ধর্ম ও জীবন
প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে দুর্গোৎসব
দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার সমাপ্তি হচ্ছে আজ রবিবার। দেবীকে বিদায় জানাতে রাজধানীতে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে জড়ো হয়েছেন হাজারো ভক্ত। শহরের বিভিন্ন মন্দির ও পাড়া থেকে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় এখানে।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বর্গলোক কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যে আসেন দেবী দুর্গা। নির্দিষ্ট তিথি পর্যন্ত বাবার বাড়িতে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ের কৈলাসে স্বামীর বাড়িতে। দেবীর অবস্থানকালে এই পাঁচ দিন পৃথিবীতে ভক্তরা দেবীর বন্দনা করেন।
বিজয়া দশমীতে পূজা উদযাপনের প্রধান আচারের অংশ হিসেবে এদিন নারীরা সিদুঁর খেলায় অংশ নেন। শহরের মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গার পায়ে সিঁদুর নিবেদন করেন, যা ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলার অংশ। এই আচারটি দেবী দুর্গার শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তারপর হিন্দু নারীরা একে অপরের গায়ে সিঁদুর মাখিয়ে জীবনে সমৃদ্ধি কামনা করেন।
হাজারো মানুষ প্রতিমা বিসর্জন দেখতে জড়ো হয়েছেন বিভিন্ন নদীর ঘাটে। প্রতিমা বিসর্জনের সময় অনেক ভক্ত অশ্রুসিক্ত থাকেন। আবার অনেকেই ক্ষণটিকে সুন্দর করে কাটাতে নেচে-গেয়ে উদযাপন করেন।
বিসর্জনের আয়োজন দুর্গা পূজার স্থায়ী সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য তুলে ধরে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
ইসলাম যে ১৪ নারীকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছে
নারী ও পুরুষের পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ একটি স্বাভাবিক মানবিক প্রবৃত্তি। এই আকর্ষণকে বৈধভাবে রূপ দেওয়ার একমাত্র হালাল পথ হলো বিয়ে। মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য বিয়েকে বৈধ করেছেন, যাতে তারা গুনাহ থেকে দূরে থেকে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারে। সেই সঙ্গে জেনাকে করেছেন হারাম।
বিয়ে নিয়ে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, নিশ্চয় আপনার পূর্বে অনেক রসুলকে প্রেরণ করেছি। আমি তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করেছি। (সুরা রাদ ৩৮)
ইসলামে যে ১৪ নারীকে বিয়ে করা হারাম
পবিত্র কুরআনের সুরা নিসার ২৩ থেকে ২৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ ১৪ জন নারীকে একজন পুরুষের জন্য বিয়ে করা হারাম ঘোষণা করেছেন। এই ১৪ জন নারী হলেন,
১. নিজের মা, ২. দাদি, নানি ও তাদের ওপরের সবাই, ৩. নিজের মেয়ে, ছেলের মেয়ে, মেয়ের মেয়ে ও তাদের গর্ভজাত কন্যাসন্তান, ৪. সহোদর, বৈমাত্রেয় (সৎ মায়ের মেয়ে) ও বৈপিত্রেয় (সৎ বাবার মেয়ে) বোন, ৫. বাবার সহোদর বোন এবং বাবার বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোন (ফুপু), ৬. যে স্ত্রীর সঙ্গে দৈহিক মিলন হয়েছে, তার পূর্ববর্তী বা পরবর্তী স্বামীর ঔরসজাত কন্যাসন্তান, স্ত্রীর আপন মা, নানি শাশুড়ি ও দাদি শাশুড়ি, ৭. মায়ের সহোদর বোন এবং মায়ের বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোন (খালা), ৮. ভাতিজি অর্থাৎ সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভাইয়ের মেয়ে ও তাদের পরের প্রজন্মের কন্যাসন্তানরা, ৯. ভাগ্নি অর্থাৎ সহোদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় বোনের মেয়ে ও তাদের পরের প্রজন্মের কন্যাসন্তানেরা, ১০. দুধ মেয়ে (স্ত্রীর দুধ পান করেছে এমন), সেই মেয়ের মেয়ে, দুধ ছেলের মেয়ে ও তাদের পরের প্রজন্মের কোনো কন্যাসন্তান এবং দুধ ছেলের স্ত্রী, ১১. দুধ মা এবং তার দিকের খালা, ফুপু, নানি, দাদি ও তাদের ঊর্ধ্বতন নারীরা, ১২. দুধবোন, দুধবোনের মেয়ে, দুধভাইয়ের মেয়ে এবং তাদের গর্ভজাত যেকোনো কন্যাসন্তান। অর্থাৎ দুধ সম্পর্ককে রক্ত সম্পর্কের মতোই গণ্য করতে হবে, ১৩. ছেলের স্ত্রী, ১৪. অন্যের বৈধ স্ত্রীকে বিবাহ করা হারাম।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
ইসলামে রাগ কমানোর উপায়
রাগ নেই, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। রাগ মানিবক আবেগের অংশ বিশেষ। তবে অনিয়ন্ত্রিত রাগ মারাত্মক ক্ষতিকারক। এক সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে অল্প কথায় কিছু নসিহত করুন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, রাগ বর্জন করো। সাহাবি কয়েকবার বললেন, আরও নসিহত করুন। প্রত্যেকবারই রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, রাগ বর্জন করো। -বোখারি শরীফ
আবু যার (রা.)–এর বরাতে বলা হয়েছে একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বললেন, যদি তোমাদের কেউ দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় রাগান্বিত হয়, তবে সে যেন বসে পড়ে। যদি এতে রাগ চলে যায়, তবে ভালো; নয়তো সে শুয়ে পড়বে।
আতিয়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত; আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। আর শয়তান আগুন হতে সৃষ্ট। আগুনকে পানিই নেভাতে পারে। কাজেই তোমাদের কেউ রাগান্বিত হলে সে যেন অজু করে।
ইসলাম মানুষকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দিয়েছে। ইসলাম মনে করে, রাগ মানুষকে জ্ঞান, বিবেক ও ধর্মের পথ থেকে বিচ্যুত করে দেয়। রাগের কারণে মানুষের আচার-আচরণ ও চিন্তায়া খারাপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই রাগান্বিত অবস্থায় ক্ষমা করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। বিশেষ করে কোনো ব্যক্তি যদি প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা থাকার পরও প্রতিশোধ না নেয় এবং ক্ষমা করে দেয়, তাহলে তার এ কাজটি ইসলামের দৃষ্টিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।
ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, বড় বড় মনিষীরা ক্ষমা করার ক্ষেত্রে ছিলেন অগ্রগামী। তারা রাগান্বিত হলে সূরা আল ইমরানের ১৩৪ নম্বর আয়াতটি তেলাওয়াত করতেন। এ আয়াতে বলা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষ-ত্রুটি মাফ করে দেয়। এ ধরনের সৎলোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন।
মহান ও আধ্যাত্মিকভাবে পরিশুদ্ধ ব্যক্তিরা সব সময় অন্যের জন্য দোয়া করেন। মানুষকে সংশোধন করে দেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন জানান। তাদের কথা হলো, কোনো আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব আপনার ওপর রেগে থাকলে ক্ষুব্ধ লোকটির কাছে গিয়ে নম্রভাবে তাকে সান্ত্বনা দিন, তার ক্ষোভ উপশমের ব্যবস্থা করুন, যাতে সে শান্ত হয়। এমনটি করলে ক্ষুব্ধ ব্যক্তিটির ক্ষোভ কমবে, তার কোনো ক্ষতি করার পরিকল্পনা থাকলে তা থেকে সরে আসবে।
রাগ নিয়ে ইসলামের এমন অবস্থানের পরও কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষোভকে সঠিক বলে রায় দিয়েছে। সমাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, জুলুম ও বৈষম্য দূর করা এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাধী ও জুলুমবাজদের মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে রাগ বৈধ। জাতীয়, ধর্মীয় ও মানবিক আদর্শ ও মূল্যবোধ রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনে রাগকে কাজে লাগাতে হবে। তবে অন্যায় দমন করতে যেয়ে অন্যায়কে যাতে প্রশ্রয় না দেওয়া না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বস্তুত রাগ মানুষের জীবনকে সহজেই বিষাক্ত করে তুলতে পারে। রাগের মাথায় এমন সব কাজ ঘটে যেতে পারে- যা ব্যক্তি, সমাজ তথা গোটা বিশ্বের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। তাই রাগ হলে আলেমরা ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম’ পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এক হাদিসে বলা হয়েছে, যখন তোমাদের কারও রাগ আসে, তখন সে দাঁড়িয়ে থাকলে যেন বসে পড়ে। তাতে যদি রাগ দমে না যায়, তাহলে সে যেন শোয়ে পড়ে। -তিরমিজি
আর মুসলিম শরীফের এক হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে রাগের সময় নিজেকে সামলে নিতে পারে, সেই প্রকৃত বাহাদুর।
আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, রাগ দেখানোর সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আল্লাহতায়ালা তাকে কিয়ামতের দিন পুরস্কৃত করবেন।
রাগ দমনের সওয়াব
আল্লাহ বলেন, ভালো ও মন্দ (দুই-ই) সমান হতে পারে না। ভালো দিয়ে মন্দকে বাধা দাও। এতে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো। এ-চরিত্র তাদেরই হয় যারা ধৈর্যশীল, এ-চরিত্র তাদেরই হয় যারা মহাভাগ্যবান। যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে উসকানি দেয় তবে তুমি আল্লাহ্ স্মরণ নেবে, তিনি সব শোনেন, সব জানেন। (সুরা হামিম সিজদা, ৩৪-৩৬)
নবীজি (সা.) বলেন, যে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাগ দমন করে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার অন্তরকে সন্তুষ্টি তারা পূর্ণ করে দেবেন।
নবীজি (সা.) আরও বলেন, সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে তার রাগ দমন করে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাঁর গোটা সৃষ্টির সামনে তাকে ডাকবেন এবং তাকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী হুর নির্বাচন করতে দেবেন। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭৭৭)
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
মুহাম্মাদ (সা.)-এর চার উপদেশ
সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দরবারে এসে বললেন, আল্লাহর রাসুল! আমাকে সংক্ষেপে কিছু উপদেশ দিন। নবিজি (সা.) বললেন, মানুষের হাতে যা আছে, তা থেকে নিরাশ হয়ে যান। লোভ করবেন না; লোভই হলো নগদ দারিদ্র্য। নামাজ এমনভাবে আদায় করবেন, যেন আপনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছেন। এমন কথা ও এমন কাজ থেকে বিরত থাকবেন, যার জন্য পরে ক্ষমা চাইতে হয়। (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৭৯২৮)
এ হাদিসে নবিজি (সা.) যে চারটি উপদেশ দিয়েছেন:
১. মানুষের সম্পদে আশা বা লোভ রাখা যাবে না
নবিজি (সা.) বলেছেন, মানুষের হাতে যে সম্পদ আছে, তা নিয়ে আশা করো না। কার পকেটে কী আছে বা কে কত সম্পদশালী, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া যাবে না। এটি আমাদের অন্তরে অহেতুক আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। আমাদের দৃষ্টি আল্লাহর রহমতের দিকে থাকতে হবে। তিনি যা দিয়েছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
হঠাৎ কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে প্রথম কাজ হলো আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। সালাতুল হাজত পড়ে তার কাছে প্রার্থনা করা। এরপর বৈধ উপায়ে উপার্জনের বা নিজের প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করা। এমনটি মনে করা বা আশা রাখা উচিত নয় যে, কেউ এসে আমাকে সাহায্য করবে। অমুক ব্যক্তি এসে আমাকে উদ্ধার করবে। মানুষের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা বাদ দিতে হবে। আশা-ভরসা থাকতে হবে শুধু আল্লাহর কাছে, মানুষের কাছে নয়।
২. লোভ এড়িয়ে চলতে হবে
নবিজি (সা.) উপদেশ দিয়েছেন, লোভ করা যাবে না। বলেছেন, লোভই হলো নগদ দারিদ্র্য। কারণ লোভের ফলে মানুষ নিজের অবস্থায় সন্তুষ্ট হতে পারে না। আল্লাহ যা দিয়েছেন, তার ওপর সন্তুষ্ট থাকা উচিত। নিজের অবস্থায় সন্তুষ্ট না হয়ে আরও বেশি পাওয়ার লোভ করতে থাকলে মানুষ কখনও অভাবমুক্ত হতে পারে না। আরেকটি হাদিসে নবিজি (সা.) বলেছেন, অভাবমুক্তি ও প্রাচুর্য সম্পদের আধিক্যের কারণে হয় না, বরং প্রকৃত প্রাচুর্য হলো অন্তরের প্রাচুর্য। (সহিহ বুখারি: ৬৪৪৬, সহিহ মুসলিম: ১০৫১)
যদি অন্তরে শান্তি থাকে, তবে সামান্য সম্পদেও সুখী হওয়া যায়। কিন্তু লোভ করলে যতই সম্পদ থাকুক, তাতে তৃপ্তি আসে না। এমনকি দুই উপত্যকা সম্পদ পেলেও তৃতীয়টি চায়। অভাব থেকে বাঁচতে আমাদের লোভ কমিয়ে আনতে হবে। লোভ থেকে মুক্ত থাকলেই প্রকৃত সুখ ও শান্তির সন্ধান পাওয়া যায়।
৩. নামাজ পড়তে হবে জীবনের শেষ নামাজ হিসেবে
নবিজি (সা.) এমনভাবে নামাজ আদায় করতে উপদেশ দিয়েছেন যেন এটি জীবনের শেষ নামাজ। এই নামাজ আদায় শেষ করেই আমি এই জীবন ছেড়ে আখেরাতে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর জন্য যাত্রা করবো। এই অনুভূতি নিয়ে নামাজ আদায় করলে স্বাভাবিকভাবেই নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং তা আমাদের অন্তরে আল্লাহর সঙ্গে গভীর সংযোগ তৈরি করবে।
দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়া, কবরের জীবন ও আখেরাতের চিন্তা যে কোনো ইবাদতকে শুদ্ধ ও ইখলাসপূর্ণ করে তোলে। এ কারণে নবিজি বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে বলেছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা স্বাদ হরণকারী বিষয় অর্থাৎ মৃত্যুর আলোচনা বেশি বেশি কর। (সুনানে তিরমিজি: ২৩০৭)
৪. এমন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে যে কারণে পরে ক্ষমা চাইতে হয়
নবিজির (সা.) আরেকটি উপদেশ হলো, এমন কথা বলা বা কাজ করা থেকে বিরত থাকুন যে জন্য পরে লজ্জিত হতে হয়, ক্ষমা চাইতে হয়। কোনো ভুল হয়ে গেলে অনুতপ্ত হওয়া, দুঃখ প্রকাশ করা ভালো গুণ। কিন্তু সতর্ক থাকা উচিত যেন এ রকম কোনো কথাই আমি না বলি, এমন কোনো কাজই না করি।
একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষ অযথা কটুকথা বলা, অপ্রয়োজনীয় দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলে। যে কাজের কারণে পরে অনুতপ্ত হতে হয় এমন কাজ এড়িয়ে চলে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
সারাদেশে আনন্দ-উৎসবে বড়দিন উদযাপিত
খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ আজ। এই ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট ২৫ ডিসেম্বর বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা এ দিনটিকে ‘শুভ বড়দিন’ হিসেবে উদযাপন করে থাকেন।
দিনটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের খ্রিস্ট ধর্মের মানুষ আনন্দোৎসবের মধ্য দিয়ে দিনটি নানা আনুষ্ঠানিকতায় উদযাপন করছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন চার্চে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রার্থনা, মানবকল্যাণে যিশুর বাণী পড়ে শোনানো এবং ধর্মীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর প্রীতি ভোজ ও র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। চার্চের প্রীতিভোজে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোক ছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি ও ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হয়।
দিনটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের নানা চার্চ ও স্থাপনায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সরকারি ছুটির দিন হওয়ার কারণে অনেকে বড়দিন উদযাপনে শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।
রাজধানীতে বড়দিনের জাঁকালো অনুষ্ঠানটি হয় ফার্মগেটের হলি রোজারি চার্চে। এখানে বড়দিন উদযাপনে ঢাকার নানা প্রান্ত থেকে আসেন যিশু খ্রিস্টের অনুসারীরা। এছাড়া বিভিন্ন মহল্লায়ও বড় দিনের অনুষ্ঠান হয়।
বিভিন্ন এলাকার চার্চে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকেই চার্চে প্রশাসনের নিয়মিত বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তৎপর হন। জোরদার করা হয় নিরাপত্তা। এছাড়া সেনাবাহিনীর গাড়িও টহল দেয়।
মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চের সাধারণ সম্পাদক বাবলু কুমার সিংহ, ঢাকা ইভানজেলিক্যাল রিভাইবেল চার্চের কর্মী সুনীল, গেৎশিমানী ব্যাপ্টিস্ট চার্চের ম্যানেজার সেনিস ওঝা জানান, প্রশাসনের নিবিড় তৎপরতার কারণে শতভাবে নিরাপত্তার সঙ্গে বড়দিনের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। কোনো নিরাপত্তাহীনতার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
সকাল ১০টা থেকে মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রার্থনা শুরু হয়। এতে প্রায় দেড় হাজারের মত পূণ্যার্থী অংশ নেন। দুপুরে হয় প্রীতিভোজ। এরপর বড়দিন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
চার্চটির আয়োজনে অংশ নেওয়া এলবার্ট সুনীল কুমার বিশ্বাস বলেন, সকাল থেকে সব ধরনের অনুষ্ঠানের সঙ্গে ছিলাম। ছেলে-মেয়েরা লটারির ড্র করছে, আনন্দ করছে। আজ যিশুকে স্মরণ আর আনন্দ ছাড়া আমাদের কোনো কাজ নেই।
রাজধানীর গেৎশীমানী ব্যাপ্টিস্ট চার্চে দুপুরের প্রীতিভোজ শেষ হলে প্রার্থনাকারীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ চলে যান। তবে বিকেল পর্যন্ত কিশোর-কিশোরীরা ছবি তোলা ও গল্পে মশগুল হয়। কুশল বিনিময় করেন বয়স্করা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
টানা ৩ জুমা আদায় না করলে যে গুনাহ হবে
জুমার দিনের মর্যাদা ও সম্মান সপ্তাহের অন্য দিনের চেয়ে বেশি। এই দিনকে আল্লাহ তায়ালা সব দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। কোরআন ও হাদিসে এই দিনের বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন , হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন নামাজের আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) এগিয়ে যাও এবং বেচা-কেনা (দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; যদি তোমরা জানতে। (সূরা জুমা- ০৯)।
আল্লাহর রাসুল (সা.) একটি হাদিসে বলেছেন, মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৯৮)
জুমার দিনের অনেক আমলের কথা বিভিন্ন হাদিসে চমৎকারভাবে আলোচিত হয়েছে। আউস ইবনে আউস (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করাবে (জুমার নামাজের পূর্বে স্ত্রী-সহবাস করে তাকেও গোসল করাবে) এবং নিজেও গোসল করবে অথবা উত্তমরূপে গোসল করবে। এরপর ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে আসবে, আসার সময় হেঁটে আসবে, কোনো বাহনে চড়বে না, ইমামের কাছাকাছি বসবে, এরপর দুটি খুতবা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং (খুতবার সময়) কোনো অনর্থক কাজকর্ম করবে না, সে মসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপে একবছর নফল রোজা ও একবছর নফল নামাজের সওয়াব পাবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)
ফজিলতের পাশাপাশি জুমার নামাজ অনাদায়ে হাদিসে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। কেউ পর পর তিন জুমা আদায় না করলে তার জন্য সতর্কবাণী উল্লেখ করেছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত পর পর তিন জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তায়ালা তার অন্তরে মোহর এঁটে দেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৫২; তিরমিজি, হাদিস : ৫০২; মুসলিম, হাদিস : ১৯৯৯)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পর পর তিনটি জুমা পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পেছনের দিকে নিক্ষেপ করল। (মুসলিম)।
তবে অপর এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, চার শ্রেণির লোক ব্যতীত জুমার নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গোনাহ। চার শ্রেণির লোক হলো- ক্রীতদাস, স্ত্রীলোক, অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক, মুসাফির ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। (আবু দাউদ)।
এছাড়া নামাজ পড়া মুসলিমদের একটি নিদর্শন। তাই হজরত উমর (র.) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফের’ (বায়হাকি: ১৫৫৯, ৬২৯১)। হজরত আলি (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে কাফের’ (বায়হাকি: ৬২৯১)। নামাজ পরিত্যাগকারীর ব্যাপারে কোরআন-সুন্নাহর দলিলগুলো প্রমাণ করে, বে-নামাজি ব্যক্তি ইসলাম নষ্টকারী বড় কুফরিতে লিপ্ত। তাই জুমা ও যেকোনো ওয়াক্তের ফরজ নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।