অর্থনীতি
৫ আগস্টেও মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

গত ৫ আগস্টেও দেশের অনেক ব্যাংক থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। ২ হাজার প্রাণের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, সেটিকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সোমবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে বণিক বার্তা আয়োজিত ‘তৃতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন-২০২৪’ অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সেখ বশির উদ্দিন।
তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ের রাজনীতিকরণ যেভাবে করেছি, তাতে মাঝে মাঝে ব্যবসায়ী পরিচয় দিতে লজ্জা হয়। আমি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনার খরচ কমানোর জন্য সামর্থ্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৩ মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক টাকাও ছাপায়নি। এছাড়া এই ৩ মাসে রিজার্ভ থেকেও কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি। বাজারে এখন ডলারের অভাব নাই। কেউ টাকা নিয়ে আসলে ডলার পাবে। তবে পিডিবি টাকা না থাকায়, তাদের ওভারডিউ পেমেন্ট করতে সমস্যায় পড়ছে। এটা সমাধান আমার কাজ না।
মূল্যস্ফীতি কমার জন্য কমপক্ষে ১২ মাস প্রয়োজন মন্তব্য করে গভর্নর বলেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশের তথ্য আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি। তাদের পলিসি রেট বাড়ানোর পর ১২ মাস সময় লেগেছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসতে। আমাদের রেট বাড়ানো হয়েছে ৪ মাস হয়েছে। সে হিসেবে, আমাদের আরও ৮ মাস অপেক্ষা করতে হবে মূল্যস্ফীতি কমার জন্য।
এছাড়া বন্যার কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে বলে জানিয়েছে ড. আহসান এইচ মনসুর।
সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসলে বিনিয়োগ হবে না উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, আমি কেন, অন্য যে কেউ দায়িত্ব নিলেও এখনই বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই আমরা প্রথমে ম্যাক্রো ইকোনমিক স্ট্যাবিলিটি (সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা) নিয়ে আসার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা এখন রিসিশনে [সংস্কার] যাবো না। সে জায়গা থেকে বের হয়ে এসেছি। তবে, গ্রোথ [প্রবৃদ্ধি] হয়ত কিছুটা কমতে পারে। আমাদের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারতো, হয়নি।
বিএনপি সরকারের দায়িত্ব নিলে জিডিপির ১০ শতাংশ স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সম্মেলনে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমরা দুটি বিষয়ে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নিয়েছি- স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ এবং শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ করব। এটি আমাদের সিদ্ধান্ত।
আমির খসরু ব্যাখ্যা করেন, আমরা যদি নাগরিকদের সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারি, তবে তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং তারা জাতির জন্য আরও ভালোভাবে অবদান রাখতে পারবে। এর ফলে সাশ্রয় হওয়া অর্থ পরিবারের অন্যান্য কল্যাণমূলক খাতে ব্যয় করা সম্ভব হবে। একই সুবিধা শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে, ফলে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশের সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় বিনিয়োগের অভাব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতে নিজস্ব পকেট থেকে খরচ আফগানিস্তানের চেয়েও বেশি।
আমির খসরু বলেন, এর ফলে কিছু মানুষ উপকৃত হচ্ছেন এবং তাদের সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে। বাজেটের সম্পদগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় বা একটি নির্দিষ্ট ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড সালেহউদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং।
এছাড়া, সম্মেলনে ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্বালানি ও অবকাঠামো, লিঙ্গবৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), ব্যাংক খাত, ব্যাংক খাত ও ডিজিটাল ইকোনমি, ব্যবসায় আইন ও ব্যবসার পরিবেশ এবং পুঁজিবাজার বিষয়ে প্যানেল আলোচক হিসেবে দেশের বিভিন্ন খাতের বিশিষ্টজনরা বক্তব্য রাখেন।
দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডিসহ প্রায় চার শতাধিক অতিথি অর্থনৈতিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনীতি
বাণিজ্য ঘাটতি কমলে শুল্ক আরও কমানোর আশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের

বাণিজ্য ঘাটতি কমলে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপ করা পাল্টা শুল্ক কমানোর আশ্বাস দিয়েছে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডেন লিঞ্চের নেতৃত্বে সফররত প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপ করা বাড়তি ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরও কিছুটা কমানোর বিষয়ে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে তিনদিনের সফরে ঢাকায় এসেছে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলটি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমাদের যে চলমান আলোচনার রয়েছে, সেটার ধারাবাহিকতায় আজকে তাদের টিমের সঙ্গে বসেছি। আমাদের যে অ্যাগ্রিমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক, কান্ট্রি স্পেসিফিক কমিটমেন্ট—এ বিষয়ে যে আলোচনাগুলো চলছিল, আমাদের জয়েন্ট ডিক্লারেশনের রেফারেন্সে আলোচনা করেছি আজকে।
কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেটি বলেছি- বাণিজ্য ঘাটতি কমার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের শুল্ককে নিম্নমুখী পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। ওনারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। শুল্ক কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখনো শুল্কচুক্তি হয়নি জানিয়ে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, চুক্তি করার লক্ষ্যে এ আলোচনাগুলো হচ্ছে। যে ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, চুক্তিকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার উদ্দেশেই এ আলোচনাগুলো হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা যে পণ্যসম্ভার নিয়ে আলোচনা করেছি, সেই পণ্যগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি। আমাদের যে (যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে) বিমানসহ বিভিন্ন জিনিস কেনার অঙ্গীকার রয়েছে সেগুলোর অগ্রগতি আমরা পর্যালোচনা করেছি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, অগ্রগতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এটি (বাণিজ্য ঘাটতি) সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে, বাণিজ্য ঘাটতি কমছে। তাতে আমাদের উভয়েরই অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ছে। যে কয়েকটি পণ্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করছি, তার একটি হচ্ছে কৃষিপণ্য, অন্যটি জ্বালানি পণ্য। উভয় পণ্যই এখন সাশ্রয়ী মূল্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনতে পারছি। তাই আমাদের অগ্রগতি হচ্ছে। এর বাইরেও আমরা প্রচেষ্টায় আছি। পর্যালোচনায় আমাদের অগ্রগতি সন্তোষজনক বলেই আমরা মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তুলার ওপর নির্ভর করে আমরা আমাদের পোশাকশিল্পে আরেকটু অতিরিক্ত শুল্ক আদায়ের চেষ্টা করছি। আমাদের আজকে আলোচনার এটা অন্যতম একটা লক্ষ্য ছিল। আমরা মনে করছি সেক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি আছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। আমরা যদি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারি আমাদের শুল্ক হ্রাসের আরও সম্ভাবনা রয়েছে।
শুল্ক কমানোর বিষয়টি বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর সঙ্গে সংযুক্ত বলেও জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে আমাদের ছয় বিলিয়নের মতো বাণিজ্য ঘাটতি আছে। আগের বারে আমরা কমিটমেন্ট দিয়েছিলাম যে, আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে গম কিনি, সয়াবিন কিনি। তাদের দেশও সারা পৃথিবীতে এগুলো বিক্রি করে। তাদের দেশ থেকে এগুলো আনলে আমরা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারি, কিছু সুবিধা পেতে পারি। আমরা তাদের জানিয়েছি আমরা যে কমিটমেন্ট করেছিলাম, সেখানে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে। অগ্রগতি হয়েছে তো, গত অর্থবছরে আমরা ৬০০ মিলিয়ন ডলার তুলা কিনেছি। এ বছর দুই মাসেই ২৭৬ মিলিয়ন হয়েছে, গম কিনেছি। বেড়েছে তো। এগুলোই আমরা তাদের বলেছি।
কবে শুল্ক চুক্তি হবে, সে বিষয়ে তারা ফিরে গিয়ে একটা সময় জানাবে বলেও জানান সচিব।
রাশিয়ার চেয়ে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম কেনা হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, আমেরিকার গম ও রাশিয়ার গমের মধ্যে তুলনামূলকভাবে গুণগত পার্থক্য রয়েছে। আমেরিকার গমের প্রোটিন কনটেন্ট রাশিয়ার গ্রামের প্রোটিন কনটেন্টের চেয়ে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ ভাগ বেশি।
প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দেশের গমের মূল্যের পার্থক্য হয় বলেও জানান উপদেষ্টা।
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোয়িং-এর থেকে বিমান কেনার বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আজ কেনার অর্ডার দিলাম, সামনের বছর পেয়ে গেলাম এমন ঘটনা ঘটবে না। এটি দীর্ঘমেয়াদে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে।
অর্থনীতি
ফেব্রুয়ারির পর চলে যেতে হবে, মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই: অর্থ উপদেষ্টা

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের পর চলে যেতে হবে উল্লেখ করে এর আগেই দেশের মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চান বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাল্টিপারপাস হলে ট্যাক্স রিপ্রেজেন্টেটিভ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (টিআরএমএস) সফটওয়্যারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর এই মনোভাবের কথা জানান অর্থ উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি এনবিআর চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করলাম সুফল কি আমরা দেখে যেতে পারব? কারণ, আমাদের ফেব্রুয়ারি মাসের পর চলে যেতে হবে, এর আগে কিছুটা দেখে যাব কি না। প্রধান উপদেষ্টা প্রায়ই আমাকে বলেন, কিছু কিছু কন্ট্রিবিউট করে যাই আমরা। কন্ট্রিবিউট মানে বাইরে অনেক বিরাট, এই সেই… অনেকেই চোখেও দেখে না। করলেও দেখে যে কিছুই হচ্ছে না। আজও দেখলাম কোনো একটা পত্রিকায়… নাম বলব না, সবখানে লিখেছেন হতাশা। উনি আশার কথা কিছুই দেখছেন না মনে হয়। আমি জানি না উনি দেখছেন কি না।
তিনি আরও বলেন, অতএব আমরা মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই। কারণ, পরে যে সরকার আসবে সময় লাগবে, বুঝতে সময় লাগবে। আর সদিচ্ছার ব্যাপার আছে। এর মধ্যে যদি কিছুটা আশার আলো দেখাতে পারি।
কর আইনজীবীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, সেবা খাতে অনেক হয়রানি করা হয়। লোকজনকে ঘোরানো হয়। আমি নিজেও অনেক সময়… মাঝে মধ্যে বলে দিই… আরে দিয়ে দাও না। ড্রাইভারকে বলি ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আমাকে বলো টলো না। এগুলো থেকে যাতে মানুষ নিস্তার পায়। একটু সেবা করেন। মানুষ চায় সেবা। ভালো সেবার ক্ষেত্রে কেউ সেবার মূল্য দিতে কৃপণতা করে না।
টিআরএমএস পুরো প্রক্রিয়া দেশে হওয়ায় সবাইকে সাধুবাদ জানিয়ে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এসব কাজে বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করার অভ্যাসটা বেশি হয়ে গেছে। বাইরে থেকে যারা আসে তারা আবার তাদের দেশের সরঞ্জাম বিক্রির চেষ্টা করে।
এ ধরনের কার্যক্রম সবার জন্য মঙ্গলজনক জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তি পর্যায়ে বা কোম্পানি পর্যায়ে ছাড়াও যারা কর সংগ্রহ করবে তাদের জন্য সুবিধা। সংগ্রহ করতে গেলে কত রকমের কাগজপত্রে লিখতে হয়। পরে কিন্তু অনেক থ্যাংকস-লেস হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, আগামী বছর থেকে কর্পোরেট কর দাখিল পুরোপুরি অনলাইনে বাধ্যতামূলক করা হবে। চলতি বছরই তৈরি করা হবে কর অ্যাপস। কর আদায়ের প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন করা গেলে অডিট সিলেকশন ও অডিট প্রক্রিয়া অটোমেটেড করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ট্যাক্স ল ইয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট রমিজ উদ্দিন আহমেদ, ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন এবং ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এম নাসিমূল হাই।
অর্থনীতি
শুল্ক ইস্যুতে আলোচনার জন্য ঢাকায় আসছে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল

তিনদিনের সফরে ঢাকায় আসছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় পা রাখতে যাচ্ছে প্রতিনিধি দলটি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের বিষয়ে আলোচনা করাই তাদের এ সফরের মূল উদ্দেশ্য বলে নিশ্চিত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত এক সূত্র।
তিনদিনের এ সফরে মার্কিন প্রতিনিধিদলটিকে নেতৃত্ব দেবেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ। ঢাকা সফরকালে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামের সঙ্গেও বৈঠক করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের সঙ্গে এর আগে অনুষ্ঠিত আলোচনা থেকে একটি প্রাথমিক খসড়া চুক্তি তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, ঢাকায় সফরের সময় উভয় পক্ষের মধ্যে এই খসড়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ও দর কষাকষি হবে। আলোচনার পরই চূড়ান্ত রূপ পাবে খসড়াটি।
এর আগে, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছিলেন, বর্তমানে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনার অগ্রগতি হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তৈরি খসড়া চুক্তিতে সম্মতি এলে তা সংশোধন করে চূড়ান্ত করা হবে। এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থনীতি
বাংলাদেশে মানসম্পন্ন গাড়ি উৎপাদনের জন্য চীনা কোম্পানিকে আহ্বান বাণিজ্য উপদেষ্টার

অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বাংলাদেশে মানসম্মত যানবাহন উৎপাদন করার জন্য চীনা কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নিম্নমানের বাণিজ্যিক যানবাহনের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এখন প্রায় মহামারীর রূপ নিয়েছে এবং এতে বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটিতে (আইসিসিবি) আয়োজিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ এক্সিবিশন ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, যদি চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে এসে উচ্চমানের যানবাহন উৎপাদন করে, তবে সড়ক খাতের ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব। একই সাথে তিনি বাংলাদেশের বর্তমান অর্ধ-ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে দ্রুত এক ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার ওপর গুরুত্ব দেন।
শেখ বশিরউদ্দীন চীন-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ প্রতি বছর চীন থেকে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে, কিন্তু রফতানি হয় তার তুলনায় অনেক কম। তিনি চীনা রাষ্ট্রদূতকে রফতানিতে বৈচিত্র্য আনার জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেশ, যারা ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে’ ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। তিনি জানান, গত এক বছরে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ ২৫৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে এবং ভবিষ্যতে চীন বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সবুর হোসেন নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে চীনা বিনিয়োগের আহ্বান জানান। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ বলেন, একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।
এই দুই দিনের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ ও চীনের ৪০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে ৩২টি চীনের। প্রদর্শনীতে অবকাঠামো, প্রযুক্তি, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতের পণ্য ও সেবা উপস্থাপন করা হয়েছে।
অর্থনীতি
বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৩০০ শতাংশ বেড়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৩০০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ এক্সিবিশন’–এ গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ বশির উদ্দিন বলেন, আমাদের দুর্বলতা খুঁজে বের করতে হবে। অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। উৎপাদন ও প্যাকেজিংয়ে চীনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারলে আমাদের অগ্রসর হওয়ার সুযোগ আছে। তৈরি পোশাকসহ অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে বাংলাদেশ। তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক হলেও সামগ্রিকভাবে এখনো পিছিয়ে।
সড়ক অবকাঠামো ও পরিবহন সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা চেয়েছেন উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, বছরে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানুষ মারা সেটি ভয়াবহ। এক্ষেত্রে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। আমাদের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী চীনের কাছে এ ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেছি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রেসিপ্রোকল ট্যারিফ প্রসঙ্গে তিনি জানান, আগামী রোববার ট্যারিফ ইস্যুতে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। তাদের সঙ্গে ট্যারিফের কাঠামোগত রূপ কীভাবে দেওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে।
চীনা দূতাবাস আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের ৮টি ও চীনের ৩২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। অবকাঠামো, প্রযুক্তি, টেলিকম, স্বাস্থ্য, কৃষি, শক্তি, পরিবহন ও লজিস্টিকসসহ বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করছে।
প্রদর্শনীটি দর্শনার্থীদের জন্য ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।