অর্থনীতি
বন্যায় ফসলে বড় ঘাটতি, বাড়তে পারে সংকট
দেশের খাদ্য উদ্বৃত্ত অঞ্চলগুলোর একটি ময়মনসিংহ। বাংলাদেশের মোট খাদ্য চাহিদার অন্তত ১০ শতাংশ এখান থেকেই পূরণ করা হয়। ময়মনসিংহের পাশাপাশি জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোনা—এ চার জেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খাদ্য উৎপাদন হয়েছিল ৪৪ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫০ টন। বিপরীতে এ অঞ্চলে চাহিদা ছিল মাত্র ১৮ লাখ ৭ হাজার ২৩৩ টন। বাকি প্রায় ২৬ লাখ ৮১ হাজার ৭১৭ টন উদ্বৃত্ত খাদ্যে পূরণ করা হয় রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোর চাহিদা। তবে সাম্প্রতিক বন্যায় এ অঞ্চলের লক্ষাধিক হেক্টর জমির আমন ধান নষ্ট হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অন্যান্য ফসলেরও। দেশের পূর্বাঞ্চলে তিন দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায়ও আমনসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলায় সাম্প্রতিক এ বন্যার কারণে ফসল উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিলে তা সার্বিক খাদ্যনিরাপত্তায় প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা কৃষি বিশেষজ্ঞদের।
দেশে উৎপাদিত মোট চালের কম-বেশি ৪০ শতাংশ চালই আসে আমন থেকে। বোরো মৌসুম থেকে সবচেয়ে বেশি, ৫৫ শতাংশ চাল উৎপন্ন হয়। বাকিটুকু আসে আউশ থেকে। এবার বন্যার কারণে আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক জমিতে পানি উঠে যাওয়ায় ধানের শীষ বের হচ্ছে দেরি করে। এতে ধান উৎপাদনে সময় লাগছে বেশি। এর প্রভাবে বোরো ধান রোপণের সময়ও পিছিয়ে যেতে পারে। বন্যায় নষ্ট হয়েছে কৃষকের ঘরে থাকা বোরো ধানের বীজও। উদ্বৃত্ত এসব অঞ্চলের এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক সময়ে উদ্যোগ না নিলে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শেরপুর জেলা। এ বছর সীমান্ত জেলাটির ৯৫ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছিল। তার মধ্যে ৩৭ হাজার ১৫৫ হেক্টরই উজানের ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। নেত্রকোনা জেলার ১০টি উপজেলায় এ বছর ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়। এর মধ্যে বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় ২৪ হাজার ৬৬৭ হেক্টর আমন খেত ও ১৭৭ হেক্টর জমির শাকসবজি। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার সীমান্ত ও নিম্নাঞ্চল কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা, পূর্বধলা, মোহনগঞ্জ, আটপাড়া ও মদন। অথচ এ অঞ্চল পুরোপুরিভাবেই কৃষিনির্ভর। এছাড়া ময়মনসিংহের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ১০ হাজার ৫৬০ হেক্টর রোপা আমনের জমি নষ্ট হয়েছে ধোবাউড়া উপজেলায়। ১০ হাজার ৩১০ হেক্টর আমনের জমি নষ্ট হয়েছে হালুয়াঘাটে। ফুলপুর উপজেলায় নষ্ট হয়েছে ৩ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমির আমন ধান।
একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দক্ষিণের জেলা নোয়াখালীতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলাটিতে লক্ষ্যমাত্রার ৩৫ শতাংশ আমন ধানের উৎপাদন কমবে। ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে চালের বাজারে। দুর্যোগ-পূর্ববর্তী সময়ে কৃষি বিভাগ নোয়াখালীতে রোপা আমনের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১ লাখ ৭৪ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমির। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭ লাখ ১৩ হাজার ৯৯৩ টন। আর এখান থেকে চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯৫ টন।
দুর্যোগ-পরবর্তী কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, মাঠে রোপা আমন আবাদ হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৭২৭ হেক্টর। দুর্যোগ-পরবর্তী আবাদ অনুযায়ী ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫ লাখ ৭ হাজার ২৮০ টন। ওই হিসাবে নোয়াখালীতে এ বছর চাল উৎপাদন হতে পারে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৮৬ টন। তবে যেসব এলাকায় দেরিতে আবাদ হয়েছে এবং যেখানে ধানের চারার অবস্থা তুলনামূলক খারাপ সেসব এলাকায় আবাদ আরো কম হতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মীরা রানী দাস বলেন, ‘ধান উৎপাদন যেহেতু কম হবে, সেক্ষেত্রে চাল উৎপাদনও কমবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে যেসব এলাকায় আমন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসব এলাকায় আগাম বোরো উৎপাদন করবেন কৃষক। এতে আমনের ক্ষতি বোরোতে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব। সেজন্য এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত আমন চাষীদের মাঝে আগাম বোরো বীজ ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে।’
দেশের বর্তমান বন্যাপরবর্তী খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পর্যবেক্ষণেও উঠে এসেছে, উদ্বৃত্ত জেলাগুলোর ফসল উৎপাদনে ঘাটতি মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সম্প্রতি প্রকাশিত এক নিয়মিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের সাম্প্রতিক বন্যায় কৃষি ও সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। এর প্রভাবে প্রয়োজনীয় খাদ্য সংস্থান করতে পারছে না প্রতি ১০ জনের মধ্যে তিনজন বা ৩০ শতাংশ। নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে এ হার প্রায় ৩৬ শতাংশ। খাদ্য ব্যয় সংকোচনমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে ২৯ শতাংশ মানুষ। আর সার্বিক জীবন-জীবিকায় ব্যয় সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে ৭১ শতাংশ।
খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ধারাবাহিকতায় দেশে অপুষ্টি ও রোগব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলো কম খাবার গ্রহণের ফলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। পুষ্টিহীনতা বেড়ে যায়। এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও কমে যায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। ফলে নানাবিধ রোগ-ব্যাধির প্রকোপও বাড়ে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড. তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ‘এখন আমাদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, বন্যায় কত জমিতে কত ফসলহানি হলো, কী কী ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। কৃষি পরিসংখ্যানকে কীভাবে লাইভ ডাটায় রূপান্তরিত করা যায় তা নিয়ে কাজ করতে হবে। এখানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) আছে, তারা যে পরিসংখ্যান দেয় তা সঠিক নয়। সঠিক পরিসংখ্যান থাকলে আমরা নির্ভুল তথ্য জানতে পারতাম। তখন সঠিক নীতিসহায়তা দেয়া সম্ভব হতো। আমাদের খাদ্যনিরাপত্তায় সম্ভাব্য ঘাটতি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া যেত। কিন্তু সেটি করা সম্ভব হচ্ছে না সঠিক তথ্যের অভাবে।’
সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের ১০ জেলার কৃষি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কৃষিটা এখন এক সিজনের পর আরেক সিজনে চলছে। ফলে এখানকার মাটি উর্বরতা হারাচ্ছে। মাটির স্বাস্থ্য খারাপ হলে যত জীব আছে সবার স্বাস্থ্য খারাপ হবে। বিদ্যমান প্রযুক্তিগুলোও ভালোভাবে কাজ করছে না। ভূমি যে হারে কমছে তারও সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। জোর করে পরিসংখ্যানকে কমিয়ে রাখা হয়েছে। এসব করে আমাদের ক্ষতি করা হয়েছে। বাজারে যখন ঘাটতি পড়ে যাবে, তখন আর কিছু করার থাকবে না।’
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে চাল উদ্বৃত্ত থাকা জেলাগুলোর শীর্ষে রয়েছে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, ঝিনাইদহ, জয়পুরহাট, শেরপুর, নওগাঁ, বগুড়া, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও ভোলা। এসব জেলায় ৮০ থেকে ১৮৩ শতাংশ পর্যন্ত চাল উদ্বৃত্ত থাকে। কুড়িগ্রাম, জামালপুর, নীলফামারী, রংপুর, মাগুরা, যশোর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ ও পটুয়াখালী জেলায় ৫১ থেকে ৭৭ শতাংশ চাল উদ্বৃত্ত থাকে। গাইবান্ধা, নাটোর, টাঙ্গাইল, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২২ থেকে ৪৮ শতাংশ চাল উদ্বৃত্ত থাকে। রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নোয়াখালী ও বান্দরবান জেলায় ১ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত চাল উদ্বৃত্ত থাকে। অর্থাৎ এ জেলাগুলোয় খাদ্যশস্যের ঘাটতি নেই।
চালের ঘাটতিতে থাকা জেলাগুলোর শীর্ষে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও রাঙ্গামাটি। এ জেলাগুলোয় ৪৬ থেকে ৯১ শতাংশ পর্যন্ত চালের ঘাটতি রয়েছে। আর মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, চাঁদপুর ও মাদারীপুরে রয়েছে ১৯-৪০ শতাংশ চালের ঘাটতি।
জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘বন্যার কারণে আমাদের ফসলের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আমরা একটা প্রাক্কলন করেছি। বন্যার কারণে আমনে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে আউশের মাধ্যমে তা পূরণের চেষ্টা করছি। আমাদের কৃষকদের আউশের জন্য উদ্বুদ্ধ করছি, জনসচেতনতাও তৈরি করছি। এর পরও আমাদের ফসলে ৮-৯ লাখ টন ঘাটতি থাকবে। এ ঘাটতি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হবে। এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। বন্যার সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কে আমরা সচেতন এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করছি।’
বন্যায় চাল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় স্থানীয় বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে চাল আমদানিতে বর্তমানে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ককর সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান একেএম মকসুদুর আরেফীন স্বাক্ষরিত গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) দেয়া এক চিঠিতে বলা হয়, দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যার কবলে চালের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ার ফলে আসন্ন উৎপাদন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী দেশে চাল সরবরাহে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পাশাপাশি বর্তমানে চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে স্থানীয় উৎপাদক চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না উল্লেখ করে ট্যারিফ কমিশনের চিঠিতে বলা হয়, দেশে চালের চাহিদা প্রায় ৩ দশমিক ৭ থেকে ৩ দশমিক ৯ কোটি টন, যার সিংহভাগ দেশেই উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে দেশে বর্তমানে গত এক মাসে সরু, মাঝারি ও মোটা চালের দাম যথাক্রমে শূন্য শতাংশ, ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ ও ১ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে তিন ধরনের চালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ ও ৭ শতাংশ।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
শত শত ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হলেও বাড়ছে দর
প্রতিদিনই আমদানি হচ্ছে শত শত ট্রাক পেঁয়াজ। তারপর দুই সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের বাজার অস্থির। কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। দেশি পেঁয়াজের দর বেশি বাড়তে থাকায় এর প্রভাব পড়ছে আমদানি পেঁয়াজের ওপর।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবছর এ সময় দেশি পেঁয়াজের মজুত ফুরিয়ে আসে। এ কারণে দর বাড়ে। দেশি পেঁয়াজের এই ঘাটতি মেটাতে মূল ভরসা হয়ে ওঠে আমদানি পেঁয়াজ। তবে আমদানিকারকদের কেউ কেউ বলছেন, পেঁয়াজ নিয়ে শত শত ট্রাক ঢুকলেও বন্দরে দর বেশি। কারণ, বন্দর এলাকার বাজারে নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তদারকি জোরদার করলে দাম নিয়ন্ত্রণে আসত।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) ঢাকার কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। সপ্তাহ দুয়েক আগে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ১৩০ টাকার আশপাশে। এ ছাড়া দুই সপ্তাহ আগে ভারতীয় পেঁয়াজ ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। তবে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের পাশাপাশি অন্য দেশের পেঁয়াজও দেখা গেছে। এর মধ্যে খুচরা ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০, তুরস্কের পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ এবং চীনা পেঁয়াজের কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন।
সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক মাসে দেশি পেঁয়াজের দর ৩০ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দর ৮ শতাংশ বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী এরশাদ আলী বলেন, আর কয়েক দিন পর মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসা শুরু হবে। তখন বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। তবে এর আগ পর্যন্ত আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে। নইলে বাজারের অস্থিরতা কাটবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিলি স্থলবন্দরের এক শীর্ষ ব্যবসায়ী বলেন, বন্দর এলাকায় পেঁয়াজের বাজারে নিয়ন্ত্রণ নেই। মূল মুনাফা নিয়ে যান ভারতের রপ্তানিকারকরা। দর বাড়লে তাদেরই লাভ বেশি। তবে বাজার স্বাভাবিক রাখার একটা কৌশল আছে। সরকার যদি বন্দর–সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তদারকি জোরদার করে, তাহলে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
এর পেছনে যুক্তি দিয়ে এই ব্যবসায়ী জানান, প্রতি টন পেঁয়াজের এলসি খোলা হয় ৬০০ ডলারে। সেই হিসাবে প্রতি কেজির দর পড়ে ৭৩ টাকার মতো। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক খরচ ও মুনাফা যোগ করলে পাইকারি পর্যায়ে ৭৫ টাকা হওয়ার কথা। এর চেয়ে বেশি মুনাফা করলেও পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজির দর সর্বোচ্চ ৮০ টাকা হতে পারে। তবে বন্দরেই প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা দরে। এই পেঁয়াজ ঢাকায় গেলে ১২০ টাকা হওয়া স্বাভাবিক। জোর তদারকি না থাকায় বন্দর এলাকায় কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা মুনাফা খাচ্ছেন ভারতীয় ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সভাপতি হারুনুর রশিদ জানান, এখন ভারতে দর বেশি। তবে এখানে আমরা বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ভারতীয় পেঁয়াজে কমিশনে ব্যবসা করি। সে ক্ষেত্রে পেঁয়াজের দর বাড়লেও একই কমিশন পাই। আমদানি করা পেঁয়াজের সংকট নেই। শুধু ভারত থেকেই বিভিন্ন বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে দৈনিক অন্তত ১৫০ ট্রাক পেঁয়াজ আসে দেশে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের তদারকি দুর্বল। এ জন্য বিশৃঙ্খলা চলছে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
উচ্চ সুদ ও জ্বালানি সংকটে চাপে শিল্প খাত
দেশের অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, উচ্চ সুদহার, জ্বালানি সংকট, ডলার সংকট, তারল্যের পাশাপাশি পুঁজিবাজারেও ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে টানা দরপতনে সর্বস্ব হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। আবার অনেক ব্যাংকে আমানতের টাকাও ফেরত না পেয়ে শাখায় তালা ঝুলিয়ে দিচ্ছেন গ্রাহকরা। আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ ও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে শিল্পের চাকা থমকে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে কঠিন সংকটের মুখোমুখি ব্যবসায়ীরা।
অর্থনীতিতে এখন সম্ভাবনার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এসব অনিশ্চয়তা সামলানো। কিন্তু শ্রম অসন্তোষ, জ্বালানি সংকট, মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি ঋণের উচ্চ সুদ ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে তুলছে। ইতিমধ্যেই উৎপাদনমুখী অনেক শিল্প লোকসানে পড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে তারল্য কমানোর পাশাপাশি সুদহার বাড়ানো হলেও তা কাজে আসছে না। বরং তা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য সংকট আরও বাড়িয়ে তুলছে। এমন পরিস্থিতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি আরও কমিয়ে দিচ্ছে।
জুন শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি তলানিতে পৌঁছেছে বলে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যুরো (বিবিএস)। গত সোমবার সংস্থাটি জিডিপির তথ্য প্রকাশ করে জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে দেশের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশে। এ প্রবৃদ্ধি আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও দুই দফা বন্যায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি আরও কমবে।
বিবিএসের তথ্য বলছে, শেষ প্রান্তিকে দেশের শিল্প খাত ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল তলানিতে। চলতি বছর জুন শেষে দেশের শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশে, অথচ আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ। শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে সেবা খাতেও। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি কমে এ সময়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশে, এটি আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ।
২০২০ সালের এপ্রিলে সরকারের পরামর্শে ব্যাংকঋণের সুদ সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে মেয়াদি আমানতের সুদহারও বেঁধে দেওয়া হয়, সে হার ছিল ৬ শতাংশ। এরপর দীর্ঘদিন ব্যাংক খাতে ঋণ ও আমানতের ক্ষেত্রে সুদহার ৯-৬-এ সীমাবদ্ধ ছিল। উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতি নানা সংকটে পড়লে গত বছর জুলাই থেকে সুদের হার বাড়তে শুরু করে।
গত আগস্টে আহসান এইচ মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নীতি সুদহার আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। এরই অংশ হিসেবে গত দুই মাসে দুই দফা নীতি সুদহার বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়ানোর ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে ওভারনাইট রেপো সুদহার ১০ শতাংশে উন্নীত হবে। ফলে ঋণসহ সব ধরনের ব্যাংকিং পণ্যের সুদের হার বাড়বে। বাজারে অর্থের সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নীতি সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব পড়ে বাণিজ্যিক ঋণের সুদহারেও। এক বছরে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ঋণের সুদ হার দাঁড়িয়েছে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশে। ফলে শিল্পে আর্থিক ব্যয় বেড়ে গিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এমনিতে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে কারখানাগুলো পূর্ণ উৎপাদনে নেই। এর মধ্যে সুদব্যয় বাড়ায় কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমে গেছে, কোনো কোনোটি পড়েছে লোকসানে।
উচ্চ সুদহারের পাশাপাশি তারল্য সংকোচনের প্রভাবে ব্যবসায়ীরা ঋণও পাচ্ছেন না। আবার অনেক ব্যবসায়ী বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা সম্প্রসারণে যাচ্ছেন না। এতে করে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেছে। গত আগস্ট পর্যন্ত মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৪১ শতাংশ। এ সময় মধ্যবর্তী পণ্য আমদানিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। ডলার সংকটের কারণে এলএনজি আমদানি কমে যাওয়ায় আগামীতে গ্যাসের সরবরাহ পরিস্থিতির যে উন্নতি হবে না, তা বলা যায়। আমদানি সীমিত থাকার মধ্যেই চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সামগ্রিক আমদানির পরিমাণ প্রায় ৭ শতাংশ কমে গেছে।
খনি ও খনন, শিল্পের উৎপাদন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সরবরাহ, অবকাঠামো এ কয়েকটি উপ-খাত রয়েছে শিল্প খাতে। জুন শেষে শুধু বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ উপ-খাতেই প্রবৃদ্ধি ভালো দেখা গেছে। গত বছর জুনে এই উপ-খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক ২ দশমিক ৬ শতাংশ, যা এবার ১০ দশমিক ১১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। গত বছর জুন শেষে উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৩৪, এবার তা কমে ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমেছে।
এদিকে ব্যাংকগুলোয় টাকা না থাকায় এখন বড় ভোগান্তি রপ্তানিকারকদের। একসময় নামিদামি ব্যাংকগুলো এখন মুখ থুবড়ে পড়ায় এলসি খোলার মতো অর্থও নেই অনেক ব্যাংকের। বিশেষ করে ১৫টি ব্যাংকের তারল্যসংকট রয়েছে।
আবার অর্থসংকটের কারণে অন্তর্বর্তী সরকার উন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। অতি প্রয়োজনীয় না হলে কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দিচ্ছে না। অনেক মেগা প্রকল্প বন্ধ রাখা হয়েছে। তারল্যসংকটের কারণে বেসরকারি খাতের ঋণও নেমেছে তলানিতে। গত আগস্টে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি নেমেছে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে, যা ১১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
অবকাঠামোতে অর্থনীতির কার্যক্রম কমে ৬৯ হাজার ৫১৮ কোটি টাকায় নেমেছে জুন শেষে। আগের প্রান্তিকেও তা ছিল ৯২ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। তবে শেষ প্রান্তিকে উৎপাদনের কার্যক্রম কমলেও তা অতটা কমেনি। জুন শেষে উৎপাদনের কার্যক্রম কমে ২ লাখ ৬ হাজার ১৪০ কোটি টাকায় নেমেছে, আগের প্রান্তিকেও তা ছিল ২ লাখ ১৫ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।
এদিকে উচ্চ সুদহারের প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। ব্যাংকে আমানতের সুদ বেশি থাকায় ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে ব্যাংকে আমানত রাখছেন। এতে করে পুঁজিবাজারে ক্রেতাসংকট তৈরি হয়েছে। গত ১৮ আগস্ট এসইসিতে নতুন কমিশন যোগ দেওয়ার পর থেকে আড়াই মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচকটি প্রায় ১৬ শতাংশ কমে যায়। টানা পতনে ট্রিগার সেলের কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পুঁজির সর্বস্ব হারিয়েছেন।
২০২২ সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধকলে আছে। একই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে গেলেও এক বছরের মাথায় প্রায় প্রতিটি দেশ তাদের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও ভারতের মতো দেশও এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রয়েছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরেও বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে রয়েছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি রয়েছে ১০ শতাংশের ওপর।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ইডিএফ ফান্ডে যুক্ত হচ্ছে আরও ১ বিলিয়ন ডলার
ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে গঠিত ইডিএফ ফান্ডেও লুটপাট করেছে আওয়ামী সমর্থিত ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ডলার সংকট এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে গত বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ এর দ্বারস্থ হতে হয় সরকারকে। তখন ঋণ পাওয়ার জন্য ইডিএফ ফান্ড কমিয়ে আনার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। তখন থেকেই কমতে শুরু করে এডিএফ ফান্ড। বর্তমানে সেই ফান্ডের আকার এসে আড়াই বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। এই ফান্ডেই বিশ্ব ব্যাংক আরও এক বিলিয়ন ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তথ্য মতে, গত এক বছরে ইডিএফ ফান্ডের আকার ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়েছে। করোনার সময়ের ৭ বিলিয়ন ডলারের ইডিএফ ফান্ডের আকার সাম্প্রতিক সময়ে আড়াই বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে ওয়াশিংটন সফর করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেখান থেকে দেশে ফিরে গভর্নর জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাংক ইডিএফ ফান্ডে এক বিলিয়ন ডলার ঋণের গ্যারান্টি দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শনে দেখা যায়, রপ্তানিতে সহায়তা করতে রিজার্ভের অর্থে গঠিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলও (ইডিএফ) লুটপাট হয়। রপ্তানির নামে এ তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করে অনেক ব্যবসায়ী খেলাপি হয়ে পড়েছেন। অনেকে আবার এ অর্থ পাচারও করে দিয়েছেন।
করোনার সময়ে প্রায় দ্বিগুণ করে ইডিএফ ফান্ড ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেন তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবির। কিন্তু রিজার্ভের অর্থে গঠিত সেই ইডিএফের ঋণই আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ উঠেছে কিছু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতিতে গত এক বছর ধরে ইডিএফের আকার কমানো শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে ইডিএফের আকার কমানোকে সামনে রেখে ৭ বিলিয়ন ডলারের তহবিল বর্তমানে আড়াই বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য কাঁচামাল আমদানিতে রপ্তানিকারকদের ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কম সুদে ডলারে ঋণ দিতে ১৯৮৯ সালে গঠিত হয় ইডিএফ। রিজার্ভ থেকে এই ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ ২৭০ দিন সময় পান উদ্যোক্তারা। সেই তহবিলের আকার দীর্ঘ কয়েক বছর এক থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের ঘরে ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে ফজলে কবির গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পেতে থাকে আকার। আর ২০২০ সালে মার্চে করোনা সংক্রমণকালে ব্যবসা বাঁচানোর নামে একই বছরের এপ্রিলে ইডিএফের আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন করা হয়। সেই ধারা প্রায় দুই বছর অব্যাহত থাকে এবং ২০২২ সালে ইডিএফের আকার ৭ বিলিয়নে উন্নীত হয়। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধের পর দেশে ডলার সংকট তীব্র হতে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর হন আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি ইডিএফ কমাতে জোর দেন। তার নির্দেশে আকার ছোট হয়ে গত মে মাসে ইডিএফের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন। আর জুন শেষে হয় ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। গত জুলাইয়ে ইডিএফের আকার দাঁড়ায় ৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে। আর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সরকারের পালাবদলের পরে আগস্ট শেষে ইডিএফের আকার হয় ২ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার এবং সেপ্টেম্বরে তা হয় ২ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে আরও ছোট হয়েছে এ ফান্ডের আকার।
জানা গেছে, আইএমএফের দেওয়া ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত পূরণে গত বছরে মাঝামাঝি এই তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ বন্ধ রাখা হয়। পরে সীমিত পর্যায়ে চালু করা হয়েছে। সূত্র জানায়, আলোচিত বিসমিল্লাহ, ক্রিসেন্ট গ্রুপ, বেক্সিমকোসহ শীর্ষ ৪০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের মতো আটকে রয়েছে। এর মধ্যে আটটি গ্রুপের কাছেই প্রায় আড়াইশ মিলিয়ন ডলারের ইডিএফ ঋণ রয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ব্যান্ডউইথের মূল্য পরিশোধে লাগবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মূল্য পরিশোধ করা যাবে। এতদিন ব্যান্ডউইথের মূল্য পরিশোধ করতে অনুমতির প্রয়োজন হতো।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার ফলে, ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যান্ডউইথ সেবা ক্রয়ের অর্থ বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা সহজ হলো। এক্ষেত্রে অবশ্যই উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স, বিদেশি পক্ষের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি, ইনভয়েস, অর্থ পরিশোধের স্বপক্ষে নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী ইত্যাদি থাকতে হবে।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, এর ফলে ইন্টারনেট সেবার উপকরণ হিসেবে ব্যান্ডউইথের ব্যয় পরিশোধের অনুমতি নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এতে সময় অপচয় কমার পাশাপাশি বৈদেশিক লেনদেন সহজ হবে।
বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের অপর নির্দেশনায় বিদেশি আমদানিকারক এবং বিদেশি কন্ট্রাক্টরদের অনুকূলে পারফরমেন্স বন্ড বিংবা গ্যারান্টি ইস্যু করার জন্য ব্যাংকগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই ব্যাংকগুলো স্থানীয় রপ্তানিকারক এবং সাব-কন্ট্রাক্টরদের পক্ষে এসব কাজ করতে পারবে।
এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
স্বর্ণের দামে রেকর্ড, ভরিতে বাড়লো ১৫৭৪ টাকা
দেশের বাজারে আরও বাড়ল স্বর্ণের দাম। সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ১ হাজার ৫৭৫ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫২৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে দেশের বাজারে সোনার এত দাম আগে হয়নি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে নতুন দাম কার্যকর করা হবে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ দাম বাড়ানো হয়েছে।
আজ বুধবার বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৫৭৫ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫২৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৫০৪ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ২৯৫ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার ৪৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৯৭ টাকা বাড়িয়ে ৯৬ হাজার ৫২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
২৩ অক্টোবর সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৮৯০ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৫১ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৭৯৭ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫০১ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৫৩৯ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ১৩৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৩০৬ টাকা বাড়িয়ে ৯৫ হাজার ৪২৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়।।
সোনার দাম বাড়ানোর পাশাপাশি এবার রুপার দামও বাড়ানো হয়েছে। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ৬৪১ টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ৭৪১ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ৬১৮ টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ৬২৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ৫২৪ টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ২৩৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম ৩৯৭ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ৬৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে