শিল্প-বাণিজ্য
তিনদিনে ভারত থেকে এলো ৫৯৩ টন কাঁচামরিচ
তিনদিনে ভারত থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৮০৬ টন কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছে। তারপরও যশোরের সব খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫০-২০০ টাকা। কারণ হিসেবে দুর্গাপূজার জন্য টানা পাঁচদিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকার কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আমদানি বাড়লেও আড়তে তেমন কমেনি কাঁচামরিচের দাম। পাঁচদিন বন্দর বন্ধ থাকবে জেনে কাঁচামাল গুদামজাত করে দাম বাড়িয়েছেন আড়তদাররা।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকালে বেনাপোল ও শার্শার একাধিক বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও এসব বাজারে ভারত থেকে আমদানিকৃত কাঁচামরিচ খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছিল ৮০-১০০ টাকা কেজি। আজ তা বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৪০০ টাকা কেজি দরে।
এদিকে বেনাপোল বন্দরে কয়েকগুণ বেড়েছে কাঁচামরিচের আমদানি। গত সোমবার একদিনে ৫০ ট্রাকে ৫৮২ টন কাঁচামরিচ আমদানি হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১২ ট্রাকে ১৪৪ টন কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছে। আজ বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাঁচটি ট্রাকে ৮০ টন কাঁচামরিচ আমদানি হয়।
আমদানিকৃত এসব কাঁচামরিচের ক্রয় থেকে শুরু করে শুল্ক-কর মিলিয়ে খরচ পড়ছে ৯৬-১০০ টাকা কেজি। অথচ যশোরে বিভিন্ন বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৪০০ টাকা কেজি দরে।
বেনাপোল বন্দরের পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ আমদানিকারক রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, পেঁয়াজে তেমন পড়তা না থাকায় এখন কাঁচামরিচ আমদানি করছি। বর্তমানে মরিচ আমদানি বেশি হচ্ছে। বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ভাবটা অচিরেই কেটে যাবে। গত তিনদিনে প্রায় ৬৭ ট্রাকে ৮০৬ টন মরিচ আমদানি হয়েছে এ বন্দরে দিয়ে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের শার্শা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত ইয়াসিন জানিয়েছেন, তারা নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করছেন। ক্রয়-বিক্রয় রশিদ, মূল্য তালিকা, বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে কি না সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) রাশেদুল সজিব নাজির বলেন, ভারত থেকে তিনদিনে ৮০৬ টন কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছে এ বন্দরে দিয়ে। বন্দর থেকে খালাস করে নিয়ে যাচ্ছেন আমদানিকারকরা। পচনশীল পণ্য হিসেবে আমরা দ্রুত খালাস দিয়ে থাকি। দামের বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
চ্যালেঞ্জিং সময় পার করে পোশাক শিল্প এখন স্থিতিশীল: বিজিএমইএ
পোশাক শিল্প একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করে বর্তমানে স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে। সরকার, মালিক, শ্রমিক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার সহযোগিতায় বিজিএমইএ বোর্ড বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
আজ শনিবার উত্তরার বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, সবাই আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। তার জন্য বিজিএমইএ বোর্ড সরকার
ও সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তাছাড়া ক্রেতারাও বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ওপর আস্থা রেখেছে। বিজিএমইএ বোর্ডের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সরকারের নির্দেশনায় পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী গঠন হয়েছে এবং যৌথবাহিনী গার্মেন্টস অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়মিতভাবে টহল পরিচালনা করেছে। বিজিএমইএ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কমিউনিটি পুলিশিং চালু করেছে।
তিনি আরও বলেন, পোশাক কারখানাগুলোতে আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় বিজিএমইএ থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে অর্থ উপদেষ্টাকে চিঠি দেওয়া হয়। বিজিএমইএ বোর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গেও দেখা করেছে। তারপর বিজিএমইএ এর অনুরোধের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগস্ট মাসের বেতনভাতা পরিশোধের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শ্রম অসন্তোষে আশুলিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৯টি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন বেতনভাতা পরিশোধের সক্ষমতা ছিল না। বিজিএমইএ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সেপ্টেম্বর মাসের বেতন ভাতা পরিশোধের লক্ষ্যে ৩৯টি পোশাক কারখানাকে সুদবিহীন সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এ সময় বোর্ডের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
পিটার হাসের নেতৃত্বে পেট্রোবাংলায় এক্সিলারেটের প্রতিনিধি দল
বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহ দেখিয়েছে এক্সিলারেট এনার্জি। এ বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে বুধবার পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারসহ সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কয়েক কর্মকর্তার সঙ্গে মার্কিন কোম্পানিটির একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছে। প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে যাওয়া পিটার ডি হাস, যাকে সম্প্রতি এক্সিলারেট এনার্জির স্ট্র্যাটেজিক উপদেষ্টা করা হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশনে টার্মিনালের সংখ্যা আরো বাড়াতে চায় এক্সিলারেট। আর পেট্রোবাংলা চায় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে মহেশখালীতে এলএনজির ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ করতে। তাই অন্যান্য কোম্পানির মতো এক্সিলারেট এনার্জিকেও সেখানে অংশ নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সরবরাহের জন্য পেট্রোবাংলার মাস্টার সেলস পারচেজ এগ্রিমেন্টে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্যও আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া অফশোর বিডিং রাউন্ডে কীভাবে এক্সিলারেট সহযোগিতা করতে পারে, সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয় প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে।
রাজধানীর পেট্রোসেন্টারে এক্সিলারেটের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী কামরুজ্জামান খান, পরিচালক (প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট) প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম। জানতে চাইলে প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, ‘পেট্রোবাংলার সঙ্গে এক্সিলারেট এনার্জির প্রতিনিধি দলের সৌজন্য বৈঠক হয়েছে। এটি নিয়মিত বৈঠকের একটি অংশ বলা চলে। আগামীতে পেট্রোবাংলার এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, স্পট এলএনজি কার্গো আমদানি এবং অফশোর বিডিং হবে। এগুলোয় তাদের (এক্সিলারেট এনার্জি) অংশ নেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যান্য কোম্পানির মতো তারাও যাতে অংশ নিতে পারে সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, পটুয়াখালীর পায়রায় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ আইনে (বিশেষ আইন) করা টার্ম-শিট চুক্তি বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত সপ্তাহের এ চুক্তি বাতিলের বিষয়টি এক্সিলারেট এনার্জিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয় পেট্রোবাংলা। এ কারণেই কোম্পানিটির পক্ষ থেকে পেট্রোবাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিশেষ আইনের আওতায় সামিটের সঙ্গে করা এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তি বাতিল করেছে পেট্রোবাংলা। এখন নতুন করে কক্সবাজারের মহেশখালী, পটুয়াখালীর পায়রা ও মাতারবাড়ীর স্থলভাগে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হবে। এসব দরপত্রে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জিকে অংশ নিতে বলা হয়েছে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে। একই সঙ্গে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির জন্য বর্তমান যে তালিকা করা রয়েছে, সেটি আবার নতুন করে তৈরি হচ্ছে। এক্সিলারেট চাইলে নতুন তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
মহেশখালীতে বর্তমানে এক্সিলারেট এনার্জির একটি টার্মিনাল রয়েছে। এর মাধ্যমে তারা দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে। পেট্রোবাংলার সঙ্গে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট থেকে শুরু হয় গ্যাস সরবরাহ। পেট্রোবাংলার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ১৫ বছর মেয়াদি গ্যাস চুক্তি রয়েছে।
দেশে দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি সরবরাহের জন্য গত বছরের নভেম্বরে পেট্রোবাংলার সঙ্গে এক্সিলারেট এনার্জি চুক্তি করে। সে অনুযায়ী, এক্সিলারেট এনার্জির সহযোগী প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট গ্যাস মার্কেটিংয়ের কাছ থেকে ১৫ বছর মেয়াদে শূন্য দশমিক ৮৫ থেকে এক এমটিপিএ এলএনজি আমদানি করবে সরকার। এক্সিলারেট ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু করবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ৭ দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
শারদীয় দুর্গা ও লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে সাতদিন বন্ধ থাকবে দেশের অন্যতম রপ্তানিমুখী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর।
ভারতীয় ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে চিঠির মাধ্যমে আখাউড়া আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোশিয়েসনকে এ তথ্য জানানো হয়।
আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে আগামী ১০ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এরপর লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে আরও দুইদিন ১৬ ও ১৭ অক্টোবর বন্দরে বাণিজ্য কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। পরের দিন ১৮ অক্টোবর শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। ১৯ অক্টোবর শনিবার থেকে বন্দরে পুনরায় বাণিজ্য কার্যক্রম শুরু হবে। তবে এ সময় বন্দরে আমদানি-রপ্তানিসহ সব ধরনের বাণিজ্য কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দুই দেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের পারাপার স্বাভাবিক থাকবে।
উল্লেখ্য, দেশের অন্যতম বৃহৎ ও রপ্তানিমুখী আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে হিমায়িত মাছ, প্লাস্টিক, রড, সিমেন্ট, ভোজ্য তেল, তুলা ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি করা হয়ে থাকে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
১৫ শতাংশ সুদ দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা দুঃসাধ্য: ব্যবসায়ীরা
কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী নেতারা। তাঁরা বলছেন, ১৪-১৫ শতাংশ সুদ দিয়ে ব্যবসা করে বিশ্বের কোনো দেশে মুনাফা করা যায় না। ঋণের সুদ ৯ থেকে বেড়ে ১৬ শতাংশ হয়ে গেছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক ব্যবসা বাংলাদেশে এসেছে।
সেগুলো রাখতে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। ঋণের সুদ নিয়ে বসে আলোচনা করা দরকার। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তাঁরা।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ। এ সময় বক্তব্য দেন শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী এবং বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ।
সেমিনারের সূচনা বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, কভিড-পরবর্তী সময় থেকে আমরা নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তবে সাম্প্রতিক সময়ে শিল্প-কারখানায় অসন্তোষের কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংকঋণের সুদের উচ্চ হার এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনার অস্থিতিশীলতার কারণে বেসরকারি খাত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, অর্থনীতির সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তিনি আরো বলেন, দেশের ভালো ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট রয়েছে, ফলে উদ্যোক্তারা প্রত্যাশিত মাত্রায় ঋণ পাচ্ছেন না, সেই সঙ্গে কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা শিল্প খাতে পণ্য উৎপাদনকে ব্যাহত করছে, ফলে স্থানীয় চাহিদার জোগান মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি সমন্বিত রাখা বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিল্পাঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কষ্টে আছি। আজকে আমার কারখানায় যেতে ভয় লাগে। ভয় লাগে এই জন্য যে আমি কি নিজের জীবন নিয়ে বের হয়ে আসতে পারব? এভাবে ব্যবসায়ীরা যদি নিজেদের কারখানায় যেতে শঙ্কিত হন, তাহলে তাঁরা আগামী দিনে ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবেন না।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে যাঁরা শিল্পাঞ্চলে অসন্তোষ উসকে দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান আহসান খান চৌধুরী। বলেন, “বর্তমানে যাঁরা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতায় অন্যায় সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাঁদের শিক্ষা দিতে হবে।
আমাদের দেশে কখনোই ‘দিতে হবে, দিতে হবে’, দাবি মানতে হবে’—এমন সংস্কৃতি ছিল না। আমরা বিগত দিনে কারখানাগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করেছি। আমরা সেই সংস্কৃতি ফিরে পেতে চাই।” তিনি আরো বলেন, ‘ব্যবসা পরিচালনার জন্য আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি একটি মৌলিক বিষয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগামী দিনে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ১৫ শতাংশের বেশি ব্যাংকঋণের সুদ দিয়ে পৃথিবীতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা খুবই দুঃসাধ্য একটি ব্যাপার, তবে আমাদের উদ্যোক্তাদের সেটা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে কাস্টম হাউসে দুর্নীতির কারণে ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, যেটি নিরসনে সরকারের ফিন্যানশিয়াল রিফর্মস কমিটি গঠন করার পাশাপাশি অটোমেশন নিশ্চিত করা জরুরি।
মীর নাসির হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার এখনো ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। ব্যবসায়ীদের কথা শুনতে হবে। তাঁদের অবদান স্বীকার করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব অব্যবস্থাপনা ছিল, সেগুলো সংস্কার করতে হবে। তবে সেখানে এখনো কোনো উদ্যোগ দেখছি না। দেশে মধ্যম আয়ের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে, যাদের করজালের আওতায় নিয়ে আসা গেলে জিডিপিতে রাজস্বের অবদান অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং লাভবান হবে আমাদের অর্থনীতি।
লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, বর্তামন প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীরা ভীষণভাবে অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতরা মধ্যে রয়েছেন, যা উত্তরণে শিল্পাঞ্চলে বিশেষ করে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে, পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বন্ধ। এফডিআই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ডলারের জন্য নয়, বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় যুক্ত হওয়া যায়। রপ্তানি পণ্যের বাড়তি দাম পাওয়া যায়। বর্তমানে যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করলেই বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলবে।
এ ছাড়া প্রশাসনের অনেক জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না, এ ক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট বার্তা প্রদান করা আবশ্যক। তিনি বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে স্থানীয়ভাবে আমাদের চাহিদা কমে গেছে, যেটা উদ্বেগের বিষয়, সেখানে সবাইকে নজর দিতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ডাবল ডিজিটের সুদ দিয়ে ব্যবসায় মুনাফা করা অসম্ভব।’
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিদ্যমান শ্রমিক অসন্তোষ কার্যক্রমে অনুপ্রবেশকারীদের হাত রয়েছে। এরই মধ্যে শ্রমিকদের বেশ কিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি শ্রমিকদের যেকোনো যৌক্তিক দাবি বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ ইতিবাচকভাবে মেটাতে বদ্ধপরিকর।
ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বর্তমান সময়ে তৈরি পোশাক খাতের ঝুট ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে শিল্প-কারখানায় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। যেকোনো মূল্যে এই পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশ বৈশ্বিকভাবে ইমেজ সংকটে পড়তে পারে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, শিল্প খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে মাঠ পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না, যেটি মোটেই কাম্য নয়। সরকারকে এ বিষয়টিতে নজর দেওয়া জরুরি।
মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, গত মাসের বন্যা ও পার্বত্য এলাকায় অস্থিরতার ফলে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, সেই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশে ভিসা জটিলতার কারণেও এই খাতে নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে ই-কমার্স খাতের উন্নয়নে আস্থার পরিবেশ উন্নতির কোনো বিকল্প নেই।
ফুডপান্ডা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং সিইও আমব্রারিন রেজা বলেন, গত তিন মাসে ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় বিশেষ করে ডিজিটাল সেবা খাতের ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং এই খাতের বেশির ভাগ উদ্যোক্তাই এসএমই, যাঁদের ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক করতে দ্রুততম সময়ে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রদান করা জরুরি।
ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দসহ বেসরকারি খাতের আমন্ত্রিত অতিথিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
বেনাপোল দিয়ে ভারতে গেলো ২৭৬ টন ইলিশ
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পাঁচ চালানে ভারতে গেল ২৭৬ টন ইলিশ। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ৫৪ টন, শনিবার ৪৫ টন, রোববার ১৯ টন, সোমবার ৮৯ টন এবং মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ৬৯ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য ১০ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ১৮০ টাকা।
বেনাপোল স্থলবন্দরের ডেপুটি ডিরেক্টর রাশেদুল সজিব নাজির গণমাধ্যমকে জানান, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচ চালানে ৯১টি ট্রাকে ২৭৬ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানিকারকদের আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। অনুমোদন পাওয়া ৪৮টি প্রতিষ্ঠান ৫০ টন করে ২ হাজার ৪০০ টন, আর একটি প্রতিষ্ঠান ২০ টন ইলিশ রপ্তানি করবে।
অন্যদিকে, মা ইলিশ রক্ষায় বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনা নিয়ে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাকে ভিত্তি ধরে আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুদ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।