অর্থনীতি
বাজারে বিশৃঙ্খলার কারণে দাম কমছে না: অর্থ উপদেষ্টা

আমদানি পর্যায়ে নিত্যপণ্যের শুল্ক কমানো হলেও ‘বাজারে বিশৃঙ্খলার কারণে’ দাম কমছে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বাজারে এতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে, মানুষ বলছে দাম কমছে না, অথচ এনবিআর অনেক সুবিধা দিয়েছে।
বুধবার পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত ‘পিকেএসএফ দিবসের’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
দুই অংকে পৌঁছে যাওয়া মূল্যস্ফীতিতে লাগাম দিতে সরকার আমদানি পর্যায়ে চালের পাশাপাশি পেঁয়াজ, আলু আর ভোজ্যতেলের শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু তার কোনো প্রভাব খুচরা বাজারে নেই। বরং গত এক মাসে আলুর দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা, চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ থেকে ১২ টাকা, পেঁয়াজের দাম ২৫ থেকে ৩৫ টাকা, রসুনের দাম ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে।
এসব পণ্যের দর বৃদ্ধি স্বল্প আয়ের মানুষদের জীবন আরও কঠিন করে তুলেছে, কারণ স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের খাদ্যের পেছনে ব্যয়ের বেশিরভাগ করেন এসব পণ্য কিনতেই।
পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত অগাস্টে খাদ্য খাতে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল, সেপ্টেম্বরে তা ছিল ১০ দশমিক ৪০; আর অক্টোবরে হয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি।
কয়েক দিন আগেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলানো সালেহ উদ্দিন আহমেদ পিকেএসএফের অনুষ্ঠানে বলেন, “ট্যাক্স কমিয়ে দিলাম, তারপরও নিত্যপণ্যের দাম কমে না। মানুষ অধৈর্য্য হয়ে গেছে, এটাই স্বাভাবিক। প্রধান উপদেষ্টাকে বললাম বাজারে দাম কমানো শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ না।”
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দাম না কমার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “এখানে অনেকগুলো ফ্যাক্ট আছে। মানুষের বাজারে কষ্ট হচ্ছে ৫০০ টাকা নিয়ে গেল দুমুঠো শাক, অন্যান্য… কিন্তু টাকা শেষ হল। আমি চেষ্টা করছি বাজারে দাম কমানোর জন্য।”
ভারতে ইলিশ রপ্তানিকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হলেও বিষয়টি ইতিবাচক হিসেই দেখতে চান সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন।
তিনি বলেন, আমার ছোট ভাই ফোন দিয়ে বলে ভাই, ইলিশ মাছ দিয়ে দিলেন, ফেইসবুকে আপনাকে গালি দিয়ে ভরে দিচ্ছে। আমার কিন্তু ফেইসবুক নাই। একটা সিজনে ৫ লাখ ৩০ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হয়, ভারতে দিলাম মাত্র ৩ হাজার টন। অনেকে বলছে ভারতে ইলিশ দেওয়া ভালো সিদ্ধান্ত।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা চলে গেলেও মানুষ মনে টনে রাখবে। কারণ আমরা ভালো কাজ করেছি। মানুষ বলবে, ‘স্যার আপনি ওখানে ছিলেন, আপনি অমুক কাজ করছেন’।
“অনেকে আমাদের ধন্যবাদ দেয় যে– ‘স্যার আপনি ট্যাক্সের অমুক কাজটি ভালো করেছেন।’ বন্ডের ট্যাক্স তুলে দেওয়াতে মানুষ আমাদের অনেক ভালো বলে। সঞ্চয়পত্রেও আমরা ভালো করেছি। এখন সঞ্চয়পত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিনিউ হচ্ছে। ভালো জিনিস যত তাড়াতাড়ি করা যায় ততই মঙ্গল।”
সেই সঙ্গে আক্ষেপও করেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু আবার প্রতিষ্ঠান নেই– এমন অবস্থা। ভালো প্রতিষ্ঠানের বড্ড অভাব। বিল্ডিং আছে, কিন্তু মানুষ নেই, সেখানে স্বচ্ছতার অভাব, জবাবদিহিতার অভাব। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে প্রতিদিন কথা বলি, যে তুমি এটা দেখ।”
সারা বিশ্বে এ সরকারের বিষয়ে সবাই ‘ইতিবাচক মন্তব্য করে’ দাবি করে সালেহ উদ্দিন বলেন, আমাদের দিকে কেউ মুখ বাঁকা করছে না। বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ সভায় গেলাম, ৭ থেকে ৮ দিন ছিলাম, এতগুলো সভা করতে গিয়ে আমরা ক্লান্ত। সবাই আমাদের বিষয়ে ইতিবাচক। সভা করতে করতে আমরা হয়রান হয়ে গেছি। সবাই আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়। তবে সব থেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিছু শর্ত থাকে, তবে শর্ত কঠিন নয়। প্রত্যেকে হাত বাড়িয়েছে।
দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের সম্ভাবনা আছে। দেশের কৃষক মজুর ও পোশাক শ্রমিকের অবদানের কারণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা মানুষের সঙ্গে মিলে মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাব। আমরা দায়িত্ব পালন করছি। আমরা শর্ট টার্ম সংস্কার করব, লং টার্ম সংস্কার করবে না। লং টার্ম সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার। আমরা চাইলেই সব কিছু পারি না, আমাদেরও কিছু বাঁধা আছে।
পিকেএসএফ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থায়ন’। পিকেএসএফ চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিকেএসএফের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদিউর রহমান; স্বাগত বক্তব্য দেন পিকেএসএপের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের।
এমআই

অর্থনীতি
আর ৭-৮ মাস আমরা সরকারে থাকছি: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে দীর্ঘদিন থাকছি না, খুব বেশি হলে হয়তো ৭-৮ মাস। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা এবং আমি কিছু মৌলিক সংস্কার করতে খুবই সিরিয়াস। আমরা কোনো দীর্ঘমেয়াদি বা মধ্যমেয়াদি সংস্কার করব না।
বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড অডিটিং সামিট’–এ ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শাসনে এফআরসির ভূমিকা ও প্রভাব’ শীর্ষক বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, যতটুকু সংস্কার শুরু হয়েছে, আমরা তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। আমরা অনেক প্রতিবন্ধকতা ও বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। বহু জটিল বিষয় আছে যেগুলো বাইরে থেকে বুঝতে পারবেন না।
এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ব্যবসায়ী ও ঋণদানকারী সংস্থাগুলোর সমর্থনের প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, তারা খুব ভালো সমর্থন দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মানসুর, ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সোলেয়মান কুলিবালি প্রমুখ।
উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার। এ সময় স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের লিড গভর্ন্যান্স স্পেশালিস্ট সুরাইয়া জান্নাত।
বাংলাদেশ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইনস্টিটিউটের (আইসিএবি) সভাপতি এন কে এ মবিন এবং কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইনস্টিটিউটের (আইসিএমএবি) সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অর্থনীতি
শুধু আইএমএফ-বিশ্ব ব্যাংক নয়, সরকারের উদ্যোগেও সংস্কার হচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা

দেশের আর্থিক খাতের সংস্কার শুধু বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রস্তাবেই নয়, বরং সরকারের নিজস্ব উদ্যোগেও হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বুধবার (৯ জুলাই) হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সামিটে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, অনেকেই মনে করছেন আর্থিক খাতের সংস্কার বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রস্তাবেই হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এমনটা না। সরকারের নিজস্ব উদ্যোগেও সংস্কার হচ্ছে। তবে তারা ভালো পদক্ষেপ নিলে আমরা কেনো তা নেব না?
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে অডিটিং-অ্যাকাউন্টিং বড় বিষয়। তবে যারা এসব কাজে জড়িত তাদের স্বচ্ছতা ও সততা সবার আগে বড় বিষয়। অনেক প্রতিষ্ঠান পেপার সাবমিট করেন, যার বেশিরভাগই মানসম্পন্ন না।
এনবিআরের ক্ষেত্রে অডিট করা খুবই জরুরি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এনবিআরের মতে প্রতি ১০০ জনে ৭০ জনই শূন্য ট্যাক্স দেয়, এটা অবিশ্বাসযোগ্য। যারা ৭০ ভাগ তথ্য দিচ্ছে, তাদের হিসাব খতিয়ে দেখা উচিত। আবার ১৮ লাখ রিটার্ন জমা পড়ছে সে তথ্যেও গড়মিল থাকতে পারে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যারা অডিট করেন, তাদের অন্তর দৃষ্টি দিয়ে অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো বিষয়ে তিনি বলেন, যদি আমরা বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে চাই তাহলে অডিটিং এবং অ্যাকাউন্টিংকে গুরুত্ব দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে এফআরসির চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, দুদক চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কাফি
অর্থনীতি
রপ্তানির আড়ালে পাচার বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়া নির্দেশ

রপ্তানির নামে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার রোধে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রতি কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া এ ধরনের অনিয়ম যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের মধ্যে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এটিই ছিল প্রথম উচ্চপর্যায়ের এ ধরনের বৈঠক। এতে গভর্নরের পাশাপাশি ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক এবং সব ব্যাংকের এমডিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, আমদানি দায় পরিশোধের পরও যারা গ্রাহকের নামে ফোর্স লোন সৃষ্টি করছে না-সেসব ব্যাংককে সতর্ক করা হয়েছে। এখন থেকে এলসি দায় পরিশোধের পরই অবিলম্বে ফোর্স লোন তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে অর্থপাচার রোধে কঠোর নজরদারির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
অর্থনীতিতে দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র কমিটির তথ্যে উঠে এসেছে- গত ১৫ বছরে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার করে অর্থপাচার হয়েছে। সবমিলিয়ে যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৮ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে অর্থনীতিতে এ অপচয়ের চিত্রই উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে।
সভায় ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা ফেরাতে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, জুলাইয়ের রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ও আহতদের পরিবারের সহায়তায় একটি ‘ব্যাংকার্স ফান্ড’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সব বাণিজ্যিক ব্যাংক অংশ নেবে। প্রাথমিকভাবে ফান্ডের পরিমাণ হতে পারে ২৫ কোটি টাকা।
অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার অংশ হিসেবে সঞ্চয়পত্রের বিকল্প হিসেবে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সাধারণ জনগণের বিনিয়োগ উৎসাহিত করার উদ্যোগ নেওয়ার কথাও সভায় জানানো হয়। কারণ বর্তমানে এসব ঋণপত্রে সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতের চেয়ে বেশি সুদ পাওয়া যাচ্ছে। এক বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলে বর্তমানে সুদের হার ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং দীর্ঘমেয়াদি বন্ডে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ। এগুলো করমুক্ত, বিক্রয়যোগ্য এবং বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতাও নেই।
ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, গ্রাহকদের অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে উৎসাহিত করতে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি অবকাঠামো গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকে না গিয়েই ঘরে বসে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করা যাবে, সময় ও খরচ দুটোই কমবে।
তিনি আরও বলেন, এলসি দায় পরিশোধের পরই গ্রাহকের নামে ফোর্স লোন চালু করার বিষয়টি এখন থেকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নন-ব্যাংকিং কার্যক্রম কিংবা অনিয়মের কোনো সুযোগ আর রাখা হবে না।
এদিকে, ১ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় জারি করা পরিপত্রে চার ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হয়েছে। নতুন নিয়মে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে সুদহার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, আগে যা ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে এখন সুদহার ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ (পূর্বে ১২.৩০), পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ (পূর্বে ১২.৫০) এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ (পূর্বে ১২.৫৫) নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থনীতি
সিঙ্গাপুর থেকে ৫৩১ কোটি টাকায় এলএনজি কিনবে সরকার

দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সিঙ্গাপুর থেকে এই এক কার্গো এলএনজি আনতে ব্যয় হবে ৫৩১ কোটি ৫৫ লাখ ৮০ হাজার ৩৪৫ টাকা।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুসরণে আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে ১ কার্গো (২৮-২৯ জুলাই ২০২৫ সময়ে ৩২তম) এলএনজি আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
পেট্রোবাংলা থেকে এই ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী চুক্তিবদ্ধ ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৫টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দাখিল করা ৫টি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি’র (পিইসি) সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরের ভাইটল এশিয়া প্রাইভেট লিমেটেড থেকে এই এক কার্গো এলএনজি আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতি এমএমবিটিইউ’র দাম ধরা হয়েছে ১২.৬২ মার্কিন ডলার। এতে এক কার্গো বা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৫৩১ কোটি ৫৫ লাখ ৮০ হাজার ৩৪৫ টাকা।
কাফি
অর্থনীতি
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক চূড়ান্ত না: অর্থ উপদেষ্টা

বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক চূড়ান্ত না। ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এটা ঠিক হবে। এ লক্ষ্যে আগামীকাল ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ওখানে আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টা আছেন। উনি ৩ দিন আগে গেছেন। আজকেই কমার্স টিম যাচ্ছে। ৮ তারিখে মিটিং। ওদের ৮ তারিখ মানে কালকে খুব ভোরবেলা। মিটিংয়ের পর আমরা বুঝতে পারবো। কারণ, যেটা দিয়েছে, সেটা ঠিক অফিসিয়াল…। ইউএসটিআর’র সঙ্গে যখন আলাপ করবেন উনি (বাণিজ্য উপদেষ্টা) ম্যান্ডেটরি। এর আগের দিন কথা বলেছেন। কালকের পর আপনারা বুঝতে পারবেন।
মিটিংয়ে কি কোনো উন্নতি হওয়ার আশা করা যায়? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন বলেন, আমরা আশা করি। যাই হোক, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য পদক্ষেপগুলো নেবো। এখন বৈঠকটা মোটামুটি পজিটিভ। ৬ তারিখ বোধহয় একটা মিটিং হয়েছে, মোটামুটি পজিটিভ।
চিঠি তো ইতোমধ্যে ইস্যু হয়ে গেছে, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্রেসিডেন্ট দিয়েছে। এটা ওয়ান টু ওয়ান যখন নেগোসিয়েশনে ঠিক হবে। চিঠি তো বহু আগে দিয়ে দিতো, ৩৫ শতাংশ। এইটা আবার ১৪টা দেশের জন্য বলছে একই। কিন্তু ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশন হবে, সেজন্যই তো ইউএসটিআর’র সঙ্গে কথা বলা। এটা ফাইনাল না।
ভিয়েতনাম চেষ্টা করে ২৬ শতাংশ কমিয়েছে, বাংলাদেশের কেন মাত্র ২ শতাংশ কমানো হলো। তার মানে কি নেগোসিয়েশন ভালো হয়নি? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, না, না নেগোসিয়েশন….। এটা ঠিক যে আমাদের ডেফিসিট মাত্র পাঁচ বিলিয়ন ডলার। ভিয়েতনামের ১২৫ বিলিয়ন ডলার। ওখানে কিন্তু ওরা কনসেশন দিতে পারে, মানে রাজি হয়েছে। কিন্তু আমাদের এত কম ডেফিসিট। আমরা চেষ্টা করছি যে, আমাদের এত কম ডেফিসিট, এতো শুল্ক দেওয়ার তো জাস্টিফিকেশন থাকে না।
তিনি বলেন, ওরা যেটা করছে ব্ল্যাঙ্কেট কতগুলো করেছে। চায়নার জন্য আলাদা। একেবারে চায়নার একটা সিঙ্গেল হ্যান্ডেলে ডিল করে ওরা। আর বাকিরা… এটা যেটা করেছে ১৪টা দেশের একই বলেছে। এখন আমরা নেগোশিয়েট করবো।
চিঠিতে যে সমস্ত কন্ডিশন দেওয়া হয়েছে এগুলো কি ফুলফিল করা সম্ভব? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এখন তো আমি কিছু বলতে পারবো না।
রাজস্ব আয় নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এইবার কালেকশন যা হয়েছে মোটামুটি, একেবারে বিরাট গ্যাপ না। আর আগামী বছর চেষ্টা করছি শুধু ট্যাক্স, ভ্যাট না দিয়ে সিস্টেমটা চেঞ্জ করলে দেখবেন কালেকশনটা অনেক বেশি হবে। লিকেজ হবে না, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আতাঁত করে কিছু করতে পারবে না। আমাদের ট্যাক্স ক্যাপাসিটি ভালো, কিন্তু আমরা সেটা ইউটিলাইজ করতে পারিনি। সে কারণে রেভিনিউ কিছুটা শর্ট।