অর্থনীতি
মুখ থুবড়ে পড়েছে এডিপি বাস্তবায়ন, একযুগে সর্বনিম্ন

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবরে সর্বনিম্ন অর্থছাড় হয়েছে। এতে গত এক যুগের মধ্যে আলোচ্য সময়ে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এডিপি থেকে সরকার বড় ধরনের কাটছাঁট করতে চায়। তারই প্রভাব পড়েছে এডিপি বাস্তবায়নে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও কাটছাঁটের প্রভাব পড়েনি বড় বরাদ্দ পাওয়া এলজিইডি ও সড়ক খাতে। তবে বরাবরের মতোই উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে জনগুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত।
রোববার (২৪ নভেম্বর) চার মাসের এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে আইএমইডি।
এতে দেখা যায়, চার মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। গত এক যুগে এর চেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য সংস্থাটির ওয়েবসাইটে নেই। সে আলোকে বলা যায়, গত এক যুগে এত কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি।
গত চার মাসে ২১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা অর্থছাড় হয়েছে, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পর সর্বনিম্ন। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩১ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা ছাড় হয়েছিল এই সময়ে। তার আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছাড় হয়েছিল ৩২ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। মাস হিসেবে শুধু গত অক্টোবরে অর্থছাড় হয়েছে ৮ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। যেখানে আগের অর্থবছরের অক্টোবর মাসে ছাড় হয়েছিল ১১ হাজার ৮২ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা কাটছাঁট হতে পারে। এ কারণে বেশি প্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোতে অর্থছাড় করা হচ্ছে। প্রকল্পের অগ্রাধিকার যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার ধরা হয় ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোন প্রকল্প বেশি প্রয়োজনীয়, কোনটির প্রয়োজনীয়তা কম তা যাচাই বাছাই চলছে। প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনীতি সংকটের মধ্যে আছে। রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হচ্ছে। ফলে সরকারকে ব্যয় কমাতে হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অপচয়মূলক ব্যয় কমানোর অনেক সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে খরচ কমানোর বড় জায়গা হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
এস আলম কমপক্ষে সোয়া লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে: গভর্নর

এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল ইসলাম (এস আলম) ও তার সহযোগী ব্যক্তিরা কমপক্ষে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
সোমবার (৯ ফেব্রুয়ারি) চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান গভর্নর।
এস আলম গ্রুপ কত টাকা পাচার করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর জানান, কত টাকা পাচার করেছে তার সঠিক তথ্য কেউ দিতে পারবে না। তবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার কম হবে না।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ মূল লক্ষ্য জানিয়ে গভর্নর বলেন, ২০২৪ ও ২০২৫ সাল বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির জন্য নয়। বিনিয়োগ বাড়ানোর আশা তো দূরের কথা স্বপ্নও দেখি না। এখন মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি কামানো। আশা করছি আগামী জুন মাসের মধ্যে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে নেমে আসবে এবং পরবর্তী সময় এটা ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। আর যখন মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে তখন সুদহার কমানো হবে, এর আগে কমানো হবে না বলে জানান গভর্নর।
ব্যাংক খাত সংস্কার প্রসঙ্গে গভর্নর জানান, সংস্কার কাজ চলছে এটা শেষ হতে এক দেড় বছর লেগে যাবে। এরপর এ সংস্কারের সুফল পাওয়া যাবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন ও পরিচালক নিয়োগ নীতিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে সংস্কার হচ্ছে আশা করছি ভালো কিছু হবে। আগামীতে মামাতো-চাচাতো ভাই স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবে না, এ বিষয়ে এক কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মুদ্রানীতির ওপর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, চলতি অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশ নামানোর লক্ষ্য ঠিক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি আগের মতো রাখা হয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭.২৮ শতাংশ। আগামী জুন পর্যন্ত বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ৯.৮ শতাংশ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৮.১০ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৭.৫০ শতাংশ লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। যদিও গত ছয় মাসে লক্ষ্য ছিল ১৪.২ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংক খাত থেকে সরকারকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে (রিজার্ভ মানি) মুদ্রার সরবরাহ বাড়াবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গত জুনে রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৯ শতাংশ। ডিসেম্বরে এ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ২ শতাংশ নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়। নতুন মুদ্রানীতিতে আগামী জুন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ১ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার, ড. হাবিবুর রহমান, জাকির হোসেন চৌধুরি, কবির হোসেন, বিএফআইইউয়ের প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্র প্রমুখ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৫১ শতাংশ

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার কমেছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। প্রাথমিক হিসাবে গত অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। চূড়ান্ত হিসাবে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তবে প্রবৃদ্ধি সব থেকে বেশি কমেছে শিল্পখাতে। প্রায় অর্ধেক কমে এ খাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। যা সাময়িক হিসাবে ছিল ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী শিল্প খাতের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে। রফতানি আয়ের সংশোধিত হিসাব অনুযায়ী রফতানি নির্ভর শিল্প বিশেষভাবে তৈরি পোশাক শিল্পের উৎপাদনের নিম্নগতির কারণে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।
চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। যা সাময়িক হিসাবে ছিল ৩ দশমিক ২১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধির হার শূন্য দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ কমেছে।
এছাড়া, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ হয়েছে। যা সাময়িক হিসাবে ছিল ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী সেবা খাতের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির হার শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ কমেছে।
বিবিএস বলছে, সাময়িক হিসাবের তুলনায় চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমার উল্লেখযোগ্য প্রধান কারণ হচ্ছে রফতানি আয়ের সংশোধিত হিসাবের পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প উৎপাদনের নিম্নগতি। বিবিএসের হিসাব মতে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে চলতি মূল্যে জিডিপির আকার ছিল ৫০ লাখ ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা (৪৫ হাজার কোটি ডলার)।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের কর অব্যাহতি সুবিধা বাতিল

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের আয়কর অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পাশাপাশি সূচনা ফাউন্ডেশনের অনুদানেও কর সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সূচনা ফাউন্ডেশনের কর অব্যাহতি সুবিধার দুই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আয়কর আইন ২০২৩ এর ৭৬ ধারা উপ-ধারা (৩) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সুবিধাদুটি বাতিল করা হলো। এই অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন কার্যকর হবে।
গত বছরের নভেম্বরে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। আর গত ২৯ জানুয়ারি ধানমন্ডিতে ফাউন্ডেশনের কয়েকটি ঠিকানায় অভিযান চালায় দুদক। তবে এসব ঠিকানায় সূচনা ফাউন্ডেশনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বলে জানায় দুদক।
উল্লেখ্য, স্বেচ্ছাসেবী ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১৪ সালে গড়ে ওঠা সূচনা ফাউন্ডেশন মানসিক প্রতিবন্ধিতা, স্নায়বিক প্রতিবন্ধিতা, অটিজম এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে। সায়মা ওয়াজেদ এটির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ছিলেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
খেলাপি ঋণ ৩০ শতাংশ ছাড়াতে পারে: কেন্দ্রীয় ব্যাংক

দেশে খেলাপি ঋণের মোট ঋণের ৩০ শতাংশ অতিক্রম করে যেতে পারে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাতের ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু জরুরি ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
খেলাপি ঋণের বাড়বাড়ন্ত মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে বলে মুদ্রানীতির ঘোষণায় জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মূলত নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা জোরদার, ব্যাংকিং খাতের সুশাসন নিশ্চিত ও যথাযথভাবে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার ওপর জোর দিয়েছে। তারা মনে করছে, এর মধ্য দিয়ে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যেমন এক্সপেকটেড ক্রেডিট লস মেথডলজি; ২০২৭ সালের মধ্যে এটি চালু করা হবে। আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে এই পদ্ধতি চালু করা হবে। সে জন্য কী কী করতে হবে, সে বিষয়েও বিস্তারিত বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, সে জন্য ব্যাংকের ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ঋণ ব্যবস্থাপনা রীতি–সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী—এসব অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই মডেলের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে ঋণের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো সম্ভব হবে।
সেই সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকের আইন বিভাগগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে যেসব ঋণ অর্থঋণ আদালত ও উচ্চ আদালতে ঝুলে আছে, সেগুলোর জট ছাড়াতে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা উন্নত করা ও এই খাতের সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এসব ঝুলে থাকা বিষয়ের জট ছাড়াতে আইন বিভাগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের ব্যাংকগুলোয় গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের প্রায় ১৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। তখন দেশের ব্যাংকগুলো থেকে বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ ছিল খেলাপি।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অবশ্য মনে করেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হিসাব অবলোপন করা ও আদালতের আদেশে স্থগিত থাকা ঋণ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাত সংস্কারে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩০ শতাংশে উঠে যেতে পারে বলে মুদ্রানীতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
নীতি সুদহার ১০ শতাংশ রেখেই মুদ্রানীতি ঘোষণা

নীতি সুদহার (১০ শতাংশ) অপরিবর্তিত রেখে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ২২ অক্টোবর দেশের মুদ্রানীতির অন্যতম টুল নীতি সুদহার (ব্যাংক রেট) ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ করে। গত ২৫ আগস্ট উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯ শতাংশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে এটি ৯ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। এর আগে ২০২২ সালের মে মাসে নীতি সুদহার ছিল ৫ শতাংশ। সেসময় থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১০ বার বাড়ানো হয়েছে নীতি সুদহার।
দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ভোগাচ্ছে দীর্ঘদিন। নানান পদক্ষেপের সঙ্গে সুদহার বাড়িয়েও তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এরই মধ্যে নীতি সুদহার (রেপো সুদ) আরেক দফা বাড়িয়ে চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধ (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে ঘোষণার কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে উদ্যোক্তারা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না, বরং আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাব পড়বে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানে। অর্থনীতিবিদরাও এ নিয়ে পরামর্শ দেন। নীতি সুদহার বাড়িয়ে বিনিয়োগ চাইলে ব্যবসায়ীদের ওপর এর প্রভাব কিছুটা হলেও পড়বে বলে মত দেন তারা। এ পরিস্থিতির মধ্যে গত মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসে। সার্বিক দিক বিবেচনায় এনে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হলো।
বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত
এদিকে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। যেটা চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের একই লক্ষ্যমাত্রা (৯ দশমিক ৮ শতাংশ) ছিল। আর সরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগের মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত নভেম্বরে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা ২০২১ সালের মে মাসের (৭.৫৫ শতাংশ) পর সর্বনিম্ন। এ প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক নিচে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ৯ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের প্রক্ষেপণের তুলনায় সামান্য কম।
কাফি