জাতীয়
ডেঙ্গুতে আরও ৮ জনের মৃত্যু

সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৮ জন মারা গেছে। এ সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৯৯৪ জন। শনিবার (১৬ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত একদিনে ডেঙ্গুতে মৃত আটজনের মধ্যে পাঁচজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বাসিন্দা এবং দুজন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বাসিন্দা। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে চট্টগ্রাম বিভাগে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী (২৩৮ জন) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পাশাপাশি এই সময়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২৩৬ জন ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৪৮ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে দেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী আক্রান্ত এবং ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়।
কাফি

জাতীয়
ডেঙ্গু-করোনার প্রকোপ: জ্বর হলে অবহেলা নয়

বাংলাদেশে ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে, যা জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। পাঁচ বছর আগে ভয়াবহ রূপ নেওয়া বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস ফের নতুন রূপে ফিরে আসায় দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাড়তি সতর্কতা জোরদার করা হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। একইসাথে দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
করোনা ও ডেঙ্গুর বর্তমান চিত্র
দীর্ঘদিন পর গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দেশে নতুন করে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে দেশে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট ২৯ হাজার ৫০০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনা সংক্রমণের হার এখন আবার ঊর্ধ্বমুখী। দেশে এ পর্যন্ত মোট ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৮৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
অন্যদিকে, বুধবার (১১ জুন) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরে সর্বোচ্চ ২৮৮ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের ১২ জুন পর্যন্ত মোট পাঁচ হাজার ৪১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এবং একই সময়ে মোট ২৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। গত বছরের ১২ জুন পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল তিন হাজার ১৫০ জন এবং মারা গিয়েছিল ৩৯ জন। অর্থাৎ, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
সরকারের সতর্কতা ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি বিমানবন্দরে বাড়তি সতর্কতা, মেট্রোরেল ভ্রমণে মাস্ক ব্যবহার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঁচ দফা নির্দেশনা পালনের নির্দেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক আগমনী ইমিগ্রেশনের প্রবেশ পথে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সরঞ্জাম বসানো হয়েছে এবং থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করা হচ্ছে। টার্মিনালের স্পর্শকাতর পয়েন্টগুলোতে সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে ভ্যাপসা গরম ডেঙ্গু বৃদ্ধির জন্য সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এছাড়া, ডেঙ্গু রোধে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর তৎপরতার অভাব এবং সরকারের প্রস্তুতির অভাবকেও বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন।
বর্তমানে দেশে করোনা, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ভাইরাসজনিত জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত জ্বর, টাইফয়েডের কারণে জ্বর ইত্যাদি চলমান আছে। ফলে বয়স্ক মানুষ, দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগে আক্রান্ত মানুষ, শিশু, গর্ভবতী নারী এবং যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাই এই সময়ে কারও জ্বর হলে কোনোভাবেই সেটাকে অবহেলা করা যাবে না। একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা নিতে হবে।
হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “করোনা আবার বাড়তে শুরু করেছে। ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ভাইরাসজনিত জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত জ্বর, পানিবাহিত সংক্রমণজনিত জ্বর (যেমন টাইফয়েড) ইত্যাদি চলমান রয়েছে। এগুলোর সঙ্গে করোনা যুক্ত হওয়াতে ভোগান্তি ও প্রাণহানির সম্ভবনা বেড়ে গেল।” তিনি আরও বলেন, “জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য জ্বরের ধরনটি শনাক্ত হওয়া জরুরি। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব করোনাসহ সব ধরনের জ্বরকে নিবিড় নজরদারিতে রাখা এবং জনসাধারণকে সময়ে সময়ে গাইড করা।”
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বর্তমান সময়ে জ্বর হলে করণীয় সম্পর্কে বলেন, “এই সময়ে কারও জ্বর হলে এবং জ্বর যদি সহনীয় পর্যায়ে থাকে তাহলে তিনদিন বিশ্রামে থাকতে হবে। যদি জ্বর ঠিক হয়ে যায় তাহলে ভালো, আর যদি জ্বর না কমে বাড়তেই থাকে, তখন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসক লক্ষণ বুঝে বা পরীক্ষা করে পরামর্শ দেবেন।” তিনি আরও বলেন, “ভাইরাল জ্বর তিন দিন পর কমতে থাকে। কারও যদি প্রচণ্ড জ্বর থাকে তাহলে তিন দিন অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। দ্রুত তিনি যেন কোনো চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নেন।”
এই পরিস্থিতিতে আপনার বা আপনার পরিচিত কারো জ্বর হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আপনার এলাকায় ডেঙ্গু বা করোনা প্রতিরোধের জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, সে সম্পর্কে আপনি জানতে আগ্রহী?
জাতীয়
ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক সম্পন্ন

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান-এর মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি শেষ হয়েছে। বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় শুরু হওয়া এই বৈঠক শেষ হয় ৩টা ৩৫ মিনিটে। মোট ১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটের এই বৈঠকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে তারেক রহমান ডরচেস্টার হোটেল ত্যাগ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম জানান, এটি তাদের মধ্যে একটি একান্ত বৈঠক ছিল। বৈঠক শেষে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে তিনি আগেই জানিয়েছিলেন।
জাতীয়
কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করলেন ড. ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘কিং তৃতীয় চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ গ্রহণ করেছেন। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে এক অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ইউনূসের হাতে এই মর্যাদাপূর্ণ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্বব্যাপী শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং পরিবেশ-প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আজীবন অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস প্রধান উপদেষ্টাকে এই সম্মানের জন্য মনোনীত করেন।
এই পুরস্কারের প্রবর্তন হয় ২০২৪ সালের জুন মাসে, যখন রাজা চার্লস প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপনের উদ্যাপন হিসেবে এটি চালু করেন। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন ছিলেন এই পুরস্কারের প্রথম বিজয়ী।
১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘দ্য কিং’স ফাউন্ডেশন’—যা তৎকালীন প্রিন্স অফ ওয়েলসের উদ্যোগে গঠিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি দাতব্য সংস্থা—প্রতি বছর টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক কর্মকাণ্ডে অসামান্য অবদানের জন্য এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার প্রদান করে থাকে।
জাতীয়
ব্রিটেনের রাজার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২০ মিনিটে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম জানান, এটি একটি ‘প্রাইভেট সাক্ষাৎ’ ছিল এবং সাক্ষাতের সময় শুধু রাজা তৃতীয় চার্লস ও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত ছিলেন।
শফিকুল আলম আরও জানান, সাক্ষাতে বাংলাদেশের বর্তমান ‘ট্রানজিশন’ বা অবস্থার পরিবর্তন নিয়ে কথা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা রাজা চার্লসকে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কী কী সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে অবহিত করেন।
এছাড়াও, যেহেতু রাজা চার্লস অধ্যাপক ইউনূসের দীর্ঘদিনের পরিচিত, তাই তাদের মধ্যে পুরনো দিনের নানা স্মৃতি নিয়েও কথাবার্তা হয়েছে। প্রেসসচিব জানান, রাজা চার্লসের সঙ্গে এই একান্ত সাক্ষাৎটি অধ্যাপক ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট ছিল।
জাতীয়
বিশ্বে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত

বৈশ্বিক প্রচেষ্টার ফলে শিশুশ্রম উল্লেখযোগ্যভাবে কমলেও প্রায় ১৩ কোটি ৮০ লাখ শিশু ২০২৪ সালে শিশুশ্রমে যুক্ত ছিল, যার মধ্যে ৫ কোটি ৪০ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত, যা তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস ও আন্তর্জাতিক খেলা দিবস উপলক্ষে ‘চাইল্ড লেবার: গ্লোবাল এস্টিমেটস ২০২৪, ট্রেন্ডস অ্যান্ড দ্য রোড ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। শিশুশ্রম নিরসনের ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন হলেও প্রতিবেদনে একটি কঠিন বাস্তবতা উঠে এসেছে যে এখনো লাখ লাখ শিশু শিক্ষা, খেলা এবং শুধু শিশু হিসেবে বেড়ে ওঠার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।
প্রতিবেদনে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শিশুশ্রম কমার চিত্র দেখা গেলেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সে রকম নয়। ২০১৩ সালে যেখানে দেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের হার ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ, ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৭ শতাংশে (প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু)। কিন্তু একই সময়ে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে শ্রমে যুক্ত থাকার সামগ্রিক হার ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯ শতাংশে। ক্ষতিকর কাজে যুক্ত বৃহত্তর শিশুশ্রমের হার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে—২০১৩ সালে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে সামান্য বেড়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে ২০২২ সালে। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, গত দুই দশকে বিদ্যালয়ে ভর্তির হার বাড়ায় কিছু উন্নতি হয়েছে, তবে বাংলাদেশ এখনও ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নির্মূলের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সঠিক গতিতে নেই। শ্রমে যুক্ত অধিকাংশ শিশু কাজ করছে অনানুষ্ঠানিক খাতে, যেখানে তারা দীর্ঘ সময় ধরে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এই বাস্তবতা পরিবর্তনে বাংলাদেশে জরুরি প্রয়োজন স্থায়ী, দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই প্রচেষ্টা।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘এই বৈশ্বিক প্রতিবেদনের তথ্য ও বাংলাদেশে আমাদের নিজেদের পাওয়া তথ্য একইসঙ্গে উৎসাহ যোগায় এবং এই সংকট সমাধান করতে উদ্বুদ্ধ করে। ’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম হ্রাসে অগ্রগতি আমরা স্বীকার করি, তবে সামগ্রিক শিশুশ্রমের হার একই রকম থাকায় এটি স্পষ্ট যে আমাদের আরও অনেক কিছু করার রয়েছে। একটি শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া জোরদার করতে হবে, সব শিশুর জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার সার্বজনীন সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে এবং সমাজসেবা, বিশেষ করে শিশু সুরক্ষা কার্যক্রমে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। শিশুদের স্থান স্কুল ও খেলার মাঠে, কর্মক্ষেত্রে নয়। তাদের অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি জরুরি।
শিশুশ্রম শিশুর শিক্ষা ব্যাহত করে, তাদের অধিকার খর্ব করে এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনে। এতে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। শিশুশ্রমের মূল কারণ হচ্ছে দারিদ্র্য এবং মানসম্পন্ন শিক্ষার অভাব, যার ফলে পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের কাজে পাঠাতে বাধ্য হয় এবং সেই সঙ্গে বঞ্চনার বংশপরম্পরাগত চক্র স্থায়ী হয়ে যায়।
বিশ্বব্যাপী তথ্য অনুযায়ী, কৃষিখাত এখনও শিশুশ্রমের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র— শিশুশ্রমের ৬১ শতাংশ ঘটে এই খাতে। এরপরেই রয়েছে সেবা খাত (২৭ শতাংশ), যেমন- গৃহস্থালি কাজ বা বাজারে পণ্য বিক্রি এবং শিল্প খাতে রয়েছে (১৩ শতাংশ), যার মধ্যে খনি ও উৎপাদন শিল্প অন্তর্ভুক্ত।
বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবসে আইএলও বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অফিসার-ইন-চার্জ) গুঞ্জন ডালাকোটি আইএলও কনভেনশন নম্বর ১৩৮ ও ১৮২ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন। আইএলও’র এই দুই কনভেনশন বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সমর্থন দিয়েছে। এগুলোর পাশাপাশি জাতীয় আইনগত কাঠামোর মাধ্যমে শিশুশ্রম নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শিশুশ্রম নিরসনের অগ্রগতির স্থবিরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি একটি সামগ্রিক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের মাধ্যমে পুনরায় প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, অর্থপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করতে হলে কমিউনিটি, নিয়োগকর্তা, শ্রমিক সংগঠন, সুশীল সমাজ, এনজিও ও সংবাদমাধ্যমের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আইএলও’র অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, শিশুশ্রম থাকলে সেখানে যথাযথ শ্রমের পরিবেশ থাকে না। তিনি একই সময় প্রতিটি শিশুর জন্য একটি নিরাপদ শিক্ষার সুযোগ সংবলিত শৈশব নিশ্চিত করার জন্য সামগ্রিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
কাফি