জাতীয়
বাংলাদেশে তুর্কি বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান ড. ইউনূসের

বাংলাদেশে তুর্কি বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন ড. ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত এবং উভয় দেশকে তাদের সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো উচিত।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে উভয়দেশকে আবারও জোরালো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বৈঠকে তারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর উপায়, রোহিঙ্গা সংকট নিরসন এবং শিক্ষার্থী বিনিময় বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যায় তুরস্কের মানবিক সহায়তা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি অব্যাহত সহায়তা দেওয়ার জন্য তুরস্কের প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর লক্ষ্যে তুরস্কের একটি অফিসিয়াল প্রতিনিধিদলের সফরের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডিকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
তুর্কি রাষ্ট্রদূত গত বছর তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ১০ হাজার তাঁবু পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, আসন্ন ওয়ার্ল্ড হালাল সামিট এবং ইস্তাম্বুলে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি সম্মেলনে যোগদানের জন্য তুরস্ক বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত আরো জানান, তুরস্কের একটি অফিসিয়াল প্রতিনিধিদল বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছে, যারা মূলত নতুন ব্যবসা ও বাণিজ্যিক সুযোগ খুঁজে বের করতে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগে সহায়তা করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, আমরা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে চাই।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় সাম্প্রতিক বন্যার সময় তুরস্কের আরেকটি দল দেশটি সফর করেছে। তারা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লায় বন্যার্তদের জন্য মানবিক সহায়তা দিয়েছে।
তিনি জানান, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বর্তমানে এক দশমিক এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, তবে উভয় দেশ থেকে রপ্তানি বাড়ানোর অনেক সুযোগ এখনো রয়ে গেছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, তুরস্কের ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল দেশটি সফর করার প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি জানান, তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ সফর করবেন।

জাতীয়
তিন সংশোধনী, দলগুলোর কাছে যাচ্ছে চূড়ান্ত জুলাই সনদ

চূড়ান্ত জুলাই সনদ বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হতে পারে। এতে এমন তিনটি ‘বিতর্কিত’ প্রতিশ্রুতিতে সংশোধন আনা হয়েছে, যেগুলো নিয়ে কয়েকটি দল, বিশেষত বিএনপি আপত্তি তুলেছিল। তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না।
গত ১৬ আগস্ট কমিশন জুলাই গণ-আন্দোলনের চেতনা অগ্রাধিকার দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ আট দফা প্রতিশ্রুতির প্রস্তাব দেয় তার মধ্যে থেকে তিনটি বিষয়ে আপত্তি ওঠে। যেগুলো হলো– সনদ ও সংবিধান বা বিদ্যমান আইনের মধ্যে দ্বন্দ্ব হলে সনদের প্রাধান্য দেওয়া, সনদের ধারা বা সুপারিশের ব্যাখ্যার ক্ষমতা কেবল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের হাতে থাকা এবং সনদের বৈধতা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তির কারণে এসব প্রতিশ্রুতিতে সংশোধন আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে এমন প্রস্তাব রাখা হচ্ছে যা আইনি দিক থেকে গ্রহণযোগ্য এবং রাজনৈতিকভাবে টেকসই হবে। চূড়ান্ত সনদটি দুই খণ্ডে সাজানো হবে। প্রথম খণ্ডে থাকবে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনিক আদেশ বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকরযোগ্য বিষয়গুলো আর দ্বিতীয় খণ্ডে থাকবে দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবায়ন প্রয়োজনীয় সংস্কার। তবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সনদের সঙ্গে যুক্ত হবে না।
অধ্যাপক রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পাওয়ার পর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত সুপারিশ সরকারকে আলাদাভাবে জমা দেওয়া হবে।
কমিশনের মেয়াদ ১৫ সেপ্টেম্বরের পর আর বাড়ানো হবে না বলেও নিশ্চিত করেন আলী রিয়াজ।
কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর আজ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সনদ চূড়ান্তকরণ নিয়ে অধ্যাপক রীয়াজ আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক করে। দলগুলো যে বাস্তবায়ন প্রস্তাব দিয়েছে তা উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে। কয়েকটি দল বাস্তবায়নের জন্য গণসমাবেশ, গণভোট, সাংবিধানিক সংস্কার অধিবেশন কিংবা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মতো প্রক্রিয়া প্রস্তাব করেছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় কমিশন আবার বসবে এবং সনদ চূড়ান্ত করার পর তা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। এরপর একটি জনসভা করে রাজনৈতিক দলগুলো সনদে স্বাক্ষর করবে।
অধ্যাপক রীয়াজ জানান, একটি জনসভায় করে রাজনৈতিক দলগুলোর সনদে স্বাক্ষর করবে।
উল্লেখ্য, জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে কমিশন ইতোমধ্যে ২৮টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে। এর মধ্যে ২৬টি দলের মতামত পাওয়া গেছে।
গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। পরবর্তী সময়ে সেগুলোর প্রধানদের নিয়ে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে করে সমঝোতার ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ শাসন কাঠামোর নীলনকশা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
চলতি বছরের মার্চে কমিশন প্রথম দফায় ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ১৬৬টি প্রস্তাব নিয়ে বৈঠক করে, যেখানে ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়। দ্বিতীয় দফায় আরও ২০টি বিষয়ে সমঝোতা হয়। তবে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও কয়েকটি দল ৯টি বিষয়ে ভিন্নমত দেয়।
৮৪টি প্রস্তাবে সম্মতির ভিত্তিতে প্রস্তুত করা প্রাথমিক খসড়া জুলাই ২৮ তারিখে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। সেই খসড়ায় আট দফা প্রতিশ্রুতি চাওয়া হয়েছিল।
কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চূড়ান্ত সনদ পাঠানো হবে। এরপর আর কোনো মতামত নেওয়া হবে না।
জাতীয়
একীভূত হলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা ও সুরক্ষা সেবা বিভাগকে একত্রিত করা হয়েছে। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রকাশিত গেজেটে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এতে সই করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ।
গেজেটে বলা হয়েছে, এস. আর. ও. নম্বর ৩৫৮-আইন/২০২৫। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৫(৬) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি ‘রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬’-এর নিম্নরূপ অধিকতর সংশোধন করলেন, যথা– উপর্যুক্ত রুলসের(ক) শিডিউল-১ (অ্যালোকেশন অব বিজনেস এমাং দ্য ডিফরেন্ট মিনিস্ট্রিস অ্যান্ড ডিভিশন)-এর সিরিয়াল নাম্বার “২৩. মিনিস্ট্রি অব হােম অ্যাফেয়ার্স” শিরোনাম এবং উপশিরোনাম “এ. পাবলিক সিকিউরিটি ডিভিশন” ও তৎসংশ্লিষ্ট এন্ট্রিসমূহ এবং উপশিরোনাম “বি. সিকিউরিটি অব সার্ভিসেস ডিভিশন” ও তৎসংশ্লিষ্ট এন্ট্রিসমূহের পরিবর্তে নিম্নরূপ শিরোনাম ও এন্ট্রিসমূহ প্রতিস্থাপিত হবে। যথা- মিনিস্ট্রি অব হােম অ্যাফেয়ার্স।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬- এ সংশোধন এনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যপরিধি নতুনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৫৫(৬) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ সংশোধন অনুমোদন দিয়েছেন।
নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন থেকে দেশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কার্যক্রম, পুলিশ ও সশস্ত্র পুলিশ, রেলওয়ে ও বন্দর পুলিশ, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, আনসার-ভিডিপি এবং অন্যান্য আধাসামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে দায়িত্বশীল থাকবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় (যেমন ইন্টারপোল)-সংক্রান্ত বিষয়গুলোও এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিদেশি নাগরিকদের ডোমিসাইল, নাগরিকত্ব, ন্যাচারালাইজেশন, বাংলাদেশে প্রবেশ ও প্রস্থানের নীতি নির্ধারণ, পাসপোর্ট-ভিসা প্রদান, প্রত্যর্পণ (এক্সটার্ডিশন) এবং নিষ্ক্রমণ (এক্সটার্নমেন্ট) প্রক্রিয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় থাকবে। একই সঙ্গে প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন বা প্রতিরোধমূলক আটক, কারাগার ও সংশোধনাগার ব্যবস্থাপনাও এ মন্ত্রণালয় দেখভাল করবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে– দেশে নেশাজাতীয় দ্রব্যের প্রবেশ প্রতিরোধ, চোরাচালানবিরোধী কার্যক্রম, সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ অগ্নিনির্বাপক ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং কোস্ট গার্ড পরিচালনা ও প্রশাসনিক দায়িত্বও তাদের হাতে থাকবে।
বিশেষ আইন, পুরস্কার ও ভিআইপি সুরক্ষা: নতুন কাঠামোয় বিশেষভাবে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে– ভিআইপি ও ভিভিআইপি নিরাপত্তা, বীরত্ব পদক ও গ্যালান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড প্রদান, অস্ত্র আইন, বিস্ফোরক আইন, ফিল্ড ফায়ারিং ও আর্টিলারি প্র্যাকটিস আইন বাস্তবায়ন। এছাড়া পুলিশের পুরস্কার প্রদান, পুলিশ কমিশনের কার্যক্রম, ফরেনসিক ল্যাবরেটরি ও বিষবিজ্ঞান বিষয়ক দায়িত্বও মন্ত্রণালয় পালন করবে।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন আইন অনুযায়ী আইনসিদ্ধ যোগাযোগ নজরদারি ও মনিটরিং কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তত্ত্বাবধান করবে। আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত চুক্তি ও সমঝোতাপত্র, জাতীয় উৎসব, রাজনৈতিক পেনশন এবং বেসামরিক ইউনিফর্ম নীতিমালাও এর আওতায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা বলছেন, এই সংশোধন দেশের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও সমন্বিতভাবে পরিচালনার সুযোগ তৈরি করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এখন ‘এক ছাতার নিচে’ গোটা নিরাপত্তা ব্যবস্থার নেতৃত্ব দিতে হবে।
জাতীয়
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন-আসিয়ানকে নিয়ে সম্মেলনের প্রস্তাব

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ, চীন ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তাব দিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যদের প্ল্যাটফর্ম আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ান্স ফর হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর)।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসে অ্যাডভোকেসি গ্রুপের প্রতিনিধিদলটি এ প্রস্তাব তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে মালয়েশিয়ার সংসদের সাবেক সদস্য ও এপিএইচআরের সহ–সভাপতি চার্লস সান্তিয়াগো রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ সংগ্রহে আসিয়ান নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আসিয়ান–বাংলাদেশ–চীনকে নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন- এ দুটি বিষয় অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আসিয়ানের সহযোগিতা কামনা করে প্রধান উপদেষ্টা পুনরায় আসিয়ানে বাংলাদেশের সদস্যপদ অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে চাই। এটি আমরা বারবার বলছি। যেহেতু আমরা আসিয়ানের অংশ নই, তাই আমরা এ বিষয়টি আসিয়ানে তুলতে পারি না। আমাদের জন্য এটি জরুরি কারণ এ সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।’
বাংলাদেশকে আমন্ত্রিত হিসেবে যুক্ত করতে এপিএইচআরকে একটি আসিয়ান সংসদীয় গ্রুপ গঠনের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটিও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বিষয়টি এখন আমাদের জন্য একটি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আসিয়ানের এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করুন, যা এখন নেই। আসিয়ানকে বিশ্বের কাছে জানাতে হবে আমরা কী ধরনের সংকটের মুখোমুখি হয়েছি।’
চার্লস সান্তিয়াগো বলেন, আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানরা ২০১৮ সালে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন এবং তখন থেকেই এ বিষয়ে নজর রাখছেন।
‘আমরা সবসময় রোহিঙ্গা সমস্যাকে আসিয়ানের সমস্যা হিসেবে উত্থাপনের চেষ্টা করেছি। তবে স্বীকার করছি, গত দুই-তিন বছর আমরা চুপ ছিলাম, কারণ আমরা তখন মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগী ছিলাম,’ তিনি উল্লেখ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার সংসদ সদস্য ওং চেন, ফিলিপাইনের সাবেক কংগ্রেস সদস্য রাউল মানুয়েল এবং এপিএইচআরের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর চনলাথান সুপ্পাইবুনলার্ড।
জাতীয়
হজ শেষে সৌদিতে থাকার চেষ্টা, ব্যবস্থা নিতে চিঠি

চলতি বছর হজ মৌসুমে চিকিৎসক দলের সঙ্গে সৌদি আরব গিয়ে সেখানে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স। তার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
গতকাল মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) এ চিঠি পাঠানো হয়। এ সিনিয়র স্টাফ নার্সের নাম মো. মারুফ হোসেন সিকদার। তিনি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয় চিঠিতে জানিয়েছে, ২০২৫ সালের (১৪৪৬ হিজরি) হজ মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে দ্বিতীয় ব্যাচে মদিনায় পদায়ন করা হজ চিকিৎসক দলের সদস্য সিনিয়র স্টাফ নার্স মারুফ সৌদি আরবে দায়িত্ব পালন শেষে টিমের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মদিনা থেকে মক্কায় আসেন। গত ১০ জুলাই যথারীতি টিমের সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে ফেরার জন্য জেদ্দা বিমানবন্দরে আসেন। কিন্তু দেশে না ফিরে বিমানবন্দর থেকে পালিয়ে যান।
সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় থেকে তার দেশে ফেরার বিষয়ে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়। বিভিন্নভাবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং জরুরিভিত্তিতে দেশে ফেরার জন্য অনুরোধ করা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গত ২৬ আগস্ট জেদ্দায় বাংলাদেশ হজ অফিসে আসেন। হজ ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং টিকিট না থাকায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট সংগ্রহ করে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে ২৯ আগস্ট তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
হজ সমন্বিত চিকিৎসক দলের সরকারি আদেশের শর্তাবলি ১০ অনুযায়ী টিমের সদস্যদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে ‘সরকারি চাকুরি আইন, ২০১৮’ প্রযোজ্য হবে। দায়িত্বে অবহেলা, শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ অসদাচরণের কারণে এ আইন অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ বরাবরে সুপারিশ করা হবে- বলে উল্লেখ রয়েছে। এ নার্স দেশে ফেরত না আসায় ইতোমধ্যে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয় বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ নার্স হজ শেষে অবৈধভাবে সৌদি আরবে অবস্থান করায় সৌদি সরকার অসন্তোষ প্রকাশ করে। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। তাছাড়া ভবিষ্যতে হজ সমন্বিত চিকিৎসক টিম পাঠাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তাই সিনিয়র স্টাফ নার্স মারুফ হোসেন সিকদার সৌদি আরব থেকে নির্ধারিত সময়ের পর বাংলাদেশে ফেরত আসায় তার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।
জাতীয়
অনেক প্রকল্পের জন্য কৃষিজমি কমছে: ভূমি উপদেষ্টা

রাষ্ট্রের অনেক প্রকল্পের জন্য কৃষিজমি ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে কৃষিজমি কমছে। আবার রাস্তা ঘাট টার্মিনালসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কাজে কৃষি জমি প্রয়োজ হচ্ছে। অন্যকাজে কৃষিজমির ব্যবহার যতসম্ভব কমাতে হবে বলে জানিয়েছেন ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।
তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে এবং অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশে কৃষিজমি কমছে, যা খাদ্যনিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি। জাতীয় স্থানিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত।
বুধবার (০৩ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটির ১৫০তম সভায় তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, সব প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পরিবেশের অনুশাসন অবশ্যই মেনে চলতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে অবশ্যই পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে হবে, কারণ বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা প্রকল্প গ্রহণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পরিবেশ ছাড়পত্র গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক।
তিনি আরও বলেন, এই ছাড়পত্র পেতে হলে প্রকল্প শুরুর আগে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ সমীক্ষা অনুমোদন নিতে হবে এবং সব পরিবেশগত মান পূরণ করতে হবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদসহ অন্যান্যরা।