অর্থনীতি
প্রচলিত ব্যাংকে বন্ধ হচ্ছে ইসলামি ব্যাংকিং

খসড়া ‘ইসলামী ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ২০২৪’ অনুসারে—একটি ব্যাংক প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ইসলামি ব্যাংকিং চালিয়ে যেতে পারবে না। কেননা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চায় প্রচলিত ও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য সমান ক্ষেত্র তৈরি হোক। গত জুন পর্যন্ত ৩০ প্রচলিত ব্যাংক তাদের ৩৩ শাখা ও ৬৮৮ উইন্ডোর মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দিয়ে এসেছে।
আইন কার্যকর হলে ব্যাংকগুলোকে ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করতে হবে অথবা ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার জন্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে।
খসড়া আইন তৈরি কমিটির প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রচলিত ব্যাংকগুলো যদি ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দেয়, তাহলে প্রচলিত ও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য সমান সুযোগ থাকে না।’
বিশ্বব্যাপী এই প্রথা চললেও কয়েকটি দেশে ইসলামি ব্যাংকিং রাখার নিয়ম আছে।
প্রচলিত ও ইসলামি ব্যাংকিংয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য সুদ। প্রচলিত ব্যাংকগুলো সুদ দেয় বা নেয়। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো মুনাফা ভাগাভাগি করে।
১৯৮৩ সালে দেশে শুরু হওয়া শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং আইন বা কার্যকর দিকনির্দেশনা ছাড়াই দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই খসড়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের মোট সম্পদের ২৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ, আমানতের ২৬ দশমিক ২৩ শতাংশ ও বিনিয়োগের ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশ ইসলামি ব্যাংকিংয়ের।
বর্তমানে শরিয়াহভিত্তিক ১০টি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক আছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংক সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অনিয়ম ও আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘খসড়া তৈরির কমিটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদ্যমান বিধান ও অন্যান্য দেশে ইসলামি ব্যাংকগুলোর আইন পর্যালোচনা করে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খসড়াটি তৈরি করছে।’
গত ৯ অক্টোবর গভর্নর অনুমোদিত খসড়াটির ওপর মতামত নিচ্ছে ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বর্তমানে যে ৩০ প্রচলিত ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে, আইন কার্যকর হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে সেগুলোকে লিখিতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তাদের পছন্দের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে জানাতে হবে।
এরপর ব্যাংকগুলো পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক হতে অথবা শরিয়াহভিত্তিক কার্যক্রম বন্ধ করতে তিন বছর সময় পাবে। বিশেষ ক্ষেত্রে মেয়াদ এক বছর বাড়ানো যেতে পারে।
তবে দায় পরিশোধ না হওয়া বা আমানত ও ঋণের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকগুলো অন্য ধরনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালিয়ে যেতে পারবে।
এই আইনে নিবন্ধিত হওয়া ইসলামি ব্যাংকের নামে ‘ইসলাম’ শব্দটি ব্যবহার করতে হবে।
ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দেওয়া ছাড়া অন্য উদ্দেশ্যে সহযোগী প্রতিষ্ঠান গঠন বা সহযোগী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের উদ্দেশ্যে ইসলামি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে থাকা শেয়ার কিনতে পারবে না।
আইনের অধীনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শরিয়াহ উপদেষ্টা পর্ষদ গঠন করবে।
যে ব্যবসায় শরিয়াহর অনুমতি নেই, সেখানে ইসলামি ব্যাংক জড়িত হবে না।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা আইনটিকে স্বাগত জানাই। এটি দরকার। তবে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ইসলামি ব্যাংকিংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার এটা সঠিক সময় নয়।’
দু-তিনটি ব্যাংক ছাড়া শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা ভালো নয়।
তিনি আরও বলেন, ‘এ অবস্থায় বিধিনিষেধ দেওয়া হলে প্রচলিত ব্যাংকের (শরিয়াহ শাখা বা উইন্ডো) গ্রাহকরা উপযুক্ত বিকল্প পাবেন না। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
এখন ইসলামি ব্যাংকিং শাখা ও উইন্ডো পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকগুলোর চেয়ে ভালো করছে বলে মনে করেন তিনি।
তার ভাষ্য, ‘স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের মতো বিদেশি ব্যাংক প্রচলিত ও ইসলামি ব্যাংকিং দুটোই চালু রেখেছে। যদি আলাদাভাবে হিসাব রাখা যায় তাহলে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে সমস্যা নেই।’
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বাধা দেওয়ার চেয়ে নির্দেশিকা ও তদারকি গুরুত্বপূর্ণ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘দেশে প্রচলিত ব্যাংকগুলো যখন দেখল বেশি মুনাফা ও গ্রাহক পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তখন তারা ইসলামি ব্যাংকিং শাখা ও উইন্ডো খুলে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব ধারাসহ আইন পাস হলে ব্যাংকগুলো বিশেষ দিকে মনোযোগ দেবে। তাদের বিনিয়োগও বাড়বে। প্রাথমিকভাবে তা ইতিবাচক।’
তার মতে, ‘দীর্ঘ সময় বাধা দেওয়া উচিত নয়। যখন বাধা থাকবে না তখন সেবার মান ও প্রতিযোগিতা বাড়বে।’
প্রতিযোগিতা না থাকলে সেবার মান খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
‘অর্থনীতির আকার বিবেচনায় দেশে অনেক ব্যাংক থাকায় কয়েকটি ব্যাংক একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ বা অবসায়ন প্রক্রিয়ার আওতায় আসতে পারে’ বলেও মনে করেন তিনি।
এমআই

অর্থনীতি
ঘরে বসেই যেভাবে পাবেন টিআইএন সার্টিফিকেট

করদাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশের প্রথম ধাপ হচ্ছে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন। ই-টিআইএন সার্টিফিকেট (ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর) পাওয়ার পরপরই করদাতাকে সাধারণত প্রতি করবর্ষে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। যদিও ব্যতিক্রমও আছে।
শুধু ব্যবসা বা চাকরিজীবীদের জন্য নয়, অনেকগুলো কারণে ই-টিআইন সার্টিফিকেট প্রয়োজন রয়েছে। সরকারি-বেসকারি ৫০ এর বেশি সেবা বা কাজে টিআইএন প্রয়োজন রয়েছে।
যার মধ্যে রয়েছে- পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে যেমন- ঋণপত্র স্থাপন; রপ্তানি নিবন্ধন সনদ নেওয়া; সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া বা পুনর্নিবন্ধন; দরপত্র জমা; অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ গ্রহণ; বিমা জরিপ প্রতিষ্ঠান; জমি, ভবন ও ফ্ল্যাট নিবন্ধন; মোটরসাইকেল-বাস-ট্রাকের মালিকানা পরিবর্তন ও ফিটনেস নবায়ন; চিকিৎসক, প্রকৌশলী, হিসাববিদসহ বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য; কোম্পানির পরিচালক ও স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার; বিবাহ নিবন্ধনকারী বা কাজি ও ড্রাগ লাইসেন্সধারী ইত্যাদি ক্ষেত্রে টিআইএন সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ নিতেও টিআইএন বাধ্যতামূলক, মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসা; মোবাইল ব্যাংকিং; পরিবেশক এজেন্সি; বিভিন্ন ধরনের পরামর্শক, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জনবল সরবরাহ, সিকিউরিটি সার্ভিস। এমনকি আমদানি-রপ্তানির বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে হলেও টিআইএন প্রয়োজন।
অন্যদিকে জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলেও টিআইএন বাধ্যতামূলক। এছাড়া রয়েছে বাণিজ্যিক ভবনের নকশা অনুমোদনে; বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য; ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিলে; সঞ্চয়পত্র ক্রয়, ক্রেডিট কার্ড থাকলে; বাণিজ্যিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগ চাইলে টিআইএন থাকতে হবে। আবার ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে চাইলে অভিভাবকের টিআইএন প্রয়োজন।
এছাড়া সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কিংবা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের যাদের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি তাদেরও কর শনাক্তকরণ সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের করযোগ্য আয়ধারী কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও টিআইএন বাধ্যতামূলক। যদিও তাদের শুধু টিআইএন নিলে হয় না, আয়কর রিটার্নও জমা দিতে হয়।
এছাড়া সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন নিতেও টিআইএন নিতে হয়। এমনকি রাইড শেয়ারিং যেমন- উবার বা পাঠাও অংশীদার হতে হলে কিংবা অনলাইনে ইনকাম, যেমন- ফেসবুক থেকে আয় করতে চাইলে, ইউটিউব থেকে ইনকাম করতে চাইলে, ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলেও ই-টিআইন সার্টিফিকেট প্রয়োজন রয়েছে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে ঘরে বসে অনলাইনেই সহজে পাওয়া যাচ্ছে ই-টিআইএন সার্টিফিকেট। করদাতা নিবন্ধন পেতে আপনাকে কর অফিসে যেতে হবে না।
টিআইএন সার্টিফিকেট আবেদন করতে কী কী প্রয়োজন ও আবেদন করার ধাপ সমূহ হলো-
আবেদন করতে যা প্রয়োজন
টিআইএন সার্টিফিকেট আবেদন করতে একজন করদাতাকে জাতীয় পরিচয় পত্র, প্রবাসী হলে এনআইডি ও পাসপোর্ট, আবাসিক ঠিকানা, জেলা, বিভাগ, বায়োমেট্রিক করা মোবাইল নম্বর প্রয়োজন হবে। ওইসব তথ্য দিয়ে আবেদন করতে আপনাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের https://secure.incometax.gov.bd/TINHome এই ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে হবে।
আবেদন করার ধাপ সমূহ
ধাপ- ১:
যে কোনো করদাতাকে এনবিআরের ই-টিআইএন সার্ভারে প্রবেশ করার পর User ID এবং Password নিতে হয়। যা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ ওই আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে যে কোনো সময় ই-টিআইএন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন একজন করদাতা। User ID এবং Password নেওয়ার জন্য আবেদনকারীকে বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের https://secure.incometax.gov.bd/TINHome সাইটে প্রবেশ করতে হবে। তারপর Register অপশনটিতে ক্লিক করলেই আপনাকে আবেদন করার পৃষ্ঠায় নিয়ে যাবে।
ধাপ-২:
এই পৃষ্ঠাতে আবেদনকারীকে অবশ্যই একটি একাউন্ট করে নিতে হবে। যা করদাতাকে ইংরেজি বর্ণমালায় টাইপ করতে হবে। শুরুতেই আপনাকে একটি ‘User Name’ দিতে হবে। এরপর পছন্দমতো পাসওয়ার্ড পাসওয়ার্ড দিতে হবে। এমন পাসওয়ার্ড দিবেন যেটা আপনার মনে রাখতে সুবিধা হয়। একইভাবে Retype Password এর যায়গায় একই পাসওয়ার্ড আবার লিখতে হবে।
এরপর Security Question এ কিছু অপশন আসবে যেমন আপনার জন্ম তারিখ কোথায়,আপনার জন্ম স্থান কোথায়, আপনার গ্রাম কোথায়, আপনার প্রিয় রং ইত্যাদি। আপনি এমন একটা অপশন নিবেন যাতে করে আপনার মনে থাকে। এটি পরবর্তী সময়ে লাগবে যখন আপনি User name কিংবা Password ভুলে যাবেন তখন এটি মনে রাখলে আপনি আপনার যাবতীয় ই-টিআইএন সম্পর্কিত তথ্য গুলো পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
ধাপ-৩
রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পর https://secure.incometax.gov.bd/TINHome গিয়ে এবার লগইন (login) অপশনে প্রবেশ করে User name ও Password দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। এরপরই মূলত আবেদনকারীকে করদাতার ধরন, টিআইএন এর উদ্দেশ্য, আয়ের প্রধান উৎস, পেশার ধরন, পেশায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের লোকেশন ইত্যাদি পূরণ করতে হবে। নির্ভুলভাবে পূরণ করার পর পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।
ধাপ-৪
ফরমপূরণের এই ধাপে একজন করদাতার ব্যক্তিগত সকল তথ্য দিতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে করদাতার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পিতা-মাতার নাম, মোবাইল নম্বর, স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি। পূরণকৃত তথ্য অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুরূপ হতে হবে। ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিলে ভবিষ্যতে হয়রানি শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর পরবর্তী ধাপে গেলে আপনার পূরণকৃত ফরমের একটি সামারি বা ছবি চলে আসবে। যেটা যাচাই করে সঠিক মনে হলে আবেদনকারীকে সাবমিট এপ্লিকেশন বোতামে ক্লিক করে টিআইএন সার্টিফিকেট সংগ্রহ বা প্রিন্ট করতে হবে। টিআইএন সার্টিফিকেট চাইলে সার্ভারে সেইফ বা সংরক্ষণ করতে পরবেন একজন করদাতা।
কাফি
অর্থনীতি
বিসিএমএ’র নতুন সভাপতি প্রিমিয়ার সিমেন্টের এমডি আমিরুল হক

দেশের সিমেন্টশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আমিরুল হক।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ঢাকায় বিসিএমএর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তাঁকে দুই বছরের জন্য সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
এ ছাড়া সংগঠনের প্রথম সহসভাপতি হয়েছে কনফিডেন্স সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইমরান করিম। সহসভাপতি হয়েছেন ইউনিক সিমেন্টের পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা।
বিসিএমএ জানায়, নবনির্বাচিত সভাপতি আমিরুল হক বিসিএমএর পাশাপাশি এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলওএবি) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চার দশক ধরে তিনি দেশে ব্যবসা–বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। পেট্রোকেমিক্যাল, শিপিং, বীজ প্রক্রিয়াকরণ ও ভোজ্যতেল শোধনাগার, আটার কল, চিংড়ি হ্যাচারি, ব্যাগ, স্যাক উৎপাদন, আবাসন খাতসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম চেম্বার ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন আমিরুল হক। দেশের শিল্প খাতে অবদানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তিনি একাধিকবার সিআইপিও নির্বাচিত হন।
সভাপতি, প্রথম সহসভাপতি ও সহসভাপতি ছাড়াও বিসিএমএর নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন সেভেন রিং সিমেন্টের তাহমিনা আহমেদ।
এ ছাড়া নির্বাহী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন হাইডেলবার্গ সিমেন্টের ট্যারেন্স ওএনজি, মীর সিমেন্টের শামা-ই-জহির, ডায়মন্ড সিমেন্টের আবদুল্লাহ ইফতেখার, এনজিএস সিমেন্টের অভিমুন্য সাহা ও আকিজ সিমেন্টের মো. মশিউর রহমান।
আমিরুল হকের আগে বিসিএমএর সভাপতি ছিলেন ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির। তিন দফায় দায়িত্ব পালনের পর নিয়ম অনুযায়ী নতুন সভাপতির হাতে সংগঠনের নেতৃত্ব তুলে দেন বিদায়ী সভাপতি।
অর্থনীতি
বাড়তি ব্রয়লার মুরগির দাম, মাছের বাজারে স্বস্তি

রাজধানীর কাঁচাবাজারে ফের বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। ঈদের পর দাম কমে গেলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এদিকে হঠাৎ করেই দামের এই ঊর্ধ্বগতিতে বিস্মিত হচ্ছেন ক্রেতারা। তবে মাছের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল থাকায় সেখানেই কিছুটা স্বস্তি খুঁজছেন তারা। এদিকে গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের মতোই রয়েছে, কিন্তু ঈদের রেশ না কাটায় সেখানে নেই তেমন বিক্রি।
শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রীসহ আশেপাশের একাধিক বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজারে এখন ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫–১৭০ টাকা কেজিতে। গত সপ্তাহেও সেটি ছিল ১৪৫–১৫০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ কেজিতে ১৫–২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সোনালি মুরগির দামও বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৮০ টাকা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরেই কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ব্রয়লার মুরগির জন্য সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা দাম নির্ধারণ করেছিল। এক বছর না যেতেই আবার সেই দামের কাছাকাছি চলে এসেছে বাজার।
রামপুরা বাজার গিয়ে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দোকানে ভিড় অনেকটাই কম। মুরগির দোকানে দাঁড়িয়ে আছেন গৃহিণী হাসিনা আক্তার। পাশ থেকে হাঁক ডেকে বললেন, “ভাই, এই তো গত সপ্তাহে তো ১৫৫ টাকায় কিনেছি, আজকে হঠাৎ ১৭৫ বলছেন ক্যান? সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বাড়া কি স্বাভাবিক?” দোকানি মো. রিয়াজ উদ্দিন মুখে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে জবাব দিলেন, “ আমরা তো নিজেরা দাম বাড়াই না। ফার্ম থেকেই এখন ১৬০–১৬৫ টাকা পড়ছে। আমাদের যদি ১০ টাকা লাভ না থাকে, চলবে কীভাবে? আমরাও তো কষ্টে আছি।”
রেজাউল করিম নামের এক পোশাককর্মী বলেন, তিনদিন আগেও অফিসের পেছনের গলির দোকানে ১৫০ টাকা কেজি ছিল। আজ বলল ১৭০! বাসায় বাচ্চাদের জন্য কিনি, নিজেরা তো যা পাই তা দিয়েই চলে। এত দাম দিলে তো মুরগিও বাদ দিতে হবে!
তিনি বলেন, এতদিন মুরগি ১৪০-১৫০ টাকার মধ্যে ছিল, আমার মতে এটাই ছিল ব্রয়লার মুরগির স্বাভাবিক দাম। এই দামে থাকলে গরিব ধনী সবাই নিজেদের চাহিদা মতো খেতে পারবে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই হঠাৎ করে দাম কেন জানি বেড়ে যায়।
বাজার পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন, ফার্ম ও পরিবহনপর্যায়ে একটি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। যদিও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন—বর্ষা মৌসুমে সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন এবং ফিডের মূল্যবৃদ্ধিই দাম বাড়ার পেছনে মূল কারণ। মুরগি বিক্রেতা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, “দাম বাড়ছে ফার্ম থেকে। আমরা আগে যেখানে ১৪৫–১৫০ টাকায় কিনতাম, এখন সেখানে কিনতে হচ্ছে ১৬০–১৬৫ টাকায়। আমাদের যে খরচ, তাতে অন্তত ১৫ টাকা লাভ না রাখলে ব্যবসা টিকবে না। এই দামে বিক্রি করতেই বাধ্য হচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, কোনো কোনো গ্রাহক ভাবছেন আমরা ইচ্ছে করে দাম বাড়িয়েছি। কিন্তু আমরাও বিপদে। পরিবহন খরচ, শ্রমিক, দোকান ভাড়া—সবমিলিয়ে ন্যূনতম লাভেই চলছি।
বনশ্রী এ ব্লক এলাকার বাজারে গিয়ে দেখা গেলো সকালের মাছের বাজার অনেকটাই জমজমাট। মাছের দোকানগুলোতে তাজা রুই, কাতল, পাবদা সাজানো। দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে বাজারে রুই ও কাতল বিক্রি হচ্ছে ৩০০–৩৪০ টাকা কেজিতে। পাবদা ৩৫০–৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০–৭০০, টেংরা ৬০০–৭০০, শিং ৪০০–৪৫০, কৈ ২০০–২২০ এবং তেলাপিয়া–পাঙ্গাস পাওয়া যাচ্ছে ১৮০–২০০ টাকায়। দেশি শিং ও কৈ মাছের দাম অবশ্য এখনও অনেক বেশি—প্রতি কেজি যথাক্রমে ১২০০ ও ১০০০ টাকা।
বাজার করতে আসা শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বললেন, আজকের বাজারে মুরগির দাম একটু বেড়েছে। গরু-খাসির দাম তো অনেক বেশি। সেই তুলনায় আমার মত নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য মাছ এখন সবচেয়ে ব্যালান্সড অপশন।
মাছ বিক্রেতা হুমায়ুন কবির বললেন, “ঈদের পর এখন লোকজন মাংস থেকে সরে মাছেই ঝুঁকছে। দামও বাড়েনি, আবার ভালো মাছ মিলছে, তাই বিক্রিও ভালো।”
শ্যামল মিয়া নামক আরেক বিক্রেতা জানান, মাংস-মুরগির বাজারে দাম বাড়ছে, আর আমরা মাছওয়ালারা একটু স্বস্তিতে আছি। রুই কাতল আগের মতোই আছে, তাই মানুষ আসছে। পাবদা, তেলাপিয়া ভালো যাচ্ছে।
এদিকে ঈদের এক সপ্তাহ পেরোলেও এখনও রাজধানীর অধিকাংশ পরিবারে কোরবানির মাংস আছে। সেই কারণে গরু, খাসি ও ছাগলের মাংসের দোকানগুলোতে এখনো ক্রেতার অভাব। রামপুরা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী মো. কবির হোসেন বলেন, “ঈদের পর এমনটা হতেই পারে, তবে এবার একটু বেশি সময় ধরে লোকজন মাংস কিনছে না। দাম কমেনি—গরু ৭৫০–৭৮০, খাসি ১১০০ আর ছাগল ১০০০ টাকায় বিক্রি করছি। কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। যারা কোরবানি দেয়নি, তারাও মাছ-মুরগিতে চলে গেছে।
অর্থনীতি
আজ ও আগামীকাল কাস্টম হাউজ খোলা

আজ শুক্র ও আগামীকাল শনিবার (১১-১২ জুলাই) ছুটির দুই দিন দেশের সব কাস্টম হাউজ খোলা থাকবে। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) কাস্টমস নীতির প্রথম সচিব মু রইচ উদ্দিন খানের সই করা নির্দেশনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এতে বলা হয়, ধীরগতির কারণে গত কয়েকদিন দেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্যচালান ছাড় প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়।
এ অবস্থায় দেশের আমদানি- রপ্তানি বাণিজ্য নিরবচ্ছিন্ন রাখার উদ্দেশ্যে ১১-১২ জুলাই, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান রাখার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
অর্থনীতি
অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত গ্রেপ্তার

অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. নাসিরুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে ধানমন্ডি থেকে আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা আছে। এর ভিত্তিতে ডিবি অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
এননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের নামে মামলা করে দুদক। সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ও আবুল বারকাত পরস্পর যোগসাজশে জালজালিয়াতির মাধ্যমে এননটেক্স গ্রুপের ২২টি প্রতিষ্ঠানকে এই টাকা ঋণ দিয়েছিলেন। আতিউর রহমান, তাঁর সহযোগী অন্য ব্যক্তিরা বিভিন্ন অনৈতিক কৌশলে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।