জাতীয়
হিন্দু সম্প্রদায় কী চাইছে, তারা এখন কেন রাস্তায়

দেশের হিন্দু সম্প্রদায় তাদের আট দফা দাবি আদায়ের জন্য চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে শুক্রবার যে সমাবেশে করেছে তা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। ওই সমাবেশ থেকে দাবি আদায়ের জন্য ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের যে ঘোষণা দিয়েছে সেটিও অনেকের দৃষ্টিতে এসেছে। সমাবেশের আয়োজকরা বলছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের পরিচিত সংগঠনগুলোর বাইরে সাধু সন্তদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবারের সমাবেশের লোক সমাগম গণমাধ্যমের দৃষ্টি কেড়েছে এবং একই কারণে তাদের দেয়া বক্তব্যগুলোও আলোচনায় এসেছে বলে মনে করেন তারা। শুক্রবার লালদীঘির ওই সমাবেশের প্রধান বক্তা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী বলেছেন, তাদের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন তারা।
আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই এটা সাধুসন্তদের আন্দোলন। এটি সরকার বা কোন দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। সংবিধান, আইনকানুনসহ সব কিছুতে সাম্য ও অসাম্প্রদায়িকতা চাই আমরা যাতে সবাই সমান মর্যাদা পেতে পারি, বলছিলেন তিনি। সনাতন জাগরণ মঞ্চের একজন সমন্বয়ক কাঞ্চন আচার্য বলছেন, নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্যই তারা তাদের দাবিগুলো তুলেছেন। তিনি বলছেন, গত ৫৩ বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হওয়া হামলা নিপীড়নের একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। তবে এখন ‘সরকারকে চাপে ফেলতে কিংবা আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিতে মাঠে নেমেছেন’ বলে সরকার সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে যে প্রচারণা চালাচ্ছে তা প্রত্যাখ্যান করেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী। তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায় কথা বললে তাতে রাজনৈতিক ট্যাগ দেয়া কিংবা অন্য দেশকে টেনে আনা সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনাগুলো উপেক্ষার পুরনো কৌশল। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সবাইকে সাথে নিয়ে এগুতে হবে-এটাই আমরা বলতে চাইছি। শুক্রবারের সমাবেশ থেকে যে আট দফা দাবি জানানো হয়েছে তার মধ্যে আছে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সংখ্যালঘু নির্যাতনে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন এবং অবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা।
প্রসঙ্গত, এক দশকের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বেশ কিছু ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও দৃষ্টি কেড়েছিলো। ২০২১ সালে দুর্গা পূজার সময় কুমিল্লার একটা পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়ার অভিযোগ ঘিরে দেশজুড়ে মন্দির মণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটেছিলো। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে পরবর্তী নয় বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাড়ে তিন হাজারের বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার মধ্যে হিন্দুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং পূজামণ্ডপ, মন্দিরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ অন্যতম। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী বলছেন, একটি ঘটনাতেও কোন ব্যক্তিকে বিচার শেষ করে শাস্তি দেয়া হয়নি। বরং আমাদের ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত করলে জামিন পায়। আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়। আমরা কিছু বললে আমাদের একটি দলের ট্যাগ দেয়া হয়। অন্য দেশের ট্যাগ দেয়া হয়, তিনি অভিযোগ করেন।
তাদের আট দফার অন্য দাবি গুলো হলো, সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীতকরণ, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীতকরণ, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপাসনালয় নির্মাণ ও হোস্টেলে প্রার্থনা রুম , সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন এবং দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি দেয়া। কাঞ্চন আচার্য বলছেন, তারা ইতোমধ্যেই তাদের দাবিগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছেন। এবারের দুর্গাপূজার সময় সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে কথা হয়েছে কিন্তু এখনো তাতে কোন অগ্রগতি আসেনি, বলছিলেন তিনি। শুক্রবার লালদীঘিতে সনাতন সম্প্রদায়ের সমাবেশের পর সামাজিক মাধ্যমে অনেক নিয়ে এ নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন তুলেছেন। কেউ কেউ বলছেন আওয়ামী লীগ আমলে সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষেরে এভাবে সোচ্চার হয়নি। আবার কেউ কেউ সনাতন সম্প্রদায় ‘আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে’ এমন মন্তব্য করছেন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী বলছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নকে বৈধতা দিয়ে এগুলো পুরনো কৌশল বলেই তারা মনে করেন। আমরা যে সরকারের আমলেই হোক যত অন্যায়ের শিকার হয়েছি তার বিচার চাই এবং সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি করছি। সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পাঁচশ মসজিদ করেছে। আমরা একে স্বাগত জানিয়েছি কিন্তু অন্য ধর্মের জন্য কি করেছে?, বলছিলেন তিনি। আমরা এখন রাস্তায় নেমেছি কারণ এখন পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে। তবে কিছু ঘটনা আমাদের বিচলিত করেছে। আগের বাড়িঘর মন্দির বা ব্যক্তির ওপর হামলা হয়েছে নিয়মিত। এখন জীবিকায় হাত দেয়া হচ্ছে। শুধু হিন্দু বলেই চাকরিচ্যুত ও পদাবনতির ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের অনুষ্ঠানে বাধা দেয়া হচ্ছে। এসব কারণে আমাদের প্রতিবাদ করতে হচ্ছে, বলছিলেন তিনি। তিনি জানান, তারা ইতোমধ্যেই বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতাদের সাথে তাদের দাবির বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন। সরকার ছয়টি কমিশন করেছে কিন্তু সেই কমিশনে তো সংখ্যালঘু বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নেই। আমরা চাই আমরা যেন আমাদের কথা তুলতে পারি।
হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের দাবি, ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার জন্য কমিশন হলেও আওয়ামী লীগ সরকার পনের বছরে তার ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি সে সময় চট্টগ্রামে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোচনা তৈরি করলেও এখন পর্যন্ত সেই ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার হয়নি। ২০০৬ সালে রাউজানে জ্ঞানজ্যোতি হত্যাকাণ্ড ও ২০১২ সালে রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন তুললেও সেগুলোতেও বিচার হয়নি কারও। ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবি পোস্টের অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালের ৩০শে অক্টোবর ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে পনেরটি মন্দির ও তিন শতাধিক বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় হলেও এর আট মামলার সাতটিরই বিচার কাজ শেষ হয়নি। ২০১২ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর রাতে রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহার, উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। একইসঙ্গে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ৩০টি বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সোচ্চার হয়েছিলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও।
আওয়ামী লীগ আমলে এসব নিয়ে তারা মাঠে নামেননি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী বলেন, তারা সবসময়ই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ২০২১ সালের ঘটনাতেও দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছি আমরা। ১৫৪ টি দেশে ওই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়ে তখন, বলছিলেন তিনি। যদিও সামাজিক মাধ্যমে সরকার সমর্থকরা অনেকে প্রচার করছেন যে সনাতন ধর্মের মানুষ আওয়ামী লীগকে সুবিধা দেয়ার জন্য এখন রাস্তায় নেমেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রক্ষ্মচারী বলেন, এটি আক্রমণকারী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর পুরনো খেলা। এ কারণেই আমরা সরকাররে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি। কারণ দেশকে সঠিক পথে নিতে হলে সবার সাথেই সমান আচরণ করতে হবে এবং সবাইকে সমান সম্মান ও নিরাপত্তাবোধ নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক রং দিয়ে উপেক্ষা করার প্রবণতার কৌশল পুরনো। আমরা কিছু বললে ভারতের প্রসঙ্গ টানা হয়। আমরাও বলতে চাই যে পাকিস্তানেও তো সংখ্যালঘু কমিশন ও মন্ত্রণালয় আছে। তাহলে বাংলাদেশে কেন থাকবে না? মনে রাখতে হবে যে বিশ্বের কোথাও একজন মুসলিম ক্ষতিগ্রস্ত হলে যেমন সারাবিশ্বের মুসলিমদের মন কাঁদে, তেমনি একজন হিন্দুর ক্ষতি হলে সারা বিশ্বের হিন্দুদের মন কাঁদবে, তিনি বলেন। শুক্রবার লালদীঘি ময়দানের ওই সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
তিনি বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ। সেখানে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ ভূমি আফগানিস্তান হবে, সিরিয়া হবে। শুধু সংখ্যালঘু পরিচয়ে ৯৩ জনকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ভেটেরিনারি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। মাঝখানে কিছুদিন এমন অপকর্ম থেমে গিয়েছিল। এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমরা আর নীরব থাকব না, বলেছেন তিনি। তিনি আরো বলেছেন, বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু দ্বিতীয়/তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে সংবিধান সংশোধনকে মানব না। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হিন্দু হয়েছেন। আর এ দেশে একজন করে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছেন।
এমআই

জাতীয়
বাংলাদেশি কর্মীদের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেবে মালয়েশিয়া

বৈধ অস্থায়ী কাজের অনুমতিপত্র (পিএলকেএস) সম্পন্ন বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা (এমইভি) সুবিধা ঘোষণা করেছে মালয়েশিয়া সরকার। এতে কর্মীদের কর্মসংস্থান এবং ব্যক্তিগত যাতায়াতের ক্ষেত্রে স্বস্তি দেবে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের ধারাবাহিক ও নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে মালয়েশিয়ার সরকার বাংলাদেশি কর্মীদের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে একটি নোটিফিকেশন জারি করা হয়েছে।
এদিকে, গত ১০ জুলাই মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতেও এ তথ্য প্রকাশ করেছে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মহাসচিব (নীতি ও নিয়ন্ত্রণ) এই বিষয়ে একটি স্মারকপত্র জারি করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যাদের এই বছর সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা হয়েছে, তাদের নতুন করে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা করার প্রয়োজন নেই। সবার সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসাগুলো এখন মাল্টিপল এন্ট্রিতে রূপান্তরিত হবে।
এর আগে, কর্মীদের সাধারণত সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে হতো, যা তাদের দেশের বাইরে যাওয়া এবং পুনরায় প্রবেশ করার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিত। কিন্তু মাল্টিপল ভিসা সুবিধা কর্মজীবনের পাশাপাশি পারিবারিক বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে স্বল্প সময়ের জন্য দেশে ফিরে আসার সুযোগ দেবে, যা তাদের মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করবে।
মালয়েশিয়ায় বর্তমানে বহু বাংলাদেশি কর্মী বিভিন্ন খাতে কর্মরত রয়েছেন। এই সুবিধা তাদের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে এবং কর্মীদের কাজের পরিবেশে আরও স্থিতিশীলতা আনবে। এই পদক্ষেপ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের চাহিদা মেটাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
জাতীয়
বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের আম উপহার পাঠাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানদের কাছে উপহার হিসেবে আম পাঠানো হচ্ছে। ফ্লাইট প্রাপ্তি সাপেক্ষে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে উপহারের আম পৌঁছানো সম্পন্ন হবে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাতে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ এ তথ্য জানান।
যেসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের কাছে উপহারের আম পাঠানো হচ্ছে তারা হলেন- ভুটানের রাজা ও প্রধানমন্ত্রী; ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী; নেপালের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী; পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি।
এছাড়া, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে এসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভারতের কয়েকটি প্রাদেশিক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বরাবর (যেমন পশ্চিম বঙ্গ, ত্রিপুরা) আম পাঠানো হচ্ছে।
জাতীয়
অনুমোদন পেলেই তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু: রিজওয়ানা হাসান

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আলমারিতে থাকা তিস্তার পরিকল্পনা বের করে সংশোধন করা হয়েছে। সেটি পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। সেখান থেকে হয়তো এ সপ্তাহের মধ্যে অন্য দপ্তরে যাবে। এরপর অনুমোদন পেলেই মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করা হবে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে রংপুর নগরীর কেল্লাবন্দ এলাকায় শ্যামাসুন্দরীর উৎসমুখ পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘অনেক বছর ধরে ঝুলে থাকা একটা কাজ তিস্তা মহাপরিকল্পনা। আমরা এর চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার কাজ করছি। ভাটির দেশ হিসেবে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই।
আপাতত ঝুঁকিপূর্ণ ৪৫টি পয়েন্টে ভাঙন রোধে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। যাতে করে অকাল বন্যা, নদীভাঙন ও ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত না হয় তিস্তাপাড়ের মানুষ।’
শ্যামাসুন্দরী খাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রংপুরের ঐতিহ্যের এই খাল খনন করে এর পানিপ্রবাহ ঠিক রাখতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আপাতত ১০ কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিং করা হবে। যেখানে বাধা আসবে সেই সমস্যা সমাধান করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন। এটি বাস্তবায়ন হলে রংপুর নগীরর পরিবেশ রক্ষা হবে। সেইসঙ্গে ৩৫টি পয়েন্টে বাসাবাড়ি, কলকারখানার যে বর্জ্য পড়ে তা ঠেকাতে ডাম্পিং তৈরি করা হবে।’
এসময় রংপুর বিভাগীয়, জেলা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে উপদেষ্টা জেলার কাউনিয়া রেলসেতু এলাকায় তিস্তা নদী পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা কাজ শুরুর ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা একটি বৃহৎ ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। বিগত সরকার নদীপাড়ের মানুষের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার নদীপাড়ের মানুষের মতামতে এবং চীনের সঙ্গে পরামর্শ করে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২৬ সালের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ভবিষ্যতে যেন তিস্তাপাড়ের মানুষ আর ভাঙনের শিকার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তিস্তা পরিকল্পনার কাজ চলছে। সেইসঙ্গে নদীভাঙন রোধে কাজ করছে সরকার।
জাতীয়
১৬ জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে বুধবার (১৬ জুলাই) রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হবে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে বুধবার (১৬ জুলাই) রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হবে।
এ উপলক্ষে বুধবার বাংলাদেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
শহীদদের মাগফেরাতের জন্য বুধবার সব মসজিদে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তাদের আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ নিহত হন। এরই মধ্যে এ দিনটিকে সরকার ‘জুলাই শহীদ দিবস’ ঘোষণা করেছে।
জাতীয়
ফিরছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, বাতিলে লাগবে গণভোট: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনার বিষয়ে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান সংশোধনের মতো দুই- তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যদের ভোটে বাতিল করা সম্ভব হবে না। এর জন্য প্রয়োজন হবে গণভোট।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার ১৪তম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে একটা জায়গায় আমরা একমত হয়েছি যে, যদি উচ্চকক্ষ গঠিত না হয় অথবা উচ্চকক্ষ গঠিত হওয়া পর্যন্ত সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটের প্রয়োজন হবে। তবে সুনির্দিষ্ট কতগুলো অনুচ্ছেন যেমন প্রস্তাবনা অনুচ্ছেদ ৮, ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যেটি ৫৮ (ক), ৫৮ (খ) এবং ৫৮ (ঙ) অনুচ্ছেদ দ্বারা সংবিধানে যুক্ত হবে সেগুলো সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে।
তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ভবিষ্যতে বাতিলের জন্য সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরবর্তী সময়ে যদি সংশোধনের প্রয়োজন হয় বা কোনো উদ্যোগ থাকে তার জন্য আমরা গণভোটের কথা বলেছি এই বিবেচনা থেকে যে রাজনৈতিক দলদলগুলোর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় কোনো রকম দ্বিমত নেই। আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান কীভাবে নিয়োগ করা হবে সেটার নিষ্পত্তি করতে পারবো।