জাতীয়
হিন্দু সম্প্রদায় কী চাইছে, তারা এখন কেন রাস্তায়

দেশের হিন্দু সম্প্রদায় তাদের আট দফা দাবি আদায়ের জন্য চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে শুক্রবার যে সমাবেশে করেছে তা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। ওই সমাবেশ থেকে দাবি আদায়ের জন্য ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের যে ঘোষণা দিয়েছে সেটিও অনেকের দৃষ্টিতে এসেছে। সমাবেশের আয়োজকরা বলছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের পরিচিত সংগঠনগুলোর বাইরে সাধু সন্তদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবারের সমাবেশের লোক সমাগম গণমাধ্যমের দৃষ্টি কেড়েছে এবং একই কারণে তাদের দেয়া বক্তব্যগুলোও আলোচনায় এসেছে বলে মনে করেন তারা। শুক্রবার লালদীঘির ওই সমাবেশের প্রধান বক্তা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী বলেছেন, তাদের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন তারা।
আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই এটা সাধুসন্তদের আন্দোলন। এটি সরকার বা কোন দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। সংবিধান, আইনকানুনসহ সব কিছুতে সাম্য ও অসাম্প্রদায়িকতা চাই আমরা যাতে সবাই সমান মর্যাদা পেতে পারি, বলছিলেন তিনি। সনাতন জাগরণ মঞ্চের একজন সমন্বয়ক কাঞ্চন আচার্য বলছেন, নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্যই তারা তাদের দাবিগুলো তুলেছেন। তিনি বলছেন, গত ৫৩ বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হওয়া হামলা নিপীড়নের একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। তবে এখন ‘সরকারকে চাপে ফেলতে কিংবা আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিতে মাঠে নেমেছেন’ বলে সরকার সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে যে প্রচারণা চালাচ্ছে তা প্রত্যাখ্যান করেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী। তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায় কথা বললে তাতে রাজনৈতিক ট্যাগ দেয়া কিংবা অন্য দেশকে টেনে আনা সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনাগুলো উপেক্ষার পুরনো কৌশল। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সবাইকে সাথে নিয়ে এগুতে হবে-এটাই আমরা বলতে চাইছি। শুক্রবারের সমাবেশ থেকে যে আট দফা দাবি জানানো হয়েছে তার মধ্যে আছে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সংখ্যালঘু নির্যাতনে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন এবং অবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা।
প্রসঙ্গত, এক দশকের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বেশ কিছু ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও দৃষ্টি কেড়েছিলো। ২০২১ সালে দুর্গা পূজার সময় কুমিল্লার একটা পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়ার অভিযোগ ঘিরে দেশজুড়ে মন্দির মণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটেছিলো। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে পরবর্তী নয় বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাড়ে তিন হাজারের বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার মধ্যে হিন্দুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং পূজামণ্ডপ, মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ অন্যতম। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী বলছেন, একটি ঘটনাতেও কোন ব্যক্তিকে বিচার শেষ করে শাস্তি দেয়া হয়নি। বরং আমাদের ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত করলে জামিন পায়। আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়। আমরা কিছু বললে আমাদের একটি দলের ট্যাগ দেয়া হয়। অন্য দেশের ট্যাগ দেয়া হয়, তিনি অভিযোগ করেন।
তাদের আট দফার অন্য দাবি গুলো হলো, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীতকরণ, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীতকরণ, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপাসনালয় নির্মাণ ও হোস্টেলে প্রার্থনা রুম , সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন এবং দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি দেয়া। কাঞ্চন আচার্য বলছেন, তারা ইতোমধ্যেই তাদের দাবিগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছেন। এবারের দুর্গাপূজার সময় সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে কথা হয়েছে কিন্তু এখনো তাতে কোন অগ্রগতি আসেনি, বলছিলেন তিনি। শুক্রবার লালদীঘিতে সনাতন সম্প্রদায়ের সমাবেশের পর সামাজিক মাধ্যমে অনেক নিয়ে এ নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ বলছেন আওয়ামী লীগ আমলে সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষেরে এভাবে সোচ্চার হয়নি। আবার কেউ কেউ সনাতন সম্প্রদায় ‘আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে’ এমন মন্তব্য করছেন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী বলছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নকে বৈধতা দিয়ে এগুলো পুরনো কৌশল বলেই তারা মনে করেন। আমরা যে সরকারের আমলেই হোক যত অন্যায়ের শিকার হয়েছি তার বিচার চাই এবং সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি করছি। সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পাঁচশ মসজিদ করেছে। আমরা একে স্বাগত জানিয়েছি কিন্তু অন্য ধর্মের জন্য কি করেছে?, বলছিলেন তিনি। আমরা এখন রাস্তায় নেমেছি কারণ এখন পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে। তবে কিছু ঘটনা আমাদের বিচলিত করেছে। আগের বাড়িঘর মন্দির বা ব্যক্তির ওপর হামলা হয়েছে নিয়মিত। এখন জীবিকায় হাত দেয়া হচ্ছে। শুধু হিন্দু বলেই চাকরিচ্যুত ও পদাবনতির ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের অনুষ্ঠানে বাধা দেয়া হচ্ছে। এসব কারণে আমাদের প্রতিবাদ করতে হচ্ছে, বলছিলেন তিনি। তিনি জানান, তারা ইতোমধ্যেই বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতাদের সাথে তাদের দাবির বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন। সরকার ছয়টি কমিশন করেছে কিন্তু সেই কমিশনে তো সংখ্যালঘু বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নেই। আমরা চাই আমরা যেন আমাদের কথা তুলতে পারি।
হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের দাবি, ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার জন্য কমিশন হলেও আওয়ামী লীগ সরকার পনের বছরে তার ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি সে সময় চট্টগ্রামে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনা তৈরি করলেও এখন পর্যন্ত সেই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার হয়নি। ২০০৬ সালে রাউজানে জ্ঞানজ্যোতি হত্যাকাণ্ড ও ২০১২ সালে রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন তুললেও সেগুলোতেও বিচার হয়নি কারও। ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবি পোস্টের অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালের ৩০শে অক্টোবর ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে পনেরটি মন্দির ও তিন শতাধিক বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় হলেও এর আট মামলার সাতটিরই বিচার কাজ শেষ হয়নি। ২০১২ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর রাতে রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহার, উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। একইসঙ্গে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ৩০টি বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সোচ্চার হয়েছিলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও।
আওয়ামী লীগ আমলে এসব নিয়ে তারা মাঠে নামেননি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী বলেন, তারা সবসময়ই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ২০২১ সালের ঘটনাতেও দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছি আমরা। ১৫৪ টি দেশে ওই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়ে তখন, বলছিলেন তিনি। যদিও সামাজিক মাধ্যমে সরকার সমর্থকরা অনেকে প্রচার করছেন যে সনাতন ধর্মের মানুষ আওয়ামী লীগকে সুবিধা দেয়ার জন্য এখন রাস্তায় নেমেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী বলেন, এটি আক্রমণকারী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর পুরনো খেলা। এ কারণেই আমরা সরকাররে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি। কারণ দেশকে সঠিক পথে নিতে হলে সবার সাথেই সমান আচরণ করতে হবে এবং সবাইকে সমান সম্মান ও নিরাপত্তাবোধ নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক রং দিয়ে উপেক্ষা করার প্রবণতার কৌশল পুরনো। আমরা কিছু বললে ভারতের প্রসঙ্গ টানা হয়। আমরাও বলতে চাই যে পাকিস্তানেও তো সংখ্যালঘু কমিশন ও মন্ত্রণালয় আছে। তাহলে বাংলাদেশে কেন থাকবে না? মনে রাখতে হবে যে বিশ্বের কোথাও একজন মুসলিম ক্ষতিগ্রস্ত হলে যেমন সারাবিশ্বের মুসলিমদের মন কাঁদে, তেমনি একজন হিন্দুর ক্ষতি হলে সারা বিশ্বের হিন্দুদের মন কাঁদবে, তিনি বলেন। শুক্রবার লালদীঘি ময়দানের ওই সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
তিনি বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ। সেখানে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ ভূমি আফগানিস্তান হবে, সিরিয়া হবে। শুধু সংখ্যালঘু পরিচয়ে ৯৩ জনকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ভেটেরিনারি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। মাঝখানে কিছুদিন এমন অপকর্ম থেমে গিয়েছিল। এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমরা আর নীরব থাকব না, বলেছেন তিনি। তিনি আরো বলেছেন, বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু দ্বিতীয়/তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে সংবিধান সংশোধনকে মানব না। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হিন্দু হয়েছেন। আর এ দেশে একজন করে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছেন।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয়
জিডি করলেন ভোক্তা অধিকারের পরিচালক জব্বার মন্ডল

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডলের নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ খোলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
সোমবার (৩১ মার্চ) তেজগাঁও থানায় করা জিডিতে (জিডি নম্বর: ১৬৯৯) আব্দুল জব্বার মন্ডল উল্লেখ করেন, তার নামে এবং তার ছবি ব্যবহার করে একাধিক ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ খোলা হয়েছে। এতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছেন। পোস্টে তিনি ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলোর স্ক্রিনশট যুক্ত করে দেন এবং সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি তিনি লেখেন, ‘আমার নামে এবং আমার ছবি ব্যবহার করে কিছু নকল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে। এ বিষয়ে জিডি করা হয়েছে। সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হলো।’
পোস্টের শেষে তিনি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখেন, ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম। ঈদ মোবারক।’
উল্লেখ্য, মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল দীর্ঘদিন ধরে বাজারে অতিরিক্ত দাম, ভেজাল পণ্য ও প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে অসাধু ব্যবসায়ীরা শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন এবং বাজারে ন্যায্য দাম প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। তার শান্ত ও ধৈর্যশীল আচরণের মাধ্যমে একদিকে ব্যবসায়ীদের সঠিক দামে পণ্য বিক্রিতে বাধ্য করা হচ্ছে, অন্যদিকে ক্রেতারা উপকৃত হচ্ছেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
মিয়ানমারে দ্বিতীয় দফায় ত্রাণ সহায়তা পাঠালো বাংলাদেশ

মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দ্বিতীয় দফায় জরুরি ওষুধ ও ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (বিএ) এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (বিএএফ) তিনটি পরিবহন বিমানের মাধ্যমে এ সরবরাহ ও ওষুধ পাঠানো হয়েছে।
মিশনে তিনটি বাহিনীর উদ্ধার বিশেষজ্ঞ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (এফএসসিডি) ডাক্তার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর (বিএ) ডাক্তার এবং বেসামরিক ডাক্তারদের সমন্বয়ে গঠিত উদ্ধার ও চিকিৎসা দল রয়েছে।
উদ্ধারকারী ও চিকিৎসকের মোট সংখ্যা ৫৫ (পঞ্চান্ন)। অতিরিক্তভাবে তিনটি বিমানে ৩৭ জন ক্রু সদস্য রয়েছেন।
উদ্ধার ও চিকিৎসা দল তাদের আত্মরক্ষামূলক জিনিসপত্র (রেশন, স্বাস্থ্যবিধি সুবিধা, যোগাযোগ সরঞ্জাম, রান্নার সরঞ্জাম ইত্যাদি) বহন করে।
এছাড়াও, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আট টন শুকনো খাবার, আড়াই টন পানি, চার টন ওষুধ, এক টন স্বাস্থ্যবিধি পণ্য এবং ১.৫ টন ত্রাণ তাঁবু পাঠানো হয়েছে।
এর আগে রোববার (৩০ মার্চ) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে মিয়ানমারে জরুরি ত্রাণ সামগ্রীর প্রথম মিশন পাঠানো হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে ওষুধ, তাঁবু, শুকনো খাবার এবং চিকিৎসা দল।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
ছুটি কাটিয়ে মেট্রোরেল ও আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু

ঈদের দিন ছুটি কাটিয়ে রাজধানীর গণপরিবহন মেট্রোরেল ও সারা দেশের আন্তঃনগর ট্রেন পুনরায় চলাচল শুরু করেছে। মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সকাল থেকে নির্দিষ্ট সময় মতো এই গণপরিবহন দুটি চলাচল শুরু করে।
জানা গেছে, রুটিনমাফিক মেট্রোরেলের প্রথম ট্রিপ সকাল ৭টা ১০ মিনিটে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিলের উদ্দেশে ছেড়ে যায় এবং মতিঝিল থেকে প্রথম ট্রেন সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে উত্তরা উত্তর স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রা করে।
একইভাবে ঈদের পর দিনের প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন হিসেবে ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ কক্সবাজারের উদ্দেশে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে গেছে।
এর আগে, মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছিল, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শুধুমাত্র ঈদের দিন মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে অন্যান্য দিন যথানিয়মে চলবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন ঈদের আগে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় জানান, ঈদের দিন সারা দেশে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে ঈদের আগে সব ট্রেনের ডে-অফ বাতিল থাকবে এবং ঈদের পর তা আবার কার্যকর হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
ঈদের দিনে সড়কে ঝরলো ২১ প্রাণ

ঈদের দিন ১০ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২১ জন। এছাড়া আহত অবস্থায় ২৮ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার (৩১ মার্চ) দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রাম
এদিন ভোরে সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাস চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়ায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘঠনাস্থলেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়। আহত হন ৬ জন।
গাজীপুর
সকালে গাজীপুরের শিববাড়িতে বাসচাপায় শিশুসহ সিএনজিচালিত অটোরিকশার দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
নওগাঁ
সকালে নওগাঁর সাপাহারে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শাহিন আলম (১৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন নিহতের আরও দুই বন্ধু।
বগুড়া
দুপুরে বগুড়ার শেরপুরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা ও মেয়েসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন।
পিরোজপুর
দুপুরে পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘুরতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহিউদ্দিন তুহিন (২৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন তার স্ত্রী মিম আক্তার।
গাইবান্ধা
বিকেলে গাইবান্ধায় প্রাইভেটকার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ৬ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৪ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়।
কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় একজন চিকিৎসাধীন। বিকেলে উপজেলার আগরপুর-পোড়াদিয়া সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
মেহেরপুর
মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও ব্যাটারিচালিত পাখিভ্যানের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ব্যাংক কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দুজন। বিকেলে শহরের আহম্মদ আলী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অদূরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন দুজন। সন্ধ্যার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় রাজমনি হোটেলের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এছাড়া যশোর ও ঝিনাদহে আলাদা দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
শান্তিপূর্ণ ঈদ উদযাপনে সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

জনসাধারণের জানমালসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ঈদের ছুটি চলাকালীন যে কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা রুখে দিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে, ৬ স্বতন্ত্র এডি ব্রিগেড এবং ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের অধীনস্থ ইউনিটের সার্বক্ষণিক টহল পরিচালনার পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টের মাধ্যমে এসব তথ্য জানা যায়।
এতে বলা হয়, সাধারণ জনগণের নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রামে যাতায়াত নিশ্চিত করতে এবং টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে বাস টার্মিনালে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।
পাশাপাশি, আজ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঈদগাহ মাঠে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এছাড়াও, গোয়েন্দা সূত্র মারফত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে মাদকদ্রব্যের চালান বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
রাজধানীবাসীকে একটি ঝামেলামুক্ত ও আনন্দঘন ঈদ উপহার দিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।