অর্থনীতি
আরও একবছর চাপে থাকবে বাংলাদেশের অর্থনীতি: বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও একবছর চাপে থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। তারা বলছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কমে ৪ শতাংশ হবে। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সেটি বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
সংস্থাটি বলছে, করোনা মহামারি সংকটের পরবর্তী সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। ফলে প্রবৃদ্ধি কমে ২০২৪ সালে প্রকৃত প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্ব ব্যাংকের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত রিপোর্টে তারা বলছে, প্রবৃদ্ধির ধারা কমছে দেশে, যদিও সংস্থাটি ২০২৩ সালে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা জানায়। এছাড়া ২০২৫ সালে দেশে প্রবৃদ্ধি হবে ৪ শতাংশ বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ যে তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সেগুলো হলো, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও বৈশ্বিক খাতের চাপ। আর্থিক খাত নিয়ে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং খাতে নানা ধরনের সংকট রয়েছে, বিশেষ করে খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। সরকারের অনেক প্রচেষ্টার পরও সেটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এছাড়া মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেসরকারি খাতে ঋণ গ্রহণ কমেছে।
প্রতিবেদনে বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে থাকবে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, মধ্যবর্তী পয়েন্ট হবে ৪ শতাংশ। যদিও চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বিশ্ব ব্যাংক এপ্রিলে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল।
চলমান অর্থবছরের বাজেটে সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকার ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সেই হিসাবে বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস সরকারি লক্ষ্যের চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম হবে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী কমে গেলে তা হবে কোভিড মহামারির পর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
চলতি অর্থবছরের পূর্বাভাস কমানোর পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাংক গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলনও কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়েছে। গত অর্থবছরের জন্য সরকারের সাময়িক প্রাক্কলন ছিল ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।
কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শ্রম বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ফাঁক রয়েছে। সেটি একটি বড় সমস্যা। এক্ষেত্রে রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষার ‘মিস ম্যাচ’ আছে। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে এসব বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতি খারাপ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে এতে।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়াশিংটন থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ধ্রুব শর্মা, অর্থনীতিবিদ নাজমুস খান এবং বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারেনি। অথচ প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণ শ্রম বাজারে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে শিক্ষিত ও শহুরে বেকার বৃদ্ধি পাওয়াটা একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের জন্য অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। নানা উদ্যোগ নিয়েও এটি কমানো যাচ্ছে না। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। যা সাধারণ মানুষের জীবনমানকে নিচে নামাচ্ছে। পাশাপাশি বৈষম্যও বাড়ছে বাংলাদেশে। এক্ষেত্রে বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি এবং আর্থিক খাতে বিভিন্ন সংস্কার দ্রুত করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

অর্থনীতি
হালাল পণ্যের বাজার বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে: শিল্প সচিব

শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) হালাল পণ্যের বাজার বিকাশে সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান।
শনিবার (৫ জুলাই) বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত “হালাল পণ্যের বাজার, হালাল পণ্য উৎপাদনে অনুসরণীয় পদ্ধতি এবং হালাল সার্টিফিকেট সংগ্রহ পদ্ধতি” বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এ কথা বলেন। বিসিআই বোর্ডরুমে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
বিসিআই এর সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (বিসিসি) এর সাবেক পরিচালক মো. খালেদ আবু নাছের, হালাল সার্টিফিকেশন, বিএসটিআই এর উপ-পরিচালক (সিএম) এস এম আবু সাঈদ, এবং বিএসটিআইয়ের সিএম উইং সহকারী পরিচালক (সিএম) মোছা. রেবেকা সুলতানা। কর্মশালাটি পরিচালনা করেন বিসিআই এর সেক্রেটারি জেনারেল ড. মো. হেলাল উদ্দিন। এতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সেক্টরের ২২ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, হালাল পণ্যের বাজার বিশ্বব্যাপী দ্রুত বর্ধনশীল একটি খাত। শুধু মুসলিম নয়, অমুসলিম ভোক্তারাও স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তার কারণে হালাল পণ্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এটি শুধু খাদ্য নয়, বরং প্রসাধনী, ওষুধ, পোশাক, পর্যটনসহ বহু খাতে বিস্তৃত। বিশ্বে বৃহত্তম হালাল ভোক্তা দেশগুলো হলো ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, পাকিস্তান, তুরস্ক। ইউরোপেও এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হালাল পণ্যের বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড।
তিনি আরও বলেন, মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের হালাল পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ এই বাজারে বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুধুমাত্র পরিকল্পিত উদ্যোগ, মানসম্পন্ন উৎপাদন ও সঠিক বিপণনের মাধ্যমে আমরা এই বিশ্ববাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিতে পারি। হালাল পণ্য হতে পারে বাংলাদেশের পরবর্তী রপ্তানিযোগ্য সোনালী খাত।
সভাপতির বক্তব্যে আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, বিসিআই নিয়মিতভাবে দেশের শিল্পায়ন, বৈদেশিক বাণিজ্য এবং অন্যান্য শিল্প ও ব্যবসা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আইন ও নীতিমালা বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন/প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করে আসছে, আর তারই ধারাবাহিকতায় হালাল পণ্য নিয়ে আজকের এই কর্মশালা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে হালাল পণ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন আর হালাল পণ্য খাদ্য পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; আমাদের নিত্য ব্যবহার্য সব পণ্য হালাল হতে পারে যেমন, পোশাক, কলম, চশমা ইত্যাদি।
তিনি উল্লেখ করেন, হালাল পণ্যের চাহিদা বিশ্বে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানে তৈরি পোশাকের বিশ্ব বাজার ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার, সেখানে হালাল পণ্যের বাজার ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলার, যা প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ হালাল পণ্য রপ্তানি করছে মাত্র ৮৪৩.০৩ মিলিয়ন ডলার, যার বেশিরভাগই কৃষিভিত্তিক পণ্য। তিনি বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের একটা বড় সম্ভাবনা রয়েছে হালাল পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে, আমাদের সেটা কাজে লাগানোর জন্য সকলে মিলে কাজ করতে হবে।”
অর্থনীতি
সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাড়ালে কেউ ব্যাংকে টাকা রাখবে না: অর্থ উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা হার বাড়িয়ে দিলে সবাই সঞ্চয়পত্র কিনবে, ব্যাংকে টাকা রাখবে না। ব্যাংকেও তো তারল্যের ব্যাপার আছে। ব্যালেন্স করে দেখতে হবে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে দিলে ব্যাংক কোত্থেকে টাকা পাবে?
শনিবার (৫ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, খারাপ ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। ইসলামী ব্যাংক এর একটি উদাহরণ। এ ব্যাংকে আস্থা ফিরে আসছে। অন্য ব্যাংকগুলোর জন্য ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্ট করা হয়েছে। এটার প্রথম শর্ত হলো যারা ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছে, তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। কারও টাকা মার যাবে না। একটু সময় লাগতে পারবে না। কারণ টাকা নিয়ে চলে গেছে অনেকে। পৃথিবীর কোনো দেশে এরকম ঘটনা ঘটেনি।
এনবিআরে চলমান অস্থিরতা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সমস্যা সমাধানে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে যা যা করা লাগবে আমরা করবো। পাঁচ সদস্যের একটি শক্তিশালী কমিটিও করে দেওয়া হয়েছে।
এসময় উপদেষ্টার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম, নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী, নবীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পিয়াস বসাক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কাফি
অর্থনীতি
চাল-সবজির বাজার চড়া, কমেছে ডিম-মুরগির দাম

কোরবানির ঈদের পর থেকে বেড়েই চলেছে চালের দাম। এরপর সবজির দামও বেড়েছে গেলো সপ্তাহ থেকে। সব মিলিয়ে চড়া দামে চাল আর সবজি কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এদিকে, মুরগি ও ডিমের বাজারদর কিছুটা কম। এতে ক্রেতারা স্বস্তিতে থাকলেও খামারিদের জন্য লোকসান হচ্ছে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মোকামগুলোতেই চালের দাম বেড়েছে। সেখানে চালকল মালিকরা ঈদের পর কারবার চাঙা হওয়ার সঙ্গে দাম বাড়িয়েছেন, যে কারণে চালের দাম বেশি এখন। ঈদের পর প্রতি বস্তা চালের দাম সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
যে কারণে ঈদের আগের চেয়ে এখন প্রতিকেজি চাল মানভেদে ২ থেকে ৮ টাকা টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা দরে। সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের কেজি ৭৪ থেকে ৮০ টাকা এবং মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা। কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৬ টাকা কেজিতে।
মালিবাগের চাল বিক্রেতা আল্লাহর দান স্টোরের আবুল হোসেন বলেন, নাজিরশাইল ছাড়া পাইজাম, বিআর-২৮, মিনিকেটের দাম কেজিপ্রতি ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আগে ৬৮ টাকা কেজি দরে পাইকারিতে যে মিনিকেট চাল কিনতাম, গতকাল কিনেছি ৭৬ টাকা কেজি দরে।
এদিকে, ছোট বাজারে ও পাড়ার মুদি দোকানে দাম আরেকটু বেশি। রামপুরা বাজারের চাল বিক্রেতা জুবায়ের আলী বলেন, ঈদের পর থেকে দোকান খুলে যে চালই অর্ডার দিচ্ছি, তারই দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি। দিনাজপুর, নওগাঁ, কুষ্টিয়া সব মোকামে চালের দাম বাড়ছে।
ঢাকার বাজারে ঈদের পর থেকে নিম্নমুখী ছিল মুরগির দাম। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে প্রতি ডজন ডিমের দাম নেমেছে ১২০ টাকায়। বড় বড় বাজারে কিনলে ১১৫ টাকায়ও কেনা যাচ্ছে। তবে এ দাম ডিম উৎপাদনকারীর জন্য লোকসানের বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। বিপুল হোসেন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, অন্তত ১৪০ টাকা ডজন ডিমের দাম হলে খামারিদের কিছু লাভ হয়, এবার দাম খুব কমে তাদের লোকসান হচ্ছে।
এদিকে এরমধ্যে মুদি পণ্যগুলো দাম তেমন হেরফের হয়নি। তেল, চিনি, ডাল, আটা, ময়দা, সুজি আগের দামে কেনা যাচ্ছে। কম দামে কেনা যাচ্ছে পেঁয়াজ, আলু, আদা, রসুনসহ অন্য নিত্যপণ্যও।
তবে বেড়েছে প্রায় অন্যান্য সব ধরনের সবজির দাম। সেগুনবাগিচায় সবজি বিক্রেতা তাকদির হোসেন বলেন, প্রায় সব ধরনের সবজির দাম গত সপ্তাহের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা কেজিপ্রতি বেড়েছে।
কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন বরবটি, কাকরোল, উস্তা কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পেঁপে, পটোল, ঢ্যাঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। আর ঝিঙা, চিচিঙার কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে চাইছেন বিক্রেতারা। তবে বড় বাজার, আবার ভ্রাম্যমাণ দোকানে দাম কিছুটা কম।
অর্থনীতি
বিকডার নতুন সভাপতি কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। বিকডার সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে তিনি সংগঠনের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
খলিলুর রহমান দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি ডিপো কেডিএস লজিস্টিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
বুধবার (৩ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব। তিনি বলেন, সংগঠনের সাধারণ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের উপস্থিতিতেই খলিলুর রহমান সভাপতির দায়িত্ব নেন।
বিকডা সূত্রে জানা যায়, বিকডার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন নুরুল কাইয়ুম খান। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি গত ১৫ জুন পদত্যাগ করেন। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি বিকডার নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। এছাড়া বিকডার পূর্ববর্তী সংগঠন প্রাইভেট ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো-ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (পিকডা) সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
অর্থনীতি
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ৩৫.৩১ শতাংশ ঋণই এখন খেলাপি

ব্যাংক–বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুরবস্থা কাটছে না। উপরন্তু দিন দিন খেলাপি ঋণ বাড়ছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিতরণ করা ঋণের ৩৫ দশমিক ৩১ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। টাকার অঙ্কে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা, যা তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি এবং বছরে বেড়েছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিনের অবলোপন, পুনঃতফসিল আর রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে খেলাপির প্রকৃত চিত্র আড়াল রাখা হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারিতে চেপে রাখা খেলাপি ঋণ এখন প্রকাশ পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকায়। এর মধ্যে ২৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়েছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।
এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে এই খাতের ঋণ স্থিতি ছিল ৭৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ছিল ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা বা ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
গত বছরের একই সময়ের তুলনায়ও ঋণ খেলাপি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৪ সালের মার্চে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের স্থিতি ছিল ৭৪ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ছিল ২৩ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
পিপলস লিজিং, বিআইএফসি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্সসহ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপির হার সর্বাধিক। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক তারল্য ও ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে।
এদিকে মার্চ পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণও বেড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ২৪ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আসল পরিস্থিতি সামলাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এখন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।