অর্থনীতি
শীতের ৩ মাসে সীমান্তে বাড়ে স্বর্ণ চোরাচালান

স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোক্তা দেশ ভারত। প্রতিবেশী দেশটিতে স্বর্ণের বার্ষিক চাহিদা অন্তত ১ হাজার টন। বিশেষ করে বিয়েসহ নানা উৎসবের মৌসুম হওয়ায় শীতকালে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণের চাহিদা তৈরি হয়।
স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোক্তা দেশ ভারত। প্রতিবেশী দেশটিতে স্বর্ণের বার্ষিক চাহিদা অন্তত ১ হাজার টন। বিশেষ করে বিয়েসহ নানা উৎসবের মৌসুম হওয়ায় শীতকালে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণের চাহিদা তৈরি হয়। কিন্তু উচ্চ মাত্রায় শুল্ক আরোপিত থাকায় এ চাহিদা পূরণের জন্য দেশটির ব্যবসায়ীদের বৈধপথে স্বর্ণ আমদানিতে খরচ পড়ে অনেক বেশি। এ কারণে বিশ্বব্যাপী পাচারকৃত স্বর্ণের বৃহত্তম গন্তব্য হয়ে উঠেছে ভারত, যার বেশির ভাগই প্রবেশ করে বছরের শেষ তিন মাস অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর তথা শীতকালে। দেশটিতে পাচারকৃত এ স্বর্ণ সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে।
ভারতীয় শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্সের তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে পরিচালিত এক গবেষণায়ও উঠে এসেছে, দেশটিতে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ পাচার হয় শীতের তিন মাস অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে। মূল্যবান ধাতুটির আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতে স্বর্ণ পাচারের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বেঙ্গালুরুভিত্তিক সেন্ট জোসেফস ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট এবং পন্ডিচেরি ইউনিভার্সিটির তিন গবেষক।
‘গোল্ড স্মাগলিং ইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইটস ইফেক্ট অন দ্য বুলিয়ন ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক গত মার্চে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসা এ পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত পোষণ করছেন দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরাও।
তাদের ভাষ্যমতে, শীতকালে কুয়াশা বেশি থাকার কারণেও চোরাকারবারিরা এর সুবিধা নিতে বেশি তৎপর হয়ে ওঠে। আবার এ কুয়াশার কারণেই শীতে পাচারের সময় স্বর্ণ জব্দের পরিমাণও কমে যায়। বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২৩ পর্যন্ত চার বছরে সীমান্ত এলাকায় পাচারের সময় মোট প্রায় ৫৯৪ কেজি স্বর্ণ জব্দ করেছেন বাহিনীটির সদস্যরা। এর প্রায় ৪৪ শতাংশই আটক হয়েছে গত বছর। ২০২৩ সালে দেশের সীমান্ত এলাকা থেকে পাচারের সময় জব্দ করা হয়েছে ২৬০ কেজি ৫৬৭ গ্রাম স্বর্ণ। এর মধ্যে অক্টোবরে ১৪ কেজি ৭৯৪ গ্রাম, নভেম্বরে ২৭ কেজি ৪০০ ও ডিসেম্বরে ১১ কেজি ৬৪৩ গ্রাম স্বর্ণ আটক করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিজিবি মুখপাত্র কর্নেল মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণত শীতের সময় সীমান্ত এলাকায় কুয়াশার প্রকোপ থাকে বেশি। এ সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করে স্বর্ণ পাচারে যুক্ত অপরাধীরা। স্বর্ণ পাচার বন্ধে শীতের আগেই সীমান্ত এলাকায় নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। আগামীতেও সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণ পাচার রোধে শক্ত অবস্থান ধরে রাখবে বিজিবি।’
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার ভারসাম্যে স্বর্ণ পাচারের ব্যাপক প্রভাব পড়ে বলে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা, ব্যাংকার ও মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্যমতে, স্বর্ণ পাচার বাড়লে ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটে ডলারের বিনিময় হারের মধ্যে ব্যবধানও বেড়ে যায়। দেশের কার্ব মার্কেটের একটি অংশ সবসময়ই ভারতনির্ভর। প্রতিবেশী দেশটি থেকে অবৈধ পথে আসা ডলার লেনদেন হয় মূলত কার্ব মার্কেটে। সাম্প্রতিক সময়ে কার্ব মার্কেটে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে ভারতে স্বর্ণ পাচার ও সেখান থেকে মুদ্রাটির সরবরাহের যোগসূত্র রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের কার্ব মার্কেটে ডলারের দর স্থিতিশীল হয়ে আসে। আগস্টের শেষের দিকে ব্যাংক খাতে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময় হার ছিল ১২০ টাকা। একই সময়ে খুচরা বাজারে প্রতি ডলার ১২১-১২২ টাকায় ওঠানামা করছিল। আবার চলতি মাসের শুরুতে খুচরা বাজারে ডলারের বিনিময় হারে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতা দেখা যায়। গতকালও রাজধানীর মানি এক্সচেঞ্জগুলোয় প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২৪-১২৫ টাকার মধ্যে। এর আগে গত দুই সপ্তাহে এ দর ১২৬ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
এ বিষয়ে রাজধানীর মতিঝিলভিত্তিক এক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে এ ডলার বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটে মুদ্রাটির বিনিময় হারের ভারসাম্যে বরাবরই স্বর্ণ পাচারের বড় প্রভাব পড়তে দেখা গেছে।’
দেশে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে রেমিট্যান্স হিসেবে ডলারের সরবরাহেও বড় প্রভাব ফেলছে স্বর্ণ পাচার। দেশে রেমিট্যান্স হিসেবে আসা ডলারের বড় উৎস মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। ভারতে পাচারকৃত স্বর্ণেরও অন্যতম প্রধান উৎস মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের অর্জিত আয়ের পরিবর্তে বড় একটি অংশ এখন ডলারের পরিবর্তে স্বর্ণের বার হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। দেশের বিমানবন্দরগুলোয় এগুলোর বৈধকরণও হচ্ছে। শুল্কহার দ্বিগুণ করেও মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিট্যান্সের পরিবর্তে স্বর্ণের বার আনা বন্ধ করা যায়নি। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও শুধু চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরেই প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণের বার বৈধ করা হয়েছে। তবে বৈধ পথে যত স্বর্ণ বাংলাদেশে প্রবেশ করে, অবৈধ পথে তার কয়েক গুণ প্রবেশ করছে বলে মনে করছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী-সংশ্লিষ্টরা।
যশোরসহ খুলনা বিভাগের সীমান্তবর্তী জেলাগুলো এখন ভারতে বাংলাদেশ থেকে স্বর্ণ পাচারের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শুধু যশোরেই গত চার বছরে পাচারের সময় স্বর্ণ জব্দ হয়েছে ২৫০ কেজি।
স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, বর্ষা মৌসুমে যশোরের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় পানি জমে থাকে। এটিও এখানকার চোরাকারবারিদের স্বর্ণ পাচারের জন্য শুষ্ক মৌসুমকে বেছে নেয়ার বড় কারণ।
সীমান্তবর্তী এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গরু ব্যবসার নামে খাটাল (গোয়াল) তৈরি করা হয়। মূলত এর আড়ালেই বাহকের মাধ্যমে ভারতে স্বর্ণ পাচার করা হয়। এর বিনিময়ে ভারত থেকে সমপরিমাণ ডলার বা অন্য মুদ্রা অবৈধভাবে বাংলাদেশে আনা হয়। এখান দিয়ে যে পরিমাণ স্বর্ণ পাচার হয় বিজিবি বা কাস্টমসের হাতে তার ভগ্নাংশ ধরা পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৪৯ বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, ‘চোরাচালান রোধে বিজিবি সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে আমাদের গোয়েন্দা দল কাজ করছে। যশোর সীমান্তে বর্ষা মৌসুমে পানি জমে থাকে। এ কারণে চোরাকারবারি স্বর্ণ পাচারের জন্য শুষ্ক মৌসুমকে বেছে নেয়।’
বাংলাদেশ থেকে ভারতে স্বর্ণ পাচার বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হিসেবে দেশটিতে পণ্যটি আমদানিতে উচ্চ মাত্রায় শুল্ক আরোপকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্যমতে, শুল্ক ফাঁকি দিতে গিয়ে দেশটিতে স্বর্ণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অনেকেই এখন চোরাচালানের মাধ্যমে আনা পণ্য সংগ্রহের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। বর্তমানে বৈশ্বিক স্বর্ণ আমদানি ও স্বর্ণ গহনা রফতানি—দুদিক থেকেই ভারতের অবস্থান শীর্ষে। দেশটিতে এখন প্রতিনিয়তই সম্প্রসারণ হচ্ছে স্বর্ণের কালোবাজার। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি) জানিয়েছে, এ মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী গৃহস্থালি পর্যায়ে স্বর্ণের সবচেয়ে বড় মজুদ রয়েছে ভারতে। দেশটির পরিবারগুলোর কাছে জমা স্বর্ণের পরিমাণ কমপক্ষে ২৫ হাজার টন। বিয়ে, ধর্মীয় উৎসব ও পারিবারিক নানা অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য দেশটিতে স্বর্ণের চাহিদা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে।
ক্রমবর্ধমান এ চাহিদার কারণে ভারত এখন বৈশ্বিক স্বর্ণ চোরাচালানের সবচেয়ে বড় গন্তব্য দেশ হয়ে উঠেছে। দেশটির ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্সের তথ্য অনুযায়ী, চাহিদা অনেক বেশি হলেও ভারতে বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি করতে হলে বড় অংকের শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। এ কারণে দেশটিতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখন পণ্যটি চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। আর দেশটিতে চোরাচালানকৃত স্বর্ণের সবচেয়ে বড় উৎস এখন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। ভারতে এখন পর্যন্ত আটক করা পাচারকৃত স্বর্ণের ৭৩ শতাংশই এসেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে। দেশটিতে চীন থেকে আসা স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে মিয়ানমার হয়ে। আর মধ্যপ্রাচ্য-আফ্রিকাসহ অন্যান্য উৎস থেকে পাচার হওয়া স্বর্ণের সবচেয়ে বড় করিডোর এখন বাংলাদেশ।
যশোরের পার্শ্ববর্তী জেলা ঝিনাইদহের সীমান্ত দিয়েও প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে স্বর্ণ চোরাচালান হয় ভারতে। এ স্বর্ণ চোরাচালানে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এখানে খুনখারাবির ঘটনাও ঘটেছে অনেক। হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এখানকার জনপ্রতিনিধিও। সর্বশেষ গত মে মাসে কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের তৎকালীন এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশ ও ভারতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। সে সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে স্বর্ণ চোরাচালানে আধিপত্য বিস্তারের যোগসূত্র রয়েছে।
সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর মধ্যে স্বর্ণ পাচারের আরেক বড় রুট এখন চুয়াডাঙ্গা দিয়েও প্রচুর স্বর্ণ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মেজর কাজী আসিফ ইকবাল বলেন, ‘সীমান্ত রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। চোরাচালান রোধে আমরা আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছি।’
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে পাচার হয়ে যাচ্ছে। সমিতির মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এ পরিসংখ্যান আমরা বিগত সরকারকে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা এটি গ্রহণ করেনি। কেন করেনি সেটা এখন বুঝতে পারছি। বিগত সরকারের মধ্যে যারা এ পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল তারাই এর পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। বিগত সরকার স্বর্ণ আমদানির যে নীতিমালা দিয়েছে সেখানে জটিলতা রয়েছে। বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি লাগেজের মাধ্যমেও স্বর্ণ আনার সুযোগ করে দেয়া হলো। এ দ্বৈত নীতি নেয়া হয়েছিল মূলত স্বর্ণ পাচারকে উৎসাহিত করার জন্য। এ ব্যাগেজ নীতিমালার মধ্য দিয়ে গত বছর ৫৪ টন স্বর্ণ দেশে এসেছে। পরে এর ৮০ শতাংশই দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের যে দাম তার সঙ্গে আমাদের দেশের দামের সমন্বয় থাকছে না।’
এমআই

অর্থনীতি
ঘরে বসেই যেভাবে পাবেন টিআইএন সার্টিফিকেট

করদাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশের প্রথম ধাপ হচ্ছে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন। ই-টিআইএন সার্টিফিকেট (ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর) পাওয়ার পরপরই করদাতাকে সাধারণত প্রতি করবর্ষে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। যদিও ব্যতিক্রমও আছে।
শুধু ব্যবসা বা চাকরিজীবীদের জন্য নয়, অনেকগুলো কারণে ই-টিআইন সার্টিফিকেট প্রয়োজন রয়েছে। সরকারি-বেসকারি ৫০ এর বেশি সেবা বা কাজে টিআইএন প্রয়োজন রয়েছে।
যার মধ্যে রয়েছে- পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে যেমন- ঋণপত্র স্থাপন; রপ্তানি নিবন্ধন সনদ নেওয়া; সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া বা পুনর্নিবন্ধন; দরপত্র জমা; অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ গ্রহণ; বিমা জরিপ প্রতিষ্ঠান; জমি, ভবন ও ফ্ল্যাট নিবন্ধন; মোটরসাইকেল-বাস-ট্রাকের মালিকানা পরিবর্তন ও ফিটনেস নবায়ন; চিকিৎসক, প্রকৌশলী, হিসাববিদসহ বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য; কোম্পানির পরিচালক ও স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার; বিবাহ নিবন্ধনকারী বা কাজি ও ড্রাগ লাইসেন্সধারী ইত্যাদি ক্ষেত্রে টিআইএন সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ নিতেও টিআইএন বাধ্যতামূলক, মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসা; মোবাইল ব্যাংকিং; পরিবেশক এজেন্সি; বিভিন্ন ধরনের পরামর্শক, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জনবল সরবরাহ, সিকিউরিটি সার্ভিস। এমনকি আমদানি-রপ্তানির বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে হলেও টিআইএন প্রয়োজন।
অন্যদিকে জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলেও টিআইএন বাধ্যতামূলক। এছাড়া রয়েছে বাণিজ্যিক ভবনের নকশা অনুমোদনে; বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য; ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিলে; সঞ্চয়পত্র ক্রয়, ক্রেডিট কার্ড থাকলে; বাণিজ্যিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগ চাইলে টিআইএন থাকতে হবে। আবার ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে চাইলে অভিভাবকের টিআইএন প্রয়োজন।
এছাড়া সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কিংবা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের যাদের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি তাদেরও কর শনাক্তকরণ সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের করযোগ্য আয়ধারী কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও টিআইএন বাধ্যতামূলক। যদিও তাদের শুধু টিআইএন নিলে হয় না, আয়কর রিটার্নও জমা দিতে হয়।
এছাড়া সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন নিতেও টিআইএন নিতে হয়। এমনকি রাইড শেয়ারিং যেমন- উবার বা পাঠাও অংশীদার হতে হলে কিংবা অনলাইনে ইনকাম, যেমন- ফেসবুক থেকে আয় করতে চাইলে, ইউটিউব থেকে ইনকাম করতে চাইলে, ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলেও ই-টিআইন সার্টিফিকেট প্রয়োজন রয়েছে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে ঘরে বসে অনলাইনেই সহজে পাওয়া যাচ্ছে ই-টিআইএন সার্টিফিকেট। করদাতা নিবন্ধন পেতে আপনাকে কর অফিসে যেতে হবে না।
টিআইএন সার্টিফিকেট আবেদন করতে কী কী প্রয়োজন ও আবেদন করার ধাপ সমূহ হলো-
আবেদন করতে যা প্রয়োজন
টিআইএন সার্টিফিকেট আবেদন করতে একজন করদাতাকে জাতীয় পরিচয় পত্র, প্রবাসী হলে এনআইডি ও পাসপোর্ট, আবাসিক ঠিকানা, জেলা, বিভাগ, বায়োমেট্রিক করা মোবাইল নম্বর প্রয়োজন হবে। ওইসব তথ্য দিয়ে আবেদন করতে আপনাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের https://secure.incometax.gov.bd/TINHome এই ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে হবে।
আবেদন করার ধাপ সমূহ
ধাপ- ১:
যে কোনো করদাতাকে এনবিআরের ই-টিআইএন সার্ভারে প্রবেশ করার পর User ID এবং Password নিতে হয়। যা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ ওই আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে যে কোনো সময় ই-টিআইএন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন একজন করদাতা। User ID এবং Password নেওয়ার জন্য আবেদনকারীকে বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের https://secure.incometax.gov.bd/TINHome সাইটে প্রবেশ করতে হবে। তারপর Register অপশনটিতে ক্লিক করলেই আপনাকে আবেদন করার পৃষ্ঠায় নিয়ে যাবে।
ধাপ-২:
এই পৃষ্ঠাতে আবেদনকারীকে অবশ্যই একটি একাউন্ট করে নিতে হবে। যা করদাতাকে ইংরেজি বর্ণমালায় টাইপ করতে হবে। শুরুতেই আপনাকে একটি ‘User Name’ দিতে হবে। এরপর পছন্দমতো পাসওয়ার্ড পাসওয়ার্ড দিতে হবে। এমন পাসওয়ার্ড দিবেন যেটা আপনার মনে রাখতে সুবিধা হয়। একইভাবে Retype Password এর যায়গায় একই পাসওয়ার্ড আবার লিখতে হবে।
এরপর Security Question এ কিছু অপশন আসবে যেমন আপনার জন্ম তারিখ কোথায়,আপনার জন্ম স্থান কোথায়, আপনার গ্রাম কোথায়, আপনার প্রিয় রং ইত্যাদি। আপনি এমন একটা অপশন নিবেন যাতে করে আপনার মনে থাকে। এটি পরবর্তী সময়ে লাগবে যখন আপনি User name কিংবা Password ভুলে যাবেন তখন এটি মনে রাখলে আপনি আপনার যাবতীয় ই-টিআইএন সম্পর্কিত তথ্য গুলো পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
ধাপ-৩
রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পর https://secure.incometax.gov.bd/TINHome গিয়ে এবার লগইন (login) অপশনে প্রবেশ করে User name ও Password দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। এরপরই মূলত আবেদনকারীকে করদাতার ধরন, টিআইএন এর উদ্দেশ্য, আয়ের প্রধান উৎস, পেশার ধরন, পেশায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের লোকেশন ইত্যাদি পূরণ করতে হবে। নির্ভুলভাবে পূরণ করার পর পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।
ধাপ-৪
ফরমপূরণের এই ধাপে একজন করদাতার ব্যক্তিগত সকল তথ্য দিতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে করদাতার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পিতা-মাতার নাম, মোবাইল নম্বর, স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি। পূরণকৃত তথ্য অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুরূপ হতে হবে। ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিলে ভবিষ্যতে হয়রানি শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর পরবর্তী ধাপে গেলে আপনার পূরণকৃত ফরমের একটি সামারি বা ছবি চলে আসবে। যেটা যাচাই করে সঠিক মনে হলে আবেদনকারীকে সাবমিট এপ্লিকেশন বোতামে ক্লিক করে টিআইএন সার্টিফিকেট সংগ্রহ বা প্রিন্ট করতে হবে। টিআইএন সার্টিফিকেট চাইলে সার্ভারে সেইফ বা সংরক্ষণ করতে পরবেন একজন করদাতা।
কাফি
অর্থনীতি
বিসিএমএ’র নতুন সভাপতি প্রিমিয়ার সিমেন্টের এমডি আমিরুল হক

দেশের সিমেন্টশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আমিরুল হক।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ঢাকায় বিসিএমএর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তাঁকে দুই বছরের জন্য সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
এ ছাড়া সংগঠনের প্রথম সহসভাপতি হয়েছে কনফিডেন্স সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইমরান করিম। সহসভাপতি হয়েছেন ইউনিক সিমেন্টের পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা।
বিসিএমএ জানায়, নবনির্বাচিত সভাপতি আমিরুল হক বিসিএমএর পাশাপাশি এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলওএবি) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চার দশক ধরে তিনি দেশে ব্যবসা–বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। পেট্রোকেমিক্যাল, শিপিং, বীজ প্রক্রিয়াকরণ ও ভোজ্যতেল শোধনাগার, আটার কল, চিংড়ি হ্যাচারি, ব্যাগ, স্যাক উৎপাদন, আবাসন খাতসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম চেম্বার ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন আমিরুল হক। দেশের শিল্প খাতে অবদানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তিনি একাধিকবার সিআইপিও নির্বাচিত হন।
সভাপতি, প্রথম সহসভাপতি ও সহসভাপতি ছাড়াও বিসিএমএর নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন সেভেন রিং সিমেন্টের তাহমিনা আহমেদ।
এ ছাড়া নির্বাহী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন হাইডেলবার্গ সিমেন্টের ট্যারেন্স ওএনজি, মীর সিমেন্টের শামা-ই-জহির, ডায়মন্ড সিমেন্টের আবদুল্লাহ ইফতেখার, এনজিএস সিমেন্টের অভিমুন্য সাহা ও আকিজ সিমেন্টের মো. মশিউর রহমান।
আমিরুল হকের আগে বিসিএমএর সভাপতি ছিলেন ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির। তিন দফায় দায়িত্ব পালনের পর নিয়ম অনুযায়ী নতুন সভাপতির হাতে সংগঠনের নেতৃত্ব তুলে দেন বিদায়ী সভাপতি।
অর্থনীতি
বাড়তি ব্রয়লার মুরগির দাম, মাছের বাজারে স্বস্তি

রাজধানীর কাঁচাবাজারে ফের বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। ঈদের পর দাম কমে গেলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এদিকে হঠাৎ করেই দামের এই ঊর্ধ্বগতিতে বিস্মিত হচ্ছেন ক্রেতারা। তবে মাছের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল থাকায় সেখানেই কিছুটা স্বস্তি খুঁজছেন তারা। এদিকে গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের মতোই রয়েছে, কিন্তু ঈদের রেশ না কাটায় সেখানে নেই তেমন বিক্রি।
শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রীসহ আশেপাশের একাধিক বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজারে এখন ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫–১৭০ টাকা কেজিতে। গত সপ্তাহেও সেটি ছিল ১৪৫–১৫০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ কেজিতে ১৫–২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সোনালি মুরগির দামও বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৮০ টাকা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরেই কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ব্রয়লার মুরগির জন্য সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা দাম নির্ধারণ করেছিল। এক বছর না যেতেই আবার সেই দামের কাছাকাছি চলে এসেছে বাজার।
রামপুরা বাজার গিয়ে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দোকানে ভিড় অনেকটাই কম। মুরগির দোকানে দাঁড়িয়ে আছেন গৃহিণী হাসিনা আক্তার। পাশ থেকে হাঁক ডেকে বললেন, “ভাই, এই তো গত সপ্তাহে তো ১৫৫ টাকায় কিনেছি, আজকে হঠাৎ ১৭৫ বলছেন ক্যান? সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বাড়া কি স্বাভাবিক?” দোকানি মো. রিয়াজ উদ্দিন মুখে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে জবাব দিলেন, “ আমরা তো নিজেরা দাম বাড়াই না। ফার্ম থেকেই এখন ১৬০–১৬৫ টাকা পড়ছে। আমাদের যদি ১০ টাকা লাভ না থাকে, চলবে কীভাবে? আমরাও তো কষ্টে আছি।”
রেজাউল করিম নামের এক পোশাককর্মী বলেন, তিনদিন আগেও অফিসের পেছনের গলির দোকানে ১৫০ টাকা কেজি ছিল। আজ বলল ১৭০! বাসায় বাচ্চাদের জন্য কিনি, নিজেরা তো যা পাই তা দিয়েই চলে। এত দাম দিলে তো মুরগিও বাদ দিতে হবে!
তিনি বলেন, এতদিন মুরগি ১৪০-১৫০ টাকার মধ্যে ছিল, আমার মতে এটাই ছিল ব্রয়লার মুরগির স্বাভাবিক দাম। এই দামে থাকলে গরিব ধনী সবাই নিজেদের চাহিদা মতো খেতে পারবে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই হঠাৎ করে দাম কেন জানি বেড়ে যায়।
বাজার পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন, ফার্ম ও পরিবহনপর্যায়ে একটি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। যদিও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন—বর্ষা মৌসুমে সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন এবং ফিডের মূল্যবৃদ্ধিই দাম বাড়ার পেছনে মূল কারণ। মুরগি বিক্রেতা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, “দাম বাড়ছে ফার্ম থেকে। আমরা আগে যেখানে ১৪৫–১৫০ টাকায় কিনতাম, এখন সেখানে কিনতে হচ্ছে ১৬০–১৬৫ টাকায়। আমাদের যে খরচ, তাতে অন্তত ১৫ টাকা লাভ না রাখলে ব্যবসা টিকবে না। এই দামে বিক্রি করতেই বাধ্য হচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, কোনো কোনো গ্রাহক ভাবছেন আমরা ইচ্ছে করে দাম বাড়িয়েছি। কিন্তু আমরাও বিপদে। পরিবহন খরচ, শ্রমিক, দোকান ভাড়া—সবমিলিয়ে ন্যূনতম লাভেই চলছি।
বনশ্রী এ ব্লক এলাকার বাজারে গিয়ে দেখা গেলো সকালের মাছের বাজার অনেকটাই জমজমাট। মাছের দোকানগুলোতে তাজা রুই, কাতল, পাবদা সাজানো। দাম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে বাজারে রুই ও কাতল বিক্রি হচ্ছে ৩০০–৩৪০ টাকা কেজিতে। পাবদা ৩৫০–৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০–৭০০, টেংরা ৬০০–৭০০, শিং ৪০০–৪৫০, কৈ ২০০–২২০ এবং তেলাপিয়া–পাঙ্গাস পাওয়া যাচ্ছে ১৮০–২০০ টাকায়। দেশি শিং ও কৈ মাছের দাম অবশ্য এখনও অনেক বেশি—প্রতি কেজি যথাক্রমে ১২০০ ও ১০০০ টাকা।
বাজার করতে আসা শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বললেন, আজকের বাজারে মুরগির দাম একটু বেড়েছে। গরু-খাসির দাম তো অনেক বেশি। সেই তুলনায় আমার মত নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য মাছ এখন সবচেয়ে ব্যালান্সড অপশন।
মাছ বিক্রেতা হুমায়ুন কবির বললেন, “ঈদের পর এখন লোকজন মাংস থেকে সরে মাছেই ঝুঁকছে। দামও বাড়েনি, আবার ভালো মাছ মিলছে, তাই বিক্রিও ভালো।”
শ্যামল মিয়া নামক আরেক বিক্রেতা জানান, মাংস-মুরগির বাজারে দাম বাড়ছে, আর আমরা মাছওয়ালারা একটু স্বস্তিতে আছি। রুই কাতল আগের মতোই আছে, তাই মানুষ আসছে। পাবদা, তেলাপিয়া ভালো যাচ্ছে।
এদিকে ঈদের এক সপ্তাহ পেরোলেও এখনও রাজধানীর অধিকাংশ পরিবারে কোরবানির মাংস আছে। সেই কারণে গরু, খাসি ও ছাগলের মাংসের দোকানগুলোতে এখনো ক্রেতার অভাব। রামপুরা বাজারের মাংস ব্যবসায়ী মো. কবির হোসেন বলেন, “ঈদের পর এমনটা হতেই পারে, তবে এবার একটু বেশি সময় ধরে লোকজন মাংস কিনছে না। দাম কমেনি—গরু ৭৫০–৭৮০, খাসি ১১০০ আর ছাগল ১০০০ টাকায় বিক্রি করছি। কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। যারা কোরবানি দেয়নি, তারাও মাছ-মুরগিতে চলে গেছে।
অর্থনীতি
আজ ও আগামীকাল কাস্টম হাউজ খোলা

আজ শুক্র ও আগামীকাল শনিবার (১১-১২ জুলাই) ছুটির দুই দিন দেশের সব কাস্টম হাউজ খোলা থাকবে। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) কাস্টমস নীতির প্রথম সচিব মু রইচ উদ্দিন খানের সই করা নির্দেশনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এতে বলা হয়, ধীরগতির কারণে গত কয়েকদিন দেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্যচালান ছাড় প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়।
এ অবস্থায় দেশের আমদানি- রপ্তানি বাণিজ্য নিরবচ্ছিন্ন রাখার উদ্দেশ্যে ১১-১২ জুলাই, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান রাখার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
অর্থনীতি
অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত গ্রেপ্তার

অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. নাসিরুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে ধানমন্ডি থেকে আবুল বারকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা আছে। এর ভিত্তিতে ডিবি অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
এননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আবুল বারকাতসহ ২৩ জনের নামে মামলা করে দুদক। সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ও আবুল বারকাত পরস্পর যোগসাজশে জালজালিয়াতির মাধ্যমে এননটেক্স গ্রুপের ২২টি প্রতিষ্ঠানকে এই টাকা ঋণ দিয়েছিলেন। আতিউর রহমান, তাঁর সহযোগী অন্য ব্যক্তিরা বিভিন্ন অনৈতিক কৌশলে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।