অর্থনীতি
এস আলম-বেক্সিমকোসহ ১০ শিল্পগ্রুপে বসছে রিসিভার

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরাদের নজিরবিহীন লুটপাট ও অর্থ পাচারের কারণে দেশ এখন মহাআর্থিক সংকটে। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে পাচারকারী ও ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এসব প্রতিষ্ঠানে বসানো হতে পারে রিসিভার। যাদের মূল কাজ হবে ব্যাংক ঋণের বিপরীতে জামানত এবং তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি খুঁজে বের করা। আর সেই সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করা।
রিসিভার নিয়োগ হওয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে এস আলম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান, সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা, জেমকন, নাবিল, ওরিয়নসহ অন্য আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় মেটাতে পরে সম্পদ ক্রোক করে বিক্রি করে দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান অর্থ পাচার করেছে, ওই অর্থ ফেরাতে বিদেশি পরামর্শক ও প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। যারা সংশ্লিষ্ট দেশে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সম্পদ নির্ণয় ও দেশের ফেরানোর বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবেন। একই সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যাংক লুট ও অর্থ পাচারে জড়িত ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে রিসিভার নিয়োগ ও ক্রোক করে নিলামে উঠানো হবে। বিএফআইইউ ও দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে এরই মধ্যে সমন্বিতভাবে কাজ করছে বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ; এ লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্স, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি, দুদক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি দেশে অর্থ পাচারের প্রমাণও মিলেছে। সেসব তথ্য বিশ্লেষণ করার পর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে পরামর্শক ও প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। এরপর যারা দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের পাচার করা সম্পদ নির্ণয় করে দেশের ফেরানোর বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যে এ ধরনের পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল আন্টিকরাপশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (আইএসিসিসি)। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিদল চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে সফর করবেন। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, বিএফআইইউ, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে নির্ধারণ হতে পারে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের কী বিষয়ে কাজ করবেন।
এদিকে, পাচার হওয়া অর্থ ফেরানো, ব্যাংক থেকে লুটের প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে এস আলম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান, সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা গ্রুপসহ অগ্রাধিকারভিত্তিতে ১০টি গ্রুপের বিরুদ্ধে কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সাইফুজ্জামানের দেশে-বিদেশে থাকা সব সম্পদ বাজেয়াপ্তের জন্য উচ্চ আদালত থেকে অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এস আলমের দেশে-বিদেশে থাকা সব সম্পদ বাজেয়াপ্তের আদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হচ্ছে। এভাবে ওই ১০টি গ্রুপের সম্পদ বাজেয়াপ্তের আদেশ চাওয়া হবে। উচ্চ আদালত থেকে আদেশ পাওয়ার পর সুনির্দিষ্ট দেশগুলো থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হবে। ওই ফার্মের কাছে স্থানীয় আদালতের আদেশ পাঠানো হবে। এরপর তারা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাচারকৃত সম্পদ নির্ণয় করে সংশ্লিষ্ট দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
অর্থ পাচার ও ফেরানোর সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর একাধিক কর্মকর্তা জানান, অর্থ পাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আপসহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রথমত পাচারের সঠিক তথ্য উদ্ধার, পরিমাণ নির্ণয় ও পরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দিকে এগোনো হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যদি কোনো প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে পাচারের তথ্য প্রমাণিত হয় তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু তাদের ব্যবসায় ক্ষত সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না। অতীতে বাংলাদেশে অনেক ব্যবসার মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে, ভবিষ্যতেও হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।
তারা আরও বলেন, প্রতিদিন কিছু পরিচিত সাবেক এমপি-মন্ত্রী বা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রশাবশালী কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার খবর মিডিয়ায় আসে। কিন্তু এটা একটি আংশিক চিত্র। প্রতিদিন শতাধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ করছে বিএফআইইউ। এখন তাদের প্রধান কাজ লেনদেন পদচিহ্ন দেখে পাচার শনাক্ত করা। পাশাপাশি পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা নেওয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, বিএফআইইউ এরই মধ্যে বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। তারা সেসব অ্যাকাউন্ট ও তাদের মালিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে যদি কোনো সমস্যা পান তাহলে অন্য সংস্থাগুলোর কাছে হস্তান্তর করবেন। এরপর আইনের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর কেউ যদি অর্থ পাচার করে থাকে সেগুলো নির্ণয়ের পর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইন মেনে পাচারের অর্থ ফেরাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে আদালত যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ দেয় তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এরই মধ্যে বেক্সিমকোতে রিসিভার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে, তাদের সম্পদ দেশে ফেরত আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। যেহেতু আমাদের দেশ থেকে পাচারের টাকা ফেরত নিয়ে যাওয়ার উদাহরণ আছে সুতরাং আমরা পারব না কেন? এগমন্টের দেশগুলো, যাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি আছে, নতুন চুক্তি সম্পাদন করে ও ইন্টারপোলের সাহায্যে এসব সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তাদের হাত ধরে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরে আসুক, সে বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যাশা রাখি।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এখানেও সন্দেহ আছে। বলা হয়, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি। তাই প্রকৃত তথ্য বের করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুসারে, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশ থেকে অন্তত ১৪ হাজার ৯২০ কোটি বা ১৪৯.২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টাকা পাচারের অন্যতম কারণ হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও এটিই বাধা ছিল। এর সঙ্গে দুদকসহ অন্য সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতাও দায়ী। তবে পাচারের টাকা ফেরানোর এখনই উপযুক্ত সময়।
পাচারের টাকা ফেরাতে প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের সময় পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সহায়তা চেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থসম্পদ সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন দেশে চিঠি দেওয়া শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিবৃতি দিয়ে হাসিনা সরকারের অন্তত ১ লাখ কোটি টাকা ফিরিয়ে আনবেন বলে জানিয়েছেন।
সিআইডি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), কাস্টমস, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিএসইসি ও দুদক অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। বিদ্যমান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের মধ্যে দুদক শুধু ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’র মাধ্যমে অপরাধলব্ধ অর্থের মানি লন্ডারিংয়ের অনুসন্ধান ও তদন্ত করছে। বাকি ২৬টি সম্পৃক্ত অপরাধের তদন্তভার সিআইডি, এনবিআরসহ অন্য সংস্থাগুলোর কাছে ন্যস্ত। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এরা একযোগে কাজ করলেই পাচার কমে যাবে।
টাকা পাচারের জনপ্রিয় গন্তব্য: তথ্য-উপাত্ত বলছে, একসময় বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ করস্বর্গ খ্যাত কিছু দ্বীপরাষ্ট্র। তবে গত কয়েক বছরে অর্থ পাচারের গন্তব্য বদলে গেছে। বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো অর্থ পাচারের নিরাপদ গন্তব্য হয়ে উঠছে।
এদিকে দেশ থেকে অর্থ পাচারকারীদের পাকড়াও করার সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের একদল প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসবেন। বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ৬০ জন প্রতিনিধি প্রাথমিকভাবে ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেবেন।

অর্থনীতি
ব্যাংক খাতে কমেছে কোটিপতি গ্রাহকের সংখ্যা

দেশের ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা গ্রাহকের সংখ্যা কমে গেছে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা গ্রাহকের সংখ্যা ছিল এক লাখ ২২ হাজার ৮১টি। চলতি বছরের মার্চ শেষে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৩৬২টিতে। অর্থাৎ, তিন মাসে ৭১৯টি হিসাব কমেছে।
কোটি টাকার গ্রাহকের সংখ্যা কমার কারণ হিসেবে ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ ধরনের পরিবর্তনের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। বিশেষ করে, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে কিছু বিত্তশালী ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সাবেক এমপি, মন্ত্রী এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবও অন্তর্ভুক্ত। এ কারণে অনেক বড় আমানতকারী গ্রাহক তাদের অর্থ সরিয়ে নিচ্ছেন।
এ ছাড়া বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠানও তাদের ব্যাংক হিসাব কমিয়ে দিচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে প্রতিষ্ঠানের হিসাব সংখ্যা বেড়ে গেলেও এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একাধিক অ্যাকাউন্ট থাকার কারণে একক হিসাবের সংখ্যা কমতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাব আছে। পাশাপাশি অনেক সরকারি সংস্থারও কোটি টাকার হিসাব রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, কোটি টাকার হিসাবধারী গ্রাহকের সংখ্যা কমলেও এসব অ্যাকাউন্টে জমা টাকার পরিমাণ বেড়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এসব অ্যাকাউন্টে জমা ছিল ৭ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের মার্চ শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া আলোচিত সময় ব্যাংক খাতে মোট হিসাবের সংখ্যা ও জমার পরিমাণ দুটোই বেড়েছে।
ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ১৬ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩২টি। এসব হিসাবে মোট আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ১৬ কোটি ৫৭ লাখ ৬ হাজার ৮২১টি। এসব হিসাবে মোট আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা।
গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট হিসাব ছিল ১৬ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩২টি। এসব হিসাবে মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি।
২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটি টাকা আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর বেড়ে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯৭৬টিতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই হিসাবের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় এক লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টিতে। গত বছরের জুনে এমন হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টিতে, সেপ্টেম্বরে এক লাখ ১৭ হাজার ১২৭টিতে এবং ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ২২ হাজার ৮১টিতে।
অর্থনীতি
প্রবাসী আয়ের শীর্ষে ঢাকা, পিছিয়ে লালমনিরহাট

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে দুই হাজার ৭৫০ কোটি ৬৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ঢাকা জেলায়, ৯২৬ কোটি ১৩ লাখ ডলার। আর সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে লালমনিরহাটে, মাত্র ২ কোটি ৪১ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ জেলাভিত্তিক প্রবাসী আয়ের তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে বরাবরের মতো ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোয় প্রবাসী আয়ের প্রবাহ সবচেয়ে বেশি। আর রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম।
বিভাগভিত্তিক তথ্যে দেখা যায়, গত জুলাই-মে সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা বিভাগে, যা মোট রেমিট্যান্সের ৪৯ শতাংশ। এরপর রয়েছে চট্টগ্রামে ২৭ শতাংশ, সিলেটে ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ, খুলনায় ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ ও বরিশালে প্রায় ৩ শতাংশ। আর মোট রেমিট্যান্সের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে দুই বিভাগে– রংপুরে ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে দেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ঢাকা জেলায়। এরপর রয়েছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও নোয়াখালী জেলার অবস্থান। জুলাই-মে সময়ে ঢাকা জেলায় ২১৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার, চট্টগ্রাম জেলায় ২২৫ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এ ছাড়া কুমিল্লায় ১৪৪ কোটি, সিলেটে ১২৫ কোটি ও নোয়াখালী জেলায় ৮৩ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে।
কম রেমিট্যান্সের আসছে যেসব জেলায়
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে প্রবাসী আয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে লালমনিরহাট জেলা। এই জেলায় আলোচিত সময়ে প্রবাসী আয় এসেছে মাত্র দুই কোটি ৪১ লাখ ডলার। প্রবাসী আয় কম আসার তালিকায় অপর চারটি জেলা হলো– রাঙামাটি, বান্দরবান, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও। রাঙামাটিতে দুই কোটি ৪৬ লাখ, বান্দরবানে দুই কোটি ৪৮ লাখ ডলার, পঞ্চগড়ে ৩ কোটি ও ঠাকুরগাঁওয়ে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে এবং আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ডলার এবং মে মাসে ২৯৭ কোটি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। অর্থাৎ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর টানা ৮ মাসে দুই বিলিয়ন এবং মার্চে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে।
অর্থনীতি
সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না চামড়া, হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

রাজধানীতে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না কাঁচা চামড়া। প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকায় কোরবানির গরুর কাঁচা চামড়া মানভেদে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ ঢাকায় সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এ ছাড়া বরাবরের মতো ছাগলের চামড়ায় আগ্রহ নেই ব্যাপারিদের।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সায়েন্সল্যাব ও পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায় ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, এ বছর বেশির ভাগ গরুর কাঁচা চামড়া ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। ছোট চামড়ার দাম ৬০০ টাকা পর্যন্ত উঠছে। গত বছরও গরুর কাঁচা চামড়ার এ রকম দাম ছিল। এ ছাড়া এবার ছাগলের চামড়া প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা, যা গতবারও একই রকম ছিল।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য প্রস্তুত ছিল প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার পশু। চলতি বছর কোরবানির ঈদের মৌসুমে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ট্যানারিমালিকেরা।
গত ২৬ মে কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০-৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫-৬০ টাকা। ঢাকার বাইরের গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। এ ছাড়া ঢাকায় সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২২ থেকে ২৭ টাকা ও বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তার আড়তগুলো কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম বড় জায়গা। আজ বিকেল চারটার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রিকশা, ভ্যান ও ট্রাকে করে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসার কর্মকর্তারা চামড়া নিয়ে আসছেন। আড়তদারেরা দরদাম করে চামড়া কিনছেন। এ ছাড়া পাইকারি ব্যবসায়ীরা সড়কের ওপর চেয়ার নিয়ে বসে চামড়া কিনছেন।
একাধিক আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, একেকটি গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় কিনছেন। মাঝারি আকারের গরু কোরবানি হয় বেশি। সেই চামড়া তাঁরা কিনছেন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।
পোস্তায় শহীদুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে চামড়া কিনছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত শতাধিক চামড়া কিনেছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা না বুঝে বেশি দামে চামড়া কিনে নিয়ে আসেন। তবে বাজার ভালো নয়। তিনি জানান, ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় চামড়া কিনছেন তাঁরা।
চামড়া কেনায় তদারকি করছিলেন সুমন অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী মো. শরীফ। তিনি জানান, প্রতিটি গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় কিনছেন। তাঁর ভাষ্য, একেকটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ পড়ে যাবে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। বাজার মন্দা, সে জন্য গতবারের চেয়ে কিছুটা কমে কিনছেন।
বিকেলে রাজধানীর কলাবাগান এলাকা থেকে গরুর ১৩টি কাঁচা চামড়া বিক্রির জন্য সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় নিয়ে আসেন মৌসুমি ব্যবসায়ী কাউছার আহমেদ। কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে এসব চামড়া তিনি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে কিনে আনেন এবং বিক্রির জন্য দাম হাঁকেন ১ হাজার ২০০ টাকা করে। কিন্তু কোনো আড়তদার বা ট্যানারি প্রতিষ্ঠান ৭৫০ টাকার ওপরে দাম দিতে চায়নি। শেষ পর্যন্ত ৭৫০ টাকা দরেই সবগুলো চামড়া বিক্রি করেন তিনি।
কাউছার আহমেদ বলেন, যে আকারের চামড়া বিক্রির জন্য তিনি নিয়ে এসেছিলেন, সেগুলোর দাম হওয়া উচিত অন্তত ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। কিন্তু একপ্রকার লোকসান করেই চামড়া বিক্রি করতে হলো। সারা দিনের ভ্যান ভাড়া ও একজন সহকারীর মজুরি দিয়ে তাঁর কাছে আর কিছু থাকবে না।
সায়েন্স ল্যাব এলাকাতেই মৌসুমি বিক্রেতাদের কাছ থেকে চামড়া কিনে রাখছিলেন কালাম ব্রাদার্স ট্যানারির পরিচালক সাজেদুল খায়ের। চলতি বছর এই ট্যানারিটির এক দেড় লাখ লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য আছে। পাশাপাশি কোরবানি ঈদের দুই দিনে তারা অন্তত ১০ হাজারের মতো কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করবে।
সাজেদুল খায়ের বলেন, আজকে মৌসুমি বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকার মধ্যে বেশির ভাগ গরুর চামড়া কিনেছেন। তাঁদের হিসাবে, গত বছরের তুলনায় প্রতিটি গরুর চামড়ায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা বাড়তি দাম পাওয়া যাচ্ছে।
খুব বড় আকারের চামড়া দেড় হাজার টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে। যেমন রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় আজ দুপুরে চামড়া কিনছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকাল থেকে তিনি ৬০টির বেশি চামড়া কিনেছেন। ৩২ লাখ টাকায় কেনা দুটি গরুর চামড়া তিনি মোট তিন হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন। অর্থাৎ প্রতিটির দাম পড়েছে দেড় হাজার টাকা।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, এ বছর ছোট গরুর চামড়া বেশি। তবে সার্বিকভাবে চামড়ার সরবরাহ ভালো। তাঁদের হিসাবে, গত বছরের তুলনায় প্রতিটি চামড়ায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দাম রয়েছে। তিনি জানান, চলতি বছর ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো পাঁচ থেকে ছয় লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছে। মূলত কাঁচা চামড়ার দাম তথা বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি কাঁচা চামড়া কিনে থাকে।
অর্থনীতি
ঈদযাত্রার ৬ দিনে যমুনা সেতুতে ১৯ কোটির বেশি টাকা টোল আদায়

ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ১ থেকে ৬ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ছয় দিনে যমুনা সেতু দিয়ে ২ লাখ ৫৫ হাজার ২২০টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১৯ কোটি ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫০ টাকা।
যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, গত রবিবার (১ জুন) যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে ২৭ হাজার ১৭৩টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৫৯ লাখ ২৭ হাজার ৮৫০ টাকা।
এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৩ হাজার ৮৬৮টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ২০০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী ১৩ হাজার ৫টি যানবাহন পারাপার হয়। এর বিপরীত টোল আদায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ২০০ টাকা।
গত সোমবার (২ জুন) যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে ৩০ হাজার ১৬৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৪৫ হাজার ৮৫০ টাকা। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৫ হাজার ৩৯৮টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
অপরদিকে ঢাকাগামী ১৪ হাজার ৭৬৯টি যানবাহন পারাপার হয়। বিপরীত টোল আদায় এক কোটি ৩৮ লাখ ৩২ হাজার ৪০০ টাকা।
গত মঙ্গলবার (৩ জুন) সেতুর ওপর দিয়ে ৩৩ হাজার ৫৬৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৭ হাজার ৬৫৭টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৮২ হাজার ৮৫০ টাকা।
অপর দিকে ঢাকাগামী ১৫ হাজার ৯০৭টি যানবাহন পারাপার হয়। এর বিপরীত টোল আদায় ১ কোটি ৪১ লাখ ৮১ হাজার ৫০ টাকা।
গত বুধবার (৪ জুন) সেতু দিয়ে ৫১ হাজার ৮৪৯টি যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ৩০ হাজার ৮৪৫টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয় ১ কোটি ৮৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩৫০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী ২১ হাজার ৪টি যানবাহন পারাপার হয়। বিপরীত টোল আদায় ১ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৬৫০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) যমুনা সেতু দিয়ে যানবাহন ও টোল আদায়ে নতুন রেকর্ড করে যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ। এদিন সেতু দিয়ে ঈদযাত্রায় ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের ৬৪ হাজার ২৮৩টি যানবাহন পারাপার হওয়ায় এ রেকর্ডের সৃষ্টি হয়। যা যমুনা সেতু চালু হওয়ার সর্বোচ্চ সংখ্যক যানবাহন পারাপার করে নতুন রেকর্ড গড়ল। ছোট-বড় বিপুলসংখ্যক গাড়ি পারাপার হওয়ায় এদিন ৪ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ৯৫০ টাকার টোল আদায় করেছে করেছে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে সেতু চালু হওয়ার পরে একদিনে সর্বোচ্চ টোল আদায় হয়।
গতকাল শুক্রবার (৬ জুন) সেতু দিয়ে ৪৮ হাজার ১৮৪টি যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ৩৩ হাজার ৮৫৪টি যানবাহন পারাপার হয়। টোল আদায় হয় ২ কোটি ৩৩ লাখ ৮০ হাজার ১৫০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী ১৪ হাজার ৩৩০টি যানবাহন পারাপার হয়। বিপরীত টোল আদায় হয় ১ কোটি ৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা।
প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, অতিরিক্ত গাড়ির চাপ ও সেতুর ওপর গাড়ি বিকল হওয়ায় টোল আদায়ে বিঘ্ন ঘটে। যার ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। এইজন্য বেশ কয়েক দফায় টোল আদায় বন্ধ ছিল। ঈদযাত্রায় উভয় পাশেই ৯টি করে বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা দুটি করে বুথ করা হয়। মহাসড়ক এখন স্বাভাবিক আছে। স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন গন্তব্য যাচ্ছে।
অর্থনীতি
এবার ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহ করতে চান ট্যানারিমালিকেরা

চলতি বছর কোরবানির ঈদের মৌসুমে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ট্যানারিমালিকেরা। তাঁরা আশা করছেন, ঠিকভাবে চামড়া ছাড়ানো ও লবণজাত করা হলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।
সাধারণত কোরবানির মৌসুমেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পশু জবাই করা হয়। ফলে চামড়ার পরিমাণও অনেক বেশি হয়। সারা বছর যে পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করা হয়, তার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ আসে এ মৌসুমে।
কোরবানি ঈদের দিন সকাল থেকেই চামড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়। পশু কোরবানির পর বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে চামড়া সংগ্রহ করেন স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসা–এতিমখানার শিক্ষার্থীরা। তাঁরা এসব চামড়া নিয়ে ট্যানারিমালিক বা চামড়া লবণজাতকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এভাবে লবণ দেওয়া চামড়া শেষ পর্যন্ত ট্যানারিতে পৌঁছায়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার পশু।
রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তা এলাকার চামড়ার আড়তগুলো কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম বড় জায়গা। কোরবানির ঈদের দিন সকাল থেকেই চামড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেন পোস্তার আড়তদারেরা। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন তাঁরা। এরপর তা আড়তে এনে লবণ দেন। ঈদের তৃতীয় দিন পর্যন্ত চলে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের এ কার্যক্রম।
পোস্তা এলাকায় বর্তমানে ৩৫টির মতো কাঁচা চামড়ার আড়ত রয়েছে। পোস্তার পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির আগে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। আড়তগুলো ধুয়েমুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন কর্মীরা; আবার আড়তে থাকা পুরোনো চামড়া পাঠিয়ে দিচ্ছেন ট্যানারি ও গোডাউনে। এ ছাড়া নতুন চামড়ায় লবণ দিতে আগেভাগেই অনেকে লবণ কিনে রেখেছেন।
এর বাইরে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগর–সংলগ্ন এলাকায় চামড়া সংগ্রহের প্রায় ১০০টি আড়ত রয়েছে। গত কয়েক বছরে এসব আড়ত গড়ে উঠেছে। পোস্তা এলাকা থেকেও অনেকে সেখানে গেছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে এটিই এখন চামড়া সংগ্রহের বড় জায়গা। পোস্তার মতো সেখানেও চামড়া সংগ্রহ করা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কোরবানির চামড়া নষ্ট হয়। ট্যানারিমালিকদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) জানিয়েছে, গত বছর কোরবানির ঈদের প্রথম দুই দিনে সংরক্ষণের অভাবে সারা দেশে প্রায় পাঁচ লাখ কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়েছিল।
মূলত ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় চামড়ার দাম একটু কম থাকে। তাই অনেকে বেশি দামের আশায় রাজধানীতে কাঁচা চামড়া নিয়ে আসেন। এতে অনেক সময় চামড়ার গুণগত মান কমে যায় বা নষ্ট হয়। এ জন্য নিকটস্থ এলাকাতেই চামড়া বিক্রি ও লবণজাতের পরামর্শ দেন ব্যবসায়ীরা।