জাতীয়
হিন্দু সম্প্রদায় কী চাইছে, তারা এখন কেন রাস্তায়

দেশের হিন্দু সম্প্রদায় তাদের আট দফা দাবি আদায়ের জন্য চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে শুক্রবার যে সমাবেশে করেছে তা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। ওই সমাবেশ থেকে দাবি আদায়ের জন্য ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের যে ঘোষণা দিয়েছে সেটিও অনেকের দৃষ্টিতে এসেছে। সমাবেশের আয়োজকরা বলছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের পরিচিত সংগঠনগুলোর বাইরে সাধু সন্তদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবারের সমাবেশের লোক সমাগম গণমাধ্যমের দৃষ্টি কেড়েছে এবং একই কারণে তাদের দেয়া বক্তব্যগুলোও আলোচনায় এসেছে বলে মনে করেন তারা। শুক্রবার লালদীঘির ওই সমাবেশের প্রধান বক্তা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী বলেছেন, তাদের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন তারা।
আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই এটা সাধুসন্তদের আন্দোলন। এটি সরকার বা কোন দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। সংবিধান, আইনকানুনসহ সব কিছুতে সাম্য ও অসাম্প্রদায়িকতা চাই আমরা যাতে সবাই সমান মর্যাদা পেতে পারি, বলছিলেন তিনি। সনাতন জাগরণ মঞ্চের একজন সমন্বয়ক কাঞ্চন আচার্য বলছেন, নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্যই তারা তাদের দাবিগুলো তুলেছেন। তিনি বলছেন, গত ৫৩ বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হওয়া হামলা নিপীড়নের একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। তবে এখন ‘সরকারকে চাপে ফেলতে কিংবা আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিতে মাঠে নেমেছেন’ বলে সরকার সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে যে প্রচারণা চালাচ্ছে তা প্রত্যাখ্যান করেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী। তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায় কথা বললে তাতে রাজনৈতিক ট্যাগ দেয়া কিংবা অন্য দেশকে টেনে আনা সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনাগুলো উপেক্ষার পুরনো কৌশল। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সবাইকে সাথে নিয়ে এগুতে হবে-এটাই আমরা বলতে চাইছি। শুক্রবারের সমাবেশ থেকে যে আট দফা দাবি জানানো হয়েছে তার মধ্যে আছে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সংখ্যালঘু নির্যাতনে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন এবং অবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা।
প্রসঙ্গত, এক দশকের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বেশ কিছু ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও দৃষ্টি কেড়েছিলো। ২০২১ সালে দুর্গা পূজার সময় কুমিল্লার একটা পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়ার অভিযোগ ঘিরে দেশজুড়ে মন্দির মণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটেছিলো। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে পরবর্তী নয় বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাড়ে তিন হাজারের বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার মধ্যে হিন্দুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং পূজামণ্ডপ, মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ অন্যতম। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী বলছেন, একটি ঘটনাতেও কোন ব্যক্তিকে বিচার শেষ করে শাস্তি দেয়া হয়নি। বরং আমাদের ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত করলে জামিন পায়। আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়। আমরা কিছু বললে আমাদের একটি দলের ট্যাগ দেয়া হয়। অন্য দেশের ট্যাগ দেয়া হয়, তিনি অভিযোগ করেন।
তাদের আট দফার অন্য দাবি গুলো হলো, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীতকরণ, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীতকরণ, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপাসনালয় নির্মাণ ও হোস্টেলে প্রার্থনা রুম , সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন এবং দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি দেয়া। কাঞ্চন আচার্য বলছেন, তারা ইতোমধ্যেই তাদের দাবিগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছেন। এবারের দুর্গাপূজার সময় সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে কথা হয়েছে কিন্তু এখনো তাতে কোন অগ্রগতি আসেনি, বলছিলেন তিনি। শুক্রবার লালদীঘিতে সনাতন সম্প্রদায়ের সমাবেশের পর সামাজিক মাধ্যমে অনেক নিয়ে এ নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ বলছেন আওয়ামী লীগ আমলে সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষেরে এভাবে সোচ্চার হয়নি। আবার কেউ কেউ সনাতন সম্প্রদায় ‘আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে’ এমন মন্তব্য করছেন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী বলছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নকে বৈধতা দিয়ে এগুলো পুরনো কৌশল বলেই তারা মনে করেন। আমরা যে সরকারের আমলেই হোক যত অন্যায়ের শিকার হয়েছি তার বিচার চাই এবং সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি করছি। সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পাঁচশ মসজিদ করেছে। আমরা একে স্বাগত জানিয়েছি কিন্তু অন্য ধর্মের জন্য কি করেছে?, বলছিলেন তিনি। আমরা এখন রাস্তায় নেমেছি কারণ এখন পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে। তবে কিছু ঘটনা আমাদের বিচলিত করেছে। আগের বাড়িঘর মন্দির বা ব্যক্তির ওপর হামলা হয়েছে নিয়মিত। এখন জীবিকায় হাত দেয়া হচ্ছে। শুধু হিন্দু বলেই চাকরিচ্যুত ও পদাবনতির ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের অনুষ্ঠানে বাধা দেয়া হচ্ছে। এসব কারণে আমাদের প্রতিবাদ করতে হচ্ছে, বলছিলেন তিনি। তিনি জানান, তারা ইতোমধ্যেই বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতাদের সাথে তাদের দাবির বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন। সরকার ছয়টি কমিশন করেছে কিন্তু সেই কমিশনে তো সংখ্যালঘু বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নেই। আমরা চাই আমরা যেন আমাদের কথা তুলতে পারি।
হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের দাবি, ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার জন্য কমিশন হলেও আওয়ামী লীগ সরকার পনের বছরে তার ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি সে সময় চট্টগ্রামে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনা তৈরি করলেও এখন পর্যন্ত সেই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার হয়নি। ২০০৬ সালে রাউজানে জ্ঞানজ্যোতি হত্যাকাণ্ড ও ২০১২ সালে রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন তুললেও সেগুলোতেও বিচার হয়নি কারও। ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবি পোস্টের অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালের ৩০শে অক্টোবর ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে পনেরটি মন্দির ও তিন শতাধিক বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় হলেও এর আট মামলার সাতটিরই বিচার কাজ শেষ হয়নি। ২০১২ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর রাতে রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহার, উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। একইসঙ্গে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ৩০টি বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সোচ্চার হয়েছিলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও।
আওয়ামী লীগ আমলে এসব নিয়ে তারা মাঠে নামেননি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী বলেন, তারা সবসময়ই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ২০২১ সালের ঘটনাতেও দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছি আমরা। ১৫৪ টি দেশে ওই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়ে তখন, বলছিলেন তিনি। যদিও সামাজিক মাধ্যমে সরকার সমর্থকরা অনেকে প্রচার করছেন যে সনাতন ধর্মের মানুষ আওয়ামী লীগকে সুবিধা দেয়ার জন্য এখন রাস্তায় নেমেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী বলেন, এটি আক্রমণকারী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর পুরনো খেলা। এ কারণেই আমরা সরকাররে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি। কারণ দেশকে সঠিক পথে নিতে হলে সবার সাথেই সমান আচরণ করতে হবে এবং সবাইকে সমান সম্মান ও নিরাপত্তাবোধ নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক রং দিয়ে উপেক্ষা করার প্রবণতার কৌশল পুরনো। আমরা কিছু বললে ভারতের প্রসঙ্গ টানা হয়। আমরাও বলতে চাই যে পাকিস্তানেও তো সংখ্যালঘু কমিশন ও মন্ত্রণালয় আছে। তাহলে বাংলাদেশে কেন থাকবে না? মনে রাখতে হবে যে বিশ্বের কোথাও একজন মুসলিম ক্ষতিগ্রস্ত হলে যেমন সারাবিশ্বের মুসলিমদের মন কাঁদে, তেমনি একজন হিন্দুর ক্ষতি হলে সারা বিশ্বের হিন্দুদের মন কাঁদবে, তিনি বলেন। শুক্রবার লালদীঘি ময়দানের ওই সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
তিনি বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ। সেখানে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ ভূমি আফগানিস্তান হবে, সিরিয়া হবে। শুধু সংখ্যালঘু পরিচয়ে ৯৩ জনকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ভেটেরিনারি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। মাঝখানে কিছুদিন এমন অপকর্ম থেমে গিয়েছিল। এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমরা আর নীরব থাকব না, বলেছেন তিনি। তিনি আরো বলেছেন, বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু দ্বিতীয়/তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে সংবিধান সংশোধনকে মানব না। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হিন্দু হয়েছেন। আর এ দেশে একজন করে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছেন।
এমআই

জাতীয়
রাতের ভোটসহ যেসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন সাবেক আইজিপি মামুন

আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ৫০ শতাংশ ভোট ব্যালট বাক্সে ভরার পরামর্শ দিয়েছিলেন ওই সময়ের পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ০১- এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে জবানবন্দিতে তিনি এ কথা জানান।
এদিন বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন জুলাই আন্দোলনের সময়ে পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে থাকা মামুন।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ৫০ শতাংশ ভোট ব্যালট বাক্সে ভরে রাখতে শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ওই সময়ের আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী।
জুলাই আন্দোলন নিয়ে সাবেক আইজিপি ট্রাইব্যুনালে আরও বলেন, আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত হয় রাজনৈতিকভাবে। লেথাল উইপেন ব্যবহারের নির্দেশনা এসেছিল শেখ হাসিনার কাছ থেকে। আর সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব, ডিবির হারুন ছিলেন মারণাস্ত্র ব্যবহারে অতিউৎসাহী।
তিনি বলেন, র্যাব-১ এ টিআইএফ নামে গোপন বন্দিশালা ছিল। অন্যান্য র্যাবের ইউনিটে ছিল এমন বন্দিশালা। রাজনৈতিক ভিন্নমত ও সরকারের জন্য হুমকি হয় এমন মানুষদের ধরে আনা হতো এখানে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আসতো এসব নির্দেশনা। কখনো নির্দেশনা দিতেন তারেক সিদ্দিকী। আর আয়নাঘরে আটক ও ক্রসফায়ারে হত্যার মতো কাজগুলো করতেন র্যাবের এডিসি অপারেশন ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক।
এ ছাড়াও পুলিশে গোপালগঞ্জ সিন্ডিকেট নিয়েও জবানবন্দি দেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৪ মার্চ মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান, স্বেচ্ছায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে সত্য উন্মোচন করতে চান।
কাফি
জাতীয়
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শনে দুই উপদেষ্টা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর মূল ভবনের সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং গৃহায়ন, গণপূর্ত ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তারা পরিদর্শন করেন।
এ সময় তাদের সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ছিলেন।
প্রসঙ্গত, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারকাজ বর্তমানে বেশ জোরেশোরেই চলছে। এরইমধ্যে একাধিক মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনসহ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলায়ও সাক্ষ্যগ্রহণ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২-এ এসব কার্যক্রম চলমান চলছে। তবে মূল ভবনের সংস্কার শেষ না হওয়ায় এখন টিনশেডে ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারকাজ চলছে।
জাতীয়
বিকেলে ৭ দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ আরও সাতটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিকেল ৫টায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। তবে কোন কোন দলের সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে তা জানানো হয়নি।
এর আগে, রোববার (৩১ আগস্ট) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। ওই বৈঠকে তিনি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রসঙ্গত, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এরই অংশ হিসেবে রোববার তিনি তিন দলের নেতাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন। আজকের বৈঠকও সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।
জাতীয়
সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদে রদবদল

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে রদবদল হয়েছে। এ সময় দুজন কর্মকর্তাকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, বদলির অংশ হিসেবে বগুড়ার এরিয়া কমান্ডার ও জিওসি মেজর জেনারেল এস এম আসাদুল হককে নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও সাভারের এরিয়া কমান্ডার হিসেবে বদলি করা হয়েছে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পদাতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল তৌহিদুল আহমেদকে বগুড়ার জিওসি করা হয়েছে।
একইভাবে কুমিল্লার জিওসি মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ তারিককে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পদাতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কমান্ড্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সেনা কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল হাবিব উল্লাহকে বদলি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
পাশাপাশি মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম-উদ-দৌলাকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে কুমিল্লার জিওসি করা হয়েছে। আর সেনাসদরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসেনকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে সেনা কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জাতীয়
আমরা শেষ পর্যন্ত সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করবো: সিইসি

আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের ‘ব্লেম’ বা অপবাদ নিতে রাজি নই। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য শেষ পর্যন্ত সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করবো বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন।
সিইসি জানান, মার্কিন প্রতিনিধি দলটি নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে এসেছিলেন। তিনি তাদের বলেছেন, এটি একটি বিশেষ পরিস্থিতি এবং একটি বিশেষ ধরনের সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন এবং রমজানের আগে ভোট গ্রহণের কথা বলেন। এ কারণেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তুতি জোরদার করেছে, যদিও প্রস্তুতি আগেই শুরু করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, নানান ধরনের টানাপোড়েন থাকায় নির্বাচনের সময়সূচি চূড়ান্ত করতে কিছুটা সময় লেগেছে। পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাবের অভিযোগ যেন না আসে, আমরা কোনো ধরনের ব্লেম নিতে রাজি নই। সেজন্যই আমরা আগে থেকে কাজ শুরু করেছি।
সিইসি আশা প্রকাশ করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো দেশের স্বার্থ সবার ওপর স্থান দেয়। শেষ পর্যন্ত একটি সমঝোতা হবে। গতকাল থেকে প্রধান উপদেষ্টা আবার আলোচনা শুরু করেছেন। বিশ্বাস করি একটা সমঝোতা হবে।
মার্কিন প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে গুজব ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে জানতে চাওয়া হলে সিইসি বলেন, এই দেশটা গুজবের দেশ। আমি বলেছি, গুজব কানে না নিতে। আমরা পুরো নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা ফেরত আনার ব্যবস্থা করেছি।
মার্কিন প্রতিনিধি ৯৫ শতাংশ সরকারি লোকবল দিয়ে নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে সিইসি বলেন, সরকারকে বাদ দিয়ে ভোট সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাগবে, বাজেট লাগবে। তাদের সহযোগিতা ছাড়া ভোট সম্ভব নয়। সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়া আমরা সহযোগিতা পেয়েছি।
সিইসি বলেন, মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে বৈঠকে কালো টাকার কথা এসেছে, এটা একেবারে বন্ধ করতে তো পারবো না। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বসেছি সেটাও জানিয়েছি। আমি আশাবাদী, সর্বশক্তি দিয়ে শেষ পর্যন্ত ফাইট করবো। দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করবো যেন একটি সুন্দর নির্বাচন হয়।
সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থা করা হবে। যারা ভোটের দায়িত্বে থাকতেন তারা তো আগে ভোট দিতে পারতেন না। এবার সে ব্যবস্থাও করা হবে। এক্ষেত্রে আইটি সাপোর্টের পোস্টাল ব্যালটের কথা বলেছি।