অর্থনীতি
মেট্রোরেলের সাবেক এমডির সুবিধায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা অপচয়!
নিজের সুবিধার জন্য বাসার কাছেই নেন অফিস ভাড়া। বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব ছিল ৭০০ মিটার। শুধু অফিস ভাড়া বাবদই মাসে খরচ হতো কয়েক লাখ টাকা। মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে একচ্ছত্র ক্ষমতায় পরিচালনা করা সাবেক এমডি এম এ এন ছিদ্দিকের বিরুদ্ধে রয়েছে এমন অভিযোগ। উত্তরার দিয়াবাড়িতে বিশাল জায়গায় মেট্রোরেলের নিজস্ব ভবন থাকলেও এতদিন ভাড়া কার্যালয়ে অফিস করেছেন ছিদ্দিক। এজন্য মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে গচ্চা দিতে হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা।
ডিএমটিসিএল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সাবেক এমডি এম এ এন ছিদ্দিকের সুবিধার জন্য এতদিন অফিস স্থান্তরিত করা হয়নি। তাই এই অর্থ ভাড়া হিসেবে দেয়া লেগেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের।
উত্তরার দিয়াবাড়িতে অবস্থিত এমআরটি লাইন-৬ এর ডিপো। সেখানে অবস্থিত ডিএমটিসিএল ভবন। ওই ভবনটি নির্মাণে চুক্তি বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর। নির্দিষ্ট সময়েই শেষ হয়েছে কাজ। এরপর ডিফেক্ট লাইবিলিটি পিরিয়ড (ডিএলপি) ছিল দেড় বছর। ২০২১ সালে ভবনের কাজ শেষ হওয়ার পরই ডিএমটিসিএলে অফিস করেছেন মেট্রোরেলের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। তবে ডিএমটিসিএল এর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ইস্কাটন রোডের প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ভাড়া অফিসেই এতদিন কার্যক্রম চালিয়েছেন। এমআরটি লাইন-১, লাইন-৬ ও লাইন-৫ এর রুটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেখানে অফিস করেছেন। চলতি মাস থেকে এ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সাবেক এমডি এম এ এন ছিদ্দিকের কারণে এতদিন নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হতে পারেনি ডিএমটিসিএল এর অফিস। প্রবাসী কল্যাণের ভবন থেকে মাত্র ৭০০ মিটার দূরে রাজধানীর বেইলী রোডের সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টার গুলফিশানে থাকতেন ছিদ্দিক। সেখান থেকে প্রবাসী কল্যাণ ভবন কাছাকাছি হওয়ায় এতদিন ভবনটি ভাড়া নিয়ে অফিসের কার্যক্রম চালিয়েছেন। যদিও দিয়াবাড়িতে ডিএমটিসিএল এর নিজস্ব অফিসটি দৃষ্টিনন্দন। এতদিন সেখানে অফিস না করা নিয়ে উষ্মাও রয়েছে কিছু কর্মকর্তাদের মধ্যে।
গতকাল মঙ্গলবার বেইলী রোডের গুলফিশানে গিয়ে খোঁজ নিলে জানা যায়, ডিএমটিসিএল’র সাবেক এমডি সেখানে আর নেই। ডিএমটিসিএল থেকে তার নিয়োগের চুক্তি বাতিল হওয়ার পর গুলফিশান থেকে চলে গেছেন ছিদ্দিক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রবাসী কল্যাণ ভবন ভাড়া নিয়েছে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ। এমআরটি লাইন-১ এর জন্য ১১ হাজার ৮৯০ স্কয়ারফিট জায়গায় ভাড়া নিয়েছিলো প্রবাসী কল্যাণ ভবনে। তবে দিয়াবাড়িতে ডিএমটিসিএল এর নিজস্ব ভবন নির্মাণ হওয়ার পর অর্থাৎ ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। এরমধ্যে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মাসে প্রতি স্কয়ার ফিট ভাড়া ছিল ৫৫ টাকা করে। আর ওই বছরের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রতি স্কয়ার ফিট ভাড়া ছিল ৬০ টাকা ৫০ পয়সা। এরপর থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত ভাড়া ছিল ৬৬ টাকা ৫০ পয়সা। এ ছাড়া এমআরটি লাইন-১ এর আরও একটি ফ্লোর ভাড়া নেয়া হয় ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। ৫ হাজার ৪৪৪ স্কয়ার ফিটের প্রতি স্কয়ার ফিটের মাসিক মূল্য ছিল ৫৫ টাকা। অর্থাৎ তখন থেকে চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত ভাড়া দিয়েছে ৪১ লাখ ৯১ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, প্রবাসী কল্যাণ ভবনে মেট্রোরেল সাউদার্ন রুটের জন্য ভাড়া নেয়া হয়েছিল ৭ হাজার ৮৫৭ স্কয়ার ফিট। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত এজন্য ভাড়া দিতে হয়েছে ১ কোটি ৬১ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এরমধ্যে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাসে প্রতি স্কয়ার ফিট ভাড়া ছিল ৫৫ টাকা করে। আর তারপর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ভাড়া দিয়েছে ৬০ টাকা ৫০ পয়সা।
এ ছাড়া মেট্রোরেল লাইন-৬ এর জন্য ১৩ হাজার ৭৮৫ স্কয়ার ফুটের অফিস ভাড়া নিয়েছিল ডিএমটিসিএল। ২০২১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত এজন্য ভাড়া দিতে হয়েছে ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মাসে প্রতি স্কয়ার ফিট ভাড়া ছিল ৫৫ টাকা। এরপর থেকে চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত ভাড়া ছিল ৬০ টাকা ৫০ পয়সা। এপ্রিল থেকে চলতি আগস্ট পর্যন্ত ভাড়া ছিল ৬৬ টাকা ৫০ পয়সা। সব মিলে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে প্রবাসী কল্যাণে অফিস ভাড়া নেয়ার জন্য ডিএমটিসিএলকে দিতে হয়েছে ৭ কোটি ৩৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা প্রায়।
ডিএমটিসিএলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ২০২১ সালের ভেতরেই দিয়াবাড়ির ভবনের কাজ হয়েছে। তারপর থেকে সেখানে অপারেশন, মেইনটেইনেন্স দলের সবাই অফিস করেছেন। চলতি মাস থেকে প্রবাসী কল্যাণের ভবনে কাজ করা কর্মকর্তারাও এখানে অফিস শুরু করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমটিসিএল’র আরেক কর্মকর্তা বলেন, সাবেক এমডি চাননি দেখে এতদিন দিয়াবাড়িতে অফিস নেয়া যায়নি। তার নিজস্ব সুবিধার কারণে প্রবাসী কল্যাণে আমাদের অফিস করতে হয়েছে। এখানে আমাদের এতদিন শুধু শুধু ভাড়া দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আগের এমডি বলেছেন, কমলাপুরের কাজ শেষ না হলে দিয়াবাড়ির অফিস আনা যাবে না। তাহলে এখন কীভাবে এনেছে। প্রবাসী কল্যাণে যখন অফিস ছিল সেখান থেকে তো দিয়াবাড়ির কাজ চালানো গেছে। তাহলে এখান থেকে কমলাপুরের কাজ চালাতে তো অসুবিধা নেই। তার ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল সেজন্য সেখানে অফিস রাখতে হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিএমটিসিএলে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন সাবেক এমডি। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তার বাইরে কথা বলতে পারতেন না কেউই। গণমাধ্যমের সঙ্গেও তার ভয়ে কথা বলতেন না কোনো কর্মকর্তা। এমনকি জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছে সাংবাদিকরা কিছু জানতে চাইলেও সাবেক এমডি’র কাছেই জানার জন্য বলতেন। সাবেক এমডি’র ব্যবস্থাপনায় কর্মকর্তাদের মধ্যেও অসন্তোষ ছিল।
এ ব্যাপারে জানতে মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের সাবেক এমডি এম এ এন ছিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সিপি-০২ এর কাজ ২০২২ সালে পরিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছিল। তৎপূর্ব থেকেই ডিএমটিসিএল’র পূর্ণ অপারেশন ও কারিগরি টিম দিয়াবাড়ি কার্যালয়ে নিয়মিত অফিস করছে। অতি নগণ্য সংখ্যক অকারিগরি জনবল প্রবাসী কল্যাণ ভবনে অবস্থিত এমআরটি লাইন-৬ এর প্রকল্প অফিসের অব্যবহৃত কক্ষ ব্যবহার করেছে। ডিএমটিসিএল কখনো কোনো কক্ষ ভাড়া করেনি।
তিনি আরও বলেন, ডিএমটিসিএল’র নিজস্ব অকারিগরি জনবল কম থাকায় বিভিন্ন লাইনের (লাইন-৬, লাইন-১, লাইন-৫ (উভয় রুট) জনবলকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানো হয়েছে। তারা সবাই প্রবাসী কল্যাণ ভবনের স্ব স্ব প্রকল্প কার্যালয়ে বসতেন। এখান থেকে জনস্বার্থে স্বল্প ব্যয়ে মতিঝিল-কমলাপুর অংশের এবং বিনা ব্যয়ে অন্যান্য সকল লাইনে কাজের সহজ সমন্বয় করা গেছে। প্রতি মাসে সচিবালয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুষ্ঠিত সভায় অংশগ্রহণে সময় ও ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। সর্বোপরি অপারেশন ও কারিগরি সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম একইসঙ্গে দিয়াবাড়ি অফিসে গিয়ে নিয়মিত পরিচালনা করা হয়েছে। কাজেই কোনো ভাড়ার অপচয় হয়নি বরং সাশ্রয় হয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ডিএমটিসিএলের চাহিদা অনুযায়ী তাদের অফিস ধরাই ছিল ডিপোতে হবে। সেটা চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণ হয়ে যাওয়ার পর অস্থায়ীভাবে বসে যে অর্থ খরচ হলো সেটা বেচে যাওয়ার কথা। এজন্যই বিনিয়োগ করা হয়েছে। কেউ যদি বিনিয়োগের সদ্ব্যবহার না করে অপচয় করে তাহলে নিশ্চয়ই এখানে আইন বহির্ভূত কাজ হয়েছে। এই অর্থ অপচয়ে যদি সঙ্গত কোনো কারণ না থাকে তাহলে তদন্ত করে যার দায় তার কাছ থেকে আদায় করতে হবে। কারণ জনগণের টাকায় এটা করা হয়েছে। যারা এটা তদন্ত করবে না তারাও দায়ী থাকবে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
অনিষ্পন্ন দায় ২.৫ বিলিয়ন থেকে ৭০০ মিলিয়নে এনেছি: গভর্নর
দুই মাসে অনিষ্পন্ন দায় ২.৫ বিলিয়ন থেকে কমিয়ে ৭০০ মিলিয়নে নিয়ে আসা হয়েছে। বাকি অংশও আগামী দুই মাসের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই তথ্য জানিয়েছেন।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, জ্বালানি তেল, গ্যাস, কয়লাসহ যাবতীয় পেট্রোলিয়াম পণ্যের প্রায় পুরোই আমদানি করতে হয় বিভিন্ন উৎস থেকে। যার পেছনে সবশেষ অর্থবছরে ব্যয় হয় প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া, বিদ্যুৎ ও সারের ক্ষেত্রেও নির্ভরতা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু, গেল বছর দুয়েক ধরে ডলার সঙ্কট শুরু হলে, সেই ব্যয় পরিশোধ করা যায়নি সময়মতো। এই বাস্তবতায়, আদানি, কাফকোসহ, শেভরন ও বিপিসিকে সরবরাহকারী বেশ কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া পড়ে যায় সোয়া দুই বিলিয়ন ডলারের ওপরে। তবে, গেল দুই মাসে রিজার্ভে হাত না দিয়েই, সেই বকেয়ার দেড় বিলিয়ন পরিশোধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তিনি বলেন, ২.৫ বিলিয়নের মতো অনাদায়ী, অনিষ্পন্ন দায় ছিল সরকারের। সেটা ছিল ডলারের। সেটা আমরা কমিয়ে ৭০০ মিলিয়নে নিয়ে এসেছি। সারের জন্য প্রচুর টাকা দেয়া হয়েছে, বিদ্যুতের জন্য দেয়া হয়েছে, আদানি-শেভরনকে দেয়া হয়েছে। সবার দেনাটা কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য আগামী দুই মাসের মধ্যে দেনা জিরোতে নামিয়ে আনব। তখন বাজারে লিকুইডিটা আরও বাড়বে।
এসব বকেয়া পরিশোধের পর, চাপ কমবে আর্থিক ব্যবস্থাপনায়। যা গতি বাড়াবে সার্বিক কর্মকাণ্ডে। একই সঙ্গে, প্রস্তুতি চলছে বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে আরো প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ঋণ সংগ্রহের। কিন্তু, বর্তমানে ১০৩ বিলিয়নের বিদেশি ঋণ ও পরিশোধের ধারাবাহিক বাড়তি চাপে কিছুটা চিন্তিত গভর্নর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, অবস্থা সামাল দিতে ধৈর্য্য ধরতে হবে অন্তত এক বছর।
আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, যদি আমি আইএমএফ থেকে ২-৩ বিলিয়ন অতিরিক্ত পাই, এর সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের আরও ২ বিলিয়ন পাই; তাহলে এই ৫ বিলিয়ন নিয়ে দুটো জিনিস করতে হবে। সরকার কিছু ব্যয় বাড়াতে পারবে, এতে করে অর্থনৈতিক কার্যক্রম কিছুটা গতিশীল পাবে। এখনই লম্প-ঝম্প করলে হবে না যে আমার বিনিয়োগ নাই। এখন বিনিয়োগ হবে না, কম হবে, এটাই বাস্তবতা। এখন বিশ্বব্যাংক বলছে আমাদের প্রবৃদ্ধি হয়তো ৪ শতাংশে নেমে আসবে। হতে পারে, আমিও মনে করি ৪-৫ মধ্যে হয়তো হবে। হোক; তাও সেটা একটা বছরই তো।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দেশের ইতিহাসে স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম
টানা ৪ দফা বাড়ানোর পর এক দফা কমানো হয়েছিল স্বর্ণের দাম। তবে আবারও দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এবার ভরিতে ২ হাজার ৬১২ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৪০ হাজার ৬১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাজুস। রোববার (২০ অক্টোবর) থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৪০ হাজার ৬১ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭০৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৯৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯৪ হাজার ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।
এর আগে, সবশেষ গত ২৮ সেপ্টেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সে সময় ভরিতে ১ হাজার ২৫৯ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩১ হাজার ১৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯২ হাজার ২৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা কার্যকর হয়েছে গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দেশে রাশিয়ার গম রপ্তানি বেড়েছে ১২ শতাংশ
গত অর্থবছরে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশে ৩০ লাখ টন গম রপ্তানি হয়েছে। ২০২৪ সালের শুরু থেকেই রাশিয়ার শস্য রপ্তানি ৩০ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন বেড়ে দাঁড়িয়েছে; যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। বৈশ্বিক দক্ষিণের দেশগুলোতে রাশিয়ার রপ্তানির হারও ক্রমবর্ধমান। শনিবার (১৯ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিতস্কি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে রাশিয়ার খনিজ সার অপরিহার্য। বৈশ্বিক সার বাজারে রাশিয়ার অবদান প্রায় এক-পঞ্চমাংশ, যা বিশ্বের প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাশিয়ার কৃষি খাতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার পাশাপাশি, আমাদের বিশেষজ্ঞরা খাদ্য সরবরাহের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। আমরা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) সঙ্গে একত্রে অনেক বছর ধরে কাজ করে আসছি, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে আসছি এবং এ বাবদ আমরা ১২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দ করেছি। এছাড়াও খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সঙ্গে মিলে মাটি সংরক্ষণ, প্রাণী ও উদ্ভিদ রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি কাজ করছি।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, সম্প্রতি রাশিয়া ১৬০টিরও বেশি দেশে খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধি করেছে, যার মধ্যে ১০০ মিলিয়ন টন খাদ্য এবং ৪০ মিলিয়ন টন সার রপ্তানি করা হয়েছে। ইউক্রেন সংকটের পরেও রাশিয়ার রপ্তানিতে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি, বরং নতুন ও দীর্ঘমেয়াদী অংশীদার খুঁজে পাওয়ার মাধ্যমে আমাদের রপ্তানি কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হয়েছে। গত পাঁচ বছরে আমরা আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রায় ৩৮০ হাজার টন খাদ্য মানবিক সহায়তা হিসেবে সরবরাহ করেছি। এছাড়াও, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমরা ছয়টি আফ্রিকান দেশে ২০০ হাজার টন গম বিনামূল্যে সরবরাহ করেছি এবং মালাউই, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং নাইজেরিয়ায় ১১০ হাজার টন সার বিতরণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করছি যে, নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সরাসরি সীমান্ত বন্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেনি। গত কৃষি বছরে (জুলাই ২০২৩-জুন ২০২৪) রাশিয়া বাংলাদেশে ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন গম রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৮ গুণ বেশি। বাংলাদেশে রাশিয়ান শস্য সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গুণগত মানের দিক থেকে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করা হয়েছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন শ্রম উপদেষ্টা
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি নিয়ন্ত্রণে কর্মকর্তারাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। প্রয়োজনে সিস্টেম ভেঙে নতুন লোক বসানোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
আজ শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম বিভাগ ও জেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। এ সময় টাস্কফোর্স বা ভোক্তা অধিকারের সদিচ্ছার ঘাটতি ও সরকারের প্রতি অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘টাস্কফোর্স বা ভোক্তা অধিকার আপনারা কয়টা অভিযান পরিচালনা করেছেন, কি পরিমাণ কাজ করেছেন, সে বিষয়ে আমি কিছুই পাইনি। আমাকে বাণিজ্য সচিব তিনদিনের টাস্ক ফোর্সের প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন। সেই প্রতিবেদেনে একদিন চট্টগ্রামের নাম পেয়েছি, বাকি দুদিন আপনাদের নাম নেই। ৪০-৪৫ জেলায় টাস্কফোর্স অভিযান করেছে। কিন্তু চট্টগ্রামে তিনদিনের মধ্যে দুদিনই আসলে কোনো অভিযানই হয়নি। আমার মনে হয় এই জায়গায় আপনাদের সদিচ্ছার ঘাটতি আছে কিংবা সরকারের প্রতি অসহযোগিতার একটা ব্যাপার আছে।’
সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘এখনও আপনাদের অসহযোগিতার কারণে স্থবিরতা আছে। এটার জন্য গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত আমাদের সর্বশেষ কেবিনেট মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের হয়তো অনেক কঠিন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘একটা বিপ্লব হয়েছে। অনেকে এটা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না আমার মনে হয়। আমরা সিস্টেমটাকে বজায় রেখেছি এবং আমরা প্রত্যাশা করি আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। যদি সিস্টেম ভাঙার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে আমরা সিস্টেম ভাঙব। প্রয়োজনে নতুন করে নিয়োগ দিয়ে এ জায়গাগুলোতে নতুন লোকদের বসাব।’
সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তের নির্দেশ দিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সেটার জন্য আপনাদের যতটুকু সহায়তা দেওয়া দরকার দেওয়া হবে।’
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডিমের উৎপাদন কমেছে: মৎস্য উপদেষ্টা
ডিমের উৎপাদন কমার পেছনে জলবায়ুকে দায়ী করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেশে অত্যধিক গরম ও শীত হচ্ছে এর ফলে ডিমের উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণেও অনেক খামার নষ্টের ফলে ডিমের উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটেছে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাবনা জেলার মৎস্যজীবী ও প্রাণিসম্পদের প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য দূর করতে উৎপাদকদের সমবায় সমিতি গঠন করতে হবে। এর মাধ্যমে উৎপাদকেরা সমবায়ের মাধ্যমে আড়তদারদের সরাসরি ডিম সরবরাহ করতে পারবে। এক্ষেত্রে উৎপাদক-আড়তদার লাভবান হবেন এবং ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যে ডিম ক্রয় করতে পারবে।
খামারিরা মুরগির খাদ্যে ও বাচ্চার মূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে অবগত করলে উপদেষ্টা বলেছেন, আপনারা স্বাধীন খামারি হবেন, কন্ট্রাক্ট খামারি হবেন না। কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো ব্যবসা করে যাচ্ছে, তারা লাভবান হচ্ছে কিন্তু প্রকৃত খামারিরা লাভবান হচ্ছে না। ফিডের ক্ষেত্রে কয়েকটি কোম্পানির হাতে সবাইকে জিম্মি হতে দেয়া হবে না। এজন্য সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উপদেষ্টা নারী উদ্যোক্তাদের শুধু পোল্ট্রি নয়-দেশী মুরগী পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশী মুরগী ও ডিমের উৎপাদন বাড়ালে অর্থনৈতিকভাবে আরও বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। আগে গ্রামীণ নারীরা হাঁস-মুরগি পালন করতেন। নিজেরা গ্রামেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করতেন। এতে তারা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারতেন। সেই অবস্থা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
পাবনা জেলায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সেক্টরে প্রচুর সম্ভাবনার উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেছেন, সম্ভাবনার পেছনে যে সমস্যা রয়েছে তা সরকার দূর করতে চায়। যারা ডিম, মাছ,মাংস সরবরাহ করে আমাদের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছেন তাদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এমআই