অর্থনীতি
ইডিএফ ফান্ডে যুক্ত হচ্ছে আরও ১ বিলিয়ন ডলার

ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে গঠিত ইডিএফ ফান্ডেও লুটপাট করেছে আওয়ামী সমর্থিত ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ডলার সংকট এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে গত বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ এর দ্বারস্থ হতে হয় সরকারকে। তখন ঋণ পাওয়ার জন্য ইডিএফ ফান্ড কমিয়ে আনার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। তখন থেকেই কমতে শুরু করে এডিএফ ফান্ড। বর্তমানে সেই ফান্ডের আকার এসে আড়াই বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। এই ফান্ডেই বিশ্ব ব্যাংক আরও এক বিলিয়ন ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তথ্য মতে, গত এক বছরে ইডিএফ ফান্ডের আকার ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়েছে। করোনার সময়ের ৭ বিলিয়ন ডলারের ইডিএফ ফান্ডের আকার সাম্প্রতিক সময়ে আড়াই বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে ওয়াশিংটন সফর করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেখান থেকে দেশে ফিরে গভর্নর জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাংক ইডিএফ ফান্ডে এক বিলিয়ন ডলার ঋণের গ্যারান্টি দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শনে দেখা যায়, রপ্তানিতে সহায়তা করতে রিজার্ভের অর্থে গঠিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলও (ইডিএফ) লুটপাট হয়। রপ্তানির নামে এ তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে অনেক ব্যবসায়ী খেলাপি হয়ে পড়েছেন। অনেকে আবার এ অর্থ পাচারও করে দিয়েছেন।
করোনার সময়ে প্রায় দ্বিগুণ করে ইডিএফ ফান্ড ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেন তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবির। কিন্তু রিজার্ভের অর্থে গঠিত সেই ইডিএফের ঋণই আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ উঠেছে কিছু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতিতে গত এক বছর ধরে ইডিএফের আকার কমানো শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে ইডিএফের আকার কমানোকে সামনে রেখে ৭ বিলিয়ন ডলারের তহবিল বর্তমানে আড়াই বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য কাঁচামাল আমদানিতে রপ্তানিকারকদের ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কম সুদে ডলারে ঋণ দিতে ১৯৮৯ সালে গঠিত হয় ইডিএফ। রিজার্ভ থেকে এই ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ ২৭০ দিন সময় পান উদ্যোক্তারা। সেই তহবিলের আকার দীর্ঘ কয়েক বছর এক থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের ঘরে ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে ফজলে কবির গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পেতে থাকে আকার। আর ২০২০ সালে মার্চে করোনা সংক্রমণকালে ব্যবসা বাঁচানোর নামে একই বছরের এপ্রিলে ইডিএফের আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন করা হয়। সেই ধারা প্রায় দুই বছর অব্যাহত থাকে এবং ২০২২ সালে ইডিএফের আকার ৭ বিলিয়নে উন্নীত হয়। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধের পর দেশে ডলার সংকট তীব্র হতে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর হন আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি ইডিএফ কমাতে জোর দেন। তার নির্দেশে আকার ছোট হয়ে গত মে মাসে ইডিএফের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন। আর জুন শেষে হয় ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। গত জুলাইয়ে ইডিএফের আকার দাঁড়ায় ৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে। আর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সরকারের পালাবদলের পরে আগস্ট শেষে ইডিএফের আকার হয় ২ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার এবং সেপ্টেম্বরে তা হয় ২ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে আরও ছোট হয়েছে এ ফান্ডের আকার।
জানা গেছে, আইএমএফের দেওয়া ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত পূরণে গত বছরে মাঝামাঝি এই তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ বন্ধ রাখা হয়। পরে সীমিত পর্যায়ে চালু করা হয়েছে। সূত্র জানায়, আলোচিত বিসমিল্লাহ, ক্রিসেন্ট গ্রুপ, বেক্সিমকোসহ শীর্ষ ৪০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের মতো আটকে রয়েছে। এর মধ্যে আটটি গ্রুপের কাছেই প্রায় আড়াইশ মিলিয়ন ডলারের ইডিএফ ঋণ রয়েছে।

অর্থনীতি
বৈদেশিক ঋণে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের ভার কমেছে

২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ দিকে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও এআইআইবিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি বৈদেশিক ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে সরকার দেশীয় ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া ঋণের বড় অংশ পরিশোধ করতে পেরেছে। এতে অভ্যন্তরীণ ঋণের ভার কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ৩০ জুন ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের মোট ঋণ দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা, যা তার আগের দিন (২৯ জুন) ছিল ৫ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, একদিনেই ঋণ কমেছে ৬ হাজার ১১১ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরে সরকার মোট ৭২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকার নিট ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করেছে, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা কম এবং গত চার অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা ছিল, রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় সরকারকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বেশি ঋণ নিতে হতে পারে। বাস্তবে তা হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায় দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৬৮ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯৫ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা কম এবং আগের বছরের তুলনায় ১৪ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বৈদেশিক ঋণপ্রবাহ বাড়ায় সরকারের দেশীয় ঋণ সমন্বয় সম্ভব হয়েছে।’
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ব্যাংক খাত থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও অন্তর্বর্তী সরকার তা সংশোধন করে ৯৯ হাজার কোটি টাকা করে। পরবর্তী সময়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর তা আরও কমিয়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করেন ৯০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে।
অর্থবছরের শেষ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে এক লাখ ৩৬ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৫৮ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ কমিয়ে আনা হয়েছে ৬৩ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা, ফলে মোট স্থিতি নেমে এসেছে ৯২ হাজার ৫১ কোটি টাকায়।
সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ পাঁচ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা কমেছে। অন্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেও ৪৮ হাজার ৩২২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের নিট ঋণ বেড়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা, যার মোট স্থিতি এখন ছয় লাখ ৮৭ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক খাত থেকে এক লাখ চার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
অর্থনীতি
পরিবেশবান্ধব সনদ পেলো আরও তিন পোশাক কারখানা

পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা বা গ্রিন ফ্যাক্টরি হিসেবে বাংলাদেশের আরও তিনটি পোশাক কারখানা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ‘লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন’ (লিড) সনদ পেয়েছে।
পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) নির্দেশনা অনুযায়ী ভবন নির্মাণের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে এই পরিবেশবান্ধব কারখানার সনদ অর্জন করেছে কারখানা তিনটি। সনদ পাওয়ার সাতটি শর্ত পরিপালনে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে কোনো কারখানা ৮০-এর বেশি পেলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ পেলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ নম্বর পেলে ‘লিড সিলভার’ এবং ৪০-৪৯ নম্বর পেলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল থেকে নতুনভাবে সনদপ্রাপ্ত এ কারখানাগুলোর সংযোজনের ফলে এখন পর্যন্ত দেশের মোট লিড সনদপ্রাপ্ত তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা দাঁড়ালো ২৫৩টিতে। এর মধ্যে ১০৫টি প্ল্যাটিনাম, ১৩২টি গোল্ড, ১২টি সিলভার ও চারটি লিড সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে।
নতুনভাবে যুক্ত হওয়া তিনটি কারখানার মধ্যে কমফিট রেইনবো ডাইং অ্যান্ড ফিনিশিং লিড গোল্ড সার্টিফিকেশন পেয়েছে, যেখানে তারা অর্জন করেছে ৭৫ পয়েন্ট।
সাইহাম কটন মিলস লিমিটেডের ইউনিট ১ ও ইউনিট ২—দুই ইউনিটই লিড সিলভার সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে। প্রত্যেকটি ইউনিট ৫৮ পয়েন্ট করে পেয়েছে।
এখন বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ রেটপ্রাপ্ত ১০টি লিড কারখানার মধ্যে ৯টি এবং ১০০টির মধ্যে ৬৮টিই বাংলাদেশে অবস্থিত—যা দেশের সবুজ কারখানার অগ্রযাত্রাকে আরও শক্ত ভিত্তি দেয়।
একটি ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি’ বা পরিবেশবান্ধব কারখানা হলো এমন একটি স্থাপনা যা নির্মাণ, কার্যক্রম এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রতিটি পর্যায়ে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস করে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করে। এ ধরনের কারখানা নির্মাণে শক্তি ও পানি সাশ্রয়, বায়ুদূষণ কমানো, টেকসই উপকরণ ব্যবহার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই ধরনের পরিবেশবান্ধব নীতিমালা ও মানদণ্ড পূরণ করলেই কোনো কারখানাকে পরিবেশবান্ধব সনদ দেওয়া হয়।
অর্থনীতি
অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসইয়ে প্রয়োজন ভালো অনুশীলন: বাণিজ্য উপদেষ্টা

অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই করতে অর্থনীতিতে ভালো অনুশীলন (গুড ইকোনমিক প্র্যাক্টিস) বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, এ কাজে পেশাদার হিসাববিদরা মূল ভূমিকা পালন করতে পারেন।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) আয়োজনে সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টস (সাফা) ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ২০২৫ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বিগত দশ মাসে সরকারে কাজ করতে এসে দেখেছি সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশের জন্য সোনালি ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। যদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে সম্পদের সুষম বণ্টন করা যায় তাহলে আমরা যে অবস্থানে আছি তা থেকে উত্তরণ সম্ভব। আর সেটা না হলে চোরতন্ত্র (ক্লেপ্টোক্রেসি) তৈরি হবে। আমরা চোরতন্ত্রের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে আমরা দেখেছি কীভাবে অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান (ইকোনমিক রেকর্ড) ম্যানুপুলেট করে হাজার হাজার কোটি ডলার পাচার করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবসাকে সামনে রেখে অর্থপাচার (মানিলন্ডারিং) করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ব্যাপক অনিয়মের ফলে প্রচুর ক্রিমিনাল ক্যাপিটাল তৈরি হয়েছে, যা ব্যবসার ন্যায্য প্রতিযোগিতাকে (ফেয়ার কম্পিটিশন অব মার্কেট) ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। বর্তমান সরকার ব্যবসায় অন্যায্য প্রতিযোগিতা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে যোগ করেন তিনি।
এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য- ‘রিফর্ম, রিস্কিল, রিইমাজিন: দ্য ফিউচার অব বাংলাদেশ ইকোনোমি’। সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রায় ৬ শতাধিক পেশাদার হিসাববিদ, অর্থনীতিবিদ, পলিসি-মেকার, করপোরেট-লিডার ও ব্যবসায়ী নেতারা এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, সাফার প্রেসিডেন্ট আসফাক ইউসুফ তোলা, ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ভুঁইয়া, দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) প্রেসিডেন্ট এন কে এ মুবিন এবং ইনস্টিটিউট অব কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।
মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সিপিডি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সদস্য ও ডিস্টিংগুইশড ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
সম্মেলনের তিনটি টেকনিক্যাল সেশনে আলোচক হিসেবে অংশ নেন সার্কভুক্ত দেশের অর্থনীতি, ব্যাংকিং, শিল্প, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা। এতে জিডিপি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশন এবং পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় হিসাব পেশাজীবীদের পরিবর্তিত ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
অর্থনীতি
ঊর্ধ্বমুখী সবজি-পেঁয়াজ-মুরগির দাম, কমেছে ডিমের দাম

বেশ দীর্ঘ সময় পর বাজারে ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দাম। এছাড়া নিম্নমুখী থাকা ব্রয়লার মুরগির দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে কমেছে ডিমের দাম। পাশাপাশি দুই সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কম থাকায় বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বেশির ভাগ সবজি।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর রামপুরা-মালিবাগ এলাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার বাজারে মানভেদে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এতে করে ঢাকার পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। তবে বাজারে ৬০ টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে। আগে পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতো।
খুচরা বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরেই ৫০ থেকে ৬০ টাকায় স্থিতিশীল অবস্থায় ছিল পেঁয়াজের দাম। হঠাৎ করেই দুই-তিনদিন ধরে বাড়তে শুরু করেছে। গত কোরবানি ঈদেও পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল ছিল।
রামপুরা বাজারের বিক্রেতা আনিসুল হক বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দুদিন ধরে বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। এজন্য আমাদের ৬৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম এখন ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা, যা আগে ৫০ থেকে ৫২ টাকা ছিল।
একই সঙ্গে ডিমের দাম কমলেও বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বাজারভেদে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহে যা বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের ব্রয়লার মুরগির বিক্রেতা আবু হাসান বলেন, সরবরাহ কিছুটা থাকায় দাম বেড়েছে।
তবে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়লেও কমেছে ডিমের দাম। ব্রয়লার মুরগির ডিমের দাম গত সপ্তাহে বাড়লেও তা আবার কমতে শুরু করেছে এবং প্রতি ডজন ডিমের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে এবং ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, আমদানির প্রভাবে সামান্য দাম কমলেও এখনো উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। যা সপ্তাহখানে আগে ৩০০ টাকায় উঠেছিল।
এদিকে, টানা বৃষ্টির প্রভাবে সবজির সরবরাহ পরিস্থিতি বেশ কিছুদিন ধরে হেরফের হচ্ছে। যে কারণে অনেক পদের সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি বেগুন কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকা, কোনো কোনো বাজারে আরও বেশি দামেও বিক্রি করতে দেখা গেছে।
পেঁপে, ছোট পটোলের মতো হাতেগোনা দু-তিন ধরনের সবজি স্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে পেঁপে ৪০ টাকা এবং ছোট পটোল ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
তবে কাকরোল, করলা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙা, চিচিংগা ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
কাফি
অর্থনীতি
১৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৪২ কোটি ডলার

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ১৬ দিনে ১৪২ কোটি ১০ লাখ (১.৪২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (এক ডলার ১২১ টাকা ধরে) প্রায় ১৭ হাজার ১৯৪ কোটি ১০ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ১৬ দিনে ১৪২ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। গত বছরের একই সময়ে (২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১৬ দিন) এসেছিল ১৩১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ে তুলনায় ১০ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা প্রায় এক হাজার ২৩৪ কোটি টাকার বেশি এসেছে।
এর আগে সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠান প্রায় প্রায় ২৮১ কোটি ৮০ লাখ (২.৮২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি। জুন মাসে প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা এক হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।
এটি একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগের মাস মে’তে দেশে এসেছে ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তারও আগে মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পুরো সময়ে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার আসে। পারের মাস মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে আসে ২৭৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এবং সবশেষ জুন মাসে এসেছে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।