অর্থনীতি
এস আলম-বেক্সিমকোসহ ১০ শিল্পগ্রুপে বসছে রিসিভার

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরাদের নজিরবিহীন লুটপাট ও অর্থ পাচারের কারণে দেশ এখন মহাআর্থিক সংকটে। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে পাচারকারী ও ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এসব প্রতিষ্ঠানে বসানো হতে পারে রিসিভার। যাদের মূল কাজ হবে ব্যাংক ঋণের বিপরীতে জামানত এবং তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি খুঁজে বের করা। আর সেই সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করা।
রিসিভার নিয়োগ হওয়া প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে এস আলম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান, সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা, জেমকন, নাবিল, ওরিয়নসহ অন্য আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় মেটাতে পরে সম্পদ ক্রোক করে বিক্রি করে দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান অর্থ পাচার করেছে, ওই অর্থ ফেরাতে বিদেশি পরামর্শক ও প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। যারা সংশ্লিষ্ট দেশে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সম্পদ নির্ণয় ও দেশের ফেরানোর বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবেন। একই সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যাংক লুট ও অর্থ পাচারে জড়িত ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে রিসিভার নিয়োগ ও ক্রোক করে নিলামে উঠানো হবে। বিএফআইইউ ও দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে এরই মধ্যে সমন্বিতভাবে কাজ করছে বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ; এ লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্স, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি, দুদক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। প্রাথমিকভাবে কয়েকটি দেশে অর্থ পাচারের প্রমাণও মিলেছে। সেসব তথ্য বিশ্লেষণ করার পর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে পরামর্শক ও প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। এরপর যারা দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের পাচার করা সম্পদ নির্ণয় করে দেশের ফেরানোর বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যে এ ধরনের পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল আন্টিকরাপশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (আইএসিসিসি)। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিদল চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে সফর করবেন। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, বিএফআইইউ, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে নির্ধারণ হতে পারে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের কী বিষয়ে কাজ করবেন।
এদিকে, পাচার হওয়া অর্থ ফেরানো, ব্যাংক থেকে লুটের প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে এস আলম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান, সামিট গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা গ্রুপসহ অগ্রাধিকারভিত্তিতে ১০টি গ্রুপের বিরুদ্ধে কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সাইফুজ্জামানের দেশে-বিদেশে থাকা সব সম্পদ বাজেয়াপ্তের জন্য উচ্চ আদালত থেকে অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এস আলমের দেশে-বিদেশে থাকা সব সম্পদ বাজেয়াপ্তের আদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হচ্ছে। এভাবে ওই ১০টি গ্রুপের সম্পদ বাজেয়াপ্তের আদেশ চাওয়া হবে। উচ্চ আদালত থেকে আদেশ পাওয়ার পর সুনির্দিষ্ট দেশগুলো থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হবে। ওই ফার্মের কাছে স্থানীয় আদালতের আদেশ পাঠানো হবে। এরপর তারা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাচারকৃত সম্পদ নির্ণয় করে সংশ্লিষ্ট দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
অর্থ পাচার ও ফেরানোর সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর একাধিক কর্মকর্তা জানান, অর্থ পাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আপসহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রথমত পাচারের সঠিক তথ্য উদ্ধার, পরিমাণ নির্ণয় ও পরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দিকে এগোনো হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যদি কোনো প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে পাচারের তথ্য প্রমাণিত হয় তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। কিন্তু তাদের ব্যবসায় ক্ষত সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না। অতীতে বাংলাদেশে অনেক ব্যবসার মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে, ভবিষ্যতেও হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।
তারা আরও বলেন, প্রতিদিন কিছু পরিচিত সাবেক এমপি-মন্ত্রী বা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রশাবশালী কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার খবর মিডিয়ায় আসে। কিন্তু এটা একটি আংশিক চিত্র। প্রতিদিন শতাধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ করছে বিএফআইইউ। এখন তাদের প্রধান কাজ লেনদেন পদচিহ্ন দেখে পাচার শনাক্ত করা। পাশাপাশি পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা নেওয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, বিএফআইইউ এরই মধ্যে বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। তারা সেসব অ্যাকাউন্ট ও তাদের মালিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে যদি কোনো সমস্যা পান তাহলে অন্য সংস্থাগুলোর কাছে হস্তান্তর করবেন। এরপর আইনের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর কেউ যদি অর্থ পাচার করে থাকে সেগুলো নির্ণয়ের পর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইন মেনে পাচারের অর্থ ফেরাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে আদালত যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ দেয় তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এরই মধ্যে বেক্সিমকোতে রিসিভার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে, তাদের সম্পদ দেশে ফেরত আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। যেহেতু আমাদের দেশ থেকে পাচারের টাকা ফেরত নিয়ে যাওয়ার উদাহরণ আছে সুতরাং আমরা পারব না কেন? এগমন্টের দেশগুলো, যাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি আছে, নতুন চুক্তি সম্পাদন করে ও ইন্টারপোলের সাহায্যে এসব সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তাদের হাত ধরে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরে আসুক, সে বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যাশা রাখি।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এখানেও সন্দেহ আছে। বলা হয়, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি। তাই প্রকৃত তথ্য বের করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুসারে, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশ থেকে অন্তত ১৪ হাজার ৯২০ কোটি বা ১৪৯.২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টাকা পাচারের অন্যতম কারণ হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও এটিই বাধা ছিল। এর সঙ্গে দুদকসহ অন্য সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতাও দায়ী। তবে পাচারের টাকা ফেরানোর এখনই উপযুক্ত সময়।
পাচারের টাকা ফেরাতে প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের সময় পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সহায়তা চেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থসম্পদ সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন দেশে চিঠি দেওয়া শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিবৃতি দিয়ে হাসিনা সরকারের অন্তত ১ লাখ কোটি টাকা ফিরিয়ে আনবেন বলে জানিয়েছেন।
সিআইডি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), কাস্টমস, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিএসইসি ও দুদক অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। বিদ্যমান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের মধ্যে দুদক শুধু ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’র মাধ্যমে অপরাধলব্ধ অর্থের মানি লন্ডারিংয়ের অনুসন্ধান ও তদন্ত করছে। বাকি ২৬টি সম্পৃক্ত অপরাধের তদন্তভার সিআইডি, এনবিআরসহ অন্য সংস্থাগুলোর কাছে ন্যস্ত। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এরা একযোগে কাজ করলেই পাচার কমে যাবে।
টাকা পাচারের জনপ্রিয় গন্তব্য: তথ্য-উপাত্ত বলছে, একসময় বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ করস্বর্গ খ্যাত কিছু দ্বীপরাষ্ট্র। তবে গত কয়েক বছরে অর্থ পাচারের গন্তব্য বদলে গেছে। বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো অর্থ পাচারের নিরাপদ গন্তব্য হয়ে উঠছে।
এদিকে দেশ থেকে অর্থ পাচারকারীদের পাকড়াও করার সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের একদল প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসবেন। বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ৬০ জন প্রতিনিধি প্রাথমিকভাবে ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেবেন।

অর্থনীতি
বাংলাদেশে মানসম্পন্ন গাড়ি উৎপাদনের জন্য চীনা কোম্পানিকে আহ্বান বাণিজ্য উপদেষ্টার

অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বাংলাদেশে মানসম্মত যানবাহন উৎপাদন করার জন্য চীনা কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নিম্নমানের বাণিজ্যিক যানবাহনের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এখন প্রায় মহামারীর রূপ নিয়েছে এবং এতে বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটিতে (আইসিসিবি) আয়োজিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ এক্সিবিশন ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, যদি চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে এসে উচ্চমানের যানবাহন উৎপাদন করে, তবে সড়ক খাতের ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব। একই সাথে তিনি বাংলাদেশের বর্তমান অর্ধ-ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে দ্রুত এক ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার ওপর গুরুত্ব দেন।
শেখ বশিরউদ্দীন চীন-বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ প্রতি বছর চীন থেকে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে, কিন্তু রফতানি হয় তার তুলনায় অনেক কম। তিনি চীনা রাষ্ট্রদূতকে রফতানিতে বৈচিত্র্য আনার জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেশ, যারা ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে’ ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। তিনি জানান, গত এক বছরে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ ২৫৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে এবং ভবিষ্যতে চীন বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সবুর হোসেন নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে চীনা বিনিয়োগের আহ্বান জানান। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ বলেন, একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।
এই দুই দিনের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ ও চীনের ৪০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে ৩২টি চীনের। প্রদর্শনীতে অবকাঠামো, প্রযুক্তি, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতের পণ্য ও সেবা উপস্থাপন করা হয়েছে।
অর্থনীতি
বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৩০০ শতাংশ বেড়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৩০০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ এক্সিবিশন’–এ গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ বশির উদ্দিন বলেন, আমাদের দুর্বলতা খুঁজে বের করতে হবে। অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। উৎপাদন ও প্যাকেজিংয়ে চীনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারলে আমাদের অগ্রসর হওয়ার সুযোগ আছে। তৈরি পোশাকসহ অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে বাংলাদেশ। তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক হলেও সামগ্রিকভাবে এখনো পিছিয়ে।
সড়ক অবকাঠামো ও পরিবহন সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা চেয়েছেন উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, বছরে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিমাণ মানুষ মারা সেটি ভয়াবহ। এক্ষেত্রে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। আমাদের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী চীনের কাছে এ ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেছি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রেসিপ্রোকল ট্যারিফ প্রসঙ্গে তিনি জানান, আগামী রোববার ট্যারিফ ইস্যুতে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। তাদের সঙ্গে ট্যারিফের কাঠামোগত রূপ কীভাবে দেওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে।
চীনা দূতাবাস আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের ৮টি ও চীনের ৩২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। অবকাঠামো, প্রযুক্তি, টেলিকম, স্বাস্থ্য, কৃষি, শক্তি, পরিবহন ও লজিস্টিকসসহ বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করছে।
প্রদর্শনীটি দর্শনার্থীদের জন্য ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।
অর্থনীতি
সবজি-চালের বাজার চড়া, বেড়েছে মাছ-মুরগির দাম

রাজধানীর বাজারে কয়েক সপ্তাহ ধরেই আলু ছাড়া প্রায় সব সবজির দামই এখন চড়া। এরমধ্যে মুরগি ও মাছের দামও আরও বেড়েছে। চালের বাজারও যথারীতি চড়া। তবে ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিত্যপণ্যের বাজারে দফায় দফায় দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুধু সবজিই নয়, নিত্যপণ্যের বাজারে অনেক পণ্যের দামই এখন চড়া। বিশেষত বাজারে মাছ, শাক, ডাল, আটা, ময়দা ও চা পাতার দাম বেড়েছে শেষ দুই সপ্তাহে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম ১০-২০ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি ১৮০-২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ১৭০-১৮০ টাকা।
অন্যদিকে, গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৫০-৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০-১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পশুর সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় দাম বাড়েনি।
গত এক সপ্তাহে সামুদ্রিক ও খাল-নদীর বেশ কয়েকটি মাছের দাম কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। সুপারশপগুলোতেও চড়া দামে মাছ বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, আজকের বাজারে কোরাল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়, আইড় ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। চিংড়ি (বাগদা ও গলদা) আকারভেদে ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট চিংড়ির দাম কেজিপ্রতি প্রায় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা।
এ ছাড়া, খাল-নদী ও চাষের মাছের মধ্যে রুই ও কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, ছোট আকারের পাবদা ৪০০ টাকা, মাঝারি সাইজের ৫০০-৬০০ টাকা, শিং ৪০০-৫০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৭০০ টাকা, পুঁটি ২০০-২৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩০০-৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০-৩০০ টাকা, নাইলোটিকা ২২০-২৮০ টাকা, কৈ ২০০-২২০ টাকা এবং পাঙাস ও সিলভার কার্প ২৫০–২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের চাষের রুই প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
হাজিপাড়া বউ বাজারে মুরগি বিক্রেতা আবু সাইদ আহমেদ বলেন, সবজি-মাছসহ অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বেশি। যে কারণে দামও সামান্য বেড়েছে। তবে ২০০ টাকা পযন্ত মুরগির দাম স্বাভাবিক বলা যায়।
এদিকে, বাজারে প্রতি ডজন ডিমের দাম এলাকাভেদে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এক সপ্তাহ আগে ব্রয়লার মুরগির ডিম (লাল) যেখানে ১৫০ টাকায় বিক্রি হতো, তা এখন ১৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। যদিও কিছু খুচরা দোকানে এখনো এক হালি ডিম ৫০ টাকা রাখা হচ্ছে।
তবে অধিকাংশ বিক্রেতারা বলেছেন, সরবরাহ বাড়ার কারণে ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। যা গত সপ্তাহের চেয়ে ডজনে ৫-১০ টাকা কম।
সবজির দামে অস্থিরতা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তা ও বিক্রেতারা। আলু, পেঁপে ছাড়াও ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া কষ্টকর। বাজারে নতুন গোলাকৃতির বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৪০ টাকা কেজি দরে। বরবটি, করলা, চিচিঙ্গা, কচুর লতি বাজারভেদে দাম ১০০-১২০ টাকা পর্যন্ত। এক কেজি ধুন্দল কিনতে হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। ঝিঙ্গা, পটল, ঢ্যাঁড়সও ৮০ টাকার আশেপাশে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজারে এখনো সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে আলু দাম। এই নিত্যপণ্যটি ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ঢাকার বাজারগুলোতে। এ ছাড়া বাজারে কম দামের সবজির মধ্যে রয়েছে শুধু পেঁপে। প্রতি কেজি পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শাকের দামও বেশি এখন বাজারে। লাল শাক, কলমি বা হেলেঞ্চা শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়, পুঁইশাক কিনতে চাইলে প্রতি আঁটিতে ৪০-৫০ টাকা খরচ পড়ছে ভোক্তার।
খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য সবজির দামও কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। বাজারে বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৮০ টাকার আশপাশে।
বাজারে চালের দাম এখনো বাড়তি। অবশ্য গত দুই সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে এক-দুই টাকা কমেছে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৭২ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতি কেজি নাজিরশাইল চালের দাম এখন ৭৫-৯৫ টাকা। ব্রি-২৮ চাল ৬২ টাকা ও মোটা ধরনের স্বর্ণা চাল ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অর্থনীতি
রিজার্ভ বেড়ে ৩০.৫৮ বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩০ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম ৬) পদ্ধতি অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে, ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
অর্থনীতি
তৃতীয় দফায় ২০ হাজার টাকা বাড়লো স্বর্ণমুদ্রার দাম

দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে সোনার দাম। এখন ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা কিনতে গুনতে হচ্ছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৭ টাকা। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছর তৃতীয় দফায় স্মারক স্বর্ণমুদ্রার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রতিটি মুদ্রার দাম ২০ হাজার টাকা করে বাড়িয়ে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। যা এতোদিন ছিল এক লাখ ৫০ হাজার টাকা।
আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে সোনার দাম বাড়ার কারণে এ দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এ দাম ১১ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) থেকে কার্যকর হয়েছে।
এখন থেকে ২২ ক্যারেট স্বর্ণ দিয়ে তৈরি করা ১০ গ্রাম ওজনের স্মারক স্বর্ণ মুদ্রা (বাক্সসহ) প্রতিটি বিক্রি হবে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায়।
এ ছাড়া, বর্তমানে বাজারে ১১টি স্মারক রৌপ্যমুদ্রা (ফাইন সিলভার) রয়েছে। এসব রূপার স্মারক মুদ্রার ওজন ২০ গ্রাম থেকে ৩১ দশমিক ৪৭ গ্রাম। এসব স্মারক রৌপ্য মুদ্রার দাম ৮ হাজার ৫০০ টাকা। যা এতদিন ছিল ৭ হাজার টাকা।