অর্থনীতি
ব্যাংক থেকে ১৭০০ কোটি ডলার লুট করেছে হাসিনার দোসররা

বাংলাদেশের ব্যাংকখাত থেকে ১৭০০ কোটি মার্কিন ডলার লুট করেছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোসর টাইকুন বা ধনকুবেররা। আর এ কাজে তারা গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা পেয়েছেন। লুট করা এই অর্থের পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ লাখ কোটি টাকারও বেশি। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর একথা জানিয়েছেন।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সাথে যুক্ত টাইকুনদের বিরুদ্ধে তার শাসনামলে ব্যাংকিং খাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচারের জন্য দেশের শক্তিশালী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সাথে কাজ করার অভিযোগ করেছেন।
ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের মুখে গত আগস্ট মাসে শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিযুক্ত হন আহসান মনসুর। ফিনান্সিয়াল টাইমসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) নেতৃস্থানীয় ব্যাংকগুলো জোরপূর্বক দখলের কাজে সহায়তা করেছিল।
মনসুর বলেন, ব্যাংকগুলো দখলে নেওয়ার পর আনুমানিক ২ ট্রিলিয়ন টাকা বা ১ হাজার ৬৭০ কোটি মার্কিন ডলার লুট করা হয়েছে। মূলত ব্যাংক দখলে নেওয়ার পর নতুন শেয়ারহোল্ডারদের ঋণ দেওয়া এবং আমদানি চালান স্ফীত করার মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে এই অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যেকোনও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এটিই সবচেয়ে বড়, সর্বোচ্চ ব্যাংক লুটপাট। বিশ্বের আর কোথাও এই পরিমাণে লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি এবং এর পেছনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছিল এবং গোয়েন্দারা (ব্যাংকের সাবেক সিইওদের) মাথায় বন্দুক না ধরলে এটি ঘটতে পারত না।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই গভর্নর বলেন, শিল্পগোষ্ঠী এস আলমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং তার সহযোগীরা ডিজিএফআই-এর সহায়তায় ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে “ন্যূনতম ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিনিয়ে নিয়েছে। প্রতিদিনই তারা নিজেদেরকে ঋণ দিতো।”
অবশ্য সাইফুল আলমের পক্ষে ল ফার্ম কুইন ইমানুয়েল উরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভানের দেওয়া এক বিবৃতিতে এস আলম গ্রুপ বলেছে, আহসান মনসুরের এই অভিযোগের কোনও সত্যতা নেই।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, এস আলম গ্রুপ এবং বাংলাদেশের অন্যান্য নেতৃস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের সমন্বিত প্রচারণা যথাযথ প্রক্রিয়ার মৌলিক নীতিগুলোকেও সম্মান করতে ব্যর্থ হয়েছে। এটি ইতোমধ্যেই বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে অবদান রেখেছে। গ্রুপের রেকর্ড এবং অবদানের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গভর্নরের অভিযোগগুলোকে বিস্ময়কর এবং অযৌক্তিক বলে দেখতে পাচ্ছি…।
ফিনান্সিয়াল টাইমস বলছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর মিডিয়া উইং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও কোনও জবাব পাওয়া যায়নি। এছাড়া এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ডিজিএফআই-এর সাথেও যোগাযোগ করা যায়নি।
সাবেক আইএমএফ কর্মকর্তা আহসান মনসুর এর আগে গত মাসে এফটিকে বলেছিলেন, শেখ হাসিনার মিত্রদের বৈদেশিক সম্পদের তদন্তের জন্য যুক্তরাজ্যের সহায়তা চেয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, হাসিনার শাসনামলে নেতৃস্থানীয় ব্যাংকের বোর্ড সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, বোর্ডের সদস্যদের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হোটেলের মতো অন্যান্য স্থানে নিয়ে যায় এবং বন্দুকের মুখে তাদের ব্যাংকের সমস্ত শেয়ার এস আলমের কাছে বিক্রি করতে এবং তাদের পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলত। একের পর এক ব্যাংকে তারা এটা করেছে।
বাংলাদেশের একটি ব্যাংকের সাবেক সিইও এফটিকে বলেছেন, জোরপূর্বক ব্যাংক দখলের অংশ হিসাবে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল। দেশের অন্যতম বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সাবেক সিইও মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেছেন, ২০১৩ সাল থেকে তিনি তৎকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাপে পড়েছিলেন।
মান্নান বলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে একটি বোর্ড মিটিংয়ে যাওয়ার পথে তাকে তুলে নেওয়া হয় এবং পরে একজন সিনিয়র প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সাথে তাকে দেখা করতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার জন্য পুরো একটি কার্যদিবস বসিয়ে রাখা হয়েছিল।
মনসুর বলেন, হাসিনার সরকারের আমলে দেউলিয়া হওয়া প্রায় ডজন খানেক ব্যাংকের অডিট শেষ করে চুরি হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, “আমরা সেই অডিটটিকে আন্তর্জাতিক এবং দেশীয়ভাবে আইনের আদালতে প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করতে চাই।”
এমআই

অর্থনীতি
যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় টোল আদায় ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা

ঈদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে ঘরমুখো হচ্ছে মানুষ। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে।এদিকে বাড়ছে যমুনা সেতুতে টোল আদায়ের পরিমাণ। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা সেতু থেকে ২ কোটি ৮৬ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকা টোল আদায় করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ এবং এর বিপরীত ৩৩ হাজার ৫৬৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে।
বুধবার (৪ জুন) সকালে যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ হাজার ৫৬৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৭ হাজার ৬৫৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৮২ হাজার ৮৫০ টাকা। অপরদিকে ঢাকাগামী ১৫ হাজার ৯০৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর বিপরীতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪১ লাখ ৮১ হাজার ৫০ টাকা।
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও নেই যানজট। যানজট নিরসনে যমুনা সেতু পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশে ৯টি করে ১৮টি টোল বুথ স্থাপনসহ মোটরসাইকেলের জন্য ৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর ওপর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেই জন্য দুইটি রেকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় আছে। সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে। মানুষ যেন নির্বিঘ্নে গন্তব্য পৌঁছাতে পারে।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ শরীফ বলেন, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ রয়েছে, নেই যানজট। এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কে কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশ মহাসড়কে সার্বক্ষণিক রাত-দিন কাজ করছে। মানুষ যেন নির্বিঘ্নে গন্তব্য পৌঁছাতে পারে সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
অর্থনীতি
১১ মাসে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ

সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে— এই ১১ মাসে দেশের মোট পণ্য রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
মঙ্গলবার (৩ জুন) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে প্রকাশিত হালনাগাদ রিপোর্ট থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, শুধু গত মে মাসেই পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৪৭৪ কোটি ডলারের, যা গত বছরের মে মাসের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। এটি চলতি অর্থবছরের মধ্যে এক মাসে সর্বোচ্চ রপ্তানির রেকর্ড। এর মধ্যে, সবচেয়ে বড় সুখবর এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। মে মাসে এককভাবে এই খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৯২ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। অর্থবছরের প্রথম ১১ মাস মিলিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৫৬ কোটি ডলারে— পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১০ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।
মূলত, বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। শিল্প মালিকরা বলছেন, নতুন বাজার খোঁজা, অর্ডার পণ্যের বৈচিত্র্য এবং উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধির কারণে এ সাফল্য সম্ভব হয়েছে।
অন্যদিকে, ইপিবির বিশ্লেষণ বলছে, তৈরি পোশাক ছাড়াও মে মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা, প্রকৌশল পণ্য এবং প্লাস্টিক সামগ্রীর রপ্তানি বেড়েছে। তবে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
অর্থনীতি
সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭ শতাংশে নামবে মূল্যস্ফীতি: গভর্নর

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বিশ্ববাজারে খাদ্য, তেল-গ্যাসের দর কমতির দিকে। এর সুফল পাবে। এ ছাড়া মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করা হয়েছে। আশা করছি আগামী জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭ শতাংশে নেমে আসবে মূল্যস্ফীতি।
মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর তার এ প্রত্যাশার কথা জানান। একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি কমলে সুদহারও কমানো হবে বলেও জানান তিনি।
গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতির বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এক্সচেঞ্জ রেট। এটা কমাতে না পারলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ত। এখন এটা স্বস্তিতে এসেছে। এক্সচেঞ্জ রেট বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও তেমন পরিবর্তন হয়নি। এতে করে আস্থা এসেছে, মূল্যস্ফীতি একটি ভালো জায়গায় যাচ্ছে।
গভর্নর বলেন, আমরা যদি পরিসংখ্যান দেখি— খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১৪ শতাংশ ছিল, এখন তা সাড়ে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি একটু বেশি আছে, এটি কমছে, এখন ১০ শতাংশের নিচে আছে। বিশ্ববাজারে খাদ্য, তেল-গ্যাসের দর কমতির দিকে। এর সুফল পাবে। এ ছাড়া মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করা হয়েছে। আশা করছি আগামী জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭ শতাংশে নেমে আসবে মূল্যস্ফীতি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বিদ্যুৎ জ্বালানি সড়ক সেতু ও রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাণিজ্য, বিমান এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ বিভিন্ন আর্থিক খাতের প্রধানরা।
গতকাল বিকেলে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা এটি।
কাফি
অর্থনীতি
এবারের বাজেট জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব: অর্থ উপদেষ্টা

এবারের বাজেট জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ৷ আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি৷
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সামনের পথ কঠিন৷ আমরা চেষ্টা করছি এনবিআরকে রিঅর্গানাইন করতে, বাইরে থেকে ঋণ আনার প্রক্রিয়াটাও মোটামুটি নেগোশিয়েট করে ফেলেছি৷
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি আমরা একটি জনবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট দিতে পেরেছি৷ অনেকে বলছে তোমরা আগের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছ৷ হুট করেই যে আমরা একটা বিপ্লবী বাজেট দিয়ে দেব, সেটা তো সম্ভব না৷ বাজেটে একেবারে যে ইনোভেশন নেই, তা কিন্তু নয়৷ গতকাল বাজেট দিয়েছি, এটা ওপেন থাকবে৷ কিছু সাজেশন আসবে৷ পরবর্তীতে ফাইনাল বাজেটটা আসবে৷
তিনি আরও বলেন, সার্বিকভাবে আমি মনে করি চ্যালেঞ্জের মুখে একটু কোলাবোরেটিভ, সিমপেথেটিক হয়ে কাজ করবেন৷ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে৷ আমরা চাই একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যে, এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে৷ বাজেটের নির্যাস হলো সবার জীবন যাপনকে স্বচ্ছ করা, সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো ও জীবনমান উন্নত করা৷
বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বিদ্যুৎ জ্বালানি সড়ক সেতু ও রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টার মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাণিজ্য বিমান বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টার শেখ বশিরউদ্দীন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ বিভিন্ন আর্থিক খাতের প্রধানরা।
এর আগে সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভি সহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের বাজেটটি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, যা পূর্ববর্তী বছরগুলোর বাজেটের তুলনায় ভিন্ন।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা।
কাফি
অর্থনীতি
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ জুলাইয়ের চেতনার পরিপন্থি: সিপিডি

রাজনৈতিক সরকারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটেও অপ্রদর্শিত আয় (কালোটাকা) বৈধ করার সুযোগ রাখায় কড়া সমালোচনা করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এ ধরনের পদক্ষেপ জুলাই আন্দোলনের বৈষম্যবিরোধী চেতনার পরিপন্থি।
মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর একটি হোটেলে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
ফাহমিদা বলেন, বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বহাল রাখা হয়েছে। তাতে যারা নিয়মিত নৈতিকভাবে কর দেন তাদের নৈতিকতাতে আঘাত করা হয়েছে। এতে বৈধপথে উপার্জনকারীদের সঙ্গে বৈষম্য তৈরি হবে। তাছাড়া এই পদক্ষেপে সরকারের খুব বেশি রাজস্ব আয় হবে বলেও মনে হয় না।
তিনি বলেন, আয়কর আইন-২০২৩ এর প্রথম তফসিলের আওতায় যেকোনো ব্যক্তি আবাসন বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করে নির্ধারিত বিশেষ কর দিয়ে অঘোষিত তহবিলকে বৈধতা দিতে পারেন। এই সুবিধা গ্রহণের জন্য করের হার বৃদ্ধি করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। কিন্তু সিপিডি সবসময়অঘোষিত অর্থ বৈধ করার এই সুযোগের বিরুদ্ধে। এই সুবিধা সৎ করদাতাদের জন্য নিরুৎসাহিত করে। কর কর্তৃপক্ষের কর আইন ও বিধি প্রয়োগের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।
ফাহমিদা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবৈধ আয় ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, এই ধরনের পদক্ষেপ সাধারণ জনগণের কাছে কেবল ভুল সংকেত পাঠাতে পারে। এটি জুলাইয়ের চেতনার পরিপন্থি।
তিনি বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বৈষম্যের হাতিয়ার। এ ধরনের সু্বিধা বৈধভাবে আয় করা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমিয়ে দেবে। এটা বৈষম্য। যা জুলাই আন্দোলনের যে বৈষম্যবিরোধী চেতনা,তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করি।
এর আগে সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। বাজেটে বলা হয়েছে, কেউ চাইলে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে নির্ধারিত হারে কর দিয়ে নিজের অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করতে পারবেন। তবে এবারের বাজেটে আগের তুলনায় বেশি হারে কর দিতে হবে।
বাজেটের সামগ্রিক কাঠামো নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সিপিডি নির্বাহী পরিচালক। তার মতে, কিছু কিছু পদক্ষেপ ভালো নেওয়া হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু সামগ্রিক কাঠামোগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যে একই কাঠামোর মধ্যে এখানে একটু বেশি, ওখানে একটু কম—এ রকম করে নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাজেটের যে দর্শন, সেখানে বৈষম্যহীন সমাজের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, সব ক্ষেত্রে সেটা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।