অর্থনীতি
দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে কমেছে অস্থিরতা
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুতের পতনও বন্ধ হয়েছে। নগদ বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যে অস্থিরতা ছিল, সেটি কমেছে। দুই বছর ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকা মার্কিন ডলারের মান না কমলেও নির্দিষ্ট দামে মোটামুটি স্থিতিশীল আছে। ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরো ও মালয়েশীয় রিঙ্গিতের দাম এখন কমতির দিকে। প্রতিবেশী ভারত খুব কম ভিসা দেওয়ায় তাদের মুদ্রা রুপির বিনিময় হার কিছুটা দুর্বল হয়েছে। তবে থাইল্যান্ড ভিসা চালু রাখায় সে দেশের মুদ্রা বাথের চাহিদা ও দাম খানিক বেড়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও খোলাবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বিদেশি মুদ্রার বাজারের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
সাধারণত সরকার পরিবর্তনের পর মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। তবে বাংলাদেশে তেমনটা ঘটেনি। উল্টো দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা অস্থিরতা কমে এসেছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন সরকার এসে সময়োপযোগী নীতি নেওয়ায় এবং অনেক দেশ ভিসা প্রদান সীমিত করায় বিভিন্ন বিদেশি মুদ্রার চাহিদা ও দাম কমে এসেছে। ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত ১৪ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে, বিশেষ করে ডলার-সংকট কাটাতে আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করেন। ফলে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় মুদ্রাটির মধ্যবর্তী দাম ১১৭ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে পারছে ব্যাংকগুলো। এর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে পরবর্তী দুই মাস ন্যান্য মুদ্রার দামও নির্ধারিত হয়।
ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে নগদে প্রতি মার্কিন ডলারের দাম ছিল ১১৮ টাকা। দুই মাস ধরে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছে জমা ছিল ৫ কোটি ১৪ লাখ নগদ ডলার। অন্যদিকে খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১২৪ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে, যা তিন মাস আগে ১২৩ টাকা ছিল। তবে ব্যাংকগুলোয় এখন ভিসাসহ পাসপোর্ট ও টিকিট নিয়ে গেলে ডলার মিলছে। দেশের বেশির ভাগ নাগরিকই বিদেশে যাওয়ার সময় ডলার নেন। কারণ সব দেশেই ডলারের চাহিদা রয়েছে, এতে বাড়তি দামও পাওয়া যায়।
রাজধানীর মতিঝিলের খোলাবাজারের মুদ্রা বিক্রেতা সজিব মিয়া বলেন, আগের মতো ব্যবসা নাই। ফলে দামেও চাঙাভাব নাই। উল্টো অনেক মুদ্রার দাম কমে আসছে। ফলে লোকসানে পড়তে হচ্ছে।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য তুলনামূলক সহজে ভিসা পাওয়ার পাশাপাশি আকাশ ও সড়কপথে যোগাযোগ থাকায় বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য হচ্ছে ভারত। দেশ থেকে বিদেশে যাওয়া পর্যটকদের ৪০-৪৫ শতাংশই ভারত যান। এরপরই রয়েছে থাইল্যান্ড। চিকিৎসা, শপিং ও ঘোরাঘুরির জন্য ১৫-২০ শতাংশ বাংলাদেশি পর্যটকের গন্তব্য এই দেশ। এর বাইরে বাংলাদেশি পর্যটকদের ১০-১৫ শতাংশ মালয়েশিয়া ও ৫-১০ শতাংশ সিঙ্গাপুর ভ্রমণে যান। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), সৌদি আরব ও ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ভ্রমণ করতে যান ১০-১৫ শতাংশ বাংলাদেশি পর্যটক। এ ছাড়া দেশের পর্যটকদের ৫-৮ শতাংশ ইউরোপে, ৫-৮ শতাংশ নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও চীন ভ্রমণে যান।
দেশে সরকার পরিবর্তনের পর ভারত শুধু সীমিতভাবে জরুরি চিকিৎসা ভিসা দিচ্ছে। দেশটি পর্যটন ভিসা বন্ধ রেখেছে। ফলে ভারতীয় রুপির চাহিদা কমেছে। ফলে ব্যাংকগুলোয় এখন জুলাই মাসের দামে রুপি মিলছে। তবে খোলাবাজারে রুপির দাম এক মাসে ১৫ পয়সা বেড়ে ১ টাকা ৪৭ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে।
ভিসা কম পাওয়ায় দেশের মানুষের ভারতে যাওয়া কমেছে। যেমন ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস আগে যেখানে সপ্তাহে ৩২টি ফ্লাইট পরিচালনা করত, সেখানে এখন করছে মাত্র ১২টি।
ট্যুর অপারেটররা বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ভিসাও পাচ্ছেন না অনেক পর্যটক। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের ভিসা পেতেও দীর্ঘ সময় লাগছে। শুধু জটিলতা ছাড়া শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে যাওয়া যায়। অবশ্য পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণেও অনেক ব্যবসায়ী ও ভ্রমণপিপাসু ভ্রমণ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে দেশি পর্যটকদের বিদেশযাত্রা ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে।
জানা গেছে, থাই বাথের দাম গত জুলাইয়ে ছিল ৩ টাকা ৪০ পয়সা, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয় ৩ টাকা ৫০ পয়সা। এখন তা ৩ টাকা ৭০ পয়সায় স্থিতিশীল আছে। খোলাবাজারে দাম আরও ১০ পয়সা বেশি। ইউএইর প্রতি দিরহামের দাম গত সেপ্টেম্বরে ছিল ৩২ টাকা, যা এখন ৫০ পয়সা বেশি। একই সময়ে সৌদি রিয়াল ৩১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে ৩২ টাকা ৫০ পয়সা ও মালয়েশিয়ার রিঙ্গিত ২৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ২৮ টাকায় উঠেছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
আদানির সঙ্গে বিদ্যুতের সব চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট
বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সঙ্গে একতরফা চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. আবদুল কাইয়ুম। বুধবার (১৩ নভেম্বর) এই রিট পিটিশন দায়ের করেন তিনি।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সঙ্গে হওয়া চুক্তি দেশের স্বার্থবিরোধী উল্লেখ করে এই রিট দায়ের করেছেন এম. আবদুল কাইয়ুম। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিটটির শুনানি হবে।
এর আগে গত ৬ নভেম্বর বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল চেয়ে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম কাইয়ুম। আইনি নোটিশে অবিলম্বে অন্যায্য একতরফা চুক্তি পুনর্বিবেচনা অথবা পুরোটাই বাতিল চাওয়া হয়।
সে সময় জ্বালানি ও আইন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে বিস্তারিত রিপোর্ট দেওয়ার জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছিল। লিগ্যাল নোটিশের জবাব দিতে পিডিবির চেয়ারম্যান ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তিনদিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় পর্যালোচনা কমিটির সভায় ১১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব তথ্য-উপাত্ত ও নথি কমিটিকে সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে ভারতের আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র।
প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনায় আদানির সঙ্গে তাড়াহুড়া করে ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি হয়। সে সময় দেশে আমদানি করা কয়লানির্ভর কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়নি। এসব চুক্তির একটি ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে করা ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খণ্ডে আদানির ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মূলত বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
কারসাজিতে ৯০ লাখ টাকা মুনাফা করা সাকিবের জরিমানা ৫০ লাখ
শেয়ার ব্যবসায়ে কারসাজির মাধ্যমে ৯০ লাখ টাকা মুনাফা করে এখন ৫০ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হচ্ছে জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তাঁর মা শিরিন আকতারকে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত ২৪ সেপ্টেম্বর এ জরিমানা করেছে। তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি কারসাজির বিস্তারিত তথ্য সম্প্রতি প্রকাশ করেছে। সাকিব ও তাঁর মায়ের নামে পরিচালিত একটি যৌথ বিও হিসাবে একটি বিমা কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচায় কারসাজি করা হয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানির নাম প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্স।
বিএসইসির এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে সংঘটিত কারসাজিতে যুক্ত ছিলেন সাকিব আল হাসান। শেয়ারবাজারে যে বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) ব্যবহার করে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হয়, সেটি সাকিব আল হাসান ও তাঁর মা শিরিন আকতারের নামে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সহযোগী ব্রোকারেজ হাউসে খোলা হয়েছিল।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) এক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিএসইসি সাকিব আল হাসান, শেয়ারবাজারের বহুল আলোচিত কারসাজিকারক আবুল খায়ের হিরুসহ কয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে। প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনায় ওই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে ডিএসই। গত বছরের ১৭ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা তদন্ত করে।
এতে দেখা যায়, উল্লেখিত সময়ে, অর্থাৎ এক মাসে বাজারে প্যারামাউন্টের প্রতিটি শেয়ারের দাম প্রায় ৩৫ টাকা বা ৮৫ শতাংশ বেড়েছে। ওই সময়ে সিরিজ লেনদেন বা নিজেদের মধ্যে হাতবদল করে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়। এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন আবুল খায়ের হিরু, সাকিব আল হাসানসহ তাঁদের নিকটাত্মীয়, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজির দায়ে সাকিব আল হাসান ও তাঁর মা শিরিন আকতারসহ সাত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। জরিমানা করা অন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হলো ইশাল কমিউনিকেশন, আবুল খায়ের হিরু, আবুল খায়ের হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতলুব, হিরুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্ট, লাভা ইলেকট্রোডস ও জাহিদ কামাল। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় ইশাল কমিউনিকেশনকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় ক্রিকেটার ও সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানকে। ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় আবুল খায়ের হিরুকে, যা তৃতীয় সর্বাধিক। এ ছাড়া আবুল কালাম মাতলুবকে ১০ লাখ টাকা, হিরুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মোনার্ক মার্টকে ১ লাখ টাকা এবং লাভা ইলেকট্রোডস ও জাহিদ কামাল নামের একজনকে ১ লাখ করে টাকা জরিমানা করা হয়।
ডিএসইর তদন্ত ও বিএসইসির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সাকিব আল হাসান ও তাঁর মায়ের বিও হিসাবে মাত্র তিন দিনে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের ১০ লাখ ৬০ হাজার শেয়ার কেনা হয়। এসব শেয়ারের গড় ক্রয়মূল্য ছিল ৬৫ টাকা ২৪ পয়সা। এ জন্য প্রায় ৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। গত বছরের ১২, ১৪ এ ১৭ সেপ্টেম্বর ভিন্ন ভিন্ন দামে এসব শেয়ার কেনা হয়। এর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ২১ হাজার শেয়ার কেনা হয় ১২ ও ১৪ সেপ্টেম্বর। এই দুই দিনে কেনা সব শেয়ারই পাঁচ দিনের ব্যবধানে বিক্রি করে দেন সাকিব আল হাসান। তাতে প্রতি শেয়ারে প্রায় ৯ টাকা করে মুনাফা হয়। সব মিলিয়ে মুনাফা দাঁড়ায় ৯০ লাখ টাকা। এ ছাড়া কোম্পানিটির আরও ৪০ হাজার শেয়ার অবিক্রীত ছিল সাকিবের বিও হিসাবে। তাতে ওই শেয়ারে আনরিয়ালাইজড বা অনর্জিত মুনাফার পরিমাণ ছিল ৪ লাখ টাকা।
ডিএসই ও বিএসইসির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, কারসাজির শেয়ারে বিনিয়োগ করে মাত্র পাঁচ দিনে বড় অঙ্কের মুনাফা করেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। একাধিক সূত্রে জানা যায়, শেয়ারবাজারে সাকিব আল হাসান নিজে সরাসরি লেনদেন করতেন না। তাঁর বিনিয়োগ ও লেনদেন দেখভাল করতেন শেয়ারবাজারের বহুল আলোচিত কারসাজিকারক আবুল খায়ের হিরু। প্যারামাউন্ট শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনায় সাকিবের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ার পর এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিএসইসির পক্ষ থেকে সাকিবকে শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সাকিবের পক্ষে সেই শুনানিতে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন আবুল খায়ের হিরু।
শুনানিতে সাকিবের পক্ষে আবুল খায়ের হিরু বলেন, কোম্পানির মৌলভিত্তি দেখে কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয়েছে। বাংলাদেশে বিমা খাতের ভালো কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্স একটি। ধারাবাহিকভাবে এটির ব্যবসায়ে প্রবৃদ্ধিও হচ্ছে। এমন বিবেচনায় কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ারে বিনিয়োগ করেন সাকিব আল হাসান। তারপরও কেন কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগকে কারসাজি বলা হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। শেয়ারবাজারে মানুষ বিনিয়োগ করে মুনাফার জন্য, এটি বিনিয়োগকারীদের অধিকারও।
তবে বিএসইসির শুনানিতে সাকিবের পক্ষে দেওয়া এ ব্যাখ্যা গ্রহণ করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। সংস্থাটি বলছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজারের উন্নয়নের পরিপন্থী। এ কারণে সাকিব আল হাসান ও তাঁর মা শিরিন আকতারকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
৭ দিনের মধ্যে সব আমদানি দায় পরিশোধের নির্দেশ
ব্যাংকের মেয়াদোত্তীর্ণ আমদানি ঋণপত্র বা এলসি দায় আগামী ৭ দিনের মধ্যে পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্ধারিত সময়ে দায় পরিশোধে ব্যর্থ হলে তার কারণ জানাতে হবে। পাশাপাশি এখন থেকে এলসির দায় বিলম্ব হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাও শাস্তির আওতায় আসবে।
এ বিষয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহীদের চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, বৈশ্বিক মহামারি কোভিডের সময় আমদানি ঋণপত্র বা এলসি দায় পরিশোধে সুবিধা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন বৈশ্বিক মহামারি নেই তারপরও কিছু ব্যাংক দায় পরিশোধে বিলম্ব করছে। এই তালিকায় এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো অন্যতম। এখন প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের মতো মেয়াদোত্তীর্ণ এলসির দায় রয়েছে। যার কারণে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে আমদানি এলসির খরচ। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী ৭ দিনের মধ্যে সব আমদানি দায় পরিশোধ করতে বলেছে।
এমন চিঠি ব্যাংকের এমডিদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত ডলার না থাকলে প্রয়োজনে ডলার কিনে দায় পরিশোধ করতে হবে। নির্ধারিত সময় যদি কোনো ব্যাংক দায় পরিশোধে ব্যর্থ হয় তাহলে এর যথাযথ কারণ জানাতে হবে। এ ছাড়া, এখন থেকে কোনো ঋণপত্র খোলার আগে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই করে খুলতে হবে। যদি দায় পরিশোধে ব্যর্থ হয় তাহলে এলসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকেও শাস্তির আওতায় আনা হবে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) একটি সার্কুলার জারি করে এলসি দায় পরিশোধে বিলম্বকারীদের জন্য বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ।
নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি জানায়, এলসির দায় পরিশোধে বিলম্বের কারণে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। যার ফলে আমদানি ব্যয় চার্জ ও বিভিন্ন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাই এখন থেকে এলসি খোলার আগে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে। যদি কোনো দায় পরিশোধের অর্থ না থাকে তাহলে কোন উৎস থেকে অর্থায়ন হবে তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনোভাবেই মেয়াদোত্তীর্ণ এলসি গ্রহণযোগ্য হবে না। সময়মতো পেমেন্ট নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হলে লেনদেনের জন্য দায়ী কর্মকর্তাকে জবাবদিহিতার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দেশের বাজারে আরেক দফা কমল স্বর্ণের দাম
দেশের বাজারে আরেক দফা স্বর্ণের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এবার ভরিতে ২ হাজার ৫১৯ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৬ হাজার ১৮৯ টাকা নির্ধারণ করেছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস। বুধবার (১৩ নভেম্বর) থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য কমেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৩৬ হাজার ১৮৯ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ২৯ হাজার ৯৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১১ হাজার ৪২৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯১ হাজার ৪১১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।
এর আগে, সবশেষ গত ৭ নভেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সে সময় ভরিতে ৩ হাজার ৪৫৩ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৯১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৩ হাজার ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা কার্যকর হয়েছে ৮ নভেম্বর থেকে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাজারে ৪৮ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ২৮ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ২০ বার। আর ২০২৩ সালে দাম সমন্বয় করা হয়েছিল ২৯ বার।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
আকুর দায় পরিশোধের পর ফের কমলো রিজার্ভ
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফের ২০ বিলিয়নের নিচে নেমে এসেছে। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, গত রোববার (১০ নভেম্বর) সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের আকুর বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। তাতে বিপিএম৬ পদ্ধতি (আইএমএফ) অনুসরণ করে রিজার্ভের পরিমাণ ১৮ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে। আর গ্রস রিজার্ভ রয়েছে ২৪ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার।
বড় অঙ্কের আকু পেমেন্ট হওয়ার কারণে রিজার্ভ সাময়িক কমেছে জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, তবে রেমিট্যান্সের ধারা ঊর্ধ্বমুখী ও রফতানি আয় বাড়ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আসায় রিজার্ভ আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসবে।
এর আগে গত সপ্তাহে দীর্ঘদিন পর বিপিএম-৬ হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল। আর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৫৭৩ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৫ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার।
উল্লেখ্য, দেশের রফতানি আয় গত অক্টোবর মাসে ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আর অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
এমআই