অর্থনীতি
ব্যাংকখাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা

তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে এখন উদ্বৃত্ত দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকখাতে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরে আমানতকারীদের আস্থা বৃদ্ধির কারণেই এই পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন করে আস্থা ফিরে আসা সত্ত্বেও ২০২৪ সালের আগস্টে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি বছরে ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশে নেমে এসেছে। আর এটিই ব্যাংকগুলোয় তারল্য বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, বর্তমানে ৪৬টি ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। যার মধ্যে চারটি শরিয়াহভিত্তিক এবং ৪২টি প্রথাগত ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে উদ্বৃত্ত তহবিলের শীর্ষে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। এরপর রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, আমানতকারীরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। কারণ তারা মনে করেন তাদের কষ্টার্জিত অর্থের জন্য বেশি নিরাপত্তা দেওয়া হয় এসব প্রতিষ্ঠানে। এই পরিবর্তনের ফলে সরকারি ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে। বিপরীতে শরিয়াভিত্তিক বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অবস্থা কম অনুকূলে রয়েছে।
এস আলম গ্রুপের মতো বড় শিল্পগোষ্ঠী একাধিক ব্যাংক অধিগ্রহণের পর বেশ কয়েকটি আমানতকারী এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তাদের তহবিল তুলে নিয়েছিলেন। এস আলম, বেক্সিমকো ও সিকদার গ্রুপের মতো গ্রুপের বিরুদ্ধে বড় আকারের ঋণ খেলাপির কারণে শরিয়াহভিত্তিক ও প্রচলিত কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, সার্বিকভাবে ব্যাংকখাত স্থিতিশীল রয়েছে। বেশিরভাগ ব্যাংক বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত তারল্য ধরে রেখেছে।
বেসরকারি ঋণে নীতিগত প্রভাব
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাহাদ আবদুল মান্নান বলেন, বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি কমার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিকে দায়ী করা যেতে পারে, যার লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ।
উচ্চ সুদের হার এবং স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হারের ওঠানামাও উদ্যোক্তাদের নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সন্ধানে নিরুৎসাহিত করেছে। এর ফলে অনেক ব্যাংক তাদের অতিরিক্ত তারল্য সরকারি বন্ড ও বিলে বিনিয়োগ করেছে।
২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক অধিগ্রহণের আগে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা মান্নান বলেন, বেসরকারি খাতের ঋণ বিতরণে স্থবিরতার কারণে ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ডে নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে।
ব্যাংকখাতের স্থিতিশীলতা
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের অধিকাংশ ব্যাংকে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। বেসরকারি খাতের ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেকেই মানসম্মত ব্যাংকিং পদ্ধতি অনুসরণ করে ট্রেজারি ইনস্ট্রুমেন্টে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন।
মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ব্যাংকের বাইরে প্রচলিত নগদ অর্থ যেমন কমছে, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক সুদের হার বেশি হওয়ায় আমানত বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনেয়ারা শিখা বলেন, শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। ফলে ধুঁকতে থাকা ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা ছাপানো বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণেই এ খাতের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।
এমআই

অর্থনীতি
চলতি জুনেই মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে: অর্থ উপদেষ্টা

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে সরকারের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করায় এবং সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেন। তার এ বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে আমাদের সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন আমাদের সামনে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিগত মাসগুলোতে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অবলম্বন করেছি। এর ফলে নীতি সুদের হার ১৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রানীতির আওতায় গৃহীত কার্যক্রমকে সহায়তা করতে সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনায় সার্বিকভাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। আশার কথা হলো এবারের রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে স্থিতিশীল ছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে এই জুন মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোঠায় নেমে আসবে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে এ লড়াইয়ের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে।
মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা জরুরি উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা অত্যাবশ্যক। প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এবং রপ্তানি স্থিতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এপ্রিল মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সে কারণে আমরা বিগত ১৪ মে তারিখে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার চালু করেছি।
কাফি
অর্থনীতি
বাড়বে প্লাস্টিক পণ্যের দাম

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে প্লাস্টিকের তৈরি আসবাবপত্র, তৈজসপত্রসহ সব ধরনের পণ্যে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে সরকার।
সোমবার (২ জুন) আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালী সামগ্রী, হাইজেনিক ও টয়লেট্রিজ সামগ্রীসহ অনুরূপ যেকোনো পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাটের হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থনীতি
বাজেটে রেকর্ড বরাদ্দ বেড়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জন্য ২৪২৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন সরকারের প্রধান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এর মধ্যে ১৪৪০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা উন্নয়ন খাতে এবং ৯৮২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা পরিচালন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সোমবার (০২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ বরাদ্দের ঘোষণা দেন।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই মন্ত্রণালয়ের মোট বরাদ্দ ছিল ১৫৮০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সে তুলনায় নতুন প্রস্তাবিত বাজেট প্রায় ৮৪২ কোটি টাকা বেশি, যা এক লাফে প্রায় ৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি।
উন্নয়ন খাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প
নতুন অর্থবছরের বাজেটে ক্রীড়া ও যুব উন্নয়নের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে:
-উপজেলা পর্যায়ে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্ব
-নড়াইলে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্টেডিয়াম ও টেবিল টেনিস ভবনের আধুনিকায়ন
-ইনডোর ও ভলিবল স্টেডিয়াম নির্মাণ
-বিকেএসপির প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বড় অঙ্কের বরাদ্দ
যুব উন্নয়নে প্রযুক্তিনির্ভর পরিকল্পনা
যুব সমাজকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্যে বাজেটে কিছু প্রযুক্তিভিত্তিক প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে:
-প্রযুক্তিনির্ভর সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প (তৃতীয় পর্ব)
-‘টেকনোলজি এমপাওয়ারমেন্ট সেন্টার অন হুইলস’ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্ব)
-৬৪ জেলায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি
-৪৮ জেলায় ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্প
এছাড়া কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র, সাভারের প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্প্রসারণ, কক্সবাজারে নারীদের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির ‘লিভিং নো ওয়ান বিহাইন্ড’ প্রকল্প, ‘ইকোনোমিক অ্যাকসিলারেশন ফর নিট’ এবং ‘লাইফ স্কিলড এডুকেশন ইন ইয়ুথ ট্রেনিং সেন্টার’ শীর্ষক প্রকল্পগুলোও বাজেটে স্থান পেয়েছে।
ক্রীড়া খাতের অগ্রাধিকার
প্রস্তাবিত বাজেটে ক্রীড়া খাতেও বেশ কিছু লক্ষ্যনির্ভর বরাদ্দ রয়েছে:
-জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ও আয়োজন
-প্রতিভাবান ক্রীড়াবিদ সনাক্তকরণ, প্রশিক্ষণ ও পুরস্কার প্রদান
-ক্রীড়াবিদদের জন্য কল্যাণ অনুদান
-ক্রীড়া অবকাঠামো নির্মাণ ও আধুনিকায়ন
-জেলা ও উপজেলায় ক্রীড়ার পরিবেশ তৈরি
যুব সমাজ ও ক্রীড়াঙ্গনের জন্য বিস্তৃত রূপরেখা
এই বাজেটের মাধ্যমে সরকার দেশের যুব সমাজকে দক্ষ, আত্মনির্ভরশীল ও প্রযুক্তিবান করে গড়ে তোলার পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এগিয়ে নিতে চায়। যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, স্বেচ্ছাসেবী কাজে সম্পৃক্তকরণ এবং জাতীয় উন্নয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণই এই বাজেটের মূল লক্ষ্য বলে জানানো হয়েছে।
অর্থনীতি
বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা বাড়ছে

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কয়েকটি ভাতার হার বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সোমবার (২ জুন) বেলা ৩টায় অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট উপস্থাপন করেন।
প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “দরিদ্র, প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য হ্রাস, সামাজিক বৈষম্য হ্রাস এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবারের বাজেটে সুবিধাভোগীর সংখ্যা এবং মাথাপিছু বরাদ্দ উভয়ই বৃদ্ধি করার দিকে নজর দিয়েছি। এ প্রেক্ষাপটে আগামী অর্থবছর থেকে বেশ কিছু ভাতার হার বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করছি।”
তিনি আরো বলেন, “এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো, বয়স্ক ভাতার মাসিক হার ৬০০ টাকা হতে ৬৫০ টাকায়, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের মাসিক ভাতা ৫৫০ টাকা হতে ৬৫০ টাকায়, প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা ৮৫০ টাকা হতে ৯০০ টাকায় এবং মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রদত্ত মাসিক ভাতার হার ৮০০ হতে ৮৫০ টাকায় বৃদ্ধি।”
“অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য মাসিক ভাতার হার ৬৫০ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করছি।”
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব বাজেটের আকার ৫ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা।
এর আগে সোমবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের বিশেষ বৈঠকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ইতিহাসে ৫৪তম বাজেট।
সংসদ না থাকায় এবারের ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয়েছে।
কাফি
অর্থনীতি
দাম কমবে সব ধরনের ওষুধের

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ক্যানসার প্রতিরোধক ওষুধসহ সব ধরনের ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি সুবিধা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্যানসার প্রতিরোধক ওষুধসহ সব ধরনের ওষুধের কাঁচামাল আমদানি এবং এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি সুবিধা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, জাতীয় উন্নয়নে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আদায় করবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং বাকি ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে অন্যান্য উৎস থেকে। যেখানে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। যদিও অর্থবছরের মাঝে এসে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এই ঘাটতির মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা পূরণ করা হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে, আর ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা আসবে বৈদেশিক উৎস থেকে।
মোট বাজেটের মধ্যে পরিচালন ও অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
সরকারি ব্যয়ের খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ ও সার খাতে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। আর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এডিপি ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের দৃষ্টিতে সংকোচনমূলক বাজেট।
এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার যখন ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যেও অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতার দিকে পরিচালিত করছে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে। এটি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি আরও নিয়ন্ত্রণ, বেসরকারি বিনিয়োগ ও এফডিআই সুবিন্যস্তকরণ, সম্পূর্ণ আর্থিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং বৈশ্বিক ও দেশীয় অনিশ্চয়তার মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করার মতো কঠিন কাজও রয়েছে।
কাফি