অর্থনীতি
এস আলম-বেক্সিমকোসহ ১০ শিল্পগ্রুপে বসছে রিসিভার

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরাদের নজিরবিহীন লুটপাট ও অর্থ পাচারের কারণে দেশ এখন মহাআর্থিক সংকটে। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে পাচারকারী ও ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এসব প্রতিষ্ঠানে বসানো হতে পারে রিসিভার। যাদের মূল কাজ হবে ব্যাংক ঋণের বিপরীতে জামানত এবং তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি খুঁজে বের করা। আর সেই সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করা।
রিসিভার নিয়োগ হওয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে এস আলম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান, সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা, জেমকন, নাবিল, ওরিয়নসহ অন্য আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় মেটাতে পরে সম্পদ ক্রোক করে বিক্রি করে দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান অর্থ পাচার করেছে, ওই অর্থ ফেরাতে বিদেশি পরামর্শক ও প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। যারা সংশ্লিষ্ট দেশে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সম্পদ নির্ণয় ও দেশের ফেরানোর বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবেন। একই সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যাংক লুট ও অর্থ পাচারে জড়িত ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে রিসিভার নিয়োগ ও ক্রোক করে নিলামে উঠানো হবে। বিএফআইইউ ও দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে এরই মধ্যে সমন্বিতভাবে কাজ করছে বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ; এ লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্স, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি, দুদক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি দেশে অর্থ পাচারের প্রমাণও মিলেছে। সেসব তথ্য বিশ্লেষণ করার পর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে পরামর্শক ও প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। এরপর যারা দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের পাচার করা সম্পদ নির্ণয় করে দেশের ফেরানোর বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যে এ ধরনের পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল আন্টিকরাপশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (আইএসিসিসি)। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিদল চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে সফর করবেন। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, বিএফআইইউ, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে নির্ধারণ হতে পারে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের কী বিষয়ে কাজ করবেন।
এদিকে, পাচার হওয়া অর্থ ফেরানো, ব্যাংক থেকে লুটের প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে এস আলম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান, সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা গ্রুপসহ অগ্রাধিকারভিত্তিতে ১০টি গ্রুপের বিরুদ্ধে কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সাইফুজ্জামানের দেশে-বিদেশে থাকা সব সম্পদ বাজেয়াপ্তের জন্য উচ্চ আদালত থেকে অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এস আলমের দেশে-বিদেশে থাকা সব সম্পদ বাজেয়াপ্তের আদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হচ্ছে। এভাবে ওই ১০টি গ্রুপের সম্পদ বাজেয়াপ্তের আদেশ চাওয়া হবে। উচ্চ আদালত থেকে আদেশ পাওয়ার পর সুনির্দিষ্ট দেশগুলো থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হবে। ওই ফার্মের কাছে স্থানীয় আদালতের আদেশ পাঠানো হবে। এরপর তারা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাচারকৃত সম্পদ নির্ণয় করে সংশ্লিষ্ট দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
অর্থ পাচার ও ফেরানোর সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর একাধিক কর্মকর্তা জানান, অর্থ পাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আপসহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রথমত পাচারের সঠিক তথ্য উদ্ধার, পরিমাণ নির্ণয় ও পরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দিকে এগোনো হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যদি কোনো প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে পাচারের তথ্য প্রমাণিত হয় তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু তাদের ব্যবসায় ক্ষত সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না। অতীতে বাংলাদেশে অনেক ব্যবসার মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে, ভবিষ্যতেও হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।
তারা আরও বলেন, প্রতিদিন কিছু পরিচিত সাবেক এমপি-মন্ত্রী বা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রশাবশালী কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার খবর মিডিয়ায় আসে। কিন্তু এটা একটি আংশিক চিত্র। প্রতিদিন শতাধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ করছে বিএফআইইউ। এখন তাদের প্রধান কাজ লেনদেন পদচিহ্ন দেখে পাচার শনাক্ত করা। পাশাপাশি পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা নেওয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, বিএফআইইউ এরই মধ্যে বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। তারা সেসব অ্যাকাউন্ট ও তাদের মালিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে যদি কোনো সমস্যা পান তাহলে অন্য সংস্থাগুলোর কাছে হস্তান্তর করবেন। এরপর আইনের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর কেউ যদি অর্থ পাচার করে থাকে সেগুলো নির্ণয়ের পর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইন মেনে পাচারের অর্থ ফেরাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে আদালত যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ দেয় তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এরই মধ্যে বেক্সিমকোতে রিসিভার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে, তাদের সম্পদ দেশে ফেরত আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। যেহেতু আমাদের দেশ থেকে পাচারের টাকা ফেরত নিয়ে যাওয়ার উদাহরণ আছে সুতরাং আমরা পারব না কেন? এগমন্টের দেশগুলো, যাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি আছে, নতুন চুক্তি সম্পাদন করে ও ইন্টারপোলের সাহায্যে এসব সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তাদের হাত ধরে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরে আসুক, সে বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যাশা রাখি।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এখানেও সন্দেহ আছে। বলা হয়, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি। তাই প্রকৃত তথ্য বের করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুসারে, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশ থেকে অন্তত ১৪ হাজার ৯২০ কোটি বা ১৪৯.২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টাকা পাচারের অন্যতম কারণ হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও এটিই বাধা ছিল। এর সঙ্গে দুদকসহ অন্য সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতাও দায়ী। তবে পাচারের টাকা ফেরানোর এখনই উপযুক্ত সময়।
পাচারের টাকা ফেরাতে প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের সময় পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সহায়তা চেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থসম্পদ সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন দেশে চিঠি দেওয়া শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিবৃতি দিয়ে হাসিনা সরকারের অন্তত ১ লাখ কোটি টাকা ফিরিয়ে আনবেন বলে জানিয়েছেন।
সিআইডি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), কাস্টমস, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিএসইসি ও দুদক অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। বিদ্যমান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের মধ্যে দুদক শুধু ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’র মাধ্যমে অপরাধলব্ধ অর্থের মানি লন্ডারিংয়ের অনুসন্ধান ও তদন্ত করছে। বাকি ২৬টি সম্পৃক্ত অপরাধের তদন্তভার সিআইডি, এনবিআরসহ অন্য সংস্থাগুলোর কাছে ন্যস্ত। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এরা একযোগে কাজ করলেই পাচার কমে যাবে।
টাকা পাচারের জনপ্রিয় গন্তব্য: তথ্য-উপাত্ত বলছে, একসময় বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ করস্বর্গ খ্যাত কিছু দ্বীপরাষ্ট্র। তবে গত কয়েক বছরে অর্থ পাচারের গন্তব্য বদলে গেছে। বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো অর্থ পাচারের নিরাপদ গন্তব্য হয়ে উঠছে।
এদিকে দেশ থেকে অর্থ পাচারকারীদের পাকড়াও করার সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের একদল প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসবেন। বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ৬০ জন প্রতিনিধি প্রাথমিকভাবে ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেবেন।

অর্থনীতি
অর্থনীতিবিদরা সরকারের ভালো কাজ দেখেন না: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থনীতিবিদরা শুধু সরকারের ভুলগুলোই দেখেন, ভালো কাজ দেখেন না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, অন্তর দিয়ে দেখলে ভুলের পাশাপাশি ভালো কাজও দেখতে পারবেন।
সোমবার (০৪ আগস্ট) রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আয়কর, মূসক, ও কাস্টমস বিষয়ে নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এনবিআরের ভেতরে সেবার মান বাড়াতে হবে। টেবিলে ভালো করে সাজিয়ে রেখে ভেতরে সারশূন্য হলে ভুক্তভোগীরা খারাপ সম্পর্কে বুঝতে পারবেন। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও মনোনিবেশ করতে হবে।
স্বচ্ছতা বাড়াতে তথ্যপ্রবাহে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বাজেটে নেওয়া উদ্যোগগুলো গণমাধ্যমের সঙ্গে শেয়ারের মতো কাজ করছে এনবিআর। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ওয়েবসাইটে তথ্য দেওয়ার মতো আরও যেসব কার্যক্রম আছে, সেগুলো চালাতে হবে। এতে যারা সেবা নেবেন, তাদের সুবিধা হবে, আবার যারা সেবা দিচ্ছেন তাদেরও সহজ হবে।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি দৌলত আক্তার মালা বলেন, বাজেটের পর সংবাদ সম্মেলন করে বাজেট সম্পর্কে জানানো হয়। তবে মূসক, আয়কর ও কাস্টমসের মতো অনেক জটিল বিষয় থাকে, যা আমরাও বুঝি না। ফলে অনেক তথ্য আমরা পাঠককে জানাতে পারি না। বাজেটের পর এনবিআর সেমিনারের মাধ্যমে জানানোর ব্যবস্থা করলে বাজেট সম্পর্কে দেশের মানুষকে জানানোর কাজটি সহজ হবে।
শুল্কবিষয়ক প্রবন্ধে প্রথম সচিব রইস উদ্দিন বলেন, আমদানির ক্ষেত্র, ভুল ঘোষণার শাস্তি হিসাবে আগে ২০০ থেকে ৪০০ শতাংশ জরিমানা ছিল, চলতি অর্থবছরের বাজেট তা কমিয়ে শতভাগ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ শতাংশ করা হয়েছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
অর্থনীতি
তৃতীয় প্রান্তিকে ভিসার আয় বেড়েছে ১০.২ বিলিয়ন ডলার

বৈশ্বিক ডিজিটাল পেমেন্ট জায়ান্ট ভিসা চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে তাদের আর্থিক প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করেছে। ২০২৫ এর ৩০ জুন পর্যন্ত তাদের নেট রেভিনিউ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। বিশ্বজুড়ে ভোক্তা ব্যয়ের স্থিতিশীল ধারা, প্রসেসড ট্রানজেকশন বৃদ্ধি এবং ক্রস-বর্ডার লেনদেন মূলত এই প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
ভিসা’র তথ্য মতে, এই তিন মাসে তাদের মোট পেমেন্ট ভলিউম ধ্রুব-মুদ্রার ভিত্তিতে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মার্চে শেষ হওয়া আগের প্রান্তিকের তুলনায় অপরিবর্তিত। এ সময় ভিসা মোট ৬৫.৪ বিলিয়ন ট্রানজেকশন প্রসেস করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। আন্তর্জাতিক লেনদেনে আরও ইতিবাচক চিত্র দেখা গেছে; ইউরোপের অভ্যন্তরীণ লেনদেন বাদ দিলে ক্রস-বর্ডার ভলিউম বেড়েছে ১১ শতাংশ এবং সামগ্রিকভাবে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বৈশ্বিক ভ্রমণ ও বাণিজ্যের সার্বিক বৃদ্ধিকে ইঙ্গিত করে।
এ প্রসঙ্গে ভিসা’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রায়ান ম্যাকইনার্নি বলেন, “এই প্রান্তিকে আমাদের নেট রেভিনিউ ১৪ শতাংশ, জিএএপি ইপিএস ১২ শতাংশ এবং নন- জিএএপি ইপিএস ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রান্তিকজুড়ে আমরা এ ধারায় ইতিবাচক চিত্র লক্ষ করেছি। যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তারা প্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল উভয় ধরনের খরচেই সক্রিয় রয়েছে। আমরা এআই ও স্টেবলকয়েন-এর মতো নতুন প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রগুলোয় নতুনত্ব আনতে মনোযোগ বাড়াচ্ছি, যা আমাদের দীর্ঘমেয়াদে আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবে বলে আমি আশাবাদী।”
রেভিনিউ রিসোর্স বিশ্লেষণ বলছে, সেবা খাত থেকে আয় ৪.৩ বিলিয়ন ডলার, যা বছরে ৯ শতাংশ বৃদ্ধি এবং ডেটা প্রসেসিং রেভিনিউ ১৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫.২ বিলিয়ন ডলারে। আন্তর্জাতিক লেনদেনের আয় দাঁড়িয়েছে ৩.৬ বিলিয়ন ডলার (১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি) এবং অন্যান্য আয় ৩২ শতাংশ বেড়ে ১.০ বিলিয়নে পৌঁছেছে। এছাড়া, মোট আয় থেকে ক্লায়েন্ট ইন্সেনটিভ বাদ দেওয়ার পর তা এ প্রান্তিকে দাঁড়িয়েছে ৪.০ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি।
জিএএপি অনুযায়ী পরিচালন ব্যয় বছরে ৩৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.০ বিলিয়ন ডলারে, যার মূলে রয়েছে লিটিগেশন প্রভিশন ও কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি। এসব বাদ দিয়ে নন-জিএএপি ব্যয় বেড়েছে ১৩ শতাংশ। জিএএপি ভিত্তিক নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৫.৩ বিলিয়ন ডলার বা প্রতি শেয়ারে ২.৬৯ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ৮ শতাংশ ও ১২ শতাংশ বেশি। বিশেষ খরচ বাদ দিয়ে ভিসার নিট মুনাফা ৫.৮ বিলিয়ন ডলার বা প্রতি শেয়ারে ২.৯৮ ডলার হয়েছে, যা যথাক্রমে ১৯ শতাংশ ও ২৩ শতাংশ বেশি।
প্রান্তিক শেষে তাদের হাতে নগদ অর্থ ও বিনিয়োগযোগ্য সিকিউরিটিজ রয়েছে ২০.৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। ভিসা কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক, প্রযুক্তি-নির্ভর উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল অর্থনীতিতে নেতৃত্ব অব্যাহত রাখতে তারা কাজ করে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য টেকসই মুনাফা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
অর্থনীতি
আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ও কর কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনলো সরকার

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ও কর কাঠামোয় বড় পরিবর্তন এনেছে সরকার। শুল্কনীতি ও কাস্টমস ব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে বাণিজ্য সহজীকরণ, রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা আনা, এবং দেশীয় শিল্পকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে নেওয়া লক্ষ্যে এ পবির্তন আনা হয়েছে। এই লক্ষ্যে কর ছাড় ও রেয়াতি সুবিধা যৌক্তিকীকরণ, দীর্ঘমেয়াদি অব্যাহতি হ্রাস এবং ‘অ্যান্টি-এক্সপোর্ট বাইয়াস’ কমানোর দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) আয়োজিত এক সেমিনারে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘিরে আমদানি-রপ্তানি শুল্ক ও আয়কর খাতে গৃহীত বিভিন্ন সংস্কার ও নীতিগত পরিবর্তন তুলে ধরা হয়। এনবিআরের মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে ইআরএফ সদস্যদের সামনে পৃথক তিনটি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে কাস্টমস, ভ্যাট এবং আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট তথ্য উপস্থাপন করেন। প্রেজেন্টেশনগুলোতে বিশেষভাবে আলোচনায় আসে নতুন শুল্ক কাঠামো, কর রেয়াত ও ছাড় সীমা, এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী প্রস্তুতি, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে গৃহীত উদ্যোগ এবং ট্যাক্স এক্সপেনডিচার যৌক্তিকীকরণ সংক্রান্ত দিক-নির্দেশনা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে আছেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি দৌলত আকতার মালা। সেমিনারটি সভাপতিত্ব করছেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
পেট্রোলিয়াম পণ্যে শুল্ক হ্রাস
চলতি অর্থবছরের আমদানি শুল্ক কাঠামোতে নতুন দুটি স্তর যোগ করা হয়েছে। সেগুলো হলো, ক্রুড পেট্রোলিয়ামের জন্য ৩ শতাংশ এবং পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য ৬ শতাংশ। আগে এসব পণ্যে শুল্কহার ছিল ৫ শাতংশ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত।
ক্রুড অয়েলে শুল্কহার ৫ শাতংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। মোটর স্পিরিট, ডিজেল, কেরোসিন, জেট ফুয়েল ১০ শাতংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৬ শতাংশ।
রফতানি সহায়ক পরিবর্তন
১০৭টি পণ্যের ওপর কাস্টমস ডিউটি পুরোপুরি প্রত্যাহার, ৬০টি পণ্যের কাস্টমস ডিউটি হ্রাস এবং ১৯টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ বাতিল এবং ৪৩১টি পণ্যের এসডি হ্রাস করা হয়েছে।
গার্মেন্টস, ফেব্রিকস ও ফুড পণ্যে এসডি হ্রাস
গার্মেন্টস পণ্যে এসডি ৪৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ; ফেব্রিকস ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ; পাস্তা, সিরিয়ালজাত খাবার ৩০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ; মাইক্রোবাস (১০-১৫ আসন) ২০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
কিছু পণ্যে এসডি বা ডিসি বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেমন- গ্রানাইট বা মার্বেল ব্লকে এসডি ২০ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। হেলিকপ্টার, মোটর ও এলইডি পার্টস, মিথানল ইত্যাদিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
লৌহ ও ইস্পাত পণ্যে পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্টিল স্ক্র্যাপ, স্পঞ্জ আয়রন, পিগ আয়রনের কাস্টমস ডিউটি সম্পূর্ণ তুলে দিয়ে ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিপ স্ক্র্যাপের ক্ষেত্রেও সিডি তুলে দিয়ে ভ্যাট ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং এআইটি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ন্যূনতম মূল্য ব্যবস্থা বাতিল ও যৌক্তিকীকরণ
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) অনুযায়ী ১৩টি হেডিংয়ের পণ্যের জন্য আরোপিত ন্যূনতম মূল্য বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পাঁচটি হেডিংয়ের ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে; বিশেষ করে চকোলেট, কসমেটিকস, লিপস্টিক, ফেসক্রিম, ওভেন ইত্যাদি পণ্যে।
কাস্টমস আইন সংশোধন
কাস্টমস আইন ২০২৩-এ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন-ডি মিনিমিস সীমা ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা; বিলম্বে শুল্ক পরিশোধে বার্ষিক ১০ শতাংশ সুদের পরিবর্তে মাসিক ১ শতাংশ সুদ; মিথ্যা ঘোষণায় শাস্তির সীমা নির্ধারণে ৪ হাজার টাকার বেশি কর পরিহার হলে তবেই নোটিশ; কাস্টমস কর্মকর্তার দায়িত্ব বণ্টনে কমিশনারের ক্ষমতা বৃদ্ধি; কার্গো ঘোষণায় জরিমানার ন্যূনতম সীমা বিলোপ।
রেয়াতি সুবিধা ও নতুন প্রজ্ঞাপন
কৃষি ও খাদ্য খাতে কোল্ড স্টোরেজ যন্ত্রপাতি আমদানিতে মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক; কম্বাইন হারভেস্টার তৈরির যন্ত্রাংশে রেয়াতি সুবিধা; নিউট্রালাইজড সয়াবিন অয়েল আমদানিতে সিডি প্রত্যাহার; গবাদিপশুর খাদ্য উপাদান ক্যালসিড প্রোম্যাক্স তৈরির কাঁচামালে সম্পূর্ণ শুল্ক ছাড়।
মূলধনি যন্ত্রপাতি
নতুন প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ সীমিত রেখে বাকি শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে।
ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্বাস্থ্য খাত
ক্যানসার প্রতিরোধী ও এপিআই পণ্যের ৩৬টি কেমিক্যালে শুল্ক, ভ্যাট ও রেগুলেটরি ডিউটি মওকুফ করা হয়েছে। ৫০ শয্যার বেশি হাসপাতালের যন্ত্রপাতিতে মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক রাখা হয়।
অন্যান্য খাত
ম্যানমেড ফাইবার, ই-বাইক ও লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদন সরঞ্জামে রেয়াত; নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়। অ্যামিউজমেন্ট পার্ক সরঞ্জামে সিডি মাত্র ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
এইচ কোড বাতিল
১০৭টি ব্যবহারকারীভিত্তিক এইচএস কোড বাতিল করা হয়েছে। ফলে একই পণ্যে ভিন্ন কোডের অসামঞ্জস্যতা দূর হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য এসেছে।
ব্যক্তিগত যাত্রী ব্যাগেজ বিধিমালা সংশোধন
সাধারণ যাত্রীরা ৬৫ কেজি ব্যাগেজ, দুটি ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও নির্দিষ্ট ব্যক্তিগত সামগ্রী শুল্কমুক্ত আনতে পারবেন। বিএমইটি (BMET) কার্ডধারীরা বছরে দুটি নতুন মোবাইল ফোন আনতে পারবেন। ঘোষণা দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ তোলা স্বর্ণের বার এবং ২০ তোলা রৌপ্যবার শুল্ক পরিশোধ করে আনা যাবে।
উল্লেখ্য, এই বাজেটে শুল্কনীতি ও কাস্টমস কাঠামোয় যে সংস্কার আনা হয়েছে, তা শিল্পায়ন, রফতানি বহুমুখীকরণ এবং রাজস্ব আদায়কে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই ভিত্তি দেবে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, শুল্ক হ্রাসের প্রভাবে রাজস্ব ঘাটতি ও অভ্যন্তরীণ শিল্পে প্রতিযোগিতা নিয়ে আরও সতর্ক নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে।
এসএম
অর্থনীতি
১০ লাখ টাকার বেশি আমানত ও সঞ্চয়পত্রে রিটার্ন বাধ্যতামূলক

এখন থেকে ১০ লাখ টাকার বেশি মেয়াদি আমানত বা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ গ্রহণের আগে বাধ্যতামূলকভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। সরকারের গেজেটের ভিত্তিতে তফসিলি সব ব্যাংককে এই নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে সরকার গেজেট জারি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনে সব ব্যাংককে এই নির্দেশনা পালনের জন্য চিঠি দিয়েছে। গেজেটে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি যদি ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের মেয়াদি আমানত খুলতে চান বা তা চালু রাখতে চান, তাহলে তাঁকে সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের আয়কর রিটার্নের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। একইভাবে ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য হবে।
এ ছাড়া বড় অঙ্কের সঞ্চয়পত্র কেনা, কোনো কোম্পানির পরিচালক বা স্পনসর শেয়ারহোল্ডার হওয়া, আমদানি-রপ্তানি নিবন্ধন সনদ নবায়ন, ট্রেড লাইসেন্স বা পেশাজীবী লাইসেন্স নবায়ন, জমি বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সংযোগপ্রাপ্তিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া ড্রাগ লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, অগ্নিনির্বাপণ ছাড়পত্র, ট্রলার ও নৌযানের জরিপ সার্টিফিকেট এমনকি স্কুলে শিশুর ভর্তি কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স গ্রহণের মতো ক্ষেত্রেও রিটার্ন দাখিলের প্রয়োজন হবে। বলা হয়েছে, দ্বৈত কর পরিহার–সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির আলোকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে দেশীয় আইন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।
সম্প্রতি এ–বিষয়ক একটি গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। সে অনুযায়ী, এসব আর্থিক লেনদেন ও কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। তা না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষ সেবা দিতে বাধ্য থাকবে না। এসব সেবা নিতে গিয়ে কেউ যদি রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র না দেখান, তাহলে সেবা দেবেন না সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যদি কোনো কারণে সেবা দেন, তাহলে এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, এতে সরকারের রাজস্ব আয়ে গতি বাড়লেও ব্যাংক আমানত ও সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, ১০ লাখ টাকার বেশি জমা করলেই রিটার্ন দিতে হবে।
অর্থনীতি
জুলাইয়ে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি যে ৮ ব্যাংকে

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের পুরো সময়ে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার (প্রায় ২.৪৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাস করা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) টাকা।
তবে এসময়ে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি পুলিশের ব্যাংকসহ (কমিউনিটি ব্যাংক) আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের পুরো মাসে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ে (২০২৪ সালের জুলাই মাস) এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ে তুলনায় ৫৬ কোটি ৪১ লাখ ডলার বা প্রায় ৬ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা বেশি এসেছে।
এসময়ে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫৪ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ২২ কোটি ৯২ লাখ ২০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৬৮ কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে এক কোটি ১৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।
তবে আলোচিত সময়ে সময়ে আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব; বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক; বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।