আন্তর্জাতিক
সুইজারল্যান্ড থেকে ১৭৫ কোটি টাকার গম কিনবে বাংলাদেশ

চলতি অর্থবছরের জন্য সুইজারল্যান্ড থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৫ কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-২ এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৫ কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম পড়বে ২৯২ দশমিক ১৪ মার্কিন ডলার।
সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠান হলো সুইজারল্যান্ডের এম এস অ্যাস্টন অ্যাগ্রো-ইন্ডাস্ট্রিয়াল এএস এবং স্থানীয় এজেন্ট: গ্লোবো-পিউ ইনক।
এর আগে গত ৬ নভেম্বর চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের অ্যাগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেডের কাছ থেকে প্যাকেজ-১ এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১৮০ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম পড়বে ৩০১ দশমিক ৩৮ মার্কিন ডলার।
কাফি

আন্তর্জাতিক
ভারতে রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত ৩৪

ভারতে একটি রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৩৫ জন।
দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় তেলঙ্গানা রাজ্যের সাঙ্গারেড্ডি জেলার পাসামিলারাম শিল্প এলাকায় একটি চুল্লিতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ এসব হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (১ জুলাই) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
স্থানীয় জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিগাচি কেমিক্যালস কারখানায় ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় হতাহত চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে; বাকি ২৩ জনকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিকমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, “তেলেঙ্গানার সাঙ্গারেড্ডিতে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় আমি শোকাহত। যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”
প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ রুপি এবং আহতদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, সোমবার সকালে ওই রাসায়নিক কারখানা থেকে হঠাৎই বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। স্থানীয়রা দৌড়ে গিয়ে দেখেন, কারখানার ছাদ উড়ে গিয়ে ১০০ মিটার দূরে পড়েছে। ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে কালো ধোঁয়া।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল, বিস্ফোরণের ঘটনায় ১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। কিন্তু ক্রমশ মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। দমকল বাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। তখনই উদ্ধার হতে থাকে একের পর এক মরদেহ।
তেলঙ্গানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী দামোদর রাজানরসিং জানান, বিস্ফোরণের কারণে কারখানাটির ছাদ উড়ে যায়। সেখানে সেই সময় কাজ করা অনেক শ্রমিকের মরদেহ প্রায় ১০০ মিটার দূরে গিয়ে পড়ে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিস্ফোরণের সময় কারখানাটিতে ৯০ জন কাজ করছিলেন।
প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণেই ওষুধের সামগ্রী তৈরির ওই কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষ না-হলে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে।
ইতোমধ্যেই ‘পূর্ণাঙ্গ এবং স্বচ্ছ’ তদন্ত চেয়ে তেলঙ্গানার কংগ্রেস সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়েছে বিরোধী ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস)। এই ঘটনায় তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত ছাড়াও শোকপ্রকাশ করেছেন তেলঙ্গানার রাজ্যপাল জিষ্ণু দেববর্মাও।
কাফি
আন্তর্জাতিক
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে ইউরোপ, রেড অ্যালার্ট জারি

ইউরোপজুড়ে চলছে নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ। ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, পর্তুগাল, গ্রিসসহ বহু দেশে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ মাত্রার তাপ সতর্কতা। ফ্রান্সসহ ইউরোপের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ফ্রান্সজুড়ে বড় আকারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার প্যারিসসহ ফ্রান্সের ১৬টি অঞ্চলে সর্বোচ্চ ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে।
এছাড়া আরো ৬৮টি অঞ্চলে রয়েছে কম ঝুঁকির ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’।
সোমবার ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডের ৯৬টির মধ্যে ৮৪টি অঞ্চলে ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি ছিল। দেশটির জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী এটিকে ‘নজিরবিহীন পরিস্থিতি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি, জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং ক্রোয়েশিয়াসহ বলকান অঞ্চলের দেশগুলোর কিছু অংশেও তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
এর বাইরে তুরস্কে দাবানল দেখা দিয়েছে।
স্পেন এবং পর্তুগাল দুই দেশেই সপ্তাহান্তে জুন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ উষ্ণতম দিন হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। অনেক দেশেই জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং জনসাধারণকে যতটা সম্ভব ঘরের ভেতরে থাকার থাকতে বলা হয়েছে।
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ইউরোপের বিভিন্ন অংশে তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়ায় ফ্রান্স জুড়ে প্রায় ২০০টি স্কুলের কোনোটি বন্ধ কোনোটি আংশিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তবে সপ্তাহের মাঝামাঝি তাপদাহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার প্যারিসের স্থানীয় সময় দুপুর ১২ টা থেকে ফ্রান্সের রেড অ্যালার্ট কার্যকর হবে। তীব্র তাপপ্রবাহে রোববার দক্ষিণ কর্বিয়েরেস পর্বতমালায় বেশ কয়েকটি বনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটনাও ঘটেছে। ওইসব এলাকার লোকজনকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে একটি মোটরওয়ে।
সেখানকার কর্মকর্তারা ফরাসি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এরই মধ্যে ইতালির ২১টি শহরেও সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে রোম, মিলান, ভেনিস ও সার্ডিনিয়া দ্বীপ।
ইতালির জরুরি চিকিৎসা সেবা বিভাগের সহ-সভাপতি মারিও গুয়ারিনো সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, তাপপ্রবাহজনিত অসুস্থতা ও হিটস্ট্রোকের ঘটনা ১০ শতাংশ বেড়েছে। সোমবার যুক্তরাজ্যের কিছু অংশে জুন মাসের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতমের কাছাকাছি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ওইদিন যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে, ৩৩ দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে উইম্বলডনে তাপমাত্রা ছিল ৩২.৯ ডিগ্রি, যা টেনিস টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম দিন।
তাপ সতর্কতা রয়েছে স্পেনেও। যেখানে এবারের জুন হতে পারে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম মাস। একই রকম পরিস্থিতি পর্তুগালেও। রাজধানী লিসবনসহ সাতটি জেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে।
জার্মানির আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার ও বুধবার তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। এটি আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে জার্মানির রাইন নদীর পানি কমে গেছে। নদীর পানি কমে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এই নৌরুটে পণ্যবাহী জাহাজে মালামাল পরিবহন কঠিন হয়ে পড়েছে। জাহাজগুলোকে কম পণ্য নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। যে কারণে পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে।
বলকান অঞ্চলের দেশগুলোও তীব্র গরমে ভুগছে। যদিও কিছু কিছু এলাকার তাপমাত্রা একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে। ইউরোপের পাশেই তুরস্কে উদ্ধারকারীরা ৫০ হাজারেরও বেশি লোককে সরিয়ে নিয়েছে। বেশিরভাগই দেশটির পশ্চিমে অবস্থিত ইজমির থেকে লোকদের সরানো হয়েছে। দমকল কর্মীরা এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
ঘন্টায় ১২০ কিমি বা ৭৫ মাইল বেগে বাতাসে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার অন্তত ২০টি ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। ক্রোয়েশিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে দাবানল। সেখানকার উপকূলীয় এলাকায় রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। পাশের দেশ মন্টিনেগ্রোতেও তীব্র তাপমাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
গ্রিসে কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছেছে। রাজধানী এথেন্সের আশেপাশের উপকূলীয় এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে হয়েছে, অনেকে নিরাপদ স্থানে যেতে বাধ্য হয়েছে।
বুধবার ছিল সার্বিয়ায় ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণতম দিন। দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, দেশের অনেক অংশে চরম খরা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার রাজধানী সারায়েভোতে রেকর্ড ৩৮দশমিক ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। শনিবার স্লোভেনিয়ায় জুন মাসের ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
শুক্রবার উত্তর ম্যাসেডোনিয়ার রাজধানী স্কোপজেতে তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া দপ্তর। এই তাপপ্রবাহ শুধু স্বাস্থ্য নয়, পরিবেশেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এড্রিয়াটিক সাগরের উষ্ণ পানিতে বিষাক্ত ‘লায়নফিশ’ প্রজাতির মতো বিষাক্ত মাছের দেখা মিলছে। এর পাশাপাশি পাহাড়ি হিমবাহগুলো আরও দ্রুত গলতে শুরু করেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, এই তাপপ্রবাহ দেখিয়ে দিচ্ছে যে আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রস্তুত হতে হবে। এবং জীবাশ্ম জ্বালানির মতো দূষণকারী শক্তির ব্যবহার কমাতে হবে।
তিনি বলেন, ‘তাপমাত্রা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, বন্যা, খরা ও দাবানল, এসব আমাদের জীবনের অধিকার, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত অধিকার হুমকির মুখে ফেলছে।’
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যানেলের মতে, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে তাপপ্রবাহ ক্রমশ বাড়ছেই।
এতে বলা হয়েছে, পৃথিবী উষ্ণ হতে থাকলে তীব্র গরম আবহাওয়া আরও ঘন ঘন ঘটবে। ধীরে ধীরে এটি আরো তীব্র হবে। যত উষ্ণ হচ্ছে, তত বেশি এবং তীব্র গরম দেখা দেবে বলে সতর্ক করেছে তারা।
যুক্তরাজ্যের রিডিং ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া বিজ্ঞানী রিচার্ড অ্যালান বলছেন, গ্রিনহাউজ গ্যাস বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর পক্ষে অতিরিক্ত তাপ বের করে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাতাস আরও বেশি শুকনো হয়ে গেছে। ফলে মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে মাঝারি মাত্রার গরমও এখন ভয়াবহ তাপপ্রবাহে পরিণত হচ্ছে।’
আন্তর্জাতিক
২০৩০ সালের মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যুঝুঁকি

যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা কার্যক্রম ইউএসএআইডি বাতিল করার কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ, যার এক-তৃতীয়াংশ শিশু, মারা যেতে পারে বলে নতুন এক গবেষণায় সতর্ক করা হয়েছে। মঙ্গলবার ‘দ্য ল্যানসেট’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাটি এমন এক সময়ে এলো, যখন বিশ্ব ও ব্যবসায়িক নেতারা স্পেনের সেভিয়ায় এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ত্রাণ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।
জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার আগে ইউএসএআইডি বিশ্ব মানবিক সহায়তার ৪০ শতাংশের বেশি দিত। ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে তার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক ইউএসএআইডিকে ‘উডচিপারে’ ফেলার দম্ভোক্তি করেছিলেন।
গবেষণার সহলেখক এবং বার্সেলোনার গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউটের (আইএসগ্লোবাল) গবেষক দাভিদে রাসেলা বলেন, “এই তহবিল কর্তন ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুই দশকের অগ্রগতি হঠাৎ থামিয়ে দিতে বা উল্টো পথে নিয়ে যেতে পারে। অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য এটি বৈশ্বিক মহামারি বা বড় ধরনের সশস্ত্র সংঘর্ষের সমান ধাক্কা হতে পারে।”
১৩৩টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ইউএসএআইডি তহবিল উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ৯ কোটি ১০ লাখ মৃত্যুরোধ করেছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইউএসএআইডি তহবিলে ৮৩ শতাংশ কর্তনের ঘোষণা দেওয়ার পর গবেষকরা মডেল ব্যবহার করে মৃত্যুহারের সম্ভাব্য প্রভাব অনুমান করেন।
প্রকল্প অনুযায়ী, তহবিল কর্তনের ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হবে না, যার মধ্যে ৪৫ লাখের বেশি শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকবে, অর্থাৎ বছরে প্রায় ৭ লাখ শিশু মারা যেতে পারে। তুলনামূলকভাবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ১ কোটি সেনা নিহত হয়েছিল।
গবেষণায় দেখা গেছে, ইউএসএআইডি সহায়তাপ্রাপ্ত দেশগুলোতে মৃত্যুহার ১৫ শতাংশ কমেছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই হ্রাসের হার দ্বিগুণ, ৩২ শতাংশ। বিশেষ করে এই সহায়তা এইডস, ম্যালেরিয়া এবং উপেক্ষিত ট্রপিক্যাল রোগজনিত মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছে।
তবে ইউএসএআইডি তহবিল কমানোর পর জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দাতা দেশও তাদের বৈদেশিক সহায়তা বাজেট কাটার ঘোষণা দিয়েছে। আইএসগ্লোবালের ক্যাটেরিনা মন্টি বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর এই তহবিল কর্তনের ফলে আগামী বছরগুলোতে আরও বেশি মৃত্যু হতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, যদি বৈশ্বিক সহায়তার প্রতিশ্রুত পরিমাণ বাড়ানো যায়, তাহলে এই মৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব। ইউএসএআইডির তহবিল কর্তনের আগে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যয়ের মাত্র ০.৩ শতাংশ ছিল। একজন সহলেখক বলেছেন, “মার্কিন নাগরিকরা প্রতিদিন প্রায় ১৭ সেন্ট ইউএসএআইডিতে অবদান রাখেন, যা বছরে প্রায় ৬৪ ডলার। এই সামান্য অবদানের মাধ্যমে কোটি কোটি প্রাণ বাঁচানো সম্ভব, যা জানলে বেশিরভাগ মানুষ এই তহবিল চালু রাখার পক্ষে মত দিতেন।”
গবেষক রাসেলা বলেন, “এখনই তহবিল কমানোর নয়, বরং বাড়ানোর সময়।”
আন্তর্জাতিক
ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করলেন ইলন মাস্ক

আলোচিত সেই বিল নিয়ে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেছেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্ক।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
ইলন মাস্ক বলেন, ট্রাম্পের কর এবং ব্যয়ের কাটছাঁট সংক্রান্ত বিল দেশকে অনিয়ন্ত্রিত ঋণের পথে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা একদলীয় দেশের বাসিন্দা এবং এখন সময় নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের।
যে বিলটির কথা মাস্ক বলছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ঋণসীমা ৫ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। মাস্ক এই পরিকল্পনাকে ‘পাগলামী পর্যায়ের খরচ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, যদি এই পাগলামিপূর্ণ ব্যয় বিল পাস হয়, তাহলে পরদিনই ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠিত হবে।
তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এখন ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান ইউনিপার্টির বাইরে একটি বিকল্প দল দরকার, যাতে জনগণের আসল কণ্ঠস্বর উঠে আসতে পারে।
এর আগেও এই বিল নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্যে বাকযুদ্ধে জড়িয়েছিলেন মাস্ক।
এদিকে মাস্কের মন্তব্যের পরে টেসলার শেয়ারমূল্য বড় ধরনের পতনের মুখে পড়ে। যদিও পরে শেয়ার দর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। এই ঘটনা বাজারে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতাদের প্রকাশ্য দ্বন্দ্বের প্রভাব কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক
আবারও পরমাণু কেন্দ্রে ব্যাপক নির্মাণকাজ চালাচ্ছে ইরান

ইরানে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর পরমাণু কর্মসূচিতে তেহরানের জোরদার পদক্ষেপের আশঙ্কা করেছিলেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি ম্যাক্সার টেকনোলজিসের প্রকাশিত নতুন স্যাটেলাইট চিত্রে এর প্রমাণ মিলেছে। রোববার বিবিসি ভ্যারিফাই ওই চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখেছে, মার্কিন বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইরানের ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে ব্যাপক নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। সেখানে ভারী নির্মাণ সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির-সাঈদ ইরাভানি জাতিসংঘকে বলেছেন যে তেহরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি কখনোই বন্ধ হবে না।
স্যাটেলাইট চিত্র অনুযায়ী, রোববার নতুন করে নির্মাণ করা একটি প্রবেশপথের কাছে একটি খননযন্ত্র (এক্সক্যাভেটর) ও ক্রেন দেখা গেছে। মার্কিন বাঙ্কার-বাস্টার বোমা যেখানে আঘাত করেছিল, এটি তার খুব কাছাকাছি। পাহাড়ের নিচে একটি বুলডোজার ও লরিও স্যাটেলাইট ছবিতে দৃশ্যমান। এ ছাড়া ফোরদো কেন্দ্রের প্রবেশপথে ও কমপ্লেক্সের পূর্ব দিকে অবস্থিত একটি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনেও নির্মাণকাজ চলছে। এই দুটি স্থান ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মার্কিন বাঙ্কার-বাস্টার বোমা হামলার পর দিন ইসরায়েল এই দুই স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছিল।
পারমাণবিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ডেভিড অলব্রাইট স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, সম্ভবত বোমা হামলায় সৃষ্ট গর্ত ভরাট, প্রকৌশলগত ক্ষতির মূল্যায়ন ও তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপের কাজ চলছে।
মার্কিন হামলার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি গত শুক্রবার বলেছেন, ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আবার শুরু করতে পারে। গ্রোসির এ মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের বিপরীত। ট্রাম্প বলেছিলেন, ওই হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ‘দশকের পর দশক পিছিয়ে গেছে।’
দেখা যাচ্ছে, গ্রোসির এ মূল্যায়ন মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) প্রাথমিক বিশ্লেষণকে সমর্থন করে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত সপ্তাহে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে হামলা চালায়, তাতে কেন্দ্রীয় অবকাঠামোগুলো ধ্বংস হয়নি। এতে ইরানের কর্মসূচি সাময়িকভাবে (সম্ভবত কয়েক মাসের জন্য) বাধাগ্রস্ত হয়েছে মাত্র।
চূড়ান্ত সামরিক ও গোয়েন্দা মূল্যায়ন প্রকাশ না পেলেও ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলায় তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন’ করা হয়েছে। রোববার সিবিএসে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির-সাঈদ ইরাভানি বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম কখনোই বন্ধ হবে না। কারণ, ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি’ ইরানের ‘অপরিহার্য অধিকার’।
১৩ জুন ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলার পর ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাত শুরু হয়। তেল আবিবের ভাষ্য, এ হামলার লক্ষ্য ছিল তেহরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরি থেকে বিরত রাখা। তবে ইরান শুরু থেকেই জোর দিয়ে বলছে, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই তাদের পরমাণু কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। হামলায় তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে এখনো জোর বিতর্ক চলছে।
এর মধ্যে রোববার ফক্স নিউজে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প শর্ত সাপেক্ষে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইরান যদি শান্তিপূর্ণ আচরণ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করে, তাহলেই তাদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হতে পারে।’
এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে বেসামরিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পারমাণবিক কর্মসূচি গড়ে তুলতে ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এ প্রসঙ্গে গতকাল ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সোশ্যাল ট্রুথে বলেন, তিনি ইরানের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলছেন না এবং দেশটিকে তিনি কোনো প্রস্তাবও দিচ্ছেন না।
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ভুয়া ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস কুনসকে বলো, আমি ইরানকে কিছুই দিচ্ছি না। ওবামার মতো না, যে পারমাণবিক অস্ত্রের পথ খুলে দেওয়া জেসিপিওএর আওতায় ইরানকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়েছিল (যেটার মেয়াদ এখন শেষ হয়ে যেত)। আমি ইরানের সঙ্গে কোনো আলাপ করছি না, কারণ, আমরা তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছি।’
এদিকে, তেহরানের সঙ্গে তাদের পরমাণু কর্মসূচি যখন বিভিন্ন পক্ষের আলোচনা-সমাঝোতার প্রচেষ্টা চলছে, তখন ইরান-ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। গতকাল ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা জানায়, ওই যুদ্ধে ইরানে কমপক্ষে ৯৩৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৩২ জন নারী ও ৩৮টি শিশু রয়েছে।
আর রুশ বার্তা সংস্থা তাসকে উদ্ধৃত করে ইরানের সংবাদমাধ্যম দেফা প্রেস বলছে, ওই যুদ্ধে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইসরায়েলে কমপক্ষে ৩১ হাজার ও ৪ হাজার সম্পূর্ণ ধ্বংস বা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ক্ষয়ক্ষতি প্রমাণ করে, চলমান সংঘাতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরায়েলে ‘অভাবনীয় ও অপূরণীয় ধ্বংস’ এনেছে।