু সাঈদ হত্যার ভিডিও দেখানো হয় এবং আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। অভিযোগ আমলে নিয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
আলোচিত এ মামলায় ৪ আসামি কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন সরাসরি গুলি করা পুলিশ সদস্য আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র, বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম ও ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেই সোচ্চার হন বহু মানুষ, যাতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
কাফি
আইন-আদালত
সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল ৩ দিনের রিমান্ডে

রাষ্ট্রদ্রোহ ও প্রহসনের নির্বাচন করার ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এ রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
এদিন মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে কাজী হাবিবুল আউয়ালকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার এ আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড মঞ্জুর চেয়ে শুনানি করেন পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী। অন্যদিকে আসামির রিমান্ড বাতিল ও জামিনের আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর মগবাজার থেকে হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে উল্টো ভয়ভীতি দেখিয়ে জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিযোগে গত ২২ জুন একটি মামলা করে বিএনপি। সংগঠনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন খান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। পরে ২৫ জুন এ মামলায় নতুন করে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারা যুক্ত করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার মো. আব্দুল মোবারক, আবু হানিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, শাহ নেওয়াজ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, তৎকালীন পুলিশের আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, তৎকালীন ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার, সাবেক ডিজি র্যাব ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, সাবেক এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিজিএফআই প্রধান (নাম অজ্ঞাত), সাবেক এনএসআই প্রধান ও সাবেক ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল আলম, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব, আলমগীর হোসেন, আনিছুর রহমান ও তৎকালীন নির্বাচন সচিব (নাম অজ্ঞাত)।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ওই তিন নির্বাচনে গায়েবি মামলা, গণগ্রেফতার, অপহরণ, গুম খুন ও নির্যাতন চালিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়। সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও সংবিধান লঙ্ঘন, সরকারি কর্মচারী হয়েও অবৈধভাবে ভোটে হস্তক্ষেপ, ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটের কাজ সম্পন্ন করা ও জনগণের ভোট না পেলেও সংসদ সদস্য হিসেবে মিথ্যাভাবে বিজয়ী ঘোষণা করে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ করেন নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য আসামিরা।
এ ঘটনার সাক্ষী সকল ভোটকেন্দ্র এলাকার ভোটাররা এবং ভোটারদের মধ্যে যারা ভোট প্রদান করতে বঞ্চিত হয়েছেন তারাসহ ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য। এছাড়া ভোটকেন্দ্রে অনেক সৎ প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ কর্মকর্তাসহ স্থানীয় লোকজনসহ আরও অনেকে ঘটনার সাক্ষী হবে। এছাড়া ব্যালট পেপারে যে সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃতভাবে তারা ভোট দিয়েছে কি না, সে বিষয়ে উল্লিখিত ঘটনার সঠিক রহস্য তদন্তে সত্য উদঘাটিত হবে।
আইন-আদালত
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি ১ জুলাই

জুলাই অভ্যুত্থান দমন করতে গিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ১ জুলাই নির্ধারণ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেয়। শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন গাজী মোনাওয়ার হোসাইন তামিম।
এর আগে ১৬ জুন ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে এক সপ্তাহের মধ্যে হাজির হতে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়। ১৭ জুন দেওয়া হয় আত্মসমর্পণের নির্দেশ।
বিগত বছরের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলাটি গঠিত হয়। মামলায় অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনা ছিলেন এ সব ঘটনার ‘পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা’।
২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর এই মামলার তদন্ত শেষ করার জন্য দুই মাস সময় নির্ধারণ করে আদালত। পরে ২০২৫ সালের ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ওই প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে ‘জুলাই গণহত্যার নির্দেশদাতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
১ জুন ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ আমলে নেয়। ওইদিন নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে। আদালতে অভিযোগ পড়ে শোনান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলাম।
কাফি