অর্থনীতি
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করবেন যেভাবে

অন্যান্য বারের মতো এই অর্থবছরেও (২০২৪-২৫) বাসায় বসেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যাবে। অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রতিটি ধাপ কীভাবে পেরোবেন, তা তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে-
যাদের জন্য আয়কর প্রযোজ্য?
বাংলাদেশে ব্যক্তি পর্যায়ের করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের সময় ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। রিটার্ন দাখিলের আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওয়েবসাইট থেকে চলতি অর্থবছরের কর নির্দেশাবলী পড়তে ভুলবেন না।
এনবিআরের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে তাকে আয়কর দিতে হবে। তবে নারী ও ৬৫-ঊর্ধ্ব নাগরিকদের করমুক্ত আয়ের সীমা চার লাখ টাকা। আর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এটি পাঁচ লাখ টাকা।
এছাড়া, পূর্ববর্তী কর মূল্যায়ন, শহরে বাসস্থান, গাড়ির মালিকানা, নির্দিষ্ট কিছু পেশার সদস্যপদ, ব্যবসা পরিচালনা এবং দরপত্র বা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্যও আয়কর পরিশোধ করতে হয়। এটি নিবন্ধিত কোম্পানি ও এনজিওগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
আর মনে রাখবেন, করদাতা সনাক্তকরণ নাম্বার (টিআইএন) থাকলে আপনার করযোগ্য আয় থাকুক বা না থাকুক, আপনাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতেই হবে। করযোগ্য আয় না থাকলে শূন্য রিটার্ন দাখিল করা যাবে। সেটা না করলে আইনে শাস্তি ও জরিমানার বিধান আছে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
কর দেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র—ইটিআইএন, জাতীয় পরিচয় পত্রের (এনআইডি) ফটোকপি, বিস্তারিত ঠিকানা এবং আগের বছরের রিটার্নের নথি সরবরাহ করুন। একাধিক আয়ের উৎস থাকলে প্রয়োজন মোতাবেক কাগজপত্র সংগ্রহ করুন। বিনিয়োগের বিবরণ, সম্পত্তির তথ্য এবং করমুক্ত আয়ের সার্টিফিকেট অন্তর্ভুক্ত করুন।
যেভাবে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করবেন
টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নাম্বার) সনদধারী প্রতিটি বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। বয়স ১৮ অতিক্রম করলে টিআইএন সদন নেওয়াও বাধ্যতামূলক। আপনি যখন টিআইএন-এর জন্য আবেদন করবেন, আপনাকে কর দাখিলের জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকা বরাদ্দ করা হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে তখন আপনাকে আয় বিবরণী জমা দিতে হবে। এরপর নিজে গিয়ে অথবা কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কর অফিসে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে চাইলে প্রথমে এনবিআরের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন করতে, ওয়েবসাইটের ই-রিটার্ন শাখায় ক্লিক করুন। সেখানে ‘সাইন আপ’ অপশনে গিয়ে প্রথম বক্সে আপনার টিআইএন নাম্বার লিখুন। দ্বিতীয় বক্সে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত মোবাইল নাম্বারটি লিখুন (প্রথম শূন্য বাদ দিয়ে)। এরপর ক্যাপচা কোড দিয়ে ‘ভেরিফাই’ বাটনে ক্লিক করুন। ফোনে আসা ওটিপি ব্যবহার করে আপনার ফোন নাম্বারটি নিশ্চিত করুন। সবশেষে ই-রিটার্ন সিস্টেমে লগ ইন করতে একটি পাসওয়ার্ড ঠিক করুন।
ধাপ ১: ই-রিটার্ন সিস্টেমে প্রবেশ
একবার নিবন্ধন করা হয়ে গেলে এরপর আপনি ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার টিআইএন, পাসওয়ার্ড এবং ক্যাপচা দিয়ে সাইন ইন করতে পারবেন। এরপর একটি ড্যাশবোর্ড পাবেন। এর বাম দিকে থাকা ‘রিটার্ন সাবমিশন’ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ ২: কর যাচাইয়ের তথ্য
ই-রিটার্ন ফরমের শুরুতেই থাকবে ‘ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট ইনফরমেশন’। সেখানে আয়কর সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য– রিটার্ন স্কিম, আয়ের সাল ও উৎস দিতে হবে। আপনার আয় যদি করমুক্ত হয়, তাহলে আয়ের পরিমাণের পাশাপাশি ‘রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস’ দিতে হবে।
ধাপ ৩: আয়ের বিবরণ
এই পর্যায়ে, ‘হেডস অফ ইনকাম’-এ গিয়ে আপনার বিভিন্ন আয়ের উৎস দিন। এখানে আপনার বেতন, নিরাপত্তা সুদ, বাড়ি-সম্পত্তি থেকে আয়, কৃষি আয়, ব্যবসা থেকে আয়, মূলধন লাভ এবং অন্যান্য উৎস থেকে আয় অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন।
যদি আপনার বেতন আপনার আয়ের একমাত্র উৎস হয়, তাহলে ‘স্যালারি’ অপশনে ক্লিক করুন। এর বাইরে আয় থেকে থাকলে ‘ইনকাম ফ্রম আদার সোর্সেস’ অপশনে ক্লিক করুন। সেখানে অন্যান্য যেসব উৎস থেকে আয় করে থাকেন, তাতে ক্লিক করুন।
এরপর ‘সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ’ অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।
ধাপ ৪: অতিরিক্ত তথ্য
এই ধাপে একটি ড্রপডাউন মেনু থেকে আপনার প্রাথমিক আয়ের উৎসের স্থান ঠিক করবেন। সেখানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মতো অনেকগুলো অপশন থাকবে।
আপনি যদি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির আইনি অভিভাবক হয়ে থাকেন, সেটিও এখানে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এছাড়া, বিনিয়োগের জন্য আপনি করমুক্তির দাবিদার কি না এবং আপনি কোনো সংস্থার শেয়ারহোল্ডার পরিচালক কি না, তা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-এর মাধ্যমে উত্তর দেবেন।
ধাপ ৫: আইটি১০বি পূরণ
যদি আপনার সম্পূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ৪০ লাখ টাকা বা তারচেয়ে বেশি হয়, তাহলে আপনাকে অবশ্যই স্টেটমেন্ট ফর্মের ব্যয় বিভাগটি পূরণ করতে হবে। এজন্য ‘আইটি১০বি ফর্ম’ পূরণ করতে হবে। সম্পদের পরিমাণ ৪০ লাখের কম হলে তা পূরণ করতে হবে না। এক্ষেত্রে, আপনার ও আপনার পরিবারের বার্ষিক খরচের হিসেব দিতে হবে।
এরপর ‘সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ’ অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।
ধাপ ৬: আয়ের বিবরণ
অন্যান্য উৎস থেকে আসা আয়, বৈদেশিক আয় বা কর-অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয়ের বিবরণ দিন। বেতন বা করযোগ্য বিনিয়োগ ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে আসা আয়ের তথ্য দিতে আপনি ড্রপডাউন মেনুতে বিভিন্ন অপশন পাবেন।
‘এনি আদার ইনকাম’ অপশনে ক্লিক করলে সেখানে আপনার অন্য আয়ের উৎস, অর্থ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ, প্রাপ্ত সর্বশেষ আয়ের তারিখ ও পরিমাণ, এবং সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের হিসেব দিতে হবে। এসব তথ্য দেওয়ার পর আপনার নেট আয়ের হিসেব দেখানো হবে।
আবার ‘সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ’ অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।
ধাপ ৭: বিনিয়োগ বিভাগ
আপনি যদি বর্তমানে জীবন বীমা প্রিমিয়াম, ডিপোজিট প্রিমিয়াম সার্ভিস (ডিপিএস), অনুমোদিত সঞ্চয়পত্র, সাধারণ প্রভিডেন্ট ফান্ড, বেনেভোলেন্ট ফান্ড, গ্রুপ বীমা প্রিমিয়াম, অনুমোদিত স্টক বা শেয়ার, কিংবা অন্যান্য ক্যাটাগরিতে বিনিয়োগ করে থাকেন, সেগুলো এখানে উল্লেখ করবেন।
ধরুন আপনি যদি ‘ডিপিএস’ অপশনে ক্লিক করেন, তাহলে সেখানে ব্যাংকের নাম, অ্যাকাউন্ট নাম্বার এবং জমাকৃত অর্থের পরিমাণ দিতে হবে। এভাবে অন্যান্য অপশনে গেলেও আপনাকে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।
আবার ‘সেভ অ্যান্ড কন্টিনিউ’ অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।
ধাপ ৮: ব্যয়
এই বিভাগে, মোট আয়ের বিপরীতে আপনার মোট ব্যয় পর্যালোচনা করতে পারবেন। এখানে বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের বিভাগ থাকবে। খাদ্য, পোশাক, বাসস্থান (পরিবহন, গৃহস্থালি, ইউটিলিটিসহ), বাচ্চাদের শিক্ষা এবং অন্য কোনো ব্যয়ের খাত থাকলে তা অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। এই বিবরণগুলো পূরণ করলে আপনার বকেয়া করের হিসেব দেওয়া হবে।
ধাপ ৯: কর এবং পেমেন্ট
এখানে আপনি ইতোমধ্যে কোনো উৎস কর এবং অগ্রিম কর প্রদান করে থাকলে তার হিসেব দিতে পারবেন। এই হিসেব দেওয়ার পর আপনার মোট প্রদেয় করের পরিমাণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে। আপনার আয়ের উপর কোনো কর বকেয়া না থাকলে আপনার প্রদেয় করের পরিমাণ হবে শূন্য। একে ‘শূন্য রিটার্ন’ বলা হয়।
ধাপ ১০: রিটার্ন ভিউ
‘অনলাইন রিটার্ন’ অপশনে ক্লিক করলে আপনি রিটার্ন ফর্মটি দেখতে পাবেন। তার নিচে ‘ইয়েস’ অপশনে ক্লিক করলেই আপনার রিটার্ন চলে যাবে। কোনো তথ্য নিয়ে সন্দেহ থাকলে আপনি ‘নো’ অপশনে ক্লিক করতে পারেন এবং আবার সব তথ্য দেখে নিতে পারেন।
ধাপ ১১: রসিদ ডাউনলোড করুন
যদি আয়কর রিটার্ন সফলভাবে জমা হয়, তাহলে আপনাকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি বার্তা লেখা দেখবেন। সেখানে আপনি একটি রেফারেন্স আইডি ডাউনলোড করার অপশন পাবেন। সেটি ডাউনলোড করে অনলাইনেই আপনি আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। অথবা সেটি প্রিন্ট করে আয়কর অফিসে পাঠাতে পারেন।
এই প্রক্রিয়াটি জটিল মনে হলে আপনি কোনো কর আইনজীবীর দ্বারস্থ হতে পারেন। এছাড়া, বিডিটেক্স এবং শাপলা ট্যাক্সের মতো অনেক অনলাইন প্লাটফর্ম ও অ্যাপ্লিকেশন আছে, যেগুলো আপনাকে আয়কর রিটার্ন দাখিলে সাহায্য করবে।
এমআই

অর্থনীতি
অর্থপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন উদ্যোগ

বহুজাতিক কোম্পানির অর্থপাচার রোধের লক্ষ্যে আরও শক্তিশালী নজরদারি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নজরদারিতে কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের অর্থপাচার ঠেকাতে কঠোর নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহাম্মদ।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তাদের জন্য ‘বাংলাদেশে কার্যরত বহুজাতিক কোম্পানি থেকে ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার প্রতিরোধ’ শীর্ষক কর্মশালায় কর্মকর্তাদের এই পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের পরিচালক মাহবুবুল আলম সভাপতিত্বে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্বায়নের যুগে ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের গুরুত্ব এবং এর অপব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত অর্থপাচারের ঝুঁকি তুলে ধরে প্রধান অতিথি ডেপুটি গভর্নর কবির আহাম্মদ বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অনেক সময় ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের অপব্যবহার করে বিভিন্ন কৌশলে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করে, যা দেশের রাজস্ব ভিত্তি ক্ষুণ্ন করে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের এই বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখার পরামর্শ দেন তিনি। এ ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে মানবসম্পদ তৈরিতে বিনিয়োগ হিসেবে উল্লেখ করে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আর্থিক খাতের সুরক্ষায় এ খাতে উদ্ভূত অভিনব জালজালিয়াতি সম্পর্কে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষিত করতেও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
একই সঙ্গে এসব জালজালিয়াতি উদঘাটনে ফরেনসিক ইন্সপেকশন কার্যক্রমের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন ডেপুটি গভর্নর।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ ধরনের প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। এই প্রশিক্ষণ কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন পর্যবেক্ষণে তাদের সক্ষমতা বাড়বে।
বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের পরিচালক মাহবুবুল আলম ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিং ও হুন্ডি প্রতিরোধের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সংকট নিরসন ও বাজারে স্থিতিশীল রাখতে বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের ভূমিকা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে সংকট নিরসনে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহযোগিতার জন্য ডেপুটি গভর্নরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
অর্থনীতি
সুদমুক্ত ঋণ আদায়ে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ নেবে সরকার: শ্রম উপদেষ্টা

শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের জন্য সরকারের দেওয়া সুদমুক্ত ঋণ যথাসময়ে ফেরত না দিলে সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন উপদেষ্টা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি, বিজিএমইএ-এর সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা কারখানার মালিকদের উপস্থিতিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন জানান, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রম অসন্তোষ নিরসনের লক্ষ্যে সরকার বার্ডস গ্রুপ, টিএনজেড গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, ডার্ড গ্রুপ, নায়াগ্রা টেক্সটাইলস লি, রোয়ার ফ্যাশন লি, মাহমুদ জিন্স লি, স্টাইল ক্রাফট লি. এবং গোল্ডস্টার গার্মেন্টস লি.-কে অর্থ বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় তহবিল, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সুদমুক্ত ঋণ দেয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণচুক্তির আওতায় ওই অর্থ পরিশোধ করছেন না।
তিনি কঠোর ভাষায় বলেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে। তাদের পাসপোর্ট জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এরই মধ্যে কয়েকজন পলাতক মালিকের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেডনোটিশ জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি পলাতক মালিক ও প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট স্থগিত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন।
উপদেষ্টা বলেন, এ ঋণের টাকা শ্রমিকের টাকা এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকা। এ টাকা আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনোরকম ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক ও প্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্ট লিয়েন ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিষ্ঠানের জমি, কারখানা, যন্ত্রপাতি বিক্রি করে হলেও ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ঋণের সব টাকা পরিশোধ করতে বলেন। এ বিষয়ে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-কে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অর্থনীতি
অনলাইন রিটার্নের সঙ্গে সরাসরি ব্যাংকের সংযোগে ভয় নেই: এনবিআর চেয়ারম্যান

অনলাইন রিটার্ন দাখিলের সময় সরাসরি ব্যাংকের সংযোগ স্থাপন করা হলে করদাতাদের সুবিধা হবে। এছাড়া কোনো এনবিআর কর্মকর্তা গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য দেখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) এনবিআরের প্রধান কার্যালয় মিট দা বিজনেস শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাংকের তথ্য এনবিআরের কোনো কর্মকর্তা দেখতে পাবেন না। এই সুবিধা করদাতার জন্য। এতে ব্যাংকের আমানত সংগ্রহে কিংবা করদাতাদের কোনো সমস্যা হবে না। করদাতার যাতে হিসাব বিবরণী বারবার আনতে না হয়, সে কারণে আমরা বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করার চেষ্টা করছি।
অন্যদিকে করপোরেট কর প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করপোরেট কর কমতে কমতে ২০ ভাগ হয়েছে। আগামীতেও করপোরেট কর রিটার্নও অনলাইন করা হবে। আমাদের লক্ষ্য ব্যবসায়ীরা যাতে পেইন না পায়। ব্যবসায়ীরা যাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
তিনি আরও বলেন, বেশিরভাগ করদাতা রিটার্ন দেন না। টিআইএনধারীদের নোটিশ দেওয়াকে হয়রানি বলা ঠিক না। রিটার্ন জমা দিলেই সমস্যার সমাধান। আয়করে অটোমেশন করা হয়েছে। আমরা র্যানডম বেসিসে অডিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কোম্পানির ক্ষেত্রে এমনভাবে অডিট হবে। যাতে তিনটির মধ্যে অন্তত একটি নতুন ফাইল হয়।
ভ্যাট রেট নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ভ্যাট রেট নিয়ে অনেক আপত্তি দেখলাম। আমিও প্রয়োজনে ভ্যাট রেট কমাবো। ভ্যাট রেট হবে একক রেট। আমরা চাই ডিজিটালাইজেশন। আমরা সফটওয়্যার করতে চাই। ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দেয় না। ভ্যাট দেয় চূড়ান্ত ভোক্তা। তাহলে ওটা লুকাতে এতো চেষ্টা কেন?
টোব্যাকো খাতে ৮৩ শতাংশ ভ্যাট থাকলেও আদায় হয় না এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, টোব্যাকো খাতে বড় অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকি হয়। গত এক বছরে ৩ হাজার অডিট হয়েছে। সেখানে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে। অধিকাংশ ভ্যাট পাই না। আমরা কিউআর কোড কেন্দ্রিক সিস্টেম করতে চাচ্ছি। যাতে অটোমেটিকভাবে ভ্যাট জমা হয়। ব্যবসায়ীদের অটোমেশনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাবো।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ আগস্ট এনবিআর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়। যেখানে বলা হয়, করদাতাদের অনলাইন রিটার্নের সঙ্গে সরাসরি ব্যাংকের সংযোগ থাকবে। যার মাধ্যমে করদাতার অ্যাকাউন্টের ব্যালান্স, সুদের আয় এবং উৎসে কর্তনকৃত কর—রিয়েল-টাইমে জানা যাবে। এরপর বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠে যে, গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে তথ্য এনবিআর কর্মকর্তাদের কাছে চলে যাবে। তাতে ব্যাংকের আমানত কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনীতি
জেট ফুয়েলের দাম কমলো

বিমানে ব্যবহৃত জ্বালানি তেল জেট ফুয়েলের দাম কমানো হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে প্রতি লিটারে ৯৯ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে কমিয়ে ৯৬ টাকা ৯ পয়সা করা হয়েছে। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে প্রতি লিটার ০.৬৫০২ ডলার থেকে কমিয়ে ০.৬৩৩৩ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) নতুন এ দাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
এর আগে আগস্ট মাসে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ৯৮ টাকা ২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯৯ টাকা ৬৬ পয়সা করা হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে প্রতি লিটার ০.৬৪০১ ডলার থেকে বাড়িয়ে ০.৬৫০২ ডলার নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন ২০০৩ অনুযায়ী, দেশি ও বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য ডিউটি ফ্রি (শুল্ক ও মূসকমুক্ত) এবং অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য শুল্ক ও মূসকসহ জেটএ-১ (এভিয়েশন ফুয়েল) এর মূল্যহার নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) গত ২০ জানুয়ারি এবং বিপিসির প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (পিওসিএল) গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জেটএ-১ বিপণনে তাদের বিপণন চার্জ পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব কমিশনে জমা দেয়।
অর্থনীতি
৯ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১২ হাজার ৪২০ কোটি টাকা

চলতি মাস সেপ্টেম্বরের প্রথম ৯ দিনে এক বিলিয়ন ডলারের (১০১ কোটি ৮০ লাখ ডলার) রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে দেশে। স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ১২ হাজার ৪২০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরেক হোসেন খান জানান, সেপ্টেম্বরের ৯ দিনে ১০১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যা গত বছরের (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের ৬ দিন) একই সময়ের চেয়ে ১৮ কোটি ৫০ ডলার বেশি এসেছে। গত বছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ ছিল ৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
আর চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের ৯ দিন পর্যন্ত ৫৯১ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যা গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এসেছিল ৪৯৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। অর্থবছর হিসাবে গত অর্থবছরে একই সময়ের চেয়ে ৯৪ কোটি ৭০ ডলার বেশি এসেছে। যা প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ দশমিক ১০ শতাংশ।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে এসেছে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। আর গত আগস্টের পুরো সময়ে এসেছিল ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ২৯ হাজার ৫৪৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার রেমিট্যান্স এসেছে।
এর আগে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা ছিল বছরের রেকর্ড পরিমাণ। আর পুরো অর্থবছর (২০২৪-২৫) জুড়ে প্রবাসী আয় এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল জুলাইয়ে ১৯১.৩৭ কোটি ডলার, আগস্টে: ২২২.১৩ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০.৪১ কোটি ডলার, অক্টোবরে: ২৩৯.৫০ কোটি ডলার, নভেম্বরে: ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে: ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে: ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে: ২৭৫ কোটি ডলার, মে মাসে ২৯৭ কোটি ডলার এবং জুনে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ও প্রবাসী আয়ের পথ সহজ করায় রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।